মধুবালা পর্ব -১২

#মধুবালা [১২]
#ফারজানা_আক্তার

ছোঁয়া ছুটে এসে সবার সামনেই শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয়। শুভ্র কোনোকিছু না ভেবেই ছোঁয়াকে খুব শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। যেনো হালকা করে ধরলেই তার মধুবালা হাত ফসকে দূরে চলে যাবে তার থেকে। সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের দিকে।
হাসি আছে শুধু লিলির ওষ্ঠ জুড়ে। লিলি গিয়ে মান্নান মির্জাকে নিয়ে আসেন। মেয়ের এহেন কান্ডে মান্নান মির্জা সকলের সামনে কিছুটা লজ্জিত হয়ে আছেন।
টিয়া ফুঁসছে রা’গে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ লাল করে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যায়।

কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করতেই ছোঁয়া চলে আসে আর_______

একটু আগের ঘটনা___

দরজায় কটকট শব্দ হওয়ার সাথে সাথেই জায়েদা বেগম ছোঁয়া দরজার দিকে তাকায়। দরজা খোলা থাকায় স্পষ্ট দেখা যায় দরজায় লিলি দাঁড়ানো।
লিলি সাথে সাথেই ঘরে প্রবেশ করে জায়েদা বেগমকে বাহিরে পাঠিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ রে খিল লাগিয়ে দেয়। ছোঁয়া চোখের জল মুছার চেষ্টা করে বারংবার কিন্তু আজ কোনো বাঁধা মানছেনা অবাধ্য জল গুলো। আপন মনে গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে।

লিলি কিছুটা কর্কশ কন্ঠে বলল “আর একবার কাঁদবি তো সত্যি সত্যিই খু’ন করবো আমি তোকে। কিভাবে তুই নিজের জায়গা অন্যকাউকে এভাবে দিয়ে দিচ্ছিস? কিভাবে তুই তোর শুভ্র ভাইকে আর বালাজোড়া অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছিস? একটুও কি বুক কাঁপছে না তোর? তুই কি জানিস শুভ্র ভাই তোকে ভালোবাসে ভীষণরকম ভালোবাসে। তুই যদি একবার ভাইকে বলিস তোর মনের কথা তবে এই বিয়ে এখনই বন্ধ করে দিবে শুভ্র ভাই। প্লিজ ছোঁয়া এতো বড় ভুল করিসনা, জেদের বসে নিজের জায়গা অন্যকাউকে দিয়ে দিসনা এভাবে।”

“শুভ্র ভাই আমাকে ভালোবাসলে ও নিজেই আমাকে বলতো, তোর থেকে জানতে হতোনা আমার এটা। আর যদি সত্যিই শুভ্র ভাই আমায় ভালোবাসতো তবে এতোটা কষ্ট দিতে পারতোনা আমাকে।

তাছাড়া আমি আম্মুকে কথা দিয়েছিলাম ওই বালা জোড়া আর কখনো ছুঁইয়েও দেখবোনা আমি। তাই প্লিজ তুই যা এখান থেকে। একা থাকতে দে আমায়।”

“পারবি তো সহ্য করতে অন্যের পাশে নিজের ভালোবাসাকে আর অন্যের হাতে ছোটবেলা থেকে স্বপ্নদেখা বালাজোড়া?”

“চলে যাবো অনেক দূরে। এতোদিন তো মা ছিলো বলে তবুও কিছুটা গুরুত্ব ছিলো এই পরিবারে আমার কিন্তু এখন তো তাও থাকবেনা বিশেষ করে শুভ্র ভাইয়ের বিয়ের পর থেকে। তাই ভাবছি আব্বুকে আর সোহাকে ম্যানেজ করে চলে যাবো বহু দূরে। আমাকে সবাই অবহেলা করলেও আমি জানি সোহাকে সবাই ভালোবাসেন এই পরিবারের।

আমি জানিনা কেনো সবাই আমাকে অবহেলা করে কিন্তু এতটুকু বুঝতে পেরেছি যে আমি হয়তো এই বংশের কন্যা নয়।”

“এই ছোঁয়া প্লিজ এভাবে বলিসনা। কোথাও যেতে হবেনা তোকে। শুভ্র ভাই পাঠিয়েছে আমায় তোর কাছে। কাজি চলে এসেছে। চল আমার সাথে। ”

“কোত্থাও যাবোনা আমি।”

“শুভ্র ভাই বলেছে তুই যদি সবার সামনে গিয়ে তোর ভালোবাসার কথা স্বীকার করিস তবে বাকিটা ভাইয়া ম্যানেজ করে নিবে এবং আজকেই তোকে বিয়ে করবে। তারপর টিয়ার একটা ব্যবস্থা নিবে বলেছে। তুই কী জানিস টিয়া একটা ষড়যন্ত্র করেছে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে এবং আব্বুকে ভুলভাল বুঝিয়ে বিয়ের ডেট দ্রুত করেছে যাতে ভাইয়া আর তোর সম্পর্ক ঠিক হওয়ার আগেই ও এই ঘরের বউ হয়ে যেতে পারে। প্লিজ চল আমার সাথে, এখন সব তোর হাতে। ”

“মানে কি বলছিস এসব? টিয়া তো খুব ভালো মেয়ে মনে হয়েছে আমার।”

“আমি বেশিকিছু জানিনা। ভাইয়া কিছু বলেনি আমায়, যেটুকু বলেছে তোকে বলেছি আমি। এবার চল দেরি করলে সব শেষ হয়ে যাবে। ভাইয়া বলেছে তুই গেলেই সবার সামনে ওই টিয়ার মুখোশ খোলাসা করবে।”

ছোঁয়া আর কিছু না ভেবে শুধু পরিবারের কথা ভেবে ছুটে গিয়েছে হলরুমে। হলরুমে পৌঁছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে শুভ্রকে।

বর্তমান _____

টিয়া গিয়ে ছোঁয়াকে জোর করে শুভ্রর বুক থেকে আলাদা করে ঠা’স করে থা’প্প’ড় লাগিয়ে দেয় ছোঁয়ার গালে। ছোঁয়া থমকে যায় মুহুর্তে। শুভ্র কিছু বুঝে উঠার আগেই টিয়া এমনটা করায় শুভ্রর রা’গ বেড়ে যায় বহুগুণ। টিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠা’স ঠা’স কয়েকটা থা’প্প’ড় লাগিয়ে দেয় শুভ্র বিরতিহীন ভাবে টিয়াকে। ছোঁয়া হা করে দেখছে সব। টিয়ার মা বাবা আর বেলাল মির্জা নাজমা বেগম এগিয়ে এসে টিয়াকে বাঁচান শুভ্রর হাত থেকে। তবুও শুভ্র থেমে নেয়, সবার বাঁধা দেওয়া সত্বেও সে থা’প্প’ড় লাগাচ্ছে টিয়াকে। টিয়া আর বাকি সবাই হতভম্ব শুভ্রর এমন কান্ডে। বেলাল মির্জা এবার রে’গে’মে’গে হুং’কা’র দিয়ে উঠেন। বেলাল মির্জার হুং’কা’রে কোনো হেলদোল নেয় শুভ্রর। লিলি ছোঁয়াকে আগলে দাঁড়িয়ে আছে আর কানে কানে বলছে একটু অপেক্ষা করতে।
এবার মান্নান মির্জা একটু এগিয়ে এসে শুভ্রকে বলে “কি হয়েছে শুভ্র? হঠাৎ মেয়েটাকে এভাবে আ’ঘা’ত করছিস কেনো?”

“তো কি করবো মেজু আব্বু? এই রাস্তার মেয়ের সাহস হয় কি করে আমার মধুবালাকে আ’ঘা’ত করার?”

“তাইবলে একটা মেয়েকে তুই এভাবে অনবরত মা’র’তে থাকবি? এটা ঠিক না।”

“ওকে আমি মে’রে’ই ফেলবো আজ। আমার সামনে আমার ভালোবাসার গায়ে আ’ঘা’ত করবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো সব?”

এবার টিয়া গ’র্জে উঠে বলে “আমার সামনে আমার হবু স্বামীকে কোনো মেয়ে জড়িয়ে ধরলে তখন কি করা উচিৎ আমার? এমনকি আমাদের বিয়ে পড়ানো শুরু হওয়ার পর।”

“বিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি।”

“দেখো শুভ্র তুৃমি কিন্তু ভুল করছো।”

“আচ্ছা তুই বল তাহলে সঠিকটা কি?”

“আমাদের বিয়ে।”

“লজ্জা করছেনা তোর? তুই কি মনে করেছিস তোর চালাকি আমি জানতে পারবোনা কখনো? কিন্তু আফসোস তোর চালাকি আমি আরো আগেই জেনেছি তাও তোর থেকেই।”

“মানে কি বলতেছো কি তুমি এসব? আমি কেনো চালাকি করতে যাবো?”

“আমি মির্জা বংশের একমাত্র আঙ্গুর বলিসনি তুই?”

কিছু বলছেনা এবার আর টিয়া। শুভ্রর প্রশ্নে ভয়ে চুপসে গেছে সে আর ভাবছে শুভ্র ছিলো তাহলে সেদিন দরজার বাহিরে। বড্ড বেশি আফসোস হচ্ছে টিয়ার এখন নিজের বোকামিতে।

“কি হলো চুপ হয়ে আছিস কেনো? শুধু মাত্র সম্পত্তির লোভে আমার মা বাবার ব্রেইন ওয়াশ করিসনি তুই?”

“বিশ্বাস করো শুভ্র আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি।”

“আর একবার এই জ’ঘ’ন্য মুখে আমার নাম উচ্চারণ করবি তো জিহ্ব টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলবো তোর। চিনিস আমায় তুই? তোর মতো মেয়েকে খু’ন করে জে’ল কাটলেও আফসোস থাকবেনা আমার কোনো কারণ তুই একজন খু’নি, আমার মেজু আম্মুর খু’নি তুই।”

এবার বেলাল মির্জা সহ সবাই টিয়ার দিকে তাকায় অবাক দৃষ্টিতে। কথাটা শোনার সাথে সাথেই মান্নান মির্জা বসে পরে মেঝেতে। সোহাকে জায়েদা বেগম বাহু ধরে জড়িয়ে রেখেছে। ছোঁয়া একদম নরম হয়ে গিয়েছে জ্ঞান হারানোর মতো। লিলি কোনোমতে সামলাচ্ছে ছোঁয়াকে। আর শুভ্র অ’গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টিয়ার দিকে।

টিয়া যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে শুভ্রর মুখে এসব শুনে। সেলিনা পারভীন এর ব্যাপারটা যে সে তার মা বাবার সাথেও শেয়ার করেনি তবে শুভ্র জানলো কেমনে। ভয়ে ঘামছে টিয়া অথচ আমেজ চলছে শীতকালের। তেমন ভ্যাপসা শীত না পরলেও মোটামুটি শীত পরছে ইদানীং। শুভ্র আবারো ঝাঁঝালো কন্ঠে টিয়াকে বললো সব সত্যি বলার জন্য। টিয়া এখন পথ খুঁজছে কোনোরকম পালানোর জন্য। টিয়ার বাবা মা খুব গর্ব করে বললো তাদের মেয়ে কখনো কাউকে খু’ন করতে পারেনা। কিন্তু এদের কথা একটুও বিশ্বাস করলোনা শুভ্র। বেলাল মির্জাও এবার টিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিলো কারণ উনি জানেন শুভ্র কখনো কারো উপর মিথ্যা অভিযোগ করেনা।

প্রায়ই অনেকক্ষণ পর টিয়া বাধ্য হয়েই বলা শুরু করলো______

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here