এক পা নড়লে জাস্ট গুলি করে মাথা থেকে খুলিটা উড়িয়ে দিবো।
লোকটার এমন কথা শুনে এক প্রকার কেঁপে উঠলো কুহেলি।একজন কালো হুডি পড়া লোক তার মাথায় বন্দুক চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।লোকটার কণ্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে পঁচিশ থেকে ছাব্বিশ বছরের যুবক হবে।তবে সে যে কতোটা ভয়ঙ্কর তা হারে হারে টের পাচ্ছে কুহেলি।
কি হলো মাই ডেয়ার কুহুপাখি?তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো?(লোক)
কুহেলি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো,
কে আপনি?(কুহেলি)
উপ্স তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?তোমাকে তো আমি কিছু করবো নাহ্।জাস্ট ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো।(লোক)
কুহেলি নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললো,
দেখুন আমাকে ছেড়ে দিন।নাহলে কিন্তু আমি আমার বাবাকে খবর দিবো।(কুহেলি)
লোকটা জোরে হেসে দিলো।হাসি থামিয়ে বললো,
তুমি আমাকে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছো?মানে তুমি নাওয়াফ চৌধুরীকে ভয় দেখাচ্ছো?(নাওয়াফ)
হ্যাঁ দেখাচ্ছি।আপনি যদি আমাকে না ছাড়েন তাহলে বাবা এসে আপনাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাবে।(কুহেলি)
ওফ!কুহুপাখি তুমি না এখনো অবুঝ শিশু।তোমার মাথায় আমি গান ধরে রেখেছি।তুমি কিভাবে তোমার বাবাকে খবর দিবে?(নাওয়াফ)
কুহেলি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কেঁদে দিলো।নাওয়াফ এক দৃষ্টিতে কুহেলির কান্না করার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা একদম বাচ্চাদের মতো।নাওয়াফ মুচকি হেসে কুহেলির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
Will you marry me Kuhupakhi?(নাওয়াফ)
কুহেলি কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,
আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো নাহ্।(কুহেলি)
তাহলে আর কি করার!জোর করেই বিয়েটা করতে হবে।(নাওয়াফ)
নাওয়াফ কুহেলির মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গাড়িতে নিয়ে বসালো।তারপরে সে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করলো।কুহেলি নাওয়াফের দিকে তাকিয়ে আছে।
কুহেলি ভ্রু কুচকে নাওয়াফের চেহারা দেখার চেষ্টা করছে।কিন্তু তা দেখা সম্ভব হচ্ছে নাহ্।মুখে রোমাল বেঁধে রেখেছে আর চোখে কালো চশমা।কুহেলি একটা জিনিস বুঝতে পারছে না রাতেরবেলা নাওয়াফ সানগ্লাস কেনো পড়ে আছে!
–
–
–
কি করতে পারো তোমরা?আমার যদি পায়ে ইনজুরি না থাকতো তাহলে এখনি গিয়ে আমার মেয়েকে খুঁজে আনতাম।(আরমান সাহেব)
স্যার আমরা কুহেলিকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।(পুলিশ)
পাবে না তো তোমরা তো একেকটা অপদার্থ।একজন-ও ঠিকভাবে ট্রেনিং প্রাপ্ত নাহ্।(আরমান সাহেব চিৎকার করে বললো)
পুরো ফোর্স ধরে চুপ হয়ে গেলো।তারা বুঝতে পেরেছে আরমান সাহেব প্রচন্ড রেগে আছেন।এই মুহূর্তে তাকে যদি আরো চটানো হয় তাহলে কপালে দুঃখ আছে।
কুহেলির মা নিরা বেগম কেঁদে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন।একমাত্র মেয়েকে খুঁজে না পাওয়া গেলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।
আচ্ছা ওর কোনো বিপদ হয়নি তো?(নিরা বেগম)
দেখো নিরা আমার কুহুর কিছু হবে না।তুমি এতোটা ভেঙে পড়ো না।আমি দেখছি।(আরমান সাহেব)
তুমি কি করবে?তুমি তো পা নিয়ে হাঁটতেই পারছো নাহ্।(নিরা বেগম)
এটাই তো সমস্যা।নাহলে এতোক্ষণে কুহুমাকে ঠিকই খুঁজে নিয়ে আসতাম।(আরমান সাহেব)
/🦋/
নাওয়াফ যে কোথায় গেলো কে জানে?যা রেগে বাড়ি থেকে বের হলো।কি কান্ড না আবার বাধিয়ে বসে।(মোহিতা বেগম)
আম্মু ভয় পেও নাহ্।ভাইয়া ঠিক চলে আসবে।(নীতি)
তুই চুপ কর।তুই নাওয়াফকে চিনিস নাহ্?ও রেগে গেলে একদমই ঠিক থাকতে পারে নাহ্।(মোহিতা বেগম)
আম্মু রিলাক্স ভাইয়া চলে আসবে বলছি তো।(নীতি)
তোর বাবা যদি বেঁচে থাকতো ছেলেটা এতো অবাধ্য হতে পারতো নাহ্।আমাকে চিন্তা করাতে করাতে মেরে ফেলবে।(মোহিতা বেগম)
মোহিতা বেগম আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে তার রুমের দিকে চলে গেলেন।নীতি মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আসলে ভাইয়া এমন কেনো করে!(নীতি)
–
–
–
নাওয়াফ কুহেলির দিকে তাকিয়ে দেখে সে ভয়ে চুপ হয়ে বসে আছে।ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক।নাওয়াফ গাড়িতে তার মাথায় বন্দুক ধরে আছে।এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আরেকহাত দিয়ে কুহেলির মাথায় বন্দুক ধরে আছে।
কুহুপাখি ভয় পেও নাহ্।জাস্ট চুপ থাকো তাহলেই হবে।(নাওয়াফ)
কুহেলি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।
ওয়াও!চোখ রাঙালে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।(নাওয়াফ)
আপনি এমন মুখ ঢেকে আছেন কেনো?(কুহেলি)
কেনো তোমার কি আমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে?(নাওয়াফ)
আপনার মতো একটা অসভ্য লোককে আমার মোটেও দেখতে ইচ্ছে করছে নাহ্।(কুহেলি)
কুহেলি কথাগুলো বলে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।
Attitude.(নাওয়াফ)
নাওয়াফ গাড়ি নিয়ে কাজি অফিসের সামনে দাঁড়া করালো।কুহেলির হৃদকম্পন বেড়ে চলেছে।একজন অচেনা,অজানা লোককে সে কিভাবে বিয়ে করবে?
নাওয়াফ বন্দুকটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো।তারপরে গাড়ি থেকে কুহেলিকে নামালো।
জানো আমি না এতোটা খারাপ হতে চাইনি তোমার কাছে।কিন্তু কি করার বলো!তুমি অন্য ছেলে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে!(নাওয়াফ)
আমি অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হলে আপনার কি?(কুহেলি)
তুমি বিয়েতে রাজি হলে তো আমারই সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।কারণ আই লাভ ইউ।আই মেডলি লাভ ইউ।(নাওয়াফ)
জাস্ট স্টপ।আপনার মতো একজন অভদ্র লোকের মুখ থেকে আমি ভালোবাসি কথাটা শুনতে চাই নাহ্।(কুহেলি)
নাওয়াফ জোরে হেসে দিলো।
তেজটা হঠাৎ বেড়ে গেলো মনে হচ্ছে?(নাওয়াফ)
কুহেলি আর কিছু বললো না।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।নাওয়াফ কুহেলির হাত ধরে কাজি অফিসের ভিতরে নিয়ে গেলো।
নাওয়াফের দুই বন্ধুকে সাক্ষী হিসেবে রেখে বিয়ে করে ফেললো কুহুকে।
নাওয়াফ আর কুহু গাড়িতে বসে আছে।নাওয়াফ মুখ থেকে রুমালটা খুলে ফেললো।তারপরে সানগ্লাসটা খুলে গাড়ির পিছন সিটে ছুড়ে মারলো।
মুচকি হেসে কুহেলির দিকে তাকিয়ে আছে নাওয়াফ।নাওয়াফকে দেখে কুহেলি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
আউচ!তুমি কি আমাকে দেখে ক্রাশ খেলে কুহুপাখি?(নাওয়াফ)
নাওয়াফের কথায় কুহেলির ঘোর কাটলো।সে চোখ সরিয়ে ফেললো।
আপনি কি নিজেকে অনেক সুদর্শন যুবক মনে করেন নাকি?(কুহেলি)
তোমার চোখ দেখে তো তাই মনে হলো।(নাওয়াফ)
একদম ভুল বুঝেছেন আপনি।একদম উল্লুকের মতো দেখতে।(কুহেলি)
কুহেলির কথায় নাওয়াফের রাগ উঠে গেলো।নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,
তুমি যাই বলো নাহ্ কেনো আমি কিছুই মনে করবো নাহ্ বিকজ আই লাভ ইউ।(নাওয়াফ)
কুহু ভ্রু কুচকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।নাওয়াফ মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো।
নাওয়াফ গাড়ি নিয়ে সোজা তার বাড়িতে গেলো।বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে মোহিতা বেগম আর নীতি চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে।
আম্মু আমি চলে এসেছি এন্ড সঙ্গে করে তোমার বউমাকে-ও নিয়ে এসেছি।(নাওয়াফ)
নাওয়াফের গলা পেতে মোহিতা বেগম সামনে তাকালেন।তাকিয়ে দেখেন নাওয়াফ এক গাল হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আর তার সঙ্গে একটা মেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ানো।মোহিতা বেগম ধীর পায়ে নাওয়াফের দিকে এগিয়ে আসলেন।নাওয়াফের বলা কথাগুলো এখনো মোহিতার বেগমের কানে বাজছে।নীতি এসে তার মায়ের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়ালো।
বউমা মানে?(মোহিতা বেগম)
মানে আমার বউ।(নাওয়াফ)
এই কি সেই কুহেলি?(মোহিতা বেগম)
হ্যাঁ আম্মু।(নাওয়াফ)
মোহিতা বেগম ঠাসস করে নাওয়াফের গালে একটা চড় মারলেন।নাওয়াফ তার মায়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিস?(মোহিতা বেগম ধমক দিয়ে বললো)
আম্মু আমি কুহুকে ভালোবাসি।(নাওয়াফ)
চুপ আর একটা কথাও বলবি নাহ্ তুই।নিজের ঘরে যা।(মোহিতা বেগম)
আর কুহু?(নাওয়াফ)
সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।(মোহিতা বেগম)
নাওয়াফ একবার কুহুর দিকে তাকিয়ে দ্রুত তার রুমের দিকে চলে গেলো।
বাহ্ আমার ছেলের পছন্দ তো দেখছি মাশাআল্লাহ।মা তুমি তোমার বাবা-মার সাথে কথা বলো।আর তাদের কালকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলো।আজ রাতে না হয় তুমি আমাদের বাড়িতে থাকলে।যতই হোক তুমি আমার বাড়ির বউ।(মোহিতা বেগম)
কুহেলির মুখে হাসি ফুটলো।সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।তারপরে মেহিতা বেগমকে যেই সালাম করতে যাবে সেই উনি কুহেলিকে টেনে বুকে নিয়ে আসলেন।
তোমার জায়গা আমার পায়ে না।তোমার জায়গা আমার বুকে।(মোহিতা বেগম)
ইয়াহু!আমি ভাবি পেয়ে গেছি।(নীতি)
নাওয়াফ সিঁড়ির ধাপে দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছে।নওয়াফের মুখে হাসি ফুটলো।
যাক কাজ করতে সুবিধা হবে।(নাওয়াফ)
নাওয়াফ বাঁকা হাসি দিলো।
#চলবে……………….
#মুগ্ধতায়_তুমি🦋
#পর্ব_০১
#লেখক_ঈশান_আহমেদ