ভুল করে একবার বল না তুই আমার পর্ব ৩

💞ভুল করে একবার, বল না তুই আমার 💞
Part _03
Writer _Raidah _Islam _Nova

আফজাঃ আরে,ওরে কেউ ধর।

ববিঃ হির, তো পেছনের দরজা দিয়ে পলাইলো।

নূরিঃ ও তো গিয়া বাচঁলো এখন আমারা কি করমু?

রাইমঃ স্যারের বকবকানি শুনবি।

শাবাবঃ আমি আর পারুম না।ক্লাসের আর কয় মিনিট আছে দেখতো?

কায়সারঃ আরো আধা ঘণ্টা।

সবাইঃ আধা ঘণ্টা ( চিৎকার করে)

ববিঃ আরো আধা ঘণ্টা ঐ বেডার বকবকানি সহ্য করতে হইবো।

নূরিঃ জীবডা…..

আফজাঃ বাঁশ পাতা

এদিকে মেহেকতো চোখ বন্ধ করে দিছে দৌড়। ওরে আর পায় কে। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরে যায়।

মেহেকঃ এমনেই মাথা গরম তার উপরে দিছে ধাক্কা হারামজাদা তোরে আমি পাঠামু এহন মক্কায়। ঐ মিয়া ঐ চোখে কি দেখেন না?চোখে কি প্লাস্টিকের চশমা পইরা ঘুরেন?

ছেলেটিঃ চোখে আমি না আপনি দেখেন না।

মেহেকঃ কে বলছে? আমি দেখি না। মেয়ে দেখলে গায়ে পরতে মনে চায়।

ছেলেটিঃ আশ্চ্যর্য, আমি কি করলাম। আপনিতো চোখ বন্ধ করে আমার উপরে এসে পরলেন।

মেহেকঃ কি আমি পড়ছি?

ছেলেটিঃ জী হ্যাঁ।

– কি ব্যাপার এখানে কি হয়েছে? ( একটা ছেলে সবার মাঝ থেকে বের হয়ে এলো।)

এতোখনে মেহেক চারপাশে তাকালো। কলেজের ১ম ভবনে পর উত্তর দিকে একটা ছোটো বাগান আছে। নানান গাছ গাছালি পূর্ণ। ঐ খানে একটা বকুল গাছ আছে। বকুল গাছের চারদিক দিয়ে রাউন্ড করে টাইস করে দেওয়া। যাতে কলেজের ছেলে মেয়ে বসতে পারে। মেহেক দৌড় দিয়ে সেখানে চলে এসেছে। চারদিকে অনেক ছেলে জোড়ো হয়ে রয়েছে। একটা মেয়েও নেই। মেহেক শুনেছে আজ নাকি কলেজে ভি.পির আসার কথা। এখানে আসার পর থেকে সবার মুখে S2 এর নাম শোনা যাচ্ছে।কেউ বলছে S2 কেউ বলছে S(square) মেহেক কিছুই বুঝতে পারছে না।একজনকে জিজ্ঞাসা করতে বলল: আরে তুমি বুঝি নতুন। তাই জানো না।এই কলেজের দুইজন ভি.পি.।তাদের দু জনের নামের প্রথম অক্ষর S দিয়ে। তাই সবাই তাদের S2 বা S(square)বলে।১ম জন কে S1 আর ২য় জন কে S2 বলে। মেহেক শুনে বেশ অবাক হলো অদ্ভুত নাম তো।অনেক রাগি,জিদ্দি আর হ্যান্ডস্যাম ও দেখতে ওরা দুজন।

মেহেকঃ বিখ্যাত ব্যক্তি দু জনকে তো দেখতেই হয়।

S1-র পুরো নাম মীর সানজাদ হাসান।উচ্চতা ৬.২ ইঞ্চি।গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা।জিম করা বডি।এক কথায় সবদিক থেকে দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। আার S2 ওর চাচাতো ভাই। S2-র পুরো নাম মীর সাদমান হাসান। দেখতে সানজাদের চেয়ে বেশি ফর্সা।কিন্তু সানজাদের চেহারার গঠনটা সাদমানের চেয়ে সুন্দর।সাদমানের উচ্চতা ওর ভাইয়ের মতো।সাদমান সবসময় ওর ভাইয়ের সাথে থাকে।কলেজটা ওদেরই। সানজাদের ডাক নাম সান,আর সাদমানের ডাক নাম সাদ। ওরা দুই ভাই কলেজের সব মেয়েদের ক্রাশ।(আপাতত এতটুকু থাক।বাকি পরিচয় পরে দিবো।)

২য় ছেলেটিঃ কি ব্যাপার রিক?কি হয়েছে এখানে?মেয়েটা কে?(সামনে এগিয়ে এসে)

(১ম ছেলেটির নাম রিক।২য় ছেলেটি সাদমান। )

রিকঃ দেখ না সাদ,এই যে এই মেয়েটা ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে এখন আমাকেই দোষ দিচ্ছে।

রিক সরে যেতেই, মেহেককে দেখলো সাদ।চোখর সানগ্লাস খুলতেই ও হা করে রইলো।সাথে সাথে হাতটা নাকে চলে গেল।

সাদঃ তুমি ই ই ই?( অবাক হয়ে)

মেহেকঃ আপনি এখানে কি করছেন?

সাদঃ আমাদের কলেজে আমরা থাকবো না তো কে থাকবে?

মেহেকঃ ও নো,এটা আপনাদের কলেজ। (চোখ বড় বড় করে)

সাদঃ হ্যাঁ।

(বড়সড় একটা ভীড় জমে গেলো বকুল গাছের নিচে।)

—-সাদ,কি হয়েছে এখানে?

গুঞ্জন শোনা গেল S1আসছে, S1আসছে, সবাই সাইড হও।ছেলেগুলো দু-পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তা খালি করে দিলো।মেহেক উঁকি দিয়ে S1কে দেখতেই ভয়ে কাঁপতে লাগলো।

সাদঃ ভাই ঐ যে,ঐ মেয়েটা।

সানঃ কোন মেয়েটা?

সাদঃ ঐ যে ঐ মেয়ে যে তোর আর আমার…..

সানঃ থাম—- মেহেক

সাদঃ হুম।

সানঃ কোথায় ও?ওর সাথে অনেক হিসাব বাকি আছে।

মেহেককে দেখতেই সানের হাতটা ওর মাথায় চলে গেলো।কপালের কোনায় একটা দাগ এখনো স্পষ্ট আছে।সিল্কি চুলের কারণে দেখা যায় না।

মেহেকঃ বাপ রে এ এ এ —-এরা এখানে কিনু?

রিকঃ ওরাইতো কলেজের ভি.পি। সান আার সাদ।

মেহেকঃ মানে S2।

রিকঃ হুম।

মেহেকঃ খাইছেরে তুই আজকে গেছত মেহেক।

সান, মেহেককে দেখেই চোখ মুখ লাল করে ফেললো।আর মেহেক মাথা নিচু করে রাখলো।বাকিটা প্রথমে বলেছি।

এখন…….

সান এমন একটা ভাব নিলো যে ও মেহেককে চিনেই না।মেহেকের সামনে গিয়ে রিকের দিকে তাকালো।

সানঃ কি হয়ছে রিক?

রিকঃ না মানে সান, তেমন কিছুই না।

সানঃ তেমন কিছু না যখন তাহলে এত ভির কেনো?এই মেয়েটা কে?(মেহেকের দিকে তাকিয়ে)

মেহেকঃ এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো আমাকে চিনেই না।ভুলে যাওয়ার কথাতো নয়।(মনে মনে)

রিকঃ না মানে সান, মেয়েটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেছি।নিজে ধাক্কা দিয়ে আমার দোষ দিচ্ছে।

সানঃ সত্যি। (মেহেকের সামনে এসে)

মেহেক মুখে কোনো কথা না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে হুম বললো।

সানঃ তোমার ক্লাস রেখে তুমি এখানে কি করছো?(রেগে)

মেহেকঃ আমি আজকে গেছি।কি করি? পাইছি।(মনে মনে)
ডানে বামে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

সানঃ কি ব্যাপার? কি বলছি শুনতে পাচ্ছো না? আবার হাসছো।সাহসতো কম বড় না।(রেগে+চিৎকার করে)

উপসস্থিত সবার কলিজা ভয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।সান কখনো এতো রাগে না।হলোটা কি?

মেহেকঃ আমি না মানে আমি আসলে।(আমতা আমতা করে)

সানঃ কি তুমি না মানে তুমি কি……. স্পষ্ট করে বলো।
সান সামনে এগোতে এগোতে কথাটা বললো।মেহেক হঠাৎ জোরে চিৎকার করে উঠলো।

মেহেকঃ বিসমিল্লাহির – রহমানির-রাহীম।

সবাই হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও কথাটা বলেই ওর ব্যাগটা পেছনের থেকে সামনে এনে জোরে সানকে ধাক্কা দিয়েই দিলো ছুট।সান প্রায় পরেই যাচ্ছিলো তখনি সাদ ওকে ধরে দাড়াঁলো।

সাদঃ ভাই……

সানঃ জলদি ওকে ধর,ওকে আমার চাই।ও আামার সাথে এমন করার সাহস কি করে পায়?

সাদঃ রিক,রেহান,রাহুল জলদি চল।

মেহেকঃ ভাগ মেহেক ভাগ।জান বাঁচানো ফরজ।আরো জোরে দৌড়া।

মেহেক তারাতাড়ি করে দৌড়াতে লাগলো।সামনেই পরলো ওর পাগলনি থুক্কু রংধনু গ্রুপ।

ববিঃ কি রে তোর কি হয়ছে? এমনে দৌড়াইতাছত কে?

নূরিঃ ঐ হির,কি হয়েছে তোর?

শাবাবঃ মাম্মা,তুমি পাগলা কুত্তার মতো দৌড়াইয়া কই থিকা আইলা।হইছে ডা কি?

মেহেকঃ মাই ডিয়ার পাগল এন্ড পাগলনিরা, আমি এখন যাইতাছি তারাতাড়ি, গুয়িং টু দ্যা বাড়ি, নইলে আমার মাথায় পরবো স্টিকের বারি।টা টা বা বাই।(হাঁপাতে হাঁপাতে)

কায়সারঃ আরে শোন….

আফজাঃ ঐ হির…… যাঃ চলে গেলো।

আফজাঃ কি হলো ওর?

ওদের কথা শোনার আগেই মেহেক দৌড়ে ওর বাইকের সামনে চলে গেল।বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে একবার গেইটের ওপরে কলেজের নামটার দিকে তাকালো। বড় বড় করে লেখা “মীর সৈয়দ হাসান মেমোরিয়াল কলেজ”। নামটা দেখেই বাইক নিয়ে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

সাদঃ শিট……. চলে গেল। ভাইকে গিয়ে কি বলবো এবার?

রিকঃ সাদ,কে ছিলো মেয়েটা?

রেহানঃ বল না কে ছিলো? সান,এতো রেগে গেলো কেন?

রাহুলঃ সানকে এতো রাগতে কখনো দেখিনি।

সাদঃ তোদের জানতে হবে না।এবার আমি ভাইকে গিয়ে কি বলবো?সেটা বল।

সাদ,সানের সামনে গিয়ে দেখলো ও বকুল তলায় দাঁড়িয়ে দুই হাত কোমরে রেখে রাগে ফুসঁছে।চোখ দুটি টকটকে লাল হয়ে রয়েছে।

সাদঃ ভাই (ভয়ে ভয়ে)
সানঃ ও কই?(রেগে)
সাদঃ ভাই, বাইক নিয়ে চলে গেছে।
সানঃ সামান্য একটা মেয়েকে ধরতে পারলি না।
সাদঃ ভাই ও সামান্য!( অবাক হয়ে)
সানঃ তোমায় আমি দেখে নিবো মেহেক।এখনতো আমার কলেজেই থাকবে। পালাবে কোথায়?

সানজাদ সামনে থাকা গাছটাকে জোরে ঘুষি দিলো।তারপর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।

সাদঃ আরে ভাই আমাকে তো নিয়ে যা। যাঃ বাবা চলে গেল।

রেহানঃ সাদ আমি কিন্তু তোদের দুই ভাইয়ের কোনো কিছু বুঝতে পারছি না। সামান্য একটা মেয়ের জন্য……

সাদঃ আব্বে শালা, ওকে সামান্য বলে ভুল করিস না। একে বারে আইটেম বোম। যদি ফেটে যায় তাহলে বুঝবি ঐ মেয়ে কি জিনিস। নে চল, আমাকে বাড়িতে দিয়ে আয়।

ওরা চলে যেতেই গাছের পেছন থেকে একটা ছেলে বের হলো। তারপর ফোন হাতে নিয়ে কাউকে ফোন দিলো।

ছেলেটিঃ বস, আপনার জান পাখিতো সান আর সাদের কলেজে ভর্তি হয়েছে।

অজানাঃ ওহ্ রিয়েলি।( সামান্য হেসে)
ছেলেটিঃ হ্যাঁ, বস।

অজানাঃ চিন্তা করোনা ও শুধু আমার, শুধুই আমার। ও আর কারো হবে না হতেও দিবো না।ওর উপর নজর রেখো।আর ২৪ ঘন্টা ওর খবর আমাকে দিয়ো।

ছেলেটিঃ ওকে বস। আমার পেমেন্ট টা……

অজানাঃ পেয়ে যাবে শুধু কাজ করতে থাকো। ওর সব তথ্য আমার চাই।

খান বাড়িতে……

মেহেক কোনো রকম বাইকটা রেখে দৌড়ে ওর রোমে চলে গেল। মাহিয়া খান তো পুরো অবাক। তার মেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কলেজ থেকে ফিরে এলো। ঘটনা কি?দেখেতো মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়েছে।

মাহিয়াঃ মেহেক যে কাউকে ভয় পায় সেটা তো জানা ছিলো না। ওতো সবাই কে ভয় দেখায়।

মেহেক রোমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।

মেহেকঃ বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি।তা না হলে আমারে চাটনি বানায় দিতো।কলেজে পড়তে গেছি আর নামটা পর্যন্ত জানি না।

হঠাৎ মেহেকের ফোনে একটা Text এলো।

“কতো দিন পালাবে আমার কাছ থেকে। ধরাতো দিতেই হবে। আমি সব শোধ তুলবো একটা একটা করে”

Text টা পরে মেহেক ‘থ’ হয়ে বসে রইলো।হঠাৎ ৩ বছর আগের কথা মনে হলো।৩ বছর আগের কথা মনে হতেই ওর সারা শরীর ভয়ে শিউরে উঠলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here