‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ’
-জান্নাত
পর্ব-৭|
[১৮+ এলার্ট!সংলাপে বিভিন্ন ১৮+ শব্দ ব্যবহার হয়ে যেতে পারে বা হতে পারে কিংবা হবে।এইজন্য যাদের এডাল্ট শব্দ শুনতে বা দেখতে ইতস্তত বোধ হয় তারা এড়িয়ে চলুন।]
.
ছয় বছর পর,
-‘শুভ জন্মদিন ডিটেকটিভ আয়েশা জাহান প্রিশা।’
পরনে টাউজার হালকা রঙের ঢোলা শার্ট পরে টিভিতে নিউজ দেখছিলো রাত্রি এগারোবটা ঊনষাট মিনিটে প্রিশা।আজকে জন্মদিন হওয়ার সুবাদে প্রতিবছর তার বাবা তাকে এইভাবে উইশ করে আসছে।মুখে মুচকি হাসি নিয়ে ঘুরলো প্রিশা তার বাবার দিকে।
-‘বাবা তুমি ঘুমাও নি?’
প্রিশা বললো।
রাগিব বললো,
-‘আজকে আমার মায়ের জন্মদিন আমি কি ঘুমাতে পারি বলো?’
প্রিশা হেসে বললো,
-‘কিন্তু বাবা ডাক্তার আঙ্কেল বলেছে তোমাকে ট্যাবলেট দ্রুত ঘুমিয়ে পরতে।’
রাগিব বললো,
-‘হুর!সবসময় তো টাইম মেইনটেইন করে ঘুমাই আজ না হয় ভিন্ন হোক।’
প্রিশা হেসে বললো,
-‘আমি বুড়ি হয়ে গেলাম তাই না বাবা?’
রাগিব প্রিশার মাথাটা নিজের বুকের সাথে ধরে বললো,
-‘হুস!কেবলই তো ত্রিশ হলো মাম্মাম।জীবন তো এখন অনেক বড়।’
প্রিশা বললো,
-‘ইয়েস বাবা।’
রাগিব বললো,
-‘এখন ঘুমাও।সকালে ডিউটি আছে তোমার।লেডি পাওয়ারফুল পুলিশ অফিসার বলে কথা।’
প্রিশা তার বাবার কথায় হালকা হাসলো।বাবা মেয়ে কিছুক্ষন কথা বলে যে যার রুমে চলে গেলো।
রাগিব ঘরে এসে দরজা লাগালো।অতীত ঝেকে ধরলো তাকে।সেদিন হাসপাতাল থেকে শুরু করে আজ অব্দি প্রিশাকে নিয়ে ঘেরা সব স্মৃতি। তবে চলুন আমরাও জেনে আসি।
অতীত,
সকালবেলা হাসপাতালে চারপাশের থাইগ্লাস দিয়ে বাহিরে প্রাকৃতিক বর্ষাকালেত মৌসুম দেখা যাচ্ছিলো।আমেরিকায় ঝমঝম করে বাংলাদেশের মতো বৃষ্টি হয়ে না।রাগিব প্রিশার হাত ধরে বসে ছিলো।প্রিশা জ্ঞানহীন হয়ে শুয়ে।
কিছুক্ষন বাদে হালকা হালকা চাপ দিয়ে চোখ খুলছে প্রিশা।চোখ খুলে মাথায় যে আঘাত পেয়েছে সেখানে টান পরায় হালকা ব্যাথাতুর আওয়াজে বললো,
-‘আহ!’
প্রিশার শব্দ শুনতে পেয়ে রাগিব তাড়াহুড়ো করে প্রিশার কাছে যেয়ে বললো,
-‘কি হয়েছে মা?কোথায় লাগছে বলো?ডাক্তার ডাকি আমি।’
রাগিব এইভাবে নানান প্রশ্ন করতে লাগলো প্রিশা।প্রিশা শুধু ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে রয়েছে।প্রিশার কোন রেসপন্স না পেয়ে রাগিব জোরে চিৎকার দিয়ে নার্সকে ডাক্তার ডাকতে বললো।নার্স ডাক্তার নিয়ে আসলো।ডাক্তার এসে প্রিশার পার্লস রেট চেক করতে গেলে সে হাত সরিয়ে নেয়।
ডাক্তার বললো,
-‘রিল্যাক্স ডিয়ার!আমি শুধু তোমার পার্লস রেট চেক করবো।’
প্রিশা রাগিবের দিকে তাকালো।রাগিব ইশারায় তার হাত দিতে বললো।প্রিশা আস্তে আস্তে তার হাতটা ডাক্তারকে দিলো।ডআক্তার সব চেক করলো।প্রিশাকে জিহবা বের করতে বললো।প্রিশার চোখ দেখলো।সব কিছু চেক করলো উনি।
ডাক্তার বললো,
-‘সবকিছু ঠিক আছে দেখছি।ইন ফ্যাক্ট অনেক ভালো আছে প্রিশা আগের তুলনায়।’
প্রিশা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো,
-‘বাবা আমি এখানে কেনো?’
প্রিশার স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে রাগিব একটু চমকালো সাথে ডাক্তারও।কারন,প্রিশার মেমোরি ড্যামেজ হওয়ায় তার শুধু আচরণ নয় কথাবার্তাও বাচ্চাদের মতো হয়ে গেছিলো।সেখানে হুট করে ঠান্ডা স্বাভাবিক মানুষের মতো কথা বলছে যে।
রাগিব কিছু বলতে যাবে তক্ষুনি ডাক্তার তাকে বাধা দিয়ে বললো,
-‘কাল রাতে তুমি বাথরুমের পরে গিয়েছিলে তাই তোমাকে এখানে তোমার বাবা এনেছে।’
প্রিশা অবাক সুরে বললো,
-‘কিন্তু কখন আমার মনে নেই যে।আসলে আমার কিছু মনে নেই।শুধু মনে হচ্ছে এই যে(রাগিবের দিকে আঙ্গুল তুলে) আমার বাবা ইনি।’
ডাক্তার বললো,
-‘এটাই তোমার বাবা।আর পরে যাওয়ার কারনে হালকা মেমোরি লস হয়েছে তাই মনে নেই তোমার কিছু।তুমি রেস্ট করো।আমরা একটু কথা বলে আসছি।’
প্রিশা শোয়া অবস্থায় মাথা ঝাকালো।
রাগিবের একটা হাত ধরে ডাক্তার টেনে নিয়ে যাচ্ছে নিজের কেবিনে।রাগিবের মাথায় কিছু ঢুকছে না।কি হচ্ছে তার সাথে
ডাক্তার তাকে নিজের কেবিনে নিয়ে গেলো।ডাক্তার নিজের কুরসিতে বসে, রাগিবকেও চেয়ার টেনে বসালো।ডাক্তার কিছু বলতে যাবে তার আগে রাগিব বললো,
-‘হচ্ছে টা কি।’
ডাক্তার বললো,
-‘আমি জানি আপনি কিছু বুঝতে পারছেন না।তাই আপনাকে এখানে নিএ আসলাম।’
রাগিব বললো,
-‘প্রিশা একদম স্বাভাবিক আচরণ করছে যে?’
ডাক্তার বললো,
-‘ইয়েস!মেমোরি ড্যামেজ হওয়ার ফলে তার মস্তিষ্ক টা সম্পূর্ণভাবে চাইল্ডদের মতো হয়ে গেছিলো।আবার কালকে ঘটে যাওয়া ইন্সিডেন্টের ফলে টেম্পোরারি ভাবে মেমোরি লস হয়েছে অর্থাৎ জ্ঞান আসার পর তার যেমন কিছুই মনে নেই সে কে?ঠিক তেমনই মেমোরি ড্যামেজের পর গত রাতের আঘাতের ফলে যতটুক মেমোরি হয়ছিলো সেটাও মুছে গিয়েছে।তার শুধু একটা মানুষ মনে আছে তা হলো আপনি।এইজন্য এটা টেম্পোরারি লস।’
রাগিব ভীতু স্বরে বললো,
-‘এতে যদি উল্টো একশন হয়।’
ডাক্তার বললো,
-‘হবে না মিস্টার রাগিব।কারন,আমি নিজেও ভেবেছিলাম জ্ঞান ফিরার পর প্রিশা অস্বাভাবিক আচরন করলে তার ব্রেইন হিউম্যান সাইকোলজিস্ট দ্বারা ওয়াশ করবো যেন সে সবকিছু ভুলে যায় তার মেমোরিতে যেন ভালো কিছু থাকে আর সেটা আপনি।কিন্ত গডের কি সাইন,আমাদের কিছু করা লাগে না।প্রিশা মেমোরি টেম্পোরারি ভাবে লস হবার কারনে সে নিজেই সব ভুলেছে আপনাকে ছাড়া।’
রাগিব বললো,
-‘আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না।’
ডাক্তার বললো,
-‘ইট’স এ গুড সাইন মিস্টার রাগিব।কাজে লাগান।’
ডাক্তার এই কথা বলে কেবিন থেকে চলে গেলো।রাগিব নিজের মাথা চেপে ধরে বসে রইলো।তারপর কিছুক্ষনের মাঝে মাথা উঠিয়ে মুখে আনন্দের হাসি রেখে বললো,
-‘এইবার শুরু হবে নতুন অধ্যায়।’
রাগিব প্রিশার কাছে আসলো।প্রিশা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কারো উপস্থিতি পেয়ে চোখ খুললো।
প্রিশা কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগে রাগিব বললো,
-‘আমি তোমার বাবা।পরিচয় একটাই তোমার রাগিব এহসানের মেয়ে আয়েশা জাহান প্রিশা তুমি।তোমার আজ এবং এখন থেকে লক্ষ্য হলো নিজেকে গড়ে তোলা।’
সেদিন প্রিশা ভ্যাবলার মতো চেয়ে রয়ছিলো।কিছু বলার সুযোগ দেয় নি তাকে।প্রিশা একটু সুস্থ হলে তাকে বাড়ি নিয়ে আসে।মার্টিলের মাধ্যমে জানতে পারে রাগিব যে এলেক্সের মেইন পার্টে অনেক জোরে লাথি মারার সেটা থেতলে গেছে,পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে তাকে।
প্রিশা বাড়ি আসার পর যখন পুরোপুরিভাবে সুস্থ হলো।রাগিব তাকে আমেরিকার পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি করালো।প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট হয়ছিলো প্রিশার হাতে পায়ে বুকে বিভিন্ন জায়গাতে ব্যাথা।মোস্টলি জরায়ুতে তার ব্যাথা বেশি হতো।ডাক্তারের সাজেস্টের মাধ্যমে সে ব্যাথানাশক ওষুধ নিয়ে ছিলো যদিও সে।এইভাবে তার জীবন শুরু হয়।
রাগিব তাকে এইভাবে কেন তৈরি করেছে সে জানতে চায় নি।শুধু রাগিব তাকে একটা কথা বলেছিলো,
-‘বাবার আদেশ ভাবো কিংবা উপদেশ তোমাকে সবচেয়ে পাওয়ারফুল লেডি পুলিশ হতে হবে এটা জানি।’
রাগিবের কথায় প্রতি উত্তরে প্রিশা কিছু বলে নি।শুধু বলেছে,
-‘এটা যদি তোমার স্বপ্ন হয় বাবা আমি পূরণ করবো।’
প্রিশার কাজের দক্ষতা এতোবেশি সুক্ষ্ম ছিলো যে দুই বছরের মাথায় সে একটা প্রফেশনাল ভাবে লেডি পুলিশ অফিসার হয়ে গেলো।ডিটেকটিভ পুলিশ অফিসার সে।প্রমোশন পেয়ে গেছে পরের বছরের মাথায়।চার বছরে সে অনেক গুলো কেস সলভ করেছে।এখন যদি কোন প্রফেশনাল টাইট পুলিশ অফিসারের নাম নেয়া হয় সেটা হয় প্রিশার নাম।
অতীতের দেয়াল থেকে ফিরে আসলো রাগিব।পুলিশের পোষাকে প্রিশার ছবি তার রুমের দেয়ালে।সেই ছবির দিকে তাকিয়ে তিনি বলছেন,
-‘অধ্যায় শুরু হয়েছে।এটা শুধু ট্রেলার মুভি এখনো বাকি।নরপিশাচ দের শাস্তি দেয়া এখনো বাকি।এখনো রহস্য গন্ধ শুধু উঠবে।আর তুমি এই রহস্য ছড়াবে।কাল হবে আরেকটা ধামাকা।’
.
স্নিগ্ধ সকালের মিষ্টি রোদ বাড়ির চারপাশ ছেয়ে রয়েছে।সিড়ি বেয়ে ধপাধপ নামছে প্রিশা।পরনে ব্ল্যাক কালারের পুলিশের পোষাক,খোপা করা চুল।ব্ল্যাক সু পরে আছে সাথে মাথায় ক্যাপ।প্রিশাকে দেখলে গর্বে বুকটা ফুলে যায় রাগিবের।যখনই সে সিড়ি থেকে নামে তখনই রাগিব তার দিকে চেয়ে রয়েছে।রাগিব ডাইনিং টেবিলে বসে আছে প্রিশার জন্য।
প্রিশা নেমে এসে বললো,
-‘গুড মর্নিং বাবা।’
রাগিব হেসে বললো,
-‘গুড মর্নিং আমার শেরনী।’
টিভিতে নিউজ চলছে।বিডির চ্যানেল দেয়া।হুট করে সাউন্ড জোরে হওয়ায় বেজে উঠলো,
‘ব্রেকিং নিউজ’
কিশোরপুর গ্রামে আবারো ধর্ষণ। দশ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে পুকুরের মধ্যে উলঙ্গ করে ফেলে গেছে তারা।মেয়ের সারা শরীর জুড়ে শুধু বিক্ষিপ্ত ভাবে মারের দাগ।এই নিয়ে সাতবার এইরকম নির্মম ভাবে কাওকে ধর্ষণ করা হলো।কিন্তু হদিস পাওয়া যায় নি।
নিউজটা শুনে প্রিশার হাত থেকে খাবার পরে গেলো।এখন যতবারই সে রেইপ কেইসড দেখেছে তার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।প্রিশার অবস্থা বুঝতে পেরে রাগিব বললো,
-‘তোমার ট্রান্সফার আমি কেন বিডি নিতে চেয়েছি বুঝতে পারছো?’
প্রিশার ধ্যান ভাঙলো।সে বললো,
-‘বাবা দে আর সাচ এ বাস্টার্ড।এইটুকুন মেয়ে কে কেও এরকম ভাবে রেইপ করে?’
রাগিব বললো,
-‘এরকম অহরহ হচ্ছে।তোমাকে যেতে হবে বাংলাদেশ গিয়ে দেখতে হবে।যতটুক পারবে চেষ্টা করবে সমস্যা মিটানোর।’
প্রিশা বললো,
-‘আমি অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম বাবা।কিন্তু আমাদের হেড আমাকে ছাড়ছে না।’
রাগিব বললো,
-‘কারন তোমার অফিসার মেয়েদের মাঝে কেন ছেলেদের মাঝেও দুটো নেই তাই।বাট তারপরেও আমি বলবো তুমি বাংলাদেশ চলো।’
প্রিশা বললো,
-‘লাস্ট টু উইক আগে এপ্লাই করেছিলাম বাবা।আজ রেজাল্ট আসার কথা।দেখি গিয়ে। ‘
রাগিব হুম বলে।মেয়েকে নাস্তা দিতে লাগলো।নাস্তা খেয়ে প্রিশা বেরিয়ে পরলো নিজের ডিউটিতে।রাগিব দরজায় দাড়িয়ে ছিলো।
মনে চলছে একটাই কথা,
-‘বাংলাদেশ তো যেতেই হবে তোমাকে।’
চলবে
[এটা মোটামুটি থ্রিলার গল্প বলা চলে হয়তো।আমি জানি আমি অনেক বাজে লিখি।লিখালিখি আমার শখের।আর আমি লাইফে প্রথমবার কোন সাইকোলজি রিলেটেডে থ্রিলার গল্প লিখার চেষ্টা করছি।যারা বলছেন গল্প স্লো হয়ে গেছে তাদের বলি একটা সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে লিখছি সেটা ভালো করে উপস্থাপন যদি করতে চাই আমি সেটা আপনার কাছে স্লো লাগলে আমার কিছু বলার নাই।কেমন লাগছে জানাবেন।আশা করি আমি গল্পটা বেষ্ট টুকু দিয়ে আপনাদের ভালো লাগাবো।কেমন লাগছে জানাবেন।]