#যদি_জানতে
Part:15
Written by: Shawon
পরেরদিন সকাল বেলা,মুখের উপর কোনো কিচুর টের পেয়ে শাহরিয়ার চোখ খুলে তাকালো।আহিন তার বুকের উপর শুয়ে আছে আর তার চুল গুলোয় শাহরিয়ারের মুখের উপর পরে আছে।আহিনকে এতটা কাছে দেখে ও চমকে যায়।সে আহিনকে আস্তে করে দূরে সড়িয়ে দেয়।বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখন দেখতে পায় তাদের কাপড় চোপড় নিচে পরে আছে।কম্বলের নিচে চোখ দিতেই ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়,ও কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছে না।সে ততক্ষণ বোঝতে পারলো না যতক্ষণ বিছানার চাদরের উপর থাকা রক্তগুলো চোখে পরলো।সে আহিনের দিকে তাকালো আহিন নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে।শাহরিয়ারের নিজের উপরই রাগ হতে লাগলো,সে এত বড় ভুল কি করে করতে পারলো?তার তো আগে কখনো এমন হয়নি তাহলে কাল রাতে কি এমন হয়েছিল।
এসব ভেবে শাহরিয়ার বেড থেকে উঠতেই ওর মাথা চক্কর দিয়ে উঠে,সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে।পরক্ষণেই মনে হলো কাল রাতের পার্টির কথা।সে একা একা বলতেই লাগলো….
-“তারমানে কাল রাতে আমাদের ড্রিংকসে কিছু একটা মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে!কিন্তু এমন কে করবে আর কেনই করবে??”
শাহরিয়ার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।সে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেও দেখলো আহিন এখনো ঘুমিয়ে আছে।সে আস্তে আস্তে করে আহিনের পাশে গিয়ে বসলো।আহিনের চুলগুলো পিছনে সরিয়ে দিলো,আহিন ঘুমের মাঝেই শাহরিয়ার কে টান দিয়ে শুয়ে আবার জরিয়ে ধরলো।শাহরিয়ার অবাক হলেও আহিনের এমন কান্ড দেখে ও একাই হেসে দেয়।আবার কাল রাতের কথা মনে হতেই হাসিটা উধাও হয়ে যায়।আহিন সবটা জানার পর যদি তাকে ভুল বোঝে!যদি সে শাহরিয়ারকে মাফ করতে না পেরে!যদি বা শাহরিয়ারের প্রতি থাকা বিশ্বাস টা ভেঙে যায়!শাহরিয়ার এসব ভাবছে।
একটু পর শাহরিয়ার নিজেকে আহিনের থেকে সড়িয়ে নিয়ে বসে পরে।তারপর আহিন’কে আস্তে আস্তে ডাকতে শুরু করে….
-“আহিন!আহিন!উঠো,সকাল হয়ে গেছে।আহিন!!”
আহিন ঘুম ঘুম চোখে চোখ মেলে,শাহরিয়ার কে তার পাশে বসে থাকতে দেখায় সে থমকে উঠে বসে,কারন শাহরিয়ার তখনও খালি গায়ে ছিলো,তার শার্ট পরেনি।আহিন যখন বোঝতে পারলো ওর শরীরে কোনো কাপড় নেই তখনই চোখ বড় বড় করে শাহরিয়ারের দিকে তাকায়।শাহরিয়ারও নিজের প্রতি অপরাধ বোধের জন্য তার দিকে চোখে চোখ রাখতে পারছিল না।তবুও সে আহিনের দিকে তাকিয়ে বললো…
-“আই এম সরি,কালরাতে…..”
শাহরিয়ার আর কিছু বলতে পারলো না,তার আগেই তার গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো আহিন।আহিন কখনো ভাবতেই পারেনি শাহরিয়ার তার সাথে এমন করবে!সে ভাবছে শাহরিয়ার জোর করে এসব করেছে কারন তার কালরাতের কথা কিছুই মনে নেই।সে রাগে শাহরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো…
-“ছিহ!!আপনি তাহলে আপনার আসল রুপ টা আজকে দেখিয়েই দিলেন।নিজের পুরুষত্বটা বুঝে নিলেন।আপনি এতটা নিচ আমি কখনোই ভাবতে পারিনি।আপনার যদি আমার দেহটার প্রতি এতই লোভ ছিলো তাহলে প্রথম দিনই কেন ভোগ করে নেননি?কেন এত দিন এমন ভালো মানুষের অভিনয় টা করলেন?”
-“আহিন,তুমি আমাকে ভুল বোঝছো?তুমি একটা বার শান্ত হয়ে আমার কথাগুলো শুনো!”
-“আর কি বলবেন আপনি?আর কি বাকি আছে?আর যদি কিছু বাকিও থাকে তাহলে তা আজকে রাতে পুষিয়ে নিয়েন আমি আপনাকে নিজ থেকে এলিয়ে দিবো।”
আহিন কথাগুলো বলেই কম্বলটা শরীরে জড়িয়ে কান্না করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেল।শাহরিয়ার নিজের উপর রাগ সামলাতে না পেরে পাশে থাকা সোফায় লাথি মারে।সাথে সাথে সোফাটা অনেকটা দূরে সরে যায়।
শাওয়ারটা ছেড়ে কান্নায় ভেঙে পরলো।পানিটা তার শরীরে পরার সাথে সাথেই গলায় জ্বালা অনুভব করলো।হাত দিলে আরো বেশী জ্বালা করছে,আয়নায় চোখ যেতেই দেখতে পেলো কামড়ের দাগ।যা আজকাল কাপলদের কাছে লাভ বাইট কিন্তু আহিনের জন্য এটা তার কলংকের দাগ।তার কান্না আরো বেড়ে গেল।সে ভাবতে লাগলো,”সব পুরুষই কি এমন হয়?যে কিনা নিজের বউকে তার অধিকার না দিয়েই শরীরের স্বাদ নেয়,দিনশেষে রাতে পুরুষত্ব মিটিয়ে নেয়?নাহ যদি এমন হতো তাহলে সুখী স্বামী স্ত্রী বলেকেউ থাকতো না।তাহলে শাহরিয়ার এমনটা কি করে করতে পারলো।”
অনেকসময় ধরে ওয়াশরুমে শাওয়ার নেওয়ায় শাহরিয়ার আহিনকে ডাকতে লাগলো….
-“আহিন!আহিন বাহিরে আসো!এতক্ষণ শাওয়ার নিলে তোমার শরীর খারাপ হবে।প্লিজ বাহিরে আসো আর আমার কথাগুলো একটাবার শুনো!”
-“আমি আপনাকে বলেছি আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চায়না।আমাকে একা ছেড়ে দেন প্লিজ!”
শাহরিয়ার আর কিছু বললো না।কারণ সে আহিনের মনের অবস্থা টা বোঝতে পারছে।কিন্তু তাতে তো শাহরিয়ারের কোনো দোষ নেই,সে তো নিজের খেয়ালে কিছু করেনি।আর কি কি করেছে তাও মনে নেই।
আরো দশ মিনিট পর আহিন ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।টাওয়াল পেঁচানো ভেজা শরীরে বের হওয়ায় শাহরিয়ার তার দিকে তাকাতে পারছিল না কিন্তু গাউনটা আহিনের দিকে ছুড়ে মারে।গাউনটা নিয়ে আহিন আবার ওয়াশরুমে চলে যায়।গাউন পরে বাহিরে আসলে দেখতে পায় শাহরিয়ার রেডী হয়ে বিছানায় বসে আছে।আহিন কিছু না বলে চুপচাপ বেডে টাওয়াল ছুড়ে জুতো পরে বের হয়ে আসে।শাহরিয়ার ও তার পিছু পিছু বেড়িয়ে পরে।(ফারজু’র ফ্রেন্ডরা সকালে দরজা খুলে যায়)আহিন রাস্তায় একা একা হাটছে পিছন থেকে একটা কার এসে তার সামনে দাঁড়ায়,কারের ভিতরে শাহরিয়ার ছিলো,সে কারের দরজা খুলে দেয়।আহিন চুপচাপ উঠে বসে কারণ কালরাতের পর থেকে একটু ব্যাথা অনুভব হচ্ছে তার।গাড়িতে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বললো না।আহিন সারাটা রাস্তা বাহিরে তাকিয়ে তাকিয়ে এসেছে,শাহরিয়ার বেশ কয়েকবার আহিনের দিকে তাকালো।সে বোঝতে পারলো আহিন ঠিক কতটা কান্না করেছে,কারণ আহিনের চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে।হোটেল রুমে এসে আহিন চেন্জ করেই শুয়ে পরলো,শাহরিয়ার কিছু বলতে চায়ছিল কিন্তু আহিনকে শুয়ে পড়তে দেখে আরকিছু বললো না।সেও ফ্রেশ হয়ে একটা কফি,খাবার অর্ডার করলো আর ব্যাথার ট্যাবলেট।কিছুক্ষন পর কফি আর ট্যাবলেট,খাবার চলে আসলো।শাহরিয়ার খাবারগুলো নিয়ে আহিনের কাছে গেল।আর আহিন’কে ডাক দিয়ে বললো….
-“আহিন খাবারগুলো খেয়ে ট্যাবলেট খেয়ে নাও,ব্যাথা কমে যাবে।”
ব্যাথার কথা শুনে আহিন রেগে গেল।সে উঠে বসে পরলো আর রাগী গলায় বলল…
-“এসব ফালতু ফরমালেটির কোনো প্রয়োজন নেই।ব্যাথার না হয় শারীরিক টা চলে গেল,কিন্তু মানসিক!!মানসিক ব্যাথাটা কি আপনি সারিয়ে তুলতে পারবেন??পারবেন না!তাই আমার সাথে এখন ফালতু ফর্মালিটি দেখাতে আসবেন না।”
আহিন কথাগুলো বলে আবার শুয়ে পরলো।শাহরিয়ার কিছু না বলে চপচাপ কফির মগটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
সারাটাদিন চলে গেল,আহিন বিছানা থেকে উঠেনি,শাহরিয়ার সোফায় শুয়ে বসেই কাটিয়ে দিলো।কেউ কোনো খাবার খায়নি সারাদিন।সন্ধ্যায় শাহরিয়ার আহিন’কে ডেকে বললো….
-“আহিন প্লিজ!আমার কথাগুলো একটা বার শুনো!তারপর যদি মনে হয় আমি নিজে থেকে এসব করেছি তাহলে তুমি তোমার ইচ্ছে মতো যা ইচ্ছে করবে।”
আহিন শাহরিয়ারের কথা শুনে শাহরিয়ার কে আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।তারপর একটানে বুক থেকে নিজের শাড়ির আঁচল টা সড়িয়ে বললো…..
-“নিন,নিজের ইচ্ছে মতো করে পুরুষত্ব মেটান!আমি আর আপনাকে বাঁধা দিবো না,এমনিতেও আমার আর কিছু রইলে না।এখন চুপ হয়ে কেন দাঁড়িয়ে আছেন,নিন আমার দেহ টা কাল রাতের মতো করে ভোগ করে নিন।”
আহিন কথাগুলো বলার সাথে সাথে শাহরিয়ার তার গালে পাঁচ টা আঙুল বসিয়ে দিল।আহিনের এখনের কথায় তার এখন খুব রাগ হলো,আর রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরেই থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।আহিন তাল সামলাতে না পেরে বিছানায় পরে গেল।আহিন গালে হাত দিয়ে শাহরিয়ারের দিকে তাকে শাহরিয়ার বলে…
-“আমি কখন থেকে তোমাকে সব বিষয়টা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু তুমি কিছুতেই শুনতে চাচ্ছো না।উল্টো কতগুলো আজে বাজে কথা বলে যাচ্ছো।আমি যদি তোমার দেহ ভোগ করতে চায়তাম তাহলে অনেক আগেই ভোগ করে নিতাম।কিন্তু আমি তেমন কিছুই করিনি কারণ আমি তোমাকে সম্মান করি।তোমাকে কেন আমি সব মেয়েদের কেই সম্মান করি।কালরাতে জানিনা আমাদের মাঝে কি হয়েছে এবং কি হয়েছে কিন্তু এটা শিউর আমরা দুজনেই মিলিত হয়ে গেছি।বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু জানি,আমি তো এটাও জানি না কাল ঐ ড্রিংকস নেওয়ার পর কি এমন হয়েছিলো,শুধু আমার এতটুকু মনে আছে তুমি বোকার মতো হাসছিলে!এর পর আমার আর কিছুই মনে নেয়।”
শাহরিয়ারের কথা শুনে আহিনের মনে পরলো সত্যি ইতো কাল ডান্স শেষে জুস খাওয়ার পর তার আর কিছু মনে পরছে না।সে শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো….
-“তাহলে কি জুসে কিছু মেশানো ছিলো?কিন্তু কে এমন করবে আর কেনই বা এমন করবে?”
-“আমার মাথাতেও কিচ্ছু ঠুকছে না,কিন্তু হ্যা এটা শিউর জুসেই কিছু একটা মেশানো ছিলো!”আর হ্যা যা কিছুই হয়েছে আমার কোনো হাত ছিলো না,আমি তখন নিজের মাঝে ছিলাম না,আমার মনে হয় তুমিও জ্ঞানে ছিলে না।যদি থাকতে তাহলে এসব মেনে নিতে না আর এখন এমন পরিস্থিতিও হতো না।যায়হোক আই এম সরি আহিন!আমি কখনোই চায়নি আমাদের মাঝে এসব কিছু হোক,কোনোভাবে তুমি আমার থেকে কষ্ট পাও,আমার প্রতি বিশ্বাস হারাও।আমার নিজের অজান্তেই আমি এত বড় একটা ভুল করে ফেলেছি,পারলে আমাকে মাফ করে দিও”
শাহরিয়ার হাত জোড় করে কথাগুলো বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।আহিন ধপ করে বিছানায় বসে পরলো।সে বোঝতে পারলো কালরাতে যা হয়েছে তাতে শাহরিয়ারের কোনো দোষ নেই,সম্পূর্ণ টাই তাদের দুজনের এক্সিডেন্ট।সে শাহরিয়ারের সাথে করা ব্যবহারগুলোর জন্য অন্তত সরি ফিল করতে লাগলো।#যদি_জানতে
Part:16
Written by: Shawon
বাড়ির কলিং বেল চাপতেই ফারজু দরজা খুলে দিলো।আহিন আর শাহরিয়ারকে দেখতে পেয়ে ফারজু আহিন’কে জড়িয়ে ধরলো আর কানে কানে বললো…
-“হানিমুন কেমন কাটলো?”
আহিন কিছু বললো না শুধু একটা শুকনো হাসি দিয়ে শাহরিয়ারের দিকে তাকালো।ওরা ভিতরে ঢুকে প্রথমে বাবা মাকে সালাম করলো।তারপর নিজেদের রুমে চলে গেল।আহিন শাহরিয়ারকে বললো…
-“আপনি ফ্রেশ হতে যান,আমি কাপড় চোপড়গুলো তুলে রাখছি!”
-“নাহ,আগে তুমি যাও আমার একটু কাজ আছে।”
আহিন আর কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুম চলে গেল।শাহরিয়ার রুম থেকে বেড়িয়ে কাইফাকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পেল না।ছাদ থেকে নামছে তখনই ফারজুর সাথে দেখা।
-“কি ভাইয়া আসতে না আসতেই ছাদে চলে গেল?”
-“এই একটু দরকার ছিলো।যায়হোক কাইফাকে দেখতে পাচ্ছি না!ও কোথায়?
-“ও তো চলে গেছে।”
-“চলে গেছে মানে!”
“হুম,তোমরা হানিমুনে যাবার একদিন পরই ও চলে গেছে।আর এত অবাক হওয়ার কি আছে?ও বাবা অসুস্থ ছিল বলে এসেছিল এখন বাবা সুস্থ তাই চলে গেছে।”
-“এভাবে হঠাৎ কিছু না বলে!”
-“হটাৎ কিসের আমরা তো জানতামই বাবার অসুস্থ এর জন্য এসেছে।”
-“তুই বুঝবি না!”
শাহরিয়ার চলে গেল।ফারজু একা একাই বলতে লাগলো….
-“আমি সব বুঝি!তুই জানিস না আমি কি কি জানি?আমি তোদের মাঝে আর কাউকে আসতে দিবো না আর কাউকে না!”
আহিন ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে শাহরিয়ার ড্রেস চেন্জ করছে।
-“আপনি কোথাও যাচ্ছেন?”
-“হুম,একটু বাহিরে যাচ্ছি,কাইফা’র সাথে দেখা করতে হবে!”
-“তাহলে বাহিরে কেন যেতে হবে?ও তো বাসায় আছেই!”
-“নাহ,ও বাসায় নেই।আমরা চলে যাবার পরই নাকি ও চলে গেছে।ফোনেও ট্রাই করছি কিন্তু পাচ্ছি না।ওকে আমাদের মাঝে হওয়া সবকিছু আগে আগেই বলে দিতে হবে নয়তো ও আমাকে ভুল বোঝতে পারে।”
-“আপনার কি মনে হয়,আপনি আগে থেকে সবটা বলে দিলে ও ভুল বোঝবে না!আমি ওকে খুব ভালো করেই চিনি তাই বলছি ওকে এসব কিছু বলার ূরকার নেই।ওকে না শুধু কাউকেই কিছু বলার দরকার নেই।”
-“কাকে কি বলতে মানা করছো ভাবী?”
পিছন থেকে আহিন’কে ফারজু এই কথা জিজ্ঞেস করায় ওরা দুজন খুব চমকে যায়।আহিন ফারজুর সামনে গিয়ে বলে…
-“কই কিছু নাতো!আর তুমি আমাদের কথায় কি কান পেতে ছিলে নাকি?”
-“আরে ভাবী,তুমি যে কি বলো না।আমি তো তোমাদের ডাকতে এসেছিলাম।আসলে আম্মু তোমাদের দুজনকে নিচে ডাকছে।”
-“আচ্ছা তুমি যাও,আমরা আসছি।”
ফারজু চলে গেল,আহিন শাহরিয়ার কে বললো,…
-“নিচে যাওয়া যাক,মা ডাকছেন!”
-“হুম চলো!”
শাহরিয়ার আহিন দুজনই একসাথে নিচে নামছিলো আহিন শাড়ির সাথে পা লেগে পরে যেতে নিলেই শাহরিয়ার ওকে ধরে ফেলে।তারপর বলে…
-“এত তারা কিসের?একটু ধীরে ধীরে খেয়াল রেখে নামো!”
-“হুম”
শাহরিয়ার আহিনকে দাড় করিয়ে আগে নেমে যায়।আহিনও তার পিছু পিছু নাম।শাহরিয়ারের মা বলে…
-“আহিন মা,তোমার বাবা ফোন করেছিলো,ওনি বললেন তোমার মায়ের শরীর খারাপ,আমরা গিয়েছিলাম দেখতে কিন্তু তখন তুমি সুইজারল্যান্ড ছিলে তাই তোমাকে কিছু বলেনি।তাই এখন একটিবার দেখে আসো।”
-“কি হয়েছে মায়ের?আপনারা আগে কেন বলেননি?”
-“এত টেনশন করোনা,তেমন কিছু হয়নি প্রেসার টা একটু সমস্যা করছে!হয়তো কিছু একটা নিয়ে টেনশন করছে।তুমি বরং আজকেই যাও,গিয়ে দেখে আসো!শাহরিয়ার তুই আহিন’কে নিয়ে বেড়িয়ে পর!”
আহিন দৌড়ে নিজের রুম থেকে ফোন আর পার্সটা
নিয়ে নিচে নামলো।সে বেড়িয়ে যেতে নিলে শাহরিয়ার বলে….
-“আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে একটু দাঁড়াও!”
-“ভাবী,আমিও যাবো!”
ফারজু যেতে চায়লে না করেনি।তিনজনই বেড়িয়ে পরে।আহিনদের বাড়িতে এসে ফারজু আগে ভিতরে ঢুকে গেল,আহিন আর শাহরিয়ার পরে আসলো।আহিন বললো….
-“সরি,আপনি আজকে আর ওর সাথে দেখা করতে যেতে পারলেন না!”
-“তুমি এসব কি বলছো?তোমার মা অসুস্থ আর আমি তোমাকে এমন একটা অবস্থায় একা ছে্রে দেব।এতটা স্বার্থপর নয় আমি।চলে এখন ভিতরে যাওয়া যাক।”
তারা দুজনও ভিতরে চলে গেল।মা বাবার যতই অসুস্থ থাক,নিজের সন্তান কে দেখলে কোনো অসুস্থতায় যেন কাজ করে না।এখন ঠিক মতো সবকিছু করছেন আহিনের মা,নতুন জামাইয়ের জন্য রান্না থেকে শুরু করে সব।সবাই একসাথে খেতে বসেছে আহিন দু তিন লুকমা মুখে দিতেই বমি বমি ভাব হতে লাগলো।সে দৌড়ে বেসিনে চলে গেল,ফারজু আর আহিনের মা পিছন পিছন এলো।আহিনের মা বললো…
-“শুকরিয়া,আলহামদুলিল্লাহ!!”
-“মা,আমি এখানে বমি করছি আর তুমি খুশি হচ্ছো?”
-“কারণ এটা মানে কেউ আসছে তোর কোলে!”
মায়ের কথা শুনে আহিনের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।ফারজু বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে আহিনকে জড়িয়ে ধরলো….
-“মা,তুমি কি যা তা বলছো?তুমি তো জানোয় আমার গ্যাসটিক হলেই আমার বমি হয় তাহলে এসব কেন বলছো!”
আহিন আর কিছু না বলে সোজা খাবার টেবিলে চলে গেল।আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না তার!ও নিজের পেটে হাত দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো,যদি সত্যি সত্যি তার গর্ভে থেকে থাকে তাহলে সে কি করবে?কি করে বলবে শাহরিয়ার কে?কি ব্যবহার করবে তার সাথে সবটা জেনে?যদি বাচ্চা টাকে নষ্ট করে দিতে বলে।তাহলে কি করবে আহিন?এসব ভাবতে ভাবতে মাথা পাগল হয়ে যাচ্ছে তার।
সপ্তাহ দুয়েক হয়ে গেল,সবকিছুই স্বাভাবিক মতো চলছে।আহিনের অফিস,শাহরিয়ারের অফিস,কিন্তু শাহরিয়ার হাজার চেষ্টা করেও কাইফার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না।কাজের চাপের জন্য কাইফার বাড়িতেও যেতে পারছেনা।
এদিকে সাদাফ নিজের মনের ভিতর জমানো কথাগুলো আহিনকে বলার জন্য পাগলের মতো ছটফট করছে।সে বার বার বলতে চেয়েও বলতে পারছে না।আহিন নক করে সাদাফের কেবিনে ঢুকলো….
-“স্যার,আপনি যেই ফাইল গুলো করতে দিয়েছিকেন আমি ওগুলো শেষ করে ফেলেছি।আর কোনো নতুন ফাইল আছে কি?”
-“ওহ,গুড!না,তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি অনেক ক্লান্ত,তুমি বসো!”
-“না,স্যার আমি ঠিক আছি।”
-“বসতে বলছি!”
আহিন’কে একটু ধমকের সুরেই কথাটা বললো সাদাফ,তারপর এক গ্লাস পানি ওর দিকে এগিয়ে দেয়।আহিন পানি টা নিয়ে পান করলো।কিছুদিন ধরে আহিন অল্প কাজ করেই ক্লান্ত হয়ে যায়,আর মাঝে মাঝে মাথাটাও চক্কর দিয়ে উঠে।
-“আহিন,তোমাকে আজকে সন্ধ্যায় আমার সাথে একটা জায়গা’য় যেতে হবে!”
-“কোথায়?”
-“সেটা গেলেই দেখতে পারবে,আর তুমি এখন বাসায় চলে যাও।সন্ধ্যায় তোমাকে এড্রেস পাঠিয়ে দিলে ঐখানে চলে এসো!”
-“কিন্তু স্যার…”
-“প্লিজ আহিন!কিছু কথা বলার আছে তোমাকে!”
আহিন আর কিছু বললো না শুধু একটা টানা হাসি দিয়ে চলে গেল।সাদাফ ঠিক করেছে আজকেই ও আহিন’কে সব বলবে দিবে,তার প্রতি ফিলিংস গুলো,তার প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা গুলো সব!
আহিন লান্চের আগেই বাড়ি ফিরে আসায় ফারজু জিজ্ঞেস করে…
-“ভাবী,আজকে এত তারাতাড়ি বাসায়?”
-“হুম,আজকে সন্ধ্যায় মিটিং আছে তাই এখন অফিস করে সন্ধ্যায় ডেকেছে।”
-“ওহহ,আচ্ছা।ভালোই হলে তোমাকে নিয়ে একটা জায়গাতে যাবো ভাবছি!”
-“কোথাও যাবে?”
-“হসপিটালে!!তোমার বিষয়গুলো আমার সুবিধা লাগছে না,কিছু খেতে না পারা,বমি বমি ভাব হওয়া,মাথা চক্কর!কিছুতো হচ্ছে তাই জানতে হবে!”
-“আরে পাগলী,আমি ঠিক আছি আমার কিছু হয়নি!”
-“কোনো কথা হবে না,আমি যা বলছি তাই হবে।”
তিনটার দিকে আহিন’কে নিয়ে ফারজু সিটি হসপিটালে আসলো।ফারজু কল করে সবকিছুর ব্যবস্থা করে ফেলেছিল তাই যেতেই আহিনকে কতগুলো পরীক্ষা করানোর জন্য দিল।পরীক্ষার রিপোর্ট গুলো চেক করে ডক্টর বললো…..
-“সুসংবাদ আছে,আপনি মা হতে চলেছেন!”
ডক্টরের কথা শুনে ফারজু খুশিতে আহিন’কে জড়িয়ে ধরলো।এই মুহুর্তে মেয়েরা ঠিক যতটা খুশি হয় তার এক ভাগও আহিন হয়নি বরং মাথায় হাজারো চিন্তা চরে বসলো।তাহলে তার মায়ের ধারনায় ঠিক।ডক্টর আবার বললো…
-“আর হ্যা,আপনার শরীর স্বাস্থ্যের আরেকটু উন্নতি করতে হবে।বেশী বেশী করে পুষ্টিকর খাবার খাবেন,ফল খাবেন।”
-“আপনি চিন্তা করবেন না,আমি আমার ভাবীর খাবারের দায়িত্ব নিলাম।এখন আসি,আমি আজকে অনেক খুশি।আমি ফুপি হতে যাচ্ছি।”
ফারজুর কথাগুলো শুনে আহিন তার দিকে তাকিয়ে দেখে ফারজু সত্যি ই আজকে অনেক খুশি।ওরা ডক্টরের কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসলো।
আর এদিকে শাহরিয়ার আজকে অফিসের কাজ রেখেই বেড়িয়ে পরেছে।আজকে সে কাইফার সাথে দেখা করবেই,এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করার কারণ ওকে জানতেই হবে।হুট করে এমন করার কারণ সে আজকে জানবেই,সবকিছুর উত্তর আজকে সে জানতে চায়বে কাইফা’র থেকে,আর সেও বলবে আহিনের সাথে হওয়া তার অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
#চলবে!!!
#চলবে!