‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ’
-জান্নাত খান
পর্ব-৪|
[১৮+ এলার্ট!গল্প লিখতে যেয়ে অপ্রাসঙ্গিক শব্দ বা প্রেমের মুহুর্ত ফুটাতে যেয়ে যদি চটি নামে আখ্যায়িত করা হয়,তাই আগে থেকে সতর্কতা বানী দেয়া হলো।’]
.
প্রিশাকে ধরে এনে বেডে বসালো রাগিব।এখন তার ফুল বডি ব্যান্ডেজ মুক্ত করা হয়েছে।রাগিব ডাক্তারকে দ্রুত ভাবে ডাকতে বলেছিলো,প্রিশার চিৎকারে।
নার্স এগিয়ে এসে হাসি মুখে প্রিশাকে বললো,
-‘হাও আর ইউ ফিলিং নাও।’
প্রিশা মুখ ভেঙচিয়ে বললো,
-‘বলবো না।বাবা এই পচাঁ আন্টিকে বলো আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে।উনি আমার পা থেকে ওই সাদা সাদা কি ছিলো ওইসব ওই যে ওটা দিয়ে(ট্রে তে থাকা কেচিঁ) কাটছিলো।’
রাগিব এগিয়ে এসে বললো,
-‘উহুম মাম্মাম।উনি ভালোর জন্যই করছিলো তোমার।উনি যদি ওইগুলো না কাটতো তাহলে আমার মাম্মামের শরীরে লাল লাল র্যাশ হয়ে যেতো যে।’
প্রিশা অবুঝ ভঙ্গিতে বললো,
-‘র্যাশ কি বাবা?’
রাগিব পরলো বিপাকে।এখন র্যাশ কি সে কিভাবে বুঝাবে।অনেক টাইম নিয়ে সে বললো,
-‘লালী পরে যেতো আমার মায়ের শরীরের চামড়ায়।তখন দেখতে ব্যাড ব্যাড লাগতো।আমার মাম্মাম কে দেখতে ব্যাড লাগলে বাবার কষ্ট হতো।’
প্রিশা কি বুঝলো কে জানে,অনবরত মাথা ঝাকাতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
-‘বাবা ইজ অলওয়েজ রাইট।’
রাগিব দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মনে মনে চলছে হাজারো প্রশ্নে তুফান,
-‘চব্বিশ বছরের মেয়ে যখন ছয় বছরের মেয়ের মতো আচরণ করে কতোটা না কষ্ট হয়।এই অবস্থা যদি ওর সত্যিকারের বাবা-মা দেখতো?তারা জীবিত থেকেও মারা যেতো।’
রাগিব এইসব চিন্তা করছিলো তখন কেবিনের দরজা খুলে কেও ভেতরে আসলো।ডাক্তার এসেছে ভেতরে।
ডাক্তার এসে বললো,
-‘তো এঞ্জেলের কি অবস্থা?’
প্রিশা ড্যাবড্যাব চোখ করে বললো,
-‘এঞ্জেল মানে কি বাবা?’
প্রিশা তার বাবাকে প্রশ্নটা করে উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে রয়েছে।রাগিব বললো হেসে,
-‘আমার মা তো পরী তাই না?পরীকে এঞ্জেল বলে।’
প্রিশার চোখটা খুশিতে চকচক করে উঠেছে।মনে হচ্ছে এই খুশি থেকে হাজারো মুক্তা ঝড়ছে।
ডাক্তার বললো,
-‘কি সমস্যা হয়ছিলো।’
প্রিশাকে বুঝিয়ে একটু তাকে থামিয়ে দিয়ে,রাগিব একটু সাইড হলো ডাক্তারকে নিয়ে।ডাক্তারকে সব খুলে বললো রাগিব।ডাক্তার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে ভ্রু কুচকে সব শুনছিলো।
ডাক্তার সব শুনে বললো,
-‘আমি এরকমই কিছু এক্সপেক্ট করছিলাম।মুত্রথলিতে তার সমস্যা হবে।কারন,প্লাস্টিক সার্জারি উপর থেকে হলেও ভেতর থেকে অনেক সময় হয় না।’
রাগিব ভয় পেয়ে বললো,
-‘এখন?’
ডাক্তার বললো,
-‘প্রোপার হেলথ ট্রিটমেন্ট করানো দরকার ওর।’
রাগিব বললো,
-‘সব করবো আপনি শুধু বলেন একবার।’
ডাক্তার রাগিবের কাধে হাত দিয়ে বললো,
-‘হ্যাভ পেসেন্স!ইট উইল বি গনা ওয়ার্ক।’
রাগিব আর ডাক্তার নিজেদের মাঝে কথা শেষ করে প্রিশার কাছে গেলো।হাতের আঙ্গুল মোচড়িয়ে মোচড়িয়ে রুমের চারপাশ দেখছে।ডাক্তার এসে প্রিশার পার্লস রেট চেক করতে আসলে,প্রিশা চিৎকার দিয়ে বললো,
-‘ধরো না আমাকে।বাবা ছাড়া আমাকে কেও ধরলে আমার শরীর খুব ব্যাথা করে। ও বাবা তুমি উনাকে না করো প্লিজ।’
ডাক্তার বললো,
-‘মামুনি আমি একটুও ব্যাথা দিব না।তোমার বন্ধু আমি।আমরা একদাথে অনেক খেলবো।’
প্রিশা কান্না করে বললো,
-‘ওরাও বলেছিলো ব্যাথা দিবে না।দিয়ে…’
রাগিব অস্থির হয়ে বললো,
-‘দিয়ে কি মামুনি?বলো বাবাকে?’
প্রিশা চিৎকার দিয়ে আবার হাইপার হয়ে গেছে,
-‘কেও আসবানা আমার কাছে।আমার কাছে আসলে মেরে দিব
তোমরা সবাই আমাকে তুলে এনেছো ওইভাবে ছোয়ার জন্য তাই না।চলে যাও তোমরা।’
প্রিশা চিৎকারে দেয়ালের প্রতিটা অংশ কেপে উঠছে।রাগিব এগিয়ে আসলে, রাগিবকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় প্রিশা।
প্রিশা চিৎকার দিয়ে বললো,
-‘তোমরা কেও আমাকে ধরো না।আমি তোমাদের পায়ে ধরছি।আমি তোমাদের সামনে আর আসবো না।তোমরা আমাকে এইভাবে ছুইয়ো না সবাই মিলে।আমার মা আমার জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।’
প্রিশার হাত জোড় করা দেখে ডাক্তার,নার্স আর রাগিবের চোখে পানি চলে আসছে নিজের অজান্তে।প্রিশার ট্রমাটা এতোই গভীর যে সে চাইলেও ফেলে আসতে পারছে না সেই স্মৃতি। থেকে থেকে মনে পরছে সব।
রাগিব এগিয়ে এসে ধরে বললে,
-‘আমি তো তোর বাবা।দেখ বাবা ছুলে কিছু হয় না।’
প্রিশা রাগিবকে কাদতে কাদতে বলে,
-‘না তোমরা আমাকে মারবে ওই যে রড দিয়ে আমি জানি।প্লিজ দেখো আমার হাত জ্বলছে তুমি যে আমাকে ধরেছো আমার শরীরের মাংস গুলো মনে হচ্ছে ঝলসে যাচ্ছে।’
রাগিব আবারো এগিয়ে আসলে প্রিশা ধাক্কা মেরে রাগিব নিচে ফেলে দেয়।রাগিব আঘাত পায় কপালে,কেটে যায় হালকা।
প্রিশা চিৎকার দিয়ে বলে,
-‘তোমাদের চলে যেতে বলছি না?চলে যাও তোমরা।কেও আসবা না।’
প্রিশাকে আবারো ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুমের দেশে পাঠালো নার্স।রাগিবকে উঠে দাড় করালো ডাক্তার।
রাগিবকে বললো ডাক্তার,
-‘এইভাবে কেমনে মেয়েটা বেচেঁ থাকবে?ওর মরণ হওয়া দরকার ছিলো তখন।এইভাবে কোন মানুষ বেচেঁ থাকতে পারে না।’
ডাক্তার বললো,
-‘আগে নিজের কাটা জায়গাতে ড্রেসিং করাবেন চলুন।’
রাগিবকে নিয়ে গেলো অন্য সেফটি রুমে।রাগিবের ড্রেসিং করাতে করাতে ডাক্তার বললো,
-‘শক্ত থাকা জীবনে অনেকবেশি জরুরি। জীবন শক্ত এমনভাবে থাকবেন যে কেও কখনো ঠুনকো কারনে আপনাকে না ভাঙতে পারে।আপনার জীবনে আপনি শক্ত আছেন এইজন্য প্রিশা জীবিত।তাই আপনাকে তার জন্য হলেও শক্ত থাকতে হবে।’
রাগিব কিছু বলছে না।তার সব ঘোলা ঘোলা লাগছে।ডাক্তার বললো,
-‘এত বড় ট্রমা থেকে বের হতে হয়তো জীবনের পুরোটা সময় লেগে যেতে পারে যদি কারোর মনে থাকে সেখানে আমাদের প্রিশা অনেক লাকি।সে ভুলে গেছে সব।থেকে মনে পরছে সব আবার ছোট বাচ্চার মতো বিহেভিয়ার করছে।সময় দেন।সময় সব ঠিক করবে।’
চলবে
[