মেঘের ভেলা পর্ব ৩|অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে বিয়ে

প্রেমের ভেলা
পর্ব ০৩
অধির রায়

মিহুর সকাল বেলা স্যান্ডির পাশে বসে কান্না করে যাচ্ছে৷ তূর্জয় ঘুম থেকে উঠে মিহুকে দেখতে না পেয়ে স্যান্ডির রুমে চলে আসে৷ মিহুকে এভাবে কান্না করতে দেখে তূর্জয়ের হৃদয় অনেকটা ভেঙে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়৷

স্যান্ডি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতে পাই, মিহু তার পাশে বসে আছে৷ স্যান্ডি এক লাফ দিয়ে উঠে পড়ে৷ ভালোভাবে মিহুকে দেখে যাচ্ছে। তূর্জয় মাথায় হাত দিয়ে,
“তুমি মিহু হতে পারো না৷ তুমি মিহু হতে পারো না৷”
.
স্যান্ডি বিছানা থেকে নেমে মদের বোতল হাতে নিয়ে ঘটঘট করে মদ খেতে থাকে৷ মিহু স্যান্ডির হাত থেকে মদের বোতল কেঁড়ে নেয়৷
.
মিহু রেগে বলে উঠে,
“এসব কি করছেন? কেন নিজের জীবনকে এভাবে শেষ করে দিচ্ছেন?”
.
মিহুকে ধাক্ক দিয়ে সরিয়ে,
“আমাকে আটকানোর চেষ্টা করবে না৷ বেরিয়ে যাও আমার রুম থেকে৷ আমাকে কেউ ভালোবাসে না৷”
.
স্যান্ডি একদম পাগলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। স্যান্ডি মানসিকভাবে একদম ভেঙে পড়েছে৷ তূর্জয় পিছন থেকে এসে স্যান্ডির পীঠে ঘুমের ইনজেকশন বসিয়ে দেয়৷ স্যান্ডি ঘুমানোর পর স্যান্ডিকে বিছানায় শুয়ে দেয়।
.
মিহুর হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়৷ দরজা বন্ধ করাতে মিহু খুব ভয় পেয়ে যায়৷ জড়োসড়ো হয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে৷ এই বুঝি তূর্জয় খারাপ কিছু করে বসে।
.
তূর্জয় সোফায় বসতে বসতে,
“কাউকে ভালো না বাসলে তাকে বুঝাতে পারতে। বলতে পারতে তোমার লাইফে অন্য কেউ আছে৷ কাউকে এভাবে মৃত্যুর দিকে এভাবে ঠেলে দেওয়া ঠিক নয়৷”
.
মিহু মনের মাঝে সাহস জুগিয়ে,
“আমি যা করেছি সব ভুল৷ কিন্তু আপনি যা করেছেন সব ঠিক৷ মানলাম আমি ভালোবাসা নিয়ে খেলা করেছি৷ আপনি কি ভালোবাসা নিয়ে কোন খেলা করেননি?”
.
আমি ভালোবাসা নিয়ে কোন খেলা করিনি৷ আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি৷
.
আপনি জেনে নেন, ‘আমিও যা করেছি একদম ঠিক করেছি৷’
.
তাই বুঝি। কেন ভালোবাসার কথা বলে দাদাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলে?
.________

ফ্লাসব্রেক…..
ভার্সিটির নবীন বরণ অনুষ্ঠানের দিক মিহু অনুষ্ঠান ছেড়ে সারা ভার্সিটি ঘুরে ঘুরে দেখছিল। হুট করেই সামনে পড়ে স্যান্ডি৷ চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে আছে৷ মিহুকে দেখে মিহুর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে৷ প্রথম দেখায় মিহুকে ভালোবেসে ফেলে৷
.
স্যান্ডি মিহুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,
“ডু ইউ লাভ মি? আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি৷”
.
ভালোবাসার কথা শুনে মিহুর মাথায় রক্ত উঠে যায়৷ রক্ত সঞ্চালন দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে৷ মিহু স্যান্ডির কলার ধরে দাঁড় করার। সমস্ত শক্তি দিয়ে স্যান্ডির গালে আঘাত করে৷
.
মিহু ক্ষেপে বলে উঠে,
“একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছিস। বড়লোক মেয়েদের দেখলে প্রেম করতে মন চাই৷ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাস৷”
.
স্যান্ডির মিহুর কথার কোন জবাব দিল না৷ চোখের জল মুছে,
“ভালোবাসা বড় ছোট দেখে হয় না। ভালোবাসা হৃদয়ের গভীর থেকে হয়ে যায়৷ সেজন্য স্থান কাল দেখে ভালোবাসা হয় না৷”
.
মিহু স্যান্ডির কথা শুনে আরও রেগে যায়৷ স্যান্ডির মোটা ফ্রেমের চশমা খুলে মাটিতে পা দিয়ে পিষিয়ে ফেলে।
.
অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলে,
“আমার পিছনে আসলে তোর অবস্থা এমনই হবে৷”
.
ঝাপসা আলোয় শুধু মিহুকে দেখে যাচ্ছে৷ স্যান্ডি হার মানেনি৷ স্যান্ডি নিজের হাতের আঙ্গুলে কিস করে নিজের গালে স্পর্শ করে৷
স্যান্ডি বলে উঠে,
“তুমি আমাকে ভালোবাসবে৷ তুমিই নিজে থেকে বলবে আই লাভ ইউ।”
.
স্যান্ডি সময় নষ্ট না করে মিহুর পরিচয় খুঁজে বের করে৷ পরের দিন স্যান্ডি এক বান্ডেল গোলাপ নিয়ে মিহুর পথের সামনে দাঁড়ায়৷ মিহুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,
“আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মিহু। তোমাকে আমার মনের মিহু পাখি করে রাখবো৷ কখনও কষ্ট দিব না৷”
.
মিহু গোলাপ নিয়ে স্যান্ডির দিকে ছুঁড়ে মারে। মিহুর বান্ধবীরা মিলে স্যান্ডির বই কলম সবকিছু পুকুরে দীঘিতে ফেলে দেয়।

তবুও স্যান্ডি হার মানেনি৷ প্রতিদিন মিহুকে প্রপোজ করে গেছে। মিহু প্রতিদিন ভার্সিটি সকলের সামনে অপমান করেছে৷ অপমান করতে এক চুলও বাঁধ দেয়নি৷ মিহুর সকল অপমান স্যান্ডি মাথা পেতে নিয়েছে৷ ভার্সিটিতে কান ধরে দৌড়ানো থেকে শুরু করে পা টিপা পর্যন্ত।
.
মিহু আর স্যান্ডির বিরক্ত সহ্য করতে পারছে না৷ মিহু সিদ্ধান্ত নেয় স্যান্ডিকে গুন্ডা দ্বারা হাত পা ভেঙে দিতে৷
.
প্রতিদিনের মতো আজও ভার্সিটির গেইটে গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ মিহুকে দেখে দৌড়ে মিহুর কাছে যায়৷ আবার সেউ চির চেনা অসহ্যকর বাক্য বলে উঠে,
আই লাভ ইউ মিহু পাখি৷
.
মিহুর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে স্যান্ডির প্রপোজ এক্সেপ্ট করে৷ মিহু মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“আমিও আপনাকে ভালোবাসে ফেলেছি৷ আপনি সত্যিই বলেছেন, ‘ভালোবাসার মাঝে ছোট বড় হয় না৷’ ভালোবাসার জন্য একটা ভালো মন লাগে৷ যেটা আমি আপনার মাঝে খুঁজে পেয়েছি৷”
.
স্যান্ডি খুব খুশি। স্যান্ডির ভালোবাসা মিহু এক্সেপ্ট করে নিয়েছে৷ মিহু স্যান্ডির হাত ধরে নির্জন পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে৷ মিহুর কথা মতো মিহুর হায়ার করা লোক তাদের ঘিরে ফেলে৷ মিহু স্যান্ডিকে তাদের হাতে তুলে দিয়ে,
“সরি স্যান্ডি। তোর জন্য কোন বড়লোক ছেলে আমাকে প্রপোজ করতে পারছে না৷ তোর জন্য উত্তম মাধ্যমের ব্যবস্থা করেছি৷”
লোকদের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
“প্রাণে মারার দরকার নেই৷ বুঝিয়ে দেন বড়লোক মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকালে কি হয়?”
.
মিহুর কথা শুনে স্যান্ডি ভয় পেয়ে যায়৷ স্যান্ডি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে,
“প্লিজ মিহু তুমি এমন করতে পারো না৷ তুমি আমাকে ভালোবাসাে৷ ভালোবাসার সাথে অন্যায় করতে পারো না৷”
.
মিহু ক্ষেপে বলে উঠে,
“তোর মতো ছোটলেককে মিহু ভালোবাসবো৷”
“একে নিয়ে যান৷ না হলে আপনাদের টাকা পাবেন না৷”
.
স্যান্ডির হাত ধরে টানতে টানতে ব্রিজের উপর নিয়ে যায়৷ স্যান্ডি নিজেকে বাঁচানোর জন্য তাদের সাথে ফাইট করে যাচ্ছে৷ কিন্তু কেউ একজন স্যান্ডির মাথায় পিছন থেকে আঘাত করে৷ স্যান্ডি মাথা ধরে বসে পড়ে৷ স্যান্ডিকে একের পর পর আঘাত করতে থাকে৷ এক সময় স্যান্ডি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷
.
একজন বলে উঠে,
“সালা মারা গেছে। একে এইভাবে রাখা ঠিক হবে না৷ আমরা বরং একে নদীতে ফেলে দেয়৷”
.
একদম ঠিক বলেছো। এই বাঁচিয়ে রাখা মানে আমাদের বিপদ৷
স্যান্ডিকে নদীর জলে ফেলে দেয়৷
_________

মিহু কান্না করতে করতে,
“আমি জানতান না তারা স্যান্ডির সাথে এতটা খারাপ কাজ করবে৷ আমি শুধু স্যান্ডিকে মারার জন্য বলেছিলাম৷”
.
তূর্জয় চোখের জল মুছে,
“তুমি কি পারতে না স্যান্ডিকে বুঝাতে? তোমার লাইফে স্যান্ডির কোন জায়গা নেই৷ কিন্তু তুমি কি করলে, স্যান্ডিকে মেরে ফেললে।”
.
বিশ্বাস করেন আমি স্যান্ডিকে মেরে ফেলতে চাইনি৷
.
মানলাম তুমি স্যান্ডিকে মেরে ফেলতে চাওনি৷ কিন্তু তুমি আমার সাথে কি করলে? তুমি উনাকে কিভাবে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলে৷ তিনি বলতে চেয়েছিল উনার ছেলেকে মেনে নিতে৷
.
উনি আমার সামনে একদম কাজের লোক সেজে গিয়েছিল। সেজন্য আমি উনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি৷ উনি আমাকে ফোর্স করছিল স্যান্ডির ভালোবাসা এক্সেপ্ট করতে৷
.
মানলাম মা কাজের লোক সেজে তোমার সামনে গিয়েছিল৷ তাই বলে তুমি গুরুজনদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে৷
.
মিহু কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই তূর্জয়ের মা তূর্জয়কে ডাক দেন৷ তূর্জয় মুখে জলের ছিঁড়া দিয়ে ডাইনিং রুমে চলে আসেন৷ ডাইনিং রুমে তূর্জয়ের মায়ের সাথে বসে আছেন মিহুর বাবা, মা৷
.
মিহুর মা বলে উঠেন,
“বাবা তূর্জয় আমাকে একটি বারের জন্য আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে দাও৷ আমি তোমার শর্ত আর ভঙ্গ করবো না৷”
.
তূর্জয় তাদের মুখের দিকে মিহুকে ডাক দেয়৷ মিহু দৌড়ে এসে তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে। কান্না করার জন্য মিহুর চোখ মুখ ফেলে রয়েছে। মিহুর মা কিছু বলতে নেওয়ার আগে মিহু বলে উঠে,
“তোমরা কেন এখানে এসেছো? এখানে আবার কি খোয়াতে এসেছো৷”
.
মিহুর বাবা বলে উঠেন,
“মা তোমার সন্তানের জন্য আমি চল্লিশ শতাংশের দলিল করে এনেছি৷ তোমার সাইন লাগবে৷”
.
মিহু তার বাবার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়৷ মিহু অবাক চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
“কেন তোমরা আগে লিখে দাও নি! মানে আমার বিয়ের সময়।”
.
না মা আমরা আগে কোন প্রোপার্টি লিখে দেয়নি৷ তখনই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তূর্জয়ের মা মানা করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘তোমাকে জানানোর জন্যই এই কথা বলেছেন৷ ‌যেন তুমি নিজেকে অসহায় না ভাবো৷’
.
মিহু কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? তূর্জয় দলিল ছিঁড়ে ফেলে৷ কিছু বলতে নিলে তূর্জয় চোখ পাকিয়ে তাকায় নিহুর দিকে৷ যার ফলে মিহুর মা বাবা এ নিয়ে কথা বাড়ায় না৷ মিহুর মা বাবা দুপুরে খেয়ে চলে যান৷

চলবে……

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here