#মন_গহীনের_গল্প
পর্ব-৪৩
#রূবাইবা_মেহউইশ
💞
রাত আটটায় বাস থেকে নামলো মেহউইশরা। বাস স্ট্যান্ড থেকে খান বাড়িতে যেতে আরো এক ঘন্টা লাগবে। রেহনুমার অবস্থা ভালো ঠেকছে না মেহউইশের । সারাপথ সে রিশাদের কাঁধে মাথা রেখে নিথর পড়েছিলো হঠাৎ হঠাৎ কান্না চাপিয়ে রাখায় চেষ্টায় ফুপিয়ে উঠছিলো। রিশাদ নিষ্প্রাণ সিটে গা এলিয়ে এক হাতে ফুপিকে ধরে রেখেছিলো। রিশাদের অবস্থা এত দূরের পথ ড্রাইভিং করার মত ছিলো না ভেবেই মেহউইশ বলেছিলো হোটেলে আছে এমন কাউকে আনিয়ে নিতে যে ড্রাইভ করে তাদের ঢাকায় পৌছে দেবে৷কিন্তু যে এসেছে সে ড্রাইভিংয়ে নতুন তাই রিশাদ কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে বাসের টিকিট কাটলো। যথাসম্ভব ফুপির সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে দেড়টা পর্যন্ত বসে রইলো বাস কাউন্টারের ছাউনির তলায়। বৃষ্টি ছিলো তখনও তুমুল। ঢাকায় পৌঁছানোর পর মনে হলো এদিকে বৃষ্টি হয়নি। মেহউইশ নির্জনকে পথিমধ্যে কলা আর আপেল খাইয়েছে দুটো বড়রা কিছুই খায়নি । ঢাকায় এসে সিএনজি পেতে অসুবিধা হয়নি খুব একটা৷ সিএনজিতে বসে অব্দি রিশাদ চুপচাপ আর কঠোর মুখে বসেছিলো। বাড়ির গেইটে পা রাখতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো রেহনুমার। ঠিক কত বছর পর পা রাখলো এখানে! তার জন্মস্থান তার শিকড় আটকে আছে এখানে৷ ছলছল চোখে গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখলো বাড়িটা নিস্তব্ধ আর অন্ধকার। বাড়ির বাগান,লন সবজায়গায় তো দিনের আলোর মত বাতি জালানো থাকে সবসময়। আজ এত অন্ধকার কেন সব, কেন এমন হাট করে খোলা গেইট? বাড়ির দারোয়ান, কেয়ারটেকার কোথায় গেল! বাড়িটা কেমন ফাঁকা আর খা খা করছে। রেহনুমা থমকে থাকা কান্নাটা আবারও ছিটকে এলো গলা থেকে; রিশাদ বুঝলো ফুপিটা তার এতক্ষণে বুঝেছে যে তার ভাই আর বেঁচে নেই।কান্নারত রেহনুমাকে একহাতে ভালো করে ধরে রাখলো সে।
‘ ভেতরে যাবে না ফুপি? এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে কি করে?’ বলেই সে তার ফুপিকে ধরে এগিয়ে গেল বাড়ির ভেতর। সদর দরজায় পৌঁছে কানে এলো রাইমার কান্না। সে কাঁদছে হাউমাউ করে তার কন্ঠস্বর ভাঙা ভাঙা, খুব কেঁদেছে বোধহয় মেয়েটা। কাঁদবেই’বা না কেন, সে যে তার বাবার রাজকুমারী ছিলো। খুব আদরের কলিজার একটা অংশ ছিলো সে।বাবাও তার সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে আপনজন ছিলো। মায়ের চেয়েও বেশি ছিলো আর তাই তো বাবার অপরাধগুলো জানতে পেরে সবচেয়ে কষ্ট তারই হয়েছে। রিশাদ, রিহান দুজনেই সুবিধামত মুখ ফিরিয়ে চলে গিয়েছিলো বাবার থেকে দূর। কিন্তু সে তো পারেনি। অভিমানে ফিরে না তাকালেও খোঁজ রেখেছে। শুধু গত তিনটা দিন সে খোঁজ নিতে পারেনি আর শহর ছেড়ে বেরিয়েছিলো তাতেই সে তার এই আপন মানুষটাকে হারিয়ে ফেলল। ফ্লোরে বসে পাগলের মত কেঁদে চলছে সে তার পাশেই বৃদ্ধা মালা। তারও চোখে অবাধ জলের ধারা এছাড়া বাড়ির অন্য কর্মচারীরা বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে থেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে । দরজায় দাঁড়িয়ে রেহনুমা শুধু একবার রাইমাকে ডাকলো তারপরই ঢলো পড়ে গেল নিচে।
রাত তিনটায় লাশবাহী গাড়ি এসে থেমেছে খানবাড়ীর সামনে। ময়নাতদন্তের জন্যই লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। গত পরশু রাতেই লাশ পুলিশ লাশ উদ্ধার ঘরেছে রাশেদ খানের নিজকক্ষ থেকে তখন বাড়িতে কয়েকজন গৃহকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সারাদিন রাশেদ খান নিজ ঘর থেকে বের হননি এবং রাতে বাড়ির কাজের লোকরা দুবার করে দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকেন। কিন্তু কোন সারা পায় না তারা। এরপরই কোন কারণবশত রাশেদ খানের ব্যবসায়িক কাজের জন্য হায়ার করা উকিল আসেন বাসায়। বাড়িতে এসেই তিনি ফোন করেন কয়েকবার কিন্তু ওপাশ থেকে তোলা হয় না। উকিল সাহেব যখন বাড়ির কাজের লোকদের জিজ্ঞেস করেন স্যার বাড়িতেই কিনা তখন বৃদ্ধা মহিলা এগিয়ে আসেন সামনে৷ তিনি জানান আজ সকাল থেকেই ঘরে আছেন একবারও নামেননি। তারা অনেকবার ডাকাডাকি করলে তিনি বলেন সারাদিন যেন না ডাকা হয়। আজ তিনি একা থাকবেন একেবারে রাতে খাবার খাবেন। এ কথা শুনেই কাজের লোকেরা কেউ আর ডাকতে সাহস পাননি। সব কথা শুনেই উকিল সাহেব ভড়কে যান এবং তৎক্ষনাৎ রাশেদ খানের ঘরের সামনে গিয়ে ডাকেন। অনেকবার ডাকার পরও সাড়া না পেয়ে দারোয়ান আর রাশেদ খানের গাড়ির ড্রাইভারের সাহায্যে দরজা ভাঙেন। ততক্ষণে রাশেদ খান দম ছেড়ে এ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছিলেন। উকিল সাহেব আইনের লোক প্রথমেই পুলিশ এবং তারপরই রিশাদের নাম্বারে কল করেন। পুলিশ যথাসময়ে পৌঁছে গেলেও রিশাদের নাম্বারে কল পৌঁছায়নি। এরপরই রাশেদ খানের ফোনের লক তারই আঙ্গুলের চাপ লাগিয়ে আনলক করে রাইমা এবং রেহনুমার নাম্বারে কল দেওয়া হয়। এখানেও রিশাদের মত রেহনুমার ফোনেও কোন কল ঢোকেনি কিন্তু রাইমাকে তার বাবা এক্সিডেন্টে গুরতর আহত বলে জানানো হয়। তখনি রাইমাকে নিয়ে তানভীর আর বাকি বন্ধু-বান্ধবীরাও ফিরে আসে ঢাকায়। রাইমা আর তানভীর প্লেনে আসায় তারায় রাতেই ঢাকায় পৌঁছায়। তানভীর জোর করেই রাইমাকে বাড়িতে রেখে হাসপাতালে যায়। কিন্তু সে পরিবারের কেউ নয় বলেই লাশ হস্তান্তর করা হয়নি সারাটাদিন। তানভীর অনেক চেষ্টা করেই এগারোটার দিকে রিশাদকে কলে পায় যা মেহউইশ রিসিভ করে আর জানতে পারে এই মৃত্যুসংবাদ।
গাড়ি থেকে লাশের কফিন নামিয়ে রিশাদ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। বুকের ভেতর খুব ভার ভার লাগছে অথচ তার চোখ ভিজে আসছে না। গলায় আটকে আসা কিছু শব্দ জোর করছপ বের করে দিতে বাবার উদ্দেশ্যে তাও পারছে না। রাতের আঁধার এখনও অনেক গাঢ় সেই গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে রিশাদ তার বাবার মুখটাকে মনে করার চেষ্টা করছে। বাড়ি এসে উকিলকে কল করতেই তিনি তাকে হাসপাতালে যেতে বলেছেন । রাতেই রিশাদ সবরকম ফরমালিটি পূরণ করেছে। তারপরই আর দেরি করেনি আর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে৷ তানভীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিশাদের । তার ইচ্ছে করছে কিছু বলে রিশাদকে সান্ত্বনা দেয় কিন্তু কি বলবে! হঠাৎ থানার ওসি এসে একটা খাম এগিয়ে দিলেন উকিল সাহেবকে এবং বলে গেলেন খামটা যেন তার বাবাকে কবর দেওয়ার পর বাড়ি ফিরলে দেওয়া হয়। রাতটা শেষের দিকে বাড়িটার চারপাশ নিস্তব্ধতা আর বাড়ির মধ্যিখানে দুটো কান্নার সুর সেই নিস্তব্ধতাকে কেটে দিচ্ছে করাতের মত৷ নির্জন ঘুমিয়ে আছে বলে মেহউইশ তাকে ঘরে শুইয়ে দিয়েছে আর তার পাশে একজন এ বাড়ির গৃহকর্মী বসে আছেন। মেহউইশ একবার রেহনুমা আরেকবার রাইমার কাছে বসছে দুজনের কাউকেই থামাতে পারছে না। পরিস্থিতি এমন যে তার মাকে জানানোর কথাও মনে ছিলো না। মা থাকলে হয়তো সামলাতে পারতো তাদের। বাড়িতে নাকি রাতে লাশ থাকলে কোরআন তেলাওয়াত করতে হয় রাতভর অথচ এ বাড়িতে একজনও করছে না তেলাওয়াত। এমন পরিস্থিতিতে সে আগে কখনও পরেনি, এমন শোকাহত আপন কাউকে সে দেখেনি। মরা লাশ এবং সেই মৃতের আত্মীয়দের আহাজারি তো সে কতোই দেখেছিলো হাসপাতালে। কিন্তু নিজেরই আপন যে তারই কাছের কারো মৃত্যু! রিশাদ,রাইমা,রেহনুমা তিনজনকেই সে আপন ভাবে আর রাশেদ খান এই তিনজনেরই আপন।
ফজরের পরপরই দাফনের কথা ঠিক করা হয়েছিলো। কিন্তু জেবুন্নেসা আর রিহানের ফ্লাইট সকাল ছয়টায় থাকায় তারা এসে পৌঁছাতে পারেনি। দাফনের সময় পেছানো হয়েছে শুধুমাত্র রিহানের জন্য কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে একমাত্র রিহানই কোন শোক প্রকাশ করেনি বাবার মৃত্যুতে। তারা যখন বাড়ি ফিরেছে তখন রিশাদ নিজেই রিহানকে ডাকে বাবার খাটিয়া ধরতে। চওড়া আর উঁচু কাঁধ, ঠোঁটের উপর সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পরা ছোট ছোট গোঁফে ভরা ছেলেটা তার বড় ভাইয়ের হাত ছাড়িয়ে সরে দাঁড়ায় এবং খুবই সহজ আর শান্ত ভঙ্গিতে বলে, ‘ তোমরা যাও আমি কবরস্থানে যাবো না।’ বাবার সাথে রিশাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতার কারণ শুধুমাত্র বাবার টাকার অহংকার এবং তাঁর অর্থের প্রতি লোভ।কিন্তু রিহানের বিচ্ছিন্নতার কারণ তার মায়ের সম্মান,সম্ভ্রম। বাবার অবহেলা তাকে ততোটা কষ্ট দেয়নি যতোটা দিয়েছিলো মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়গুলো জানতে পেরে। জেবুন্নেসা কখনোই ভালোবাসতে পারেনি তার স্বামীকে কিন্তু একসাথে অনেকগুলো বছর একই সম্পর্কে বাঁধা ছিলো। তার সন্তানদের বাবা ছিলেন এই লোকটা সে কারণেই বোধহয় এই শেষ মুহূর্তে এসে তার মনের ঘৃণার পাথর সরে গেল। দু চোখ তারও অশ্রু গড়ালো অঝোরে, নিঃশব্দে । ডিভোর্স তাদের কার্যকর হয়েছিলো মাত্রই দু মাস আগে। এ দু মাস আগেও তারা একে অন্যের অধিকারের ক্ষেত্র ছিলো৷ রিশাদ কাল থেকে এখন পর্যন্ত একফোঁটাও জল ফেলেনি। বার কয়েক তার চোখ জ্বালা করেছে, চোখে জল কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে কিন্তু কি আশ্চর্য ব্যাপার জল গড়ায়নি একটিবারও। লাশ দাফনের সময় রিশাদ ভালো করে তাকালো পুরো কবরস্থানে । চারপাশে অসংখ্য নতুন পুরাতন কবরে ভর্তি এ কবরস্থান৷ এখানেই আছে সিমেন্টে,বালুতে বাঁধাই করা তার মায়ের কবর। এ জীবনে সে মাত্র কয়েকবারই এসেছিলো কবরস্থানে সেও কিনা শুধু মায়ের কবর জিয়ারত করতে। বাবার সাথে এসেছে ক’বার ঠিক মনে নেই তবে বাড়ির দারোয়ান আর বৃদ্ধা মালা দাদীর বরের সাথেই এসেছিলো বেশিরভাগ সময়। বাবার লাশ কবরে রাখতে গিয়েই মনে পড়লো এ জীবনে এই প্রথম সে কাউকে দাফন করছে। কাউকে ভাবছে কেন নিজের বাবাকে দাফন করছে৷ জীবন কত বিচিত্র! এখানে একদিন তাকেও আসতে হবে। একজন মুসলিম হিসেবেই তাকে এ মাটির তলায় শুতে হবে সকল ঐশ্বর্য আর অহংকার তখন এই মাটির তলায়ই মিশে যাবে। দাফন শেষ হলেও রিশাদের কান্না পেল না৷ মানুষটা যেমনই ছিলো, ছিলো তো তার বাবা’ই। তার কেন কান্না পায় না! সে কেন কষ্টগুলোকে জল করে ভাসাতে পারছে না? নাকি সে কষ্টই পাচ্ছে না বাবার জন্য!
নভেম্বরের মাঝামাঝি চলছে সময়টা , গরম নেই না আছে শীত। পাহাড়ে যেখানে রাত হলেই কম্বল লাগে, দিনের বেলায় গা জ্বলা গরম। সেখানে এই ঢাকা শহরে এখনও প্রচণ্ড গরম। ঘামে গা ভিজে চুপচুপে হয়ে উঠেছে রিশাদ গা। একটু আগেই সে এসে বসেছে বাড়ির সদর দরজার সামনের সিঁড়িতে। ডুপ্লেক্স বিশাল এই বাড়িটির প্রতিটি ইট,পাথর সৌন্দর্যে ভরপুর৷ এই সৌন্দর্যের পেছনে কোটি টাকা ব্যয় করা মানুষটা একটু আগেই শায়িত হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে। কোটি টাকার অর্থ সম্পদের এক কণাপরিমাণ কিছুই তাঁর সঙ্গে যায়নি৷ নিজের বলতে নিয়ে গেছে শুধু কাফনের কাপড়টাই।
-‘ রিশাদ, এই নাও এটা তোমার বাবার বিছানায় পাওয়া গিয়েছিলো।’ উকিল সাহেব একটা মোটাসোটা সাদা খাম রিশাদের দিকে এগিয়ে দিলো৷ রিশাদ মাথা উঁচিয়ে খামটা দেখলো কিন্তু কিছু বলল না আর না হাত তুলে খামটা ধরলো! দরজায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছিলো মেহউইশ তাই সে এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি আছে এটাতে?’
-‘আপনার পরিচয়?’ উকিল সাহেব কৌতূহলের সাথে প্রশ্ন করলেন৷
-‘আমি মিসেস রিশাদ’ মেহউইশ জবাব দিলো।
উকিল সাহেব কি ভাবলেন কে জানে! কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে খামটা এগিয়ে দিলো মেহউইশের দিকে আর বলল খামটা যেন সাবধানে রাখে। এতে অনেক কিছুই আছে যা রিশাদ এবং তার ভাইবোনের জন্য দরকারী৷ মেহউইশ খামটা রেখে দিলো সযত্নে৷ সকালেই মাইমুনাকে ফোন করে জানিয়েছিলো রিশাদের বাবার মৃত্যুর কথা আর তখনি সে মিহাদকে নিয়ে চলে এসেছে৷
মেহউইশ খামটা রেখে আবার এসেছিলো রিশাদের কাছে। বাড়িটা এখন পুরোপুরি নিস্তব্ধ , রাইমার গলার আওয়াজ এখন আর শোনা যায় না। সে কাঁদলেও আর তার স্বর ঘর ছাপিয়ে বাইরে আসছে না। রেহনুমা পড়ে আছে নিজের ঘরে মাইমুনা জোর করেই তাকে বিছানায় শুইয়ে এসেছে। জেবুন্নেসা বসে আছে রাশেদের ঘরে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে তার প্রতিটা জিনিস ঘরে থাকা প্রত্যেকটা বস্তু৷ লোকটাকে সে ঘৃণা করতো বলেই জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়েও সম্পর্কের সমাপ্তি টেনেছিলো। কিন্তু তাই বলে কি সে চেয়েছিলো লোকটা এভাবে ছেড়ে যাক সব! ছেলে মেয়েদের জন্য হলেও সে লোকটার এমন মৃত্যু কখনো চায়নি।
দুপুর এর পর রিশাদ তার নিজের ঘরে এসে খাটের সামনে পা ছড়িয়ে বসে পড়লো ফ্লোরে৷ মেহউইশ ঘরে এসে খামটা আলমারি থেকে বের করে ধরলো রিশাদের সামনে। রিশাদ নিলো খামটা এবং সেটাকে ছিঁড়তেই প্রথমে বের হলো একটা ফটোকপি রেজিস্ট্রি পেপার। সেটাকে রেখে দ্বিতীয় যে কাগজটি বের হলো তা হলো তার ঢাকার ফ্যাক্টরির একটি লিগ্যাল কাগজ তারপর আরো একটি তারপর আরো একটি৷ পরপর যে ক’টি রেজিস্ট্রি পেপার বেরিয়েছে সবগুলো কপি। এবং শেষে যে কাগজটা বের হলো তা একটি চিঠি৷ চিঠিটা তিন কাগজে তিন অংশে লেখা আর প্রতিটা অংশে একটা করে নাম উল্লেখ করা। প্রথম অংশে লেখা নাম রিশাদ, দ্বিতীয়টিতে রাইমা এবং তৃতীয়টিতে নাম রিহানের৷ রিশাদের ঘরের বারান্দায় কোথা থেকে উড়ে একটি কাক এসে বসলো। কাকটি বসেই তার স্বরে কা কা করে ডাকতে লাগলো। হাতের চিঠিটা দু বার এপিঠ ওপিঠ দেখে আবার খামে ভরে রেখে দিলো বিছানায়৷ দৃষ্টি তার বরান্দার সেই কর্কশ গলায় ডাকতে থাকা কাকটার দিকে।
#মন_গহীনের_গল্প
পর্ব-৪৪
#রূবাইবা_মেহউইশ
💞
প্রিয় রিশাদ,
আমার প্রথম এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ তুমি বাবা। আমার আর রেবুন্নেসা কলিজার টুকরো তুমি। আমি জানি বাবা হিসেবে আমি তোমার প্রাপ্তির খাতায় অর্থবিত্তের বাইরে কিছুই দিতে পারিনি এমনকি মা হারা তোমাকে ঠিকঠাক বাবার স্নেহটাও দেইনি৷ জীবনের অনেক বড় একটা সময় আমি মিথ্যে অহংকার আর দাম্ভিকতায় পার করতে গিয়ে সততা ভুলে গেছি। উত্তরাধিকার সূত্রে শুধু সম্পদই নয় রক্তের ভেতর ক্রোধ অহংকারের ধারাটাও পেয়েছি আমি এবং আমার ঔরসজাত হিসেবে তুমি আর রিহানও পেয়েছো। তবে আশাকরি আমার শেষটা যেমন হবে আমার সন্তানদের তা নয় কারণ তাদের দেহে শুধু আমারই না তাদের মায়ের রক্তও বিদ্যমান। জীবনে আমি অনেক পাপ করেছি আর সবচয়ে বড় পাপ বোধহয় আমি জেবুন্নেসাকে কষ্ট দিয়েই করেছি। তার মন থেকে আসা অভিশাপগুলো জীবনের এই শেষ মুহূর্তে সত্যি হয়ে গেল রে বাবা। দোষ দিচ্ছি না তাকে সেই ক্ষমতাও আমার নেই কিন্তু আমি আমার পাপের শাস্তি পেয়ে যাচ্ছি দুনিয়ায় থেকে। শুনেছি তুই যাকে পরে বিয়ে করেছিস সেই মেয়েটি নাকি বিয়েতে রাজী ছিলো না, জোর করে বিয়ে করেছে আবার তার জীবনেও নাকি আগে থেকেই কেউ ছিলো। তোর জন্য লেখা চিঠিটা শুধুমাত্র তোমার এই জোর করে বিয়ে করার কারণেই লিখছি৷ আমি তো জানি তুমি যতোই রাগী যতোই দাম্ভিকতা দেখাস না কেন তোর ভেতরটা তোমার মায়ের মতোই কোমল৷ উপরের খোলস তোমাকে আমার প্রতিচ্ছবি প্রমাণ করলেও ভেতরটা রেবুরই মতন৷ আমার জীবনের অনেকগুলো পাপের পুনরাবৃত্তি তোর দ্বারা হয়েই গেছে জেনে প্রথমে এক পৈচাশিক আনন্দ পেয়েছিলাম। গর্ব করে বলেছিলাম জেবুন্নেসাকে, রক্ত কথা বলে। কিন্তু আজ এই অবস্থায় কোটি কোটি টাকায় তৈরি এই মহলে একলা থেকে বুঝতে পারছি সে গর্ব মিথ্যে । রাতের আঁধারে যখন এই বিশাল ঘরটিতে চোখ বুঁজে শুয়ে পড়ি তখন বুঝতে পারি আমার ঘুম নেই চোখের পাতায়। আমার পাশে আমার সন্তানেরা নেই, আমার স্ত্রী নেই৷ আমার যখন খুব ইচ্ছে করে দুটো কথা বলার তখন বাড়িভর্তি কাজের লোকের ভীড়ে আমার আপন একজন মানুষ নেই। কোটি কোটি টাকায় কেনা হাজারো কর্মচারী থাকে আমার অথচ দুন ভরসা করার মানুষ নেই। আমার করা অন্যায়ের শাস্তি তোমরা একজনও সামনে থেকে দাওনি কিন্তু সেই শাস্তি প্রকৃতি আমায় প্রতি সেকেন্ডে দিয়ে গেছে। বুকে আগলে রাখলাম না কেন তোদের , কেন বুঝলাম না আগে আমি যা করছি তা পাপ। আজ যে মুহূর্তে আমি উপলব্ধি করেছি সে মুহূর্তে আমার কোন সুযোগ নেই কারো কাছে মাফ চাওয়ার। জেবুন্নেসার সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। আমার বড় সন্তান আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, আমার ছোট সন্তান আমার পরিচয়টাও মুছে দিয়েছে তার জীবন থেকে। সে তার মায়ের সন্তান হিসেবেই নাকি বড় হতে চায়, বেঁচে থাকতে চায় আর রাইমা আমাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু কখনো আর বাবা বলে ডাকতে চায় না। ভয়ংকর একাকীত্ব আমি আর সইতে পারছিনা বাবা। যা যা করেছি সব ক্ষমার অযোগ্য আজ বুঝতে পারছি। আর তাই তোমাকে লিখছি তুমি যাকে বিয়ে করেছিস তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নে৷ তোমার শেষ পরিণতি যেন আমার মত না হয়। সময় থাকতে ভুল শুধরে নিও বাবা। আমি জানি তুমি রাইমা, রিহান,রেহনুমা কাউকেই অবহেলা করবে না তবুও শেষবারের মত তোমার কাছে অনুরোধ রইলো তাদেরকে আগলে রেখো।
ইতি
তোর কুলাঙ্গার বাবা
হাতের ফাঁক গলে পড়ে গেল চিঠিটা ফ্লোরে। খাটে হেলান দিয়ে তখনো বসে ছিলো রিশাদ। চিঠিটা পড়ে যেতে দেখে মেহউইশ এসে বসলো ফ্লোরে রিশাদেরই পাশে৷ চুপচাপ কাটলো কিছু সময় এরপর মেহউইশ জানতে চাইলো কি লেখা আছে চিঠিতে!
জমে থাকা বরফে যেন হঠাৎ কেউ আগুন ছুঁইয়ে গলিয়ে দিলো সবটা। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো রিশাদ। সে কান্না হৃদয় এফোঁড়ওফোঁড় করা কান্না৷ সে কান্নায় ধারালো যন্ত্রণা মেশানো যা ক্ষত করে দিচ্ছিলো পাশে বসে থাকা মেহউইশের অন্তরও। কখনো কারে কান্না এতোটা তীক্ষ্ণও হতে পারে জানা ছিলো না মেহউইশের । তার চোখ ঘোলাটে হয়ে এলো অশ্রুতে সিক্ত হয়ে। মৃত্যুসংবাদ শোনার পরও যে চোখের পর্দা ভেদ করে জল নামেনি সে চোখে এখন পাহাড়ি ঝর্ণার অবাধ বয়ে চলা। আনমনেই মেহউইশ জড়িয়ে ধরলো রিশাদকে। সান্ত্বনা দিতে না জানা মেয়েটাও খুঁজতে লাগলো হাজারো সান্ত্বনাবাণী। হাজারো এমন শব্দ যা রিশাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই এ কান্না থেমে যাবে।
রাইমা,রিহান, রিশাদ তিনজনই চিঠি পড়েছে স্বনামীগুলো। রিশাদ ছাড়া বাকি দুজনের চিঠিতেই শুধু কয়েক অক্ষরে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে নিজের পাপাচারের জন্য; ওই দুজন সন্তানই বাবাকে ছেড়েছে শুধুমাত্র তাদের মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের জন্য ।খামে থাকা সকল লিগ্যাল কপি কাগজগুলো ছিলো রাশেদ খানের প্রতিটি সম্পদের বিবরণী। রিহান,রিশাদ,রাইমা, রেহনুমা সবার মধ্যেই সকল সম্পদের ওয়ারিশনামা আছে এমনকি ছোট্ট নির্জনও বাদ পড়েনি এর থেকে। কিন্তু এই অর্থ সম্পদ গ্রহণ করবে না কোন সন্তানই এমনটাই বলেছে তারা৷ জেবুন্নেসা কিছু বলতে চেয়েও রিশাদকে বলতে পারেনি৷ রেহনুমার অংশ রেহনুমা রেখেছে কিন্তু তা ভোগ করার সিদ্ধান্ত সে এখনও নেয় নি। মৃত্যু মানুষের জীবনে একটা ধাপ মাত্র; এখানেই শেষ নয়। ইহকালের ধাপ পেরিয়েই পরকালের জীবনে পা রাখা মাত্র। দুনিয়ার সকল কাজের হিসাব এবং তার ফলাফল ভোগের জীবনে প্রবেশ করতেই মৃত্যু একটা পথ। সময়ের স্রোতে বয়ে গেছে জীবনের গতি শ্লথ হয়ে তবুও থেমে যায়নি৷ রাশেদ খানের দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করারও কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। সবাই আপন কাজে আবারও লেগে পড়েছে ঠিকঠাক মতোই শুধু মাঝেমাঝে মৃত মানুষটার স্মৃতি হানা দেয় বুকের ভেতর। তেমনও স্মৃতি নেই রিশাদের জীবনে বাবাকে নিয়ে তবুও তো সে জন্মদাতা পিতা। তার বিয়োগে দুঃখ তো গ্রাস করবেই তাই করে৷ রিহানের মন নরম হয়ে গেছে গেছে কিন্তু তাতে আর লাভ কি! শেষ বেলায় তো বাবার মুখটাও সে দেখেনি। কাঁধে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতেও বাবার লাশ কাঁধে তোলেনি৷ মায়ের সাথে যা হয়েছে তার শাস্তি বাবা দুনিয়া থেকেই পেয়ে গেছেন। বাবা যে অসহায়ত্বে পাগল হয়ে আত্মহত্যা করেছেন তারপরও আর বাকি থাকে কোথায় তার শাস্তি দেওয়ার! রাইমা কাঁদে এখনও প্রতিদিনই বাবার জন্য কিন্তু তার কি সাধ্য বাবাকে ফিরিয়ে আনার। তবে সে বাবার সন্তানের দায়িত্ব পালন করেছে ঠিক ঠিক। মৃত বাবার হয়ে সে তার মায়ের পায়ে পরেছে বাবার জন্য ক্ষমা চাইতে৷ জেবুন্নেসাও ভাবে মৃত মানুষের প্রতি আর ক্ষোভ কিসের!
বিষন্ন শীতের শেষে ত্বকে টান পড়া গরম আর বাতাসে বুনোফুলের নতুন করে আগমন। দিনের মধ্যাহ্নে নির্জনের ছুটোছুটিতে অতিষ্ঠ মেহউইশ একের পর এক ধমক দিচ্ছে। ছেলেটা আজকাল একদম কথা শুনতে চায় না। কে বলবে এই ছেলেটাই কিছুদিন আগেও কেমন নিঃশ্চুপ আর চুপ ছিলো। রেহনুমা রান্না শেষ করে মাত্রই গোসলে ঢুকেছে। নির্জনের খাওয়ার সময় হয়েছে বলে মেহউইশ ভাবছিলো সে পরে গোসল করবে আগে ছেলেটাকে খাওয়াবে। এখন মনে হচ্ছে সে আর আজকে সন্ধ্যের আগে সুযোগই পাবে না৷ এক লোকমা ভাত মুখে দিতেই নির্জন ঘর,বারান্দা,করিডোর সব দৌঁড়ে এখন এসেছে কর্টইয়ার্ডে। অনেক বলেও থামানো যাচ্ছে না তাকে। নির্জন দৌঁড়ে যখন গেইটের কাছে এলো তখনি দারোয়ান গেইট খুলল আর প্রায় সাথে সাথেই রিশাদের গাড়ি ঢুকল বাড়ির ভেতর। করিডোর থেকে নির্জনের সাথে চিল্লাতে থাকা মেহউইশ হাতের প্লেট ফেলে দৌঁড়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো। ভয়ে তার আত্মাটাই যেন উড়ে যাচ্ছিলো দেহ থেকে৷ আরেকটু হলেই তো নির্জন গাড়ির চাকায় পিষ্ট হতো ভেবেই কান্না পেয়ে গেল তার। তাকে ওভাবে দৌড়ে আসতে দেখে রিশাদও দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এলো। কয়েক সময় নিয়ে রিশাদ বলল, ভেতরে এসো পানি খাও মেবিশ৷ ভয় পেয়ে ছিলে খুব!
রিশাদের এমন আদর করে কথা বলা শুনে রেগে গেল মেহউইশ। তার বুঝি কলিজাটাই ফেটে যাচ্ছিলো ভয়ে! রিশাদ বুঝতে পারলো মেহউইশের ভয় তাই নির্জনকে নিজের কোলে নিয়ে একহাতে মেহউইশকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। ততক্ষণে রেহনুমাও বেরিয়ে এসেছিলো৷ মেহউইশের অমন চিৎকার শুনে সেও এসেছিলো বাইরে৷ রিশাদ ফুপিকে ইশারা করলো তেমন কিছু হয়নি। মেহউইশ একটু ভয় পেয়েছিলো।
‘কিছু হয়নি মানে কি? এখনই তো কিছু হতে পারতো।’ ঝাঁঝালো গলায় বলল মেহউইশ।
‘ আচ্ছা, রিল্যাক্স। আমি এমনিতেও গেইট দিয়ে স্লোলি ঢোকাই আর নির্জনকে আমি দেখেছি। তাকে দেখেই ব্রেক কষেছি তাই ওর জন্য কোন বিপদ হওয়ার ছিলো না’তো।’ রিশাদ খুব করে বোঝাতে চাইলো মেহউইশকে তার ভয় কাটানোর চেষ্টা করলো। এরপরই রেহনুমা প্রশ্ন করলো আজ সে এত তাড়াতাড়ি বাসায় কেন! প্রতিদিন তো লাঞ্চ সে হোটেলেই করে। কখনো সখনো খাবার নিয়ে যায় বাড়ি থেকে কিন্তু বাসায় এসে খায় না। রিশাদ বলল কাজ আছে একটু আর মেহউইশকে নিয়ে এক জায়গায় যেতে হবে। কিছু সময় বাদেই মেহউইশ যখন খাবার সাজাচ্ছিল টেবিলে তখনি রিশাদ গেল রেহনুমার ঘরে। রেহনুমা কিছু জিজ্ঞেস তার আগেই রিশাদ বলল, ‘ফুপি, আমি মেবিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে চাই। জীবন, মৃত্যু কিছুই তো আমাদের নিজের হাতে নেই। বাবার জীবনে যা ঘটেছে, তিনি নিজে যা করেছেন তার থেকে আমি একদমই ব্যতিক্রম নই। বাবার জীবনীর পুরোপুরি পুনরাবৃত্তি ঘটার আগেই আমি নিজেকে শুধরে নিতে চাই। যতোটা সম্ভব নিজের পথের কালোদিক সরিয়ে আলোয় চলতে চাই। আমার জীবনের ত্রিশটি বছরে কেউ আমার পথ নির্দেশক হয়নি,কেউ আমায় ঠিকঠাক ভালোমন্দ বুঝতে শেখায়নি। সময়ের সাথে এগিয়ে এসেছি আমি। কাজের লেকরা টাকার বিনিময়ে আমায় খুশি কিনে দিতো সেই খুশিতে তৃপ্তি কি জিনিস তা আমি কখনোই বুঝতে পারিনি। আজ আমি যা বুঝতে চাইছি তার জন্য আমার আব্বুর জীবনের প্রদীপ নিভেছে। আব্বুর মৃত্যু এবং তাঁর যন্ত্রণা আমায় অনেক কিছু শিখিয়েছে। যে পথ আমার আব্বু তৈরি করেছে, যে পথে হেঁটে এসেছি সে পথে আমি আমার সন্তানকে হাটাতে চাই না। আমার ভাইটাকেও আমি সে পথে চলতে দিতে চাই না। আর এসবের জন্য আমায় আগে নিজের সকল ভুলের ক্ষমাই জরুরি৷ মেবিশ ছাড়া আমি আর কাউকে মানসিক আঘাত দেইনি। খালাকে যেটুকু দিয়েছে তার জন্য বহুবার ক্ষমা চেয়েছি এবং পেয়েছিও। এবার আমার স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার বাকি৷’ বলতে বলতে থেমে গেল রিশাদ। রেহনুমা অপলক চেয়ে রইলো রিশাদের মুখের দিকে। কতেটা বদলে গেছে এই ছেলে! ঠিক কতোটা সে নিজেকে বদলে নিতে চাইছে? সে কি সত্যি চাইছে জীবনটাকে নতুন করে সঠিকভাবে শুরু করতে! চাইলে করুক শুরু । মেহউইশের সত্যি পাওনা আছে রিশাদের থেকে এমন কিছু।জীবনটা ক’দিনের কে জানে! সময় থাকতেই শুধরে নেওয়া উচিত সবার। এতে করে শেষটা সবার প্রাপ্তির না হলেও অন্তত তার মত বিচ্ছেদের হবে না। এমন বিচ্ছেদ, যে বিচ্ছিদে সে দোষ না করেও দোষী। ভুল না করেও অপবাদের চিহ্ন গায়ে থাকবে না। চোখের পাতা জলে টইটম্বুর হয়ে গেছে তবুও তা বাঁধ ভাঙেনি। নিজের একটি হাত উঁচিয়ে আলতো করে রিশাদের মাথায় বুলালো রেহনুমা। মনে মনে অজস্র দোয়া দিলো, সুখী হ তোরা। সুন্দর হোক তোর জীবনের মেহউইশের বন্ধনে বন্দী থেকে আমি মন থেকে দোয়া করি।
চলবে
চলবে