প্রেমের ভেলা
পর্ব ০২
অধির রায়
মিহুকে বাড়িতে নিয়ে এসে মিহুর কপাল থেকে সিঁদুর মুছে দেয়৷ তূর্জয় মিহুর সাথে এতটা খারাপ কাজ কিভাবে করল? বিবাহিত মেয়েদের সিঁদুর তাদের সম্মান বয়ে আনে৷
.
মিহু ক্ষেপে বলে উঠে,
“আমার মাথার সিঁদুর মুছে দেওয়ার মানে কি? একটু আগেই আমাদের মন্দিরের বিয়ে হয়েছে৷ আমি একজন বিবাহিতা। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় সিঁদুর মুছা যায় না৷”
.
তূর্জয় মুচকি হেঁসে,
“হ্যাঁ আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমি বিয়ের বন্ধনের কোন নিয়ম মানি না৷ আর হ্যাঁ তুমি প্রেগন্যান্ট নও৷”
.
তূর্জয়ের কথা শুনে মিহু আকাশ থেকে পড়ে। তূর্জয় নিজেই মিহুর প্রেগন্যান্সির খবর নিয়ে এসেছে৷ এখন বলছে মিহু প্রেগন্যান্সি নয়৷
.
তূর্জয়ের মা মিহুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমরা যা করেছি, তোমার কর্মফলের জন্য করেছি৷ তোমার জন্য কেউ মরতে বসেছে। তোমাকে কিভাবে ছেড়ে দেয়?”
.
মিহু অবাক হয়ে,
“হোয়াইট! আমার জন্য মরতে বসেছে মানে কি! আর আমার জীবনে আমি কোন অন্যায় করিনি৷ অন্যায় করেছেন আপনারা, মা ছেলে মিলে।”
.
তূর্জয় আপেলে কামড় বসিয়ে,
“আমরাও কোন অন্যায় করিনি৷ শুধু আমরা একটা মিথ্যা কথা বলেছি৷ সেটা তোমার অন্যায় কাছে তুচ্ছ।”
.
আপনারা আমাকে ভুল ভাবছেন৷ বিশ্বাস করেন আমি কোনদিন কোন অন্যায় কাজ করিনি।
.
তূর্জয়ের মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে,
“তোমার অন্যায় স্বীকার করবে না তো। তুমি কি ভেবেছো? আমরা তোমার বিষয়ে কোন খুঁজ খবর রাখেনি৷”
.
আপনারা ভুল ভাবছেন৷ আমি কারো প্রাণ নেওয়ার কথা কোনদিন ভাবিনি৷ এমন কথা কোনদিন ভাবতেও পারবো না৷ অন্যায় করেছে আপনার ছেলে তূর্জয়। তূর্জয় আমার সবকিছু কেঁড়ে নিয়েছে৷
.
তূর্জয় মিহি কন্ঠে বলে উঠে,
“মিস মিহু আমি কোন অন্যায় করেনি৷ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷ তোমাকে আমি টার্চও করিনি৷ তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।”
.
আপনি সেদিন হোটেলে আমার শরবতে ডাক্স মেশাননি। আমার সাথে নোংরামি করেন নি৷
.
ছি! ছি! নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে। বড়দের সামনে এসব কথা বলতে পারছো কিভাবে? (তূর্জয়ের মা)
.
আমাকে তিরস্কার করে লাভ কি? তিরস্কার করতে হলে আপনার ছেলেকে করেন৷ আপনার ছেলে আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার কোন ক্ষমা হয় না৷
.
তূর্জয় যা করেছে বেশ করেছে৷ তোমাকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেওয়ার কোন কারণ আমার নেই৷
.
আমিও আপনাদের বাড়ির বউ হতে চাইনা৷ আমি এখন প্রেগন্যান্ট নয়। আমাকে জোর করে এই সম্পর্কে আটকিয়ে রাখতে পারবেন না৷
.
মিহু চলে যেতে নিলেই তূর্জয় মিহুর হাত ধরে,
“কোথায় যাওয়া হচ্ছে? তুমি মনে হয় ভুলে গেছে আমার কাছে তোমার নেগেটিভ ভিডিও আছে৷”
.
আমি আপনার হুমকিতে ভয় পাই না৷ এখন সবাই জেনে গেছে আমি আপনার বিবাহিত বউ৷ তাই আমাকে এমন বাজে হুমকি দিয়ে ধমিয়ে রাখতে পারবেন না৷
.
ও র্যালি। তোমাকে ধমানে সত্যিই খুব কঠিন কাজ৷ সো সেড৷ আমি জানতাম তুমি এমন কাজই করবে। তাই তোমার জন্য অন্য রাস্তার ব্যবস্থা করে রেখেছি।
.
মিহু মনে মনে বলে উঠে,
“শয়তানের দলগুলো আবার কি করতে চাচ্ছে? আমার কিছুই ভালো লাগছে না৷ কেন এমন নিচু কাজ করছে? আমি তো এদের কোন ক্ষতি করি নি৷”
.
তূর্জয় মিহুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে,
“কি হলো মিহু রানি? এত জলদি ভেঙে পড়লে চলবে৷ তোমাকে স্টং থাকতে হবে৷ সবকিছুর সাথে মোকাবেলা করতে হবে৷”
.
মিহু আমতা আমতা করে,
“আপনারা আবার কি করতে চাইছেন? কেন আমাদের পিছনে পড়ে আছেন?”
.
সবকিছু নকল থাকলেও দলিলগুলো নকল নয়৷ তোমার বাবা নিজে সাইন করে দিয়েছে।
.
কিসের দলিলের কথা বলছেন? আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
.
তোমাকে বাড়িতে নিয়ে আসার আগে কিসের শর্ত দিয়েছিলাম? তোমার অনাগত সন্তানের নামে চল্লিশ শতাংশ লিখে দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তোমার বোকা বাবা না পড়েই সাইন করেছেন।
.
চল্লিশ শতাংশ পেয়ে গেছেন মানে কি? সেসব সম্পত্তি আমার সন্তানের নামে থাকার কথা৷
.
তোমার সন্তানের নামে কোন কিছুই নেই৷ আর হ্যাঁ সবকিছু আমাদের নামে করে নিয়েছি৷ শুধু চল্লিশ শতাংশ নয়৷ সমস্ত প্রোপার্টি আমাদের নামে। আমার কথা মতো না চললে তোমার বাবা কাল পথে পথে ভিক্ষা করবে৷
.
আজ আমি ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছি৷ আর যেন কেউ আপনার মতো নর পশুদের বিশ্বাস না করে৷
.
মিহুর হাত ধরে টান দেয়৷ মিহু তূর্জয়ের বুকে এসে পড়ে৷ তূর্জয় মায়া ভরা কন্ঠে বলে উঠে,
“আমি যা করেছি সব ঠিক করেছি৷ আমি কোন ভুল করিনি৷”
.
ছাড়েন আমার হাত৷ আপনি আমাকে টার্চ করবেন না৷
.
তূর্জয়ের মা বলে উঠে,
“এতো নাটকের কি আছে? মিহুকে যে কাজের জন্য বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে সে কাজ করতে দেওয়া হোক।”
__________
মিহু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ মিহুর সামনে মরার মতো করে শুয়ে আছে স্যান্ডি৷ স্যান্ডির এমন অবস্থা দেখে মিহুর চোখে জল এসে পড়ে৷
.
তূর্জয় ক্ষেপে বলে উঠে,
“মিস মিহু স্যান্ডির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে৷”
.
মিহু টলটল চোখে তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে,
“স্যান্ডি আপনার কি হয়? স্যান্ডির এমন অবস্থা কি করে হয়েছে?”
.
তূর্জয় নরম কোমল স্বরে,
“স্যান্ডি হলো আমার দাদা৷ যাকে তুমি দূরে দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে।”
.
আসলে আমি স্যান্ডিকে…
থাক আর বলতে হবে না৷ তোমার টাকার মহিমা আজ কোথায় দাঁড়িয়েছে৷ তুমি আমার দাদার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো। আমার দাদা তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো৷ আর তুমি তাকে গরিব বলে তাড়িয়ে দিয়েছো৷”
.
আসলে আমি জানতাম না স্যান্ডি আপনার ভাই৷ আর স্যান্ডি বড়লোক। স্যান্ডি আমার সামনে এসেছিল একদম সাদা সিধে লোক৷ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হিসেবে আমার সামনে আসতো।
.
অহংকারী মেয়ে ছিলে তুমি৷ তাঁকে তুমি অপমান করতে এক চুলও বাদ দাওনি৷
বিশ্বাস করেন আমি তাকে অপমান করতে চাইনি৷ মানা করা সত্ত্বেও স্যান্ডি আমার সাথে পিছনে ঘুর ঘুর করতো৷ তাই তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিতাম৷
.
তূর্জয়ের মা রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠেন,
“ম্যাম সাহেব আমাকে চিনতে পারছেন। আমার দিকে একটু ভালো করে তাকান৷”
.
তূর্জয়ের মা একদম কম দামের ময়লা শাড়ি পড়ে এসেছেন৷ যেসব শাড়ি বর্তমানের কোন কাজের লোক পড়ে না৷ শ্যামবর্ণ মেকআপ৷ দেখে বুঝা যাচ্ছে না তূর্জয়ের মা৷
.
মিহু কোমল কন্ঠে বলে উঠে,
“আপনি এখানে? স্যান্ডি তো আপনার সন্তান৷ তাহলে তূর্জয়ের ভাই হলো কিভাবে?”
.
তূর্জয় আর স্যান্ডি আমার ছেলে। তোমার কাছে আমি গিয়েছিলাম। আমাকে তুমি তোমার বান্ধবী দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলে৷ টুকাই বলে গালি দিয়েছিলে৷ যারা টুকাই তারা কি মানুষ নয়?
.
আপনি ভুল বলছেন। একটু আগে আমার সাথে ডাইনিং রুমে যে কথা বলল তিনি তো তূর্জয়ের মা ছিলেন। অনেক মর্ডান, ইয়াং মহিলা৷
.
তূর্জয় মা চিৎকার করে বলে উঠে,
“হ্যাঁ, আমিই সে ইয়াং মর্ডান মহিলা৷ আমিই কাজের লোক৷ আমার দুই ছেলের জন্য দুই রুপ৷”
.
তূর্জয়ের মা মুখে জল দিয়ে শ্যামবর্ণ মেকআপ তুলে ফেলেন৷ তূর্জয়ের মায়ের এমন রুপে দেখে মিহুর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়৷ তূর্জয়ের মা মিহুর ঘাড় ধরে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেন।
.
ঘৃণার সাথে বলে উঠেন,
“বউমা, আমাকে এভাবেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলে৷ মনে করার চেষ্টা করো৷”
.
মিহু ছলছল চোখে তূর্জয় মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মিহু কি বলবে? সত্যিই তো সে গরিবদের মানুষ হিসেবে কখনো দেখেনি৷ সব সময় টাকাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে৷
.
তূর্জয়ের মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে,
“বউমা তুমি এখান বুঝবে গবির কাকে বলে৷ তাদের মনে কষ্ট দিলে কতটা কষ্ট হয়৷ আমি তোমাকে সেই পথে দাঁড় করাবো৷ তুমি আমার ছেলের এমন অবস্থা করেছো৷ তোমাকেই সারা জীবন স্যান্ডির দায়িত্ব নিতে হবে৷”
.
তূর্জয়ের মা আর নিজের চোখের জলকে আটকাতে পারলো না৷ কান্না করতে করতে তিনি তার রুমে চলে গেলেন৷ তূর্জয় মিহুর পাশে বসে মিহুর চোখের জল মুছে দেয়৷
.
তূর্জয় কোমল কন্ঠে বলে উঠে,
“মানুষকে ছোট করে কখনো দেখবে না৷ তারাও আমাদের মতো মানুষ৷ টাকা হলেই মানুষ হয় না। মানুষ হওয়ার জন্য একটা ভলো মন লাগে৷ যা তোমার মাঝে নেই৷”
.
তূর্জয় চলে যেতে নিলেই মিহু তূর্জয়ের পা ধরে বসে। কান্না করতে করতে,
“প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন৷ আমি বুঝতে পারিনি স্যান্ডির এমন অবস্থা হবে৷”
.
তূর্জয় ক্ষেপে বলে উঠে,
“তোমার মতো অহংকারী মেয়েদের স্বয়ং ভগবানও ক্ষমা করবেন না৷ আর আমি কে ক্ষমা করার? এখান থেকে চলে আসো৷ স্যান্ডির ঘুম ভেঙে যাবে।”
মিহু তূর্জয়ের পিছু পিছু তূর্জয়ের রুমে আসে৷ মিহুকে নিজের রুমে দেখে তূর্জয় খুব রেগে যায়৷ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে,
“আমার পিছু পিছু ঘুর ঘুর করছো কেন?”
.
আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে৷ আমি কোথায় ঘুম আসবো? আমার ঘুমের কোন জায়গা নেই৷ আমি বরং আপনার সোফায় ঘুমিয়ে পড়ি৷
.
চলবে……
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।