#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_5
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain
ফাতেমা আরা রুমে এসে দেখলেন নাফিয়ার কোনো হুশ নেই ।আছিয়া আর রাইশা নাফিয়ার হাত পা ঘর্ষন করছে ।রাইশা নাফিয়ার হাত ঘষতে ঘষতে বলল , চাচী চাচাকে রাজী করাতে পেরেছেন ? নাফিয়ার অবস্থা ভালো দেখা যাচ্ছেনা শিগ্রই হসপিটালে নেওয়া প্রয়োজন ।
ফাতেমা আরা থমথমে গলায় বললেন উনি রাজি হয়নি বলে খিঁচনি-ই তো উঠছে মরে তো আর যায়নি ।
রাইশা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল ওদের পারমিশন নেওয়ার কি প্রয়োজন চাচী ? আমরা-ই ওকে হসপিটালে নিয়ে যাইনা ।
ফাতেমা আরা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে বললেন নিজের মেয়ের জন্য আরেক মেয়ের বিপদ আনতে পারবনা ।
রাইশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নাফিয়ার হাত ঘর্ষন করতে লাগল ।
ফাতেমা আরা মেয়ের মাথার কাছে বসে আয়তুল কুরসী দোআ পড়ে মেয়ের মুখে ফুঁ দিতে লাগল ।আল্লাহ যদি সুস্থ করে দেয় তার মেয়েটাকে এই আশায় ।
_____________________
বুজলাম না হ্ঠাৎ করে অচেনা অজানা একটা জায়গায় কেউ আমায় কেন মারতে চাইবে স্পর্শ চিন্তাগ্রস্ত চেহারা বানিয়ে বলল ।
ইমাম বলে আমিও বুজতে পারছিনা তুশিদের বাড়িতে তো আমরা ফার্স্ট টাইম গিয়েছি আর তোর সাথে তো ঐখানে কারো সাথে ঝামেলাও হয়নি তাহলে ছেলেগুলো কেন তোকে মারতে চাইল ?আমার মনে হয় ওরা আরেকজনকে মারতে গিয়ে ভুল করে তোকে মারতে এসেছিল ।
স্পর্শ ভাবলেশহীনচাবে বলল ওদের চোখে আমি আমার জন্য হিংস্রতা দেখেছি ।ভুল করে না ওরা ইচ্ছে করেই আমাকে মারতে এসেছিল ।
আয়ান বলে উঠল পুলিশের কাছে ব্যাপারটা জানালে কেমন হয় ?
আশিক বলে শুধু শুধু ঝামেলা করে লাভ কি ? আমরা তো ঐ জায়গায় আর যাচ্ছিনা তাই এখানেই এসব ক্লোজ করা উচিত আমাদের ফালতু চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে ।চিল কর দোস্ত ।
আশিকের কথা শুনে সবাই ব্যাপারটা মাথা থেকে সরিয়ে দিলেও স্পর্শ এই ব্যাপারটা নিয়ে একেবারে চিন্তামুক্ত হতে পারলনা ।
স্পর্শরা সবাই ক্লাবে আড্ডা মারছিল তখনি হুড়মুড় করে একটি মেয়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়াল ।স্পর্শ মেয়েটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল ।
ইমাম দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে আরে…. এনা যে আমাদের স্পর্শ ভাইয়ের একটামাত্র গার্লফ্রেন্ড….বলতেই
স্পর্শ ইমামের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল ।
এনা গোমড়া মুখে ব্যাগ থেকে কার্ডগুলো বের করে সবার হাতে কার্ডগুলো দিয়ে বলল সামনে মাসে আমার বিয়ে ।তোমরা সবাই যেও কিন্তু ।
স্পর্শ হাঁসিমুখে মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝাল ।এনা চলে গেলে আশিক স্পর্শকে বলে উঠল তোর গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে আর তুই দেখি দাঁত কেলিয়ে হাঁসছিস ।
স্পর্শ এবার গম্ভীরগলায় বলে , ও আমার গার্লফ্রেন্ড না ।মেয়েটা সব সময় আমার পিছনে পরে থাকত ।আমি ওকে হ্যাঁ বা না কিছুই বলিনি অব্দি ও সবাইকে বলে বেরাত আমি নাকি ওর বয়ফ্রেন্ড ।এখন আমার মোহ কেটে গেছে তো বাবা মায়ের কথামত অন্য একজনকে বিয়ে করে নিচ্ছে ।আমাকে যদি সত্যি-ই ভালোবাসত এই মেয়ে তাহলে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করতে পারতনা ।সব-ই মোহ ।
আশিক বলে একদম খাঁটি কথা বলছিস দোস্ত ।
আলিফ বলে , আচ্ছা দোস্ত কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয় সবাইকে নিয়ে ।অনেকদিন কোনো ট্রিপে যাওয়া হয়না ।
আয়ান বলে কালকেই তো মাত্র একজায়গা থেকে এলাম ।আবার কই ঘুরতে যাবো ?
স্পর্শ বলল আপাতত কোথাও যাওয়া হচ্ছেনা ।বাবার অফিসে বসতে হবে আমায় ।তবে অন্যকোনো সময় অন্যকোনোদিন আমরা ঘুরতে যাবো । তুশি আর ওর হাসবেন্ডকেও বলব আমাদের সাথে ঘুরতে যেতে ।
স্পর্শের কথা শুনে সবাই খুশিতে চিল্লিয়ে বলে উঠল ইয়েয়েয়েয়েয়েয়ে ।
স্পর্শ মুচকি হাঁসল ।
______________________
দুদিন পর,
ই
আজকে নাফিয়া একটু সুস্থবোধ করছে ।তবে শরীরের ক্ষতগুলো এখনো অক্ষত আছে ।এইদুদিন মা , চাচী আর রাইশা ভাবির সেবায় অনেকটাই সুস্থ হয়েছে সে ।নাফিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শরীরের ক্ষতগুলো দেখছে ।আর তখনি দরজা খোলার শব্দ হল ।নাফিয়া দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল তনয়কে ।তনয়কে দেখেই নাফিয়া চোখমুখ কুঁচকাল ।মনে মনে একশোটা বকা দিল তনয়কে ।
নাফিয়া বলল তুমি আমার রুমে কি করছো ?
তনয় নাফিয়ার কথা অগ্রাহ করে ধীরে ধীরে নাফিয়ার দিকে আগাতে লাগল ।
নাফিয়া তনয়কে এভাবে আগাতে দেখে জোড়গলায় বলে উঠল এক্ষুনি যাও বলছি এখান থেকে নাহলে আমি চিৎকার করব ।
তনয় জগন্য হাঁসি দিয়ে নাফিয়ার কাছে এসে বলল , সাহস থাকলে কর দেখি চিৎকার ।উল্টো তোর মান সম্মানটাই যাবে ।আমি সবাইকে বলব তুই আমায় তোর ঘরে ডাকিস প্রতিদিন উপস সরি প্রতিরাতে আর তুই তো তোর বাপকে খুব ভালোভাবেই চিনিস ।কি অবস্থা করবে তোর ভাবতে পারছিস একবার ?
বলেই নাফিয়ার দিকে লোভী দৃষ্টিতে তাকাল ।
নাফিয়া তনয়ের কথা শুনে একটা শুকনো ঢোক গিলল ।তনয়ের এভাবে তার দিকে লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাতে তার খেয়াল হল তার গাঁ-এ ওড়না নেই ।সে বিছানা থেকে তড়িগড়ি করে ওড়নাটা গাঁ-এ ভালোভাবে জড়িয়ে নিল ।
তা দেখে তনয় একটা জগন্য হাঁসি দিল ।
আর বলল তোর আশিককে ইচ্ছামত মেরে দিয়েছি ।
এটা শুনতেই নাফিয়া চমকে উঠল আর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ম্ মানে ।
তনয় হেঁসে বলল কি যেন তোর ঐ আশিকের নাম ? হ্যাঁ মনে পড়েছে স্পর্শ ।তনয় হিংস্র গলায় বলল ওর হাড্ডি গুড্ডি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছি আমি ।
তনয়ের কথা শুনে নাফিয়ার রাগে কান্না এসে গেল ।সে তনয়ের কলার চেঁপে ধরে ভারীগলায় বলল কেন করলি এটা তুই ? বল কেন করলি ? উনার যদি কিছু হয়না আমি তোকে নিজের হাতে খুন করব বলে রাখলাম।
তনয়ের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল নাফিয়ার কথা শুনে ।এত সাহস এই বাড়ির মেয়ে বৌরা আগে কখনো দেখায়নি ।সে নাফিয়াকে একটা ধাক্কা মারল ।নাফিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে হুমড়ি খেয়ে পরল ।
তনয় চোয়াল শক্ত করে বলল তোর কত বড় সাহস তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলিস ?তোর জিব টেনে ছিড়ব আমি ।
নাফিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল আর ভারী গলায় কান্না করতে করতে বলল বেশ করেছি তোর সাথে এভাবে কথা বলছি ।তোকে আমি ছোটবেলা থেকে নিজের ভাই ভাবতাম কিন্তু তুই আমার ভাই হওয়ার যোগ্য না ।
তনয় হিংস্র হয়ে নাফিয়ার দিকে আগাতে নিলেই রাইশা রুমে ঢুকে পরে ।রাইশা তনয়কে নাফিয়ার রুমে দেখে ভ্রু কুঁচকাল ।তনয় নাফিয়ার দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুম থেকে হনহন করে বের হয়ে গেল ।
রাইশা নাফিয়াকে জিজ্ঞেস করল এই বদমাশটা তোমার রুমে কি করছিল ?
নাফিয়া কোনো জবাব দিল না।সে ভারী গলায় বলে , মানুষ এত খারাপ কেন হয় ভাবী ?
রাইশা নাফিয়ার কথার ভাবার্থ বুজতে পেরে তাচ্ছল্য হেঁসে বলল এই বাড়ির প্রত্যেকটা পুরুষ বংশগতভাবেই খারাপ ।তবে দুনিয়াতে সবাই খারাপ হয়না ভালো মানুষও আছে এই দুনিয়াতে ।কিন্তু আমরা মানুষ চিনতে ভুল করি সব সময় ।নাহলে আমাকেই দেখো তোমার নিলয় ভাইকে চিনতে আমি কত বড় ভুল করে ফেললাম ।ভাগ্যদোষে এই বাড়ির বৌ হয়েই এলাম ।লাইফটাই শেষ হয়ে গেল আমার ।
নাফিয়া এক দৃষ্টিতে রাইশার দিকে তাকিয়ে আছে ।
রাইশার অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে ।সে চোখটা মুছে বলল ,
শোন তনয়কে তোমার রুমে আসতে দিবেনা আর ওর সামনেও যাবেনা ।ওর নজর কিন্তু ভালোনা ।রুমে থাকলে সব সময় দরজা লাগিয়ে রাখবে আর রাতেও দরজা লাগিয়ে ঘুমাবে ।বুজতে পেরেছো ?
নাফিয়া মাথা ঝুলিয়ে রাইশাকে হ্যাঁ বোঝাল ।
রাইশা মুচকি হেঁসে চলে গেল ।
রাইশা যাওয়ার পর নাফিয়া চোখমুখ খিঁচে বসে রইল ।অজানা অচেনা ছেলেটার জন্য খুব খারাপ লাগছে ।তাকে উপকার করতে গিয়ে ছেলেটা নিজেই মার খেল শুধুমাত্র তার জন্য ।ছেলেটার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা ।
নাফিয়া ভাবছিল তখন-ই আজম খাঁনের চিল্লানোর আওয়াজ শুনতে পেল ।আজম খাঁন তার নাম ধরে ডাকছে ।অজানা ভয়ে আবার-ও নাফিয়ার বুকটা কেঁপে উঠল ।সে গুটিগুটি পায়ে নিচে নেমে এল ।নিচে নেমে দেখতে পেল পরিবারের পুরুষরা সবাই সোফায় বসে আছে শুধু তনয় আর তার দুলাভাই নেই ।ড্রইংরুমের এককোণায় তার মা , চাচী , ভাবী , বোন গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
নাফিয়া ড্রইংরুমে পা রাখতেই আজম খাঁন ড্রইংরুমের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ির মহিলাদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীরগলায় বললেন
আজকে বিকালের দিকে নাফিয়ারে এক জায়গা থেকে দেখতে আইব ।ওরে রেডি রাইখ ।তারপর নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে কঠিন গলায় বললেন আমি কোনো ভুল ত্রুটি যানি না দেখি ।কোনো ভুলত্রুটি হইলে সব কয়টাকে বাড়ির আঙ্গিনায় পুঁইতা রাখব মনে যানি থাকে ।
আজম খাঁনের কথা শুনে নাফিয়ার শরীর শিউরে উঠল ।মনে পরে গেল তার বোনের কথা ।
চলবে,
@Nusrat Hossain