ভুল করে একবার বল না তুই আমার পর্ব ৬

💞ভুল করে একবার, বল না তুই আমার 💞
part_06
Writer _Raidah_Islam _Nova

পরের দিন…..

প্রিন্সিপালের রোমে দাঁড়িয়ে আছে মেহেক। সাথে গতকালের ছেলেটি।পুরো মাথা ব্যান্ডেজ।এক পাশে সান,সাদ,রিক,রেহান, রাহুল,নীলয়,সাইমন,সাদিক।ওরা আট জন একসাথেই থাকে। ব্যান্ডেজ করা ছেলেটার নাম রিয়ান।

প্রিন্সিপালঃ মেহেক,তুমি কি রিয়ানের মাথা ফাটাইছো?

মেহেকঃ জী স্যার।

সানঃ এই মেয়ে এই,তোমার সমস্যা কি? নিজের রাজত্ত পাইছো,যা খুশি তাই করবা।বড় গলায় আবার সীকার করতাছো।(রেগে)

রিয়ানঃ স্যার, আমার মাথা ফাটায় ফেলছে।

সাদঃ তা তো দেখতেই পাচ্ছি।আর বলতে হবে না।

মেহেক, সানের কথায় কোনো উত্তর দিলো না।ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন দিলো।

মেহেকঃ হ্যালো,পুলিশ স্টেশন। ধূর,ফোন ধরছে না কেন?( বিরক্ত হয়ে)

সাইমনঃ সান,ও তো পুলিশ কে ফোন দিচ্ছে।

সানঃ দেক,যাকে খুশি তাকে দেক।ও কিছু করতে পারবে না।

রিকঃ আমাদের কলেজে এসে আমাদের পুলিশে দিবে?

সানঃ ওর এতো সাহস আছে নাকি? পুলিশকে সানজাদ হাতের মুঠোয় রাখে।

মেহেকঃ হ্যালো,পুলিশ স্টেশন।

পুলিশ স্টেশনঃ ইয়েস,বলুন। কি সমস্যা?

মেহেকঃ আপনাদের সামনের সি. সি টিভির ফুটেজ দেখেন তো?

পুলিশ স্টেশনঃ কেনো ম্যাডাম? কোনো ঝামেলা হয়েছে?

মেহেকঃ দূরো মিয়া,আগে দেখেন তো।

পুলিশ স্টেশনঃ জী ম্যাডাম, দেখছি।

মেহেকঃ দেখেন তো আপনাদের থানার মোড়ে ফুচকাওয়ালা বসছে নি।

পুলিশ স্টেশনঃ কি ই ই ই ই?

মেহেক কে কিছু বলতে না দিয়েই ওপর পাশে থাকা পুলিশ টা ফোন কেটে দিলো।

মেহেকঃ হ্যালো,হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন।যাক বাবা কলটা কেটে দিলো।বলে তারপর কলটা কাটতো।এখন আমি গিয়ে যদি ফুচকা ওয়ালারে না পাই।তাহলে তো আমার কষ্ট করে যাওয়া টাই বৃথা।( মন খারাপ করে)

মেহেকের কথা শুনে সবাই হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই ভেবেছিলো পুলিশের কাছে কমপ্লেন করবে ব্যাপারটা নিয়ে।

সাদঃ দেখছিস, সাদিক। বলছিলাম না ডেঞ্জারাস মেয়ে।পুলিশকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে ফুচকাওয়ালা বসছে কি না।

সাদিকঃ তাই তো দেখছি।আরেক ছেলের মাথা ফাটায় ফেলছে।

সাদঃ এনাকোন্ডা একটা।( আস্তে করে)

মেহেকঃ নেংটি ইঁদুর। ( মুখ ভেংচিয়ে)

সাদঃ 🤬🤬

মেহেকর কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।শুধু সান রাগে হাত মুঠি শক্ত করে ধরে রেখেছে।

প্রিন্সিপালঃতুমি কাজটা মোটেই ঠিক করো নি।

মেহেকঃ স্যার আমার কথাটা শুনুন।আমার কোনো দোষ নেই।

সানঃ Jest set up.( রেগে জোরে চিৎকার করে)

মেহেকঃ আমার কথাটাতো শুনবেন।

সান ওর সামনে এসে সজোরে গালে একটা থাপ্পর মারলো।মেহেক ভাবতেই পারে নি সান এমনটা করবে।
গালে হাত দিয়ে ফুঁসতে লাগলো মেহেক।সানের এমন কান্ডে রুমে সবাই হতবাক। ও কখন কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলে না।

সানঃ চুপ করতে বলিনি। তারপর ও কথা বলে যাচ্ছো।তোমার সাহস কি করে হয় এসব করার।অনেক বড় হয়ে গেছো। কলেজটা তোমার নয় যে যখন যা খুশি তাই করবে।কি পেয়েছোটা কি? ইচ্ছে হলো তো কাউকে মারলাম। এই কলেজের কত গুলো রুলস আছে। সেটা তোমাকে মানতে হবে।দু দিন ধরে এসেছো তার মধ্যেই মারামারি শুরু করছো।দিনকে দিন বেয়াদব হচ্ছো।তোমার কথায় কি কলেজ চলবে।সরি বলো ওকে।(রেগে + চিৎকার করে )

মেহেক নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না।সানের রাগ দেখে প্রিন্সিপালসহ বাকি সাতজন ভয়ে কাঁপছে।সান কখন ও এতো রাগে নি।কিন্তু মেহেকের সাথে যে দুই দিন দেখা হলো সে দুই দিন ও এতো রাগলো।

সানঃ কি হলো সরি বলো।কথা কি কান দিয়ে যায় না?(চিৎকার করে)

মেহেকঃ আমি বলবো না।( চোখ লাল করে)

সানঃ এখন ও সময় আছে সরি বলো।( শান্ত গলায়)

মেহেকঃ আমি কোনো অন্যায় করি নি। তাই আমি সরি বলবো না।(রেগে)

ঠাস_মেহেকের আরেক গালে সান চর মারলো।মেহেক যেনো এবার অনেক রেগে গেলো। ও কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মেহেক বকুল তলায় বসে রাগে ফাটছে।চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। সান সোজা বাড়িতে চলে গেল। রিয়ান ওর সামনে শয়তানি হাসি দিয়ে দাঁড়ালো।

রিয়ানঃ খুবতো কাল নায়িকা গিরি দেখালে।কই আজকে তো কিছুই করতে পারলে না।চড় দুটো কেমন ছিলো মেহেক বেবী।অন্যায় না করেও শাস্তি কিন্তু তুমিই পেলে।আমি কিন্তু বেশ ইনজোয় করেছি।তুমিই ১ম মেয়ে যে কি না সানের হাতে থাপ্পড় খেলে।টা টা। আমার কাজ শেষ। আমি এখন চললাম।

মেহেক একটা কথা ও বললো না।রিয়ান চলে গেলো। মেহেকের বেশি রাগ হলে কারো সাথেই কথা বলে না।একটু পরে রংধনু গ্রুপ এলো।ওরা বাইরে থেকে সব কিছু দেখেছে।

নূরিঃ ওর সাথে কথা বলা কি ঠিক হবে?

রাইমঃ কেনো?

ববিঃ দেখছিস না কি রেগে আছে।

শাবাবঃ সামনে গেলে বোধহয় আমাদের গিইলা খাইয়া ফালাইবো।

কায়সারঃ চল,কিছু হইবো না।

আফজাঃ যদি রাগ দেখায়।

রাইমঃ দেখাইলে দেখাইবো। তা ও চল ওকে ঠান্ডা করতে হইবো।

৬জন ভয়ে ভয়ে মেহেকের সামনে গেলো।

নূরিঃ হির, মাথা ঠান্ডা কর।

ববিঃ রাগ করিস না।

শাবাবঃ cool down hir baby.

মেহেকঃ হারামজাদা যাবি সামনের থিকা।(রেগে)

আফজাঃ একটু ধৈর্য্য ধর। সব কিছু ঠিক হয়ে যাইবো।

মেহেকঃ (নিশ্চুপ)

কায়সারঃ মেয়েদের একটু ধৈর্য্য -সহ্য রাখতে হয়।

মেহেকঃ চুলে জট লাগলে আমি চুল সুদ্দা ছিড়া ফালাই আর তোমরা আমারে ধৈর্য্য শিখাও।(রেগে)

কথা না বাড়িয়ে মেহেক বাইক নিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেল। সবাই অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

মীর ভিলা…….

সান বাড়িতে এসে ওর রোমের সবকিছু ভেঙে ফেলছে।ছুরি দিয়ে ডান হাতটাকে ইচ্ছেমত কাটছে।হাতটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। চোখ লাল করে সোফায় বসে রয়েছে। হাত থেকে টপ টপ করে এখন রক্ত পরছে।পুরো হাতটা আলু কুচি করেছে।

সাদঃ ভাই, ঘরের কি হাল করছোত?

সানঃ যাঃ এখান থেকে। আমাকে একা থাকতে দে।(রেগে)

সাদঃ হাতে রক্ত কেন? কি হয়েছে?

সানঃ এই হাত দিয়া আমি আমার মেহেককে মারেছে।তাই ওকে শাস্তি দিছি।

সাদঃ দেখি_

সানঃ একদম ধরবি না। যাঃ বের হ রুম থেকে।

সাদঃ হাতটা তো ঝাঝড়া কইরা ফালছোত।দে ব্যান্ডেজ করে দেই।

সানঃ ধরতে না করছি না।এই হাত এমনেই থাকবো।এই হাত দিয়ে আমি আজকে মেহেককে দুইটা চড় মারছি। সেই হাত দিয়ে ওকে আগলে রাখার কথা সেই হাতটা দিয়ে মারছি।আমি ব্যান্ডেজ করবো না।

সাদ ফাস্ট এইড বক্স এনে ওর সামনে বসলো।

সাদঃ দে হাতটা দে। ব্যান্ডেজ না করলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।

সানঃ হলে হবে,সর।নাইলে কিন্তু তোকেও এই হাতের মতো অবস্থা করব।

সাদঃ তুই মারিস, কাটিস,যাই করিস আমি ব্যান্ডেজ না করে কিছুতেই এখান থেকে যাবো না,সেটা তুই ভালো করেই জানিস।

সাদ জোড় করে সানের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো।সান ভালো করেই জানে এখন কোনো কিছুর ভয় দেখালে ও সাদ যাবে না।সাদ ছোটোবেলা থেকে সবসময় সানের সাথে থাকে। হাজার মারলে,কাটলে, বকা দিলেও সেই সানের পেছন পেছন ঘুরবে।কিছুতেই ওর পিছু ছাড়বে না।সাদের একটাই কথা সানই ওর সব।ও কিছুতেই সানকে ছাড়বে না। এমন কি মরে গেলেও না।

দুপুরে……

রিয়ান অনেক খন ধরে মনে হচ্ছে ওর পেছনে কেউ আসছে।কিন্তু পেছনে তাকিয়ে রিয়ান কাউকে দেখতে পেলো না।রাস্তা দিয়ে হাটছে।দুপুরে প্রখর রোদ থাকায় কোনো মানুষ নেই। হঠাৎ একটা ছেলে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার মাঝখানে ফেলে দিলো।তাকিয়ে দেখলো সেখানে বেশ কয়েকটা ছেলে মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ দুই জন ছেলে ওর দুই হাত দুই দিকে মেলে চেপে ধরলো। রিয়ান রাস্তার মাঝখানেই শুয়ে রয়েছে। কিছুতেই উঠতে পারছে না। ওর সামনে তাকিয়ে দেখলো হেলমেট আর কালো পোশাক পরা একটা ছেলে বাইক নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।ভয়ে ওর কলিজা শুকিয়ে গেছে। খুব স্প্রীডে ছেলেটা ওর বাইকটা সোজা রিয়ানের ডান হাতের উপর দিয়ে উঠেয়ি চলে গেল। রিয়ান ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো। কিছুক্ষন যাওয়ার পর ছেলেটা বাইক নিয়ে আবার ইউ টার্ন করলো।এবার একি ভাবে আবার বাম হাতের ওপর দিয়ে চলে গেল। তারপর দুই বার দুই বাহুর ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে গেল।দুই হাতের হাড় গুলো বোধহয় গুঁড়া হয়ে গেছে। জ্ঞান হারালো রিয়ান।একটা ছেলে বাইকে থাকা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো_

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here