মহুয়া পর্ব -২২

#মহুয়া
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২২

প্রিয়‌তি হৃ‌দিতা‌কে নি‌য়েই প্রেমার সা‌থে ক‌লে‌জে দেখা কর‌তে গে‌লো। হৃ‌দিতা‌কে দেখে প্রেমা বেশ বিরক্ত হ‌লো। প্রিয়‌তি প্রেমার কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
” বল কী বল‌বি?”
” আমি তোর সা‌থে একা কথা বলতে চাই।”
” হৃ‌দি থাক‌লে প্রব‌লেম নেই।”
” তোর নেই কিন্তু আমার আছে।”
হৃ‌দিতা বলল,
” সমস্যা নেই ভা‌বি তোমরা কথা ব‌লো আমি একটু এদিক ওদিক ঘু‌রি।”

হৃ‌দিতা যে‌তেই প্রেমা বলল,
” একা না এসে ওকে কেন সা‌থে আন‌লি?”
” তো‌কে আমি তিল প‌রিমানও বিশ্ব‌াস ক‌রি না। সেদিন বা‌ড়ি ভ‌র্তি লোক ছি‌লো তখন আমা‌কে ধাক্কা দি‌য়ে মাথা ফা‌টা‌লি আমার সন্তান‌কে হত্যা কর‌লি, আজ আমা‌কে একা পে‌য়ে আমা‌কে যে খুন কর‌বি না তা কী ক‌রে বু‌ঝি বল? তাছাড়া তুই ভা‌লো ক‌রেই জা‌নিস আমার শরীর ঠিক নেই।”
‌প্রেমা তা‌চ্ছিল্য হে‌সে বলল,
” ‌তো‌কে খুন করার হ‌লে যে কো‌নো সময় কর‌তে পা‌রি। তার জন্য তো‌কে ক‌লেজ ক্যাম্পা‌সে ডে‌কে সা‌ক্ষী রে‌খে মারার কী দরকার?”
” যা বলার জন্য ডে‌কে‌ছিস তা ব‌লে বি‌দেয় হ।”
” হৃদ‌য়ের সা‌থে যে আমার বি‌শেষ একটা সম্পর্ক ‌ছি‌লো তা কী জা‌নিস?”
” হ্যাঁ।”
” কিভা‌বে?”
” রিদু ব‌লে‌ছে।”
” কতটা বি‌শেষ তা কী জা‌নিস?”
” জা‌নি এতটাই বি‌শেষ যে তুই তার সা‌থে শু‌য়ে‌ছি‌লি তার সন্তান পর্যন্ত এবরশন ক‌রি‌য়ে‌ছি‌লি। আর কিছু?”
” সব জে‌নেও ওর সা‌থে ঘর কর‌বি?”
” হ্যাঁ করব।”
” তোর ম‌ধ্যে আত্মসম্মানবোধ নেই?”

‌প্রিয়‌তি তা‌চ্ছিল্য হে‌সে বলল,
” মজার তো! যে মে‌য়ে বি‌য়ের আ‌গে প্রে‌মিকের সা‌থে বিছানা শেয়ার ক‌রে, তার অবৈধ বাচ্চা নষ্ট ক‌রে, সে আবার আত্মসম্মান বো‌ধের মত মহান শব্দ মু‌খে আন‌ছে। তাছাড়া দোষ তোর ছি‌লো রিদু নয়। হ্যাঁ রিদু মস্ত ভুল ক‌রে‌ছে কিন্তু তুই চাই‌লে এখন তোরা স্বামী স্ত্রী থাক‌তি তো‌দের মা‌ঝে আমি আসতাম না। কিন্তু কথা হ‌লো তোর আবার কো‌নো কিছু একটা‌তে হয় না।”
‌প্রেমা খা‌নিক রে‌গে বলল,
” কথা ঠিক ক‌রে বল। বাচ্চা এবরশন করা‌তে হৃদয় আমা‌কে বাধ্য ক‌রে‌ছি‌লো। ও আমা‌কে বি‌য়ে কর‌তে চায়‌নি। যখন কন‌সিভ করলাম তখন আমা‌কে বলল বাচ্চাটা ওর না। অথচ বাচ্চাটা ওরই ছি‌লো। আমা‌কে ছে‌ড়ে চ‌লে গে‌ছি‌লো, তাই বাধ্য হ‌য়ে আমা‌কে বাচ্চা নষ্ট কর‌তে হ‌য়ে‌ছি‌লো?”

‌প্রিয়‌তি অবাক হবার ভান ক‌রে বলল,
” স‌ত্যি বল‌ছিস?”
” হ্যাঁ।”
শব্দ ক‌রে হাস‌লো প্রিয়‌তি। তা‌রপর বলল,
” রিদু বাধ্য করল আর তুই বাধ্য মে‌য়ের মত বাচ্চা নষ্ট ক‌রে ফেল‌লি? বাব্বাহ্ নি‌জের প‌রিবার‌কে জানা‌লি না পর্যন্ত! এক‌লিস্ট রিদুর প‌রিবার‌কে জানা‌তি? দুই প‌রিবার মি‌লে নাহয় যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নি‌তো?”
” আ‌মি হৃদয়ের ঠিকানা জানতাম না। তাছাড়া ও আমা‌কে না জা‌নি‌য়ে চ‌লে যায়।”

‌প্রিয়তি বাঁকা হে‌সে বলল,
” সে‌কিরে? যে ছে‌লের সা‌থে প্রেম কর‌লি, দৈ‌হিক মিলন কর‌লি, তার বাচ্চা পে‌টে নি‌লি অথচ তার ঠিকানা জান‌তি না? আজব তো! রিদু তো তখন খুলনা‌তেই কাজ করত। ওর অফিস বা কোম্পা‌নির নাম জান‌তি না? তাছাড়া খালাদের বাসার পা‌শের বি‌ল্ডিংএ থাক‌তো তাও বেশ ক‌য়েকজন মি‌লে। এক‌লিস্ট ওর রুমমেটরা ওর বা‌ড়ি বা কা‌জের স্থা‌নের ঠিকানা জান‌তো। তা‌দের কা‌ছে থে‌কেও তো জান‌তে পার‌তি। খুঁজ‌লে না‌কি ঈশ্বর‌কে পাওয়া যায় তুই একজন সামান্য মান‌ুষকে পে‌লি না! যে কিনা তোরই শহ‌রে থা‌কে। তোর তো কত বু‌দ্ধি, সব বু‌দ্ধি কি ড্রে‌নে ফে‌লে দি‌য়েছি‌লি তখন! আচ্ছা মানলাম রিদুর ঠিকানা জান‌তি না বা ওর প‌রিবার‌কে জানা‌তে পা‌রিস‌নি। কিন্তু আমা‌দের প‌রিবার‌কে তো জানা‌তে পার‌তি! না‌কি তা‌দের ঠিকানাও জান‌তিস না? নি‌জে নি‌জে বাচ্চা নষ্ট ক‌রে বা‌ড়ি ফি‌রে কত বাহানার ঢঙ কর‌লি। আচ্ছা এসব কথাও না হয় বাদ দিলাম। আমার আর রিদুর বি‌য়ের কথা যখন চল‌ছি‌লো তখন তো রিদুর ছ‌বি তুই আমারও আগে দে‌খে‌ছি‌লি। তখন কী রিদু‌কে চিন‌তে পা‌রিস‌নি? না‌কি মেম‌রি লস হ‌য়ে গে‌ছি‌লো তোর? তখন সবাই‌কে বল‌তি এই ছে‌লেটা তোর সা‌থে চিট কর‌ছি‌লো। দেখ‌তি তখন আমরা কী করতাম।”
” তোর কথা ভে‌বে ব‌লিনি।”

‌প্রিয়‌তি বেশ কড়া ধমক দি‌য়ে বলল,
” জুতা চি‌নোস? আমার পা‌য়ের জুতাটার দি‌কে তাকা, আসার সময় গোব‌রে পা দি‌য়ে‌ছিলাম, এখনও গোবর লে‌গে আছে, আর একটা এমন ছ্যাচড়ার মত মিথ্যা কথা বল‌লে এই গোবরমাখা জুতাখানা খু‌লে সর্বসম্মু‌খে তো‌কে জুতা‌বো। তারপর পাব‌লিক যখন জি‌জ্ঞেস কর‌বে কী হ‌য়েছে তখন বলব তু‌ই একটা প্র‌স্টি‌টিউট। আমার স্বামী‌কে ফোন ক‌রে বিরক্ত ক‌রিস। তাই আমার স্বামী আমা‌কে পাঠাই‌ছে তো‌কে শা‌য়েস্তা কর‌তে।

‌প্রেমা যে‌নো অনেকটা ঘাব‌রে গে‌লো। প্রিয়‌তি আবার বলতে লাগ‌লো তুই আমার কথা এত ভা‌বিস যে নি‌জের প্রে‌মিক‌কে আমায় দি‌য়ে দি‌লি? কেন‌রে তোর প্রে‌মিক‌কে কী আমি বি‌য়ের আগে চিনতাম না‌কি তার সা‌থে সেক্স ক‌রেছিলাম, না‌কি তার বাচ্চা দি‌য়ে আমার পেট ভ‌রে‌ছিলাম যে তুই সে‌ক্রিফাইজ কর‌লি? রিদুর সা‌থে আমার বি‌য়েটা তো সম্পূর্ণ বড়‌দের মতে। আমরা তো একে অপর‌কে চিনতামও না। এমন‌কি তুই আমা‌দের বি‌য়ের আগে রিদুর সা‌থে দেখা করা তো দূ‌রের কথা কথাও ব‌লিস‌নি। ঘাপটি মে‌রে লু‌কি‌য়েছি‌লি। তখন কেন দেখা ক‌রিস‌নি? না‌কি এটাও আমি বল‌বো?

আচ্ছা আমিই ব‌লি শোন, রিদু তো‌কে রেস্টু‌রেন্ট‌ে ব‌সে সবার সাম‌নে যা নয় তাই ব‌লে অপমান ক‌রে‌ছি‌লো, তখন তুই কিছু বল‌তে পা‌রিস‌নি। সব‌চে‌য়ে বে‌শি যে কথাটা তোর গা‌য়ে লে‌গে‌ছি‌লো তা হ‌লো, রিদু রা‌গের মাথায় সবার সাম‌নে তোর বাচ্চাটা‌কে অস্বীকার ক‌রে। য‌দিও বাচ্চাটা রিদুরই ছি‌লো কিন্তু রা‌গের মাথায় রিদু যা নয় তাই ব‌লে তো‌কে তাও পাব‌লিক প্লে‌সে। তুই তো মানুষ‌কে ছে‌ড়ে দেয়ার পাব‌লিক না। রিদুর অপমা‌নের জবাব দেয়ার সু‌যোগ খুঁজ‌ছিলি কিন্তু মাঝপ‌থে হয়‌তো তোর লাই‌ফের কিছু মু‌ভমেন্ট এর কার‌ণে পা‌রি‌সনি। কিন্তু আমা‌দের বি‌য়ের সময় রিদু‌কে দে‌খে তোর পুরা‌নো ঘা আবার তাজা হ‌লো। আমা‌কে তো তুই বরাবরই অপছন্দ ক‌রতিস ভাব‌লি এক ঢি‌লে দুই পা‌খি মার‌বি। আমা‌কে আর রিদু‌কে একসা‌থে শা‌য়েস্তা কর‌বি। সে কারণে বি‌য়ের আগে সব জে‌নে শু‌নেও মু‌খে কুলুপ এটে রই‌লি এবং রিদুর নজ‌রের বাই‌রে রই‌লি। আর আমা‌দের বি‌য়ের পর নি‌জের নোংরা খেলা শুরু কর‌লি। আর কিছু বল‌বি তুই?”

‌প্রেমা হতভম্ব হ‌য়ে প্রিয়‌তির দি‌কে তা‌কি‌য়ে রই‌লো। প্রিয়‌তি রিদুর বিরু‌দ্ধে উষ্কা‌তে যেসব কথা বলবে ব‌লে ভে‌বে গু‌ছি‌য়ে এসে‌ছি‌লো সবটা যে‌নো নি‌মি‌ষেই ভু‌লে গে‌লো। এলো‌মে‌লো লাগ‌ছে সব। প্রিয়‌তির এমন রূপ দেখ‌বে তা চিন্তা কর‌তেও পা‌রে‌নি। প্রিয়তি আবার বলল,
” শোন প্রেমা, রিদু আর আমার ম‌ধ্যে সম্পর্কটা যেমনই হোক তা আমা‌দের মা‌ঝে আছে এবং থাক‌বে। তুই উষ্কে দি‌লেই যে আমি উষ্কা‌বো এমন ভাবা বোকা‌মি। হ্যাঁ রিদু ভুল ক‌রে‌ছে কিন্তু তা ব‌লে যে ওকে একবারও ক্ষমা না ক‌রে, আমি ওকে ছে‌ড়ে চ‌লে যা‌বো তেমনটা ভা‌বিস না। রিদু য‌দি তওবা ক‌রে ভা‌লো প‌থে ফিরে আস‌তে পা‌রে ত‌বে আমি কেন মে‌নে নিব না! রিদু‌কে ভা‌লোবাসতাম এবং ভা‌লোবাস‌বো। তোর কো‌নো নোংরা চাল আমাদের সম্পর্ক ভাঙ‌তে পারবে না। তোর আর কিছু বলার থাক‌লে বল, নয়‌তো আমি চললাম।”

‌প্রেমা স্থির হ‌য়ে ব‌সেই রই‌লো। প্রিয়‌তি প্রেমা‌কে চুপ থাক‌তে দে‌খে ওখান থে‌কে চ‌লে আসল।

চল‌বে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here