#মহুয়া
#শারমিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ১০
খাবার পর রিদু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখছে বার বার। এবার শার্টটা খুলে আবার দেখল। নিজের পেটটা ভালো করে দেখে নিজে নিজে বলল,
_” নাহ প্রিয়তি যতটা বলছে ততটা কিন্তু পেটুক দেখাচ্ছে না। ছয় মাসের পেটের মত বুঝায় না। র্নিঘাত প্রিয়তির চোখের নাম্বার বাড়ছে। তাই আমাকে মটু দেখছে। একটু ভুরি বাড়ছে কিন্তু তা বলে ছয় মাস? বড়জোড় পাঁচ মাসের মত লাগতে পারে, তার বেশি না। যা হোক দেখি কমাতে পারি কিনা! নয়ত সিক্স প্যাক সত্যি সত্যি ফ্যামিলি প্যাক হয়ে যাবে। তবে রোজ রোজ সবজি খেয়ে কি থাকা যায়?
আড়াল থেকে এসব দেখে প্রিয়তি মুখ টিপে হাসছে। চুপি চুপি এসে রিদুকে খালি গায়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
_” ফ্যামিলি প্যাক কমানোর জন্য জিমে যেতে পারো। এখন আমাকে কোলে তুলে একটু ব্যয়াম করো তো। মনে করো আমি একটা ডাম্বেল।
হাসল রিদু। প্রিয়তিকে কোলে নিয়ে বলল,
_” বাহ্ এখন ৫৫ কেজি ওজনের ডাম্বেল ওঠাতে হবে।
_” এখন ৬০ কেজি।
_” কি বলো? পাঁচ কেজি বাড়ল কবে?
_” ঐ একসিডেন্ট হবার পর ডাক্তার কত কত ঔষধ দিলো। সেসব খাবার পর মুখের রুচি বেড়ে গেছে খুব। তাই হয়তো পাঁচ কেজি বেড়ে গেছে।
_” ওতে কোনো সমস্যা হবে না।
_” তুমি জিমে ভর্তি হবে?
_” হু কুয়াকাটা থেকে ফিরেই ভর্তি হবো। আমার এক পরিচিত এর জিম আছে। সেখানেই ভর্তি হবো।
_” মেয়েরাও কি সেখানে ভর্তি হতে পারবে?
_” হ্যাঁ। তবে ছেলে মেয়েদের সময় আলাদা। আর মেয়েদের জিম ইনস্ট্রাক্টরও একজন মেয়ে।
_” বাহ। তাহলে আমিও যাব। ইদানিং নিজেকে কেমন যেনো লাগছে। তলপেট হালকা বেড়ে গেছে। তাছাড়া নিজের কাছে নিজেকে ভালো লাগছে না। একটু ফিট হওয়া জরুরি।
_” আচ্ছা। তবে কুয়াকাটা থেকে ফিরে দুজন একসাথে গিয়ে ভর্তি হয়ে আসব।
_” হুঁ।
বলতে বলতে প্রিয়তি হাই তুলল। রিদু প্রিয়তিকে ধরে বিছানায় শুইয়ে বলল,
_” এখন ঘুমাও।
_” দাঁড়াও হিসু করে আসি।
রিদু হেসে বলল,
_” বাচ্চাদের মত অভ্যাস তোমার। কোথাও যাওয়ার আগে, ঘুমাবার আগে হিসু করা লাগবেই তোমার। হা হা হা। যাও। ওহ ঔষধ খেয়েছো?
_” হ্যাঁ।
প্রিয়তি টয়লেটে গিয়ে রিদুর নাম ধরে ডাকলো। রিদু ওয়াশরুমের দরজার পাশে গিয়ে বলল,
_” কী হলো?
প্রিয়তি দরজা খুলে বলল,
_” সেলোয়ারের ফিতায় গিট্টু পড়ে গেছে। খুলতে পারছি না। কাটতে হবে মেবি।
রিদু শব্দ করে হাসল। ফিতরে গিট্টু দেখে বলল,
_” কাটতে হবে না, আমি খুলে দিচ্ছি। রিদু হাত দিয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দাঁত দিয়ে খুলতে নিলে, রিদুর নাক, ঠোঁটের স্পর্শ প্রিয়তির পেটে লাগতেই প্রিয়তি কেঁপে উঠে বলে,
_” তোমার এভাবে খুলতে হবে না। কেটে ফেলো।
রিদু দুষ্টু হেসে বলল,
_” হয়ে গেছে মখমলী ম্যাডাম।
_” মানে?
_” তোমার শরীর মখমলের মত, নরম, মোলায়েম, ভেলভেট কিনা তাই।
প্রিয়তি লজ্জা পেয়ে বলল,
_” যাও শুয়ে পড়ো আর দুষ্টুমি করতে হবে না। আমি আসছি।
রিদু হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মনে মনে বলল,
_” যাক প্রিয়তি স্বাভাবিক হচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু প্রেমার বিষয়টা প্রিয়তিকে বলা দরকার। নয়ত প্রেমার থেকে জানলে প্রিয়তি কষ্ট পাবে। কুয়াকাটা থেকে ফিরে প্রিয়তিকে বুঝিয়ে বলতে হবে সবটা। আমাদের মাঝে কোনো লুকোচুরি রাখা যাবে না।
প্রিয়তি ঔষধ খেয়ে বিছানায় শুতেই, রিদু আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে বলল,
_” জান।
_” হুঁ।
_” কখনো যদি আমার বিষয়ে এমন কোনো সত্যি জানতে পানো, যা আমি পূর্বে লুকিয়েছি তবে তুমি কী করবে?
_” আগে লুকানোর কারণটা জানব।
_” প্রথমে অবিশ্বাস করবে না তো?
_” নাহ। আগে কারণ জানব তার পর তোমার কথা শুনবো তারপর ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিব।
_” সত্যি তো।
_” হ্যাঁ। তবে হঠাৎ এ কথা কেনো?
রিদু কিছু একটা লুকিয়ে বলল,
_” নাহ এমনি।
১৪!!
তিথি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখছে আর হাসছে। ডোরেমন কার্টুন ওর সবচেয়ে পছন্দের। উবু হয়ে শুয়ে পা দুটো নাচ্ছাচ্ছে। পরনের স্কার্ট অনেকটা হাঁটু পর্যন্ত পড়ে আছে। দুধে আলতা গায়ের রঙ তিথির, মোলায়েম শরীর। শরীরের গঠন মানুষের, বিশেষ করে ছেলেদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারবে কিছু সময়ের জন্য। তখন প্রিয়ম (প্রিয়তির বড় ভাই) হুট করে রুমে ঢুকে বলল,
_” তিথি চা বানিয়ে আন তো।
প্রিয়ম আর তিথি দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। প্রিয়ম এতক্ষণ তিথিকে ঠিকভাবে খেয়াল করেনি। এখন খেয়াল করে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেলো। তিথি হরবর করে দাঁড়িয়ে বলল,
_” প্রিয়ম ভাইয়া তুমি?
প্রিয়ম মাথা নিচু করে বলল,
_” কিছু করছিস তুই?
_” না। টিভি দেখছিলাম।
_” আমি চা খাবো। মা বা চাচিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
_” মা আর বড় চাচি তো একটু বাজারে গেছে। প্রেমা আপু ঘরে আছে মনে হয়।
_” প্রেমাকে বলে লাভ হবে কি? ওর হাতের জঘন্য চা খাবার চেয়ে বিষ ভালো। তুই বানিয়ে দিতে পারবি?
_” তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।
তিথি রুম থেকে বের হয়ে যেতে প্রিয়ম দেয়ালে টানানো তিথির ছোটবেলার ছবির দিকে তাকিয়ে বলল,
_” সেই দিনের ছোট্ট পরীটা আজ কত্ত বড় হয়ে গেছে। কত কত বিয়ের প্রস্তাব আসে। ও কি জানে আমি চাই ও সারা জীবন এ বাড়িতেই থাকুক। তবে ওর থাকার রুমটা বদলে আমার রুমটা হোক। তিথি প্রিয়মের হোক। মেয়েটাকে সরাসরি বলা সম্ভব না। ভাববে আমি ওর প্রতি কু নজর দিয়েছি। নজর তো দিয়েছি তবে বদ মতলবে নয়, ভালো উদ্দেশ্যে। আমার উদাসীন জীবনের রঙ তিথি।
তিথি চা নিয়ে এসে চায়ের মগটা প্রিয়মের হাতে দিয়ে বলল,
_” আর কিছু লাগবে তোমার?
_” নাহ। তুই বোস তো। কথা হয় না ঠিকভাবে কত দিন। তা পড়ালেখা কেমন চলছে?
_” ভালো।
_” HSC কবে?
_” এই তো মাস তিন বাকি আর।
_” ওহ।
_” ঠিকভাবে পড়াশুনা করিস। তোর থেকে বেটার কিছু আশা করছি।
_” চেষ্টা করব তোমাদের আশা পূরন করার।
প্রিয়ম চা শেষ করে চলে যেতে নিলে, তিথি বলল,
_” ভাইয়া কিছু কথা ছিলো।
প্রিয়ম বসলো আবার। তারপর বলল,
_” হ্যাঁ বল।
_” আমরা তো কদিন যাবত আলাদা খাচ্ছি তা তো তুমি জানো।
_” হ্যাঁ। কদিন আগে পরিবারের সবাই কথা বলেই তো সিদ্ধান্ত হলো।
_” আমার HSC পরীক্ষা শেষ হতে হতে প্রায় পাঁচ মাস লাগবে। তারপর আমরা এ বাড়ি থেকে চলে যাব ভাড়া বাড়িতে। এ বাড়িতে আমাদের অংশটা ভাড়া দিয়ে যাব। এখনি যেতাম কিন্তু পড়ার ক্ষতি হবে তাই যাইনি।
_” আলাদা যখন খাচ্ছিস তখন, ভাড়া বাড়িতে যাবার কী দরকার?
_” ভাইয়া তুমি তো বাড়ি থাকো না, তাই জানো না, এ বাড়িতে মাকে কাজের লোকের চোখে দেখা হয়, আর আমাকে কাজের লোকের মেয়ে। তোমাদের মত টাকা পয়সা আমাদের নেই তবে বংশ তো এক তাই আত্মসম্মান বোধ কম নয়।
_” বুঝলাম। এখন আমাকে কী করতে হবে ?
_” মা ভাড়া বাড়িতে যেতে চাচ্ছেন না। তিনি চাচ্ছেন আমাকে একেবারে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠাবেন। তার আমাকে নিয়ে একা থাকতে ভয় করে নাকি।
_” স্বাভাবিক। তোর বয়সী মেয়েদের নিয়ে বাবা মায়েদের চিন্তার অভাব নেই। তার মধ্যে তুই যা সুন্দর চিন্তা বেশি তো হবেই।
_” আমি জানি তা, কিন্তু আমি পড়তে চাই। মা অবশ্য এটাই চাইতেন যে আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই কিন্তু কদিন আগে একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ছেলের নাম রকিব। পুলিশ অফিসার। তারা মাকে বলেছেন আমি যতদূর পড়তে চাই পড়াবেন। তবে বিয়েটা শীঘ্রই করতে চান। কিন্তু আমি আপাতত বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই। তুমি প্লিজ মাকে বোঝাও। মা তো ছেলের সম্পর্কে সব খোঁজ নিয়ে এ পায়ে রাজি হয়ে গেছেন। তাছাড়া ছেলে হৃদয় ভাইয়ার খালাতো ভাই।
তিথির বিয়ের কথা শুনে প্রিয়মের মু্খটা চুপসে গেলো। তিথিকে কিছুই বলতে পারল না। শুধু বলল,
_” আমি চাচির সাথে কথা বলব।
চলবে________