মেঘের আড়ালে বৃষ্টি পর্ব -১৮

#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#আঠারো
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

রোদ প্রয়াসের দিকে অগ্নি চক্ষু হয়ে তাকিয়ে
বলে, ” আবার পিচ্চি?”

প্রয়াস চোখ টিপে বলে,
“ওহ স্যরি, আমি তো কালকের কথা ভুলে গেছি তুমি কতটা বড় হয়ে গেছো।”

রোদ লজ্জা পেয়ে যায়। মনে মনে ভাবে দূর কেন যে বলতে গেলাম। এই লোকের সাথে কথা বলাই বিপদ।

“এই মেয়ে মনে মনে আমাকে গালি দিচ্ছো?”

“ওরে এ তো দেখি মনোবিজ্ঞানি মনের কথা বুঝতে পারে।”

“আমি মনোবিজ্ঞানী না। তবে তোমার মন পড়তে পারি।”

রোদ অবাক হয়ে ভাবে। দূর আর কিছু ভাববোই না।

প্রয়াস বলে,
“হুম সেই ভালো।”

“রোদ বলে কি?”

“ওই যে। তুমি যা ভাবছো।”

“তা কি ভাবছি?”

” কি ভাবছেন আপনি আমাকে ডপ দিচ্ছেন!”

তুমি ভাবছো যে,
“তুমি আর কিছু ভাববে না। যেনো আমি না বুঝি।”

“রোদ অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যায়। এত সব বুঝে যাচ্ছে। আর কথা না বাড়িয়ে রোদ বলে ক্লাসে যাচ্ছি।”

প্রয়াস রোদকে পেছন ডেকে একটু বলে,
“এই রোদেলা শুনো?তোমাকে খুব মায়াবী লাগছে।ঠিক যেমনটা আমি চাই।”

“রোদ লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।”

প্রয়াস রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মুখে হাসি। শান্তির হাসি। আজকে তার নিজেকে সবচেয়ে সুখী বলে মনে হচ্ছে।এতো শান্তি তার কোনদিন লাগেনি। ভালবাসায় এতো শান্তি যদি জানতো এতোগুলো বছর কি বসে থাকতো। ভালবাসায় পৃথিবীর সব সুখ লুকিয়ে থাকে।।হ্যাঁ আজ এটাই মনে হচ্ছে।

রোদ একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে।প্রয়াস এখনো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে। চোখাচোখি হতেই দুজন হাসি বিনিময় করে।

“উপ শান্তি, আহ ভালবাসা।”

দুজন মানুষ দুজনের কতটা আপন হয়ে আছে তা শুধু এই দুজনই জানে।

প্রয়াস ও রোদেলা মুখোমুখি বসে আছে নিউমার্কেটের রেস্টুরেন্টে।
রোদেলাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে।
প্রয়াস বলে,

“কি খাবে?”

“আমি কিছু খাবো না।”

“খাবে না বললে তো হবে না।আজ আমাদের প্রথম ডেট কিছুতো খেতেই হবে ম্যাম।”

“খাবো না স্যার, বাসায় চিন্তা করবে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।”

“প্রয়াস একটু মন খারাপ হয়ে যায়।বলে,
যাও তাহলে।আমি চাই না আমার জন্য তোমার কোন ক্ষতি হোক।”

“রোদ বুঝতে পারছে প্রয়াস রাগ করেছে।”

“রাগ কেন করছেন? আমি ফুচকা খাবো।অর্ডার দিন।”

“রাগ করছি না রোদেলা, তুমি চাইলে যেতে পারো।”

“আচ্ছা বললাম তো ম্যানেজ করে নিবো।”

প্রয়াস ফুচকা অর্ডার দিয়ে হাতে মুখে পানি দিতে যায়।

রোদে খেয়াল করলো প্রয়াস আজ ডিপ ব্লু কালারের শার্ট পরে এসেছে। তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। হলদে সাদা রঙের গায়ে এমন একটা শার্ট খুবই মানিয়েছে প্রয়াসকে।
পাশের টেবিলে তিনটি মেয়ে বসেছে।তারা প্রয়াসকে দেখতেছে।
একজন অন্যজনকে আবার প্রয়াসের প্রশংসা করে বলে,,,
দেখ ঐ ছেলেটি খুবই সুন্দর। এতো সুন্দর ছেলে জীবনে খুব কম দেখেছি।

তারা একে অন্যের সাথে দুষ্টুমি করছে খুব। এদিকে এসব শুনে রোদের মেজাজ বিগড়ে গেছে। তাই প্রয়াসের উপর রাগ হচ্ছে খুব।

প্রয়াস হাত মুখ ধুতে যাওয়ায় রোদের কোন কথাই শুনেনি। সে এসে আবার বসে।রোদ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।

প্রথম মেয়ে বলে,
শোন আমি গিয়ে ছেলেটার সাথে কথা বলি।কি হ্যান্ডসাম ছেলে?

দ্বিতীয় মেয়ে বলে, “কী বলিস দেখছিস না একটা মেয়ে বসে আছে। নিশ্চয়ই এটা প্রেমিকা হবে ছেলেটার।”

প্রথম জন বলে, “আরে কী বলিস মেয়েটা দেখতে সুন্দরী হলেও বয়স অনেক কম। এই ছোট মেয়ের সাথে কি প্রেম করা যায়?”

রোদ এসব শুনে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বলে, “শুনেছেন এবার? আমি ছোট আর তারা বড়। যাব তাদের সাথে প্রেম করেন।

“কি বলছো রোদ?”

রোদ রেগে চলে যায়।

যাওয়ার সময় মেয়েগুলোকে বলে,
“কেমন মেয়ে আপনারা অন্যের সম্পদের দিকে নজর দেন।আ র হ্যাঁ আমি ছোট হলেও, এই ইয়া বড় ছেলেটা আমার সাথে প্রেম করে। জিজ্ঞেস করেন বড় ছেলেটাকে। লুচু মেয়ে মানুষ কোথাকার। বলেই বের হয়ে যায় রোদ।”

মেয়েগুলো পুরো বোকা বনে গেলো!

“প্রয়াস ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।কারণ রোদকে সে খুব শান্ত মেয়ে বলেই জানতো। এই মেয়ে যে একটা আগ্নেয়গিরি সেটা কে জানত। তবে এটা ক্লিয়ার হয়ে গেলো সে প্রয়াসকে কতটা ভালোবাসে। কতটা সিরিয়াস এই সম্পর্কটা নিয়ে।এসব ভেবেই হাসছে প্রয়াস।”

“মেয়েগুলো বলে ভাই আপনার আগুনের গোলা চলে যাচ্ছে আর আপনি এখানে দাঁত কেলাচ্ছেন।তাড়াতাড়ি যান নয়তো এর অগ্নিতে কাউকে বর্ষ করে দিবে।”

প্রয়াস বলে,

“সরি কিছু মনে করবেন না,আসছি।
বলে দেয় দৌড়।”

“রাস্তায় রোদ দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে।”

প্রয়াস আসার সাথে সাথেই একটা রিকশা পেয়ে যায়। কিন্তু রোদ আর দাঁড়ায় না।রিকশায় উঠে বলে মামা চলেন। প্রয়াস অনেক রিকুয়েস্ট করে কিন্তু সে কি শোনার পাত্রী। প্রয়াস উপায় না পেয়ে,লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে পড়ে।রোদ লোকজনের ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না।

প্রয়াস অনেক চেষ্টা করে কিন্তু মহারানীর রাগ ভাঙে না। শেষে প্রয়াস আলতো করে রোদের হাত ধরে বলে,

“প্লিজ জান রাগ করে না। আই লাভ ইউ তো।
এভাবে রাগ করলে কি ভালো লাগে আমার বলো?”

লাস্ট কথাগুলো রোদের সব মান অভিমান শেষ করে দেয়। রোদ চুপচাপ বসে থাকে।

তার মনের
ভেতর একটা ছোট খাটো সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে। না সেটা কোন দুর্যোগের না,তা হচ্ছে সুখের।

প্রথম প্রেম প্রথম ভালোবাসা। প্রথম জান বলে ডাকা। প্রথম আই লাভ ইউ বলা। এই যেন অন্যরকম অনুভুতি। অন্যরকম ভালো লাগা।

রোদ মুচকি হেসে প্রয়াসের কাধে মাথা রাখে।
তার হাতের উপর রাখা প্রয়াসের হাতের উপর নিজের অন্য হাত রেখে বলে,

“এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হত তুমি বলোতো?”

চলবে,,,

বিঃদ্রঃ আমার প্রথম দিকের লেখা ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here