ভয়ংকর প্রণয় পর্ব ৪

#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_4
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain

তনয় ক্রুব্ধ হয়ে রান্নাঘর থেকে নাফিয়াকে ড্রইংরুমে টেনে আনল ।নাফিয়াসহ সবাই হতভম্ব ।তনয় সাপের মত ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল
কাকা ওরে জিগান কালকে ও কোন ছেলের সাথে ছিল ।

আজম খাঁন চোখ পাকিয়ে তাকালেন নাফিয়ার দিকে ।

নাফিয়া থমথমে গলায় বলল মিথ্যে কথা কালকে আমি বিয়ে বাড়িতে ছিলাম ।
ফাতেমা আরা বলে উঠল হ্যাঁ ও তো বিয়েতে ছিল ।

তনয় বলে ও বিয়েতে ছিল তাই না ? পার্সটা দেখিয়ে বলল তাহলে ওকে জিজ্ঞেস কর কালকে এই পার্সটা কার গাড়িতে রেখে এসেছিল ?কালকে কোন ছেলের গাড়ি করে নাকি বাড়ি ফিরেছে ।তনয় মনে করার চেষ্টা করে বলল কি যেন নাম ঐ ছেলেটার হ্যাঁ স্পর্শ ছেলেটার নাম ।

নাফিয়া ঢোক গিলে পার্সটার দিকে তাকাল ।সঙ্গে সঙ্গে তার গালে থাপ্পড় মারার আওয়াজ হল ।নাফিয়া গালে হাত দিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে আজম খাঁনের দিকে তাকাল আর বলল
ক্ কালকে কোনো রিকশা খুঁজে পাচ্ছিলামনা তাই নাফিয়া আর কিছু বলার আগেই আজম খান ফোঁসফোঁস করতে করতে এদিক সেদিক লাঠি খুঁজতে লাগলেন । ড্রইংরুমের এক কোণায় লাঠি পেয়েও গেলেন ।তিনি নাফিয়াকে লাঠি দিয়ে আঘাত করার আগেই ফাতেমা আরা নাফিয়াকে ঝাপটে ধরলেন । যার ফলে লাঠির আঘাতটা তার গাঁ-এ পরে ।আজম খাঁন হুংকার দিয়ে বললেন

ফাতেমা সরে দাঁড়াও সামনে থেকে ।
ফাতেমা আরা সরলেন না আরো শক্ত করে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রাখলেন ।আজম খাঁন আরো রেগে গেলেন ।তিনি ফাতেমা আরার হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে নাফিয়ার থেকে টেনে সরিয়ে এনে একটা রুমে আটকে রাখলেন ।
নাফিয়া নির্জীবভাবে ঠায় সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ।ড্রইংরুমে থাকা নিলয় আর তার বাবা এসব অগ্রাহ করে যে যার কাজে চলে গেল ।তৌহিদ চাইলেও শ্বশুর কে আটকাতে পারবেনা কারন সে হলো এবাড়ির ঘরজামাই আর ঘরজামাইদের সব সময় চুপ থাকাই শ্রেয় ।তাই সেও চলে গেল ।থেকে গেল শুধু তনয় বাকি তামাশাটা দেখতে ।

আজম খাঁন ড্রইংরুমে এসে নাফিয়াকে লাঠি দিয়ে ইচ্ছামত পেটাচ্ছে ।নাফিয়া উহ শব্দটাও করছেনা ।কোনো নড়নচড়ন নেই তার ।দাঁতে দাঁত চেঁপে আঘাত সহ্য করছে ।আজম খাঁন পেটানো শেষে লাঠিটা ছুড়ে মেরে হনহন করে চলে গেলেন ।তনয়ের ঠোটের কোণে হাঁসির রেখা ।সেও বাকি তামাশাটা দেখা শেষে চলে গেল ।

নিলয়ের স্ত্রী রাইশা বাড়ির সব পুরুষরা চলে যাওয়ার পর রান্নাঘর থেকে তড়িগড়ি করে এসে নাফিয়াকে ধরতে নিলেই আতিফা হুংকার দিয়ে বলল খবরদার ওকে কেউ ধরবেনা ।ওকে তো আরো পেটানো দরকার ছিল ।আমি হলে তো ওকে মেরেই ফেলতাম ।এটা বলেই নাফিয়ার দিকে আগাতে নিলেই রাইশা নাফিয়াকে আলগোছে ধরে বলল আতিফা সব বিষয় নাক গলিও না ঠিক এই জন্যই নিজের শ্বশুরবাড়িতে বেশিদিন টিকতে পারোনি ।এখন জামাইসুদ্ধ বাপের ঘাঢ়ে বসে খাচ্ছ ।

রাইশার কথা শুনে আতিফা আর কিছু বলতে পারলনা ।তার বুকটা ভার হয়ে আসছে ।আতিফা আর কিছু না বলে হনহন করে চলে গেল ।

রাইশা ধরে ধরে নাফিয়াকে তার রুমে নিয়ে গেল ।নাফিয়ার শরীরের ক্ষতস্থানগুলোতে ফার্স্ট এইড করে দিচ্ছে রাইশা ।
নাফিয়া উভু হয়ে শুয়ে ছিল ।ফাতেমা আরা রুমে এসে নাফিয়ার হাত ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল আর বিলাপ করে কাঁদতে বলল ,
পারলাম না ঐ হিংস্র মানুষটার হাত থেকে তোকে রক্ষা করতে মা ।নাফিয়ার ক্ষত স্থান গুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল জানোয়ারটা কিভাবে মেরেছে ?

নাফিয়ার জেঠী আছিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল আমাদের কথা নাহয় বাদ-ই দিলাম ।আমরা বুড়ো হয়ে যাচ্ছি আজকে আছি তো কালকে নেই ।কিন্তু আমাদের নাফিয়ার ভবিষ্যতটা কি হবে ? এদের অত্যাচারে তো মেয়েটা মরেই যাবে ।

ফাতেমা আরা চমকে বলে না না আপা এসব কথা বলবেন না আর এক মেয়েকে হারিয়েছি আমি এই মেয়েকে হারাতে চাইনা ।আমি বেঁচে থাকতে আমার মেয়ের কিছু হতে দিবনা ।

নাফিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ম্ মা চ্ চিন্তা করো না আ্ আমার কিছু হয়নি ।আ্ আমি ঠ্ ঠিক আছি ।

ফাতেমা আরা চিন্তাগ্রস্ত দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকালেন ।কি হবে এই মেয়েটার ভবিষ্যত ?কোনো ভালো একটা ছেলের কাছে মেয়েটাকে বিয়ে দিতে পারলে তিনি শান্তিতে মরতে পারতেন ফাতেমা আরা ভাবে ।

সেদিন রাতে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর উঠল নাফিয়ার ।সারারাত জেগে মেয়ের শিউরে বসে রইলেন ফাতেমা আরা ।কখন মেয়েটা একটু সুস্থ হবে তার আশায় ।এই বাড়িতে মেয়ে বৌরা অসুস্থ হলে তাদের ডাক্তার দেখানো হয়না ।এই বাড়ির পুরুষরা এসব পছন্দ করেনা ।তাই তাকেই মেয়ের সেবা করে মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে হবে ।মেয়েটা কেমন বেহুশ হয়ে পরে আছে ।নাফিয়ার মলিনমুখখানা হাত দিয়ে আলতো ছুঁয়ে দিতেই ফাতেমা আরার বুকটা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে ।
_________________

ভোর হতেই স্পর্শরা ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিয়েছে ।আজকেই তারা চলে যাবে ।দুপুরের দিকে কাঠফাটা রোদ থাকে তাই সকাল সকাল চলে যাবে ।
ভোর পেরিয়ে সকাল হতেই স্পর্শরা তিন্নিদের বাড়ির সকলকে বলে বেরিয়ে পরল ।

স্পর্শ নিজের গাড়ি ড্রাইভ করছে সাথে আছে তার দুই বন্ধু ইমাম আর অনীল ।তাদের পেছন পেছন আরেকটা গাড়ি আসছে ।ঐ গাড়ি দিয়ে তার বাকি ফ্রেন্ডরা আসছে ।

হঠাৎ করে স্পর্শের গাড়ির সামনে কতকগুলো বাইক এসে থামল ।এরা আর কেউ না তনয় আর তনয়ের বন্ধুরা ।তবে স্পর্শের কিছু বোধগম্য হচ্ছেনা ।স্পর্শ , ইমাম আর অনীল একে অপরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল ।স্পর্শ ব্যপারটা বোঝার জন্য গাড়ি থেকে নামল ।গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেল বাইক থেকে প্রায় দশজন এগারোজন ছেলে নেমে তার দিকে এগিয়ে আসছে ।প্রত্যেকের হাতেই হকি স্টিক ।স্পর্শ ব্যপারটা বোঝার চেষ্টা করছে ।ঠিক তখনি একটা ছেলে হকিস্টিক দিকে তার বাহুতে খুব জোড়ে আঘাত করল ।
আরো কয়েকটা ছেলে তাকে আঘাত করতে আসলেই সে উল্টো আঘাত করতে লাগল ছেলেদের ।ইতিমধ্যে ইমাম আর অনিলও গাড়ি থেকে নেমে স্পর্শের সাথে যোগ দিয়েছে ।

স্পর্শের গাড়ি থামতে দেখে হিমিরা গাড়ি থামিয়ে দিল ।তারা সবাই গাড়ি থেকে নেমেই দেখতে পেল স্পর্শরা কয়েকটা ছেলের সাথে মারামারি করছে ।আয়ান আর আলিফ দৌঁড়ে গেল বন্ধুদের সাহায্য করতে ।কিন্তু আশিক গেল না ।সে বলে উঠল এই তিথি তোর ব্যাগে না সব সময় একটা স্প্রে থাকে ?ঐ স্প্রেটা বের কর জলদি ।

হিমি চট করে বলল আমার ব্যাগেও তো থাকে ।দাঁড়া এক্ষুনি বের করছি ।

তিথি আর হিমি তাদের ব্যাগ থেকে স্প্রেগুলো বের করে তনয় আর তার বন্ধুদের চোখে মেরে দিল ।
তনয়ের চোখজোড়া খুব জ্বালাপোড়া করছে ।সাথে তার বাকি সঙ্গীগুলোর-ও চোখজোড়া ভীষন জ্বালাপোড়া করছে ।তারা হাত দিয়ে নিজেদের চোখ ডলছে ।এই ফাঁকে স্পর্শরা সবাই নিজেদের গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল ।
__________________

ফাতেমা আরা স্বামীর কাছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল মেয়েটার খিঁচনি উঠছে বারবার ।হসপিটালে না নিলে মেয়েটা মরে যাবে ।দয়া করুন একটু মেয়েটাকে ।

আজম খাঁন স্ত্রীর কথা কানে নিল বলে মনে হয়না ।তিনি স্ত্রীকে কঠিন গলায় বললেন তুমি জানোনা এই বাড়ির মেয়ে বৌদের কোনোদিন ডাক্তার দেখানো হয়না ।কোন সাহসে হসপিটালে যাওয়ার কথা বললা ?আর সামান্য খিঁচনি-ই উঠছে ।মরে তো আর যায়নাই ।যাও তো কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান করবানা ।

ফাতেমা আরা স্বামীর কথা শুনে চোখ মুছতে মুছতে তার ভাসুরের কাছে গিয়ে বললেন কিছু একটা করতে ।কিন্তু এখানেও একই কথা ।তিনি সব আশা ছেড়ে দিয়ে তড়িগড়ি করে নাফিয়ার রুমে গেলেন ।আর রুমে গিয়ে যা দেখতে পেলেন তাতে তিনি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলেন ।

চলবে,
@Nusrat Hossain

(প্রত্যেকের মন্তব্য আশা করছি )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here