#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#একুশ
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
সকাল সেই কখন থেকে কল দিয়ে যাচ্ছে সাবাকে। কিন্তু সাবা রিসিভ করছে না। ফোন দেখে সাইলেন্ট মুডে রেখে রেখে দিয়েছে। এদিকে সকাল বারবার কল দিয়ে যাচ্ছে তাকে।
সাবার খুব কান্না পাচ্ছে সকাল কী কোনোদিন জানতে পারবে তার এমন অনুভূতির কথা। যা খুব যতনে রেখে দিয়েছে বুকের গোপন বাক্সে। সেই গোপন বাক্সের হদিস কী কোনোদিন পাবে সকাল। নাকি সারাজীবন সেই বাক্সের তালা বন্ধ করে রাখতে হবে।
বারবার কল দেয়ায় শেষ পর্যন্ত রিসিভ করে সাবা,
“কিরে এমন কল দিচ্ছিস কেন রাত বিরাতে?”
“কেন, আমি কী নতুন কল দিচ্ছি নাকি তোকে? রাতের বেলায় আর কথা বলিসনি নাকি তুই?”
“বলেছি, কিন্তু এখন থেকে বলতে পারবো না।”
“কেন? এখন কী তোর হাত পা গজিয়েছে নাকি?”
“দেখ তুই আমার সাথে ঝগড়া করতে আসবি না।
আমার বিয়ে, তাই তোর সাথে আর রাতে এত কথা বলতে পারবো না।”
“ওপাশ থেকে জোরে হাসির শব্দ আসছে। এত জোরে হাসছে সকাল মনে হচ্ছে চারপাশে ভুমিকম্প হচ্ছে।”
সাবার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেলো। বলল, ” কী এমন হাসির কথা বললাম যে এভাবে হাসতে হবে?”
“তোর বিয়ে! আরে তোরে বিয়েটা করবে কে?”
“তোর কী মনে হয় আমাকে কেউ বিয়ে করবে না।আমার মত মেয়ের বিয়ের বাজারে কত দাম তুই জানিস?” ঝাঁঝালো গলায় বলে।
“বাহ তুই নিজেরে গরু ভাবিস নাকি! নিজেকে বাজার, দাম বলতেছিস যে? আর ঠিকই আছে,তোকে কে বিয়ে করবে। এমন ঝগড়াটে মেয়েকে বিয়ে করতে কার বয়ে গেছে। যে তোকে বিয়ে করবে সেই বেচারা শেষ। তুই যে জল্লাদ মেয়ে।”
“তুই ফোন রাখ কুত্তা। আর শুনে নেয় আমার বিয়ে হচ্ছে আমার কাজিনের সাথে। রাকিব ভাইকে চিনিস তুই। আগেও কয়েকবার দেখা হয়েছে তোদের সবার সাথে। উনি বাইরে থেকে আসছেন। আমাকে বিয়ে করবে বলে। বিয়ের পর আমিও চলে যাব। ল” এক নিঃশ্বাসে বলে কল কেটে দেয় সাবা।
ফোন হাতে নিয়ে চেয়ে আছে ফোনের দিকে সকাল। কেন যেন তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কেন সে বুঝছে না। তবে যেই আনন্দ নিয়ে কল দিয়েছিল সাবাকে। সেই আনন্দ যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।
মনের রাজ্যে ভর করেছে এক আকাশ হতাশা। কেন এমন লাগছে। সাবার সাথে কথা বলতে পারেনি সেই জন্য? খুব ইচ্ছে করছে সিগারেট খেতে কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না বারান্দায় যেতে। তাই এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে বসে ফোনে তাদের বন্ধুদের সাথে তোলা ছবি দেখছে। হঠাৎ একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল তার। মিডিয়াম সাইজের চুলে লেয়ার কাটিং দেয়া।সামনে কিছু চুল এসে পড়ে আছে। ডাগর চোখে কাজল দেয়া আছে। তবে একটা চোখে কাজল লেপ্টে আছে মনে হচ্ছে এই কাজল লেপ্টে যাওয়ার জন্যই রমনীর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই মেয়েটা আর কেউ না সাবা। আজ যেন অন্যরকম ভাবে দেখছে সকাল তাকে। এতগুলো বছর এক সাথে কাটানোর পর আজ হঠাৎ সাবার প্রতি এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেন হচ্ছে? কেনই বা চোখ সরাতে পারছে না এই গাঢ় চোখের মেয়ের থেকে। এসব উদ্ভট অনুভূতির সাথে সকাল একেবারে অপরিচিত।
ওইদিকে সাবা কেঁদে বালিশ বিজিয়ে ফেলছে। এত কান্না পাচ্ছে কেন সে জানে। কারণ হয়তো একটাই সকাল। এই ছেলেটার প্রতি তার যে টান আছে তা উপেক্ষা করার ক্ষমতা আল্লাহ তাকে হয়তো বা দেননি। তাই সে পারেও না। সাবার বিয়ের কথা শুনে সকাল মজা করেছে। এর মানে তার মনে সাবার জন্য কিছুই নেই। এসব ভেবে আরও কান্না পাচ্ছে। যদি সকালের মনে সাবার জন্য ভালোবাসা থাকতো। তাহলে সে কী এমন করতো? এসব ভেবে আরও বেশী কষ্ট হচ্ছে সাবার। বুকের ভেতরটায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। একজন কে ভালোবেসে অন্যজনকে বিয়ে করা যে কী কষ্ট তা শুধু সেই জানে। আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে সকাল। তুই কী কোনোদিন বুঝবি না,আমার কত কষ্ট হয়? কতটা ভালোবাসি তোকে। আমি অন্য কারো সাথে ভালো থাকতে পারব না। বুক ফেটে যাচ্ছে সাবার। এই অসহ্য যন্ত্রনা নেয়া যায় না। কাঁদছে খুব। এক সময় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।
★★★
প্রয়াস আর রোদ ঘুরে বাসায় পৌঁছে যথা সময়ে। আজ রোদের মন খুব ভালো সারাদিন এত সুন্দরভাবে কাটানোর পর কারই বা মন খারাপ হয়। প্রয়াসকে যত দেখছে তত মুগ্ধ হচ্ছে। এত ভালো, সত্যবাদী আর সাহসী ছেলে খুব কমই পাওয়া যায়। রোদ বরাবরই অন্যকে সাহায্য করতে ভালোবাসে। তাই অন্যকে সাহায্য করে এমন মানুষের প্রতি তার দুর্বলতা আছে।
রোদের জীবনের যে বসন্ত এসেছে তা কতদিন স্থায়ী থাকবে কে জানে!
প্রয়াসের মন ও আজ খুব ভালো। রোদের সাথে কাটানো সময়গুলো তার মনে গেঁথে গেছে। জীবনে এতো সুন্দর মুহূর্তগুলো যদি ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখা যেত। রোদের হাসি গাল ফুলিয়ে থাকা। কথা বলার ভঙ্গি সব কেমন যেন অদ্ভুত মায়ায় জড়ানো। এত প্রেমময় জীবন সবার কাম্য। জীবনে প্রেয়সীর প্রেমের চেয়ে মধুর আর কিছু হয় না।
প্রেম এমন একটা শব্দ যার ছোঁয়ায় পৃথিবী রঙিন হয়। আর যার বিচ্ছেদে জীবন ধূসর হয়ে যায়। মানুষ যখন প্রথম প্রথম প্রেমে পড়ে তাদের কাছে জীবনটা সুন্দর জলছবি হয়ে যায়। যেমনটা আজ আমাদের জীবনে রোদ।
★★★
রোদ আজ কলেজে এসেছে অনেক আগে। এসেই প্রয়াসকে খুঁজছে তবে পাচ্ছে না। গাছের নিচে যে ইট বালুর বেঞ্চগুলো করা হয়েছে তাতে সে বসে আছে।ঝালমুড়ি মামা আজকে আসেনি, আসলে বসে বসে ঝালমুড়ি খাওয়া যেতো। সারারাত ঘুম হয়নি কখন কলেজে আসবে কখন প্রয়াসের সাথে দেখা হবে। এইদিকে উনার তো খবরই নেই। কোথায় ঘুরছে কে জানে। এসব ভাবতেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠে, “মনে মনে আমার পিন্ডি চটকাচ্ছো?”
“কী! কেমনে বুঝলেন?” পেছনে তাকায় রোদ। প্রয়াস ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রয়াস ঝালমুড়ি রোদের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল, আমি তোমার মন পড়তে পারি তুমি জানো না?”
“কই আমি এটা মোটেও ভাবছিলাম না। আমার বয়েই গেছে তোমার কথা ভাবতে।”
“দেখো বয়েতো গেছেই। না হয় এতো তাড়াতাড়ি এসে আমার জন্য অপেক্ষা করো?”
“মোটেও আপনার জন্য অপেক্ষা করছি না। আমি এখন এসেছি।”
“আমি জানি তুমি কখন এসেছো দেখেছি আমি।আসলে আমিও তোমার মত রাতে ঘুমাতে পারিনি। তাই তাড়াতাড়ি চলে আসলাম। আমার মন বলছিল আজ তুমি আসবা তাড়াতাড়ি। কিন্তু তোমাকে জ্বালানোর জন্য আমি দূর থেকে দেখছিলাম।”
“তা কি দেখলে?”
“কাতরতা,অস্থীরতা,অপেক্ষা, ভালোবাসার মানুষের জন্য। আমি অবাক হয়ে যাই তুমি এই কয়দিনে আমার এত কাছের হয়ে গেলে।”
“ইশ! আমি এসব কিছুই ভাবছিলাম না। যত্তসব আজগুবি চিন্তা করো তুমি।”
প্রয়াস পাশে বসে হালকা করে হাতের উপর হাত রেখে বলল, “কী হয় রোদেলা যদি মুখে স্বীকার করো আমায় কতটা ভালোবাসো। কতটা কাতর থাকো আমার জন্য।”
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে। এ যেন জনম জনমের পিপাসায় কাতর দুটি প্রাণ।
★★★
দুজনের দুষ্টু মিষ্টি খুঁনসুঁটিতে ভরা সুন্দর মুহুর্তগুলো তারা উপভোগ করতে লাগল। এভাবে দেখতে দেখতে রোদের ইন্টার পরিক্ষা চলে এলো। তাদের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতে হতে লাগল। এর মাঝে রোদ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে। রোদের সাথে সুচি ও করে। কয়েকমাস পর রেজাল্ট আসবে।
এদিকে নিশি রহিম সেদিনের পর থেকে
দুজন আরও কাছাকাছি চলে আসল। দুজন দুজকে যে ভালবাসে, এখন তাদের দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু ওইভাবে তারা কেউ কাউকে বলেনি ভালোবাসি। সবার মাথার একটাই চিন্তা পরিক্ষা যে করেই হোক দিবোই।
★★★
রোদ আর প্রয়াস বসে আছে ঝালমুড়ি হাতে আগ্রাবাদ পার্কে। আগ্রাবাদ থেকে খুব নীরব একটা রাস্তা আছে এই পার্কটিতে যাওয়ার পথে। নিরিবিলি জায়গায় বসে আছে দুজন। রোদের হাতে ঝালমুড়ি খুব আরাম করে খাচ্ছে। প্রয়াস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে রোদের বাচ্চাদের মত করে ঝালমুড়ি খাওয়া। মনে হচ্ছে কোনো ছোট বাচ্চা চকলেট খাচ্ছে খুব সন্তুষ্টির সাথে।দেখতে বেশ লাগছে প্রয়াসের। প্রয়াসের হাতে আরেকটি ঝালমুড়ির প্যাকেট আছে। রোদ নিজের হাতেরটা শেষ করে এটা খাবে। অদ্ভুত এই মেয়ে অন্য কিছু খাবে না। কিন্তু ঝালমুড়ি দিলে সে যত দাও তত খাবে। প্রয়াসের কাছে, এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তগুলোর মধ্যে একটি রোদের এই ঝালমুড়ি খাওয়ার দৃশ্য। মনে হচ্ছে রোদ না সে খাচ্ছে আর আত্মার সন্তুষ্টি পাচ্ছে।
ঝালমুড়ি খাওয়া শেষ করে রোদ বলে,
“এই তুমি খাওনি কেন?”
“খেলাম তো।”
“কই খেয়েছো তুমি?”
“এই যে তুমি খেয়েছো তাতেই আমার খাওয়া হয়ে গেছে।”
“ইশ! ফিল্মি ডায়লগ দিবা নাতো।”
“একদম না। আমার কাছে ও আগে আশেপাশের প্রেমিক প্রমিকাদের এসব দেখে বা শুনে মনে হতো। কেমন ন্যাকা এরা, আর ন্যাকা সব কথাবার্তা। কিন্তু আজ বুঝেছি আসলে ভালবাসলে মানুষ এমন অদ্ভুত সব অনুভব করে যা চাইলে ও সে উপেক্ষা করতে পারে না।”
রোদ বলে, “আইচ্ছা তাই?”
প্রয়াস বলে, “আবার তুমি আইচ্ছা বলা শুরু করছো? তোমারে না বলছি এটা বলবা না?”
“জি আইচ্ছা। বলব না।” বলেও হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় রোদ। রোদের মাথায় যখন দুষ্টুমি চাপে সে আচ্ছা কে বলে আইচ্ছা। যদিও এই কথাটা শুধু তার কাছের মানুষের জন্যে প্রযোজ্য।
প্রয়াস রোদের নাক টেনে বলে,” জি আইচ্ছা।” দুজন শব্দ করে হাসে ,যুগল ভ্রু জোড়া নাচছে আর হাসছে তাদের চোখ।
প্রয়াস প্রশ্ন করল, ” রোদ তোমার পরিক্ষা তো চলে আসলো। পরিক্ষা শেষে তুমি কি নিয়ে পড়তে চাও।আই মিন তুমি প্রফেশন হিসেবে কী নিতে চাও?”
“আমি একজন শিক্ষিকা হতে চাই।”
” তুমি খুব ভালো ছাত্রী তুমি চাইলে তোমার পেশা হিসেবে অন্য কিছু বেচে নিতে পারতে।শিক্ষিকা হিসেবে কেন জানতে পারি?”
“হুম পারি, আসলে আমার কাছে মনে হয় শিক্ষকের পেশা সবচেয়ে সম্মানের পেশা। আমি বাচ্চাদের খুব কাছে যেতে পারবো। তাদের কিছু শিখাতে পারব।জীবনে এমন একটা সুযোগ আমি হাত ছাড়া করতে চাই না। আমি ইন্টার পাশ করে বাইরে যেতে চাই। যদি স্কলারশিপ পাই, আসলে আমি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছি আমি বাইরে যাব পড়াশোনা করতে।”
“ওয়াও গ্রেইট। এমন চিন্তা করা তোমার দ্বারাই সম্ভব। এই জন্যই বলি এত মেয়ে থাকতে আমি তোমাকে কেন ভালোবাসলাম। এর কারণ তুমি সবার থেকে আলাদা অন্যন্য। তাহলে তুমি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার প্রস্তুতি নাও।
আমি একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছি। মনে হচ্ছে হয়ে যাবে। আর এই বছরই আমার মাস্টার্স শেষ হবে। তাই আর বসে থাকা ভালো দেখায় না। যদিও এর আগে চাকরি করতে চেয়েছি বাবা দিলো না। বলে আমার এতো টাকা কে খাবে,তোর ইচ্ছে হলে তুই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করিস।”
“তাহলে তো ভালোই হয়। তুমি চাকরি পেলে। তাহলে আমরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিতে পারব।”
“তোমার এখনো ১২ ক্লাসের পরিক্ষা শেষ হলো না
পিচ্চি মেয়ে বিয়ে করবে?”
“কী বললে তুমি, প্রেম করার সময় মনে ছিল না। আমি পিচ্চি মেয়ে! নাকি পিচ্চি মেয়ের সাথে প্রেম করে বড় মেয়ে বিয়ে করার ইচ্ছ?”
“মন্দ হয় না কিন্তু। আসলে শুনেছি বয়সে বড় মেয়েরা স্বামীদের খুব আদর করে। তুমি তো আমার অনেক ছোট। তুমি এমন করে আদর যত্ন করবে না।” বলেই অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছে প্রয়াস
রোদের খুব রাগ হয়। সে বুঝতে পারেনি প্রয়াস যে তাকে ক্ষেপাচ্ছে। বলল, “এই তোমার মত লুচু ছেলে আমি দুটো দেখিনি। ছিঃ আমার মত ছোট মেয়ের সাথে প্রেম করে এখন বয়সে বড় বোন বিয়ে করবে।জঘন্য লোক একটা। ” প্রয়াসের শার্টের কলার টেনে টেনে বলে রোদ। প্রয়াস হাসছে।
প্রয়াস বলে, “এই শোনো তুমি যদি বিয়ে করতে চাও এখনি বলো। আমি করে নিচ্ছি,এখন সমস্যা হচ্ছে আমার কিন্তু বিয়ের পর পরই বাচ্চা চাই। না হলে আমি আন্দোলন করব। এখন তুমি বলো তুমি কী বাচ্চা নিতে পারবে? বাচ্চা নিলে কত দায়িত্ব তুমি জানো। বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়,পরাতে হয়,গোসল করাতে হয়। তুমি পারবে বলে মনে হয় না।”
বলেই হো হো করে হেসে দেয় প্রয়াস।
রোদ এবার প্রয়াসের বুকে কিল বসাতে থাকে।
কি অসভ্য জঘন্য লোক। “ছিঃ, কিসব ভাষা।”
প্রয়াস রোদের হাত দুটো ধরে বলে,
“এই যা তুমি এইটুকুতেই ভয় পেয়ে গেলে। তুমি বিয়ে করবে কীভাবে তাহলে? এই জন্যই বলছি ছোট মেয়েকে বিয়ে করবো না। তুমি পারবে না।”
আচমকা রোদ বলল, ” আমি পারব, সব পারব।”
প্রয়াস হাসতে হাসতে সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে পড়ে।প্রয়াস চোখ বন্ধ করে হাসছে। রোদ এই সুযোগে প্রয়াসকে দেখছে,খুব স্নিগ্ধ লাগছে তাকে৷ রোদের খুব ইচ্ছে করছে এই সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে থাকা প্রয়াসের বুকে মাথা রাখতে। কিন্তু লজ্জা আর সংকোচে তা আর করা হয়ে উঠে না। এমনিতেই নিজের এমন বেফাঁস কথার জন্য খুব লজ্জা লাগছে।
প্রয়াস উঠে বসে বলল, ” চিন্তা করো না। আমি পিচ্চিকেই বিয়ে করব। যদি পিচ্চি নাও চায় জোর করে করব। তবু পিচ্চিকে ছাড়ব না।”
রোদের কান এই মুহুর্ত গরম হয়ে গেছে। প্রয়াসের এই কথায় ঝাঁ ঝাঁ করছে, মনে হচ্ছে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে। পুরো শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। এক অচেনা অনুভূতি মনের মাঝে চেপে বসেছে। এমনিতেই সন্ধ্যা নেমে আসছে। গোধূলীর সুন্দর আলো, হালকা মিষ্টি বাতাস শরীরে মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। তার উপর এমন একটা কথা যেন রোদের শরীরের প্রতিটি লোমকুপে শিহরণ দিয়ে গেলো। অবচেতনভাবেই প্রয়াসের হাত খামচে ধরে রোদ। খুব ইচ্ছে করছে প্রয়াসের বুকের সাথে মিশে যেতে। কিন্তু জড়তার জন্য তা হয়ে ওঠে না। প্রয়াস বুঝতে পারে রোদের কী হয়েছে। তাছাড়া রোদের এমন আচমকা আকড়ে ধরায় তার ভেতরে রোদের মত আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে। তার উপর এই সময়টা কেমন রোমান্টিক। আর বেশীক্ষণ এখানে থাকা যাবে না। রোদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে এখন। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রয়াস রোদকে বলেল, “চলো বাসায় যাই। তোমার বাসায় চিন্তা করবে।”
রোদ বুঝতে পারে প্রয়াস ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাচ্ছে তাকে। তাই শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।
দুজন রিকশায় উঠে চাইলে ও কেউ কোন কথা বলতে পারে না। প্রয়াস অনেকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, ” ঝালমুড়ি খাবে?”
রোদ আবার মাথা নাড়িয়ে না করে দেয়।
প্রয়াস অবাক হয় রোদ ঝালমুড়ি খাবে না বলছে। যে কিনা ঝালমুড়ি জোর করে খায় যদি সে বেশী খেতে বারণ করে পেট খারাপ হবে বলে। কিন্তু এখন বারণ করছে। প্রয়াস আর কথা বাড়ায় না।
রোদকে নামিয়ে দেয় প্রয়াস, রোদের বাসার আগে একটা তিন রাস্তার মোড় আছে সেখানে। রোদদের বাসার সামনে কখনও যায়নি প্রয়াস। কারণ রোদ চায়না কেউ তাদের এক সাথে দেখে ফেলুক।
পুরো রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলেনি। রিকশা থেকে নেমে রোদ ক্ষীণ সুরে বলে, “আসছি।”
প্রয়াস হেসে বলল, “এসো। কল দিও।”
রোদ মাথা নাড়ায়।
রোদ চলে যাচ্ছে প্রয়াস পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে সেই পথের দিকে। প্রতিদিন অনেকবার পেছন ফিরে তাকালেও আজ রোদ একবার ও তাকায়নি। প্রয়াসের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। রিকশা মামাকে বলে “চলেন মামা। ”
রোদ বাসায় এসে মাকে বলে আমার মাথা ব্যাথা করছে মা। আমি খাবো না। বলেই রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে মেঘলা নেই। মাকে জিগ্যেস করলে জানায় মেঘলা তার বান্ধবীর বাসায় গেছে সেখানে থাকবে। রোদ মনে স্বস্তি পেল। তার মন খুব খারাপ একটু একা থাকা প্রয়োজন। এখন মেঘা থাকলে বকে বকে মাথা খারাপ করে দিত। হাজারটা প্রশ্ন করতো। এই ভালো একা থাকা যাবে রোদ দরজা আটকিয়ে দিয়ে। ওয়াশরুমে ঢুকে জোরে পানির টেপ ছেড়ে দাড়িয়ে যায় ঝরনার সামনে। এতক্ষণপর গলায় ধলা পাকিয়ে থাকা কান্না যেন বের হয়ে আসে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু এই সামান্য বিষয়ে কেন কষ্ট হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। এমন অদ্ভুত কান্ড সে কখনো করেনি। তবে কী সেই আকাঙ্ক্ষিত চাওয়াটি পূরন হয়নি বলেই তার এতো কান্না পাচ্ছে। কিন্তু এমন চাওয়া মনে আসাটাও অন্যায়, তাহলে কেন এমন কষ্ট হচ্ছে তার। এতোটা ভালবাসে সে প্রয়াসকে। এভাবে কতক্ষণ বসে ছিলো ঝরনার নিচে কে জানে। বের হয়ে দেখে রাত ১১টা।
ওইদিকে প্রয়াসের মন খুব খারাপ হয়ে গেল। সে ভাবছে সন্ধ্যা নেমে আসছিল।কেউ দেখতে পেত না। কী হতো যদি একবার রোদকে বুকে জড়িয়ে নিতো।কেন সে পারলো না। এই কাজটা করতে। কেন রোদের চাওয়া বুঝতে পেরেও সে সায় দিতে পারেনি।নাকি একবার বুকে জড়িয়ে নিলে তাকে আর ছাড়তে ইচ্ছে করতো না। এই ভয়ে সে রোদকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারেনি। তার চাওয়াগুলো আরও বেড়ে যেত এই ভয়ে সে রোদকে দূরে রেখেছে। আর যাই হোক সে ও মানুষ কোন সাধু সন্ন্যাসী না। তাই এই ভালো সে রোদকে সম্মানতো করতে পেরেছে।
এসব বলে নিজেকে বুঝালেও মন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে,বারবার মনে পড়ছে রোদের সেই ব্যকুলতা ভরা চোখের চাহনিতে। ইচ্ছে করছে রোদকে বুকের সাথে পিশে ফেলতে। কিন্তু সে তা করতে পারছে না।
দুজন মানুষের এক অসম্ভব অস্থির রাত কাটলো নির্ঘুম। এমন অস্থিরতা নিয়ে কী আর ঘুমানো যায়।
চলবে