” সবে মাত্র নাইনে উঠলি!এর মধ্যেই বয়ফ্রেন্ড বানাইয়েছিস?আবার ভালোবাসার প্রমাণ দিতে এই রাত্রি বেলা পালিয়েও যাচ্ছিস?খুব সাহস হয়েছে তাই না?”
কথাটা বলে কষিয়ে শালিককে চ*ড় মা!রে আহান।শালিক কিচ্ছু বলে না।চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িতে থাকে।জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে শালিকের বা গালটা।এত জোরে কেউ চড় মা*রে?আহান শালিককে ছোটবেলা থেকে বিরক্ত করছে ঠিক ইই কিন্তু শালিক দুঃস্বপ্নেও ভাবে নি আহান তাকে চড় মা*রবে।মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে শালিক।সামনে দাঁড়িয়ে আহান।রাগে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।গলা পর্যন্ত এসে কেমন যেন আটকে যাচ্ছে কথা গুলো।ঠিক খানিকটা দূরেই শালিকের প্রেমিক তামিমকে ধরে রেখেছে আহানের বন্ধুরা। সব নীরবতাকে ভেঙে শালিক কান্না ভেজা কন্ঠে আহানকে ডাক দেয়।
” ভাইয়া…!”
” চুপ!একটাও কথা বলবি না।”
আহানের হুংকারে কেঁপে ওঠে শালিক।কান্নার মাত্রা যেন আরও বেড়ে যায় শালিকের।আহান সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না।মাথা ঠান্ডা করতে শালিকের থেকে খানিকটা দূরে চলে যায় আহান।পাগলের মতো চুল টানতে লাগে নিজের।শালিক যেন এই সুযোগ এর ইই অপেক্ষায় ছিলো।আহান দূরে যেতেই শালিক ছুটে যায় তামিমের কাছে।নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে তামিমকে ছাড়ানোর। নাবিল বুঝতে পারে শালিককে আহান ছাড়া কেউ সামলাতে পারবে না।নাবিল আহানকে ডাক দেয়। শালিকের পাগলামি দেখে যেন আহানের মাথায় রক্ত চড়ে বসে। আহান শালিককে সেখান থেকে এনেই আরো দুটো থাপ্পড় মা_রে।শালিক এবার চিৎকার দিয়ে উঠে,,,
” একেবারেই মে*রেই ফেলো।একটু পর পর চ!ড় থাপ্প!ড় দিতে তোমারও এনার্জি সময় নষ্ট হচ্ছে।তার চেয়ে ভালো তামিম আর আমাকে একেবারে মে*রে ফেলো।”
শালিকের কথা শুনে আহান হো হো করে হেসে উঠে।তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,,,
” ওয়াহ!মহারাণীর এতই ম*রার শখ?বাসায় নিয়ে যাই মামি আর সাদ ভাইয়া যেভাবে মা*রার মা*রবে নি।”
” বাসায় নিয়ে যাবে কেন?তোমার হাত নেই?এত গুলো চ*ড় যখন দিতে পারলে মা*রতেও নিশ্চয়ই হাত কাঁপবে না।”
” কিন্তু ম*রতে গেলে তোর প্রেমিক পুরুষ তামিমের হাঁটু থরথর করে কাঁপবে।”
আহানের কথা শুনে শালিক তীর্যক দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকায়।শালিকের চাহনিতেই আহান শালিকের মস্তিষ্কের ভেতর ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্ন আন্দাজ করে ফেলে।কিঞ্চিৎ হেসে বলে,,,,
” বুঝলি না তাই না?এই জন্য তোকে মাথামোটা বলি।”
বলেই আহান বাইকের কাছে যায়।অন্ধকারে স্পষ্ট বোঝা গেলো না।তবে খালি হাতে বাইকের কাছে গেলেও হাতে চকচকে ধারালো ছুড়ি নিয়ে ফেরে আহান।আহান ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত এটা শালিকের অজানা নয় কিন্তু গুন্ডামির সাথেও যে যুক্ত এটা শালিকে জানা ছিলো না।ছুড়িটা শালিকের চোখের সামনে স্পিন করে আহান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,,,
” আমি তোর গাঁ*জাখোর বয়ফ্রেন্ডকে মা-র!বো।আর তোকে সাদ ভাইয়া আর মামীর হাতে তুলে দিবো তারা তোকে কি করবে সেটা তারাই ডিসিশন নিবে নি।”
কথাটা বলে আহান তামিমের দিকে এগিয়ে যায়।এমন সময় শালিক আহানের সামনে তামিমেম ঢাল হয়ে দাঁড়ায়,,,
” মা!রতে হলে আমাদের দুজনকে একসাথে মারো।”
” ও এম জি!নাইনের খুকির আবেগ মনে হয় চুলোয় থাকা দুধের মতো উপচে পড়ছে!”
কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে আহান।মুহুর্তেই সেই হাসি বিলীন হয়ে যায়।গোমড়া মুখে বলে,,,,
” অনেক পাকনামি করেছিস।আর একটাও যদি পাকনামি করিস ভালো হবে না বলে দিলাম।”
কথাটা বলে শালিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আহান।পুরুষ শক্তির ধাক্কার টাল সামলাতে না পেরে শালিক মাটিতে পরে যায়।আহান ছুড়ি হাতে নিয়ে তামিমের দিকে এগিয়ে যায়।শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,
” খুব ভালোবাসিস না শালিককে?শালিককে পালিয়ে এসে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে বলেছিলি না?ও তো পালিয়েই এসেছে।এবার তুই তোর জীবন দিয়ে ভালোবাসায় প্রমাণ দে।”
কথাটা বলে আহান যেই ছুড়িটা দিয়ে আ*ঘাত করতে যাবে তামিমকে ঠিক সেই সময় শালিক এসে ছুড়িটা ধরে ফেলে।
” শালিক ছুড়িটা ছাড়।এমনিতেই তোর হেমোফোবিয়া আছে।”
” না ছাড়বো না।”
” তুই ভুল মানুষের জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস।”
” তুমিই আমায় কষ্ট দিচ্ছো আহি ভাইয়া।আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম।কেন আমায় ফলো করলে?”
” সময় হলে এর উত্তর পাবি।তুই ছাড়।জিদ করিস না।”
শালিক আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।ল্যাম্পপোস্টের আলোয় নিজের হাতে রক্তগঙ্গা দেখে ওর শরীর কাঁপতে শুরু করে।শালিক এক পা দু পা করে পিছাতে লাগে।আহান তামিমের গলায় ছুড়ি ধরে।
” নে শালা দে এবার নিজের ভালোবাসার প্রমাণ।”
প্রাণভয়ে এবার তামিমের মুখ থেকে সত্যি কথাটা বেরিয়েই পরে।
” ভাই খোদার কসম ওরে আমি ইউজ করছি।ওর বাপের সম্পত্তির লোভ আমি সামলাইতে পারি নাই।তাই ওরে ফাঁসাইছি।মাফ কইরা দেন ভাই।আমার জানডা ভিক্ষা দেন।”
তামিমের কথা শুনে আহান ও তার বন্ধুরা হো হো করে হেসে উঠে।আহান হাসতে হাসতে শালিককে খোঁচা মেরে বলে,,,,
” সুন্দরী মেয়েদের রুচি খারাপ হয় প্রুভড।কি দেখে প্রেমে পরছিস আল্লাহ মালুম।না আছে সুন্দর কথা আর না আছে সুন্দর খোমা…..!”
কথাটা বলে আহান থেমে যায়।খোমা অর্থাৎ চেহারার কথা উঠতেই আহানের মনে হলো তামিমকে আহান আগে কোথাও দেখেছে।ভীষণ চেনা ওর আহানের মুখখানা।আহান তীক্ষ্ণ সন্দিহান দৃষ্টিতে তামিমের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” সত্যি করে বলতো!কে তুই?”
” ক..ক..কে আবার হতে যাবো?আমি তামিম।”
” উ…হু।তুই তামিম না।নাবিল??মনে হয় না এই শা*লাকে কলেজে আগে দেখেছি?”
নাবিল তামিমের মুখে ফোনের আলো ধরে।আলো ধরে আহানকে বলে,,,
” আরেহ আহান!এই ব্যাটায় তো রামিম।কায়েসের চামচা।”
আহান নাবিলের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,
” যা বুঝার বুঝতে পেরেছি।শালিক আছে আর বেশি কিছু বলিস না।কেস খেয়ে যাবো।আর রামিম!এইবারের মতো ছেড়ে দিচ্ছি নেক্সটটাইম কোনো চালাকির চেষ্টা করলে….প্রাণে মারবো না।কিন্তু এমন জায়গায় মারবো যে ভবিষ্যত,ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়ে শঙ্কায় থাকবি।”
শালিক এগুলো খেয়াল করে না।পারছে না নিজেকে সামলাতে।তামিমের কথা শুনে বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছে শালিক।রাগে ওর মাথায় রক্ত চড়ে বসে আছে। মুহুর্তে ই আহানের হাত থেকে ছুড়ি নিয়ে শালিক তামিমের দিকে তেড়ে যায়।
” কু**ত্তার বাচ্চা!আমার আংটি দে,আমার চেইন দে।ফ*কিন্নির পু*ত।আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।”
কথাটা বলে তামিমের হাত থেকে আংটি খুলতে যায় শালিক।কিন্তু পেশির প্রসারণের জন্য শালিক আংটিটা ব্যর্থ হয়। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে শালিক বলে,,,
” আজকে তোর আঙুল কে*টে গলা কে*টে হলেও আমি আমার আংটি চেইন নিয়ে ছাড়বো!তারপর তোকে টু*করো টু*করো করে কেটে রাস্তার কু*ত্তাকে খাওয়াবো।”
কথাটা বলেই ছুড়ি নিয়ে তামিমের আঙুল কা*টতে যায় শালিক।আহান সাথে সাথে শালিককে ধরে ফেলে।
” পাগল হয়েছিস?নিজেও হাজতে যাবি সাথে আমাদেরও নিবি।”
” ছাড়ো আমায় আহি ভাইয়া।আজ ওর শেষ দিন।দিনের পর পর আমায় ইউজ করে গেছে।”
” তুই মাথামোটা দেখেই তো সুযোগ পেয়েছে ইউজ করার।”
” আমার আংটি চেইন ও নিয়েছে।ওই দুইটো আনতে দাও।আংটিটা আঙুলে শক্ত ভাবে আটকে গেছে।কা*টতে হবে আঙুল।”
” আমি আনতেছি।তুই ঠান্ডা হ।”
” শা*লাকে না মা*রা পর্যন্ত ঠান্ডা হবো না আমি।”
আহান হাসতে হাসতে তামিমের দিকে এগিয়ে যায়।
” কি অবাক হচ্ছিস?কেয়া সে কেয়া হো গেয়া তাই না?ভালোয় ভালোয় আংটি,চেইন টা দিয়ে কেটে পর।না হলে আঙুল গলা কা*টা যাবে।”
তামিম চেইন,আংটি খুলে আহানের হাতে দেয়।আহান ওর বন্ধুদের ইশারা দিলে তারা তামিমকে ছেড়ে দেয়।আহান আংটি আর গলার চেইন শালিককে পরিয়ে দিয়ে বলে,,,
” নিজের জিনিস নিজের কাছে যত্নে রাখতে শিখ।গয়না,আবেগ প্রেম এত সস্তা না যে তোকে রাস্তার ছেলেদের দিতে হবে।তাছাড়া এমনিতেও সোনার দাম দিন দিন বাড়তেছে।”
শালিক চুপচাপ। আহান পকেট থেকে রুমাল বের করে শালিকের হাতে প্যাচিয়ে দেয়।
” চল হাসপাতাল থেকে ঘুরে বাসায় যাবো।”
কথাটা বলে আহান শালিকের হাত ধরে টান দেয় বাইকের কাছে যাওয়ার জন্য।কিন্তু শালিক যায় না স্থির হয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।যন্ত্র মানবীর মতো করে বলে,,,,
” আহি ভাইয়া,তুমি তো সিগারেট খাও। তোমার কাছে লাইটার আছে? ”
আহান শুকনো ঢোক গিলে।এই মেয়ে জানলো কিভাবে আহান সিগারেট খায়?
” তুই জানলি কিভাবে আমি সিগারেট খাই?”
” তোমায় মন্টু দার চায়ের দোকানে আমি সিগারেট টানতে দেখেছি।”
” ফিউচার পাশের বাসার আন্টি।আমার বাপেও তো মনে হয় আমায় এমন নজরবন্দী রাখে না।”
” তুমি এমন কোনো পাব্লিক ফিগার না যে তোমায় নজর বন্দী করা লাগবে।তোমার আকাম-কুকাম আমার এমনিতেই চোখে পরে যায়।”
” দুনিয়া উল্টায় গেলেও তুই আমায় কথা শোনানো ছাড়বি না।বুঝেছি।”
” বুঝেছো ইই যখন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে যেটা চাইলাম সেটা দাও।”
বিরক্তি নিয়ে শালিকের দিকে তাকায় আহান।পকেট থেকে লাইটারটা বের করে শালিকের হাতে দেয়।শালিক ব্যাগ খুলে টেডি বিয়ার,হার্ট পিলো সহ নানা জিনিস বের করে। যেগুলোর একটা স্তুপ করে রাস্তার মধ্যে করে কাগজের বান্ডিল থেকে একটা কাগজ বের করে লাইটার দিয়ে সেটায় আগুন ধরিয়ে দেয়।সাথে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগে।আহান ওকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
” এগুলো তামিম দিয়েছিলো?”
শালিক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।
” সব জ্বালিয়ে দে।পুরোনো প্রেমিকের দেওয়া জিনিস পত্রের সাথে পুরোনো প্রেম আবেগ সব কিছুকে জ্বালিয়ে দেয়।পুরোনো শালিককে জ্বালিয়ে দিয়ে নতুন শালিক হয়ে যা।সে শালিক আগের শালিকের থেকে অনেক স্ট্রং হবে।অনেক স্ট্রিং।”
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ
#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব১
আসসালামু আলাইকুম।আশা করি আল্লাহর রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। দীর্ঘ বিরতির পর আবার লেখালেখির জগতে ফেরলাম।নিজেকে অনভিজ্ঞ লাগছে তাই মতামত প্রকাশের অনুরোধ রইলো।আপনাদের মতামত আমায় অনুপ্রেরণা দিবে।