💞ভুল করে একবার,বল না তুই আমার 💞
Part- 05
Writer _Raidah _ Islam _Nova
মেহেক ও নুরি পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো। নূরি ওয়াস রুমে গিয়েছে আর মেহেক কিছুটা দূরে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সান আজ কলেজে আসেনি।নবীন বরণ অনুষ্ঠানের কারন খুব ব্যস্ত।সব কাজ ওকে আর সাদকেই সামলাতে হয়।সাদ ভিডিও কলে সানের সাথে কথা বলছে।কথা বলতে বলতে মেহেকের সামনে চলে এলো।
মেহেকঃ ইস,তার একটা আই- ফোন আছে সেইডা সবাইরে দেখাইতাছে।এমন ভাব নিতাছে যে তার একলাই ফোন আছে। মনে হইতাছে নতুন কিনছে।জীবনে বোধহয় আই- ফোন চালায় নাই।যার কারণে সবাইরে হাতে নিয়া দেখাইতাছে।ঢং দেইখা বাঁচি না।
সাদঃ কি বললে তুমি?
মেহেকঃ যা বললাম শুনছেনই তো।
সাদঃ তুমি বদলাইলা না।
মেহেকঃ আমি বদলামুও না।
সাদঃ ভাই তোমাকে সামনে পাইলে যে কি করবো তুমি নিজেও যানো না।
মেহেকঃ হয়ছে কচু করবো।নেংটি ইদুঁর কোথাকার।
সাদঃকি আমি নেংটি ইদুঁর?
মেহেকঃ তা নয় তো কি?
সাদঃ তুমি তুমি একটা এনাকোন্ডা।
মেহেকঃ আরেকটা ঘুষি খাওয়ার ইচ্ছা আছে।
সাদঃতোমাকেতো আমি কি যে করবো_ভাই আইসা নেক।
মেহেকঃ হয়েছে যাও দাতঁ মাইজা আসো।মুখে গন্ধ কইতাছে।ওয়াক ছিঃ।
সাদঃ 😡😡
মেহেকঃ ভাইয়ের লেজ ধইরা বইসা থাকো গা।বাচ্চা-কাচ্চা এখানে কি করো।ধূর,এই নেংটি ইদুঁরের সাথে কথা কইয়া আমার মুডটাই খারাপ কইরা দিলাম। টা টা বা বাই।
মেহেক চলে গেল। এতক্ষন ধরে সান ফোনে ওদের সব কথা শুনছিলো।সান হাসতে লাগলো।
সাদঃ হাসো হাসো বেশি কইরা হাসো।তোমার কপালে আবার শনি আসতাছে। আবার হাসপাতালে ভর্তি হবি।
সানঃ নেংটি ইদুঁর। ( হেসে হেসে)
সাদঃ ভাই তুই ও।তোকে আর তোর মেহেক রে আমি দেইখা নিমু।
সানঃ হয়ছে, যা ভাগ।কাজে মন দে।
মাঠের এক কোণায় পাগলনী গ্রুপ আড্ডা দিচ্ছে।কায়সার ফেসবুক চালাইতা ছিলো।হঠাৎ…
কায়সারঃ দোস্ত দেখ ডোনাল্ড ট্রাম্প কি বলছে?
মেহেকঃ এই ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার কে?
সবাইঃ 😯
শাবাবঃ মনে হয় টাকলু ড্রামের ভাই। 🤨
সবাইঃ 🤣🤣
কায়সারঃ তুই কি দুনিয়ার খবর রাখছ না?
মেহেকঃ আমি আমার খবরই রাখি না।আর উনি আইছে দুনিয়ার খবর নিয়া।
সবাই চুপ হয়ে গেলো। শাবাব ফেসবুকে কি যেনো দেখে। হঠাৎ বলে উঠলো…
শাবাবঃ বন্যেরা বনে সুন্দর।
আফজাঃ তাহলে বেডা তুই এই জায়গায় কি করস?
নূরিঃ চিড়িয়াখানা থিকা বোধহয় ছুইটা আইছে।
সবাইঃ😂
রাইম লুঙ্গি একদম পছন্দ করে না।ছোটোবেলায় সবার সামনে একবার লুঙ্গি খুলে গিয়ে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেছিলো। তারপর থেকে লুঙ্গি পরা তো দূরে থাক নাম শুনলে রেগে যায়।ওকে রাগানোর জন্য কায়সার বলো উঠলো_
কায়সারঃ তুই নাকি রাস্তা-ঘাটে লুঙ্গি পইরা ঘুরোছ।
রাইমঃ কে কইছে তোরে?(একটু রেগে)
ববিঃ সত্যি নাকি মাম্মা কবে থিকা?
শাবাবঃ সাবধানে থাকিছ। ঝড়ের মধ্যে বাইর হইস না।নইলে….
মেহেকঃ দমকা বাতাসে, লুঙ্গি আকাশে।
সবাইঃ😆
London…
বিশাল বড় একটা দো- তালা বিলাস বহুল বাড়ি।বাড়ির সব কিছু আভিজাত্যের ছোঁয়া। পুরো বাড়ি নীল রং করা। দেখে মনে হয় যেনো এক রাজবাড়ী। ভেতরে আসবাবপত্র থেকে শুরু করে গ্লাস-প্লেট সব কিছুর রং নীল।কারণ বাড়ির প্রিয় তমার পছন্দের রং নীল। বিশাল বড় প্রজেক্টেরের মধ্যে একটি মেয়ের ছবি ভাসছে।একের পর এক ছবি পাল্টাচ্ছে।প্রজেক্টের সামনের সোফায় মগ হাতে বসে কফি খাচ্ছে একটা ছেলে। অসম্ভব সুন্দর দেখতে।চুলগুলো ব্রাউন কালার। চোখ দুটো ব্রাউন কালার।দেখতে অনেকটা বিদেশিদের মতো।পুরো রাজপুত্র। তার জন্য অনেক মেয়ে পাগল।ওর এক পলকেই যে কোনো মেয়ে ঘায়েল হতে পারে। কিন্তু সে পাগল উজ্জল ফর্সা বর্ণের একটা বাঙালি মেয়ের জন্য। সারা রুম ভর্তি ওই মেয়ের ছবি। মেয়েটা আর কেউ নয় মেহেক,মেহেক খান। হঠাৎ পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন দিলো। ফোনটা পৌঁছালো মেহেকদের কলেজে থাকা একটা ছেলের কাছে।ছেলেটার নাম জিদান।
অজানাঃহ্যালো
জিদানঃ Yes Bos
অজানাঃ আমার হিরের আরো ছবি চাই।
জিদানঃ চিন্তা করবেন না।পেয়ে যাবেন।
অজানাঃ তাড়াতাড়ি। যেনো দেরি না হয়।
জিদানঃ Ok boss
অজানা ছেলেটি ফোন রেখে দিলো।মেহেকের একটা ছবি হাতে নিলো।
অজানাঃ ভুল করে একবার বল না তুই আমার। তোর জন্য আমি সারা পৃথিবী কিনে নিয়ে আসবো।শুধু একবার বল।আমি তোকে ছাড়া আর কিছু চাই না। তোকে যে করে হোক আমার করবো।কারো হতে দিবো না আমি। কারো না।
( প্রিয় বন্ধুরা এই আজানা ছেলে টারে কিন্তু পৃথিবী কিনতে দিয়েন না।ও পৃথিবী কিনলে আমরা থাকমু কই?🙄 ফাইজলামি পাইছে, টাকা আছে দেইখা পৃথিবী কিনে নিবো।পুরো পৃথিবী কি ওর দাদার
সম্পত্তি নাকি?যদি পৃথিবী কিনেই নেয় 🥺তাহলে রেডি থাইকেন আমরা গাট্টি,বোচকা নিয়া মঙ্গল গ্রহে হামলা করতে যামু। মজা করলাম, সিরিয়াসলি নিয়েন না।😜)
রাস্তায়…….
মেহেক রাস্তার একপাশে বাইক সাইড করে ফেক্সিলোড করতে গেলো।
মেহেকঃ ভাইয়া,এই নাম্বারে দুই শত টাকা ফেক্সিলোড করেন তো।
দোকানদারঃ জী,আপা বলুন।
মেহেকঃ এই যে এই টাতে টাকা পাঠাবেন।
তখনি একটা ছেলে এসে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিলো।
মেহেকঃ দেখে চলতে পারেন না।
ছেলেঃসরি,সরি ম্যাডাম দেখি নি।আসলে এতো সুন্দর মেয়ে দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না।
মেহেক কথাটা শুনে মেজেজ গরম হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু বললো না।বাইকে দিকে যেতে নিলে পেছন থেকে ছেলেটি ওড়না টেনে ধরে। এতে মেহেক নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না ব্যাগ থেকে হকি স্টিক বের করে সোজা ছেলেটির মাথায় আঘাত করলো।ছেলেটা মাথায় হাত দিয়ে পরে গেলো।মেহেক বাইক নিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলো।
বিকালে……
মেহেক বাড়িতে এসে ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পরেছিল। ঘুম থেকে উঠে ফোনটা খুঁজে পাচ্ছিলো না।মেহের আজ বাড়িতে। ওর মনে একটু খটকা লাগলো ফোনটা মেহের নেয় নি তো।মেহেরের রুমে গিয়ে দেখলো মেহের, মেহেকের ফোনে কার সাথে কথা বলছে।
মেহেকঃ ভাইয়া তুই আমার ফোন না বলে কেনো আনছোত?
মেহের মেহেকের গলা শুনতে পেয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে গেলো। ও ভেবে ছিল মেহেক ঘুম থেকে উঠার আগে ফোনটা যথাস্থানে রেখে আসবে।
মেহেকঃ কি ব্যাপার কথা বলছিস না কেনো?
মেহেরঃ আমার ফোনে টাকা ছিলো না। তাই তোর ফোনটা নিয়ে আসছি।
মেহেকঃ কার সাথে কথা বলছিলি?
মেহেরঃ কেউ না ঐ যে অফিসের একজনের সাথে। খুব ইমপোর্রটেন্ট মিটিং ছিলো।
মেহেকঃ কই দেখি?দে ফোনটা।
মেহেরঃ নে।
মেহেকঃ নাম্বারটা চেনা চেনা লাগতাছে।এটা তো ফারুক চাচ্চাুর মেয়ে নিধি আপু নাম্বার।
মেহেরঃ কে কে বলছে তোকে? (একটু তোতলিয়ে)
মেহেকঃ কে বলছে কি? আমিতো চিনি তোকে।ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছে।এটা তোর অফিসের একজন। খুব ইমপোর্রটেন্ট মিটিং ছিলো তাই না।
মেহেরঃ যা ভাগ এখান থেকে। বেশি বড় হয়ে গেছিস।
মেহেকঃ ও মা ফোনে ০.৫০ পয়সা আছে। তুই সব টাকা খেয়ে ফেলছিস?(রেগে)
মেহেরঃ ☺
মেহেকঃ আমি আজকে ২০০ টাকা ভরে নিয়ে আসলাম। আর তুই এর মধ্যে শেষ করে দিলি।এই টাকা ভরতে গিয়ে কত ঘটনা হয়ে গেলো। আর তুই.. তোকে তো আমি এখন রোদে শুকানো ছাড়া আচার দিমু।
মেহেক- মেহেরের চুলে ধরে টান দিলো।তারপর পিঠের মধ্যে ইচ্ছেমত কিল-ঘুষি দিতে লাগলো।মেহের কোনো মতে ওর কাছ থেকে ছুটে পালালো।নিধি ওদের কোম্পানির ম্যানেজারের মেয়ে। দেখতে খুব সুন্দরী।
মেহেকঃ দাড়া দাড়া বলছি। আমার সব টাকা শেষ করে দিলো।
মেহেক রুমে যেতেই কয়েক ঘন্টা পর নিধি আবার ফোন দিলো।
নিধিঃ হ্যালো,তখন ফোনটা ওভাবে কেটে দিলেন কেন?
মেহেকঃ হ্যালো,নিধি আপু আমি মেহেক।
নিধিঃ ও মেহেক।কেমন আছো?
মেহেকঃ ভালো। তুমি ভালো আছো?
নিধিঃ হ্যাঁ,বাড়ির সবাই ভালো আছে?
মেহেকঃ হুম।
নিধিঃ তোমার ভাইয়া কোথায়?
নিধি,মেহেরের কথা জিজ্ঞেস করতেই ওর মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি চেপে গেলো।
মেহেকঃ ভাইয়ার কথা আর বলো না গো।( মন খারাপের অভিনয় করে)
নিধিঃ কেনো কি হয়েছে?
মেহেকঃ তোমার সাথে কথা বলার পর থেকে দেখলাম ভাইয়া বাথরুমে যাচ্ছে আর আসছে।বাথরুম থেকে বের হয়ে খাটে বসতে না বসতেই আবার বাথরুমে ছুটছে। ১ঘন্টা ধরে ৮/৯ বার বাথরুমে গেছে।
নিধিঃ কি হয়েছে মেহেরের?
মেহেকঃ বোধহয় ডাইরিয়া।( মুখ টিপে হেসে)
নিধিঃ কি ই-ই-ই???
মেহেকঃ হ্যাঁ,দুপুরে নাকি তুমি ভাইয়ার জন্য রান্না করে খাবার নিয়ে আসছিলে অফিসে।
নিধিঃ হ্যাঁ।
মেহেকঃ সেটা খেয়েই বোধহয় এমন অবস্থা। ভাইয়াতো তোমাকে অনেক বকতাছে।
নিধিঃ কি বলে বকছে?(মন খারাপ করে)
মেহেকঃ কে জানি কি রান্না করে আনছিলো।ঠিক মতো হাত ধুয়ে রান্না করে নাই বোধহয়।তা না হলে আমার পেট খারাপ হবে কেন? মেয়েটা মনে হয় অপরিষ্কার। আরো অনেক কিছু।
নিধিঃ আচ্ছা রাখি।মেহের কে স্যালাইন আর ঔষধ খেতে বলো।
মেহেকঃ আপু তুমি ভাইয়ার কথায় কিছু মনে করো না। তুমি তো জানোই ভাইয়া একটু তার ছিঁড়া মানে পাগল টাইপের।
নিধিঃ না,না কিছু মনে করে নি।রাখি তাহলে বাই বাই।
ফোনটা রাখতেই মেহেক হাসতে হাসতে খাটে গড়াগড়ি খেল। সবে মাত্র মেহেরের প্রতি নিধি দূর্বল হতে শুরু করছিলো।বেচারা মেহের দুই বছর ধরে নিধির পেছনে ঘুরছে।
মেহেকঃ খুব ভালো হয়েছে। তোর প্রেমের তেরোটা বাজাই দিছি। আমার দুইশ টাকা খাইছোত না। কালকে অফিসে গেলে তোর মাথায় আকাশ ভেঙে পরবো। তখন বুঝবি কত ধানে কত চাল।এই জন্য কবি বলছে নিজে প্রেম করতে না পারলে অন্যের প্রেমের বারোটা বাজিয়ে দাও।😎
পরের দিন…….
(চলবে)