মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ১৯

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা- Mehruma Nurr
#পর্ব-১৯

★নূর ওর বিড়াল ছানাকে নিয়ে বাইরে খেলছে। আদিত্য একটু আগেই অফিসে চলে গেছে। নূর হাঁটতে হাঁটতে একটু বাগানের দিকে এগিয়ে গেল। বাগানে গিয়ে হঠাৎ নূর দেখলো মিনু আন্টি ওদের বাসার কেয়ার টেকার রহিম চাচাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। আর হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। আবার শাড়ির আচল মুখে গুজে কেমন লাজুক লাজুক হাসছে। অবুঝ নূর ব্যাপার টা বুঝতে না বলে শুধু তাকিয়ে রইলো।

একটু পরে মিনু আন্টি বাসার ভেতরে আসলে নূর মিনু আন্টির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–আচ্ছা তুমি রহিম চাচাকে খাইয়ে দিচ্ছিলে কেন? উনি কি হাত দিয়ে খেতে পারেনা?

নূরের কথায় মিনু আন্টি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। তারপর লাজুক ভঙ্গিতে বললো।
–আসলে উনি আমার স্বামী। যেমন আদিত্য বাবা আপনের স্বামী,তেমন।

–ওওওও,,,

মিনু আন্টি আবার বললো।
–আসলে উনার খুব শখ হচ্ছিল আমার হাতে খাওয়ার। তাই আরকি। আগে যখন আমরা গ্রামে থাকতাম তখন আমি উনার জন্য ক্ষেতে এভাবে খাবার নিয়ে যেতাম। আর উনি আমার হাতে খাওয়ার শখ করতেন।

নূর আরও কৌতূহলি হয়ে বললো।
–ওওও,আরও কি কি করতে তোমরা?

মিনু আন্টি ধীরে ধীরে সব বলতে লাগলো নূরকে।উনি কেমন কেমন করতেন তাঁর স্বামীর সাথে। আর নূর অনেক আগ্রহ নিয়ে শুনতে লাগলো। সবকথা শুনে নূর বললো।
–আচ্ছা সব বউদের কি এমন করতে হয়?

–হ্যাঁ, করতে হয়।তাহলেই স্বামীরা বউয়ের ওপর খুশী থাকে। নাহলে তারা অখুশি থাকেন।

নূর মাথা ঝাকিয়ে অনেক কিছু বোঝার মতো করে বললো।
–ওওওও,,,
___

সন্ধ্যা ৬ টা
আদিত্য মাত্রই অফিস থেকে ফিরল।দরজায় বেল বাজালে একটু পরে কেও দরজা খুলে দিল। আদিত্য মুচকি হেসে সামনে তাকাতেই টাস্কি খেয়ে গেল। বেচারা পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না ওর।

ওর সামনে নূর শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। পড়েছে বললে ভুল হবে। শাড়িটা কোনরকমে গায়ের সাথে পেচিয়ে রেখেছে। যেকোনো সময় খুলে পরতে পারে বেচারা শাড়িটা। নূর মাথার ঘোমটা টেনে মুখ প্রায় অনেকখানি ঢেকে ফেলেছে। শাড়ির আঁচলের কোনা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে, মাত্রাতিরিক্ত লাজুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। নূরের এমন উদ্ভট ভাবভঙ্গি দেখে আদিত্যর ভ্রু কুঁচকে এলো। ও কিছুই বুঝতে পারছে না। তখনই নূর আরও একটু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লাজুকলতা হয়ে বলে উঠলো।
–গোগো (ওগো) তুমি এসে গেছ?

আদিত্য কপাল কুঁচকে বললো।
–গোগো?

নূর এবার নিচের দিকে ঝুঁকে আদিত্যের পায়ের কাছে হাত দিতে গেলেই আদিত্য ছিটকে সরে যেতে যেতে বললো।
–এই এই কি করছ এঞ্জেল?

নূর কিছু না বলে ঝুকে থাকা অবস্থায়ই হাত নিয়ে আদিত্যের পায়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আর আদিত্য পেছাতে পেছাতে বলতে লাগলো।
–এই নূর সোনা কি করছ এসব? থাম প্লিজ। থাম, থাম বলছি। আই সেড স্টপ ইট নূর।

নূর থেমে গিয়ে বলে উঠলো।
–আরে সরে যাচ্ছ কেন? দাঁড়াও না। আমি সালাম করবো তো। নাহলে আমি ভালো বউ কিভাবে হবো?

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–ভালো বউ?

–হ্যাঁ ভালো বউ।আমি এতদিন পঁচা বউ হয়ে ছিলাম।তবে এখন আমি শিখে গেছি কিভাবে ভালো বউ হতে হয়। তাই আজ থেকে আমি ভালো বউ হয়ে থাকবো। তাহলে তুমি আমার ওপর খুশী থাকবে।

আদিত্য নূরের কাছে এসে বললো।
–কে বলেছে এসব তোমাকে? তোমাকে এসব করতে হবে না। তুমি এমনিতেই আমার লক্ষী বউ।

নূর জেদ ধরে বললো।
–না না আমি বলেছি না আমি ভালো বউ হবো মানে হবো? দেখ তুমি যদি আমাকে ভালো হতে না দাও তাহলে কিন্তু আমি এখুনি কান্না করে দেব বলে দিলাম।

আদিত্য পড়ে গেল এক মহা মুশকিলে। অগত্যা আর কোন উপায় না পেয়ে বললো।
–ওকে ওকে ঠিক আছে। কান্না করোনা। তোমার যা খুশী তাই করো। তবুও কান্না করোনা প্লিজ।

নূর এবার খুশি হয়ে বললো।
–ঠিক আছে। তাহলে তুমি নড়বে না কিন্তু।
কথাটা বলে নূর আদিত্যের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। আদিত্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও নূরের কথামতো দাঁড়িয়ে রইলো। সালাম করা শেষে নূর আবার সেই মাত্রাতিরিক্ত লাজুক ভঙ্গিতে বললো।
–গোগো, তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি তোমার খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

আদিত্য চমকে উঠে বললো।
–খাবার বেরে দিবে মানে? দেখ এঞ্জেল তুমি কিন্তু একদম কিচেনে ঢুকবে না বলে দিলাম। কিচেনে অনেক চাকু ছুরি থাকে। তোমার হাত কেটে যাবে। আবার আগুনও থাকে। তুমি খবরদার কিচেনে যাবেনা।

নূর মাথার ঘোমটা ঝামটি মেরে ফেলে দিয়ে ন্যাকা কান্না করে বললো।
–ধ্যাৎ, আমাকে ভালো বউ হতে দেয়না। খেলবই না আর তোমার সাথে। পঁচা একটা।

কথাগুলো বলতে বলতে সোফায় গিয়ে ধুম করে গাল ফুলিয়ে বসে পড়লো নূর। আদিত্য মহা ঝামেলায় পরে গেল। কি করবে বুঝতে পারছে না। নূরকে বুঝাতেও পারছে না, আবার নূরের মন খারাপও করতে চাচ্ছে না। আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নূরের কাছে গিয়ে বললো।
–ওকে ওকে রাগ করোনা। তোমার যা খুশী তাই করো, আমি আর বাঁধা দিবনা।

নূর খুশী হয়ে বললো।
–সত্যিই? ঠিক আছে তাহলে তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।

আদিত্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও আস্তে করে উপরে উঠে গেল। আজ তার বউটার মাথায় এসব কোথাথেকে আসলো বুঝতে পারছে না সে।

নূর আদিত্যের জন্য খাবার বাড়তে লাগলো। সার্ভেন্ট রা অনেক বার মানা করেছে নূরকে।কিন্তু কে শোনে কার কথা। নূর পারছেনা দেখে সার্ভেন্ট রা নূরকে হেল্প করলো খাবার সার্ভ করতে। একটু পরে আদিত্য ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো। টেবিলের কাছে এসে দেখলো নূর সেই আগের মতো মাথায় ঘোমটা টেনে দাঁতে আঁচল কামড়ে ধরে লাজুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্যকে আসতে দেখে বলে উঠলো।
–গোগো বসো খেয়ে নেও।

আদিত্যের এই গোগো সম্বোধন টা অনেক বিরক্তিকর লাগছে। ওর এঞ্জেলের মুখে হিরো ডাকটা অনেক ভালো লাগে ওর। কিন্তু কিছু করার নেই। নূরকে মানা করলেই কান্নাকাটি জুড়ে দিবে। তাই কিছু না বলে আদিত্য গিয়ে একটা চেয়ার টান দিয়ে বসে, নূরকেও বসতে বললো। নূর মাথা ঝাকিয়ে আদিত্যের পাশে বসে ওর প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো। আদিত্য বাঁধা দিতে গিয়েও দিলনা। যদি আবার নূর কেঁদে দেয় সেই ভয়ে। নূর খাবার বেড়ে দিয়ে একটা হাত পাখা নিয়ে আদিত্যকে বাতাস করতে লাগলো। কিন্তু অবুঝ নূর পাখার মাথাটা নিজের দিকে উল্টো করে বাতাস করছে। যার ফলে পাখার বাতাস নিজের গায়েই লাগছে।

এসি করা বাসায় নূরকে এভাবে হাত পাখার বাতাস করতে দেখে মাথা নাড়িয়ে হালকা হাসলো আদিত্য। বউটা তার সত্যিই একটা কিউটের ড্রাম। আদিত্য প্লেটে ভাত মেখে নূরের সামনে ধরলে নূর বলে উঠলো।
–না না আগে তুমি খাবে। তারপর আমি। আগে স্বামীদের খেতে হয়।

আদিত্য বলে উঠলো।
–দেখ নূর। এটা নিয়ে কিন্তু আমি কোন আরগুমেন্ট চাইনা। তুমি আগে খাবে তারপর সব।নাহলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই তোমার ওপর অখুশি হয়ে যাবো। তুমি কি তাই চাও?

নূর মাথা নাড়াল। মানে সে চায়না।

–তাহলে মুখ খোল।

নূর আর কথা না বাড়িয়ে হা করে খাবার মুখে নিল।

খাওয়া দাওয়া শেষে আদিত্য রুমে এসে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আরাম করছিল। তখনই হঠাৎ পায়ের ওপর কারোর ছোঁয়া অনুভব করলো। আদিত্য চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো নূর ওর পায়ের কাছে বসে পা টিপে দিচ্ছে। আদিত্য একলাফে উঠে বসে বললো।
–এই এই এঞ্জেল কি করছ? দেখ অনেক হয়েছে, আর এসব করতে হবে না। এখন এসব বন্ধ করো প্লিজ।

নূর বলে উঠলো।
–আরে না না কি বলছ। এখনো শেষ হয়নি তো।ভালো বউয়েরা এভাবে স্বামীদের পা টিপে দেয়। তাই আমিও দেব। তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো।নাহলে কিন্তু আমি আবার কেঁদে দেব।

আদিত্য না পেরে আবার হেলান দিয়ে বসলো। আর নূর দুই হাত দিয়ে আদিত্যের পা টিপে দিতে লাগলো। আদিত্যের এসব মোটেও ভালো লাগছে না।নূরকে এভাবে পা টিপাতে ওর খুবই অস্বস্তিকর লাগছে। কিন্তু কিছু করতেও পারছে না। কিছু বললেই নূর কান্না শুরু করে দিবে। নাজানি কোত্থেকে অদ্ভুত এই স্বামী সেবার ভুত জেগেছে।

প্রায় একঘন্টা যাবত নূর পা টিপে যাচ্ছে। আদিত্য অনেক বার মানা করেছে, কিন্তু নূর শোনেনি। এতক্ষণ ধরে বসে বসে পা টিপতে টিপতে নূর কেমন যেন ক্লান্ত হয়ে গেছে। সেই কখন থেকে নূর আদিত্যের জন্য এটা ওটা করেই যাচ্ছে। তাই এখন কেমন যেন ক্লান্ত বোধ করছে। জামার ওপর দিয়ে শাড়ি পেঁচিয়ে রাখায় শরীর অনেক টা ঘেমেও গেছে। আদিত্য এতক্ষণ ধরে সহ্য করলেও, নূরের এমন অবস্থা দেখে আর কিছুতেই সহ্য করতে পারলোনা। আদিত্য এবার এক ঝটকায় উঠে বসে দুই হাতে নূরকে তুলে কোলের মাঝে নিয়ে নিল।

নূর হকচকিয়ে উঠে কিছু বলতে নিলেই, আদিত্য নূরের ঠোঁটের ওপর তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে বলে উঠলো।
–হুঁশশ, আর কোন কথা না।একদম চুপ।
তারপর নূরের গালে হাত বুলিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
–অনেক হয়েছে এঞ্জেল। প্লিজ এখন এসব বন্ধ করো কলিজাটা। দেখ তোমাকে এভাবে দেখে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি চাও আমি কান্না করি?
নূর দুই দিকে মাথা নাড়াল। মানে সে চায়না।
–তাহলে এখন এসব বন্ধ করো প্লিজ। দেখ সোনা,তুমি যেমন আছ তেমনি আমার পছন্দ। আমি তোমাকে ওভাবে পেয়েই অনেক খুশী। তোমার নিজেকে বদলাতে হবে না। আমার যদি এমন বউয়ের দরকার হতো, তাহলে আমি আগেই এমন কাউকে বিয়ে করতাম। তোমাকে বিয়ে করতাম না।তুমি যেমন আছ, তেমন দেখেই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। কারণ আমার যে এই নিষ্পাপ পরিটাকেই চাই। তাই এসব করার কোন দরকার নেই। বুঝেছ এঞ্জেল?

নূর মাথা ঝাকাল। মানে সে বুঝেছে।
আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কপালে চুমু খেয়ে, নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল।
______

আরও দুদিন পার হয়ে গেছে। আবির অনেক চেষ্টা করছে নিলাকে কনভিন্স করার। ওর ভালোবাসাকে একসেপ্ট করার জন্য। কিন্তু নিলা ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না। আবির আজ মনে মনে পণ করে নিয়েছে। যে করেই হোক নিলাকে মানিয়েই ছাড়বে।
নূর ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে বিড়াল ছানা নিয়ে খেলা করছিল। তখন আবির নূরের কাছে এসে বসে বললো।
–শোন ভাবিডল,আজ আমরা অনেক বড়ো একটা মিশনে নামবো বুঝেছ?

নূর কৌতুহলী হয়ে বললো।
–সত্যিই? কি মিশন?

–মিশন বিয়াইন পটাও।

নূর বুঝতে না পেরে বললো।
–বিয়াইন পটাও?

–হ্যাঁ বিয়ান পটাও মিশন। এবারের সংগ্রাম বিয়াইন পটাও সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম বিয়াইনকে মানানোর সংগ্রাম। ফ্লার্ট যখন করেছি, ফ্লার্ট আরও করবো। বিয়াইনকে বশে এনেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।

নূর কিছু বুঝতে না পেরে কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে রইলো। আবির নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আচ্ছা ভাবিডল, তুমি কি চাওনা তোমার বোন এইবাড়িতে সবসময় থাকুক?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ চাইতো।নিলাকে ছাড়া আমার ভালো লাগবে না।

–তাহলে তোমার বোনকে মানাতে আমাকে হেল্প করো। তারপর তুমি যেমন আদি ভাইয়ার বউ হয়ে এবাড়িতে থাকো। তেমনি তোমার বোন নিলাও আমার বউ হয়ে সবসময় এবাড়িতেই থাকবে বুঝেছ?

নূর খুশী হয়ে বললো।
–সত্যিই? ওয়াও তাহলে তো আর মজা হবে। আমরা সবাই একসাথে থাকবো ইয়েএএএ।

–হ্যাঁ ভাবিডল অনেক মজা হবে। কিন্তু তার আগে আই লাভ ইউ বলতে হবে। দুজন দুজনকে আই লাভ ইউ না বললে তো হবে না।

–তাই?

–হ্যাঁ ভাবিডল, আই লাভ ইউ ইজ দ্যা রিয়াল ফ্যাক্ট অফ ম্যারেজ।

–ওওওও,,

–আচ্ছা ভাবিডল এখন আমাদের প্ল্যান শোন।
আবির নূরকে সব বুঝিয়ে বললো। তারপর দুইজন হাই ফাই দিল।

আবিরের প্ল্যান মতো নূর একটু পরে নিলাকে সাথে করে ছাঁদে নিয়ে এলো। ছাঁদে এসে মাঝ বরাবর দাঁড়াতেই নিলার মাথার ওপর থেকে ফুলের পাপড়ি ঝরে পরলো। নিলা অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। নূর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে তালি বাজাতে লাগল। একটু পরে আবির নিলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একগুচ্ছ ফুলের বুকে নিলার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–আই লাভ ইউ নিলা। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ ভেরি মাচ।প্লিজ একসেপ্ট মাই লাভ। আই সোয়্যার, আই উইল নেভার ডিসিপয়েন্ট ইউ।প্লিজ গিভ মি ওয়ান চাঞ্চ।

নূর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ওদের কান্ড দেখতে লাগলো।
নিলা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। মনে মনে সেও আবিরকে পছন্দ করে। তবে সেটা বুঝতে না দিয়ে বলে উঠলো।
–তা এরকম প্রপোজ আরও কতজনকে করেছেন শুনি?

আবির বলে উঠলো।
–ওনলি ইউ নিলা। আমি সত্যি বলছি আমি এর আগে কখনো কাউকে প্রপোজ করিনি। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।

নিলা একটু তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
–আরে যান যান, অনেক দেখেছি আপনাদের মতো। আজ একজনকে তো কাল আরেকজনকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলা।এটা আপনাদের পেশা। আমার সামনে এসব করে কোন লাভ হবে না। আমি এসবে গলবো না।
কথাটা বলেই নিলা এটিটিউট দেখিয়ে ওখান থেকে চলে যেতে নিলেই আবির ওর হাত চেপে ধরলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নিলার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে এটিটিউট নিয়ে, কিছুটা দাদাগিরির মতো করে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ এই শারমানা ছোড় ডাল,
♬ ♬ রাজ দিলকা খোল ডাল
♬ ♬ আজু বাজু মাত দেখ
♬ ♬ আই লাভ ইউ বোল ডাল(২)

♬ ♬ নেহিতো পাচতায়েগী,কুমারী রেহ যায়েগী
♬ ♬ নেহিতো পাচতায়েগী,কুমারী রেহ যায়েগী
♬ ♬ বাত যারা ইসকি আপনি ভেজে মে ডাল
(নিলা আবিরের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে,মাছি তাড়ানোর মতো করে হাত নেড়ে এটিটিউট নিয়ে গেয়ে উঠলো)
♬ ♬ ও যানে দে যানে দে,থোড়ি হাওয়া আনে দে
♬ ♬ ও যানে দে যানে দে, থোড়ি হাওয়া আনে দে
(আবির নিলার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গেয়ে উঠলো)
♬ ♬ এই আজ তেরি বাত জারা দিল ছে নিকাল
♬ ♬ এই শারমানা ছোড় ডাল
♬ ♬ রাজ দিলকা খোল ডাল
♬ ♬ আজু বাজু মাত দেখ
♬ ♬ আই লাভ ইউ বোল ডাল
(নিলা আবারও পাত্তা না দিয়ে গেয়ে উঠলো)
♬ ♬ ও যানে দে যানে দে,থোড়ি হাওয়া আনে দে
♬ ♬ ও যানে দে যানে দে,থোড়ি হাওয়া আনে দে
(আবির নিলাকে ভয় দেখানোর জন্য, ছাঁদের রেলিঙের কাছে গিয়ে ছাঁদ থেকে পড়ে যাওয়ার ভয় দেখালো। নিলা এটা দেখে সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে গেল। নিলা দৌড়ে গিয়ে আবিরের হাত ধরে মুচকি হেসে গেয়ে উঠলো)
♬ ♬ আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ
♬ ♬ মে তেরি রাণী, রাজা তু
♬ ♬ ও আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ
♬ ♬ মে তেরি রাণী,রাজা তু
(নিলার আই লাভ ইউ বলায় আবির মনে মনে খুশি হলেও,উপরে উপরে অভিমান দেখিয়ে চলে যেতে নিল। এবার নিলা গিয়ে আবিরের সামনে ঘুরে ঘুরে গাইলো)
♬ ♬ শারমানা ছোর ডাল
♬ ♬ রাজ দিল কা খোল ডাল
♬ ♬ আজু বাজু মাত দেখ
♬ ♬ আই লাভ ইউ বোল ডাল (২)

♬ ♬ নেহিতো পাচতায়েগা,কুমারা রেহ যায়েগা
♬ ♬ নেহিতো পাচতায়েগা,কুমারা রেহ যায়েগা

আবির এবার হেসে দিয়ে নিলাকে জড়িয়ে ধরলো। নিলাও মুচকি হেসে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো।
ওদের দেখে নূর খুশিতে আটখানা হয়ে হাতে তালি বাজাতে লাগল।
______

রাত ৮ টা
আদিত্য বেডের ওপর বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। নূর বেডের একপাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কোন গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। একটু পরে নূর একটু নড়েচড়ে বসে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–এই হিরো শোন না,

আদিত্য ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো।
–হ্যাঁ বলো এঞ্জেল।

নূর বলে উঠলো।
–আমাদের বর বউ খেলাটা হয়নি।

নূরের এমন আজগুবি কথায় আদিত্য থতমত খেয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–মানে? কি বলছ এসব?

–হ্যাঁ ঠিকই বলেছি। আমাদের বর বউ খেলা হচ্ছে না। আমরা তো আসল কাজটাই করিনি এখনো।

নূরের কথায় আদিত্যের মাথা ঘুরে উঠলো।চোখদুটো ফুটবলের ন্যায় বড়সড় হয়ে গেল।কি বলে এই মেয়ে? এসব কথা কোথাথেকে পেল ও? আদিত্য আমতা আমতা করে বললো।
–আ আসল কাজ মানে? আসল কাজ আবার কি? দেখ তোমাকে আগেই বলেছি না,এসব কথা বলতে নেই? তোমার এখনো এসবের সময় হয়নি।

নূর তাও বলতে লাগলো।
–কি বারবার একটা কথা পেয়েছ? সময় হয়নি,সময় হয়নি। কখন হবে সেই সময় শুনি? আমি এতকিছু জানি না। আজকে আমরা আসল কাজটা করেই ছাড়বো। নাহলে আমাদের বর বউ খেলা হবে না।

আদিত্যের গলা শুঁকিয়ে আসছে নূরের কথা শুনে। কি করতে চাচ্ছে মেয়েটা? এখন একে সামলাবো কি করে? আদিত্য শুকনো ঢোক গিলে বললো।
–দে দেখ এঞ্জেল ডিনারের সময় হয়ে গেছে। চলো আমরা আগে ডিনার করে আসি কেমন?

–না আগে তুমি ওই কাজটা করবে, তারপর সব হবে।

–দেখ নূর সোনা জেদ করেনা প্লিজ। তুমি না গুড গার্ল? প্লিজ আমার কথা মানো।

নূর একই ভাবে জেদ ধরে থেকে বললো।
–না না না আমি বললাম ওটা করবো মানে করবো।এখুনি করবো। আর তুমি এতো মানা করছ কেন? দেবর তো আজকে কি সুন্দর করে করলো ওটা। আর তুমি শুধু মানা করছ?

নূরের কথায় আদিত্য আরও তব্দা খেয়ে গেল। আবির করেছে মানে? কার সাথে করেছে? কি করেছে? আদিত্য অপ্রস্তুত ভাবে বলে উঠলো।
–আবির করেছে মানে? কখন করেছে? কার সাথে করেছে? আর তুমি কি করে জানলে?

–কিভাবে জানবো মানে?আমার সামনেই তো করলো। তো আমি জানবো না?

আদিত্যের যেন এবার পুরো পৃথিবীটাই ওর চোখের সামনে গোল গোল ঘুরতে লাগলো। যেকোনো সময় বেহুশ বনে যেতে পারে বেচারা। আদিত্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
–তো তোমার সামনে করেছে মানে?কার সাথে করেছে? কি করেছে?

–আরে আই লাভ ইউ বলেছে। আর কি করবে? দেবর নিলাকে আই লাভ ইউ বলেছে আর নিলাও দেবরকে আই লাভ ইউ বলেছে।

আবির ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো।
–মানে,তুমি এতক্ষণ ধরে আই লাভ ইউ বলার কথা বলছিলে?

–হ্যাঁ তা নয়তো কি। আরে এটাই তো আসল কাজ। আই লাভ ইউ না করলে বর বউ খেলা হয়না।

আদিত্য বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বেচারার এতক্ষণ ধরে কি না কি ভেবে দম প্রায় আটকে ছিল। হঠাৎ আদিত্য বলে উঠলো।
–এক মিনিট তার মানে আবির নিলাকে আই লাভ ইউ বলেছে?

–হ্যাঁ সেটাই তো বলছি। দেবর নিলাকে নিয়ে বর বউ খেলবে।তাই ওরা আই লাভ ইউ বলেছে।কিন্তু আমরাতো আই লাভ ইউ না বলেই বর বউ খেলা শুরু করেছি।তাই আমাদের বর বউ খেলা হচ্ছে না। আমাদেরও আই লাভ ইউ করতে হবে। তাহলে খেলা ঠিক হবে।

আদিত্য একটু হেঁসে নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে গালে হাত রেখে বললো।
–তুমি কি আই লাভ ইউ এর মানে জানো?

নূর বলে উঠলো।
–হ্যাঁ জানিতো। ছেলে মেয়ে একজন আরেকজনকে আই লাভ ইউ বলে। তারপর ওরা হাগ করে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–আই লাভ ইউ এর মানে এটা না এঞ্জেল। যেদিন তুমি এর সঠিক মানে বুঝতে পারবে, সেদিন আর কাওকে কিছু বলতে হবে না। আমরা এমনিই সব বুঝে যাবো। আর তোমার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো হয়তো আমি কখনো ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা। সম্ভবই হবে না। দুনিয়ার সব ভাষার সব কয়টা অক্ষর ফুরিয়ে যাবে,তবুও আমার অনুভূতি গুলো বলে শেষ হবে না। এটা যে অন্তহীন।

আদিত্যের কথা নূরের অবুঝ মাথায় বোধগম্য হলোনা। নূর ঠোঁট উল্টিয়ে বললো।
–মানে?

আদিত্য হেঁসে দিয়ে নূরের কপালের সাথে নিজের কপাল আলতো করে ঠোকা দিয়ে বললো।
–মানে কিছুই না। এখন চলো ডিনার করতে হবে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিল। তারপর নূরকে নিয়ে নিচে চলে গেল।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here