মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব -০২

#মেঘ_রোদ্দুরের_আলাপন
#পার্টঃ০২
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৭.

রিশ ভার্সিটি যাবিনা? আজতো নববর্ষ উপলক্ষে বেশ চাকচিক্য অনুসারে অনুষ্ঠান হবে।

‘মিসকাত তোর এতো অনুষ্ঠান নিয়ে ইন্টারেস্ট কেনো বলতো? আর তাছাড়াও আমি যেতে পারবোনা। আমাকে জব খুঁজতে হবে।

‘জব খুঁজতে হবে মানে?

‘আমি রেস্টুরেন্টের জবটা আর করতে চায়না তাই।

মিসকাত রিশকে বিছানায় বসিয়ে ঠান্ডা মাথায় বললো,

‘রিশ কেনো করতে চাসনা তুই? দেখ এইখানে তুই অনেক সুযোগ -সুবিধা পাস। ভার্সিটিতে এক্সাম চললে তোকে কি সুন্দরভাবে ছুটি দেয়। আর আমার ক্যাফ! এইটাতো একদিন না গেলে ২০০ টাকা কেটে দেয়। ফলে এক্সামের জন্য ছুটি নিতে খড়কাঠ পুড়াতে হয়।

‘ছেড়ে দে।

‘হোয়াট! রিশ তোর কি হয়েছে বলতো? জবটা কেনো করতে চাসনা?

এরপর রিশ মিসকাতকে সবকিছু খুলে বললো রেস্টুরেন্টে যা যা হয়েছে।

‘ওহ এই ব্যাপার? কিন্তু রিশ তাতে প্রবলেমটা কোথায়? তোকেতো আর বলেনি যে রিশ কাল থেকে আর রেস্টুরেন্টে আসবেনা।

‘যেইখানে আত্মসম্মান নেই সেইখানে থাকা বোকামো ছাড়া কিছুইনা মিসকাত। আর তাছাড়া আমি নিজের যোগ্যতায় জবটা পেয়েছিলাম তাতেও চাকরি থাকবেনা থ্রেট কেনো শুনতে হবে? তুই রেডি হয়ে নে ভার্সিটি যাবিনা?

‘প্লিজ রিশ প্লিজ চলনা ভার্সিটিতে। আর তাছাড়া জবতো তুই কালকেও খুঁজতে পারবি। প্লিজ চলনা…।

‘ওফ তোকে নিয়েনা আর পারিনা মিসকাত৷ ঠিক আছে আমিও যাবো।

‘আরেকটা কথা রাখবি? প্লিজ না করিসনা।

মিসকাত মুখটা ভেঙ্গে এমন ভাবে কথাটা বলেছে যে রিশ ফিক করে হেসে দেয়। পরে বলে আচ্ছা না করবোনা বল।

‘আজকে আমরা দুজন শাড়ী পড়ে যাবো প্লিজ।

‘না না আমি এইসবে নেই। তোর ইচ্ছে হলে তুই ই পর।

‘রিশশ..

‘ইশশ আচ্ছা পড়বো।

মিসকাত রিশকে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে।

৮.

স্যার..আজ এইখানকার ভার্সিটিতে নববর্ষের অনুষ্ঠান। আপনাকে সেইখানে চিফ গেস্ট হিসেবে আমন্ত্রিত করেছে।

“স্বাদ জেইনকে একবার ডেকে পাঠাওতো।

‘হুম Sure স্যার।

জেইন শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকিং করছিলো। হঠাৎ স্বাদ সামনে এসে আমতা আমতা করে বললো,

‘স্যার..সরি এই সময়ে আপনার রুমে আসার জন্য। আসলে বড় স্যার আপনাকে ডেকেছে।

‘বাপি আমাকে ডেকেছে? ওকে স্বাদ তুমি যাও আমি আসছি।

স্বাদ যেতেই জেইন ফোনটা বিছানায় রেখে ব্ল্যাক কালার টি-শার্টের উপর এ্যাশ কালার একটা ব্লেজার পড়ে নেয়। সাথে এ্যাশ কালার সফট প্যান্ট। হাতে কালো কালারের রেশভারী ঘড়িটা পড়ে চুলটা হাত দিয়ে বুলিয়ে নেয় আয়না দেখে দেখে। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে তার বাপির রুমের দিকে পা বাড়ায়।

বাপি আসবো?

”Come on, my son. You don’t need permission to come to my room”

“Thanke You বাপি। বলো কোথায় যেতে হবে।

” বাহ আমার ছেলেতো দেখছি বলার আগেই বুঝে নিয়েছে যে তাকে কোথাও পাঠানো হবে।

জেইন একটু মুচকি হেসে বললো, “বাপি তুমি বিজনেস এর দরকারে আর নিজে কোথাও না যেতে পারলে সেইখানে আমন্ত্রণ রক্ষার্থে আমাকে পাঠাও সেইটা আমি খুব ভালোভাবেই জানি। তাইতো একেবারে রেডি হয়ে চলে এসেছি।

” আমি তোমাকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করি জেইন। আসলে কি বলোতো..তোমার মাম্মাম যখন তোমাকে ১ মাসের মাথায় রেখে মারা যান। তখন অনেকে অনেক কথা বলেছিলো যে, মা ছাড়া ছেলে মানুষ হবেনা৷ সবাই আমাকে বলেছিলো আরেকটা বিয়ে করতে। কিন্তু আমি কখনোই চায়নি আমার ছেলে সৎ মায়ের অবহেলা পাক। তাই ব্যবসার পাশাপাশি দিনরাত তোমাকে সামলেছি। সবচেয়ে বড় কথা তোমার গ্রেনি না থাকলে একটা কখনো সম্ভব ছিলোনা। তুমি আছো বলেই আমার অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। নয়তো আমি যে কি বিপাকে পরতাম।

‘বাপি প্লিজ মন খারাপ করিওনা৷ আমাকে দেখো আমি তোমার আর গ্রেনির মাঝে মায়ের ভালোবাসা খুঁজে পায়। আমাকে দেখেছো কখনো? মাকে নিয়ে মন খারাপ করতে? যাক বাদ দাও। কোথায় যেতে হবে বলো।

‘চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে আজ নববর্ষের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেইখানে চিফ গেস্ট হিসেবে আমাকে আমন্ত্রিত করেছে তাই তোমাকে পাঠাতে চায় আমি। আর এছাড়াও ওইখানে আমাদের মতোই আরেকজন টপ বিজনেস -ম্যান শাহারিয়া ওয়াহিদ আসবেন।

জেইন মনে মনে নামটা কয়েকবার এলোমেলো করে ভাবলো, ‘ওহ মনে পড়েছে। রিশ নামক মেয়েটির বাবা। বাহ্ ভালোইতো অনেক কিছু জানা যাবে।

সো যথেষ্ট রেসপেক্টফুলি কথা বলবে। যাও সাবধানে যেও। আর হ্যাঁ সাথে স্বাদ কে নিয়ে যেও।

‘ওকে বাপি। গ্রেনিকে বলে দিও আমি কেথায় গিয়েছি।

“ওকে মাই সান।

৯.

বাবা আমি যাবো ভার্সিটি অনুষ্ঠানে?

‘না রিলজেম। তোমাকে যেতে হবেনা। কি জানি রিশ তোমাকে চিফ গেস্টের আসনে দেখে কেমন রিয়েক্ট করে।

‘বাবা তুমি যদি সব রিশকে নিয়েই ভাবো তবে আমাকে কেনো রেখেছো? আমাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিলেইতো পারো।

” রিলজেম…

“চিৎকার করবেন না মম। আমিতো ঠিকি বলেছি। আপনারা সবসময় আপনাদের মেয়েকে নিয়ে ভাবেন। কই? এইটাতো একটাবারো ভাবেন না যে আপনাদের ছেলে পড়াশোনা শেষ করে বসে আছে বিজনেস সামলাতে তাকে বিজনেসে জয়েন করায়। মম আর বাবাই এইভাবে চলতে পারেনা৷ আপনারা হয় কিছু করুন নয়তো আমার প্রপ্রারটি আমাকে বুঝিয়ে দিন।

‘দেখো মমতা দেখো। তোমার ছেলে লোভের বশে অন্ধ হয়ে গেছে। তোমার ছেলের জন্য আজ মেয়েটা রাগ করে চলে গেছে।

” রিলজেম.. তুমি ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো। তুৃমি তোমার মা বাবার সাথে কথা বলছো আশা করি এইটা তোমাকে মনে করিয়ে দিতে হবেনা।

‘মম আমি কি বলেছি রিশকে যে তুই বাড়ি ছেড়ে চলে যা?

‘না বলোনি। তবে এইটাতো সত্যি যে তোমার বাবা আর তোমার সাথে রাগ করে রিশ চলে গেছে। কি জানি মেয়েটা কি খায় কি পড়ে..এইটা বলেই মমতা ওয়াহিদ হো হো করে কেঁদে দেয় মেয়ের জন্য।

‘কেঁদোনা মমতা। তুমি অসুস্থ। চলো রুমে চলো।

‘মম আপনি অসুস্থ প্লিজ নিজেকে সামলান।

‘থাক রিলজেম তোমাকে আর তোমার মমের কথা ভাবতে হবেনা। এইটা বলেই শাহারিয়া ওয়াহিদ তার ওয়াইফ মমতা ওয়াহিদকে নিয়ে রুমে চলে যান।

১০.

‘এই রিশ দেখ দেখ ভার্সিটির সবাই তোর দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে।

‘ওফ মিসকাত আমার দিকে না তোর দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে কি বলতো তোকে যা কিউট লাগছে এই শাড়ীটাতে যে কি বলবো।

“থাক থাক হয়ছে বইন আর বাঁশ দিসনা। অলরেডি অনেকগুলো বাঁশ দিয়ে ফেলছোস।

‘আরে মিসকাত আমি সত্যি বলছি।

‘শুন, সত্যি বলতে তোকেও অনেক কিউট লাগছে। আসলে তুইতো এমনিতেই সুন্দর আর আজকেতো বলে সেজেছিস তার জন্য ভার্সিটির সবাই দেখ কেমন হা করে তাকিয়ে আছে।

১১.

ভার্সিটির সামনে ৩টা ব্ল্যাক কালারের গাড়ি আর ৩ টা কার কালারের এ্যাশের মধ্যে গাড়ি এসে থেমেছে।

একটা গাড়ি থেকে রিশ আর স্বাদ বেরিয়ে এসেছে। জেইন চোখের সানগ্লাসটা খুলে ভার্সিটিটা পরখ করে একবার দেখে নিলো। আরেকটা গাড়ি থেকে রিলজোম আর তার বাবাইয়ের এসিস্ট্যান্ট আহিল এসেছে।

স্যার ওনি হলেন রিলজেম ওয়াহিদ মিস্টার শাহারিয়া ওয়াহিদদের একমাত্র ছেলে।

‘হাই মিস্টার ওয়াহিদ। আই এম জেইন মেহেরিয়া। সেহের মেহেরিয়ার ছেলে।

” হাই জেইন।

“স্যার চলুন যাওয়া যাক..

‘হুম আহিল চলো।

জেইন স্বাদের সাথে সাথে যাওয়াতে মিনমিনিয়ে বললো,

‘স্বাদ মিস্টার ওয়াহিদ না আসার কথা? ওনার ছেলে এসেছে কেনো?

‘জানিনা স্যার। হয়তো ওনার বাবা পাঠিয়েছেন।

১২.

এখন আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করতে আসছেন..

” রিশ ওয়াহিদ।

এই নামটা শুনে রিশ চমকে উঠে। রিশ মনে মনে বললো, ‘আজব আমিতো কোনো গানে নাম দেয়নি তাহলে কে আমার নাম দিলো?

হঠাৎ দেখলো মিসকাত দুষ্টুমি ভঙ্গিতে হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। রিশ বুঝে ফেলেছে যে মিসকাত নাম দিয়েছে। বার বার মাইকে ডাকছে রিশকে। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে তাকে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে স্টেজে।

আর এইদিকে স্বাদ আর জেইন দুজনি অবাক। রিলজেম স্বাভাবিক থাকলেও। স্বাদ জেইনের কানে ফিসফিস করে বলে,

‘স্যার রিশ এইখানে পড়ে?

‘আমিওতো জানতাম না স্বাদ। ভাই এইখানে! বোনও গান গাইবে? যাক এখন দেখা যাক দুজন ঠিক কি কি রিয়াকশন দেখায়। এইটা বলেই জেইন বাঁকা হাসে। তার এই মেয়েটিকে জানার আগ্রহ না চায়তেই বেড়ে যাচ্ছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here