#মন_গহীনে
#পর্বঃ১২
#দোলন_আফরোজ
দিন গুলো সব আগের মতোই যাচ্ছে। কাব্যর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সময় কাটে তিথীদের বাসায় ই। কাব্য যখন বাসায় থাকে তখন তিথী ওর রুম থেকে কম ই বের হয়। কাব্য ই তিথীর রুমে গিয়ে ওকে খুচিয়ে আসে। সেদিন এর পর থেকে তিথী কাব্যর থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করে। আগের মতো আর পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করে না। ওর ঘরে যখন আসে তখন সে তমার ঘরে দৌঁড় লাগায়। কাব্য বুঝতে পেরে কষ্ট পায় মনে মনে,,, এতো স্ট্রং থাকার চেষ্টা করি তবু কেনো তোমার সামনে এলে ইমোশন গুলো কন্ট্রোল করতে পারি না। তোমার এই দূরে দূরে থাকা আমায় বড্ড পোড়ায় তিথী। তোমাকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করেই উল্টো পাল্টা কথা বলতাম আর তাতেই তুমি তেঁতে উঠতে। তোমার এর রাগ, জেদ সবই তো আমার পছন্দ। কেনো নিভে গেলে তিথী, সামনেও আসো না আমার। আমি তোমার কাছে গেলেও পালিয়ে যাও। আর কতো অপেক্ষা করাবে আমায়।
তিথীর কলেজে ভর্তির সময় হয়ে এসেছে। কোন কলেজে পড়বে এটা নিয়ে ই তানিয়া বেগম, তারেক রহমান আর কাব্য কথা বলছিলো। তখন কাব্য বলে ওর পছন্দ টা আগে প্রায়োরিটি পাবে। ও যেখানে
পড়তে চায় সেখানেই পড়বে ও। আমি কথা বলছি গিয়ে।
তিথীর রুমের দরজা চাপানো, সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কমিক্স বুক পড়ছিলো। কাব্য দরজায় নক করাতে তিথী ভিতর থেকে বলে, এসো খোলা আছে। সে ভেবেছে হয়তো তমা কিংবা মা।
কাব্য কে দেখে সে ধরফর করে বিছানা থেকে উঠে ওড়না খুজতে লাগলো। ওকে এই বিব্রতকর অবস্থায় দেখে কাব্য নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তুমি ঠিক হও আমি ২ মিনিট পর আসছি বলে কাব্য বেড়িয়ে যায়।
তিথী বিড়বিড় করে বলে এই কাবির সিং এর আবার এখানে কি কাজ পরলো। বলে ওড়না খুজে গলায় জড়িয়ে সে উঠে দাঁড়ালো পালানোর জন্য। চিন্তা করছে কাবির সিং কি আমার রুমের দরজার সামনে দাঁড়ানো? আমি এক দৌঁড়ে আপুটির রুমে চলে যাই।
কাব্য ও দরজায় নক করার জন্য যেই হাত তুল্লো তখনই দরজা খুলে যায় আর তিথী কাব্য কে দেখে আবার চোখ বড় করে ফেলে। কাব্যর বেশ হাসি পাচ্ছে তিথীকে দেখে, অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়ে রাখে সে।
তিথী কাব্য কে দেখে ভয়ে এক পা দু পা করে পিছাতে থাকে আর কাব্য এগুতে। কাব্যর দুই হাত প্যান্ট এর পকেট ঢুকানো। সে এগিয়ে যাচ্ছে তিথীর দিকে আর পিছি পিছিয়ে। এক সময় দেয়ালের পিঠ ঠেকে যায় তিথীর। এভার কাব্য দুই হাত তিথীর দুই দিকে দিয়ে হু হু করে হেসে উঠে। তিথী দু চোখ বন্ধ করে নেয়।
অপলক দৃষ্টিতে কাব্য তিথীকে দেখছে অনেকটাই তিথীর মুখের সামনে ঝুকে। তিথীর ভয় ভয় মুখ টা দেখতে ভালোই লাগছে কাব্যর। তিথীর মুখের উপর আসা চুল গুলো সে হাত দিয়ে কানের পিঠে গুজে দেয়। এবার তিথী চোখ দুটো বড় বড় করে কাব্যর দিকে তাকায়।
কাব্য হেসে উঠে। কি হলো?
আ আ আপনি?
আমি?🤨
আপনি এখানে?
সব সময় এতো পালাই পালাই করো কেনো আমার থেকে?
ছাড়ুন আমাকে।
এবার কাব্য জুড়েই হেসে উঠে। তিথীর দিকে আরো একটু ঝুকে, ধরেছি আমি তোমায়? বলে তিথীর পুরো মুখে ফু দিলো।
তিথীর সারা শরীর যেনো কেঁপে উঠে।
যাবো আমি।
কোথায়?
বা বাইরে, আব্বু আম্মুর কাছে।
তুমি আমায় ভয় পাচ্ছো কেনো?
তিথী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মাথা নাড়ে।
কাব্য চোখ বন্ধ করে নেয়। উফফফ প্লিজ না, এভাবে ঠোঁট কামড়ে ধরো না। আমি নিতে পারছি না।
কাব্যর কথা শুনে তিথীর হার্ট অ্যাটাক হওয়ার দশা।
কাব্য ই বলে আগে সারাক্ষণ চড়ুই পাখির মতো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করতে, এখন আমি এলেই এমন বরফ হয়ে যাও কেনো? হুম?দূরে দূরে থাকো কেনো আমার থেকে?
আ আপ আপনি আগের চেয়ে আরো বেশি পঁচা হয়েছেন তাই।
কেনো কি করেছি আমি?
প্লিজ আমার শ্বাস আটকে আসছে। প্লিজ যেতে দিন আমায়।
কাব্য দেখে তিথীর ফর্সা মুখটা সত্যিই লাল হয়ে গেছে। হাত সরিয়ে নেয় কাব্য। তখন ই তিথী দৌঁড় দিতে নেয় আর সাথে সাথে কাব্য হাত ধরে নেয় তার।তিথী এবার করুন চোখে তাকায় তার দিকে। ভয় নেই, কাছে যাবো না আর। কথা আছে, বসো। দূরেই বসছি আমি, বলে মুচকি হাসে।
*********************
তিথীর পছন্দের কলেজেই এপ্লাই করা হলো আর সৌভাগ্যক্রমে তার পছন্দের কলেজেই ভর্তি হতে পারে। আবার সেই আগের রুটিন। কাব্য ই তিথীকে কলেজে নিয়ে যাওয়া আসা করে। প্রথম প্রথম তিথী বিরক্ত হলেও কিছুই করার নেই বলে এখন তার অভ্যাস হয়ে গেছে। কাব্য ও আর তিথীর এতোটা কাছে গিয়ে ওকে অপ্রস্তুত করেনি। আবার সেই আগের মতো হয়ে গেছে ওরা। সেই খুনশুটির সম্পর্ক। কাব্য বরাবর ই কথা কম বলে। সে নিজেকে আর তিথীকে একটু সময় দিতে চাইছে। তাই দায়িত্ব পালন করলেও যথা সম্ভব লিমিটে থাকার চেষ্টা করেছে।
একদিন আবিরের বাবার কল আসে কাব্যর কাছে। আবিরের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে, আর সব ঠিক ঠাক থাকলে আজ ই আংটি পড়িয়ে বিয়ের ডেট ঠিক করে আসবে। কিন্তু আবির কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। তার এক কথা সে এখন বিয়ে সাদীর জন্য রেডি না। কাব্য কে যেতে হবে বুঝানোর জন্য তার উপর কাব্য আবিরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, ওর তো থাকতেই হবে। আজ সন্ধ্যায় ই মেয়ে দেখতে যাবে ওরা।
কাব্য এসে আবির কে বুঝাচ্ছে, সমস্যা কি তোর? বিয়ে তো করতেই হবে তাই না? মাস্টার্স ও শেষ, আংকেল এর বিজনেস দেখবি নয়তো ভালো জব, আর এখনি বিয়ের পারফেক্ট সময়।
তুই এই কথা বলছিস? সব টা জানার পর ও?আমি তোর সব কিছু জানার পর তোকে মোহনার সাথে প্রেম করার কথা পর্যন্ত বলতে পারিনি আর তুই আমার ভাই, আমার বন্ধু হয়ে আমাকেই বুঝাতে এসেছিস?
তো কি বলতে চাইছিস তুই?
বুঝতে পারছিস না? সিরিয়াসলি? যেখানে তুই নিশ্বাস ফেলল্লেও আমি বলতে পারি তোর নিশ্বাসে কি ছিলো আর তুই আমার মনের কথা বুঝতে পারছিস না?
না কি বলতে চাইছিস সরাসরি বল।
আমার মনে হচ্ছে তুই আমার ভাই, আমার বন্ধু কাব্য না। অন্য কেউ তুই।
হেয়ালি রেখে কি বলতে চাস সরাসরি বল।
তুই জানিস আমি তমাকে ভালোবাসি, আর কতোটা ভালোবাসি তাও তুই জানিস। তবে কেনো আমাকে বুঝাতে আসছিস?
তুই যে তমাকে ভালোবাসিস সেদিনের পর আর গেছিস কখনো তমার সামনে? আমিতো দেখেছি সেই কয়েকবার তোর দিকে তাকিয়েছে, তুই ই তাকে এড়িয়ে গেছিস।
আমি ওকে স্পেস দিচ্ছিলাম। আমি চাইছিলাম সে আমাকে ফিল করুক। মিস করুক। তবেই না আমার কাছে আসবে, আমাকে ভালোবাসবে।
ফিল করানোর জন্য সামনে থাকতে হয়। নিজের ভালোবাসা টা এক্সপ্রেস করতে হয়। তবেই না বুঝবে সে।( আমার তো হাত পা বাধা, তাই তো সামনে থেকেও আমার ভালোবাসা এক্সপ্রেস করতে পারছি নারে। তোর তো আর এমন না। মনে মনে) আর কি বললি তমা আসবে তোর কাছে? আমি যতোদূর ওকে দেখেছি আমার মনে হয়েছে ও খুব লাজুক। যদি ভালো ও বাসে তবু ও হয়তো নিজে থেকে আসবে না।
আবির মাথা নিচু করে বসে আছে। প্লিজ কব্য, ভাই আমার, বাবাকে বুঝা একটু। তুই বুঝালে বাবা ঠিক ই রাজি হবে।
হবে না, কারণ ওখানে কথা দেয়া হয়ে গেছে। চল গেলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাবে না, না? পছন্দ না হলে না করে দিবি।
বাবা সব ঠিক করে রেখেছে। হয়তো আজ ই আংটি পরিয়ে বিয়ের ডেট ঠিক করে আসবে।
এতো চিন্তা করিস নাতো। আগে চল।বলেই আবির কে রেডি করাতে লাগলো।
আমার মনটা অস্থির হয়ে আছে রে। কু ডাকছে খুব। যদি বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলে। আমি তমাকে হারাতে পারবো না।
তোর কান্ড দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে।মেয়েদের মতো নার্ভাস হচ্ছিস তুই।
তুই তো এমন পরিস্থিতি আসার সুযোগ ই দিস না, তাই বুঝবি না আমার অবস্থা।
তুই দিলি কেনো?
আবির হতাশ হয়ে তাকায় কাব্যর দিকে।
মেয়ে দেখতে আবিরের বাবা মা,বড় বোন আঁখি, আর দুলাভাই,চাচা চাচী, চাচাতো বোন, কাব্য আর পিয়াস গেছে। আবিরের বাবা আজ বিয়ের ডেট ই ঠিক করতে যাচ্ছে মেইনলি। তাই এতো মানুষ।
আবিরের চাচাতো বোন মাহি আগে থেকেই কাব্য কে পছন্দ করে। এই জন্যই কাব্য আবিরের বাসায় তুলনামূলক কম আসে। আবির ই ওর বাসায় যায়। আজ তো মাহির মনে লাড্ডু ফুটছে। দুটো গাড়ি নিয়েছে ওরা। একটাতে আবিরের বাবা মা চাচা চাচী, আরেকটাতে আবির, আপা দুলাভাই আর আঁখি। কাব্য আর পিয়াস বাইকে।
আঁখির খুব ইচ্ছে ছিলো কাব্যর সাথে বাইকে যাবে, কিন্তু তা কি আর সম্ভব? যা মুডি রে বাবা, কোনো দিন নাকি কোনো মেয়েকে বাইকের পিছনে তুলেনি, হুহ। আমি তো আপনাকে জয় করবোই, মনে মনে। ফেসবুক এ সেই কবে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়ে রেখেছে, এখনো একছেপ্ট ই করেনি। অনেক মেসেজ ও দিয়েছে। মেসেজ রিকুয়েষ্ট টা পর্যন্ত এক্সছেপ্ট করেনি।আমি মাহি হাল ছাড়ছি না মশাই। লড়ে যাবো শেষ পর্যন্ত। যাবেন কোথায় এই মাহির থেকে। এগুলোই ভাবছিলো মাহি।ভাবতে ভাবতেই তারা মেয়ের বাড়ি পৌঁছে গেছে।
সবাই মিলে বাড়িতে ঢুকে। মেয়ের বাড়ি যাওয়ার সাথে সাথেই আবির ঘামতে থাকে।
কাব্য এসে তার পিঠে হাত রেখে বলে এতো নার্ভাস হচ্ছিস কেনো?
পিয়াস মজা করে বলে তুই কি ভাবছিস তোকে আজ এখানে বিয়ে দিয়ে রেখে যাবো? বলে কাব্য আর পিয়াস হাসা শুরু করে।
তোরা আমার বন্ধু হয়েও আমার অবস্থা টা বুঝতে পারছিস না।
।
।
।
।
চলবে….
( খুব ছোট হয়ে গেছে কি?আসলে লিখতে বসলে মনে হয় এতোটুকু লিখবো, পরে আর পেরে উঠি না। মাঝ পথে হাল ছেড়ে দেই। কাল আরেকটু বড় দেয়ার চেষ্টা করবো)