ভালোবেসে মরেছি পর্ব ১৫

#পর্ব_১৫
গল্পঃ #ভালোবেসে_মরেছি🍂❣
writer: #Ashura_Akter_Anu
_______________
এতরাতে অর্নবকে এই অবস্থায় বাড়ির সামনে দেখে অর্নি অবাকে শীর্ষে।ওর কাছে এটা এখন একদম ক্লিয়ার, এই ব্যাটা নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে।

পকেট থেকে ফোনটা বের করে অর্নিকে কল দেয় অর্নব,

ও কল ধরলে বলে,

ওরনা ছাড়া বেশ মানায় তো তোমায়,,

বলেই একটা চোখ মারে অর্নব।

নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে আসলেই তো ওরনা নেই। অবশ্য অর্নির ক্ষেত্রে ঠিকই ছিলো।ঘুমাতে যাওয়ার সময় ওরনা ও খুব একটা পড়ে না।।

অর্নবের এমন কথায় কান দিয়ে ধোয়া বের হতে তাকে ওর। তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে ব্যালকনির দরজাটা বন্ধ করে দেয় অর্নি। কানে ফোন রয়েছে এবং অর্নব বলছে,
-লজ্জা পেলে নাকি?দেখো এখনই যদি এতো লজ্জা পাও তবে বিয়ের পার বাকি জীবন তো পরেই আছে। তখন কি ঘাস কাটবে? (জোড়ে হেসে দিয়ে)

অর্নবের বলা কথাগুলো ওর সহ্য হচ্ছে না। তাই বলে,

-দেখুন, আপনি এসব কি শুরু করেছেন বলুনতো?নাকি মরতে চান?যদি ইচ্ছে থাকে বলুন?আমি এখনি আপনাকে শ্যুট করবো।

-কি যে বলোনা,মরা মানুষকে কি আর দ্বিতীয়বার মারতে হয়? আমি তো সে কবেই মরেছি। যেদিন থেকে তোমায় ভালোবেসেছি,ঠিক সেদিন থেকেই। তোমায় #ভালোবেসে_মরেছি🍂❣।

-হোয়াট রাবিশ?(অনেকটা রেগে)

-দেখো, তুমি মানো আর না মানো, এটা শিওর যে তোমার ফিউচার হাসবেন্ড আমি হবো।সো আমায় এভাবে ইগনোর না করে একটু ভালোবাসো,এতে পরে গিয়ে তোমারই ভাল হবে। অন্তত লজ্জা পেতে হবে না। (আবারও এক গাল হেসে দিয়ে)

অর্নি রেগে ফোনটা কেটে দেয়।

ব্যালকনির দরজাটা কাচের হওয়ায় অর্নি একবার উকি দেয়। অমনি অর্নব হাত নাড়িয়ে হাই দেয়।সাথে সাথে অর্নি গিয়ে বিছানায় বসে পরে।

ওর মনে এখন কেমন যেন একটা অদ্ভুত আবেগ কাজ করছে।
_______________________
‘ম্যাম আপনাকে বলেছিলাম না,এসব কিছুর সাথে আরও একজন জড়িত আছে”

অফিসে নিজের কেবিনে দাড়িয়ে ফাইল ঘাটছিল অর্নি তখন ওর পার্সোনাল স্টাফ হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো কথাটি।কথাটি শুনে অর্নির কপাল কিঞ্চিত পরিমানে কুচকে গেল। ফাইলটা স্বাভাবিক ভাবে বন্ধ করে টেবিলে রাখলো। এরপর টেবিলের ওপর রাখা পেপারওয়েট হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে গিয়ে চেয়ারে বসলো। স্টাফের হাঁপানো দেখে সামনে রাখা পানি ভর্তি গ্লাসটা তার দিকে এগিয়ে দিল অর্নি। ওর স্টাফ একবার অর্নির দিকে ও একবার গ্লাসের দিকে চেয়ে ছোঁ মেরে গ্লাসটি তুলে নিল৷। এরপর গ্লাসে থাকা সবটুকু পানি সেকেন্ডের মাঝেই শেষ করল।পানি খাওয়ার ধরন দেখে মনে হলো

এবার অর্নি শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“নাও টেল মি,সকালের খাবার খেয়েছেন?’
সামনে থাকা স্টাফ কথাটি শুনে বেশ অবাক হয়।
কেননা জরুরি খবরটি না শুনে ম্যাডাম এমন প্রশ্ন কেন করছেন?কথাটি মাথায় ঘুরপাক খেলেও বেশ বুঝে উঠতে পারেনা সে।
‘জ্বি ম্যাম খেয়েছি!’

‘কি খেয়েছেন?’

স্টাফটি আবারও অবাক হয়। তারপরও উত্তর দেয়।

”ম্যাম গরুর গোশত, আপনাকে বলতে চাইছিলাম যে….(থামিয়ে দিয়ে)

”গরুর গোশতের আজকাল অনেক দাম হয়েছে তাইনা?”

সেই স্টাফ ভাবে হয়তে ম্যামের কিছু হয়েছে। নইলে এমন আবল তাবল প্রশ্ন কেন করবেন।

” জ্বি ম্যাম কিন্তু?..”

“আচ্ছা ঠিকআছে আপনি এখন যান,যদি দরকার পড়ে আমি আপনাকে ডেকে নেব!”

উনি চলে যাওয়ার পর অর্নি হাতে থাকা পেপার ওয়েট টা জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে মারে। কাহিনীতে নতুন করে কে এলো এটা সে জানেনা। তবে সে যেই আসুক, নিশ্চয়ই সে পুরাতন কোন মানুষ বলে অর্নির ধারনা।

চেয়ার ছেড়ে উঠে শেল্ফ থেকে একটা নতুন ডায়েরি বের করে তার থেকে একটা কাগজ ছিড়ে নিয়ে বাকি সবগুলো পৃষ্ঠাসহ ডায়েরিটা পুড়িয়ে দেয়। এটা ওর বাবার গিফ্ট করা লাস্ট ডায়েরি ছিল। সবচেয়ে প্রিয় বললে ভুল হবে না।

(অর্নির ব্যাপারে একটা কথা যে, সে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনসপত্রগুলো নষ্ট করে ফেলতে প্রচন্ড ভালোবাসে)

তাই এই প্রিয় ডায়েরি টা পুড়িয়ে দেওয়া খুবই নরমাল ব্যাপার তার কাছে।
ওর কথা, কখনো কখনো নিজের সবচেয়ে কিছু প্রিয় জিনিস নিজের থেকে আলাদা করে দিতে হয়। নইলে সেটাতে পরে পচন ধরলেও ফেলতে খুব কষ্ট হয়।
🍂
__________
ক্লাসে অনেকটা গ্যানজাম হচ্ছে। সেটা অবশ্য মিহুই ঘটিয়েছে।

[আপনাদের বলে রাখি,ভার্সিটিতে থাকলে সেটা অর্নি হলেও মিহুর ক্যারেক্টারে দেখা যাবে,ভার্সিটি বাদে সে শুধুই অর্নি]

মিহু ক্লাসে এসেই জুড়ে দিয়েছে,

“অনেক তো হলো ক্লাস এখন কোথাও গিয়ে ঘুরে আসা যাক, নইলে আমরা তো পাগল হয়ে যাবো না কি বলিস তোরা?”

বাকিরা সম্মতি দিলেও মিহুর কথাটিতে চৈতি,তিথি ও বিপুলের অনেকটা খারাপ লাগে। ওর ভাবতে পারছেনা পিয়াসের মৃত্যুর কয়েকটা দিন পরি মিহু এতটা চেইন্জ হয়ে যাবে। ওরা একদিনে একটা নতুন মিহুকে আবিস্কার করেছে।

মিহু ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে,ওরা মিহুর দিকে কেমনভাবে তাকিয়ে আছে। মিহু বিষয়টি বুঝতে পারে। ওদের কাছে গিয়ে বসে চৈতির হাত ধরে হালকা সুরে বলে,

-আমায় তোরা ভুল বুঝিস না।আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি তোরা কি নিয়ে ভাবছিস।কিন্তু দেখ এমনটা কি তোরা আজীবনই মুখ গোমড়া করে থাকবি?পিয়াস তো চলে গেছে। কিন্তু ওর স্মৃতি রে গেছে। ওকে তোরা কেন, আমিও খুব মিস করি,তাই বলে কি এভাবে মন মরা হয়ে থাকবি?এমন করলেই পিয়াস ফিরে আসবে?হয়তো তোদের এভাবে থাকায় ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে। তাই তোদের কাছে হাত জোড় করে বলছি,প্লিজ আর মনমরা হয়ে থাকিস না। আর তোদের জন্যই এই প্লানটা আমার করা।প্লিজ।
ওরা কাঁদো কাঁদো চোখে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। মিহু কিছু না বলে ওদের তিনজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরে।ওরাও ওকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।
.
এরপর সবাই মিলে ঠিক করে খাগড়াছড়ি বান্দরবান যাবে। এ ব্যাপারে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলতে গেলেই মিহু পড়ে যায় বিপাকে৷ কারন প্রিন্সিপাল স্যার ওদের কোন একজন স্যারকে ছাড়া যেতে দিবে না। ওদিকে ক্লাসের মেয়ে স্টেডেন্ট গুলো অর্নব স্যারকে ছাড়া যাবেনা।ছেলে স্টুডেন্ট গুলোও এক্ষেত্রে রাজি।ওদের একটাই কথা,ভার্সিটির অন্যান্য টিচারদের চেয়ে অর্নব স্যার ওয়ার্ল্ড ট্যুর সহ পুরো বাংলাদেশ বেশি ঘুরেছেন।তাই এসব বিষয়ে ওনার অভিজ্ঞতা বেশি।আর যাই হোক অর্নব স্যার যাবেই।

তাই শেষমেষ ক্লাসমেটদের কথা ভেবে মিহু রাজি হয়ে যায়।কারন অর্নবের যাওয়া ও আর আটকাতে পারবেনা।
ডেট ও স্পট এর ব্যাপারে একদম শিওর হওয়ার পর সবাই যে যার মত বাড়ি ফিরতে থাকে। ক্লাস থেকে বেরোনোর সময় একটা হাত ওকে আবার ক্লাসের ভেতর টেনে নেয়।
কানের কাছে এসে ডেভিল কন্ঠে বলে,
আমায় ছেড়ে বান্দরবান যাওয়ার প্লান করছিলেন?
.
.
.
#চলবে_____
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here