‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ’
-জান্নাত
পর্ব-৮|
[১৮+ এলার্ট!সংলাপে বিভিন্ন ১৮+ শব্দ ব্যবহার হয়ে যেতে পারে বা হতে পারে কিংবা হবে।এইজন্য যাদের এডাল্ট শব্দ শুনতে বা দেখতে ইতস্তত বোধ হয় তারা এড়িয়ে চলুন।]
.
হেডের সামনে বসে আছে প্রিশা।টেবিলের উপর তার পুলিশের ক্যাপ টা রাখা।হাতে থাকা গ্লোব টাকে বার-বার ঘুরাচ্ছে হেড সিমন টিকা।প্রিশা আজ ডিউটিতে এসে এসে আগে হেডের সাথে কথা বলতে গেছে।
সিমন বললো,
-‘তুমি কি জানো আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ শিফট হতে হলে তোমাকে এই কাজ ছেড়ে যেতে হবে?’
প্রিশা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
-‘জানি হেড কিন্তু বাবা খুব করে চাইছে আমি বাংলাদেশ যাই আর সেখানকার জন্য আমি কিছু করি।’
সিমন বললো,
-‘আই অ্যান্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট!কিন্তু এইভাবে হয় না।আমাদের রুলসে নেই এরকম কিছু।’
প্রিশা বললো,
-‘স্যার কি করা যায়?’
সিমন বললো,
-‘বাংলাদেশ থেকে অনেকদিন থেকে অনেক মেইল আসছে একটা বিষয়ের উপর!’
প্রিশা বললো,
-‘কিরকম হেড?’
সিমন বললো,
-‘হুট করে মানুষ গায়েব হয়ে যাচ্ছে।কে যেন ১২-১৮ বছরের কিশোরী দের উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।তারপর টাকার ডিমান্ড করছে।টাকা দেয়ার পর তারা মেয়েদের ফেরত দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু নগ্ন ভাবে।প্রতিটা জায়গা তার ক্ষত-বিক্ষত করে কেটে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।’
প্রিশা চমকে উঠে বললো,
-‘আল্লাহ!’
সিমন বললো,
-‘ওখানে কোন শক্ত ফোর্স নেই যার ফলে তারা মিশনে নামকেও সফল হতে পারছে না।তারা মেইল দিয়ে অনেকবার রিকুয়েষ্ট করছে আমাদের কাছে যোগ্যা কোন গোয়েন্দা পুলিশ অফিসারকে যেন পাঠাই ওখানে।’
প্রিশা বললো,
-‘স্যার তবে তো যাওয়া উচিত কাওকে।’
সিমন বললো,
-‘ইয়াহ!দ্যাটস রাইট কিন্ত আমি যা বুঝছি এইটা খুব টাফ এন্ড হার্ড টাস্ক।তার উপর দুই বছরের জন্য মিশন এটা।শুধু এই কেইস সলভ করলে হবে না।আরোও অনেক ভয়ানক কেইসেস আছে ওখানে যা সলভ করতে পারলে সঠিক ভাবে অলমোস্ট দুই বছর তো লাগবেই। ‘
প্রিশা বললো,
-‘এখন?’
সিমন বললো,
-‘যেহেতু তোমার বাবা চাচ্ছে তুমি তোমার মাতৃভূমির জন্য কাজ করো তাহলে বলবো এই মিশনে আমি তোমাকে পাঠাতে চাই।এদিকে তোমাকে কাজ ছেড়ে যেতেও হলো না অপরপক্ষে তোমার বাবার ইচ্ছাও পূরন হবে।’
প্রিশার পাজল টা নিমিষে সলভ হয়ে গেলো।সে খুশির ঝলক নিয়ে বললো,
-‘আমি তৈরী এই মিশনের যাওয়ার জন্য।আপনি যখন পাঠাবেন আমি তখনই যাবো।’
সিমন বললো,
-‘আমি তোমার জন্য সবকিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি তবে।তুমি টিম গঠন করো।’
প্রিশা ইতস্ততবোধ করে বললো,
-‘স্যার আমি এখান থেকে কোন টিম গঠন করতে চাই না।কারন,ওইটা বাংলাদেশ বাঙ্গালী রা ইংলিশ ভাষা বুঝবে না অনেকে আবার এখানকার টিম নিয়ে বিডিতে গেলে ওইখানে যেয়ে তারা বুঝবে না।এর চেয়ে ভালো হয় আপনি ব্যবস্থা করেন শুধু আমার যাওয়ার,আমি ওখানে যেয়ে আমার টিম গঠন করবো।’
সিমন বললো,
-‘দ্যাট’স কুল।এইভাবে তো ভেবে দেখা হয় নি।তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো।তুমি যাও,আমি ব্যবস্থা করছি।দুই সপ্তাহের মাঝে তুমি বিডিতে থাকবে।’
প্রিশা উঠে দাড়িয়ে স্যালুট জানিয়ে হেডের রুম থেকে বিদায় নিলো।এদিকে হেড ইমেইলের কনফার্ম করে দিলো তার ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে যোগ্য অফিসার রওনা দিবে দুই সপ্তাহের মাঝে।গেট রেডি ফর মিশন বাংলাদেশ!
.
রাতের বেলা ফিরে আসলো প্রিশা সারাদিনের ডিউটি সেরে।শাওয়ার নিয়ে সোজা গেলো বাবার রুমে।রাগিব বসে টিভির নিউজ দেখছিলো।আবারো নাকি কিশোরপুর গ্রামে আরেক মেয়ে নিখোঁজ।
প্রিশাকে আসতে দেখে রাগিব বললো,
-‘শেরনী আমার চলে আসছে?’
প্রিশা হাসলো।রাগিব মেয়ের হাসি দেখে বললো,
-‘কোন গুড নিউজ?’
প্রিশা অবাক সুরে বললো,
-‘তুমি কিভাবে জানলে?’
রাগিব মেয়ের গালে হাত রেখে বললো,
-‘কারন তুমি ভালো খবর শুনলে আর মিশনে সাকসেসফুল হলে চেহারাতে নুরের ঝলক নিয়ে বেড়াও।’
প্রিশা একটু শব্দ করে হাসলো।তারপর বললো,
-‘আসলেই গুড নিউজ আছে!’
রাগিব টিভি অফ করে বললো,
-‘বলো দ্রুত তবে।’
প্রিশা বললো,
-‘আমি বাংলাদেশ যাচ্ছি!’
প্রিশার মুখে বাংলাদেশ যাওয়ার নাম শুনে রাগিবের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠার সাথে ভরেও গেলো।সে নিজেকে সামলে বললো,
-‘তোমাকে বাংলাদেশ পাঠাইয়ে দেয়ার জন্য রাজি হয়েছে?’
প্রিশা বললো,
-‘না বাবা।তবে আমি আনুমানিক দুই বছরের জন্য একটা মিশনে যাবো।বাংলাদেশ যেতে গেলে আমার এইখান ছেড়ে যেতে হবে একেবারে।আর আমার ক্যারিয়ারে ব্যাড ইফেক্ট ফেলবে।তাই হেড আমাকে মিশনে পাঠাচ্ছে।’
রাগিব বললো,
-‘এটাও ভালো খবর।নরপিশাচদের দমন করার সময় চলে এসেছে!’
প্রিশা বললো,
-‘হয়তো!’
রাগিব খেয়াল করে যতবারই বাংলাদেশ যাওয়ার কথা উঠে ততবারই প্রিশা যেন কোথাও হারিয়ে যায়।মনে হচ্ছে কি যেন গভীর যন্ত্রনা সে ভুগছে কিন্তু বুঝতে দিচ্ছে না।রাগিব আর প্রিশা টুকিটাকি কথা বলে রাতের খাবারের জন্য নিচে আসলো।
.
দুই সপ্তাহ পর,
আজ প্রিশার বাংলাদেশ যাওয়ার দিন।না চাইতেও বিষন্নতায় ঘেরে আছে তার মন।নিজের অজান্তে বুকটা তার ধুকপুক করছে।রাগিব ও একই দশা।সে প্রিশার সাথে যেতে পারছে না।তার ভিসা আটকে দিয়েছে।মেয়ে একা যাচ্ছে প্রথম বাবাকে ছেড়ে এইভেবে আরো দুশ্চিন্তায় ভুগছেন উনি।
প্রিশাকে রাখতে এসেছেন হেড সিমন আর রাগিব।সিমন নানান উপদেশ দিচ্ছে প্রিশাকে,সে ভদ্রতার সহিত মাথা নাড়ছে।রাগিব মেয়ের এক হাত ধরে আছে।প্রিশা ইমিগ্রেশনের পালা।সবাইকে বিদায় দেয়ার পালা।প্রিশা তার বাবাকে শক্ত করে ধরে আছে।
রাগিব মেয়েকে ধরে থেকে বললো,
-‘ছেলের মতো মানুষ করেছি,চলতে শিখিয়েছি।পোষাকও তাই পরিয়েছি।আমার শেরনী যেন লড়াই করে ফিরে আসে।আমাকে ছুয়ে ওয়াদা করে যাবা তুমি যে তোমাকে ফিরে আসতেই হবে এই বুড়ো বাবার কাছে।জীব৷ মানে যুদ্ধ।আর যুদ্ধ করেই তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে।’
প্রিশার ফোপানোর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।কতটা see আত্নত্যাগ নিয়ে যাচ্ছে।জানে না সে ফিরে আসতে পারবে কি না আর।জানে না সে তার বাবার মুখ দেখতে পাবে কি না আর।জানে না সে বেচে থাকবে কি না।তারা বাবা তার প্রতিটা সময়ের সঙ্গী ছিলো।এই প্রথম বাবাকে ছাড়া সে পাড়ি জমাচ্ছে নিজের দেশে কিন্তু তার কাছে ভিনদেশ!
‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশে কেও কি বৃষ্টি হয়ে নামবে তবে ভিনদেশে!’
চলবে