মেঘের আড়ালে বৃষ্টি পর্ব -১৫

#মেঘর_আড়ালে_বৃষ্টি
#পনেরো
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

ভোর পাঁচটা এখনো প্রয়াস হাতে ফোন নিয়ে বসে আছে। এই অপেক্ষায় যে, রোদ যদি একবার তার মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দেয়। কিন্তু প্রয়াসের অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না। এমন একটা অবস্থা প্রতিটি মিনিটকে মনে হচ্ছে হাজার বছর। অপেক্ষার সময় কত কষ্টের আজ প্রথমবারের মত প্রয়াস বুঝছে। এভাবে আর ভালো লাগছে না।

রোদ তুমি ইচ্ছা করে আমার টেক্সট সিন করছো না এমন নয়তো? আমি কী কোনো ভুল করে ফেলেছি? হঠাৎ এমন একটা মুহুর্তে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরায়
প্লিজ তুমি রিপ্লাই দাও।

এসব ভাবতে ভাবতেই সকাল হয়ে যায়। প্রয়াসের মা ফারহানা বেগম এসেছেন ছেলের রুমে।

“কী রে বাবা তুই এখনও ঘুমাসনি। সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলি?”

“আম্মু তুমি কী করে সব বুঝে যাও?” এটা মনে মনে ভাবলেও মুখে বলল, “না আম্মু এই মাত্র ঘুম ভাঙলো।

“কফি করে দিব? নাকি গ্রিন ট্রি দিব?”

“কফি আম্মু।”

“আচ্ছা তুই ফ্রেশ হয়ে নেয় আমি আসছি।”

প্রয়াস এতক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলছিল ঠিক। কিন্তু তার নজর যাচ্ছিল বারবার ফোনের দিকে, যদি রিপ্লাই আসে। কিন্তু বারবার তাকে আশাহত হতে হয়েছে।এভাবে নিজের উপর অতিরিক্ত বিরক্ত লাগছে। কমিউকেশনের এই যুগে কেউ কারো নাম্বার নিতে ভুলে যায়! নিজের বোকামির জন্য কষ্ট হচ্ছে।

ফ্রেশ হয়ে তার রুমে সাথে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
বিষন্ন লাগছে সব কিছু।

“এই নেয় তোর ব্লাক কফি?”

কফি হাতে নিতে নিতে বলে, “ধন্যবাদ আম্মু।”

“আমার এত সুন্দর ছেলের মুখে আমবশ্যা নেমেছে কেন?”

“কী যে বল না আম্মু। আমি ঠিক আছি।”

“তুই আমার ছেলে তোকে চিনতে আমি ভুল করব। এটা অন্তত আমি মনে করি না। তবে তুই যদি নিজেকে অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস বলে মনে করিস তাহলে আমার কিছু বলার নেই।”

প্রয়াস মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আম্মু তুমি কী যে বল। আমি কখনো বড় হব না। তোমার প্রয়াস তোমার কাছে সারাজীবন ছোট থাকবে।”

“তাহলে আমাকে মিথ্যে কেন বলছিস? তোর কী হয়েছে বলবি না? যদি খুব ব্যাক্তিগত হয় তাহলে থাক বলতে হবে না।”

“আম্মু আমি একটা সমস্যায় আছি। দুই একদিন সময় দাও আমি নিজে তোমাকে বলব।”

প্রয়াসের গালে হাত দিয়ে হেসে তিনি বললেন, “ঠিক আছে বাবা তোর সুবিধা মত বলিস। তবে যদি মনে হয় আমার কোনো সাহায্য লাগবে। তবে যাই হোক আমাকে বলতে দ্বিধা করবি না। কেমন? ”

“এই জন্যেই তোমাকে এতো ভালবাসি মা। লাভ ইউ মা।”

প্রয়াস মাকে আদর করে কখনো কখনো মা বলে ডাকে।

★★★

সারাদিন চলে গেল অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না। রোদ সারাদিনে একবার ও ফেইসবুকে আসেনি।

সারাদিন বাসা থেকে আর বের হয় নি প্রয়াস। এদিকে সকাল কল করে যাচ্ছে তার সাথে শপিং এ যেতে। কিন্তু প্রয়াস বারবার না করে দিচ্ছে। সকালের জোরের কাছে হেরে গিয়ে রাজি হয়, শেষ পর্যন্ত যেতে প্রয়াস। কিন্তু এর মাঝে অনেকের কাছে রোদের নাম্বার চেয়ে ও পায়না সে।

সকাল আর রোদ আগ্রাবাদ আক্তারুজ্জামান মার্কেটে এসেছে, শপিং করতে।

অনেক কেনাকাটা করে সকাল। প্রয়াসকে জিজ্ঞেস করে এটা কেমন ওইটা কেমন। প্রয়াসের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সে শুধু এখন একটাই চিন্তা আছে তার নাম রোদ।

প্রয়াস, সকাল শপিং শেষ করে। খাবার খেতে রেস্টুরেন্ট ফ্লোরে যায়। তারা খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছে। প্রয়াস কী মনে করে যেন পাশের কর্ণারের টেবিলের দিকে তাকাতেই তার চোখ আটকে গেল। একবার চোখ ফিরিয়ে নিতেই আবার বাধ্য হলো সেদিকে তাকাতে। বুকের ভেতর কেমন ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। যাকে কাল থেকে এভাবে পাগলের মতো খুঁজছে সেই তার সামনে। এমন কঠিন অপেক্ষার পর কেউ যদি সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষকে দেখতে পায়। তার শান্তি যে কতটা তা শুধু অপেক্ষারত মানুষটিই জানে।

মনে হচ্ছে অজানা এক সুখ অনুভব করছে প্রয়াস।অজানা হলেও এটা যেন অচেনা না। এটা জনম জনমের চেনা পরিচিত সেই সুখ। যার অপেক্ষা সে করেছে। সকাল ও প্রয়াসের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতে দেখতে পায় রোদকে। তার মুখে হাসি। তার বন্ধুর প্রাপ্তির জন্য।

এতগুলো বছরে কখনো সে দেখেনি, প্রয়াসকে এভাবে কোনো মেয়ের জন্য চটপট করতে। কিন্তু এই মেয়েটির জন্য সেই কাজটা তার এই অসম্ভব ভালো বন্ধুটি করেছে। তাই নিসন্দেহে বলা যায়, এই মেয়ে পৃথিবীর সেরা ভাগ্যবতীদের মাঝে একজন।

“আমার বন্ধুর প্রাণ ফিরে এলো তাহলে?”

“দোস্ত বিশ্বাস কর, আমি কখনো কোনো মেয়ের জন্য এতটা পাগলামো করবো ভাবিনি।”

“জানি দোস্ত। আমরা কখন কার জন্য কী ফিল করব, আগে থেকে কেউই জানি না। এসব বলে কয়ে হয় না,ব্যস হয়ে যায়।”

” একদম ঠিক বলেছিস। আচ্ছা তুই বস আমি দেখি কথা বলতে পারি কি না?”

“আচ্ছা।”

রোদের ও এখন চোখ পড়েছে প্রয়াসের দিকে। রোদ এসেছে তার কাজিনদের সাথে। এখন কেউ যদি জিজ্ঞেস করে কিছু কী হবে?

প্রয়াস রোদের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায়।প্রয়াস রোদকে হাতের ইশারায় বুঝায় ওয়াশরুমের দিকে আসতে। সে মেঘলাকে বলে আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।

রোদ আর প্রয়াস এই মুহুর্তে সামনাসামনি দাঁড়ানো।

“তুমি আমাকে কাল কিছু বলে গেলে না কেন?”

রোদ চুপ।

“প্লিজ সময় কম তোমার কাজিনরা তোমাকে দেখলে তোমার ক্ষতি হবে। বলো? দেখো রোদেলা আমি জানি আমি তখন এটা ঠিক করিনি। আসলে তোমার আচমকা এট্যাকে নিজেকে সামলাতে পারিনি। আমার তোমার অনুমতি নেয়া দরকার ছিলো। আই এম রিয়েলি সরি রোদেলা। আমি আমার কৃত কাজের জন্য লজ্জিত।”

প্রয়াস আজকে একবার ও রোদের দিকে তাকাচ্ছে না। তাই রোদ প্রয়াসের দিকে তাকাতে পারছে।
রোদের কেমন যেন লাগছে এই ছেলে এমন নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে কেন।

একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। আবার তাকে কি না ভালবাসে, তাহলে এভাবে না তাকিয়ে থাকা যায়। এসব ভাবছে রোদ। কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না।

“রোদেলা প্লিজ আমি তোমার উপর কোন জোর করছি না। তোমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি। কারণ তোমার নাম্বারটা নেয়া হয়নি। আর তোমার ফেইসবুক আইডিতে টেক্সট দিয়ে সারারাত জেগে উত্তরের অপেক্ষা করেছি কিন্তু তুমি সীন পর্যন্ত করোনি। আমি কী এতোটাই অন্যায় করে ফেলেছি যে উত্তর পর্যন্ত দেয়া যায় না। তুমি না চাইলে সব এখানে শেষ হবে। তবু আমি তোমার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই প্লিজ বলো?”

০১৯..

“কী?”

“বললেন না আমার নাম্বার লাগবে নিন।”

প্রয়াস রোদের নাম্বার নেয়।

মেঘলা এদিকে আসছে দেখে। রোদ প্রয়াসকে বলে,” ফোনের অপেক্ষায় থাকব। যা বলার ফোনে বলবো।
আমার কাছে আপনার নাম্বার নাই। ”
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রোদ চলে যায়।

প্রয়াস তার যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে। ভাবে এই মেয়ে শুধু তাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখছে কেন?
আবার অপেক্ষা। ধুর ভাল্লাগে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here