#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
২+৩
#পর্ব২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
রাত বারোটা সাড়ে বারোটার মতো বেজে যায় শালিককে নিয়ে বাসায় ফিরতে।গিয়ে দেখে ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে।সবার চেহারায় রাগ ক্ষোপের ছাপ স্পষ্ট।শালিককে দেখে আহানের নানু অর্থাৎ শালিকের দাদি উঠে এসে শালিককে কষিয়ে চ*ড় মারে।চুলের মুঠি ধরে বলে,,,,
” ওরে মুখপুড়িরে,নিজের মুখ তো কালা করলি লগে আমগো হজ্ঞলের মুখও কালা করলি।পেইচ্চা মাইয়ার সাহস কত।নাঙের লগে পলাবার গেসে!”
কথাগুলো বলেই ইচ্ছামতো শালিককে মারতে থাকে।আহান গিয়ে দাদির সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।হুংকার দিয়ে বলে,,,
” এমনিতেই মেয়েটার মনের অবস্থা ভালো না তার মধ্যে তুমি এসব করছো!যাও তুমি নানু।সরো।”
” তোর আর এই মা*গীর লাইগা আলগা দরদ দেখান লাগবো না।তুই তোগো বাসায় যা।আমগোর হাতে তুইলা দে এই মা*গী রে।”
” ছি!কি অশ্লীল তোমার মুখের ভাষা। এক পা কবরে চলে গেসে তাও তোমার ভালো হওয়ার নামগন্ধ নাই।ম*রার ভয়ে অন্তত মানুষ ভালো হয়।বুঝাই যায় তুমি মানুষের জাতে পরো না।”
” আহান তুই কইল বেশি কইতাছোস।”
” তোমার মুখ আছে তুমি বলতেছো। তো আমার মুখ থাকতে কেন আমি চুপ করে থাকবো?শালিকের গায়ে যদি ফুলের টোকাও লাগে তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না বলে দিলাম।”
” হ!ওই মাইয়ারে কি কমু!দোষ তো তার যে ওরে পেডে ধরছে।ওর মায়েই নষ্টের গোড়া।”
দাদির কথা শুনে আহান শালিকের মায়ের দিকে তাকায়।বেচারির চোখ দিয়ে নীরবে শুধু নোনা জল পরছে।গায়ে আঘাতের দাগ স্পষ্ট। ফর্সা ত্বকে আঘাতের চিহ্নগুলো নীলচে রঙ হয়ে গেছে।
” তুমি মামীকেও মে*রেছো তাই না?”
” হ।ওর মায়েই তো নষ্টের গোড়া।”
” এখন আমি যদি বলি তুমিও নষ্টের গোড়া?তোমার প্রশ্রয়েই আম্মু এমন হয়েছে।”
” তুই তোর মা-নানিরে নিয়া এইন্না কইতে পারলি আহান?”
” পারলাম।কারণ তোমার প্রশ্রয়েই আমার আম্মু আমার দাদির সাথে ওরকম করেছে।মেয়েকে যদি সঠিক শিক্ষা দিতে তাহলে হয়তো আমার দাদীকে এমন কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছাড়তে হতো না।তোমারও দুনিয়া ছাড়ার সময় হয়ে আসছে।সময় থাকতে ভালো হয়ে যাও।অনেক অ*ত্যাচার করেছো মামীর ওপর মা মেয়ে মিলে।মেয়ে তো মেয়ে ইই।এখন যদি বিছানায় পরো তাহলে মামী ছাড়া কেউ দেখবে না।”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে আহান শালিককে নিয়ে ওর ঘরে যায়।যাওয়ার সময় আসতে করে শালিকের বাবার কানে আহান বলে,,,
” কেন মামীকে আনলে আর কেন-ই বা সাদ ভাইয়া,শালিককে জন্ম দিলে?যদি তোমায় মায়ের আঁচলের তলেই থাকতে হয়?নাম মাত্র পুরুষ আর ওসি তুমি।তুমি থাকতে তোমার মা কোন সাহসে তোমার মেয়ে,তোমার বউয়ের ওপর হাত তুলে।ভালো ছেলে হতে পারলেও ভালো বাবা বা স্বামী হয়তো তুমি কখনোই হয়ে উঠতে পারবে না মামা।”
” বাবাকে কিছু বলো না ভাইয়া।”
” তুই চুপ থাক।”
শালিকের কথার জবাবে বলে আহান।শালিককে ওর ঘরে রেখে এসে আহান বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
” রুম থেকে বের হবি না।কিছু লাগলে মামীকে বলিস।বুড়িকে যা থে*রাপি দিয়েছি মনে হয় না আর ঝামেলা করবে।”
কথাটা বলেই আহান বেরিয়ে যেতে নেয়।ঠিক সেই সময় শালিক পেছন থেকে আহানের টিশার্ট টেনে ধরে।বাচ্চাসুলভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,
” যেও না আহি ভাইয়া।দাদি আমাকে মে*রেই ফেলবে।ভাইয়া থাকলে অত ভয় ছিলো না।কিন্তু ভাইয়া তো ট্যুরে গেছে।”
শালিকের জন্য আহানের মনের ভিতর একটা সফট কর্ণার আছে। তাই শালিকের কথা ফেলতে পারে না সে।মুচকী হেসে বলে,,,
” আচ্ছা।তুই ঘুমা।আমি এখানেই আছি।রাতে খাই নি।দেখি মামী কি রান্না করেছে।অনেক দিন হলো মামীর হাতের রান্না খাই না।”
কথাটা বলে আহান রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়।এক কদম ফেলেই পেছন ফিরে শালিকের দিকে তাকায়।
” তুই খেয়েছিস?”
” হু।”
” মিথ্যে বলছিস না তো?”
” ওই তামিমের কসম।”
আহান হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,,,,
” তারমানে মিথ্যে বলছিস।বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
ডাইনিং এ গিয়ে আহান শালিকের মায়ের কাছে খাবার চায় আর জিজ্ঞেস করে সবাই খেয়েছে কি না।শালিকের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,
” আর খাওয়া!মেয়ে যে কাজ করেছে তাতে সমাজে মুখ দেখানো দ্বায়।”
” শুধু শুধু প্যারা নিও না মামি।বড় কোনো অঘটন তো ঘটে নি!আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো।আর ক্ষুধা লাগছে অনেক।কি রান্না করছো?তাড়াতাড়ি খাইতে দেও।”
শালিকের মা একটা প্লেটে ভাত আর মুরগীর মাংস বেড়ে দেন।আহান সেটা নিতে নিতে বলে,,,
” প্যারা না নিয়ে সবাই খেয়ে নেও।আর এই যে বুড়ি।তুমিও গিলে নাও।নানাকে ওপারে আরও কিছুদিন শান্তিতে থাকতে দাও।”
” মেয়ায় কি পোলা পেডে ধরছাল আল্লাহই জানে।বড়ডা তাও যেন তেন।ছোডোডা তো আস্তা শয়*তান।এই শান্তা নিজের পোলাপানের লগে আমার মাইয়ার পোলাডিরেও নষ্ট করছে।”
” আমি জানি আমি শয়*তান। এখন গা*লা*গা*ল না দিয়ে খেয়ে নাও।”
কথাটা বলে আহান প্লেট নিয়ে শালিকের ঘরে যায়।শালিককে কয়েক লোকমা খাইয়ে দিতেই ওপাশ থেকে আহানের মায়ের ফোন আসে।আহান প্লেটটা বিছানায় রেখে কল রিসিভ করে,,,
” কই তুই?খাবি না?”
” মামারবাড়ি খাইতে আসছি।আজ তোমার ওখানে খাবো না।”
” শালিককে উড়াল দিয়েছে আর তুই গেছিস ওইখানে পিকনিক করতে!”
” কে বললো শালিক উড়াল দিয়েছে?ওই খা*ডাস বুড়িটা না?”
” আহি বেয়াদবির একটা লিমিট থাকে কিন্তু।ভুলে যাস না সে আমার মা।তোর নানু।”
” মা গুণে ঝি।”
” কিছু বললি?”
” নাহ।তুমি ফোন কাটো।ক্ষুধা লাগছে।খাবো।”
কথাটা বলে আহান ফোন কেটে দেয়।শালিক খেতে খেতে বলে,,,
” আমি যে এই আকাম টা করতে গিয়েছিলাম এটা এখন হট টপিক তাই না?”
” মেইবি।হতো না।ওই বুড়ি ছড়িয়েছে।এত আমার সাথে ঝগড়া করিস ওই বুড়িকে কিছু বলতে পারিস না?”
শালিক তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
” হুহ,আমি কিছু বললেই তার আঘাত গিয়ে পরে আম্মুর ওপর।মা*ইর দিতে পর্যন্ত ছাড়ে না।বাবা-মা নিয়ে গা*লা!গা!ল তো আছেই!ভাইয়াও এইজন্য খুব একটা কিছু বলতে পারে না দাদুকে।আর আব্বু তো আব্বুই।”
” বাদ দে।তাড়াতাড়ি খা।তোকে খাওয়ানোর পর আমি খাবো।”
শালিক খাবার চিবোতে চিবোতে বলে,,,
” আমায় যে তুমি এমন করে খাওয়াচ্ছো তোমার বউ এসব জানতে পারলে তোমায় আস্ত রাখবে?”
” বউ পরে নিজেই লজ্জা পাবে শুনে।”
হেসে বলে আহান।শালিন সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,,,
” মানে?”
” ভাত গিল।”
___________💗
সেদিন আহান আর বাসায় যায় না সাদের ঘরেই শুয়ে পরে।ফোনের ওয়াইফাই অন করতেই সাদের মেসেযে আহানের ফোন কেঁপে ওঠে,,,
” আহান।অঘটন হয়েছে বলে?”
” কিসের অঘটন?”
” শালিক বলে পালিয়েছে?”
সাদের রিপ্লাই আসে।আহান হাহা রিয়েক্ট দিয়ে বলে,,,
” শালিক শালিকের বাসায় ইই আছে।শুধু শয়*তান লাড়া দিয়েছিলো।আমি চ*ড়িয়ে শয়*তান ঘাড় থেকে নামিয়েছি।তুমি মিয়া ট্যুর ইঞ্জয় করো।”
” কই তুই এখন?”
” তোমার রুমে।আলমারি থেকে তোমার টিশার্ট বের করতে গিয়ে একটা ওড়না পেলাম।পাঞ্জাবীর সাথে পরার জন্য কিনছো?”
” তুই কোন সাহসে আমার আলমারিতে হাত দিয়েছিস?”
” কারণ আমি তোমার ছোট্ট ভাই।ভাইয়ায়ায়া!”
খানিকটা আহ্লাদী কন্ঠেই বলে আহান।এরই মধ্যে আনানের মেসেজ আসে।আনান আহানের বড় ভাই।পুরো আহানের বিপরীত।একটা কারণে তার মায়ের ওপর ভীষণ অভিমান।তাই সে মায়ের সাথে কথা বলে না।বাবাকেও এখনো বাবা বলে ডাক দেয় নি।অবশ্য আহান আনানের মা এক হলেও ওদের বাবা ভিন্ন।এর মধ্যেও লুকিয়ে আছে এক গভীর রহস্য আর অদ্ভুত কারণ।বুঝ হওয়ার পর না আনান বাবাকে মেনে নিয়েছে আর না মাকে ক্ষমা করেছে।তবে ছোট ভাই বোন আহান,অহনাকে যথেষ্ট স্নেহ করে আনান।
” শালিককে এনেছিস?”
” হু।ভুত ভুতের চৌদ্দ গুষ্টিকে ওর ঘাড় থেকে নামিয়েছি।তারপর বাসায় এনেছি।”
” বাসার পরিস্থিতি কেমন?”
” ঠান্ডা।ওই বুড়ি শালিককে মে*রেছিলো।এমন থে*রাপি দিয়েছি!”
” আম্মু এদিক দিয়ে রাগারাগি করছে।”
” করুক গে।নানুর মতোই হয়েছে।আগে আমায় তোমায় মামির কাছে ফেলে এখানে ওখানে যেত আর এখন তার দরদ উতলে পরে।স্বার্থপর মহিলা।”
” আমায় না হয় ঠকিয়েছে তাই আমার এত রাগ মহিলার ওপর।কিন্তু তোর এত কিসের রাগ?”
” বুঝবে না।তোমার ভাই তো।প্রকাশ করলেও সব কিছু প্রকাশ করতে পারি না।”
” খোঁচা দিলি?”
” নাহ।জেনেটিক্যাল স্বভাব বুঝাইলাম।”
” কিন্তু তুই আমি তো আলাদা।”
” বংশ তো একই। আর ভাই তো ভাই ই।মাঝে মাঝে নিজেকে অনেক লাকি লাগে যে আমি তোমার মতো ভাই পেয়েছি।”
” তিনটা বাজে ঘুমা।”
” আচ্ছা ভাইজান!”
চলবে,,ইনশাআল্লাহ
#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
পর্ব৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
” হ্যাঁ রে শালিক তুই নাকি তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলি?খুব তো ভাব দেখাতি।কিন্তু তলে তলে যে এত কিছু করলি আমরা তো টেরও পেলাম না।”
সহপাঠীদের এমন কথায় খানিকটা হকচকিয়ে যায় শালিক।আজ তিন দিন পর সে স্কুলে এলো।মন ভালো করার জন্য ইই বলতে গেলে এক প্রকার জোর করেই আহান শালিককে স্কুলে রেখে যায়।কিন্তু স্কুলে এসে মন ভালো তো দূরেই থাক।এই মুহুর্তে শালিকের আ*ত্মহ*ত্যা করতে ইচ্ছা করছে।বাস্তবতা এত কঠিন শালিকের জানা ছিলো না।যাদের বন্ধু ভেবেছে তাদের ইই কথার আঘাতে শালিকের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।
আসলে দুনিয়াতে কেউ কারও আপন না।সব মরিচীকা।
শালিক চোখ বন্ধ করে ব্রেঞ্চে মাথা রাখে।চোখ দিয়ে অনবরত নোনা জল গড়িয়ে পরে।স্কুলের ওয়াশরুমে চলে যায় শালিক।ওয়াশ রুমে গিয়ে ওয়াশ রুমের দেয়ালে অনবরত ঘু*ষাতে লাগে শালিক।এক সময় চামড়া ফে*টে রক্ত ঝড়তে লাগে।যেহেতু শালিক হিমোফোবিয়ায় আক্রান্ত তাই রক্ত দেখেই ওর শরীর কাঁপতে লাগে।যত দ্রুত সম্ভব রক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে তার ওপর টিস্যু চাপা দেয়।
কোনো রকমে সেদিন শালিকের দিনটা যায়।ক্লাসের লাস্ট ব্রেঞ্চে মাথা রেখেই পুরো পিরিয়ড কাটিয়ে দেয় শালিক।স্কুল ছুটি হলে স্কুল থেকে বের হয়ে শালিক আহানকে দেখতে পায়।
” ভাইয়া?”
” হু। ফিজিক্স প্রাইভেট শেষ।তোর স্কুল ছুটিরও সময় হয়ে গেছে।তাই ভাবলাম নিয়ে যাই তোকে।”
শালিক আর কথা না বাড়িয়ে বাইকে উঠে।আহান বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে,,,
” কেমন গেলো সারাদিন?”
” আলহামদুলিল্লাহ।”
খানিকটা উদাস কন্ঠেই বলে শালিক।আহান আন্দাজ করতে পারে শালিকের মন ভালো নেই।খানিক দূরে যাওয়ার পর আহান বাইক থামায়।
” থামালে যে!”
” নাম।দরকার আছে।”
শালিক নামে।আহান বাইকটাকে পার্কিং করে শালিককে বাইকের পাশে দাঁড়াতে বলে যেন কোথায় যায়।শালিকের দাঁড়ানো স্থানের পাশেই ছিলো একটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ।সেই গাছের ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো রাস্তা।শালিক রাস্তা থেকে কয়েকটা ফুল তুলে আনমনে দেখতে লাগে।
” তোর হাতে কি হয়েছে?”
আহানের আকষ্মিক প্রশ্নে খানিকটা কেঁপেই ওঠে শালিক।শালিক কিছু বলার আগেই আহান এসে ওর হাতটা ধরে।
” এমন হলো কিভাব?গায়ে এতই জোর দেওয়ালে ঘু*ষি দেস।”
” রাগ উঠলে শরীরে আপনা আপনিই শক্তি চলে আসে।”
নিম্নস্বরে বলে শালিক।আহান ভ্রু কুঁচকে বলে,,,
” রাগ উঠলো কেন?”
” ওইযে ওরা!খোঁচা দিয়ে কথা বলছিলো অনেক।”
” তাই তুই এত সুন্দর হাতটাকে এভাবে আঘাত করবি?”
” যে হাত ভুল মানুষের হাত ধরে সে হাত কিভাবে সুন্দর হয় বলতে পারবে আহি ভাইয়া?”
আহান শালিকের এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না বেশ ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা ভেতর ভেতর একদম ভালো নেই।বেশ বড় সড় আঘাত পেয়েছে মেয়েটা।আহান শালিকের মন অন্যদিকে নেওয়ার জন্য আলতো করে ওর মাথায় থাপ্পড় মারে।শালিক ❝আহ❞ বলে উঠে।আহান প্যাকেট থেকে শালিকের হাতে আইসক্রিম দিয়ে বলে,,,
” খা।গিল।মন শরীর মাথা সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
_________💗
জুনের শুরু।সূর্যের তেজে প্রকৃতি মৃত প্রায়।মাইগ্রেনের তীব্র ব্যাথায় শালিক আর আজকে স্কুলে যায় নি।তার মধ্যে চলছে পিরিয়ড। মনে হচ্ছে পেটে কেউ সজোরে হাতুড়ি পেটা করছে।ঘরের সব জানালা দরজা বন্ধ করে অন্ধকারে শালিক শুয়ে আছে। বমি বমি ভাবও আছে কিছুটা। ভাবনা শেষ হতে না হতেই শালিকের মুখ ভরে বমি আসে।ছুটে যায় সে ওয়াশ রুমে।ওয়াশ রুমের পাশেই দাদির রুম।শালিককে মুখ ভরে বমি করতে দেখে দাদির মাথায় হাত।চিৎকার চেঁচামেচি লাগিয়ে দেন তিনি।
” ওরে খোদারে!সব্বনাশ হইয়া গেছে।মাইয়াডায় আকাম কুকাম কইরা পেডের মইধ্যে বাচ্ছা ভরছে রে।শ্যাষ শ্যাষ। আমগো সব শ্যাষ।”
বাথরুম থেকে শালিক সব ইই শুনছিলো।রাগে ওর গা কাঁপতে শুরু করে।শ্বাশুড়ির চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মিসেস শান্তা ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
” কি হয়েছে মা?”
” কি হইছে তোমার মাইয়ারে জিগাও গা।আমারে জিগাও ক্যা।কইছিলাম বিয়া দিয়া দেই গা।কেরা হুনে কার কতা।এহন মান ইজ্জত লইয়া টানাটানি। তোমার মাইয়া পেডের মইধ্যে বাচ্ছা ভরছে।”
শ্বাশুড়ির কথা শুনে মিসেস শান্তা ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।পাগল তার শ্বাশুড়ি না কি সে নিজেই নাকি শালিক তার বুঝে আসে না।দৌড়ে ওয়াশরুমে মেয়ের কাছে যান।গিয়ে দেখেন শালিক হাত মুখ ধুচ্ছে।শালিক কোনো কথা না বলে বাথরুম থেকে বেরিয়ে যায়।বেরুতে না বেরুতেই দাদির কথা আবার শুরু হয়,,,
” কই তোর নাঙে কই?পেডের মইধ্যে বাচ্ছা ভইরা দিয়া কুনু পলাইছে?”
” চুপ! আর একটাও যদি উলটা পালটা কথা বলছো বুড়ি!”
” হ হাছা কতা তো উল্ডাপাল্ডা লাগবোই।”
” তুমি মনে হয় আমার পেটের ভেতর ঢুকে বাচ্চা দেখে আসছো।জীবনে এই লেভেলের ইই ভাই কনফিডেন্স দরকার।পিরিয়ড চলছে আবার বাচ্চা!আব্বু ফুপি যখন পেটে তখন তোমার পিরিয়ড হতো?ব*ল*দ হতে পারি কিন্তু তাই বলে অতটাও ব*ল*দ না যে জানবো না প্রেগ্ন্যাসির সময় মানুষের পিরিয়ড অফ থাকে।”
শালিকের কড়া কথায় দাদি চুপ হতে বাধ্য হয়।শালিক চুলের খোঁপা করতে করতে ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
_____💗
রেস্ট্রুরেন্টে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আনান।অর্ডার কৃত খাবার এখনো আসে নি ।পকেট থেকে লাইটার বের করে সিগারেত ধরিয়ে কয়েকটা টান দিতেই মেয়েলি কন্ঠস্বর আহানের কর্ণকুহরে বাজে।
” স্কিউজমি স্যার।এখানে স্মোকিং এলাও করা হয় না।”
মেয়েলি কন্ঠস্বরটাকে অনুসরণ করে তার দিকে তাকাতেই আনান শ্যাম বর্ণের একটি মেয়েকে দেখতে পায়।লম্বা চওড়া গরণের মেয়েটির পরনে ছিলো ওয়েটারদের ইউনিফর্ম।ঠোঁটে ন্যুড কালারের গোলাপি শ্যাডের লিপস্টিক আর কিঞ্চিৎ হাসি।আনান ড্যাবড্যাব করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে।আনানের তাকানোতে মেয়েটা কিছুটা ইতস্তত বোধ করে।নার্ভাস কন্ঠে বলে,,,,
” সরি স্যার?”
আনান কোনো কথা বলে না।এক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাক।মেয়েটা আরও ইতস্তত বোধ করে।আনানের থেকে কোনো রেস্পন্স না পেয়ে মেয়েটা চলে যায়।আনান তখনও এক দৃষ্টিতে মেয়েটার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।আনানের এরূপ আচরণে আনানের বন্ধুরাও বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরে।
” শা*লা আর জীবনে মেয়ে দেখিস নাই!এমন করে মেয়ে দেখার কি আছে?”
তুষার বলে।আনানের ঘোর তখনও কাটে নি।বাধ্য হয়ে আনানের পিঠের মধ্যে চ*ড় ইই মারে তুষার।হকচকিয়ে উঠে আনান।
” ক…ক…কী হয়েছে?”
” ঘোড়ার ডিম।মেয়েটাকে এভাবে দেখার কি ছিলো?”
” অনে…ক কিছু ছিলো।”
” তোর শা*লা এখনো ঘোর কাটে নাই!”
তুষারের কথা শেষ হতে না হতেই ওই মেয়েটা খাবার নিয়ে আসে।টেবিলে রেখেই সে চলে যাচ্ছিলো।এমন সময় আনান মেয়েটাকে পেছন থেকে ডাক দেয়।
” স্কিউজমি মিস।”
মেয়েটা থেমে যায়।আনান মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।মেয়েটা সন্দিহান দৃষ্টিতে আনানের দিকে তাকায়।
” আপনার নামটা জানতে পারি?”
মেয়েটা আপাদমস্তক আনানকে পর্যবেক্ষণ করে বলে,,,,
” জুঁই।”
” আগে পরে কিছু নাই?”
” ফারজানা হক জুঁই। ”
” থ্যাংক ইউ।”
কথাটা বলে আনান চলে যায়।জুঁই তীর্যক দৃষ্টিতে আনানের দিকে চেয়ে থাকে।যত্তসব! বড় লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া ছেলে।মেয়ে দেখলেই ময়লা পাখির মতো ছলাৎ ছলাৎ করে নাচে।
খাওয়া শেষ হলে বিল পে করে আনান ও তার বন্ধুরা বের হয়। বের হওয়ার সময়ও আনানের চোখ জোড়া সেই প্রেয়সীকেই খুঁজছিলো।পেয়েও যায়।সহকর্মীর সাথে গল্প গুজবে ব্যস্ত। শ্যামাঙ্গিনীর শান্ত শীতল স্নিগ্ধ হাসি আর কারও মনে ঝড় না তুললেও আনানের হৃদয়ে তীব্র ঝড় তুলে।লাভ এট ফার্স্ট সাইড বোধহয় একেই বলে।মরুভূমির বুকে এভাবেও শ্রাবণের প্রেম বর্ষণ হতে পারে?
আনানের চাহনী দেখে তুষার বুঝতে পারে আনানের মনে কিছু একটা চলছে।কাঁধ দিয়ে আনান কে ধাক্কা দেয়।
” কিরে?তোর মতো ছেলের মনেও বসন্ত এলো নাকি?নাম্বার এনে দেবো?”
” আরেহ না!মোহও হতে পারে।”
চলবে,,ইনশাআল্লাহ