মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব -৩৬+৩৭+৩৮

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৬
দিনটা ভালোই কেটেছিলো অথৈয়ের।আতিক মাহাবুব খুব জলদিই ফিরে এসেছিলেন।সারাটাদিন বেশ আনন্দে কেটেছিলো ওর।এই বাড়িতে একেবারে আসার পরের দিনগুলো যে এইভাবেই আনন্দময় হয় সেই দোয়া করল অথৈ।তবে রুদ্রিক ওকে চুমু খাওয়ার পর থেকে অথৈ ভুলেও আর রুদ্রিকের কাছে যায়নি।লজ্জায় সে দূরে দূরে থেকেছে।চোখ তুলে তাকায়নি অবদি।রুদ্রিক দু তিনবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু মেয়েটা অতিরিক্ত লজ্জা পাচ্ছে।এই কারনে রুদ্রিক আর ঘাটায়নি অথৈ। সন্ধ্যার একটু আগে অথৈয়ের বাসা থেকে ফোনকল আসায়।রুদ্রিক অথৈকে তাদের বাড়িতে দিয়ে এসেছিলো।অথৈ নিজের লজ্জাকে ক্ষানিকটা সময়ের জন্যে দূরে সরিয়ে।রুদ্রিককে বলেছিলো,’ বাড়িতে আসুন নাহ।মা খুশি হবে।’

রুদ্রিক তখন শীতল গলায় উত্তর দিয়েছিলো,’ গিয়েই কি লাভ?তুমি লজ্জায় আমার দিকে তাকাচ্ছই না।তোমাদের বাড়িতে তো তোমার টিকিটাও আমি খুঁজে পাবো না যেই অবস্থা দেখছি।সামান্য চুমু খেয়েছি।এতেই লজ্জায় একেবারে পারলে মাটি খুরে তার নিচে চলে যাও।বিয়ের পর যে আমি তোমার সাথে আরও কি কি করব।সেগুলো তোমাকে বললেও তুমি লজ্জায় জ্ঞান হারিয়ে না ফেলো।তাই যাও বাসায় যাও।আর যদি আমাকে তোমাদের বাড়িতে এতোই নেওয়ার শখ থাকে।তাহলে স্বামীকে কিভাবে আদর যত্ন করতে জানো তো?সবটা করতে হবে।কি করবে?তাহলে বলো আমি আসছি।’

রুদ্রিকের একেকটা লাগামহীন বাক্য অথৈ বাকরুদ্ধ।এই লোকটা তাকে অনায়াসে এইভাবে এতোগুলো কথা তাকে নির্লজ্জের মতো বলতে পারলো?অবশ্য কাকে নিয়ে কি ভাবছে অথৈ। রুদ্রিক যে কেমন মানুষ তা এই কয়দিনে বেশ ভালোভাবে বুঝে নিয়েছে ও।অথৈ নিজের লজ্জা ঢেকে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে উঠে,’ ছিঃ অসভ্য কোথাকার।যান তো আপনি।বাড়ি চলে যান।’

এই বলে অথৈ হনহন করে বাড়ির ভীতরে চলে গেলো।পিছন থেকে শুনতে পেলো রুদ্রিকের প্রাণখোলা হাসি।অথৈ ফিরে গিয়ে আবার দেখতে ইচ্ছে করল রুদ্রিকের হাসিটা।কিন্তু এখন গেলে যে এই লোক তাকে লজ্জার সাগরে ডুবিয়ে মেরে ফেলবে। এই ভয়ে আর গেলো না।সোজা নিজের রুমে চলে গেলো আগে।বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে রুদ্রিকের গাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে তারমানে লোকটা যায়নি।অথৈ রুদ্রিককে মেসেজ করল,’ বাড়ি চলে যান।আর যদি ভদ্র আর সভ্যভাবে আমার সাথে থাকতে পারেন।তবে আমাদের বাড়িতে আসতে পারেন।’

মিনিট দুয়েক পর মেসেজের রিপ্লাই করল রুদ্রিক।
‘ তুমি আমার কাছে থাকবে, আমার পাশে থাকবে।আর আমি আসলে তো আজ তোমার সাথে আমাকে ঘুমোতেও হতে পারে।আম রেয়েলি ভেরি সরি বউ।তোমার সান্নিধ্যে থাকলে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো না।আর নিজেকে ভদ্র, সভ্য কোনোকালেই ভাবি না।অন্তত তোমার কাছে তো নাই-ই।তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।ভালো থেকো।হ্যাব অ্যা সুইট ড্রিম উইথ মি।’

মেসেজটা পড়ে অথৈ লজ্জাও পেলো।আবার একরাশ ভালোলাগায় হৃদয় জুড়িয়ে গেলো।অথৈ ছোট্ট করে উত্তর দেয়,’ সাবধানে বাড়ি যাবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।’

পর পর অথৈ বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে দেখে রুদ্রিকের গাড়ি চলে যাচ্ছে। মুঁচকি হাসি ফুটে উঠে অথৈয়ের। ও সত্যিই খুব ভাগ্যবান। রুদ্রিককে ও স্বামী রূপে পেয়েছে।

ক্লাসরুমে বসে বসেই গতকালকের ঘটনা ভেবে মুচঁকি মুচঁকি হাসছিলো অথৈ। ওকে এইভাবে অহেতুক হাসতে দেখে পিহু দু তিনবার ডেকেছে ওকে।নাহ, এই মেয়ের কোনো হেলদোল নেই।পিহু এইবার জোড়ে জোড়ে অথৈয়ের বাহু ঝাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,’ ওই ওই ওই।কিচ্ছে তোর?কোন দুনিয়ায় আছস?এইযে আমি তোরে ডাকতেছি।শোনস না?’

আকস্মিক পিহু এমন ঝাকানোতে ভয় পেয়ে যায় অথৈ৷ পর পর নিজেকে সামলে নিয়ে রাগি গলায় বলে,’ বান্দর মাইয়া।এমনে ধাক্কায়তাছস কেন?আমি কি বয়রা?কানে শুনি নাহ?’

আবার প্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,’ এতোদিন তোরে বকতাম এই পিহুর সাথে ঝগড়া করার জন্যে।এখন মনে হচ্ছে তুই যা করছ।একদম ঠিক করছ।এই প্রিয়াইন্না?ওর কানের নিচে খিচ্চা একটা থাবড়া মার তো।’

প্রিয়ান দূর থেকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারল।মানে এটা যে ‘ বান্ধবী এক মাত্র তুই আমার মনের কথা বুঝতে পারছ।’

কিন্তু আবার ভাবলো।যতোই হোক যেমন হোক এই পিহুকেই তা লাগবে।মরবার আগ পর্যন্ত ওর সাথে থাকতে যায়।এমনে না হোক।অন্তত সারাটাদিন ঝগড়াঝাটি করতেও ওকে চাই প্রিয়ানের।ভেবেই প্রিয়ান মুচঁকি হাসলো।
তারপর পিহুর দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলে,’ ঘাড়ে আমার কয়টা মাথা?এইডাড়ে চড়াইলে এই ডায়নি আমার মাথা কেটে রক্ত খেয়ে ফেলবে।’

এদিকে দুই পক্ষের এতো এতো অপমানে রাগে ফোসফাস করছে পিহু। নিজের সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি গলায় বলে,’ আমি কিছু বলতাছি জা দেইখ্যা তোরা আমারে এমনে অপমান করতাছস?এই তোরে কি আমি খারাপ কিছু বলছি?ভালো মতো ডাকতেছিলাম শোনছ নাই।তাই তো এমনে ধাক্কা দিতে হলো।আর এই তুই প্রিয়ান।আমি আগে তোর সাথে লাগতে যাই তাই নাহ?একটু পরই দেখা যাবে কে কাকে আগে ক্ষ্যাপায়।তোর মাথা আমি সত্যি সত্যি দুই টুকরা করে ফেলমু।’

প্রিয়ান শুকনো ঢোক গিলল পিহুর কথায়।বিরবির করে বলে,’ মাইয়া না জানি আগুন।রাগের তোপে যেমন করতেছে মনে হয় এখনই আমারে ড্রাগনের মতো মুখ থাইকা আগুন মাইরা জ্বালায় ফালাইবো।’

ওদের ঝগড়ার মাঝে রিধি ঢুকে পরল।ও বলে,’ এই অথৈ? কিছু কি ভেবেছিস কালকের বিষয়ে?’

অথৈ ভ্রু-কুচকালো রিধির কথায়।পর পর মনে পরে গেলো গতকাল সে সবাই মিলে একটা ট্যুরের দেওয়ার প্লান করেছিলো ও।কিন্তু রুদ্রিকের ভাবনায় ও এতোই বিভোর গয়ে গিয়েছিলো। যে বিষয়টা ওর মাথা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওর ভাই।অথৈ হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,’ কি আর বলব বল?আমি তো কাল ভাইয়ার সাথে রাগ করে আর কথাই বলিনি।’

আহিদ উঠে দাঁড়ালো।পকেটে হাত গুছে বলে,’ তাহলে চল এখনই কথা বলে আসি। ভাইয়ার বন্ধুরা তো সবাই রাজি।’

‘ হুম চল তাহলে। দেখা যাক উজবুকটা কি বলে।এই রিধি এই গাধার কি দেখে ভালোবাসলি রে?’

অথৈয়ের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় রিধি।পরপর হালকা হেসে বলে,’ ভালোবাসা তো আর বলে কয়ে হয় না রে অথৈ। কখন?কাকে?কিভাবে? ভালোবেসে ফেলি নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারি না।কখন মনটা যে অন্যকারো অধিনে চলে যায়।বুঝতে পারিনি।যদি পারতাম তবে এই বেহায়া মনকে সেই কবেই মনের মাঝে বন্দি করে রাখতাম।তাহলে ভালোবেসে যে আমায় সেই ভালোবাসার আগুনে তিলে তিলে জ্বলতে হতো না।এখন আমি এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি যে না পারছি সেই আগুন থেকে বের হয়ে আসতে।আবার না পারছি সেই আগুনে এইভাবে জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যেতে।তবে তোর ভাই হয়তো একদিন আমাকে এইভাবে পোড়াতে পোড়াতে ছাই করে নিঃশেষ করে দিবে।’

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে হতাশ শ্বাস ফেলল রিধি।চাপা কষ্টে রিধির বুকটা ফেটে যাচ্ছে।একটু কাঁদলে কি সস্তি পেতো?কিন্তু সে তো কান্না করবে না।দূর্বল হবে না আর সে।ইহানের সাথে করে পিকনিকে গিয়েছিলো ওইদিন ওর সাথে যা হয়েছে। এরপর ও ডিসাইড করে নিয়েছে।ভালোবাসার জন্যে পিছু পিছু ছুটবে না ও আর ইহান যদি ওর ভাগ্যে লিখা থাকে।তাহলে ইহান ওরই হবে।আর না হলে তো করার কিছু নেই।আজীবন এই ভালোবাসার দহনে সে প্রতিনিয়ত জ্বলতে থাকবে।পুড়তে থাকবে।যেদিন দেখতে না পারছে না।সেদিন বিলীন হয়ে যাবে।রিধি চোখের কোণে জমা হয়ে অশ্রুবিন্দুটা মুছে নিলো।অথৈয়ের খারাপ লাগছে রিধির জন্যে।ও ভাবতে পারেনি রিধি এতো কষ্ট পাবে।অথৈ মন খারাপ করে বলে,’ আমি সরি রে। আমি তোকে এইভাবে হার্ট করতে চায়নি।’

রিধি নিজের কষ্টটুকু লুকিয়ে ফেলল।না,তার এইভাবে ইমোশনাল হলে হবে না।নিজেকে সামলাতে হবে।রিধি জোড়পূর্বক হেসে বলে,’ আরেহ তুই কেন সরি বলছিস?আমিই একটু বেশি ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম।মন খারাপ করিস না তো।চল এখন যাওয়া যাক।’

ওরা সবাই ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসল।বাহিরে আসতেই হঠাৎ আহিদের নজর যায়।একা একা করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকা মাইশার দিকে।এই মেয়ে এইভাবে একা একা দাঁড়িয়ে আছে কেন?আর মুখটাও মলিন দেখাচ্ছে।তবে লাল হয়ে আছে চেহারা,চোখ দুটো যেন নিষ্প্রাণ।মেয়েটা কি অসুস্থ?কিছু কি হয়েছে ওর? আহিদ কি একবার গিয়ে জিজ্ঞেস করবে?কিন্তু কিভাবে যাবে?এখানে বন্ধুরা আছে।না, যতোই হোক মেয়েটার কাছে যেতে হবে।মেয়েটার ওই মলিন মুখশ্রী দেখে মুখের বা-পাশটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে।আহিদ বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আমতা আমতা করে বলে,’ ইয়ে মানে।তোরা যা ইহান ভাইয়ার সাথে কথা বলার জন্যে।আমি একটু আসছি।’

রিধি ভ্রু-কুচকে বলে,’ কোথায় যাবি তুই আবার?’
‘ একটু কাজ আছে জরুরি।তোরা যা না।’

অথৈ বলে উঠে,’ আচ্ছা তুই যা তোর কাজে। সমস্যা নেই।আমর ম্যানেজ করে নিবো।’

আহিদ চওড়া হাসে।তারপর নিজ গন্তব্যে চলে যায়।ও যেতেই অথৈ সন্দিহান গলায় বলে,’ ওই আহিদ্দার মাঝে কোনো ঘাপলা আছে। আজকাল ওর মতিগতি অন্যরকম ঠেকছে।’

‘ কিন্তু কি?’ প্রশ্ন করল প্রিয়ান।
অথৈ চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,’ সেটাই তো আমাদের জানতে হবে।ও এমন হুটহাট গায়েব হয়ে যায়টা কোথায়? প্রিয়ান পাতা লাগাও, পাতা লাগাও।’

অথৈয়ের এই কথায় পিহু মাথা চুলকে বলে,’ শুনেছি গাছ লাগায়। কিন্তু এই পাতা লাগাবে কিভাবে?এই প্রিয়ান তুই পাতা লাগাতে জানিস?’

রিধি ফিঁক করে হেসে ফেলল।অথৈ দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ তুই ইচ্ছে করে এসব বলিস তাই নাহ?’

পিহু সবকটা দাঁত কপাটি দেখিয়ে হেসে দিলো।অথৈ সহ এইবার বাকিরাও হেসে দিলো।আসলেই বন্ধু মানে তোমার লাইফটা একেবারে সেরা।বন্ধুরা একসাথে থাকলে যেন দুঃখরা কাছেই ঘেষতে পারে না।চারদিকে শুধু হাসির কলরব প্রতিধ্বনিত হতে শোনা যায়।কি যে শান্তি এতে।তাই বন্ধুদের সবসময় আগলে রাখতে হয়।বন্ধুত্বের সম্পর্ক দৃঢ় করতে।তাহলেই না হবে অটুট বন্ধুত্বের বন্ধন।

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আমি একটু অসুস্থবোধ করছি।ভালো লাগছিলো না লিখতে।কিন্তু আজ যেহেতু দেওয়ার কথা।তাই আপনাদের নিরাশ করিনি।ছোটো করে হলেও লিখে দিয়েছি।#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৭
মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাইশা।ওর শরীরটা ভালো নেই।দুদিন যাবত জ্বর,ঠান্ডায় ভুগছে।গতকাল ভার্সিটিতে আসেনি।কিন্তু আজ না এসেও উপায় নেই।ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাস আছে আজ।সেটা একদমই মিস দেওয়া যাচ্ছিলো না।তাই তো কোনোরকম শরীরটাকে টেনেটুনে ভার্সিটিতে এসেছিলো।কিন্তু এখন যে আর শরীর একদমই চলছে না।জ্বরটা বোধহয় আবার আসবে।ঘরে প্যারাসিটামল ছিলো সকালে সেটা খেয়ে এসেছিলো তাইতো কষ্ট হলেও ভার্সিটি আসতে পেরেছিলো।কিন্তু এখন যাবে কিভাবে?মাথাটা ভাড় হয়ে আছে।দুপায়ে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও পাচ্ছে না।তাই পাশে একটা পিলার ছিলো সেটার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেই হঠাৎ একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর কর্ণে এসে প্রবেশ করতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় মাইশা।ওর সামনে আহিদ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।মাইশা আহিদকে দেখে কষ্ট হলেও সোজা হয়ে দাঁড়ালো।জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠল,’ আরেহ আপনি?আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।ভালো আছেন?’

আহিদ সালামের জবাব নিয়ে বলে,’ আমি কেমন আছি আপাততো এটা বাদ দেও।বাট তুমি যে ভালো নেই। সেটা বোঝাই যাচ্ছে।’

আহিদের কথায় মাইশা অবাক হলো।একমাত্র আহিদই ওর এই অসুস্থতা সে মুখে বলার আগেই বুঝে ফেলল অনায়াসে।অথচ ওর ক্লোসফ্রেন্ডটাও ওকে বুঝল না।একবার জিজ্ঞেসও করল না ‘ মাইশা তোর কি হয়েছে?এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?’ অথচ লোকটা ওর কিছু না। শুধু হাতেগোমা কয়েকবার দেখা হয়েছে আর একটু আধটু কথা হয়েছে।সে ওকে দেখেই ও অসুস্থ সেটা বুঝে ফেলল।মাইশা মলিন হেসে বলে,’ ওই গতকাল থেকে একটু জ্বর আর ঠান্ডা লেগেছে।’

আহিদ ভ্রু-কুচকে তাকালো।জ্বর এসেছে।অথচ মেয়েটা এই জ্বর শরীর নিয়েই ভার্সিটিতে এসেছে।কেন এসেছে?কি এমন দরকার যে এতো অসুস্থ শরীর নিয়েও এখানে আসা লাগবে।আহিদের রাগ লাগলো। ও ধমকে উঠে,’ জ্বর এসেছে বাড়িতে বিশ্রাম করবে।এখানে কি?কেন এসেছ?দাঁড়াতেও তো পারছ না ঠিকঠাক।কি এমন জরুরিতলব পরেছে যে তুমি আজ ভার্সিটি আসলে?’

আহিদের হঠাৎ ধমকে মাইশা চমকে গেলো। ওর মা ছাড়া ওকে এইভাবে আর কেউ কখনও শাষন করেনি।মায়ের কথা বলতেই তাকে মাইশার ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করল।কতোদিন হয়ে গেছে মায়ের মুখটা সে দেখেনা।কিন্তু কি আর করার মায়ের কাছে তো চাইলেও আর সে যেতে পারবে না।সে যে আর এই পৃথিবীতে নেই।মাইশার বিষন্নতা ভড়পুর মুখশ্রী দেখে আহিদ দমে গেলো।একটু বেশিই করে ফেললো কি ও?এইভাবে ধমক দেওয়াটা বোধহয় ভালো হয়নি।কি অধিকারে সে ধমকাবে মাইশাকে।এমন কোনো সম্পর্ক তো ওদের মাঝে নেই।আহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,’ সরি একটু অভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি।’

আহিদের সরি বলার ব্যাপারটা মাইশার ভালো লাগলো না।তার কেনো জানি আহিদের এই অল্প একটু শাষন করা অনেক ভালো লেগেছে।যেটাকে মাইশা বলে মিষ্টি শাষন।মাইশা দুপাশে মাথা দুলিয়ে বলে,’ আরেহ না।সরি বলছেন কেন?ইটস ওকে।আপনি আমার জন্যে চিন্তা করছেন।তার জন্যেই ওমন কথা বলেছেন।আমি কিছু মনে করিনি।’

এইটুকু কথা বলেই যেন মাইশা হাপিয়ে উঠেছে।তার আর কথা বলতে ভালো লাগছে না।গলাটাও ব্যথা করছে।মাইশা খুকখুক করে কেশে উঠল।মাইশার এহেন অসুস্থতায় আহিদ অস্থির হয়ে যাচ্ছে।কি করবে মেয়েটার জন্যে?ওর তো মাইশার জন্যে কিছু অধিকার নেই।কিছু করতে গেলেও যদি মেয়েটা উল্টাপাল্টা ভেবে বসে।মাইশা আবার চোখ বন্ধ করে পিলারের গা ঘেষে দাঁড়ালো।আহিদের চিন্তা আরও বেড়ে গেলো।মেয়েটার এমন অবস্থা দেখে ওর বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।এভাবে দেখতে পারছে না ও মাইশাকে।আহিদ হঠাৎ মাইশার কপালে আলতো হাতে স্পর্শ করল।আচমকা কারো স্পর্শে মাইশা কেঁপে উঠে।মনের মাঝে আলাদা শিহরণ বয়ে গেলো।চমকে চোখ খুলে মাইশা তাকিয়ে দেখে আহিদ ওর কপালে স্পর্শ করেছে।এতে যেন মাইশার হৃৎস্পন্দনের গতি কয়েকশগুন বেড়ে গেলো।ধরাস ধরাস করছে বুকটা।এই প্রথম কোনো পুরুষ ওর এতোটা কাছে এসেছে।মাইশা কাঁপা গলায় বলে,’ ক..কি করছেন?’

আহিদ মাইশার কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো।পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলে,’ অনেক জ্বর তোমার গায়ে।১০০ ডিগ্রির উপরে তো হবেই।দাঁড়ানোর শক্তিও পাচ্ছো না।বাড়ি যাবে কিভাবে ভেবেছ?’

মাইশা এখনও ঘোরের মাঝে আছে।আহিদের ওই একটুখানি স্পর্শে মনের মধ্যে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।মাইশার কোনো রেস্পন্স না পেয়ে আহিদ আবারও বলে,’ মাইশা?তুমি শুনছ আমার কথা?বলছি বাড়ি যাবে কিভাবে?’

একটু জোড়েই বলল আহিদ।এতে ধ্যাণভঙ্গ হয়ে যায় মাইশার।ও ইতস্ততভাবে বলল,’ আই উইল ম্যানেস।আপনি চিন্তা করবেন নাহ।’

আহিদ কিছু বলার জন্যে উশখুশ করছে।কিন্তু কথাটা কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ও শুধু এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।কিন্তু অবশেষে মনের কাছে হার মেনে বলেই ফেলল,’ মাইশা শোনো?’
‘ জি বলুন?’
‘ তুমি যদি কিছু মনে না করো।তাহলে কি আমি তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দিতে পারি?’

মাইশা অবাক হয়ে তাকালো।আহিদ এতে অপ্রস্তুত হয়ে পরল।
‘ আমি জাস্ট বললাম।বাট তোমার প্রব….’

আহিদের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে মাইশা নম্র কণ্ঠে বলে,’ হুম যাবো আমি আপনার সাথে।’

মাইশা আহিদের সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলো।উপায় নেই না গিয়ে?তার গায়ে আর শক্তি নেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্যে অপেক্ষা করা।বা গলা উচিঁয়ে রিকশা ডাকা।তাছাড়া রিকশা পেলেও সেটা রিস্কি হয়ে যাবে।একা একা রিকশায় বসবে।যেই হারে মাথা ঘুরাচ্ছে।রিকশা থেকে পরেও যেতে পারে।তখন আরও বিরাট সমস্যায় পরতে হবে ওকে।আর আহিদ লোকটা খারাপ না।সেদিন ওকে কিভাবে হ্যাল্প করল।বিশ্বাস করা যায় লোকটাকে।মাইশা টলতে টলতে করিডোর থেকে নামতে যেতেই নিজের ভারসাম্য হারিয়ে পরে যেতে নিলো।কিন্তু তার আগেই ওকে সামলে নিলো আহিদ।মাইশার উদরে আড়াআড়িভাবে হাত রেখে ওকে সামলে নিয়েছে পরা থেকে।মাইশার যেন নিশ্বাস আটকে গেলো আহিদের ছোঁয়ায়।কাঁপতে লাগল শরীর।দ্রুত আহিদের কাছ থেকে সরে দাঁড়ালো।আহিদ চিন্তিত কণ্ঠে বলে,’ আর ইউ ওকে?’

মাইশা ছোট্টো কণ্ঠে বলে, ‘ হুম ঠিক আছি।’

আহিদ বলল,’ যদি কিছু মনে না করো।তবে বলছি।তুমি আমার হাত ধরে হাটতে পারো।যেভাবে টলছ তুমি।পরে গিয়ে ব্যথা পাবে।’

মাইশা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকালো আহিদের দিকে।তারপর আবার তাকালো নিজের হাতের দিকে।আহিদের হাত ধরবে ও?ভাবতেই বুক কাঁপছে মাইশার।এদিকে মাইশার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে হতাশ হলো আহিদ।কিন্তু তার হতাশা দূর করে মাইশা ওকে অবাক করে দিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো।আহিদ যেন না চাইতেও আকাশের চাঁদ পেয়ে বসেছে এমন মনে হচ্ছে ওর।খুশিতে কি করবে বুঝতে পারছে না।মাইশা যে ওকে এতোটা বিশ্বাস করে নিজের হাত ধরার অনুমতি দিবে ভাবতেই পারেনি।আহিদ কম্পনরত বুক নিয়েই মাইশার নরম তুলতুলে হাতটা ওর হাতের ভাঁজে নিয়ে নিলো।আবেশে মনপ্রাণ ভরে গেলো।আহিদ বিরবির করল,’ এইযে বিশ্বাস করে একটুখানি সময়ের জন্যে নিজেরটা হাতটা ধরাতে দিলে।ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই গোটা এই তুমিটাকে আমি এই হাতের মতোই খুব যত্নে আগলে রাখব।তুমি শুধু বিশ্বাস আর ভড়সা করো আমায়।’

মাইশা বুঝতে পারল না আহিদের কথা।তাই প্রশ্ন করল,’ কি বলছেন?শুনতে পায়নি আমি।’

আহিদ জোড়পূর্বক হেসে বলে,’ না কিছু না। ওই আসলে বলছিলাম রিকশায় যাবে না-কি সিএনজিতে?’

মাইশা ভাবলো।আহিদের সাথে এক রিকশায় যাবে বিষয়টা ভীষণ অসস্থিকর লাগবে ওর কাছে।সিএনজিতেই ভালো হবে।সিএনজিতে দুজন মানুষ বসেও অনেকখানি জায়গা ফাঁকা থাকবে।তাই মাইশা বলল,’ সিএনজিই ভালো হবে।’

আহিদ জানতো মাইশা সিএনজির কথাই বলবে।কারন রিকশায় দুজন একসাথে বসল গা ঘেষাঘেষি করে বসতে হবে।আর মাইশা সেভাবে আহিদের সাথে যাবে না।আহিদ আর কোনো কিছু বলল না। মাইশার হাত আগলে নিয়ে সাবধানে হেটে ভার্সিটির বাহিরে আসলো।তারপর একটা সিএনজি ডেকে মাইশাকে আগে বসিয়ে ও নিজে উঠে বসল।যেতে যেতে প্রিয়ানের ফোনে মেসেজ করে দিলো।
‘ প্রিয়ান বাসায় জরুরিতলব পরেছে আমার।বাবা ডেকেছেন। তাই আমি চলে যাচ্ছি।তোরা কি প্লানিং করলি তা রাতে ফোনে কথা বলে জেনে নিবো।’

মাইশার বাসার সামনে সিএনজি থামতেই আহিদ মাইশাকে নামতে সাহায্য করল।মাইশা সৌজন্যমূলক হেসে বলে,’ ধন্যবাদ ভাইয়া।অনেক সাহায্য করলেন আমায়। এই উপকার আমি কোনোদিন ভুলব নাহ।যদি কখনও আপনার কোনো কাজে হ্যাল্প করতে পারি এমন মনে হলে নির্দ্বিধায় আমায় বলবেন।’

আহিদ মুচঁকি হেসে বলে,’ ইটস ওকে।এটা আমার দায়িত্ব’র মধ্যে পরে।একটা অসুস্থ মানুষকে সাহায্য করেছি।মানুষ হয়ে মানুষকে সাহায্য করব এটাই স্বাভাবিক।’

‘ ধন্যবাদ ভাইয়া।এখন আসি তাহলে?’

আহিদ আমতা আমতা করে বলে,’ একা একা যেতে পারবে?নিজের ফ্লাটে।’
‘ হ্যা আমি আমার রুমমেটকে মেসেজ করেছি।আমায় যেনো একটু এসে বাসায় নিয়ে যায়।’

আহিদ যেন সস্থি পেলো।ওর মন চাইলো মাইশা বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে।কিন্তু বিষয়টা দৃষ্টিকটু দেখায়।মাইশা বলল ওর রুমমেট আসবে ওকে এগিয়ে নিতে।যদি এসে দেখে মাইশার সাথে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।তাহলে বিষয়টা অন্যভাবে নিতে পারে।খারাপ ভাববে মাইশাকে।তাই আহিদ চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো।আহিদ বলল,’ তবে আসি?নিজের খেয়াল রেখো।আর মেডিসিন নিও ঠিকঠাক।’
‘ আচ্ছা।আল্লাহ্ হাফেজ।’

আহিদ সিএনজিতে উঠে বসল।চোখের পলকেই আহিদ চলে গেলো মাইশার সামনে দিয়ে।মাইশা সেদিকে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো।ওর কেমন যেন লাগছে।অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে।যেই অনুভুতির নাম কি সে নিজেও জানে না।এর মধ্যে মাইশার রুমমেট এসে পরেছে।এসেই জিজ্ঞেস করে,’ কি হয়েছে মাইশা?শরীর বেশি খারাপ লাগছে?আমি বলেছিলাম আজ ভার্সিটিতে যেও না।’

মাইশা মৃদ্যু হেসে বলে,’ আমি ঠিক আছি আপু।আমার একফ্রেন্ড আমায় বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো।তুমি একটুখানি হেল্প করো আমায় রুমে যেতে।’
‘ আচ্ছা চলো।’

অতঃপর মাইশা তার রুমমেটের সাহায্যে নিজের ফ্লাটে চলে গেলো।
————
এদিকে প্রিয়ান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে মোবাইলের দিকে।ওকে এমন দেখে পিহু বলে উঠে,’ কিরে?তোর আবার কি হলো?এমন করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?’

প্রিয়ান মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।বলল,’ আহিদ মেসেজ করেছে ও নাকি বাসায় চলে গিয়েছে।আংকেল নাকি জরুরি কাজে ওকে ডেকেছে।’

অথৈ বলল,’ হ্যা,যেতেই পারে এখানে এইভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে?’

প্রিয়ান মুখ দিয়ে ‘চ’ শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,’ আরেহ এতে আমার কি সমস্যা হবে?সমস্যা তো অন্যকিছু।’

পিহু ভাবুক গলায় বলল,’ আব্বু আহিদকে জরুরি কাজে ডেকেছে।কিন্তু আব্বু তো বাড়িতে নেই।সে এখন ইন্ডিয়াতে আছে কাজের সূত্রে।গতকালকেই তো গেলো।’

রিধি পিহুর মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলে,’ আংকেল আউট ওফ কান্ট্রি থাকলে ও তাহলে মিথ্যে বলল কেন আমাদের কাছে?’

প্রিয়ান শান্ত কণ্ঠে বলে,’ আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে।’

অথৈ প্রশ্ন করল,’ কি সন্দেহ হচ্ছে?’
‘ এই আহিদ আমাদের পিঠপিছে কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করছে।’

সবার চোখ কপালে উঠে গেলো।কেউ যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।রিধি চেচিঁয়ে উঠল,’ অসম্ভব! এ হতে পারে না।এমন হলে আহিদ আমাদের আগে জানাতো।’
‘ এক্সেক্টলি আমারও বিলিভ হচ্ছিলো না।বাট আমি নিজ চোখে দেখেছি।’

পিহু বলল,’ কি দেখেছিস?’
‘ একটু আগে আহিদ একটা মেয়ের হাত ধরে ভার্সিটি থেকে বারিয়ে গিয়েছে।’

আহিদের এহেন কথায় যেন আরও চমকে গেলো তারা।সবাই একসাথে চেচাঁলো,’ কিহহহহহ?’

প্রিয়ান সাথে সাথে কানে হাত দিলো।নাক মুখ কুচকে বলে,’ বেত্তমিজের দল।আস্তে চিল্লা।অকালে আমাকে বয়রা করার মিশনে নেমেছিস না কি তোরা?’

ওদের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না আহিদ এমন কিছু করবে।তাও আবার ওদের না জানিয়ে।মানে আহিদ ভালোবাসতে পারে কাউকে।কিন্তু ওদেরকে না জানিয়ে কোনো রিলেশনে যাবে না আহিদ।এইটুকু ওরা জানতো।কিন্তু প্রিয়ান যা বলছে তাও ফেলে দেবার মতো কথা নয়।প্রিয়ান তো আর মিথ্যে বলবে না।হচ্ছে টা কি ওদের সাথে?পিহু দাঁত দিয়ে নখ কাটছে ভয়ে।ওকে এমন অস্থির আচরণ করতে দেখে প্রিয়ান ধমকে উঠল,’ এমন প্রতিবন্ধিদের মতো করছিস কেন?আর খচ্চরের মতো দাঁত দিয়ে নখ কাটছিস কেন?’

পিহু আহিদের কথায় ক্ষ্যাপে গিয়ে বলে,’ দেখ মাথা খারাপ করিস না।এমনিতেই টেন্সন লাগছে।’

রিধি বলে,’ কিসের টেন্সন?’

পিহু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,’ আহিদ্দা যে প্রেম করতেছে।এইটা বাবা জানলে ওকে তো গুলি করে মারবেই সাথে আমাকেও মারবে।বলবে,
তোর ভাই প্রেম করে বেড়াচ্ছে।তুই কোথায় ছিলি?এসব দেখিসনি?দেখেও আমাকে কেনো জানাসনি?তোদের দুটোকেই আজ গুলি করে দিবো।
এখন আমার কি হবে দোস্ত?ভয়ে এখনই আমি বেহুশ হয়ে যাবো মনে হচ্ছে।’

পিহুর কথায় প্রিয়ানের গলা শুকিয়ে আসলো।ও নিজেও তো পিহুকে পছন্দ করে।পছন্দ করে বললে ভুল হবে।ভালোবাসে ও পিহুকে।এতোদিনে বেশ বুঝতে পেরেছে সেটা।তবে কি এই কথা পিহুর আব্বু শুনলে ওকেও গুলি করে দিবে? নাহ নাহ প্রিয়ান এসব কি ভাবছে।ভয় পেলে চলবে না।ভালোবাসলে মনে কোনো ভয় রাখতে নেই।ভয়কে জয় করতে হবে।আহিদ বিরবির করল,’ শশুড়আব্বাকে তো পরে দেখে নিবো।আগে তার মেয়েকেই ঠিকঠাক পটিয়ে নেই।’

পিহু প্রিয়ানকে বিরবির করতে দেখে বলে,’ কিছু বলছিস?’
‘ হ্যা না কিছু না।’

অথৈ নিজেকে শান্ত করল।স্বাভাবিকস্বরে বলে,’ আপাততো এই টপিক বাদ দে।আমরা আহিদকে কিছুদিন সময় দেই।আমার মনে হয় ও কোনো কারন বশতই আমাদের কাছ থেকে বিষয়টা লুকিয়েছে।তাই ওকে আমরা না ঘাটাই।দেখি কয়েকদিন অপেক্ষা করে যে ও নিজ থেকেই আমাদের কাছে এসে এই ব্যাপারে বলে কি না।যদি দেখিস অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পরেও আহিদ কিছু বলছে না।তাহলে আমরা সবাই কি আহিদকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব ঠিক আছে?আপাততো ট্যুরের বিষয়ে ভাব।ভাইয়া তো রাজি হয়ে গিয়েছে।বাকিদেরও কোনো সমস্যা নেই।আমরা সবাই একসাথে ট্যুরে যাবো।ভাবলেই আমার মনের মাঝে অনেক উত্তেজনা কাজ করছে!’

রিধি দুষ্টু হেসে বলে,’ কি ব্যাপার রিধি আগে তো আমরা একসাথে ট্যুরে গেলে তুই এতোটা খুশি হতিস না।এখন তোকে যেতোটা খুশি দেখাচ্ছে।’

অথৈ আনন্দিত গলায় বলে,’ আরেহ আগে তো মাত্র আমরা পাঁচজন যেতাম।এখন দেখ কতোগুলো মানুষ।যতো বেশি মানুষ একসাথে যাবো ততোই হইহুল্লোড়,আর মজা বেশি হবে।’

পিহু ভ্রু নাচিয়ে বলে,’ হুম হুম! আমরা জানি তো কেনো তুই এতো খুশি।রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে ঘুরতে যাবি।একা একা কতো সময় কাটাবি।স্পেশাল মোমেন্ট ইউ নো নাহ?’

রিধির এহেন কথায় অথৈ থতমত খেয়ে যায়।পরক্ষণে কিছু একটা ভাবতেই লজ্জায় ওর গাল দুটো লাল হয়ে যায়।
প্রিয়ান হেসে ওকে দেখিয়ে বলে,’ আরেহ দেখ দেখ।আমাদের অথৈ কিভাবে ব্লাশ করছে রুদ্রিক ভাইয়ের কথা বলতেই।’

অথৈ লজ্জামিশ্রিত হেসে বলে,’ যাহ,কি শুরু করলি তোরা?আমি কি তার সাথে একান্তে হানিমুনে যাচ্ছি না-কি?এমনভাবে বলছিস।’

‘ হুম, হুম,।বুঝি,বুঝি।’

ওরা সবাই নানানভাবে অথৈকে ক্ষ্যাপাতে লাগল।তবে অথৈ আসলেই অনেক বেশি খুশি।ও আর রুদ্রিক ঘুরতে যাবে।সেখানে গেলে একান্তে কিছু সময় কাটাবে।কিছু মিষ্টি মধুর স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসবে তারা।এসব ভাবতেই অথৈ আরেকদফা লজ্জা পেলো।হ্যা,ওরা গিয়ে আবার রুদ্রিক আর ইহানের সাথে কথা বলেছে।ইহান এইবার বোনের এককথাতেই রাজি হয়ে গিয়েছে।আর দ্বিমত করেনি।কারন গতকাল থেকেই অথৈ ইহানের সাথে কথা বলছিলো না।এখন যদি আবার দ্বিমত করে তবে দেখা যাবে রেগে ওর দিকে তাকানও বন্ধ করে দিবে।তাই একবাক্যেই রাজি হয়ে যায়।ইহান রাজি মানে বাকিদেরও সমস্যা নেই।সবাই ঘুরতে যাবার জায়গাও নির্ধারণ করে ফেলল।তারা যাবে ভারতের মেঘালয়ে।অথৈয়ের অনেকদিনের স্বপ্ন সে মেঘালয় যাবে।মূলত সাজেক যাবার পর থেকেই তার মেঘালয় যাবার ইচ্ছেপোষণ হয় মনে।আর এখন তা অতিদ্রুত বাস্তবায়ন হবে।সবারই পাসপোর্ট আছে তাই সমস্যা হবে না।রুদ্রিক, ইহান,সাফাত,নীল আর অনিক বলেছে আরও অনেক কাজ আছে মেঘালয় যাওয়ার আগে।সেগুলোর দায়িত্ব তারা নিবে।বেশি না এইতো আর চার-পাঁচদিন পরেই ওরা রওনা হবে।মেঘালয় যাওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই বেশ খুশি।কারন বাংলাদেশের প্রায় অনেক জায়গায় তাদের ঘুরাঘুরি শেষ।এবার নাহয় দেশের বাহিরে যাওয়া যাক।অথৈ আরও বলেছে তারা ট্রেনে করে যাবে।মানে ঢাকা থেকে আগে সিলেটে তো যেতে হবে।তাই তারা ট্রেন জার্ণি করেই যাবে।সবাই একসাথে আনন্দ করতে করতে যাবে।ভাবতেই কেমন যেন অতি অতি সুখ সুখ লাগছে অথৈয়ের।

#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৮
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।সবাই বললে ভুল হবে।শুধু দুজন মানুষ এখনও পৌছায়নি।ইহান আর অথৈ ওরা এখনও আসেনি।ওদের জন্যেই অপেক্ষা করছে সবাই।পিহু বিরক্ত হয়ে বলে,’ এই মেয়েটা ওলওয়েজ লেট করে।আজ তো একটু তাড়াতাড়ি আসবে।একটু পরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে।’

রিধি বিরবির করল,’ যেমন ভাই, তেমন বোন।লেট লতিফ কোথাকার।’

ঠিক তখনই দূর থেকে অথৈকে আসতে দেখা গেলো।মেয়েটা দৌড়ে দৌড়ে আসছে।পিছনে ইহান দুহাতে দুটো ল্যাগেজ টেনে নিয়ে আসছে।আর বার বার অথৈ দৌড়াতে মানা করছে।সাদা লম্বা গোল জামা পরেছে অথৈ।দৌড়ে আসার ফলে অথৈয়ের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।ঠোঁটের কোণে ঝলমলে হাসি।স্নিগ্ধ,কোমল মুখটা দেখেই রুদ্রিকের যেন প্রাণ জুড়িয়ে গেলো।দৌড়ে আসা তার প্রাণপ্রিয়াকে মন ভরে দেখছে সে।নির্নিমেষ তাকিয়েই রইলো।এদিকে অথৈ দৌড়ে এসে ওদের সামনে থামলো।হাটুতে দুহাত রেখে ভড় দিয়ে হাপাতে লাগল।বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে।ও হাপানো কণ্ঠে বলে,’ সরি,সরি দেরি হয়ে গিয়েছে।আমি ইচ্ছে করে করেনি।’

ততোক্ষণে ইহানও এসে পরেছে। ইহানের কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তির আভাস, ‘ হ্যা, ইচ্ছে করে করিস নি।আমি বলেছিলাম অথৈ জার্নির আগের দিন রাতে ভালোভাবে ব্যাগ গুছিয়ে নেহ।তোর তো এটা সেটা মনে থাকে না।পরে হুরোহুরি করিস।কিন্তু কে শুনে কার কথা।সকাল থেকে সে একপ্রকার পুরো বাড়িতে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলো।তার এটা পায় না। ওটা পায় না।’

ইহান অথৈয়ের ল্যাগেজটা রুদ্রিকের কাছে দিয়ে বলে,’ নেহ তোরটাকে এইবার তুই সামলা।আমি আর পারবো না।’

অথৈ মুখ ভেংচি কাটলো।রুদ্রিকের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,’ হুহ্ মনে হয় আমার ল্যাগেজটা এই পর্যন্ত এনে দিয়ে উদ্ধার করেছ তুমি।’

‘ একেই বলে কারো উপকার করতে নেই। যেই ভাড় তোর ব্যাগ।দুনিয়ার সব মনে হয় ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছে।আমরা যাচ্ছি মাত্র পাঁচদিনের ট্যুরে।আর ও মনে হয় মাস অবদি থাকার সব নিয়ে নিয়ে ব্যাগ একেবারে ভরে ফেলেছে।’

অথৈ মুখ বাকিয়ে বলে,’ তোমার কারনেই তো একটা ব্যাগই নিয়েছি। আমার তো আরও কিছু নেওয়ার ইচ্ছে ছিলো।’
‘ নিতি না করেছে কে?শুধু আমাকে বলতে পারতি না যে ভাইয়া আমার ব্যাগটা একটু নেও নাহ।ইনফেক্ট আমি তোর কোনো ব্যাগই টানতে পারবো না।আমাকে কিছু বলবি তো তোর ব্যাগ শুদ্ধ তোকেও মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।’

অথৈ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,’ তুমি এমন করতে পারবে ভাই?’
‘ হ্যা পারবো।’

দু ভাই বোনের খুনশুটি দেখে হাসলো রুদ্রিক।অথৈয়ের এলোমেলো চুলগুলো দুহাতে সুন্দরভাবে গুছিয়ে দিলো।হঠাৎ সবার সামনে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে লজ্জা পেলো অথৈ। রুদ্রিক বলল,’ এইটুকু এনে দিয়েছিস সেইজন্যে ধন্যবাদ তবে আমার বউয়ের সব কিছুর দায়িত্ব আমি নিতে পারবো।সো তোকে চিন্তা করতে হবে না।’

ইহান বলে,’ হ্যা তা হলেই ভালো।এখন চলো ট্রেনে উঠা যাক।’

ইহানের কথায় সবাই সম্মতি দিলো।ওরা মোট বারোজন।জেনি আসেনি।ও ওর ইগো নিয়ে আছে।তাই মানা করে দিয়েছে।বারোজনের জন্যে দুটো ডাবল কেভিন ওরা বুক করেছে।একেকটা কেভিনে ছয়জন করে থাকবে।পাশাপাশি দুটো কেভিন।অনলাইনে টিকিট কাটার কারনে বেশি ঝামেলায় পরতে হয়নি ওদের।একটা কেভিনে অথৈ রুদ্রিক আর সাফাত একসিটে।আরেক সিটে প্রিয়ান,পিহু আর আহিদ বসেছে।আরেকটা কেভিনে মারিয়া,নীল আর অনিক অপরপাশে রিধি,ইহান আর সিয়া।সাফাত মূলত এখানে বসতে চায়নি।কিন্তু ইহান ওকে কানে কানে বলেছে ও যেন দ্রুত গিয়ে ওই সিটটায় বসে পরে। নাহলে যে রিধি গিয়ে সেখানে বসে পরবে।আর এটা হলে ও রিধির সাথে বসার সুযোগ পাবে না।ইহান ওর বন্ধুদের অনেক আগেই বলে দিয়েছে ও রিধিকে ভালোবাসে।আর সাফাত এই কারনেই না চাইতেও বন্ধুর কথা ভেবে মেনে নেয়।এদিকে জানালার কাছে বসেছে সিয়া। ওর একটু প্রবলেম হয় যানবাহনে চরলে।তাই জানালার পাশে বসেছে মাঝে বসেছে রিধি আর তার পাশে ইহান।ইহানের সাথে বসে রিধির একদিকে ভালোও লাগছে আবার কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। ও তো দূরে থাকতে চায় ইহানের থেকে।কিন্তু ভাগ্য বোধহয় তা চায় না তাই তো ঘুরে ফিরে ওকে ইহানের কাছে এনেই ফেলে।কাউকে যে বলবে জায়গা অদল বদল করতে সেটাও সম্ভব না।সবাই যদি অন্যকিছু ভেবে বসবে আর তাছাড়া ইহান তো আর তার মনের কথা জানে না। যদি ইহানের খারাপ লাগে রিধি উঠে চলে গেলে।সিয়াকেও তো বলতে পারবে না এই বিষয়ে।তার প্রবলেম হবে।তাই চুপচাপ বসে রইলো।কি আর করার।এদিকে অনিক করুন চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর খুব করে ইচ্ছে করছে সিয়ার পাশে গিয়ে বসতে।ওর ওই হাতটা শক্ত করে ধরতে।অন্যান্য কাপলরা যেভাবে একে-অপরের সাথে বসেছে ওরও বসতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটাকে নিজের বাহুতে আগলে নিয়ে ভড়সা দিতে।কিন্তু সেটা করার সাহস যে ওর নেই।সিয়া আশেপাশেও যে সে যেতে পারবে না।মনের কষ্ট মনের মাঝে লুকিয়ে রাখলো অনিক।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলানোর কাজে লেগে পরলো।সিয়া আঁড়চোখে তাকালো অনিকের দিকে।অনিকের হাতটার দিকে তাকিয়ে ফের নিজের হাতের দিকে তাকালো।আগে কখনও কোথাও গেলে অনিক ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতো।ভীষণ ভালো লাগতো তখন সিয়ার।ভালোবাসার মানুষটার ওই ভড়সাযোগ্য হাতের স্পর্শে সবকিছুর কথা ভুলে যেতো।কিন্তু কে জানতো?লোকটা তো ওর যাথে ছলনা করতো।ভালোবাসতো না লোকটা ওকে।যা করতো সব ছিলো লোক দেখানো।কিন্তু বেহায়া মনটা মানলে তো?তার মনটা এখনও চাইছে সেই আগের মতো আবারও অনিকের হাতটা যেন তার এই ছোট্টো হাতটা শক্ত করে ধরে।তাকে নিজের বাহুডোরে যেন আগলে নেয়।কিন্তু না তা সম্ভব না।অনিকের কাছে সিয়া আর কখনও ফিরে যাবে না।এটা আর হবার নয়।সিয়া লম্বা শ্বাস ফেলে চোখ সরিয়ে নিলো।দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো জানালার বাহিরে।
মারিয়া ভীষণ খুশি।ও সচরাচর ঘুরাঘুরি করতে পারে না।ওর বাবা, মা কিছু না বললেও ওর বড়ো ভাইয়ের কারনে পারে না।ওর ভাই বোনকে ভীষণ ভালোবাসে।তাই তো বোনকে একা ছাড়তে ভয় পায়। আজও দিতো না।একমাত্র রুদ্রিক,আর ইহান এই দুইজন ওর ভাইকে অনেক বুঝিয়েছে। তবে গিয়ে রাজি হয়েছে। মারিয়ার ঠোঁট থেকে যেন হাসি সরছেই না।আর নীল অপলক তাকিয়ে থেকে সেই হাসি দেখছে।প্রিয়তমার ঠোঁটের মিষ্টি হাসি দেখতে কারই বা না ভালো লাগবে?মারিয়া এটা সেটা বলে যাচ্ছে।নীলের কোনো জবাব নেই।নীলকে এমন চুপচাপ থাকতে দেখে মারিয়া এইবার তাকালো নীলের দিকে।নীলের সেই মুগ্ধ দৃষ্টির মাঝে সে আবদ্ধ বিষয়টা বুঝতে পেরেই লজ্জা লাল হয়ে যায় মারিয়া।লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,’ কি দেখছো এভাবে?’

নীল মারিয়ার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে মুচঁকি হাসে।মাথা নুইয়ে মারিয়ার কানে ফিসফিস করে বলে,’ দেখছি তোমার গোলাপি ঠোঁটজোড়ার মিষ্টি হাসিটাকে।যা আমাকে বড্ড বেষামাল করে দিচ্ছে।আমার ঠোঁটজোড়া তোমার ওই ঠোঁটজোড়াকে স্পর্শ করতে চাইছে ব্যাকুলভাবে।’

মারিয়া লজ্জায় সরে আসলো নীল থেকে।অন্যদিকে তাকিয়ে একহাতে মুখ ঢেকে হেসে দিলো।নীল নিজেও হাসলো

পিহু বার বার নড়াচড়া করছে।তার অসস্থি লাগছে এখানে বসতে।পিহুর এমন কান্ডে আহিদ বিরক্ত হয়ে বলে,’ এমন নড়ছিস কেন?চুপ করে বসতে পারছিস নাহ?’

পিহু নাক মুখ কুচকে বলে,’ ভাই আমার এখানে বসতে ভালো লাগছে না।কেমন যেন লাগছে।’

‘ তুই তো শুচিবায়ুগ্রস্ত স্বভাব বদলা তাহলেই হবে।সবখানে তুই এমন করিস।’

আহিদের কথায় পিহু রেগে বলে,’ তুই এমনভাবে বলছিস যেন আমি অকারনেই এমন করি?জানিস কতো শতো প্যাসেঞ্জারর আছে যারা গাড়িঘোড়া চড়তে পারে না।বমিটিং এর প্রবলেম থাকে।তো এখানে যে কেউ এমন কিছু করেনি গ্যারেন্টি কি?’

আহিদ রেগে বলে,’ হ্যা ট্রেনের মালিক তো সেগুলো রেখে দেয় তোর জন্যে?তুই আসবি আর এসে তা পরিষ্কার করে দিবি। তাহলে এখন কর পরিষ্কার।’

আহিদের এহেন কথায় পিহু নাক মুখ কুচকে বলে,’ ছিঃ ভাই তুই এসব কি বলছিস?’

অথৈ হাসছে। অথৈকে হাসতে দেখে পিহু রেগে বলে,’ তুই হাসছিস কেন?’

‘ তোর অবস্থা দেখে।আহিদ একদম ঠিক বলেছে।যেমন কুকুর তেমন মুগুর।’

‘ এই তুই কি আমাকে কুকুর বললি?’

‘ আরে এটা তো প্রবাদ বাক্য বললাম জাস্ট।’

পিহু অথৈয়ের দিকে রাগি চোখে একপলক তাকিয়ে আহিদের দিকে ফিরলো।বলে,’ ভাই তোর কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে আছে?আমারটা আনতে ভুলে গিয়েছি।’

আহিদ বলল,’ আমি কি তোর মতো এতো শুচিবায়ু নাকি?সে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে ঘুরব?’
‘ ভাইয়া প্লিজ।’

আহিদ শ্বাস ফেলল।নিজেকে শান্ত করে বলে,’ এনেছি কিন্তু সেটা বড়ো ব্যাগে।নামাতে ঝামেলা হবে।’

পিহু হতাশ হয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।তবুও ওর হাশফাশ কমছে না।ওর কারনে আহিদ বিরক্ত হচ্ছে তা দেখে প্রিয়ান এইবার বলে উঠল,’ আহিদ তুই এইপাশে আয়।আমাকে ওখানে যেতে দে।আমি ওকে দেখছি।’

আহিদ উঠে দাঁড়লো।বলে,’ প্লিজ শান্ত কর ওকে।’

আহিদ গিয়ে বসল প্রিয়ানের জায়গায় আর প্রিয়ান আহিদের জায়গায়।আহিদ প্যান্টের পকেট থেকে ছোট্টো একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে পিহুর সামনে ধরল।তা দেখেই পিহু চওড়া হাসল।প্রিয়ান বলে,’ নেহ এইবার উঠে দাঁড়া।আমি তোর জায়গাটাতে এইটা স্প্রে করে মুছে দিচ্ছি।’

পিহু প্রিয়ানের কথা একবাক্যে মেনে নিলো।ও উঠে দাঁড়াতে প্রিয়ান পিহুর সিটটাতে স্প্রে করে দিলো।তারপর টিশ্যু বের করে পুরো সিটটা মুছে দিলো।প্রিয়ানের কাজ শেষ হতেই পিহু ধপ করে সিটে বসে পরল।
‘ আহ, আরাম।’

প্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ থ্যাংকিউ দোস্ত।’

প্রিয়ান দুহাত বুকে আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে করে বলে,’ আমি তোর জন্যে এতো কিছু করলাম।আর বিনিময়ে শুধু ধন্যবাদ?এই ধন্যবাদ দিয়ে আমি কি করব?’

পিহু চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো।
‘ তো? তাহলে এখন কি এই কাজের জন্যে তোকে আমি নোবেল পুরুষ্কার দিবো?’

প্রিয়ান বাঁকা হেসে বলে,’ এমন কিছু দে যেটা দিলে নোবেল পুরুষ্কার দেওয়ার থেকেও আমি বেশি খুশি হবো।’

পিহু বুঝল না।তাই বলে, ‘ কি সেটা?’
প্রিয়ান ঝুকে আসল একটু পিহুর দিকে এমন ভাণ করল যেন সে পিহুর সিটটা আরেকটু ভালোভাবে মুছে দিচ্ছে।এইদিকে প্রিয়ান পিহুর এতোটা কাছে আসায় পিহু একেবারে সিটের শেষপ্রান্তে লেগে গিয়েছে।শ্বাস কেমন আটকে আটকে আসছে প্রিয়ান এতোটা কাছে আসায়।কিন্তু এমনটা কেন হচ্ছে?ওরা তো হারহামেশায় একে-অপরের সাথে থাকে।পাশাপাশি একসাথে বসে।কতো মারামারি করে।কই আজকের মতো অনুভূতি তো কোনোদিন হয়নি।এদিকে প্রিয়ান ফিসফিস করে বলে,’ আমাকে ধন্যবাদ সরূপ তোর ওই ঠোঁটজোড়া দিয়ে আমার গালে একটা চুমু খেলেই পারিস।আমি এতে খুশি হবো।’

প্রিয়ানের এহেন লাগামছাড়া কথায় পিহু হতভম্ব হয়ে গেলো।দু ঠোঁট আপনা-আপনি হা হয়ে গেলো।বুকের হৃৎপিণ্ডটা ধরাস ধরাস করছে।গাল,কান লাল হয়ে গিয়েছে।পিহুকে লজ্জা পেতে দেখে প্রিয়ান দুষ্টু হাসলো।তারপর পিহুকে চোখ মেরে সরে আসল।সোজা হয়ে বসে চুলে দুহাত দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে আবারও তাকালো পিহুর দিকে। ওকে এখনও একইভাবে বসে থাকতে দেখে হাত বাড়িয়ে পিহুর হা করা মুখটা বন্ধ করে দিলো।এতে যেন সম্বিৎ ফিরে পেলো পিহু।দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো।কটমট করে তাকালো প্রিয়ানের দিকে।তারপর সবার অগোচরেই হাত এগিয়ে প্রিয়ানের পিঠে সজোড়ে চিপটি কাটলো।ব্যথা পেলেও কিছু বলল না প্রিয়ান।সে হাসছে পিহুর কান্ডে।ওকে হাসতে দেখে যেন পিহু আরও ক্ষ্যাপে গেলো। দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।’

প্রিয়ান মৃদ্যু গলায় বলে,’ প্লিজ,আম ওল ইউরস!’
‘ অসভ্য!’

এদিকে ভ্রু-কুচকে পিহু আর প্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর এইভাবে তাকানো দেখে রুদ্রিক বলে উঠে,’ কি হলো?ওমনভাবে তাকিয়ে কি দেখো?’

অথৈ ধীর স্বরে বলে,’ ওরা দুটো এমন ফুসুরফাসুর করছে কেন? কি বলছে?’

রুদ্রিক বলল,’ তা শুনে তুমি কি করবে?’
‘ ওমা আমি শুনবো না।আমি তো ওদের বেষ্টফ্রেন্ড।’
‘ সবকিছু সবাইকে বলা যায় না।’
‘ কেন? কেন বলা যাবে নাহ?’

রুদ্রিক খানিকটা নিচু হয়ে কণ্ঠ খাঁদে নামিয়ে বলে,’ আমি যদি তোমাকে চুমু খাই।তাহলে সেই কথা কি তুমি সবাইকে বলবে?’

অথৈয়ের চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে আসল রুদ্রিকের কথায়।লজ্জা পেলো রুদ্রিকের কথায়।হঠাৎ সেদিন রুদ্রিকের ব্যালকনিতে ওদের চুম্বনের কথা মনে পরে গেলো।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেলো অথৈয়ের।মাথা নিচু করে নিলো অথৈ। মিনমিন করে বলে,’ কিসব বলছেন?ওদের মধ্যে কি সেই সম্পর্ক আছে?আমরা তো স্বামী স্ত্রী।’

রুদ্রিক অকপটে বলে ফেলল,’ ওরা স্বামী স্ত্রী না সেটা ঠিক আছে।তবে এটাই সত্যি যে প্রিয়ান পিহুকে ভালোবাসে।’

অথৈ চমকে গেলো রুদ্রিকের কথায়।অবাক হয়ে বলে,’ মানে?’
‘ আস্তে চেচ্চাচ্ছ কেন?ওরা শুনে ফেলবে।’

অথৈ শুকনো ঢোক গিলল। নিজেনে সামলে বলে,’ আপনি এসব কি বলছেন?’
‘ ঠিকই বলছি।’
‘ কিন্তু এটা কিভাবে?মানে আমরা কেন বুঝতে পারলাম নাহ?’ অথৈয়ের বোকা বোকা কথা শুনে হাসল রুদ্রিক।বলে,’ তুমি আসলেই বোকা।বেষ্টফ্রেন্ডরা একে-অপরের প্রেমে পরতে পারে এটা অসম্ভব কিছু না।আমাদের নীল, মারিয়া আর অনিক, সিয়াকেই দেখো।ওরাও তো বেষ্টফ্রেন্ড ছিলো।ভালোবাসা বলে কয়ে আসে না।ভালোবাসা হয়ে যায়।যেমন আমি তোমাকে ভালোবাসি।বুঝেছ?’

রুদ্রিকের মুখে ‘ ভালোবাসি!’ কথাটা শুনে অথৈয়ের মনের আনাচে-কানাচেতে অদৃশ্য রঙিন প্রজাপতিরা উড়াউড়ি করতে লাগলো।লোকটা কিভাবে বিনা সংকোচে ভালোবাসি বলে দিলো।তবে ও কেন পারে না বলতে?কেন বুক কাঁপে এতো।লজ্জারা যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে অথৈকে।অথৈ কিছুনা বলে মুচঁকি হাসলো।চোখ সরিয়ে জানালার বাহিরে তাকালো।ট্রেন শব্দ তুলে নিজের গতিতে চলে যাচ্ছে।গাছ-পালা,ঘড়-বাড়ি,মাঠ-খাট,খোলা প্রান্তর সব পিছনে ফেলে সামনে এগোচ্ছে।অথৈ সেই দৃশ্য মন ভড়ে অবলোকন করছে।জানালার বাহিরে এতো সুন্দর দৃশ্য,দেহ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো হিমেল হাওয়া আর পাশে প্রিয় মানুষটা।এর থেকে বেশি আর কি চাই?হঠাৎ অথৈ অনুভব করল রুদ্রিকের হাতটা ওর কোমড় পেচিয়ে ধরেছে।রুদ্রিকের স্পর্শে কেঁপে উঠলো অথৈ।লোকটার প্রতিটা স্পর্শে যেন ভালোলাগা ছেঁয়ে যায়।লোকটার সান্নিধ্যে আরও গভীরভাবে মিশে থাকতে ইচ্ছে করে।অথৈ মুচঁকি হেসে শরীরটা এলিয়ে দিলো রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক অথৈকে আরো ভালোভাবে নিজের সাথে আকঁড়ে ধরে।অথৈ চোখ বন্ধ করে বলে,’ এই জার্ণিটা কোনোদিন শেষ না হোক।আপনি আমি এইভাবেই সারাজীবন একসাথে থাকি।’

রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে বাতাসের তোরে এলোমেলো হয়ে যাওয়া অথৈয়ের চুলগুলো গুছিয়ে দিলো।তারপর বলল,’ সাধ্য থাকলে সময়টা আমি এখানেই থামিয়ে দিতাম।কিন্তু তা যে হবার নয়।’
রুদ্রিক ঘাড় ঘুরিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।হেসে বলে,’ আপনি অনেক ভালো রুদ্রিক।এতো ভালো কেন আপনি?’

রুদ্রিক অথৈয়ের নাকটা হালকা টেনে দিয়ে বলে,’ আমি সবার জন্যে ভালো না অথৈ। তবে তোমার কাছে আসলেই আমি নিজের গাম্ভীর্যতা ধরে রাখতে পারি না।তোমার কোমলতা আমাকেও তোমার প্রতি কোমল হতে বাধ্য করে।আমার মস্তিষ্ক আমার মনের কাছে হেরে যায়।কারন আমার পুরো মনটা জুড়েই তো শুধু তুমি আছ।আর এখন তো আমার সবটা শুধু তুমি ঘিরেই। তুমিই আমার সব অথৈ। ‘

রুদ্রিকের প্রতিটা কথা যেন অথৈয়ের হৃদয়ে ঝংকার তুলে দিলো।লোকটার ভালোবাসা দেখে অথৈ বরাবরই অবাক হয়।কেউ কাউকে এতোটা কিভাবে ভালোবাসতে পারে?ঠিক কিভাবে?অথৈ নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করে। রুদ্রিককে স্বামীরূপে সে নিজের করে পেয়েছে।আল্লাহ্ তায়ালা তাকে না চাইতেও সবকিছু দিয়েছেন।সে সারাজীবন ভড় শুকরিয়া আদায় করলেও তা কম হয়ে যাবে।

এদিকে সাফাত একদৃষ্টিতে রুদ্রিক আর অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনকে একসাথে দেখতে কতোটা ভালোলাগছে।অথৈয়ের ঠোঁটে বিস্তৃস্ত মিষ্টি হাসিটার একমাত্র কারন তো রুদ্রিকই তাই নাহ? রুদ্রিকের কাছে থাকলে অথৈ যেভাবে হাসিখুশি থাকে। অথৈ যদি ওর হতো তবে কি অথৈ ঠিক এইভাবেই হাসতো?না অথৈকে সে বোধহয় এতো খুশি রাখতে পারতো না।কিন্তু সে ওর সবটা দিয়ে চেষ্টা করতো।কিন্তু এখন এটা ভাবলে তো হবে না।অথৈ ওর কাছে সুখে থাকতো না বোধহয়।তাইতো উপরওয়ালা তার ভাগ্যে অথৈকে লিখেনি।অথৈ যদি ওর ভাগ্যে লিখা থাকতো তাহলে শতো কোটি বাধার পরেও হলেও অথৈ ওর হতো।সাফাত চোখ সরিয়ে নিলো।বুকের বা পাশটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।হাজার হোক সে তো অথৈকে ভালোবাসে।ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যকারো সাথে দেখলে কষ্ট হবেই।এটা যে কারো হাতে থাকে না।সাফাতের চোখজোড়া ছলছল করছে।ও অতি সন্তর্পণে চোখের জলটুকু মুছে নিলো।চোখ বন্ধ করর সিটে গা এলিয়ে দিলো।সৃষ্টিকর্তার কাছে মনেপ্রাণে এটাই চাইলো যে ও জীবনেও তিনি এমন কাউকে পাঠাক যে ওকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসবে।সেই মানুষটার ভালোবাসায় যেন সাফাত সব ভুলে ওই মানুষটাকে নতুনভাবে ভালোবাসতে পারে।তাকে ঘিরেই যেন বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পায়।এমন কাউকে তার জীবনে যেন খুব দ্রুত আসে।তার সব কষ্ট গ্লানিটুকু যেন নিঃশেষ করে দেয়।মনে প্রাণে এটাই চায় সাফাত।আর তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় বন্ধু সাফাত আর ওর ভালোবাসার মানুষ অথৈ যেন সারাজীবন একে-অপরের সাথে সুখে শান্তিতে থাকে।

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। দেরি হওয়ার জন্যে দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here