মেঘাচ্ছন্ন আকাশ পর্ব ৬

‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ’
-জান্নাত
পর্ব-৬|

[১৮+ এলার্ট!সংলাপে বিভিন্ন ১৮+ শব্দ ব্যবহার হয়ে যেতে পারে বা হতে পারে কিংবা হবে।এইজন্য যাদের এডাল্ট শব্দ শুনতে বা দেখতে ইতস্তত বোধ হয় তারা এড়িয়ে চলুন।]
.

প্রিশার জামার উপরের দিকে টেনে খুলতে যাবে তখনই প্রিশা নিজের হাটু ভাজ করে তাৎক্ষণিকভাবে ভাবে এলেক্সের পুরুষাঙ্গে একটা পাঞ্চ দিলো।ওমনে এলেক্স জোরে চিৎকার দিয়ে বললো,

-‘ইউ স্লাট বিচ।’

প্রিশার রুম থেকে ধস্তাধস্তির আওয়াজ আর চিৎকারে রাগিবের আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে।কোন অঘটন যে ঘটে চলেছে তাতে আর বুঝতে সন্দেহ নেই।কোন্রকমে জোর দিয়ে উঠে হুংকার ছেড়ে রাগিব বললো,

-‘মার্টিল তাড়াতাড়ি বাহির হো।আর কে কোথায় আছিস বের হো।’

সবাই রাগিবের চিৎকারে হুড়মুড়িয়ে যে যার ঘর থেকে বের হলো।সবাই রাগিবকে এইভাবে রাগান্বিত ভাবে দেখে ভয় পেয়ে গেলো।

মার্টিল ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-‘কি হয়েছে স্যার।’

রাগিব রাগান্বিত স্বরে বললো,

-‘আমাকে উপরে নিয়ে চলো।আর বাকিরা পাচঁমিনিটের মাঝে লাইট অন করো।’

বাকিরা কাজে লেগে পরলো।রাগিবকে ধরে নিয়ে সিড়ে বেড়ে উপরে নিয়ে যাচ্ছে মার্টিল।

.

এলেক্স নিচে পরে গেছে ব্যাথায় কাতর হয়ে,এলেক্স পরে থাকতে দেখে প্রিশা বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে যাবে ওমনই এলেক্স প্রিশার পা ধরে হ্যাচকা টান দিলো।ধড়াম দিয়ে প্রিশা পরে গেলো।মেঝেতে দুম করে পরায় প্রিশা বেশ আঘাত পেলো মাথায়।

ব্যাথায় কুকিয়ে যেয়ে প্রিশা আওয়াজ করে বললো,

-‘আহ!’

এলেক্স বিশ্রিভাবে বলছে,

-‘এইভাবে তো তোমাকে ছাড় দিব না বেবিডল।’

এলেক্স কোনভাবে দাড়িয়ে প্রিশার পা ধরে টেনে আসলো,আবারো তার টাউজারে ফিতা খুলতে যাবে আবারো প্রিশা তার বাম পা দিয়ে এলেক্সের পেটে লাথি ফিলো।আবারো এলেক্স ছিটকে পরলো।প্রিশা কোনমতে কব্জিতে ভর দিয়ে বসলে এলেক্স আবারো উঠে এসে পিছন দিক দিয়ে প্রিশার চুল ধরে হিড়হিড় করে টানছে।

প্রিশা ব্যাথায় আর্তনাদে চিৎকার করে বলছে,

-‘আমার চুলে লাগছে ছাড়ো!বাবা আমাকে বাচাঁও।’

প্রিশার এরকম চিৎকার রাগিবের কানে আসতে বুকটা ধুক করে উঠলো তার।সে মার্টিল কে বললো,

-‘তাড়াতাড়ি চলো।আমার পায়ের ব্যাথা যত হোক দ্রুত উঠো।’

রাগিব তার নিজের ব্যাথা তোয়াক্কা না করে আরো দ্রুত বেগে উঠে যেতে লাগলো।

প্রিশার চুল ধরে এলেক্স বলছে,

-‘আমাকে মারিস শালি!দেখ তোরে কি করি।’

এলেক্স এই কথা বলে প্রিশার মাথাটা দেয়ালের কাছে যেয়ে ঠুকে দিলো।বারি খেয়ে প্রিশার কাছে মুহূর্তের মাঝে দুনিয়া অন্ধকার লাগতে লাগলো।চোখগুলো আর খুলে রাখতে সায় দিচ্ছে না।আশপাশের সবকিছু ঘোলা লাগছে।প্রিশা তার হাত দিয়ে মাথাটা ধরে নিচে পরে যেতে লাগলে,কানে তার একটা শব্দ আসে

-‘কুত্তারবাচ্চা!’

তারপর প্রিশার আর কিছু মনে নেই।নিচে পরে গেলো ধড়াস করে।

রাগিব উপরে এসে যখন দেখলো প্রিশার মাথাটাকে এলেক্স ওইভাবে আঘাত করেছে,মুহূর্তে মাঝে তার মনে হলো জানটা বেরিয়ে গেছে।যখন মার্টিল ধাক্কা দিলো তখন তার হুশ আসলো।তখনই চিৎকার দিয়ে সে বললো,

-‘কুত্তারবাচ্চা তুই আমার মেয়েকে মেরেছিস!আজ তোকে শেষ করে দিব।’

রাগিবকে দেখে এলেক্স ভয়ে জমে গেছে সাথে তো আবার বডিগার্ড মার্টিল ও আছে।আফ্রিকান নিগ্রো একটা,তার একটা পাঞ্চে সে মরে যাবে।রাগিব পাশ থেকে একটা লোহার স্ট্যান্ড নিয়ে এলেক্সের হাটুতে একটা জোরে মারলো।ব্যাথায় এলেক্স পর যেয়ে জোরে চিৎকার দিলো।

মার্টিল রাগিবকে বাধা দিয়ে বললো,

-‘স্যার আপনি ম্যামকে হাসপাতালে নিয়ে যান।এই কুত্তারবাচ্চাকে আমি দেখছি।’

মার্টিলের কথায় রাগিবের চোখ গেলো প্রিশার নিথর দেহ দেখে।কেমন প্রানহীন হয়ে পরে আছে সে।হাতে থাকা লোহা টা নিচে ফেলে,খুড়িয়ে খুড়িয়ে সে প্রিশার কাছে গেলো।হাটুর ভরে বসে প্রিশার মাথাটা নিজের কোলে নিলো।

চোখে জল জমে একাকার রাগিবে।সে বলছে প্রিশার গালে হাত দিয়ে বললো,

-‘আমার মাম্মাম উঠো।দেখো বাবা এসেছে,প্লিজ মা ওঠো। বাবার সাথে এরকম মজা কেও করে বলো?ওই রাতে বকেছি বলে তুমি রাগ করেছো।আর বকবো না মা।প্লিজ উঠো।’

প্রিশাকে এরকম নানান কথা বলতে বলতে রাগিব প্রিশার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে হাউমাউ করে কাদঁতে লাগলো।এইভাবে কাদঁতে কাদঁতে মনে হচ্ছে সেও শেষ হয়ে যাবে।

একটা সার্ভেন্ট এসে বললো,

-‘স্যার ম্যামকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন নয়তো পরে ম্যামের বড় কিছু হয়ে গেলে সমস্যা হবে।’

সার্ভেন্টের কথায় রাগিব চোখ মুছে বাচ্চাদের মতো বলছে,

-‘না না আমার মায়ের কিছু হবে না।এক্ষুনি নিয়ে যাবো আমার মা কে হাসপাতাল।আবার ভালো হয়ে যাবে আমার মা।’

রাগিব এই কথা বলে খুড়িয়ে প্রিশাকে কোলে তুলতে গেলে সার্ভেন্ট এসে ধরতে এসে বলে,

-‘দিন স্যার আমি নিচ্ছি।’

রাগিব বললো,

-‘না না।আমার মেয়েকে আমি নিবো।আমি ছাড়া কেও ওকে ধরলে আমার মেয়ে ব্যাথা পায়।পরে জেগে উঠলে আমার মা রাগ করবে।আমি নিব ওকে কোলে।’

রাগিবের এরকম অসহায় কথা শুনে সার্ভেন্টেরও না চাইতেও চোখে জল আসলো।পরিস্থিতি তাকে এখন একটা ভীতু বাচ্চা করে দিয়েছে।রাগিব প্রিশাকে কোনমতে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে গাড়িতে বসিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে তবুও মনে হচ্ছে পথ ফুরুচ্ছে না।এতো কম সময়ের রাস্তাও বিপদের সময় মনে হচ্ছে কতই না লম্বা।

রাগিন ড্রাইভার কে বলছে,

-‘একটু দ্রুত চালাও।’

.

ক্যানোলা লাগা হাতে স্যালাইন পরছে টপটপ করছে।মাথায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে শুয়ে আছে প্রিশা।আর প্রিশার চোখ খুলার অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে রাগিব।ঘুমোয় নি সারারাত ধরে একটুও সেওখানে বসে থেকে নার্স তার পায়ে ড্রেসিং ক্ক্রে দিয়েছে।পায়ে ভেইন চমকে গেছে তার।পা টাও ফুলে গেছে।ডাক্তার-নার্স অনেকে সাধলো তাকে নাস্তা করার জন্য কিন্তু না।প্রিশা চোখ খুলে তাকে বাবা ডাকবে তারপর খাবে সে।

রাতে যখন প্রিশাকে হাসপাতাল নিয়ে আসলো, প্রিশার ট্রিটমেন্ট করার ডাক্তার প্রিশাকে এমন অবস্থায় দেখে থমকে গেছে।

ডাক্তার এগিয়ে এসে বললো,

-‘কি হয়েছে প্রিশার?’

রাগিব কাদঁতে কাঁদতে বললো,

-‘আমার ফুলের মতো মেয়েকে আবার কোন এক জানোয়ার নষ্ট করতে চেয়েছিলো।প্লিজ আপনার পায়ে ধরি আমার মেয়েকে বাচাঁন।’

রাগিবের এরকম অসহায় চেহারা দেখে ডাক্তারের মনটা নিমিষে ভেঙ্গে গেলো।তিনি তাড়াতাড়ি করে প্রিশাকে ট্রিটমেন্ট কর‍তে নিয়ে গেলেন।রাগিব ক্লিনিকের রুমের বাহিরে যে চেম্বার গুলো আছে সেখানে ধপ করে বসে পরলো মাথায় হাত দিয়ে।

রাগিব বসে বিড়বিড় করতে লাগলো,

-‘এটা কি হয়ে গেলো আল্লাহ!আবারো সর্বনাশ হয়ে গেলো।’

এইভাবে নিজের তালে বুদ ছিলেন রাগিব।আশেপাশে কি ঘটছে তার খেয়াল নেই।

ঘন্টাখানেক পর ডাক্তার বের হলো।ডাক্তারকে বের হতে দেখে রাগিব হুড়মুড়িয়ে যেয়ে প্রশ্ন করলো ডাক্তারকে,

-‘আমার মেয়ে কেমন আছে?ঠিকা আছে তো।আমি গিয়ে দেখে আসি কেমন?’

রাগিব যেতে লাগলে ডাক্তার তাকে থামায়।তাকে বলে,

-‘শান্ত হোন মিস্টার রাগিব।শি ইজ অলরাইট নাও।মাথায় চোট পেয়েছে কপাল ভালো সেটা গুরুতর নয়।প্রিশার শরীর দুর্বল হওয়ায় আর আকস্মিকভাবে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার ফলে আঘাত পাওয়ার কারনে জ্ঞান হারায়।’

ডাক্তারে মুখে প্রিশার কথা শুনে রাগিবে মনটা শীতল হলো,চোখ দিয়ে উপচে পরলো জল।

ডাক্তার বললো,

-‘নিজেকে সামলান মিস্টার রাকিব।এখনো পথ বাকি আছে।’

রাগিব চোখমুখ মুছলো।ডাক্তার রাগিবের কাধে চাপড় দিয়ে চলে গেলো।রাগিব আস্তে আস্তে পা দিয়ে প্রিশার রুমের দিকে এগোলো।তখন থেকে এখন অব্দি উনি এইভাবে বসে আছে।

প্রিশা আস্তে আস্তে নিভু নিভু চোখ খুলছে, চোখমুছ কুচকে যাচ্ছে লাইটের আলোতে।

প্রিশাকে চোখ খুলতে দেখে রাগিব বললো,

-‘এইবার শুরু হবে নতুন অধ্যায়।’

চলবে

[আপনার মন্তব্যের উপর নির্ভর করে পরের পর্ব আসবে।আর পরের পর্বে থাকবে বিশাল ধামাকা]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here