মন গহীনে পর্ব -২১+২২

#মন_গহীনে

#পর্বঃ২১

#দোলন_আফরোজ

আজ ৫ দিন যাবৎ তিথী বাবার বাড়ি আছে। সাথে তমা ও আছে। আগে থেকেই বলেছিলো তারা দুই বোন থাকবে ১ সপ্তাহের মতো। কাব্য পর দিন ই চলে যায়, তার একটা কাজ ছিলো চিটাগং তাই সে সেদিন ই চিটাগং চলে যায়। আবির ২ দিন থেকে চলে যায়। ওরা দুই বোন কতো দিন পর নিজেদের মতো করে নিজের বাড়ি থকছে। তমার আবিরের সাথে কথা হয় রেগুলার ই।তিথীর ই কথা হয়নি কাব্যর সাথে। তিথীর নিজস্ব কোনো ফোন নেই। আসলে কাব্য ইচ্ছে করেই ফোন দেয় নি ওকে, পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে। আর ফোন দেয়ার দরকার ও পরেনি তিথীকে, কারণ এতোদিন তো সব সময় তার সাথেই থাকতো তিথী। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে খুব ভুল করেছে সে। ৩ দিনে ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও ঢাকায় ফিরতে পারেনি কাব্য, কাজ শেষ হয়নি। তার উপর বিয়ের পর এই প্রথম এতোদিন তিথীর থেকে দূরে সে। কেমন একটা দম বন্ধ করা পরিস্থিতিতে আটকে গেছে মনে হচ্ছে। এই ৪ দিনে তিথীর সাথে মাত্র একবার কথা হয়েছে তার। তাও আবার তমার ফোনে। তমাকে এর পরেও কয়েকবার ই ট্রাই করেছে, কিন্তু বিজি পেয়েছে। হয়তো আবিরের সাথেই কথা বলছে। তাই তমাকে ফোন করতেও এখন সে দ্বিধাবোধ করে। তানিয়া বেগম কে ফোন করেছিলো ৩ দিন। একদিন ঘুমাচ্ছিলো তিথী, তাই সেই ডাকতে নিষেধ করেছে। আরেকদিন ফোন করেছে তমাকে নিয়ে বাইরে গেছে ফুচকা খেতে, আরেকদিন গোছলে ছিলো। এই কদিনে তাই একবার মাত্র কথা হয়, তাও দু তিন মিনিট এর জন্য। এখন মনে হচ্ছে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। আসার সময় একটা ফোন কিনে দিয়ে আসা দরকার ছিলো। ভিতর টা হাসফাস করছে কাব্যর।

রাতে খাওয়ার পরে তমা আর তিথী ছাদে বসে গল্প করছে। তিথীকে কেমন যেনো বিষন্ন লাগছে। উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

কিরে কি হলো তোর?

কই?

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?

তারা গুনি।

মিস করছিস কাউকে?

ভিষণ।

কাকে?

কাবির সিং কে।
বলেই হুস আসে তার। এই না, কি বলছো আপুটি। আমি তো তারা গুনি।

হুম বুঝতে পেরেছি।একটা কথা বলতো তিথী।

কি?

ভালোবাসি।?

উহুম।

হাসে তমা। কথা বলবি কাব্য ভাইয়ার সাথে? আমি কেনো কথা বলতে যাবো? কাল আসার কথা ছিলো, এসেছে কি? উনার আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না তবে আমি কেনো বলবো।
ভাল্লাগছে না আপুটি, চলো শুয়ে পরি গিয়ে।

দাঁড়া একটা কল দেই।
বলেই ফোন দেয় কাব্য কে। দুবার কল দেওয়ার পর ও রিছিভ করেনি।তাই আর কল দেয় নি। ব্যাস্ত হয়তো।

প্রচন্ড রাগ উঠে যায়। চলোতো আপুটি, এতো ব্যস্ত মানুষ কে ফোন করো কেনো বলোতো । বলেই উঠে একা একাই চলে যায়। রুমে গিয়ে সোজা দরজা আটকে শুয়ে পরে।
তার কিছুক্ষণ পরেই কল দেয় কাব্য। তমা তিথীর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক্ষণ ডাকে, দরজা খুলে না তিথী।

খোল না তিথী একটা বার। কাব্য ভাইয়া কথা বলবে।

এতো ব্যস্ত মানুষের কথা বলার প্রয়োজন নাই। বলে দাও তিথী ঘুমাচ্ছে। বলেই বালিশে মুখ গুজে কান্না শুরু করে। অনেকক্কণ কাঁদার পর ভাবে কেনো কাঁদছি আমি? হুহ পাগল হয়েছি কি? ওই কাবির সিং এর জন্য কাঁদছি?মোটেও কাঁদবো না হুহ।

এদিকে কাব্য পারছে না এক্ষুনি ছুট্টে চলে আসতে।তমা কে কাকুতি মিনতি করে বলছে একবার শুধু ফোন টা তিথীর কাছে দাও।

জানোই তো তুমি ওর কেমন জেদ। একবার যখন না বলেছে তাহলে আজ আর কথা বলবেই না। আসলে তোমার জন্য খুব অস্থির হয়ে ছিলো। তখন কথা বলতে না পেরে রেগে যায়। জানোই তো হুট করেই রেগে যাওয়ার মানুষ সে। চিন্তা করো না, কাল সকাল সকাল কথা বলিয়ে দিবো আমি।

মন খারাপ করে ফোন কেটে দেয় কাব্য। আর অপেক্ষা করতে থাকে কখন সকাল হবে।

পর দিন সকাল সকাল তমা চলে যায় শ্বশুর বাড়ি। ওর শ্বাশুড়ি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেন। তাই চলে যেতে হয় তার।

এদিকে তমা চলে যাওয়ার পর তিথী একদম একা হয়ে যায়। কিছুই ভালো লাগছে না তার। বিকেলের দিকে মায়ের কোলে শুয়ে আছে সে। চারদিক টা কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বুকের বাঁ পাশটা চিনচিন করছে। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে।

আম্মু ভালো লাগছে না আমার। বুক টা ব্যথা করছে। বুঝতে পারছেন তানিয়া বেগম। তখন উনি ফোন বের করে কল দেয় কাব্য কে। কল রিছিভ করতেই তিথীর কানে ধরে। তিথীও ভাবছে হয়তো তার কোনো বান্ধবী হবে হয়তো। সেও ফোন কানে নিয়ে হ্যালো বলে।
তিথীর কন্ঠ শুনেই কাব্যর বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।
কাতর কন্ঠে বলে কেনো কষ্ট দিচ্ছো আমায়? নিরুপায় তো আমি।

কাব্যর কন্ঠ শুনেই তিথী রাগী চোখে তাকায় মায়ের দিকে। ফোন টা উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।
কিছুই বুঝতে পারে না তানিয়া বেগম। হঠাৎ কি হলো মেয়ের। এমন আচরণ করছে কেনো।
ফোন কানে নিয়ে কাব্যর সাথে কথা বলে সবটা জানতে পারে। কাব্য এটাও জানায় সে তমাকে কল করেছিলো সকালে। তমা চলে গেছে। আর তার আসতে আরো দুদিন লাগবে।

রাতে ডিনার টেবিলে তানিয়া বেগম মেয়েকে বুঝায় হুট হাট রাগ করা ভালো কথা না। সমস্যা থাকতেই পারে। আর এর মাঝে কাব্য কতোবার ফোন করেছিলো জানিস তুই? তখন তো তুই ব্যস্ত ছিলিস,কই ছেলেটা কি রাগ করেছে?

এতো ছেলে ছেলে করো নাতো আম্মু। আমার উনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাই কথা বলবো না। ব্যাস।

যা ইচ্ছে কর।

তখনই শাহানারা বেগম এর কল আসে তানিয়া বেগম এর ফোনে।কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে তিথীর সাথে কথা বলে।

কাল কায়েস কে কাল পাঠাচ্ছি, চলে আয় প্লিজ। বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে তুই ছাড়া।

আর কয়েকদিন পর আসি মামনি? আদুরে গলায়।

থাকবি? আচ্ছা ঠিক আছে। কাব্য এলে নিয়ে আসবে নে গিয়ে।

তোমার ছেলের আসতে হবে না। আর আমি যাবো ও না। বলেই ফোন টা তানিয়া বেগম এর কাছে রেখে চলে যায়।

আর বলবেন না ভাবি, মেয়ে হুট হাট রেগে যায় কেনো কিছুই বুঝতে পারছি না।

এতো চিন্তা করো না তানিয়া, কাব্য এলেই মেয়ের সব রাগ উড়ে যাবে।
তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কাটেন তানিয়া বেগম।

আজ ৬ দিন হয় কাব্য গেছে। ওর ফিরতে আরো ২ দিন লাগবে। কাব্যর কথা মনে হতেই তিথীর মেজাজ থেকে থেকেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কেনো হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। কাব্য ৩ দিন এর কথা বলে ৬ দিন কাটিয়েছে বলে নাকি কাব্য ওর কাছে নেই বলে।

রাত প্রায় পৌনে ১২ টা। তিথী ঘুমিয়ে গেছিলো। দরজার কড়াঘাতে ঘুম ভাংগে তিথীর।
এতো রাতে আম্মু দরজা নক করছে? কি হলো, আম্মু কিংবা আব্বুর শরীর খারাপ করেনিতো?
ভয়ে অন্তর আত্না কেঁপে উঠে তিথীর। এক ছুটে গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলে সে থ হয়ে যায়।

তার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। চোখ দুটো ডলে বড় বড় করে তাকায় সে। নাহ এখনো তো একি দেখছে।
তারপর গালে হাত রাখে।

এবার কাব্য শব্দ করে হেসে দেয়।

তিথী ভয়ে ভয়ে বলে, আ আপনি? সত্যিই আপনি?

কাব্য তিথীকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঘরে ঢুকে বলে খুব টায়ার্ট লাগছে। আগে একটু শুয়ে নেই, পরে বলি আমি ই কিনা। বলেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

তিথী এখানো যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।বিছানার এক পাশে বসে কাঁপা কন্ঠে বলে স সত্যিই আপনি?

কাছে এসে দেখো সত্যিই আমি কিনা।বলে আবারো হাসে।

এবার তিথী কপট রাগ দেখিয়ে বলে আপনার না ২ দিন পর আসার কথা ছিলো।

আমার বউ টা রাগ করেছে, কিভাবে দুদিন অপেক্ষা করি বলোতো? এমনিতেই আজ ৬ দিন যাবৎ দেখি না আমার পিচ্চি টাকে।চোখ দুটো ভিষণ পুড়ছিলো জানো।

মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে ঘুড়িয়ে নেয় তিথী।

কাব্য এক হাত ভাঁজ করে তার উপর মাথা রেখে তার অভিমানী বউ টাকে দেখছে। ৬ দিন দেখেনি মনে হচ্ছে আজ কতো যুগ পর দেখলো।।
ভালোবাসো?

কক্ষনো না।।মুখ বাঁকিয়ে।

হাসে কাব্য। প্রাণ খুলে হাসে সে।

************

পরদিন বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরে ওরা। বাড়ি ফিরে বাড়িতে নতুন একটা মুখ আবিষ্কার করে তিথী।

মেয়েটা কাব্যর একদম কাছে এসে বলে তুই আমায় এতো রাতে এভাবে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবি ভাবতেও পারিনি আমি।কাঁদো কাঁদো হয়ে।

স্যরি রে। বুঝতেই তো পারছিস। বলে দু বাহুতে হাত রাখে মেয়েটার। তিথীর এ ব্যাপার টা কেনো জানি পছন্দ হলো না। কারণ কাব্য কখনো মেয়েদের গায়ে হাত দেয়নি, সে অন্তত দেখেনি। এমনকি হিয়ার সাথেও ২/১ ছাড়া কথা বলে না। সেখানে এই মেয়েটাকে তার কাজের কৈফিয়ত দিচ্ছে। যা সে তার মাকে পর্যন্ত দেয় না।
ভ্রু কুঁচকায় তিথী।

তিথী চলে যেতে নিলে কাব্য ওকে বলে, শী ইজ মেধা, হালিমা ফুপ্পিস ডটার এন্ড মাই বেস্ট বেস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড। চোখ দুটো উচ্ছ্বসিত।

কাব্যর বলা শেষের কথাটা তিথীর বুকের ঠিক বা পাশটায় গিয়ে বিধলো যেনো। একটা মেয়ে কাব্যর বেস্ট ফ্রেন্ড এ কথা শুনার জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না যেনো।

এন্ড মেধা, ইউ নো হার, শী ইজ মাই লাইফ।এক হাত বুকে রেখে।

ইয়া ইয়া, আই নো হার ভেরি ওয়েল।

হাই আই এম মেধা, কাব্য’স,,,,, ( হাত হ্যান্ড শেক এর জন্য বাড়িয়ে দিয়ে।

ইয়া ইয়া আই নিউ ইট, কাব্য’স বেস্ট ফ্রেন্ড। বলে মুখে মেকি হাসি এনে বলে, আই এম তিথী। সিরাত মুনজারিন তিথী। আই এম ফিলিং সো টায়ার্ড, প্লিজ ক্যান আই লিভ?

ইয়া শিউর।বলে মেধা ও একটা হাসি আনার চেষ্টা করে।

তিথী চলে যায় ঘরে। মামনীর সাথেও দেখা করে না। মাথা তার পুরা গরম হয়ে আছে। মন চাচ্ছে ঐ লুচু কাব্য বেটাকে এক্ষুনি খুন করে ফেলতে।
পেটে পেটে তার এতো শয়তানি, বন্ধবী পাতিয়ে বসে আছে।রাগে তিথীর সারা গা রি রি করে উঠছে।
এসেই বিছানায় বসে আছে। মাথাটা ঠান্ডা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, তবে পারছে না।

কিরে কাব্য, তোর বউ কি রাগ টাগ করলো নাকি?

আরেহ নাহ, রাগ করবে কেনো? রাগ করার মতো হয়েছে কি কিছু?

কি জানি, আমার তাই মনে হলো। যা গিয়ে দেখ।

কাব্য উপরে উঠে যায়।

মেধা কাব্যর যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করে বলে, আমি একটা মেয়ে, তাই বুঝতেই পারি আরেকটা মেয়ের কোন সময় মনের পরিস্থিতি কেমন থাকে। আর আমি নিজে যেহেতু এই পরিস্থিতির মাঝে আছি আমার থেকে ভালো আর কে বুঝবে তোমায়। তবে যাই হোক তিথী রানী, সবে তো শুরু, পিকচার আভি বাকি হে মেরে ভাবি, জাস্ট ওয়েট এন্ড সি। যেই আগুনে আজ ৭ মাস যাবৎ আমি জ্বলছি তার চেয়ে দ্বিগুণ আগুনে তোমায় জ্বালাবো। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অংগার করে দিবো তোমায়। এই জন্যই তো আমার আগমন ঘটেছে পুনরায়। ১২ টা বছর লেগেছে আমার কাব্যর মনে জায়গা করে নিতে, ৭ মাসে কি করে সব শেষ হয়ে যেতে দেই বলো। তুমি পুড়বে, খুব পুড়বে তুমি। চিৎকার করে কাঁদবে এ আগুন থেকে বাঁচার জন্য, তারপর নিজে থেকেই কাব্যর জীবন থেকে সরে যাবে তুমি।

কাব্য ঘরে ঢুকে দেখে তিথী চুপচাপ শান্ত হয়ে বিছানায় বসে আছে। কিন্তু কাব্যর কাছে এটা মোটেও ভালো ঠেকছে না। তিথীর পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে, কি হয়েছে তিথী?

ঝাড়া মেরে হাত সরিয়ে দেয় তিথী। মেয়েদের গায়ে হাত দিতে খুব ভালো লাগে তাই না?

কি বলছো এসব? অবাক হয়ে।

ভুল বললাম কিছু?

কিছুই বুঝতে পারছিনা তোমার কথা আমি।

না বুঝার কি আছে? তখন ওই মেধার শরীরে হাত দিলেন আর এখন আমার।

কি বলছো তুমি? তুমি আমার বউ, পিচ্চি বউ আমার। আর আজ প্রথম তোমার গায়ে হাত দিয়েছি আমি?

তবে মেধাকে কেনো টাচ করলেন? কেনো ওর সাথে এতো সফট হয়ে কথা বললেন, কেনো ওকে কৈফিয়ত দিতে গেলেন? যেখানে আপনি মামনীকেও কৈফিয়ত দেন না।

এবার হেসে দেয় কাব্য। ওহ এই ব্যাপার। আর ইউ ফিলিং জেলাস??🤨

ইয়েস, আই এম ফিলিং জেলাস। কাব্যর কলার চেপে ধরে, কখনো দেখেছি যদি ওই মেধাকে টাচ করতে তবে ওই হাত কেটে রেখে দিবো।

কাব্য আবেগী কন্ঠে বলে, ভালোবাসো?

কাব্য কে ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিয়ে, না না না ভালোবাসিল না। কতোবার বলবো।

কাব্য আবারো হাসে। ভালোবাসো পুতুল বউ, আর খুব শীগ্রই তুমি মুখেও তা শিকার করবে। মনে মনে।


।#মন_গহীনে

#পর্বঃ২২

#দোলন_আফরোজ

পরদিন কলেজ থেকে ফিরে তিথী না খেয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। কাব্য ওকে বাসার সামনে নামিয়ে বাইরে গেছে কি একটা কাজে। শাহানারা বেগম এসে তিথীর খোঁজ নিয়ে গেছে। এসে দেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ৩ টা বাজতে চল্লো, এখনো দুপুরে খাওয়া হয়নি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ছোট করে ডাকে তিথীকে। না খেয়েই শুয়ে পরলি কেনো রে। ৩ টা বেজে গেছে, একটু খেয়ে ঘুমা।
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে তিথী। মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, একটু ঘুমাই মামনী। এমন আদুরে আবদার শুনে আর না করতে পারেন নি শাহানারা বেগম। কপালে একটা চুমু দিয়ে দরজা টা চাপিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যান উনি।

মেধার আগমন উনার মোটেও পছন্দ হয়নি এই সময়। এর কারণ ও আছে বেশ।

কাব্য যখন ওর পুতুল বউ এর জন্য একরকম পাগল ই হয়ে গেছিলো, কোনো ভাবেই ওরে সামলানো যাচ্ছিলো না। এক কথা ওর আমার পুতুল বউ ই চাই। তখন অনেক খুঁজেও কোনো হদিস পায়নি তারেক রহমান এর। তখন আসতে আসতে একদম নীরব চুপচাপ হয়ে যেতে থাকে কাব্য। তার বয়সের ছেলেদের সাথে খেলতো না, টিভি দেখতো না, এমনকি পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে গেছিলো। স্কুলে যেতে চাইতো না। সারাক্ষণ নিজের রুমে চুপটি মেরে বসে থাকতো।এভাবেই কেটে গেছে এক বছরের বেশি সময়। দিন দিন কেমন যেনো অস্বাভাবিক হতে থাকে সে। এভাবে আরো ৬ মাস যাওয়ার পর সেলিম সাহেব ভাবেন এভাবে চলতে থাকলে ছেলে অটিস্টিক হয়ে যাবে। তাই উনি ছেলেকে সাইকোলোজিস্ট দেখান।

ডাক্তার ওকে পর্যবেক্ষণ করে বলে, ওর পুতুল বউ নিয়ে খেলতে খেলতে ও তাকে ওর খেলনা ই ভেবে নিয়েছে। আর নিজের সব চেয়ে প্রিয় খেলনা হারিয়ে সে ওর স্বাভাবিক সব কাজ থেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ওর শিশু মনে খুব বড় প্রভাব পরেছে এতে। এরকম ডিপ্রেশনে থাকতে থাকতে খুব খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। তাই ওর এ ঐ খেলনার বিকল্প হিসেবে আরেকটা খেলনার ব্যাবস্থা করে দেখতে পারেন। এতে কাজ হলেও হতে পারে। যে সব সময় ওর কাছে কাছেই থাকবে ওর খেলার সাথী হয়ে।

তখন সেলিম সাহেব ভাবতে থাকেন কি করা যায়। তখন উনার ছোট বোন হেনার কাছে যান ওর মেয়ে হিয়া কে উনার বাসায় রাখতে। কারণ হিয়া কাব্যর ৪ বছরের ছোট। সারাক্ষণ এক সাথে থাকলে যদি ও তার পুতুল বউ এর অভাব টা ভুলতে পারে। কিন্তু হিয়া বাবা মার এক মাত্র সন্তান হওয়াই ওর বাবা ওকে দিতে রাজি হয় না।
এতে হতাস হন সেলিম সাহেব। শাহানারা বেগম ও ভেঙে পরেন মন থেকে।

তখন একদিন সেলিম সাহেব এর বর বোন হালিমা উনাদের বাসায় বেরাতে আসেন। উনার স্বামীর বাড়ি চিটাগং। আর উনার তিন মেয়ে, ছেলে নেই কোনো। মেধা উনার মেজো মেয়ে। মেধা কাব্যর ২ বছরের ছোট।

বাড়িতে মেহমান এসেছে, সাথে এতো বাচ্চারাও এসেছে তবু কাব্য কারো সাথে মিশে না। নিজ ঘরেই থাকে। তখন কাব্যর বয়স ১১ আর মেধার ৯।
সবাই যখন সবাইকে নিয়ে ব্যাস্ত তখন মেধা লুকোচুরি খেলতে খেলতে কাব্যর রুমে ঢুকে পরে। রুমে ঢুকে তো সে অবাক, তাদের বয়সের ই একটা ছেলে ওরা এসেছে শুনেও বাইরে যায়নি, বেলকনিতে চুপটি মেরে বসে আছে। মেধা গিয়ে বেলকনিতে কাব্যর পাশে বসে। এতে কাব্যর কোনো হেলদোল নেই। যেনো সে কাউকে দেখেইনি। মেধা তার মতো কথা বলেই যাচ্ছে, তবে কাব্য তখনো নিশ্চুপ। সেদিন আর মেধা কাব্যর রুম থেকে বেরুয় না। একবারে রাতে ডিনারের সময় বেরুয় কাব্য কে নিয়ে।
কাব্য কে দেখে শাহানারা বেগম এর চোখে পানি চলে আসে। অবাক হন সেলিম সাহেব ও। কারণ ছেলে রুম থেকে বাইরেই বেরুই না। স্কুল তো অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। আজ সেই ছেলেই ডাইনিং এ এসেছে।

সেলিম সাহেব সবটা বলেন হালিমা বেগম কে। আর বলেন তোমার মেয়েটাকে কয়েকটা মাসের জন্য রেখে যাও না আপা। এতে আমার ছেলেটা যদি স্বাভাবিক হয়।
রাজি হয়ে যান হালিমা বেগম। তারপর থেকেই মেধা এখানে থাকে। মেধা যদি হাজার টা কথা বলে তবে কাব্য। তবু কথা তো বলে।

প্রায় ১ বছরের মতো সময়ে কাব্য অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। স্কুলেও যেতে শুরু করে আবার। মেধা আর কাব্য এক ই স্কুলে পরে। মেধা ওর এক বছরের জুনিয়র। কিন্তু সম্পর্ক টা বন্ধুত্বের। কাব্য স্বাভাবিক হলেও কথা কম বলতো। মেধার সাথেই একটু আধটু কথা বলতো অন্যদের তুলনায়।মেধার সাথে সারাক্ষণ তার পুতুল বউ এর গল্প করতো। মেধার ছোট্ট মাথায় কাব্যর এই পাগলামি গুলো ঢুকতো না। হয়তো কাব্যর ও না।

কাব্য স্বাভাবিক হতেই মেধার মা মেধাকে নিতে চেয়েছিলো। সে ই যায়নি আর। তারপর থেকে এখানেই থাকে সে। স্কুল কলেজ সব একটাই ছিলো মেধা কাব্যর। তাই কাব্য অন্যদের চেয়ে মেধার সাথে বেশি ফ্রী।

ধীরে ধীরে কাব্য পুতুল বউ এর প্রতি ফিলিংস ভালোবাসায় রূপ নেয়। আর মেধা ও কাব্যর প্রতি দূর্বল হয়ে পরে। মেধা জানে কাব্যর মনে পুতুল বউ এর জায়গায় টা নেয়া এতো সোজা হবে না। তবে সে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ঠিক ই সেই জায়গা টা নিয়ে নিবে। আর যেখানে তার পুতুল বউ এর কোনো অস্তিত্ব ই নেই সেখানে তার তো কোনো সমস্যা ই হওয়ার কথা না।তবে সে কাব্য কে সরাসরি কখনো নিজের করে চাইবে না। এতে করে কাব্যর মনে তার যেই জায়গা টা আছে সেটাও হারাবে সে। টেকনিক্যালি কাজ টা করবে যেনো কাব্য তার হয়ে যায়। আর ও জানে তার মামা তাকে খুব পছন্দ করে। কাব্য কে বিয়ে করা তার জন্য কঠিন কোনো কাজ না।

কিন্তু বিপত্তি বাধে তখন যখন কাব্যর জাহাঙ্গীর নগর এ চান্স হয় কিন্তু পরের বছর ঢাকায় কোথাও তার চান্স হয় না। চান্স হয় চিটাগং। তাই বাধ্য হয়েই কাব্য কে ছেড়ে চলে যেতে হয় চিটাগং। প্রথম প্রথম খুব বেশি যোগাযোগ থাকলেও পড়ে আসতে আসতে তা কমতে থাকে। এর মাঝে একবার হালিমা বেগম সেলিম সাহেব এর কাছে মেধা কাব্যর বিয়ের প্রস্তাব ও রাখেন।সেলিম সাহেব খুশিই হন তাতে। শাহানারা বেগম কে দিয়ে কাব্য কে বলালে কাব্য রেগে যায় এতে। তুমি সবটা জানার পর ও কি করে এমন একটা কথা ভাবতে পারলে মা? আর মেধা সব সময় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর সেও আমার পুতুল বউ সম্পর্কে সবটা জানে। আর আমি আশা করি তোমাদের এমন অবান্তর প্রস্তাবে মেধা ও শকড হয়েছে খুব।

এতে মেধা হতাশ হয় তবে হাল ছাড়েনি। পড়াশোনা টা শেষ হোক আগে, তারপর তো সে কাব্য কেই বিয়ে করবে। তাই এর মাঝে আর বিয়ের কথা ভাবেনি সে। কিন্তু হুট করেই কাব্যর বিয়ের কথা শুনে সে ডিপ্রেশন এ চলে যায়। এ থেকে নিজেকে সামলে উঠতেই সময় লেগে যায় ৩/৪ মাস। আর কাব্যর আর তার পুতুল বউ এর সম্পর্ক টা ঠিক কি পর্যায়ে আছে সব টা কাব্যর থেকে এই কদিনে জেনেই সে এ বাড়িতে পা রাখে।
আর কাব্যর বেস্ট ফ্রেন্ড যেহেতু মেধা তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটাই বলে কাব্য তাকে।

********************

কাব্য বাড়ি ফেরে বিকেল ৫ টার দিকে। এসেই মায়ের কাছে জানতে পারে তিথী না খেয়েই ঘুমাচ্ছে। তাই বলে আর ১৫/২০ মিনিট পর রুমে খাবার দিতে, বলে নিজের রুমে যায়। গিয়ে দেখে তিথী বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আসতে করে ডাকে। কয়েকবার ডাকার পর ঘুম ভাংগে তিথীর। চোখ কচলে উঠে বসে বলে কখন এলেন?

মাত্রই। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো, সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য একটা।

সারপ্রাইজ এর কথা শুনেই লাফিয়ে উঠে বসে তিথী। খুশী হয়ে জিজ্ঞেস করে কি সারপ্রাইজ।

আগে ফ্রেশ হয়ে তো আসো।

তিথী ও তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে আসে। এসেই তার পড়ার টেবিলে লেটেস্ট মডেলের আই ফোন দেখতে পায়।
অবাক হয়ে তাকায় কাব্যর দিকে। কাব্য চোখ দিয়েই বুঝায় এটা তাই ই। খুশীতে লাফিয়ে উঠে কাব্য কে জড়িয়ে ধরে।
কাব্যর সারা শরীর যেনো হিম হয়ে গেছে। সত্যিই কি তিথী তাকে জরিয়ে ধরলো?সত্যিই কি তার পুতুল বউ আজ স্ব ইচ্ছায় তার বুকে? পুলকিত হয়ে যায় তার মন। সেও ধরার জন্য হাত উঠায় তখনই তিথীর হুস ফিরে সে অতিরিক্ত এক্সাইডমেন্ট এ কি করে ফেলেছে। এক ঝটকায় কাব্যর থেকে কয়েক হাত দূরে সরে যায়। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় কাব্য।

ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, এটা কি হলো? হুট করেই কাছে এলে আবার আমি যাওয়ার আগেই চলে গেলে।

কাব্যর ঠোঁট ফুলানো দেখে বেশ হাসি পায় তিথীর। স্যরি ওভার এক্সাইডমেন্ট এ কি করে ফেলেছিলাম।

এমন এক্সাইডমেন্ট তো মাঝে মাঝে দেখাতে পারো নাকি?🤨

এবার বেশ লজ্জা পায় তিথী। আমি মামনী কে ফোনটা দেখিয়ে আসি। বলেই ফোন হাতে বাইরে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে কাব্য। হেচকা টানে বুকে ফেলে দেয় তার। কই যাও হুম? সারপ্রাইজ পেয়ে এতো খুশী, তবে আমাকে একটু খুশী করা উচিৎ না কি? মুচকি হেসে।

চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলে তিথী। ক ক কি কিভাবে?

তখনই দরজায় নক করে কেউ।
এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? তুমি যা করতে কম্ফোর্ট ফিল করবে না তা কখনোই করতে বলবো না আমি। সেচ্ছায় যেদিন আমার কাছে ধরা দিবে সেদিন ই তোমায় সব টা উজার করে দিবো আমি। তখন দেখবে তোমার কাবির সিং কি পারে।
আচ্ছা যাও, খাবার এসেছে, আপাতত খাইয়ে দিলেই আমি খুশী।

দরজায় আরেকবার নক করে।
কাম ইন।

ভিতরে আসে শেফালী। হাতে তার খাবারের প্লেট।

কাব্য ইশারায় প্লেট টা রাখতে বলে।
শেফালী প্লেট রেখে চলে যায়।

কাব্য গিয়ে বিছানায় বসে আর তিথীকে ইশারা করে খাবার খাইয়ে দিতে। তিথী মুখ টা কালো করে গিয়ে কাব্যর সামনে খাবার প্লেট নিয়ে বসে।
ভাত মেখে কাব্যর মুখের সামনে ধরতেই কাব্য তিথীর হাত নিয়ে আগে ওর মুখে দিয়ে দেয়। খাবার মুখে নিয়ে তিথী অবাক হয়।

এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। দুপুরে না খেয়ে ঘুমিয়েছো কেনো?
তিথী আবার আরেক লোকমা খাবার নিয়ে কাব্যর মুখে দিয়ে বলে আপনি ও তো খাননি। আমায় নামিয়ে দিয়েই কোথায় চলে গেলেন।

আমি খাইনি বলেই খাওনি?

তিথী চুপ।

ভালোবাসো?

আবারো চুপ।

এবার কাব্য অস্থির হয়ে গেছে, বলো না প্লিজ ।

কাব্যর অস্থিরতা দেখে তিথী ঝাঝালো কন্ঠে বলে, বাসি না, খান তো চুপচাপ।

মুখ টা কালো করে খাবার খেতে থাকে কাব্য।
কাব্য কে দেখে তিথীর বেশ মজা লাগছে। ভিলেন টাইপ পার্সোনালিটির মানুষ টা কি করে বাচ্চাদের মতো অভিমান করে বসে আছে।

তখনই দরজায় নক করে মেধা বলে, আসতে পারি?

কাব্য বলে, আয় না।
মেধাকে দেখেই তিথীর মেজাজ কেনো জানি বিগড়ে যায়। যা এখন আবার গেছে।

ওহ হো তোদের রোমান্টিক পিরিয়ড এ এসে ডিস্টার্ব করলাম।

কাব্য মুখ টা কালো করে বলে, আর রোমান্টিক। সে সুযোগ দিলে তো।

তৎক্ষনাৎ মেধা বলে উঠে এতো পিচ্চি মেয়ে বিয়ে করলে তো এমন হবেই। রোমাঞ্চ শিখাতে শিখাতেই তোর যৌবন পার হয়ে যাবে। বলেই হাসতে থাকে।

কথাটা তিথীর গায়ে যেনো কাঁটার মতো বিধে। তবু কিছু বলে না সে, আর কাব্য কে খাওয়াচ্ছে না সে। চুপচাপ নিজেই খাচ্ছে।
এই একাই খাচ্ছো যে? আমাকে দিচ্ছো না কেনো?

তিথী একটা রাগী লুক দিয়ে বলে, নিজে গিয়ে খেয়ে নিন।
হঠাৎ কি হলো কাব্য কিছুই বুঝতে পারে না। অসহায় মুখ করে তাকায় তার দিকে।

মেধা বলে তুই বস, আমি তোর খাবার নিয়ে আসি।

আরেহ নাহ লাগবে না, পেট ভরে গেছে আমার। আসলে বউ এর হাতে আরো খেতে চেয়েছিলাম বলেই বলেছে। বলে চোখ মারে তিথীকে।

এসব মোটেও সহ্য হচ্ছে না মেধার। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছে সে।
তুমি কিন্তু অনেক লাকি জানো? কাব্য যা টেককেয়ার তোমাকে করে অন্য কোনো ছেলে হলে তা করতো না।

ভ্রু কুঁচকায় তিথী। কি বলতে চাইছেন আপু? অন্য কোনো ছেলে কেনোই বা করতে যাবে আমার টেককেয়ার? অন্য কেউ কি আমার হাসবেন্ড?

রাগের বশে মেধা কি বোকা বোকা কথা বলে ফেলেছে সে নিজেই বুঝতে পারেনি।

কাব্য বলে, কি আবল তাবল বলছিস এসব? মাথা ঠিক আছে তোর? মাথায় গাট্টা মেরে।

মাথায় হাত বুলিয়ে, উফফ তাই বলে এভাবে মারবি?? আর কি ভুল বলেছি? হুম। এতো রাতে আমাকে রাস্তায় রেখে দিলি দৌঁড় বউ এর কাছে।

এটা কি টেককেয়ার এর জন্য গাঁধি। এটাকে ভালোবাসা বলে।

ওই টাই।

এতোক্ষণে তিথীর খাওয়া শেষ। হাত ধুয়ে বাইরে যেতে নিলে মেধা বলে তোর বউ মনে হয় আমাকে পছন্দ করে না, গল্প করতে এলাম ওর কাছে আর ও আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিথী মুখে মেকি হাসি এনে বলে আমি আরো ভেবেছিলাম তোমার বেস্ট বেস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে গল্প করতে এলে বুঝি, তাই তো তোমাদের স্পেস দিচ্ছিলাম।

তুমি আমাকে স্পেস দিবে? হাসে মেধা, আমি তোমায় স্পেস দিলাম বলেই তুমি আজ এখানে। ( কাব্য ওয়াশরুমে ছিলো তাই ওর কথা শুনেনি)

ভ্রু কুঁচকায় তিথী।

আচ্ছা বাদ দাও।তোমার স্কুল কলেজের গল্প করো।তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো না স্কুলে? এতোক্ষণে কাব্য চলে এসেছে। কাব্যর দিকে আড় চোখে তাকিয়েই এই প্রশ্ন করে।

তিথী আবারো মেকি হাসি দিয়ে বলে, নাহ ছিলো না আপু।

মেধা এতোটাই অবাক হয় যেনো তিথী এই মাত্র জীবনে বলা সবচেয়ে মিথ্যে কথাটা বলে ফেলেছে।
কি বলো? এ যুগে ক্লাস সিক্স এ পড়া মেয়ে ও প্রেম করে, আর তোমার মতো এতো সুন্দরী একটা মেয়ে প্রেম করেনি তা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো?

বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার, আমি আপনাকে সত্যি টাই বললাম। আর আমার আম্মু আমাকে কখনো এই শিক্ষা দেয়নি। তাই আমরা দু বোনের কেউ ই প্রেম করিনি।

প্রেম করা খারাপ কে বল্লো তোমায়।আর কাব্য কে দেখে সত্যি টা বলছো না, নাকি?কাব্যর দিকে তাকিয়ে।

সত্যি বলতে তিথী কখনো ভয় পায় না। আর কাব্য কে তো মোটেও ভয় পায় না তিথী। (তিথী)

পাশ থেকে কাব্য বলে, আরে যেই ধানীলংকা। যেই প্রেম করতে এসেছে পিটিয়ে পগালপাড় পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই তো আমিও চান্স পাইনি, তাই সোজা বিয়ে করে ফেলেছি।

আচ্ছা প্রেম করা তো খারাপ না। আপনি প্রেম করেন না আপু?

হা হা হা। উচ্চ স্বরে হাসে মেধা। প্রেম করা! তোমার বর কখনো দিয়েছে প্রেম করতে আমায়?যেই ছেলে প্রপোজ করতে এসেছে তাকে আর পরের দিন দেখিনি।
আমার জীবনে প্রথম ও শেষ পুরুষ কাব্য।

কথাটা শুনে তিথী তাকায় কাব্যর দিকে। কাব্য ও তিথীর দিকে তাকিয়ে আছে৷
তিথী ঃ প্রথম পুরুষ মানলাম, তবে শেষ পুরুষ এর মানে টা বুঝলাম না। যাই হোক আমি মামনীর কাছে যাচ্ছি। বলেই চলে যায় সে।

তোর বউ মনে হয় রেগে গেছে রে কাব্য।

রাগার কি কথা না? কি সব উল্টো পাল্টা বকছিস? তোর স্বভাব কি চেঞ্জ হবে না? শুধু শুধু পিচ্চি মেয়েটাকে কনফিউজড করে দিচ্ছিস। তোর এসব ফাজলামো ও কি বুঝবে? আল্লাহ জানে এখন মানাতে কতো টাইম লাগে৷ বলে বেড়িয়ে যায়।

আবারো জোরে জোরে হাসতে থাকে মেধা, তবে এটা বিষাদের হাসি।


।চলবে…
( কাল থেকে গল্প পাবেন না কিছুদিন)

চলবে….
( কাল বেরাতে যাবো, আগামি ৫/৬ দিন হয়তো গল্প দিতে পারবো না। তবু চেষ্টা করবো কাল বিকেলের মাঝে একটা পর্ব দেয়ার। যদি না ও পাড়ি তবে রাগ করবেন না প্লিজ। হ্যাপি রিডিং 🙂🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here