ভয়ংকর ভালোবাসা পর্ব ৪

#ভয়ংকর_ভালবাসা।
#শতাব্দী_নাওয়ার।
#পর্ব_৪।
আজ আমার গায়ে হলুদ,
বাসায় বিয়ের আমেজ।ছেলের বাড়ীর লোক জন সবাই আসছে।
আমার বাসার লোক জন রিসিভশনে দাঁড়িয়েছে।
কিছু ক্ষণ পর শুনি আমার খালাতো বোনের চিৎকার।
-ওই জামাই আসছে জামাই আসছে।

সবাই আমার পাশ থেকে উঠে দৌড়ে চলে গেলো।
সবাই বলছে,হলুদে জামাই আসছে।
কত রোমান্টিক জামাই।

আর আমার মনে মনে রাগ হচ্ছে,
কি দরকার ছিলো এসব ন্যাকামোর,
কি দরকার ছিলো হলুদে আসার।

কিছু ক্ষণ পর আমাকে রেডি করে স্টেজে নেয়া হলো।
বর পক্ষের মধ্যে সর্ব প্রথম আভাস আসলো স্টেজে আমাকে হলুদ দিতে।
দেখেতো মেজাজ পুরাই খারাপ আমার।

আমি বসে আছি,
আভাস আমার সামনে বসলো।
-অনেক সুন্দর লাগছে আমার বউ টাকে,
আর কাচা ফুল গুলোতো সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
-শেষ হয়েছে আপনার ন্যাকামি?হলে প্লিজ বাসায় যান।
-উঁহু এক্টুতো বাকি,

এই বলে আভাস হলুদ নিয়ে আমার নাকে ছুঁয়ে দিলো।
না পারি হাসতে,না পারি কাঁদতে।
মানুষ আগে হলুদ কপালে ছোঁয়ায়।
আর সে আমাকে নাকে ছোঁয়াচ্ছে।

তারপর কপালে আর গালে হলুদ দিয়ে,
মিষ্টি খাইয়ে দিলো।
-আমার না শখ যে আমার বউও আমাকে হলুদ দিয়ে দিবে।দিয়ে দাওনা একটু।
-আপনি যাবেন?

ও আমার হাতটা হলুদে দিয়ে নিজের কপালে হাতটা ছুঁয়ে নিলো।
-হয়ে গেছে আমার ইচ্ছে পূরণ।এবার আমি আসি,আগামীকাল দেখা হবে।

ও চলে গেলো।ছেলে পক্ষের সবাই আমাকে হলুদ দিয়ে,খাবার খেয়ে চলে গেলো।
আমাদের বাসার লোকজনও ওকে হলুদ দিয়ে চলে এসেছে।

রাতে আমাদের বাসার মানুষ আমাকে হলুদ দিলো।
হলুদ দেয়া শেষে সবাই যখন ঘুমাতে চলে গেলো তখন আম্মু আমার রুমে আসলো।

-শাড়ীতে খারাপ লাগছে?খারাপ লাগলে খুলে ফেল।
-না সমস্যা নেই।
-তুই কি রেগে আছিস আমাদের উপর?
-না,রাগ করবো কেন?
-দেখ মা, আভাস খুব ভালো ছেলে।দেখেছিস কিভাবে ও আমাদের সবাইকে আপন করে নিয়েছে।
আর তোকেও খুব ভালবাসে,
নয়তো এত বছর পর তোকেই বউ করে নিতে আসতোনা।
ওর কি মেয়ের অভাব হতো?
-অনেক রাত হয়েছে যাও ঘুমাও।
-আমার একটা কথা রাখবি?
-বলো,
-তুই আভাসকে কোন দিন কষ্ট দিস না।
ছেলেটা বড্ড ভালো।
ওদের সংসার টাকে নিজের সংসার মনে করে আগলে রাখিস।
-হুম।

আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে চলে যায়।

সকালে আম্মুর মোবাইলে আভাসের কল।
রিসিভ করে আম্মু আমাকে দেয়,
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম সালাম।কেমন আছো?
-জ্বী ভালো।
-ইশ আর কয়েক ঘন্টা বাকি,চিরদিনের মত তুমি আমার হবে।এই দিন টার অপেক্ষায় আমি কতটা বছর।আমাদের বিয়ে তে কি তুমি খুশি না?

-(আমি চুপ)
-সমস্যা নেই,খুশি না থাকলেও আমি তোমার মন ভালো করার দায়িত্ব নিলাম।তোমাকে খুশি রাখার দায়িত্ব আজ থেকে আমার।
-আচ্ছা এখন রাখেন,সবাই ডাকছে।
-আচ্ছা ঠিকাছে, লাভ ইউ বউ টা।
-বুঝলাম।
-এই বুঝলামের হিসেব আমি কড়ায়গণ্ডায় নিবো হুহ।
-আচ্ছা।
-ওকে আল্লাহ্‌ হাফেজ।
-আল্লাহ্‌ হাফেজ।

এই প্রথম ওর সাথে কথা বলে আমি মুচকি হাসলাম।

দুপুর হয়ে এসেছে।
পুরো বাড়ী মেহমানে ভরপুর।বাসায় বিয়ের আমেজ।
আমাকে সাজানো হচ্ছে বধূর সাজে।

আমাদের বাসার আত্মীয় স্বজনের খাওয়া দাওয়া শেষ।
একটু পরেই সবার চিল্লাচিল্লি,
বর আসছে বর আসছে।
কেন যেন আমার বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠছে।

আমি রুমে বসে আছি।
আভাস এসে বাইরে স্টেজে বসে।
বসেই বার বার নাকি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,আমাকে এক নজর দেখতে।আমাকে কেমন লাগছে দেখতে।
আমার কাজিনকে ওর মোবাইল টা দিয়েই বলে বোনের কত গুলো পিক তুলে নিয়ে এসোনা।
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
কাজিন ৫০০ টাকা না দিলে পিক তুলে দিবেনা বলে বায়না করে,
আভাস বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকা দিয়েই পিক তুলতে পাঠায়।

কিছু ক্ষণ পর আমার কাজিন,আমার ব্যাক সাইডের কত গুলো পিক তুলে নিয়ে আভাস কে মোবাইল দেয়।
আভাস যখন এক্সাইটেড হয়ে মোবাইলে পিক দেখতে যায়,
দেখে শুধু পেছন সাইডের পিক।

আর আমার কাজিন হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে
ফাইনালি আমাদের বিয়েটা হয়।
এত ক্ষণেও আমি ওর দিকে একবারের জন্যও তাকাইনি।
আর আভাস যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।
শেষ মেস ও ওর ভালবাসার মানুষটাকে নিজের করে পেলো।

আমার আম্মু আভাসকে একটা চেইন পরিয়ে দেয়।

সন্ধ্যা হলে আব্বু আমার হাত আভাসের হাতে দিয়ে বলেন,
-বাবা,বড় আদরের মেয়ে আমার আরফা।
কোন দিন কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেইনি ওকে।
কিছু চাওয়ার আগেই এনে দিয়েছি।
উহ্ শব্দ করার আগে কোলে তুলে নিয়েছি।চোখে পানি আসতে দেইনি।আজ আমার কলিজার টুকরাটাকে আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম।
আজ থেকে ওর দায়িত্ব তোমার।ওকে তুমি আগলে রেখো।

এই কথা বলে আমার আব্বু কাঁদতে থাকে।
একটু পরে খেয়াল করি আভাসও কাঁদছে।
-আপনি কোন চিন্তা করবেন না আব্বু।আমি ওকে সারাজীবন আগলে রাখবো।আপনিও চলুন না আমাদের সাথে,আম্মুকেও নিয়ে চলুন।

এই কথা শুনে আর সবার এক্সপ্রেশন কেমন হয়েছে আমি জানিনা,
তবে আমি আমার বাম হাত টা দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে হি হি করে হেসে দিয়েছিলাম।
যদিও কেউ দেখেনি।ভেবেছিলো আমি কাঁদতেছিই।

-না বাবা আজ না,আগামীকালই আমি তোমাদের নিতে আসবো।

এর পর আমাকে আর আভাসকে আব্বু জড়িয়ে ধরে।
আম্মুও আমাদের জড়িয়ে ধরে কান্না করে।
এদিকে আব্বু কাঁদে,আম্মু কাঁদে,আমি কাঁদি,আমাদের কান্না দেখে আভাসও কাঁদে।

পরিশেষে আব্বু আমাদের গাড়ীতে তুলে দেন,আর বিদায় নিয়ে আমরা চলে আসি।
সারা রাস্তা আমি কাঁদতে কাঁদতে আসি,
যতটা না আম্মু আব্বুর জন্য খারাপ লাগছে,
তারচেয়ে বেশি ভয় হচ্ছে এই ভেবে যে,
আমি তো এবার একা।
আভাস যদি ওকে এত শাস্তি দেয়ার প্রতিশোধ এবার আমার উপর দিয়ে নেয়,তখন কি হবে আমার?
বাসায় নিয়ে আবার ঝাড়ি,ধমক দিবে নাতো?

ভাবতে ভাবতেই গাড়ী এসে একটা জায়গায় থামলো।

মনে মনে ভাবছি,
এখানেতো কোন বিয়ে বাড়ী দেখিনা।
বিয়ের কোন গেইট ও দেখিনা।
এখানে গাড়ী থামলো কেন?

-আরফা নামো গাড়ী থেকে।

আভাসের এই কথা শুনে আমার কলিজা যেন শুকিয়ে যাচ্ছে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here