#মন_গহীনে
#পর্বঃ২
#দোলন_আফরোজ
না বাবা, আমি যাবো না আমার পুতুল বউ কে ছেড়ে। আমায় প্লিজ নিয়ে যেও না।আমি খেলবো আমার পুতুল বউ নিয়ে। আমি যেতে চাই না তোমাদের সাথে। বাবার পা ধরে ছোট্ট কাব্য কাদছে আর বলছে।
বাবা কোলে তুলে নিয়ে ছেলের মুখে শত সহস্র চুমু দিয়ে বলে আমরা আবার আসবো তো, তখন তোমার পুতুল বউ কে নিয়ে যাবো আমাদের সাথে। বলেই গাড়িতে উঠে যায়।
কাব্য বার বার ছটফট করছে নেমে যাওয়ার জন্য, বাবা বুকে চেপে ধরে ছেলেকে।
এদিকে কাব্যর পুতুল বউ মায়ের কোলে বসে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।।
হঠাৎ করেই যেনো পুতুল বউ টা মায়ের কোল থেকে পরে গেলো।
পুতুল বউ, বলে এক চিৎকার করে ঘুম ভেঙে যায় কাব্য। বুকের বা পাশ টায় হাত দিয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসে। চিৎকারের আওয়াজ এতো জুড়ে ছিলো পাশের রুম থেকে মা বাবা, ভাই ভাবি সবাই চলে আসে।
মা পাশে বসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে, বাজে স্বপ্ন দেখেছিস বাবা?
করুন চোখে চেয়ে, হুম আবার সেই বাজে স্বপ্ন টা।
ভাইঃ তুই এইসব চিন্তা করা কবে বাদ দিবি বলতো? আর কতো? আর কতো ছেলেমানুষী করবি এসব নিয়ে।
সেলিম আহমেদঃ শাহানারা, তোমার ছেলেকে এই পাগলামি বন্ধ করতে বলো। এমন চলতে থাকলে ওর পাগল হতে আর বেশি সময় লাগবে না।😡
কাব্যঃ বেরিয়ে যান এখান থেকে। আমি কাউকে ডেকেছি এখানে আসতে? এটাতো রোজকার ই ঘটনা, কেনো বার বার ছুটে আসেন সবাই।আর পাগলের কথা আপনি বলছেন? নিজ হাতে পাগল বানানোর রাস্তা তৈরি করে এখন বলছেন পাগল হতে দেড়ি নেই।( রাগে ফুসতে ফুসতে)
কায়েসঃ পিঠে হাত রেখে, ভাই তুই শান্ত হ প্লিজ। কেনো এসব নিয়ে এতো ভাবিস বলতো।
কাব্যঃ উনাকে এক্ষুনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বল।সহ্য করতে পারিনা আমি উনাকে।
ছেলের এহেন কান্ড দেখে সেলিম সাহেব চোখের জল ফেলেন। সেদিন এই ভুল টা না করলে হয়তো ওদের বাপ ছেলের সম্পর্ক টা আজ স্বাভাবিক থাকতো।
মায়ের হাত ধরে, মা প্লিজ উনাকে এখান থেকে যেতে বলো না। আমার মাথা খারাপ হয়ে যায় উনাকে দেখলে।
আর এক মুহূর্ত দঁাড়াতে পারলেন না সেলিম সাহেব, বেড়িয়ে গেলেন ছেলের ঘর থেকে।
আজ ঢাকায় এসে অনেক টাকা পয়সা কামিয়েছেন তিনি। সাথে অনেক নাম ও, কিন্তু ছেলেটাকে যে চিরতরে হারিয়ে ফেললেন উনি।গ্রামে থাকলে আজ হয়তো এতো টাকা পয়সা, এতো নাম ডাক কামাতে পারতেন না, তবে নিজের ছেলেটাতো পাশে থাকতো,বাবা বলে ডাকতো।ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।
মা ছেলের মাথাটা বুকে চেপে ধরে কায়েস আর অর্নাকে ইশারা করে চলে যেতে।ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, কেনো মনে রেখেছিস ওকে? ভুলে যা বাবা,শুধু শুধু কষ্ট বাড়াস না।
তৎক্ষনাৎ মুখ তুলে মায়ের মুখের পানে চেয়ে, অসম্ভব, কোনো দিন ও ভুলতে পারবো না আমি ওকে।
যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন সাজিয়ে রেখেছিস সে তো এসবের কিছুই জানে না।
আমি জানাবো ওকে, আমার ভালোবাসায় রাংগাবো।
কতো খুজলাম, পেলাম নাতো রে। কেনো নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিস না?
আমৃত্যু খুঁজে যাবো তাকে।মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ তো তাকে ফিরিয়ে দেয় না।আমি তো তাকে মন থেকেই চাই, আল্লাহ কি আমায় ফিরিয়ে দিবেন?
ছেলের এহেন কথায় মা চোখের জল মুছে। কেনোযে সেদিন চলে এসেছিলো। বুঝতেই পারেনি ছেলে ছোট্ট বেলার খেলার ছলে বলা কথাটা ছেলে এতোটা গভীর ভাবে নিবে।মনে পরে সেদিন টার কথা, যেদিন গ্রাম ছেড়ে সাভার চলে আসে।অনেকটা জোর করেই কাব্য কে আনা হয়েছিলো,আসতে চায়নি তার পুতুল বউ কে ছেড়ে। আনার পর টানা দেড় মাস ছেলে জ্বরে পরে, বিছানায় পরে ছিলো।ইচ্ছে করেই তখন আর ওদের সাথে যোগাযোগ করেনি। থাকতে যেহেতু এখানেই হবে কি দরকার আর যোগাযোগ করে। এর মাঝে ছেলে হয়তো অন্যান্য বন্ধু পেয়ে ভুলে যাবে আগের কথা।
কিন্তু দিন যেতে লাগলো ঘটতে লাগলো উল্টো ঘটনা। ছেলের পাগলামি দিন কে দিন বেড়েই চলেছে।উপায় না পেয়ে সেলিম সাহেব যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন।কিন্তু কিভাবে, ট্রান্সফার এর চাকরি, কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে কে জানে।হাজার খুঁজেও আর তাদের দেখা পেলেন না।
এদিকে কাব্য পুতুল বউ, পুতুল বউ করতে করতে একটা সময় কেমন যেনো গম্ভীর আর বদ মেজাজী হয়ে যায়। বাবার সাথে বাড়ে দূরত্ব। একটা সময় পর বাবার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়। সব কিছুর জন্য বাবাকেই দায়ী করে।
কিন্তু সারাদিন এর গম্ভীর, কঠোর কাব্য টা রাতে যেনো কেমন অসহায় হয়ে যায়। ছটফট করে কাটে তার রাত গুলো। ঘুমালেও সেই স্বপ্ন টা এসে হানা দেয়।
**************************
কি খবর মেয়েটার?
বস- ওভাবেই রেখেদিয়েছি একটা ঘরে,তালা দিয়ে। সাথে মুখ আর হাত ও বেধে দিয়েছি।
গ্রেট। এক ফুটা পানি পর্যন্ত ও দিবি না।
কিন্তু আমার সন্দেহ লাগছে এতো পিচ্চি মেয়ের এতো সাহস হলো কি করে।।
মেয়েটা অনেক সাহসী আর জেদি।
হুম তার কাজ কর্মেই বুঝা যাচ্ছে। এই ঠ্যলায় ওর সাহস আর জেদ দুইটাই উবে যাবে। বলেই আবার একটা ভিলেনি হাসি দেয়।
।
।
।
আজ ৪ দিন হয় আবির হাসপাতালে ভর্তি। মন মেজাজ দুটোই খারাপ কাব্যর।
কাব্য জানে আবির ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়েকে পছন্দ করে। কিছু দিন থেকে ঘুর ঘুর ও করছিলো মেয়েটার পিছু পিছু।
মেয়েটা আবির কে দেখে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যেতো।মেয়েটার এই ভয় মাখানো মুখ দেখেই যেনো আবির আরো দেওয়ানা হয়ে যায়। তবে কি থেকে যে কি হয়ে গেলো, সো*সা*ই*ড করে বসলো ছেলেটা।
কাব্য তখন ঢাকার বাইরে ছিলো। কাব্য এখানে থাকলে ব্যাপার টা এতো দূর যেতোই না।সামলে নিতো সব টা।
এমন বোকা ও ছেলে হয়! কি হলো না হলো হাতের রগ কেটে সো*সা*ই*ড করতে গেছে।
কাব্যকে দেখে আবিরের বাবা আহনাফ সাহেব কাব্যর বুকে পরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে।
কি হলো বলোতো বাবা? আমার ছেলেটা কোন মেয়ের জন্য এমন পাগলামি টা করলো?
আমার কাছে একবার শুধু বলতো, আমি কখনো কি তার কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রেখেছি!
আমার ছেলেটার যদি কিছু হয়ে যায় বাবা।
কাব্য আহনাফ সাহেবের দুহাত তার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে,, কিচ্ছু হবে না আংকেল। আল্লাহর উপর একটু ভরসা রাখুন। আর এখন তো আবির মোটামুটি অনেকটাই সুস্থ, আর ২/৩ দিন এর মাঝে হয়তো রিলিজ ও দিয়ে দিবে।
কাব্য হস্পিটালের করিডোরে বসে ভাবছে তমার সাথে আবিরের প্রথম দেখা হওয়ার দিনের কথা।
সেদিন তমার ভার্সিটিতে প্রথম দিন ছিলো।কয়েকটা সিনিয়র মেয়ে ডাকে তমাকে আর হৃদিকে।তখনই ই তমাকে দেখে চোখ আটকে যায় আবিরের।
কোমড় পর্যন্ত চুল গুলো বেনি করে রাখা। গোলগাল ফর্সা মুখটা ভয়ে যেনো নীল বর্ণ হয়ে আছে।
আরেহ এই নিব্বিরে আমার এদিকে পাঠা। বলতেই মেয়ে গুলো ইশারা করে আবিরের দিকে যেতে। তমা আর হৃদি আবিরের দিকে অগ্রসর হতে আবির হৃদি কে ইশারায় থামতে বলায় হৃদি থেমে যায়।ভয়ে ভয়ে তমা গিয়ে দাঁড়ায় আবিরের সামনে।তমার এই ভয়ার্ত মুখটাই যেনো আবিরকে আরো পাগল করে দিচ্ছিলো।নিজেকে কন্ট্রোল করে আবির বলে, say i love u.
তমা ভয়ে আরো কুকিয়ে যায়।
আবির আবারো কিছুটা ধমক দিয়ে বলে, say i love u.
এবার তমা কেঁদেই দেয়। তাতেও মন গলেনি আবিরের।
ভাইয়া এটা বাদে আর যা বলবেন তাই করবো আমি। কেঁদে কেঁদে।
ওকে তবে কান ধরে ১০ বার উঠ বস করো।
মেয়েটা চারদিকে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে তাই করে নিলো।
এতো গুলো মানুষের সামনে কান ধরে উঠ বস করলো তবু আবিরের মতো ডেশিং ছেলেকে আই লাভ ইউ বল্লো না এতে যেনো আবির আরো মুগ্ধ হয়ে গেলো।
তাই আর কিছু না বলেই সেদিনের মতো ছেড়ে দেয়।কিন্তু সেদিনের পর থেকেই আবির তমা প্রেমে পুরোপুরি ডুবে যায়। প্রায় প্রতিদিন ই কোনো না কোনো ভাবে ইম্প্রেস করার চেষ্টা করতে থাকে।
কিন্তু সমস্যা বেধে যায় সেদিনের সবার সামনে দেয়া থাপ্পড় আর করা অপমান গুলো। অন্য কোনো মেয়ে হলে আবির মেয়েটাকেই শাস্তি দিতো। কিন্তু তমাকে সে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছে তাই সেদিনের করা অপমান টা মেনে নিতে না পেরে নিজেকেই শেষ করে দিতে চেয়েছিলো।
এদিকে তমার বাবা মেয়ে খুঁজে খুঁজে পাগল প্রায় অবস্থা। পুলিশ কেস পর্যন্ত করেছে। তবু কোনো ক্লু পাচ্ছে না। আবিরের ব্যাপার টা জানার পর পুলিশ ওদের ও সন্দেহ করেছে। কিন্তু যেখানে ছেলে নিজেই হস্পিটালে ভর্তি সেখানে সে কিভাবে সন্দেহের তালিকায় থাকতে পারে।
।
।
।
।
চলবে……