#মেঘের_ওপর_আকাশ_উড়ে
#Part_02
#Writer_NOVA
বেশ কিছু সময় পর চোরের মতো রুমে ঢুকলো মৃদুল। হাতে তার বেলচা ও ঝুড়ি। দরজা আটকিয়ে বিছানার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো সে।বড় ঘোমটা টেনে খাটের মাঝখানে বসে আছে সাবা। তা দেখে মৃদুলের কপাল কুঁচকে এলো। তার কাছে বিষয়টা ঘাপলা লাগছে। সাবা তো ঘোমটা টেনে বসে থাকার মতো মেয়ে নয়। নিঃশব্দে খাটের ওপর উঠে ধীরে ধীরে সাবার ঘোমটা তুললো। ঘোমটা তুলে সে দেখে সাবা হা করে বসে বসেই ঘুমাচ্ছে। মৃদুল বিরবির করে বললো,
— আমিও তো বলি অশান্ত মেয়ে এমন শান্ত হয়ে বসে আছে কি করে? হা করে ঘুমোচ্ছে। দাঁড়া তোর ঘুম বের করছি।
বেলচা দিয়ে মৃদু খোঁচা মারতেই সাবা ঝাড়া মেরে ধরফরিয়ে উঠে গেল। সেই ঝাড়া খেয়ে ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে মৃদুল চিৎপটাং। সাবা ওর দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে বললো,
— একদম চান্স মারার চেষ্টা করবি না। দূরত্ব বজায় রাখবি।
মৃদুল ফ্লোর থেকে উঠে শেরওয়ানি ঝাড়া দিতে দিতে বললো,
— বয়েই গেছে আমার চান্স মারার।
— না মারলেই ভালো। নে এবার বিছানা করে দে আমি ঘুমাবো। অনেক ঘুম পাচ্ছে।
মাথা চুলকে হাই তুলতে তুলতে সাবা কথাটা বলতেই মৃদুল ফোঁস করে উঠলো। হুংকার দিয়ে বললো,
— নিজের বিছানা নিজে করে নে।
— তুই বিছানা করবি না?
— না করবো না।
— সত্যি করবি না?
— সত্যি করবো না।
— আচ্ছা তাহলে আর কি করার! আমি আমার শ্বশুর মশাইকে গিয়ে বলি তার ছেলে আমায় অনেক মেরেছে।
— এটা মিথ্যে কথা।
সাবা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— সেটা তুই আর আমি জানি, সে নয়। তোর বাবা আমায় অনেক বিশ্বাস করে। আমি যা বলবো তাই বিশ্বাস করবে।
সাবা খাট থেকে উঠে দরজার সামনে যাওয়ার আগেই মৃদুল ওর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,
— আফা, আফারে তুই না আমার ভালো আফা। তুই আব্বুকে কিছু বলিস না। আমি এখুনি তোর বিছানা করে দিচ্ছি। আব্বুর কাছে বিচার দিলে সে আমাকে সবার সামনে কানে ধরে উঠবস করাবে। প্লিজ আফা, তুই আমার এতবড় সর্বনাশ করিস না।
সাবা বিজয়ী হাসি হেসে বললো,
— এই তো লাইনে আইছো চান্দু। যাও গিয়ে বিছানা কর। আর পা ছাড়। আমি তোকে মাফ করে দিছি।
পা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো মৃদুল। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— দিন আমারো আসবো সাইব্বানি।
— দেখা যাবে। আর শোন…
— বল।
— আমাকে বোন, আফা এসব বলবি না। আমি তোর বউ সেটা তুই আমি স্বীকার না করলেও।
মৃদুল মেয়ে মানুষের মতো মুখ ভেংচে বিরবির করে বললো,
— এ্যাহ আইছে আমার বউ! তোর কপালে নয় নম্বর বিপদ সংকেত আছে পঁচা বল সাবান। তুই শুধু আরেকটু অপেক্ষা কর।
সাবা ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
— কিরে কি ভাবিস?
— কিছু না।
— জলদী বিছানা কর। আমার ঘুম পাচ্ছে।
— করতেছি।
মৃদুল দুই হাত মুঠ করে রাগটা কন্ট্রোল করে একবার চোখ দুটো ছোট ছোট করে সাবার দিকে তাকালো। সাবা বিজয়ী হাসি দিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে খাট থেকে নেমে দরজার সামনে দাঁড়ালো।
💞💞💞
মৃদুল দ্রুত উপরে-নিচে দুটো বিছানা করে নিলো। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে, ড্রেস চেঞ্জ করে এসে দুজনেই শুয়ে পরলো। মৃদুল কাঁথা জড়িয়ে শুতেই ওর চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। কিন্তু সাবার পেটের ভেতর খুদায় মোচড়ামুচড়ি শুরু করছে। তাই ওর ঘুম উড়ে গেছে। কিছু সময় বিছানার এপাশ ওপাশ করে টুপ করে উঠে বসলো। ধীর পায়ে খাট থেকে নেমে মৃদুলের পাশে বসলো। তারপর ওর পেটে খোঁচা দিতে দিতে বললো,
— এই মৃদুল উঠ না, আমার অনেক খুদা লাগছে। মৃদুল, মৃদুলরে একটু উঠ না।
মৃদুল ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
— কি হয়েছে?
— আমার অনেক খুদা লাগছে।
মৃদুল ফট করে চোখ খুলে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— নে আমাকে খা।
মৃদুলের বলতে দেরী ওর হাতে কামড় মারতে দেরী নয় সাবার। মৃদুল ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো। সাবার দাঁতের মাঝ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে রেগে বললো,
— কি করছিস?
— তুই তো বললি তোকে খেতে।
— তুই আসলেই একটা ডাইনি।
— খাবার না দিলে কিন্তু তোকেই ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবো। অনেক খুদা লাগছে একটু খাবারের ব্যবস্থা কর নারে ভাই।
মৃদুল একবার ভেবেছিলো ওকে এই অসময়ে উঠানোর জন্য সাবার চুল ধরে টেনে পিঠে দুটো দিবে। কিন্তু সাবার দিকে তাকিয়ে কিছু করতে ইচ্ছে হলো না। সাবা খুদায় ছটফট করছে। মাথা নাড়িয়ে বললো,
— আচ্ছা দেখছি। চল আমার সাথে।
দুজন চুপিসারে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। পুরো বাসার সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। কিচেনে গিয়ে পাতিল থেকে খাবার বেড়ে সাবার দিকে দিতেই সাবা হামলে পরলো। গ্রোগাসে গিলতে লাগলো। মৃদুল চোখ, মুখ কুঁচকে ওর খাওয়া দেখছে। সাবা ওর দিকে তাকিয়ে বললো
— খাবি?
— না, তুই খা।
— তাহলে এভাবে তাকিয়ে থেকে নজর দিস না। পেট খারাপ করবে আমার।
—সাইব্বানি রে😤।
— এমনভাবে তাকায় রইছিস মনে হচ্ছে আমাকেই খাবি। দেখ ভাই খুদা লাগলে পাতিল থেকে বেড়ে খেয়ে নে। তবু আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকিস না।
মৃদুল বিনিময়ে একটা ক্রুর দৃষ্টি দিলো।ওর মনে কিন্তু অন্য কিছু ঘুরছে। যার দরুন মুখে কিছু বললো না। হনহন করে কিচেন থেকে বের হয়ে গেলো।সাবা সেদিক তাকিয়ে মুখ ভেংচে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
💞💞💞
বড্ড বেশি তেষ্টা পেয়েছে জামিলা বেগমের। উনি মৃদুলদের বাসার কাজের মহিলা। কিচেনে আসতেই ভেতর থেকে খুটুরখাটুর শব্দ শুনতে পেলো। পা টিপে টিপে সেদিক যেতে নিলেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে চেচিয়ে উঠলো,
— কে কেডায়?
মৃদুল ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— আমি মৃদুল চাচী।
— তা এইহানে কি করো বাজান?
— চাচী কিচেনে চোর ঢুকছে।
জমিলা বেগম আৎকে উঠে বললো,
— কি কও বাজান?
— হ্যাঁ, চাচী সত্যি কথা। আস্তে কথা বলেন। নয়তো চোর আমাদের কথা শুনতে পেয়ে পালিয়ে যাবে।
জামিলা বেগম গলার স্বর কমিয়ে মৃদুলের মতো ফিসফিস গলায় বললো,
— এহন কি করমু?
মৃদুল একবার শয়তানি হাসি দিয়ে কিচেনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
— আমাকে আব্বুর ভয় দেখানো,বিছানা করানো, তোর পা ধরানো, ঘুম থেকে উঠিয়ে খাবার বেড়ে খাওয়ানোর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে সাবা। এবার দেখ আমি কি করি! আব তেরা ক্যায়া হোগা?
মৃদুল মনে মনে একটা ফন্দি এঁটেছিলো। জামিলা বেগম আসায় ওর কাজটা সহজ হয়ে গেলো।কিচেনের থেকে চোখ সরিয়ে জামিলা বেগমকে বললো,
— এদিকে আসেন চাচী আমি বলছি।
— হো বাজান কও। আমার তো ডর লাগতাছে।
— ভয়ের কিছু নাই চাচী। আমি যেভাবে বলি সেভাবে কাজ করেন তাহলে আমরা চোরকে ধরতে পারবো।
— আইচ্ছা কও।
মৃদুল এবার তার ফন্দিটা জামিলা বেগমকে বললো,
—শুনেন চাচী,আপনি আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে চোর চোর বলে চেঁচাবেন। তারপর যা করার বাসার সবাই করবে। আর যদি চোর ধরা পরে তাহলে আপনার বেতন বেড়ে যাবে।
মৃদুলের কথা শুনে জামিলা বেগম পান খাওয়া লাল ঠোঁটে বেশ চওড়া এক হাসি দিলো। আবছা আলোতে সেটা নজর এড়ালো না মৃদুলের। তিনি সহজ-সরল মানুষ। মৃদুলের কথায় বেচারী সত্যি ভাবলো চোর। আর চোর ধরতে পারলে তার বেতন বেড়ে যাবে সেই আশায় ভেতরে কে আছে তা না দেখেই কিচেনের দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে চেচিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগলো,
— মিথিলা মা-মণি,ভাইজান, ভাবী কই আপনেরা? জলদী আইয়া দেইখা যান রান্ধনঘরে চোর ডুকছে!
#চলবে