#ভালোবেসে_তোমায়
Writer: Jannat
পর্ব: ৭+৮
.
নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে তিশা । বরাররই মিশুক টাইপের ছিল ,খুব সহজেই মানুষের মন জয় করে নেওয়ার এক অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মাইছে । অনেক ফ্রেন্ডদের সাথে ভাব জমাইয়া ফেলছে ।
সবাই তিশাপু ডাকে ।আর তিশান,তিশিনকেও ভালোবেসে ফেলেছে সবাই।
কলেজ ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে আয়নার সামনে ধারালো , ভিন্ন লুকে আবিষ্কার করল নিজেকে। বয়সের ছাপ নেই তবে কষ্টের ছাপ দেখতে পাচ্ছে । বাহির থেকে এই ছাপ হয়তো কারো চোখে পড়ার নেই ,তবে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারবে ।
আগের চেয়ে খানিকটা শুকিয়ে গেছে আর চোখের নিচে কালি জমে গেছে তবুও খারাপ লাগছে না তাকে ।
হাতে কাজলটা নিল ,চোখে একটু কাজল দিলে মন্দ হয় না ।
__এই তোমার কি আর দাড়ানোর জায়গা নেই ,আয়নার সামনে এসেই দাড়াতে হবে ?
__তুমি আয়নার সামনে কি করছ?
__আশ্চর্য ..! আয়নার সামনে মানুষ কি করে হ্যাঁ ?
__যে যাই করুক ,কিন্তু তুমি পারবে না
__মানে ? তোমার মাথা কি গেছে ?
__হু ,তুমি আজীবন আমাতে নিজেকে দেখবে ।
আয়নাতে নয় আমাতে মগ্ন হয়ে নিজেকে সজ্জিত করবে ।
কপালের বাঁকা টিপটা আমি সঠিক করে পড়িয়ে দিব । আমার চোখে তাকিয়ে কাজল পড়বে , আর লেপ্টে যাওয়া কাজল আমি মুছে দিব ।
আয়নাতে তুমি নয় , আমি তোমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখব । আয়না ছাড়া যখন বিফল হবে আর বারবার আয়নায় নিজেকে দেখতে চেয়েও পারবে না ।
তখন অভিমান করে কেঁদে দিবে ।
কাজল লেপ্টে লেপ্ট যখন জল গড়িয়ে পড়বে ,তখন ঠোঁটের ছোয়ায় চোখের জল মুছে দিব ।
__এভাবে বলনা গো আমি একদম পাগল হয়ে যাব । এত ভালোবাসা কি আমার কপালে সইবে ? (গলা জড়িয়ে ধরে)
__সইবে রে পাগলী ।
ভালোবাসাটা যখন আল্লাহ দান করেছেন তখন সহ্য করার ক্ষমতাও তিনি দিয়ে দিবেন (চুলে মুখ গুজে) ।
আর যদি তোমার সহ্য না হয় তাইলে….
(দুষ্টমি হাসি দিয়ে)
__তাইলে কি…?
__ভাবতেছি আর একটা বিয়ে করব ।
.
তিশা অভিমান করে শায়নের গলা ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাড়ালো । চোখে জল টলমল করতেছে আর রাগে নিজের হাতে নিজেই খামচে দিচ্ছে শায়ন গিয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরল
__একদম ছোবে না আমায় ,খারাপ লোক একটা ।
আরো শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরল,,,
__দুষ্টমি করেছি ,সরি বউ । এই বউ সরি তো
__থাক সরি বলতে হবেনা । আপনার জীবন ,আপনি যাকে খুশি তাকে নিয়েই কাটাতে পারেন ।
__জীবনটা আমার কিন্তু সম্পূর্ন অধিকারটা তোর রে পাগলী ।
তোর ইশারায় চলবে যেমনটা তুই চাস । বুঝিস না ক্যান তুই ছাড়া জীবনটা অসম্পূর্ন
__তাইলে বিয়ে করবে কেন বললে (ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে)
__তোমার কান্না জড়িত মুখটা দেখার বড় লোভ জন্মালো । খুব ইচ্ছা করছিল কাজল কালো লেপ্ট যাওয়া চোখের জল দেখার তাই আর লোভ সামালাতে পারিনি ।
__কিহ..? (মুহুর্ত্বের মধ্যেই অগ্নিকুন্ডের রুপ ধারন করে ফেলল)
আমাকে কাঁদাতে ভালো লাগে তাই না ,ওকে দেখি কতক্ষন সহ্য করতে পার কান্না
__বললেই হল । আর এক সেকেন্ডও না ,বুকের বাম পাশটায় ব্যাথা পাই তো (এলোপাথারি আদর দিয়ে)
__একদম ফাজলামী না……..
আর কিছু বলার সুযোগ পেল না
__উফফ তুমি আসলেই একটা খারাপ লোক
__হুম তোমারই তো হাজবেন্ড ।
.
ইশ অতীতে ঘুরতে গিয়ে , কাজল লেপ্টে ফেলল তিশা ।
আমি কি সত্যিই তোমার ভালোবাসা সহ্য করা ক্ষমতা রাখিনি ,তাই বুঝি খুব সহজে সরিয়ে দিলে আমায় ।
এখন আর তোমার ইচ্ছা করে কাঁদাতে হয়না ।
তোমার সৃষ্টি কষ্টের মেঘ থেকে প্রতিনিয়ত অজরে বৃষ্টি ঝড়তেছে । এখন আর কেউ ঠোঁটের ছোঁয়ায় চোখের জল মুছে দেয়না ,নিজেই মুছতে শিখে গেছি ।
থেমে নেই আমি,থেমে নেই আমার প্রতিটা মুহুর্ত্ব ।
হয়তো তোমার দিনগুলো সুখে ভরপুর আর আমারটা না হয় কিছুটা কম । তবু যখন এই বাচ্চা ২টির মুখের পানে তাকাই তখন আরো হাজার বছর বেঁচে থাকার প্রেরনা জাগে ।
এদের তুলার ন্যায় নরম হাতগুলো যখন ছুঁয়ে দেয় ,তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে ,,
হ্যাঁ ভালো আছি , খুব ভালো আছি #ভালোবেসে_তোমায় ।
.
অতীতের সুখময় স্মৃতিগুলো লেপ্টে দিচ্ছে কাজল আর তা মুছার বৃথা চেষ্টা করতেছে ।
তোমার দেওয়া কষ্টের কথা মনে পড়েনা বাট মধুময় সময়গুলো স্থীর থাকতে দেয়না । কষ্টগুলো যখন মনে পড়ে তখন ভিতর থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসে ।
আর সুখময় স্মৃতিগুলো যখন মনে পড়ে তখন অস্পর্শ অবিনশ্বর যে রুহ আছে সেই রুহবিন্দু ক্ষতবিক্ষত করে জল গড়িয়ে পড়ে ।
একবার যদি বুঝতে বুক চিড়ে কান্না বের হয়ে আসার যন্ত্রনা তাইলে একে অপরকে কাঁদানো আগে বারবার আতকে উঠতে ।
ক্লাশ ,প্রাইভেট আর বাচ্চাগুলো নিয়ে দিব্যি ব্যাস্ত হয়ে গেছে তিশা । খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া পিছু ফিরে তাকায়না । তাকানোর সময় পেলে তো তাকাবে । ব্যাস্ততার মাঝে ডুবে আছে । তবুএ অচেতন ভাবে কিছু স্মৃতি এসে হানা দেয় ।
.
শায়নের দিনগুলো ডিপ্রেশনের মাঝে কাটতেছে । কোথাও একটু শান্তি পায় না ,অনুশোচনার আগুনে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ।
আল্লাহ আমাকে যথাযথ শাস্তি দিচ্ছে । একটা বাচ্চার কাছে আমাদের ভালোবাসাটা কেন ঠুকনো হয়ে গেল ?
তিশার প্রতি অনুভূতি,অনুভবগুলো কী ফিকে ছিল ?
কেন হেনা নামের মেয়েটা জীবনে আসল ?
আমি কখনো হেনাকে আদৌ তিশার জায়গায় বসাতে পেরেছি নাকি শুধু একটা বাচ্চার প্রয়োজনে..?
অনুতাপের আগুন জ্বলতেছে ,এই আগুন কি কখনো আর নিভে যাবে না ?
একবার শুধু একবার যদি তিশার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পেতাম তাইলে বুকের জ্বালাটা হালকা হত ।
ফর্সা ,চওড়া ,রোমশ বুকটা একদম কাঠ হয়ে গেছে ।
হাজারো চুমো দিত এই বুকটায় ,এখানে মাথা রাখতে না পাড়লে পাগলামী শুরু করে দিত ।
__তিশু পাখি ?
__হুস । ডিস্টার্ব করনা ,দেখনা তোমার স্মেল নিচ্ছি । জানো ,তোমার শরীরে স্মেলটা যখন নিঃশ্বাসের সাথে শিরা-উপশিরা মাধ্যেমে শরীরে প্রতিটা রক্তকনার সাথে মিশে যায় । তখন এক অনাবিল শান্তি চলে আসে । নিজেকে খুব ফুরফুরে লাগে ।
__আমার কোন জিনিসটা তোমাকে বেশি আকৃষ্ট করে । মানে ভালোলাগে ?
__তোমার রোমশ বুকটা আমাকে পাগল করে দেয় ,এখানে মাথা রাখলে নিজেকে ধনী মনে হয় ।
__পাগলী একটা । যদি কখনো এই বুকটা আকৃষ্ট না করে তাইলে ..?
__তাইলে তোমার ওই চোখ । যে চোখের দিকে তাকালে নিজেকে আর নিজের মাঝে খুঁজে পাই না ডুবে যাই ভালোবাসার অতলে
__যদি কখনো এই চোখের প্রতি ভালোলাগা না থাকে ?
__তোমার ঠোঁটগুলো । যখন তুমি ঠোঁটগুলো নাড়িয়ে কথা বল । মনে হয় যেন সকল সৌন্দর্যটা ওখানে এসে ভিড় করছে । ইচ্ছা হয় সেই ভিড়ের মাঝে নিজেকে হাড়িয়ে ফেলি ।
__ঠোঁটগুলোর ভালোলাগা যখন হারিয়ে যাবে ?
__তোমার হাসি । আমি এক ধ্যানে কয়েক শত ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারি এই হাসির দিকে তাকিয়ে ।
__আর যদি ঠোঁটগুলোর ভালোলাগা হারিয়ে যায় ..
?
__তোমার মায়া মিশ্রিত কন্ঠ । ঘুম ঘুম কন্ঠে যখন
তিশুপাখি বলে ডাক দাও ।
তখন সেই ডাকের প্রতিধ্বনি হাজার বার এই হৃদয়ে বাজে । ইচ্ছা হয় খেয়ে ফেলি সেই ভালোবাসাময় পাগল করা কন্ঠটাকে ।
__উমম .. একসময় এই আমিটার প্রতি থেকেই যদি ভালোলাগা চলে যায় ?
কোনো ইন্টারেস্ট খুঁজে না পাও ,তখন কি ছেড়ে যাবে আমায়..?
__একদম খুন করে ফেলব । তারপর এই বুকের ঘরে তোকে সমাধি দিব ।
এই তুই কি আমার কোনো ভালোলাগার কোনো বস্তু হ্যাঁ ? এত ভালোলাগা খুঁজিস ক্যান ?
এই ছেলে শোন,তুই আমার ভালো লাগা না ,যে কিছুদিন পর পর হারিয়ে যাবে ।
ভালোবাসা ,ভালোবাসা বুঝিস ?
তুই আমার ভালোবাসা । শুধু এ যনমে না ইহকাল ,পরকালেও এই ভালোবাসা বিরাজমান থাকবে ।
যদি কখনো তোর প্রতি আমার ভালোবাসার কমতি পাস ,সেদিন বুঝবি এই দুনিয়াতে আমি নেই ।
তোকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ন । তুই আমার পরিপূর্নতা ।
.
চোখ ভিজে উঠল শায়নের ,বড্ড মিস করতেছে । পুরুষ মানুষদের কাঁদতে নেই । তাদের কান্না বুকের ভিতরেই ঝড়ে । তিশা আমি বলব না তুমি ফিরে আস । তবে একটু ক্ষমার চাওয়ার সুযোগটা দিও ।
হেনা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে শায়ন বারান্দায় চেয়ারে সাথে মাথা হেলিয়ে বসে আছে ।
কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল শায়ন ,পিছু ফিরে তাকালো
__ওহ,তুমি
__কখন আসলে অফিস থেকে?
__এই তো
__কোনো খোঁজ পেলে ..?
তিশার খোঁজের কথা জানতে চেয়ে বুকটা জ্বলে যাচ্ছে । কিন্তু নিরুপায় ,সে যে অক্ষম । তিশার অক্ষমতার কারনে তাকে এই ঘরে এনেছে । কিন্তু সেই পূর্নতা তিশার দ্বারাই হল । মাঝখানে অপূর্নতায় জড়িয়ে নিলে নিজেকে । হয়তো এক নারী হয়ে অন্য নারীর সংসার কেড়ে নেওয়ার শাস্তি ছিল এটা …..
.
চলবে
#ভালোবেসে_তোমায়
Writer: Jannat
পর্ব:৮
.
হাসপাতাল ,সংসার আর বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব ব্যাস্ত আছে তিশা ।
শায়নের সংসারে কোনো তারা নেই আর নেই কোনো ব্যাস্ততা । জীবনটা বোর হয়ে উঠছে আর মন-মানসিকতা সে তো অবশ্যই ।সারাক্ষন ছটপট করে কাটাচ্ছে হেনা ।
__হেনা,এই হেনা
__কি হইছে, আসছি তো
__চোখ বুঝে, হাত বাড়াও
__উফফ । আচ্ছা…
শায়ন ২টা টিকেট বের করে হেনার হাতে দিল
__এবার চোখ খোল…
__টিকেট(অবাক হয়ে)
__হ্যা অফিস থেকে ৭দিনের ছুটি নিয়েছি । আর পুরো ছুটিটা কক্সবাজারে কাটাবো ।
হেনা আনন্দে শায়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল । অনাবরত কেঁদেই চলছে । কাঁদবেই না কেন “এই ৪বছর ৪মাস” পর শায়ন তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে ।
এই কয়েকটা বছর নরকের যন্ত্রনার মত কাটিয়েছে । শায়ন নিজেকে সামলে নিয়েছে ।
জোর করে আর যাই হোক ভাগ্যকে বদলানো যায় না তাই যে কয়েকদিন বেঁচে থাকবে স্বাভাবিক ভাবেই বেঁচে থাকবে ।
কিন্তু আজও তিশাকে খুঁজে বেরাচ্ছে তবেই বিফলই হচ্ছে ।
রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে হেনা লাকেজ গুছাচ্ছে আর শায়ন হেল্প করতেছে ।
তিশা তার রাজকন্যা আর রাজপুত্রকে নিয়ে ছাদে বসে গল্প করতেছে ।
দিনের বেলা একদমই সময় দিতে পারে না ডিউটির জন্য । আর মাঝে মাঝে রাতেও জুরুরি ডিউটি পড়ে যায় । সেদিন তাদের কি যে অভিমান ।রাতে তাদের মামুনিকে কাছে চাই চাই । তাই তিশা রাতে খুব কম ডিউটিই করে । নানা ভাই আর নানুনের সাথে তাদের ভীষন ভাব । তারাও খুব ভালোবাসে এই মাটির পুতুল ২টোকে।
__মামুনি
__জী,বাবাই
__সবার বাবা আছে ,আমাদের বাবা কোথায় ?
ছেলের প্রশ্ন শুনে আচমকা চমকে উঠল তিশা ।
.
প্রথম যখন কথা বলতে শিখছে
সেই সময় একদিন , ডিউটি শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে ,মায়ের কাছ থেকে বাচ্চাদের নিয়ে রুমে আসল তিশা ।
সারাদিনের ক্লান্ত ক্লান্ত শরীরটা আর মনটা নিয়ে যখন বাসায় ফিরে নিজেকে খুব অবশ মনে হয় । কিন্তু বাসায় এসে এই মায়াময় মুখ ২টোর দিকে তাকালে অনাবিল শান্তি বয়ে যায় । বুকের সাথে জড়িয়ে নিলে ক্লান্ত বুকটা শান্ত হয়ে যায় । সারা শরীরে আদরের পরশ দিলে ক্লান্ত দেহটা সতেজ হয়ে উঠে ।
মাত্র মুখ থেকে আআআ বুলি বের হচ্ছে ,ওদের অস্পষ্ঠ শব্দগুলো তিশাকে পাগল করে দিচ্ছে ।
তিশা বারবার মামুনি বলানোর চেষ্টা করতেছে ,কিন্তু তিশিন আর তিশান একদমই নারাজ । তারা তাদের মত কথা বলতেছে ।
তিশা যখন ব্যার্থ হয়ে বালিশে নিজেকে হেলিয়ে দিল ঠিক তখনই ২জনই আধো আধো কন্ঠে বাবা ডেকে উঠল ।
সেদিনও তিশা চমকে গিয়েছিল । বাবার স্পর্শতো দূরের কথা যেখানে বাবার দেখাটাও আজও মিলে নাই সেখানে এদের মুখের প্রথম ভাষা বাবা শুনে আতকে উঠারই ।
এতদিনে ভুলেই গিয়েছিল যে এরা তিশার একার সন্তান না ,হ্যাঁ এদের বাবা আছে । এই সন্তান যখন বড় হয়ে বাবাকে জানতে চাইবে তখন এদের কি জবাব দিবে ।
তার সন্তানের বেড়ে ওঠার পথে এই একটা প্রশ্নই প্রভাব ফেলতে যথেষ্ঠ ।
.
প্রথম যখন বাচ্চা পেটে আসে কতই না স্বপ্নের বীজ বুনছিল । তখন মনে হয়েছিল সুখরা যখন আসে দল বেঁধেই আসে । একদিন বাচ্চাদের প্রথম ডাক কি হবে তা নিয়ে সে কি খুনসুটি । শায়ন অফিস থেকে এসেই পেটের কাপড়টা সরিয়ে অনেকগুলো আদর দিল ,হাত বুলিয়ে দিল তারপর পেটের উপর মাথা রেখে ভিতরটাকে অনুভব করতে চেষ্টা করতেছে ।
__এই কি করছো ?
__হুস,আমার সোনামনিদের সাথে জরুরি মিটিং করতেছি ,ডিস্টার্ব কর না তো
__তুমি সত্যিই পাগল
__তিশু
__হুম
__এই তিশুপাখি
__কিহহ ,কানে শুনতে পাও না__রেগে যাচ্ছ ক্যান ময়নাটা ।
জানো ,
বাবাইটা কি বলছে
__ভ্রুকুচকে কি জানতে চাইলো
__বলছে ।বাবা জানো ,,,
আমি যখন কথা বলতে শিখব তখন তোমাকেই ডাকব প্রথম
__নাহহ ,একদমই না ওর মামুনিকে ডাকবে
__দূর আমাকেই ডাকবে বলেছে । আচ্ছা তিশু পাখি ,আধো আধো কন্ঠে যখন বাবা বলে ডাকবে । তখন অনুভূতিটা কেমন হবে বলতে পার ?
ইশ আমার তো ওর মুখে আধো ভাষায় বাবা শুনতে আর তর সইছে না ।
__এই গন্ডার ,হনুমান ,কুত্তা । আমার বাবাই সোনাটা আমার ভিতর বেড়ে উঠতেছে তাই ওর মামুনিকে ডাকবে ।
__তুমি দেখ ,বাবাকেই ডাকবে ।
হ্যাঁ গো তোমার ধারনাই সঠিক । আমার কলিজার টুকরোগুলো বাবাকেই ডাকল । বাট ওদের ডাক শুনে পাগল হয়ে যাওয়া বাবাটা যে ওদের নেই ।
আজ এই বাবা শব্দটাই ওদের চলার পথে বাঁধা হয়ে যাচ্ছে ।
.
__ও মামুনি কি হল বলছ না কেন ?
আমাদের বাবা কোথায় ?
মেয়ের ডাকে হুস ফিরে পেল তিশার । বলতে শেখার পর থেকে কয়েকশত বার এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে । বারবারই এড়িয়ে যাচ্ছে ।
__আকাশের সবচেয়ে উজ্জল নক্ষত্রটা দেখতে পারতেছ না ,ওখানেই তোমার বাবা থাকে ।
__আমাদের কাছে আসবে না ,মামুনি ?
ক্লাশে সবাই বাবার গল্প করে ,তখন খুব মন পড়ে বাবাকে।
ম্যাম যখন বাবা/মা নিয়ে রচনা লিখতে বলে সেই প্রথম থেকে শুধু মাকে নিয়ে লিখছি ।
জানো মামুনি ,,,
খুব ইচ্ছা করে বাবাকে নিয়ে কখনো লিখতে ।
বাচ্চাদের কথা শুনে চোখের জল আটকে রাখতে পারতেছে না তিশা ।
ওদের কথাগুলো বুকে প্রচন্ড আঘাত করতেছে ।
__বাবাকে খুব প্রয়োজন তোমাদের ?
__ভীষন মিস করি ।
যখন সবার বাবা তার ছেলে-মেয়েকে আদর করে আমাদেরও খুব ইচ্ছা হয় বাবার কোলে চড়তে ।
__বেশ ,তাহলে আমি ওই দূর আকাশে তারা হয়ে যাই ।
আর তোমাদের বাবাকে পাঠিয়ে দেই ।(কেঁদে কেঁদে)
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে । বাবার মত মাকে হারানোর ভয়ে ২বাচ্চাই মায়ের চোখের জল মুছে দিয়ে বুকের সাথে লেপ্টে রইল
__নাহ মামুনি একথা বল না । তোমাকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারব না ।
__তাহলে আর বাবার কথা জানতে চাইবে না তো ?
__প্রমিস, আর কখনো না ।
প্লীজ মামুনি তুমি কেঁদ না তাইলে বড্ড কষ্ট হয় ।
__অনেক রাত হয়েছে ,এখন ঘুমাবে নয়ত ক্লাশ মিস করবে ।
.
বাচ্চাদেরকে রুমে নিয়ে এসে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো । চোখে ঘুম নেই । সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখেছে সন্তানের মুখের পানে চেয়ে ,আজ সেই সন্তানই বারবার অন্ধকার অতীতটাকে সামনে টেনে নিয়ে আসতেছে ।
.
শায়নরা খুব ভোরে উঠেই রওয়ানা দিল । হেনার মনটা খুব ভালো লাগতেছে । এতদিনে কিছুটা হলেও মনের যন্ত্রনাটা হালকা করার সুযোগ পেল ।
শায়নের কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেছে হেনা । কক্সবাজারে পৌছে হোটেলে গিয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে বিকেলবেলা সমুদ্র সৈকত দেখতে বের হল ।
প্রতিদিনের মত আজকেও তিশিন আর তিশান তার নানুন আর নানা ভাইয়ের সাথে হাটতে বের হল ।
মেয়েটা একদম তিশার কার্বন কপি ,সমুদ্র বুঝি এর জীবনের একটা পার্ট ।
সমুদ্র দেখলে আর স্থীর থাকতে পারে না ,উত্তল ঢেউ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য ।
তাই তো প্রতিটা বিকাল সকলকে পাগল করে তোলে সমুদ্র দেখার জন্য ।
__তিশিন আস্তে নানুভাই ,পড়ে যাবা তো …..
বলতে না বলতেই ওদের বিপরীত দিক থেকে আসা এক দম্পতির সাথে ধাক্কা লাগে ।
দূভাগ্যবশত ওনাদের হাতে থাকা আইসক্রীম বক্সটা পড়ে যায় । তিশিন একবার ওনাদের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ
করে ফেলল ।
আর মায়া জড়িত কন্ঠে ভয়ে ভয়ে সরি বলতেছে ।
শায়ন কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল , বাচ্চাটা বোধহয় শুধু মায়া দিয়েই তৈরি ।
ওর সরি বলা ,ভয় পেয়ে ড্রেস খামচে ধরা বুকের ভিতরটায় ধুকধুক সৃষ্টি করে ফেলছে ।
তিশাকে প্রথম যেদিন দেখে ভার্সিটির নবীনবরন অনুষ্ঠান । শায়ন তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র । তারাহুরা করে গেট দিয়ে ডুকতেছে ঠিক তখনই কারো সাথে ধাক্কা লেগে হাতে থাকা কাগজগুলো পড়ে যায় ।
তিশা পড়ে যাওয়া কাগজগুলো কুঁড়িয়ে হাতের মুঠে নিয়ে শায়নের দিকে বাড়িয়ে দিল । এতক্ষন ফোনে কথা বলায় ব্যাস্ত ছিল , কাগজগুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে মেয়েটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল ।
নীল বোরকা ,নীল হিজাব পড়া একটা মায়াবীনি ,ঠোঁটগুলো হালকা গোলাপী ।
ভয়ে চোখগুলো বন্ধ করে আছে আর একহাত দিয়ে কাগজগুলো শায়নের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে অন্য হাতে বোরকা খামচে ধরে আছে ।
আর ভয়ার্ত মধুমিশ্রিত কন্ঠে সরি বলে যাচ্ছে ।
সেদিন তার এই বহুমিশ্রিত রুপ শায়নকে ঘায়েল করেছিল ।
.
হেনা শক্ত করে শায়নের হাত চেপে ধরায় ,চোখের পলক ফেলল শায়ন । সামনে তাকিয়ে দেখে পরীটা নেই ।হেনা বুঝতে পারল শায়ন বাচ্চাটাকে খুঁজতেছে ।
__বাচ্চাটাকে খুঁজতেছ । এক মুরুব্বী এসে সরি বলে বাচ্চাটাকে নিয়ে গেল , তোমার তো কোনো খেয়ালই ছিল না ।
তিশার কথায় ডানে-বামে ,সামনে-পিছে খুঁজে দেখতেছে । অনেক দূরে, ভিড়ের মাঝে মিলিয়ে গেছে …….
.
.
চলবে…..