মিঠা প্রেম পর্ব -২২+২৩

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট২২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

আহান শালিক আনান বা জুঁই কাওকেই কিছু জানায় না।আহান সরাসরি বাবা আশরাফ সাহেবকে বিষয়টা জানায়। আশরাফ সাহেব কোনো আপত্তি করেন না।ছেলের ভালো থাকা তার কাছে সবার আগে।যদিও আনান তার সন্তান নয়।কিন্তু বাধ সাধে মিসেস লাকী আর অহনা।তারা কিছুতেই সদ্য বিধবা মেয়েকে আনানের বউ হতে দেবে না। না মানে না।

মেয়ে মানুষ জাতটা খুব অদ্ভুত।নিজেদের জাতের ইই আরেকজনের ভালো এরা দেখতে পায় না।সহ্য করতে পায় না।উঠে পড়ে লাগে এরা নিজেদেরই জাতে থাকা মানুষটার ক্ষতি করার জন্য।বা তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।

আশরাফ সাহেব স্ত্রী আর মেয়ের কথা গায়ে না মেখে জুঁইয়ের মামা-মামীর কাছে আনান জুঁইয়ের বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।বিধবা ভাগ্নির জন্য এমন ঘর এমন ছেলের থেকে প্রস্তাব আসায় তারাও আর দ্বিমত প্রকাশ করে না।

আনানকে এক প্রকার ভুলিয়ে ভালিয়ে মিথ্যে কথা বলেই যশোর থেকে আনা হয়।নির্ধারিত দিনে পরিবারের সবাই বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েই জুঁইয়ের মামার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

বাসায় এত আয়োজন দেখে জুঁইয়ের মনে প্রশ্ন জাগে।সে অদ্রিকে জিজ্ঞেস করে,,,,

” ভাবি বাসায় কিছু হবে আজ?এত আয়োজন!”

” হু,তোমার ভাইয়ের বিয়ে দিবো।”

মজা করে বলে অদ্রি।জুঁই মৃদু হাসে।তৎক্ষনাৎ অদ্রির মনে পরে শালিক জুঁইয়ের জন্য একটা লাল জামদানী শাড়ি কিনে পাঠিয়েছে।অদ্রি হাত ধুয়ে জুঁইকে নিয়ে নিজের ঘরে যায়।আলমিরা থেকে প্যাকেটে মোড়ানো শাড়িটা জুঁইয়ের হাতে দিয়ে বলে,,

” এটা নাও।”

জুঁই কিছু না বলে আগে প্যাকেটটা ছিড়ে।লাল জামদানী শাড়ি দেখে তার মাথায় হাত।বিধবা মেয়ে হয়ে কিভাবে সে এমন উজ্জ্বল রঙের শাড়ি পরবে?সমাজ কি বলবে?সবচে বড় কথা ওকে মানাবে তো? একে তো সাত মাসের অন্তসত্ত্বা তার ওপর বিধবা।নিজের কাছেই তো বিষয় টা বেমানান লাগবে জুঁইয়ের।আর আকাশ নেই।লাল শাড়ি পরলে এখন কে ইই বা দেখবে জুঁইকে?

” ভাবি বিধবা হয়ে লাল শাড়ি?”

” পরবে।এটা তেইশ সাল।এখন এইগ্লা কেউ মানে না।”

” কিন্তু আমার কাছেই তো বিষয়টা হ্যালাল্যালা লাগছে।”

” লাগলে লাগুক গে।নীল পরতে বলেছে তোমায়।এটা তুমি পরবে।আর হ্যাঁ শ্যাম্পু করিও আজকে।বাসায় একটা অনুষ্ঠান মানুষজন আসবে।তেল ওয়ালা মাথায় ঘুরে বেড়িও না।আর তাড়াতাড়ি গোসলটা সেড়ে নাও।”

” বেড়ালেই কী?কে দেখবে আমায়?”

” আমরাই দেখবো।আর তুমি কিন্তু ইদানীং বেশি তর্ক করছো জুঁই।চুপচাপ কথা শুনবে না হলে সিরিয়ালের ভাবীদের মতো করবো।”

হেসে বলে অদ্রি।জুঁইও হাসে।

_____★

অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আনান পরিবারের সাথে দাওয়াত খেতে আসে।আশরাফ সাহেবের বন্ধুর বাসায় আনানকে কেন আনতে হবে। ড্রয়িংরুমের সোফায় গিয়ে সবাই বসে।অদ্রি নাস্তা এনে পরিবেশন করে।এ পর্যন্ত ঠিক ইই ছিলো।কিন্তু আনানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে নীলকে দেখে।জুঁইয়ের সাথে সর্বশেষ যখন কথা হয়েছিলো সামনাসামনি তখন নীল ছিলো সাথে।যদিও চেহারা সঠিক ভাবে আনানের খেয়াল নেই।কিন্তু তাও আন্দাজ বলছে এ নীল ইই।জুঁইয়ের মামাতো ভাই।তাহার সাথে পাঞ্জাবি পরা দাড়ি ওয়ালা এক মধ্যবয়সী লোক।এই লোক কাজী নন তো?আনানের পরিবার কী কোনো ভাবে ওকে মাইনকার চিপায় ফেলে বিয়ে দিতে চাচ্ছে?জুঁইয়ের সাথে?দিলে অবশ্য সমস্যা নেই।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জুঁই আনানকে মেনে নিবে তো?যে ব্যবহার করেছে আনান জুঁইয়ের সাথে তাতে মনে হয় না জুঁই আনানকে ক্ষমা করবে।

কাজী সাহেব বসলেন।আদ্রি জুঁইকে ঘুর থেকে নিয়ে আসে।আনানকে দেখে জুঁইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।আনান?আনান এখানে কি করছে? করুণা করতে এসেছে?লাগবে না জুঁইয়ের আনানের করুণা।আগে যেভাবে পাগলের মতো আনানকে জুঁই ভালোবাসতো এখন তার কয়েকগুণ আনানকে ঘেন্না করে।যখন থাকতে চেয়েছে জুঁই তখন তো ঠিক ইই মানবতা দেখিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলো।আজ কেন এসে?

অদ্রি জুঁইকে নিয়ে বসায়।কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করতে যাবেন ঠিক সেই মুহুর্তে আনান তাকে থামিয়ে দেয়।

” এই বিয়েতে আমার আপত্তি নেই।কিন্তু কনের সাথে আমার কিছু কথা আছে।যা আমার কাছে অতি জরুরি।একটা সম্পর্ক শুরু করার আগে বিপরীত পাশের মানুষটারও মতামত নেওয়া উচিত। যেহেতু দুইজনের ইই সমান দায়িত্ব থাকে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার!”

আনানের অনুরোধ রাখা হয়।দু’জন কথা বলার জন্য আলাদা ঘরে সুযোগ পায়।জুঁই আনানের দিকেও তাকায় না।অভিমানে।আনান অপরাধবোধ নিয়ে বলে,,,

” দেখো তোমার সাথে আমি যা করেছিলাম সেটা অন্যায়।কিন্তু আমিও তখন নিরুপায় ছিলাম।টক্সিক ফ্যামিলিতে তোমায় নেবো তারমধ্যে আমি বেকার।”

” নিবেন না তো আসছেন কেন আজ?”

” কারণ এখন বেকার নই।”

” টাকা পয়সাই ইই কি সব?”

” সব না আবার সবও।”

জুঁই অভিমানে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।আনান আবার বলে,,

” দেখো ওপরওয়ালা আমায় একটা সুযোগ দিয়েছেন প্রায়শ্চিত্ত করার।তুমি প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না।”

” সেদিন আমিও এভাবে বলেছিলাম।শুনেছিলেন আপনি আমার কথা?ঠিকই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমায়।অবশ্য ভুল কিছু করো নি বটে!প্রায় ছেলেই প্রেমিকার সাথে এমন ব্যবহার করে যাতে প্রেমিকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়!এবং পরে ঐসব ছেলেরা ইই বলে বেড়ায় নারী ছলনাময়ী, নারী বেঈমান। সেখানে তুমি আমায় সরাসরি চলে যেতে বলেছো।একড়ু তো বাহবা পাও তুমি!”

” আজীবন এটার খোটা শুনতে আমি রাজী।কিন্তু হাতের কাছে তোমায় এভাবে পেয়ে আমি হারাতে রাজি না।লিপস্টিকের গ্যারান্টি দিতে পারবো না।তবে তোমার চোখের কাজল নষ্ট হতে দেবো না আর তোমার বাচ্চার মুখের হাসি।বাবার অভাব কখনো বুঝতে দেবো না তাকে।যদিও আমি কখনো আকাশ হয়ে উঠতে পারবো না।তবে নিজের দিক থেকে আমি সর্বচ্চো চেষ্টা করবো।কথা দিলাম।”

” এর আগেও তো একবার কথা দিয়েছিলেন শেষটা অবধি পাশে থাকবেন।মিস্টার শেহজাদ আনান,মুখে কথা দেওয়াটা যত সহজ কথা রাখা ততটা সহজ না।”

” এইবার শেষ অবধি থাকার চেষ্টা করবো।জীবন দিয়ে হলেও রাখবো আমি আমার কথা।”

জুঁই কিছু বলে না।অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয়।আনান হাঁটু গেড়ে বসে।

” ফাঁ সি র আসামীকেও ক্ষমা চাওয়ার,প্রায়শ্চিত্তের সুযজগ দেওয়া হয়।আমি কি এত বড়ই অপরাধ করেছি?যে আমি কিছুই পাবো না?”

জুঁই এবারও চুপ। কিছু না বলেই সে বেরিয়ে যায়।আনানও পিছন পিছন বের হয়।জুঁই বিয়েটা ভেঙে দেবে না তো?আনানের মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়।

” কাজী সাহেব?”

কথাটা জুঁইয়ের মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়া মাত্রই আনানের হৃদস্পন্দন ক্রমশ বাড়তে লাগে।জুঁই বিয়েটা ভেঙে দিলো বলে।নারী এমন ভয়ংকর হতে পারে আনান কল্পনাও করে নি।হয়তো আনান তার কর্মফল পাবে এবার!

” এই বিয়েতে আমরা দুইজন ইই রাজি।আপনি আনুষ্ঠানিকতা শুরু করুন।”

আনানের চক্ষু চরক গাছ।ভুল শুনেনি তো আনান?নাকি এটা দিবা স্বপ্ন?কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর কার্যক্রম শুরু করেন।তিন বার কবুল শব্দ উচ্চারণ করে আনানের কাছে নিজেকে সঁপে দেয় জুঁই।আর জুঁইয়ের কাছে আনান নিজেকে।

চলবে,, ইনশাআল্লাহ#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব২৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

আহান শালিক বধূবরণের প্রস্তুতি নিতে আগে ভাগেই বাসায় চলে আসে।মিসেস লাকীর যদিও কোনো ইচ্ছা নেই জুঁইকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেওয়ার তাও পরিস্থিতির চাপে পরে নিতে হয়।শালিক নিজের হাতে সব কিছু গুছায়।আহান সাথে সাহায্য করে।শালিক ফুলের পাপড়ি ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,

” দেখেন শ্বাশুমা,আমি আপনার ভাইঝি।তাই আমার সাথে যা খুশি তাই করেছেন আমি তেমন কিছু বলিনি।জুঁই আপু প্রেগন্যান্ট সাথে মা হারা মেয়ে।একটু আপন করে নিয়েন।তাতে দেখবেন সবার ইই ভালো।”

” তুই আমার বড় না আমি তোর বড়।”

মিসেস লাকী বিরক্ত নিয়ে বলে।শালিক মৃদু হেসে বলে,,

” অবশ্যই আপনি বড়।তাই বলে যে অন্যায় করবেন তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।নেহাৎ ইই আপনি আমার ফুপি আগে তারপর শ্বাশুড়ি।তাই কিছু বলি নি।না হলে….”

শালিক থেমে যায়।মিসেস লাকী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে বলে,,

” না হলে কি?”

” বয়স তো কম হলো না। কিছু কথা বুঝে নাও।তুমি আর শালিক কিন্তু একই ঘরের মেয়ে আম্মু।দাদির সাথে কেমন করতে মনে করে দেখো।”

সিরামিকের পিরিচে মিষ্টি রাখতে রাখতে বলে আহান।মিসেস লাকী ভেংচি কেটে ভেজা ঢোক গিলেন।

_____★

জুঁইকে নামমাত্র তুলে আনা হয়।পরে আবার আনান জুঁইকে নীল আর অদ্রির হাতে তুলে দেয়। নিজ বাড়িতে মা বোনের কারণে জুঁই,জুঁইয়ের বাচ্চাকে নিয়ে আনানের মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়।আনানের পোস্টিং দূরে হওয়ায় লং জার্নির জন্য আনান জুঁইকে সেখানে নেয় না।এমনিতেই জুঁই অসুস্থ তার ওপর লং জার্নি করা ওর, বাচ্চার জন্য ভালো হবে না।তারমধ্যে আয়রন স্যালাইন নেওয়ার কারণে ওর শরীর প্রায়ই দূর্বল থাকে।

আনান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাছে কোথাও বদলি হয়ে আসবে।ততদিনে জুঁই নীল আর অদ্রির কাছেই থাক।সেখানে জুঁইয়ের যত্নের কোনো কমতি হবে না।

____★

” তাড়াতাড়ি উঠো।”

শালিকের এমন হুলুস্থুল কথায় আহান লাফ দিয়ে উঠে।ঘুম ঘুম চোখ দুটো ডলতে ডলতে বলে,,,

” কি হলো?”

” আগে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসো।না হলে ভাববে ইয়ার্কি করছি।”

” তুমি তো সব সময় ওইটাই করো।”

আহান উঠে ওয়াশরুমের দিকে যায়।মিনিট পাঁচেক পর তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়।বিছানায় শালিকের পাশে ধপ করে বসে বলে,,,

” এবার বলো।”

শালিক লাজুক হাসে।দুই হাত দিয়ে নিজের লাজুক মুখশ্রী সে আড়াল করে ফেলে।

” ড্রামা কুইন একটাকে বিয়ে করছি!এত ড্রামা পারে!”

শালিক অভিমান করে আহানের এ হেন কথায়।কন্ঠে তীব্র অভিমান নিয়ে বলে,,

” গুড নিউজ শোনা লাগবে না।ঘুমাও গে আবার।”

” এখন আবার অভিমান করে!”

” শোনো অভিমানী হওয়াটাই মেয়েদের ধর্ম। সৃষ্টিকর্তা নিজেই তাদের অভিমানী রূপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। ঢং করবে, ন্যাকামি করবে,চিল্লাবে, অযথা রাগ করবে, সামান্য কথায় চোখে জল চলে আসবে, হুটহাট অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।
রাগে ফুলে যাওয়া নাক, দিঘির মতো জলে টইটম্বুর চোখ, লাজে লাল হয়ে যাওয়া গাল, মোহনীয় দৃশ্য সামলে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারলেই তুমি প্রকৃত পুরুষ। না হলে ভ্যাগাবন্ড।”

” ইদানীং বড় বড় শক্ত শক্ত কথা বলছো অনেক।”

” বলবো না?বড় হয়েছি।”

” শরীরে!ভিত্রে বাচ্চাই রয়ে গেছো।”

” গুড নিউজ দিতে ঘুম থেকে তুললাম।তা না ভদ্রলোক ঝগড়া করছে।”

অভিমান আর বিরক্তি নিয়ে বলে শালিক।এতক্ষণ আহান শব্দটা খেয়াল করে নি।শালিকের মুখে গুড নিউজ কথাটা শোনা মাত্রই আহানের কৌতুহল বেড়ে যায়।কি গুড নিউজ?এলাকায় শালিকের কুত্তা স্কোয়াডে আরও একটা কুকুর এসেছে কি?মেয়েটার কাছে তো এগুলোই গুড নিউজ হয়।আহান শান্ত হয়।অভিমানি শালিককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,,,

” কি গুড নিউজ।”

” কংগ্রাচুলেশনস ডাঃ শেহজাদ আহান।আপনাকে আব্বা ডাকতে একজনকে আল্লাহ একটু একটু করে পাঠাচ্ছেন!”

_____★

কাল থেকে শালিকের মুড অফ।ঠিক মতো কথা বলছে না।খাচ্ছে না কিছু।মুড অফের কারণ জিজ্ঞেস করলেও আহানের দিকে ধেয়ে যায়।মাঝে মাঝে কি যে হয় না মেয়েটার আহান ভেবে পায় না।রাতে বাসায় যাওয়ার সময় শালিকের জন্য আহান চিকেন মোমো আর চটপটি নিয়ে যায়।যথারীতি কলিংবেল দেওয়া মাত্রই শালিক দরজা খোলে। তবে বেজায় মুখ নিয়ে।আহান রান্নাঘরে চলে যায়।মোমো গুলো প্লেটে আর সাথে দেওয়া চাটনিটাকে আলাটা ছোট বাটিতে নিয়ে খেতে বসে।শালিকের সামনেই।জানে আহান শালিকের মোমো খুব প্রিয়।আগে রাগ করলে তাও চুমু দিয়ে আহান রাগ ভাঙাতো শালিকের।কপালে আলতো করে চুমু দিলেই শালিকের সব রাগ গলে যেত।কিন্তু এই দুইদিন আহান কাছে গেলেই শালিক কেন যেন তেলে বেগুণে জ্বলে উঠে।তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হলো।

আহান শালিককে দেখিয়ে মোমো খেতে লাগে।

” আহ!গরম গরম মোমো সাথে ধনেপাতার চাটনী!”

শালিকের লোভ লাগে।শালিক নিজেকে নিয়ন্ত্রণের বৃথা চেষ্টা করে।

” একটা দেও না।একটু চেখে দেখি।”

শালিকের কথায় আহানের পেট ফেটে হাসি আসে।মেয়েটা বাচ্চাই রয়ে গেলো।আহান হাসি চেপে বলে,,,

” পুরোটা দেবো তার আগে বলতে হবে মেডামের মুড অফ কেন?”

” আমি কেম্নে জানবো?”

” তোমার মুডের খবর তুমি জানবে না?”

” সত্যি আমি জানি না।ইদানীং হুদাই কিছু ভাল্লাগে না।”

” আচ্ছা।আর বলতে হবে না।নে এখন খা।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

_____★

হসপিটালের করিডোরে পাইচারি করছে নীল,অদ্রি,আহান,শালিক।অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে জুঁইয়ের চিৎকার ভেসে আসছে।আনান এখনো পৌঁছে সাড়ে নি।ভোর থেকেই জুঁইয়ের প্রসব বেদনা উঠে। তখনই আনানকে খবর দেওয়া হয়।আনান জুঁইকে হাসপাতালে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রওনা দেয়। জুঁইয়ের চিৎকার শুনে একদিকে যেমন শালিকের জুঁইয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে অন্যদিকে তেমন নিজের জন্যও ভয় লাগছে।

” এত কষ্ট জানলে জীবনেও আহানকে বলতাম না আব্বা আম্মা ডাকবে এমন কেউ লাগবে।এডপ্ট নিতাম।আপুর চিৎকার শুনে আমারই তো জান যায় যায় অবস্থা!আল্লাহ সহায় হও।”

শালিকের বিড়বিড়ানি শুনে এই পরিস্থিতেও আহানের পেট ফেটে হাসি আসে।এই মেয়ে নাকি দুইদিন পর বাচ্চার মা হবে!শালিককে হয়তো নিয়ে আসা ঠিকও হয় নি।মেয়েটার ভিতর ভয় ঢুকে গেছে।শালিক ঢোক ঢোক করে এক বোতল পানি সাবাড় করে ফেলে।হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে ঠোটের ওপরি ভাগে লেগে থাকা জলকণা মুছে ফেলে।শুকনো ঢোক গিলে আহানকে জিজ্ঞেস করে,

” আচ্ছা কোনটায় বেশি কষ্ট নরমাল না সি সেকশন?”

শালিকের আকষ্মিক প্রশ্নে আহান চমকে যায়।ঝাড়ি দিয়ে বলে,

” এমন ভাবে জিজ্ঞেস করলে মনে হয় আমি আগে বাচ্চা জন্ম দিয়েছি!”

” ডাক্তার হয়েছো এইটুকু বলতে পারো না?হাতুড়ে ডাক্তার কোথাকার।”

” নরমাল ডেলিভারিতে টেম্পোরারি পেইন পাবি আর সি সেকশনের পেইন আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে!সিদ্ধান্ত নাও।সময় আছে ভাবার অনেক।”

” এইটাই ফার্স্ট এইটাই লাস্ট।এরপরে বাবু এডপ্ট নেবো।”

আহান মুখ টিপে হাসে।এরই মধ্যে আনান আসে।কয়েকদিন যাবৎ বৃষ্টি হওয়ায় বেশ ঠান্ডা পরেছে।তাও এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় আনান ঘেমে একাকার।আতঙ্কিত কন্ঠে বলে,,,

” কে চিৎকার করছে আহান?”

” ভাবী।”

আহানের কথা আনানের কর্ণকুহরে পৌঁছা মাত্রই আনানের শরীর কেমন করতে লাগে।কিছু বুঝে উঠার আগেই ধপ করে মেঝেতে পরে যায় আনান।নীল আহান গিয়ে আনানকে ধরে।আহান তটস্থ গলায় শালিককে পানি আনার নির্দেশ দেয়। শালিক আনানের মুখে পানির ছিটা দেয়।আনানের জ্ঞান ফিরে।আহান নীল ওকে ধরে তুলে বসায়।আহান খোচা মেরে বলে,

” শা লা তুমি নাকি পুলিশ অফিসার।বউয়ের লিভার পেইনের চিৎকার শুনেই মাথা ঘুরায় পরে গেলা!”

অদ্রি আনানের কান্ডে মুখ টিপে হাসছে।শালিকও একটু মজা নিতে যাবে ঠিক সেই সময় অটি থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।আহান উঠে ওটির কাছে যায়।ডাঃকামনা নবজাতককে নিয়ে বের হয়।

” ভাইঝিকে পরে নিবি।আগে মিষ্টি খাওয়া।”

ডাঃকামনা আহানের বন্ধু।তার পরামর্শে এবং তার তত্ত্বাবধানে থাকার কারণেই এই সিসেকশনের যুগে জুঁইয়ের নর্মাল ডেলিভারি হলো।আহান দৌড়ে মিষ্টি আনতে যায়।আনান উঠে যায় নবজাতককে কোলে নিতে।

” সাবধানে ভাইয়া।বাবুকে দেখে আবার ফিট খেয়ো না।জুঁই আপুর মতোই হয়েছে নিশ্চয়ই।”

শালিকের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।ডাঃকামনা হাসতে হাসতে বলেন,,,

” শী ইজ সো লাকি।এমন লাইফ পার্টনার পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।”

” ডাঃ পেশেন্টের কি অবস্থা?”

” আলহামদুলিল্লাহ।কেবিনে তাকে শিফট করা হয়েছে। স্যালাইন চলছে।তবে উনার যেহেতু হিমোগ্লোবিন কমে যেত প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তাই বেশি বেশি আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে।”

” আমি কি যেতে পারি?”

” শিউর।”

আনান নবজাতককে কোলে নিয়ে কেবিনে যায়।জুঁই তখন ক্লান্ত।একদম নেতিয়ে পরেছে।আনানকে দেখে তার মুখে হাসি ফোটে।আনান নবজাতককে জুঁইকে দেখিয়ে বলে,,,

” তোমার মতো পরী এসেছে।জুনিয়র জুঁই এসেছে।দেখো কেমন করে ঘুমিয়ে আছে।একদম তোমার জেরোক্সকপি।”

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here