#যদি_জানতে
Part:17 bonus part
Written by : Shawon
পরদিন সকালবেলা,শাহরিয়ার ঘুম থেকে উঠে আহিনকে দেখতে পেল না।ফ্রেশ হয়ে এসে অফিসে যাবার আগে পর্যন্তও দেখতে পেল না।নিচে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই আছে শুধু আহিন নেই।শাহরিয়ারের কেমন অনুভব হতে লাগলে।কলিংবেল বেজ উঠলে কাজের মেয়েটি দরজা খুলে দেয়।সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকালো সেদিকে।আহিন ভিতরে ঢুকছে,আহিন একা নেই সাথে কাইফাও আছে।আর কেউ অবাক না হলেও ফারজু আর শাহরিয়ার ঠিকই অবাক হয়।আহিন সবার সামনে গিয়ে বলে…
-“আজকে সবাইকে আমি একটা অনেক বড় সত্য বলবো,যা আমার আরো আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিলো।কিন্তু জানি না কিসের উপর বিশ্বাস রেখে এতদিন বলিনি।কিন্তু আজকে না বললে অনেক দেরী হয়ে যাবে।আমার আর শাহরিয়ারের মাঝে সম্পর্ক ঠিক নেই,আমরা আর পাঁচ টা স্বামী স্ত্রী এর মতো করে সুখী নয়।প্রথমদিকে সব ঠিক থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে আমরা দুজন দুজনের থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি।তার মাত্র একটাই কারণ আমি কখনো মা হতে পারবো না।”
আহিনের কথাগুলো শুনে সবাই চমকে যায়।সবাই বড় বড় চোখ করে আহিনের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারজু চোখ দিয়ে ইশারা করে,এসব কি হচ্ছে?আহিন কোনো উত্তর দিলো না।শাহরিয়ারের মা বলে…
-“এসব তুমি কি বলছো মা?”
-“আমি ঠিকই বলছি।আমি আর ওনি খুব ভালো ভালো ডক্টরের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।তাই আমরা চাচ্ছি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি নিতে।”
ফারজু এখন উঠে গেল…
-“ভাবী!তুমি কি যা তা বলছো!”
-“আমি যাতা বলছি না,প্লিজ বাবা আর মা আপনারা আমাকে ভুল বোঝবেন না।আমি সত্যি এই সম্পর্ক আর চালাতে পারছিনা।আমাদের মাঝের সম্পর্ক এত বাজে ভাবে ভেঙে গেছে যে আমার মনে হয় না আর ঠিক হবে।”
শাহরিয়ারের বাবা রাগে শাহরিয়ার কে জিজ্ঞেস করে..
-“তুমি বউমাকে কি কি বলেছিস?”
-“নাহ বাবা,ওনি আমাকে কিচ্ছু বলেনি।আই সিদ্ধান্ত আমি একাই নিয়েছি।এতে ওনার কোনো দোষ নেই।বাবা প্লিজ আপনি উত্তেজিত হবেন না,আপনি বোঝার চেষ্টা করেন প্রতিটা পুরুষ ই চায় তার সন্তান হোক শাহরিয়ার ই তাতে বাদ যাবে কেন?”
-“কিন্তু মা..”
-“বাবা প্লিজ!আর আমার একটা শেষ ইচ্ছে রাখবেন বাবা?”
-“কি ইচ্ছে?”
-“আমি চায় শাহরিয়ার আর কাইফা’র বিয়েটা হোক আর তা আজকে সন্ধ্যায়ই!!”
আহিনের কথা শুনে শাহরিয়ার আর কাইফা আহিনের দিকে তাকায়।আহিনের চোখে পানি ছল ছল করছে।শাহরিয়ারের মা বললো….
-“মা,তুমি আরেকবার ভেবে নাও।তোমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলো।”
-“আমাদের ভাবা আর কথা বলা শেষ।বলুন না বাবা আমার এই শেষ ইচ্ছে টা রাখবেন।আমার জানামতে ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো কিন্তু ভয়ে আপনাকে কিছু বলতে পারেনি।প্লিজ বাবা ওদের কে এক করে দিন!!”
শাহরিয়ারের বাবা বলল….
-“তারপর তুমি কি করবে?তোমার বাবা মার সামনে আমি কি করে মুখ দেখাবো।”
-“ওসব আমি পরে কিছু একটা বলে মানিয়ে নিবো।আপাতত আমার কথাটা রাখেন আজকে সন্ধ্যায়ই ওদের বিয়েটা দিয়ে দিন বাবা এটা আপনার কাছে আমার শেষ অনুরোধ।আমি আপনার পায়ে..”
আহিন পা ধরতে নিবে তার আগেই শাহরিয়ারের বাবা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।আহিনও কান্না করে ফেলে।
-“আচ্ছা মা,তাই হবে।কিন্তু তোমাকেও কথা দিতে হবে তুমিও এই বাড়িতেই থাকবে,শাহরিয়ারের বউ হিসেবেই থাকবে।”
আহিন কিছু বলল না।চুপচাপ উপরে চলে গেল।সে মিথ্যে কথা দিতে চায় না কারণ সে জানে কাইফা কবুল বলার আগেই সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।আহিন নিজের রুমে এসে কান্না করতে লাগলো,ফারজুও পিছন পিছন চলে আসলো।পিছন থেকে বললো….
-“বাহ ভাবী বাহ!!আবারো তুমি তোমার বান্ধবীর জন্য ত্যাগ স্বীকার করলে?তুমি জানো আমি কত কষ্ট করে ওকে এই বাড়ি থেকে বের করিয়েছিলাম,কত কষ্ট করে তোমাকে আর ভাইয়াকে রাতে এক করেছিলাম।ঐ রাতের প্লান টা আমারই ছিলো জানি খুব বাজে প্লান ছিল।তবুও উদ্দেশ্য ঠিক ছিল।কিন্তু তুমি আজকে এটা কি করলে?সবার সামনে এত বড় মিথ্যা টা কি করে বললে?”
-“এছাড়া আর কোনো উপায় আমার ছিল না।একদিকে কাইফা কষ্ট পাচ্ছিল অন্য দিকে তোমার ভাই!”
-“আর তুমি?তুমি কষ্ট পাচ্ছো না?তোমার বাচ্চার জন্মের পর কষ্ট হবে না।তোমার ত্যাগের জন্য তোমার বাচ্চা কেন কষ্ট পাবে?তুমি এত বড় সৎ গোপন রেখে মিথ্যে বলতে পারলেও আমি সত্য জেনে মিথ্যে মেনে নিতে পারবো না।আমি এখুনি সবাইকে সব সত্য টা বলে দিবো।”
ফারজু চলে যেতে নিলে আহিন ওর সামনে দাড়িয়ে বলে…
-“না না ফারজু এমন করবে না।সবাইকে অনেক কষ্ট করে মানিয়েছি।তাছাড়া কাইফাকেও আমি নিজেই জোর করে এনেছি।”
-“যাইহোক না কেন আমি সব বলবোই!”
-“তোমাকে আমার কসম।তুমি কাউকে কিছু বলবে না।”
-“ভাবী!”
ফারজু যেতে নিয়েও থেমে গেল।আহিনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
এদিকে শাহরিয়ার কাইফাকে জিজ্ঞেস করলো…
-“তুমি আহিন’কে কোথায় পেলে?”
-“আমি ওকে পায়নি,ওই আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল!”
-“কি বলছো তুমি?”
-“হুম,ওই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।আমার কাছে হাত জোর করে তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করার ভিক্ষা চেয়েছে।”
-“সত্যি আহিন অনেক ভালো একটা মেয়ে,আমাদের কে কিভাবে এক করে দিল।আর ফ্যামিলিকেও মানিয়ে নিল।”
কাইফা কিছু বলেনি কারণ সে জানে আহিন এটা তার জন্য আর শাহরিয়ারের জন্য করেছে।আহিন নিজের ভালোবাসাকে আবার ছেড়ে দিয়েছে।কেন জানি কাইফা নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না।কেন জানি নিজেকে অপরাধী লাগছে।শাহরিয়ার ওর সামনে দাঁড়ালে সে সেখান থেকে চলে আসে।
#যদি_জানতে
Part:18
Written by: Shawon
কাইফা কে নিজ হাতে সাজিয়ে দিচ্ছে,মাথায় ঘোমটা দিবার সাথে সাথে আহিনের চোখ থেকে একটা ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পরলো।কাইফা’র চোখ থেকে তা আড়াল হলো না,সে সবসময় আহিনের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।সে আহিনের হাত ধরে বলে….
-“কেন করছিস এমন তুই?কেন এভাবে সংসার ছেড়ে চলে যাচ্ছিস।”
-“আমি ওনাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না।”
-“কিন্তু তোর ভালোবাসা!”
-“যদি ছেড়ে দিলে ভালেবাসার মানুষ টা ভালো থাকে,তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়ায় ভালো।কারণ ভালো রাখার নামই ভালোবাসা।”
-“কিন্তু…”
-“আর কোনো কিন্তু না,তুই এসব নিয়ে আর কোনো কথা বলবি না,শুধু আমাকে একটা কথা দে তুই কখনো ওনাকে কষ্ট দিবি না,সবসময় ওনার পাশে থাকবি!”
কাইফা আহিনকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল।সে এতদিন পর বোঝতে পারলো সে আহিনের মতো একটা মেয়েকে ভুল বোঝেছে,বার বার কষ্ট দিয়েছে।পিছন থেকে শাহরিয়ার রুমে ঢুকে বললো…
-“আমার বউ টা কি রেডী হয়েছে?”
রুমের ভিতর আহিনকে দেখে কথা থামিয়ে দিল।আহিন কাইফা’র থেকে নিজেকে সরিয়ে চোখের পানি মুছে বললো….
-“আপনারা দুজন কথা বলুন,আমি আসছি।”
আহিন চলে যাবার পর শাহরিয়ার কাইফাকে বললো…
-“খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।আজকে তোমাকে আমি আমার বউ করে নিবো,আর সারাজীবন আগলে রাখবো।কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিবো না তোমায়।”
-“বাহ,একদিকে নিজের বউয়ের সামনে বউয়ের উপর মিথ্যে অপবাদ লাগিয়ে বিয়ে করছিস,অন্যদিকে নতুন বউকে ভালেবাসায় আগলে রাখার কথা বলছিস।”
পিছন থেকে ফারজু এই কথা টা বললো।শাহরিয়ার আর কাইফা পিছনে ফিরে তাকালে ফারজু রুমে ভিতরে ঢুকে।কাইফা’র সামনে গিয়ে বললে….
-“এটা তুমি কি করে পারলে?তোমাকে সবকিছু বলার পরও কি করে তুমি আবার এই বাড়িতে ফিরে এলে?তোমার মনে কি একটু মায়া হয়নি ভেঙে যাওয়া মেয়েটাকে আবার ভেঙে ফেলতে,ঐ মেয়ের স্বামী,ভালেবাসার মানুষটাকে কেড়ে নিতে।কেন করলে তুমি এমন?”
-“ফারজু,তুই এসব কি বলছিস!”
-“ভাইয়া,আমি তোর মতো কাপুরুষের সাথে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না!!”
-“ফারজু!!!”
শাহরিয়ার রাগে ফারজুকে থাপ্পড় মারতে নিলে,কাইফা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর থাপ্পড় টা কাইফার গালে পরে।সে তাল সামলাতে না পেরে বিছানায় পরে যায়।ফারজু ছলছল চোখে শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে…..
-“বাহ,আজকে সত্য বললাম বলে তুই আমার গালে হাত তুলতে চায়লি?”
-“হ্যা,চায়ছি কারণ আমি কাপুরুষের মতো কিছু করিনি।”
-“বাহ,যে নিজের বউকে বউয়ের অধিকার দিতে পারে না,যে নিজের বউয়ের সামনে অন্য আরেকটা মেয়ের সামে কিস করে,যে আরেকটা বিয়ে করতে চায় তাও আবার বউয়ের উপর মিথ্যে অপবাদ দিয়ে,যে নিজের সন্তানের কথা না জেনেই বিয়ে করতে চায় তাকে কি বলবো??”
শেষের কথাটা ফারজু না চায়লেও বলে ফেলল,কারন সে রাগে একদমে কথাগুলো বলছিলো।ফারজুর কথা শুনে শাহরিয়ার আর কাইফা দুজনেই অবাক হয়ে ফারজুর দিকে তাকায়।কাইফা উঠে ফারজুর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে….
-“এসব তুই কি বলছিস?শাহরিয়ারের সন্তান মানে আহিন প্রেগন্যান্ট??চুপ করে আছিস কেন?যা বলতে চাচ্ছি তার উত্তর দে আমাকে!”
-“ফারজু কাইফার প্রশ্নের উত্তর দে!!!!”
শাহরিয়ার নরম সুরে কথাটা বললো,ফারজু বলল..
-“হুম হুম,ভাবি প্রেগন্যান্ট!কালকেই আমি ওকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে গিয়েছিলাম আর রিপোর্ট এসেছে ও প্রেগন্যান্ট,কিটেও তা স্পষ্ট ওয়েট আমি তোকে আরো একটা জিনিস দেখায়।”
ফারজু বেলকনিতে গেল,তারপর কেক টা আনতে গিয়ে দেখে টবের মাটিতে কিট টা পরে আছে।কিট আর কেকটা নিয়ে আবার রুমে চলে আসলে।আর তাদের দেখিয়ে বললো….
-“এই যে দেখ,ভাবীর কিট!!আর তোকে কাল রাতে সারপ্রাইজ দিবে বলে আমাকে দিয়ে আনানো কেক টা।”
ফারজু’র থেকে কিট টা হাতে নিয়ে কাইফা ভালো করে দেখলো।শাহরিয়ার কি বলবে কি করবে কিছু বোঝতে পারছে না কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাইফা ওর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।তারপর বলে….
-“ছিহ শাহরিয়ার!তুমি এতটা নিচ আমি কখনো ভাবতে পারিনি।”
-“তুমি আমাকে ভুল বোঝছো,আমি তোমাকে কাল এসবই বলতে গিয়েছিলাম।এটা একটা এক্সিডেন্টে হয়ে গেছে।”
-“হুম ভাইয়া,এক্সিডেন্টে হয়ে গেছে আর আমি সেটা করিয়েছিলাম কারণ আমি চায় না তোমাদের সংসার ভাঙ্গুক।”
ফারজুর কথা শুনে শাহরিয়ার ওর দিকে তাকালো,ফারজু বলল…
-“হ্যা,কারণ ভাবী তোকে অনেক ভালোবাসে।”
-“ফারজু,তুই আমাকে এই কথাটা আগে বললি না কেন?”
কাইফা ফারজুকে কথাটা জিজ্ঞেস করলো,ফারজু বললো,…
-“ভাবী চায় নি,আমাকে তার কসম দিয়েছিল।সে চায় নি ভাইয়াকে কষ্ট দিতে,তোমাদের আলাদা করতে।”
শাহরিয়ার চুপ হয়ে যায় কাইফা শাহরিয়ারের সামনে বলে..
-“শাহরিয়ার তুমি বাবা হতে যাচ্ছো!এখনও তুমি চায়বে এই বিয়ে করতে।আমি এখন তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না,আমি পারবো না এতটা স্বার্থপর হতে।আমি পারবো না একটা অনাগত সন্তানকে তার বাবার স্নেহ থেকে সরাতে।আমার জন্য কম কষ্ট পায়নি আহিন,আর নতুন করে কোনো কষ্ট দিতে পারবো না।”
-“আহিন কোথায়?”
শাহরিয়ার শুধু এতটুকুই বললো,আহিন’কে সারা বাড়িতে খুঁজতে লাগলো।কাইফা কে ফারজু জড়িয়ে ধরে বললো…
-“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ,তুমি আজকে সত্যি ভালোবাসা দেখিয়েছো।”
-“আমাকে যতটা স্বার্থপর ভাবিস,আমি এতটাও না।”
-“সরি!”
-“হুম,চল এখন আহিনের কাছে যায়।”
ওরা তিনজন সারা বাড়ি খুঁজে ফেলল কিন্তু কোথাও আহিন’কে পেল না।
-“ভাইয়া,ভাবীকে কোথাও পেলাম না।”
-“শাহরিয়ার আমিও ফোনে ট্রাই করছি কিন্তু পাচ্ছি না।”
-“তাহলে কি ও আমাদের ছেরে….”
-“ভাইয়া এমনটা হলে কিন্তু তুমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না।”
-“সাথে আমিও আমাকে ক্ষমা করতে পারবো।”
কাইফা মন কারাপ করে কথাটা বললো।হটাৎ করে শাহরিয়ারের চোখ গেল বাগানের দিকে।আহিন একা একটা বেঞ্চে বসে আছে।শাহরিয়ার দৌড়ে গেল সেদিকে,ফারজু যেতে নিলে কাইফা আটকে বলে…
-“ওদের কে একা ছেড়ে দে,নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করুক।”
ফারজু আর কিছু বললো না,কাইফাকে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে গেল।
শাহরিয়ার দৌড়ে আহিনের সামনে এসে দাঁড়ালো,আহিন কান্না করছে চোখ থেকে পানি টপটপ করে পরছে।শাহরিয়ারকে দেখতে পেয়ে বলে…
-“তুমি এখানে,ভিতরে তো কাজী চলে এসেছে।”
-“তার আগে তুমি বলো,তুমি আমার থেকে এত বড় সত্য টা কেন লুকালে?”
-“কোন সত্যের কথা বলছেন আপনি?”
-“তোমার সন্তানের কথা,তোমার পেটে থাকা আমাদের সন্তানের কথা।”
শাহরিয়ারের কথা শুনে আহিন চমকে উঠে।ওনি কি করে জানলেন তাহলে কি ফারজু ওনাকে সব বলে দিয়েছে।শাহরিয়ার চোখ রক্ত লাল হয়ে আছে,প্রচন্ড রেগে আছেন ওনি আহিন ভাবছে বাচ্চা টাকল হয়তো শাহরিয়ার মেনে নিবে না।তাই সে হাত জোর করে বলে…
-“আই এম সরি,আমি জানতাম না এমন কিছু একটা হবে,প্লিজ আপনি বাচ্চা টাকে নষ্ট করতে বলবেন না,আমি অনেক দূরে চলে যাবো।কেউ জানতেই পারবে না এটা আপনার বাচ্চা।”
-“তুমি নিজে কে কি মনে করো?পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যাক্তি,যে অন্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পারবে,স্বামী সংসার সব!!তুমি না হয় মহান হয়ে গেলে কিন্তু আমার সন্তান,আমার সন্তান কেন তোমার মহান্তের ফল ভোগ করবে?কেন তুমি তাকে তার বংশ থেকে দূরে রাখবে।আমার সন্তান আমার সাথে আমার এই বাড়িতেই থাকবে!তাতে তোমার যদি মত নাও থাকে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমি আমার বউ আর সন্তান দুটোই কে রাখবো।”
-“তা হয় না,কাইফা এসব জানলে অনেক কষ্ট পাবে।”
-“আর কত আহিন?আর কত আমার কথা ভেবে নিজের জীবন টাকে নষ্ট করে দিবি,কত কষ্ট পাবি।তুই কি আমাকে এতটাই পাষান ভাবিস যে একটা নিষ্পাপ বাচ্চা কে তার পিতার স্নেহ থেকে আলাদা করে দিবো!আমি শাহরিয়ার কে ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু সব ভালো বাসা পেতে হয় না কিছু ভালেবাসা ছেড়ে দিতে হয়।আমিও আজকে তাই করবো।তোকে আর শাহরিয়ার কে এক করে দিবো।তোদের মাঝের সমস্ত কিছু ঠিক আর পাঁচ সংসারের মতোই হবে।”
পিছন থেকে কাইফা কথাগুলো বলে,তার পাশে ফারজুও আছে।শাহরিয়ার আহিন’কে বলে….
-“আমি আমার বউয়ের কথা বলেছিলাম প্রেমিকার কথা নয়,আর তারপরও বলছি আমি আমার বাচ্চার মা,আর বাচ্চা দুজনকেই চায়।দুজনকেই অনেক ভালোবাসা দিতে চায়,যতটা ভালোবাসা দিলে তোমাকে দেওয়া কষ্ট গুলে তুমি ভুলতে পারো তারচেয়েও বেশী ভালোবাসতে চায়। আমাকে কি আমার ভুল শোধরানোর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না!!!”
-“ভাবী,সবাই ছোট বড় ভুল করেই কিন্তু তখন যদি সে ভুলটা বোঝতে পেরে নিজেকে শোধরানোর সুযোগ চায় তাহলে তাকে সেই সুযোগ টা দিতে হয়।”
ফারজু’র কথা শুনে আহিন শাহরিয়ারের দিকে তাকালে,শাহরিয়ার চোখেই বোঝা যাচ্ছে সে কতটা অনুতপ্ত।সে আর দেরী না করে শাহরিয়ার কে জড়িয়ে ধরলো,শাহরিয়ার কান্না করে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
সারাটা রুম ফুল দিয়ে সাজানো,তার মাঝে আহিন সেই আগের বিয়ের সাজ নিয়ে বসে আছে।কিন্তু এখন মুখে লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি।দরজা টা লক করে এসে শাহরিয়ার তার পাশে বসলো।আহিনের বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুরি পিটাচ্ছে,শাহরিয়ার তার হাত ধরে বোঝতে পারলো আহিন কাঁপছে তাই সে বললো….
-“এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই,আমি বাঘও না ভাল্লুক ও না,আমি বাচ্চার বাবা।তাই এত ভয় পেতে হবে না।”
আহিন একটু মুচকি হাসলো,শাহরিয়ার বললো -“তাহলে আজকে রেডী তো?”
-“আব,,উহু,এসব কিছুই হবে না আজকে!”
-“কিন্তু কেন?”
-“এমনি,আজকে সারারাত গল্প করবো।”
-“গল্প করার জন্য তো সারাজীবন আছে,কিন্তু বাসর রাত তো একবার ই আসে তাই গল্প পরেও করা যাবে।”
-“কে বলছে,আমাদের তো এটা ২য় বাসর,তাই মানুষ বাসর চায়লেই কয়েকবার করতে পারে।আর এসব মানুষের কমন জিনিস আমরা নয় হয় আমকমন কিছুই করলাম।”
-“কথাটা মন্দ বলোনি,ওকে তাহলে শুয়ে শুশে গল্প করি।”
-“হুম কিন্তু আমি কোথায় শুবো,বালিশ তো একটা!”
-“কেন আমার বুকে!”
শাহরিয়ার টান দিয়ে আহিন’কে তার বুকে ফেলে দেয়,তারপর খুব শক্ত করে জড়িয়ে রাখে।
২ বছর পর…
আজকে আহিন আর শাহরিয়ার একমাত্র ছেলে আহির’রের জন্মদিন।এই দুবছরে সম্পর্কের অনেকটা বদল হয়েছে,আহিন হয়ে গেছে কাইফার ভাবী মানে শাহরিয়ার ওর ভাই,আর কাইফা হয়ে গেছে আহিনের বসের স্ত্রী।হুম ঠিক ই ভাবছেন কাইফা আর সাদাফের বিয়ে হয়েছে।তাদের বিয়ে পারিবারিক পছন্দে হলেও তাদের মাঝে ভালোবাসা,কেয়ারিং,আন্ডারস্ট্যান্ডিং কোনটার অভাব নেই।কাইফা’র এখন প্রেগন্যান্সির তিন মাস চলছে,আজকে তারাও এখানে এসেছে।আর ফারজুর ও এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।ছেলেটা কয়েক বছর যাবত ফারজুর পিছনে ঘুরতো কিন্তু কিছু বলতে পারতো না।কিছুদিন আগে সাহস করে প্রোপোজ করে আর ফারজুও মেনে নেয়।কারণ সেও ছেলেটাকে পচ্ছন্দ করতো।
সবকিছু মিলিয়ে সবার জীবন ভালোই আছে।সারাজীবন এভাবেই সুখে শান্তি তে ভালে থাকুক তারা,এই দোয়া চেয়েই শেষ করছি এই গল্প কাহিনী।
সমাপ্ত
#চলবে!!!