#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_৭
পরদিন সকালে সভ্যর ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোন কানে পৌঁছে। দু’টো ঘুমের ওষুধ গলাধঃকরণ করে অবুঝ মনকে শাসিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিল সভ্য। সাবিহার অপমান নেওয়ার মতো ছিল না। তবে সভ্যর জেদ বেড়ে আকাশ ছাড়িয়ে সাত আসমানে চলে গেছে। প্রচন্ড ঘৃণা আরো প্রচন্ড হয়েছে সাবিহার উপর।
— সভ্য উঠেছিস? তুই আমাকে প্রতিদিন ভোরে ফোন করে জাগিয়ে দিতে বলেছিস বলে ফোন করলাম।
ফোন রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই মায়ের কন্ঠ। সভ্যর ঘুম ছাড়ছে না চোখ থেকে। ঘুমের ওষুধের প্রভাব আরকি! তবুও সে শোয়া থেকে উঠে বসলো। চোখ পিটপিট করলো অগণিত বার। যেন ঘুম ছাড়ে।
— থ্যাঙ্কিউ মা।
— ওয়েলকাম। এখন উঠে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে যা।
— হুম।
— আর শোন, তোর ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে বুঝেছিস? একদম নায়কদের মতোই লাগছে। ভালো করে খাওয়া দাওয়া করিস। মনোযোগ দিয়ে কাজ করবি।
মায়ের কথায় সভ্যর হঠাৎ মনে পরে গেলো গত রাতে সাবিহার বলা কথা। এই তো ঘুম পালিয়ে গেছে। দুঃখ এসে ঠেলেঠুলে সরিয়ে দিয়েছে ঘুম। সভ্য বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকনিতে চলে গেলো। মাকে একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো, ” আমি কি খুব বেশি কালো মা? ” কিন্তু মনের মনের প্রশ্ন মনেই রয়ে যাবে। সে জিজ্ঞেস করতে পারবে না। কিন্তু এরই মাঝে ফারজানা বেগম হঠাৎ ফোনের ওপাশ হতে বলে উঠলেন
— সভ্য আমি আজ কি ভেবেছি জানিস? তোর জন্য শপিং -এ যাবো। দুইটা সাদা শার্ট কিনবো সুন্দর দেখে। আমি তো কাল রাতে পত্রিকা দেখার সময় অবাক। হায় আল্লাহ! আমার ছেলেকে যে সাদা শার্ট পড়লে এতে সুন্দর লাগে আগে জানতাম না। আমার কলিগও কাল রাতে ফোন করে তোর প্রশংসা করলো। ছবিগুলো সেও দেখেছে। অবশ্য তার আবার মতলব আছে। ওনার মেয়ে আছে। আগে থেকেই তোকে পছন্দ করে এখন তো আরো…..
— সাদা শার্ট পরে আমায় আরো বেশি কালো লাগেনি মা?
হঠাৎ মাকে থমকে দিয়ে কথার মাঝে সভ্য হিমায়িত কন্ঠ ছুঁড়ে দিলো। ওপাশে ফারজানা বেগমের একটু আগের উল্লাসিত কন্ঠ নিভে গেছে। সভ্য জবাবের আশায় আকাশ পানে তাকিয়ে। মা কথা বলছেন না। সভ্যর হঠাৎ চিনচিন করে উঠলো বুকটা। প্রায় পাঁচ সেকেন্ড পর সাড়া পাওয়া গেলো। মা ছেলেকে পরম আদর দিয়ে শুধালেন
— কেউ কিছু বলেছে সভ্য?
সভ্য কথা বলতে পারলো না। আসছে না মুখে কিছু। ফারজানা বেগম কি বুঝলেন কে জানে? তিনি শক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন
— গায়ের রং নিয়ে যারা খেলে সভ্য তাদের কখনো ভালো হয় না। আমার ছেলে কালো। তবে ততটাও কালো নয় যতটা কালো সাদা শার্ট পড়লে বেমানান লাগে। নিজের মধ্যে কনফিডেন্স আন। অন্যের কথায় কান দিবি না। তুই যেমন আছিস সুন্দর আছিস। আশেপাশে তাকিয়ে দেখিস তো তোর মতো ঠোঁট, নাক, চোখ আর কারো আছে কিনা? সবারই তো সবকিছু থাকে না এটাই নিয়ম।
সভ্য মায়ের কথায় মুচকি হাসলো। মনটা ঈষৎ হালকা হলো কিনা সে জানে না। তবে বিশ্বাস আসলো মনে। সে ততটাও কালো নয়। যতটা কালো মানুষকে সাদা শার্টে ভুতের মতো লাগবে। তাকে খুব জোর করে স্যামলার ঘরে ঠাঁই দেওয়া যাবে সে এমন কালো। সাবিহা তার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছে।
.
সুষ্মিতা বাবার সঙ্গে এসেছে “The Beauty Hub” প্রতিষ্ঠানে। মোবারক হোসেন কথা বলছেন ডিরেক্টরের সাথে। মেয়ে তার মডেলিং শিখতে চায়। র্যাম্প (ramp) মডেল। সুষ্মিতার ছোট থেকেই ইচ্ছে সে বিখ্যাত এক র্যাম্প মডেল হবে। সুখ্যাতি ছড়িয়ে যাবে তার চারদিকে। তা বাদে একজন প্রডিউসারের মেয়ে হিসেবে তার মডেলিং নিয়ে ধ্যান ধারণা, অভিজ্ঞতা অর্জন করা একান্তই প্রয়োজন। কখনো কখনো তো দেখা যায় বাবা তাকেই পাঠিয়ে দেয় বড় বড় হিরো হিরোয়িনের সাথে মিটিং করতে। সবসময় মোবারক হোসেন বলেন, সুষ্মিতা নাকি প্রচন্ড বুদ্ধিমতী, ঠান্ড মাথার মেয়ে। তাকে দিয়ে এসব কাজ ভালো হয়। সুষ্মিতা এক দেখায় মানুষ পরখ করে ফেলে তুখোর করে। একটু হলেও চিনতে পারে, জানতে পারে মানুষের ক্যাটাগরি। কথা বলা শেষে মোবারক হোসেন মেয়েকে রেখে চলে গেলেন। সুষ্মিতা বাবাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো মহড়ার উদ্দেশ্যে। অনেক মেয়ে মহড়া দিচ্ছে। হাটাহাটি করছে ফ্যাশন শো তে যেভাবে হাঁটতে হয়। সুষ্মিতা এগিয়ে গেলো। সকলেই তাকে চেনে। একজন প্রডিউসারের মেয়েকে কে না চিনবে? তাও আবার কর্মক্ষেত্রে।
সুষ্মিতা তৈরি হচ্ছিল র্যাম্প মডেলের জন্য। কিন্তু তাকে হুট করে ডাকা হলো একটা কাপল পিকের জন্য। নতুন মডেলদের মধ্যে ভালো মেয়ে হচ্ছে না। ভালো অভিব্যাক্তি দিতে পারছে না। সুষ্মিতা চলে গেলো। সভ্য তখন তৈরি হচ্ছিল। শার্টের কলার ঠিক করছিলো আয়নায়। রুমে তখন সুষ্মিতার আগমন। সভ্য দেখেনি তাকে। কিন্তু সুষ্মিতার চোখ এড়ায়নি। সে বিস্মিত হলো সভ্যকে দেখে। প্রায় দুমিনিট লাগলো তার বিষ্ময় কেটে উঠতে। এরমাঝে সভ্য ঘুরে দাড়িয়েছে। তার চোখেও অবাকতা। কুঁচকানো কপাল আর চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। সুষ্মিতা অপ্রস্তুত হাসলো। হুট করে সে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো
— না না আমি আপনার ফোন চাইতে আসিনি। আমি মডেলিং এর জন্য এসেছি।
এ কথায় যে সভ্যর কি হেলদোল হলো তার মনে, কি ভাবলো সে সুষ্মিতা কে তা বেঝা বড় দায়। পূর্বের চাহনির কোনো হেরফের হলো না। সে সোজা সুষ্মিতাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সুষ্মিতা আবারও ধাঁধায় পরলো। মনে হলো ছেলেটার ভাবই বেশি।
.
ফটোশুট হবে একটা কাপলের। ছেলে আর মেয়ে ডিউ খাবে। একে অপরের দিকে হাসি হাসি মুখ করে। এই ছবিটা ব্যানার করা হবে। বিলবোর্ড আকারে ছাপিয়ে লাগানো থাকবে দোকানে, রাস্তার মোড়ে, বড় বড় বিল্ডিংয়ের সাথে। আগেই সতর্ক করে দিলো ডিরেক্টর। বেশ কঠিন হলো সভ্যর জন্য। একসাথে বোতল মুখের উপর নিয়ে ডিউ খেতে হবে আবার প্রেম প্রেম ভাব নিয়ে কারো দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। আগের মহড়াগুলোতে দেখা গেলো সভ্যর ভালো হচ্ছে। তাল মিলছে উপরন্তু কোনো মেয়ের মিলছে না। কিন্তু সুষ্মিতার মহড়া দেখে তালগোল পাকিয়ে গেছে। এবার সুষ্মিতা সভ্যর চেয়ে ভালো করছে তার পূর্বের অভিজ্ঞতা দিয়ে। সভ্য প্রচুর চেষ্টা করছে। গত এক ‘ঘন্টা হলো রিহার্সাল নিয়েই যাচ্ছে। সব ঠিক হলেও চোখে প্রেম প্রেম ভাবটা আসছে না। কি মুসিবত! সভ্য বিরক্ত হলো নিজের প্রতি। অবশেষে একটু বিশ্রামের জন্য বসলো। সুষ্মিতা তার সাথেই ছিলো। ভাবসাব বুঝে সে আড়ষ্টতা নিয়ে একসময় সভ্যর পাশে বসে পরলো। সভ্যর দৃষ্টি নিচের দিকে ছিলো। গায়ে তার নীল রাঙা শার্ট। মগ্ন কোনো অজানা চিন্তায়। বেশ লাগছে। সুষ্মিতার বুকটা হুট করে ধ্বক করে উঠলো। আচমকা বুকের মাঝে শুরু হলো অচেনা এক ধুকপুক ধুকপুক সুর। সভ্য যে নতুন মডেল তা সুষ্মিতা জেনে গেছে। কাজের ধারা দেখেও বুঝেছিল। তার ইচ্ছে হচ্ছে সভ্যকে একটু সাহস দেওয়ার। হয়তো সে ভেঙে যাচ্ছে শট নিয়ে। মানুষিক চাপ সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা এখনো সভ্যর হয়নি। সাপোর্ট দরকার। কিন্তু সুষ্মিতা দিতে পারছে না। একটা বাঁধা। তার আত্মসম্মান।
#রঙ_বেরঙের_খেলা
#আলিশা
#পর্ব_৮
দিন শুরু হচ্ছে আশার আলো দিয়ে। একেকটা দিনে সভ্য সফলতার একেকটা সিঁড়ি ডিঙ্গাতে আকুল হয়ে থাকে। আজ দেড় মাস চলছে মডেলিং-এর। দু’টো টিভিসি সম্পন্ন তার। দু’টোই সুষ্মিতার সাথে। এখন অলিতে-গলিতে, বড় বড় বিল্ডিংয়ের মাথায়, রাস্তার দোকানগুলোতে চোখ ফেললে কম বেশি দেখা যায়। ঐ তো সভ্য হাসি মুখে সফট ড্রিংকস – এর বোতল হাতে দাড়িয়ে আছে। দুষ্টু দুষ্টু হাসি। পাশেই সুষ্মিতা অভিমানী মুখ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কেননা সভ্য তার সাধের কোকোকোলার বোতল ছিনিয়ে নিয়ে নিজে গলাধঃকরণ করেছে। আরেকটা টিভিসির বিলবোর্ড হলো সভ্য সুষ্মিতার লম্বা চুলের বেণী টেনে ধরেছে। মুখে সেই ভুবন ভুলানো হাসি। আর চোখে মাদকময় মজা। সুষ্মিতা সেখানে এমন ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে যাতে ঝাঁক ঝাঁক বিরক্তি আর অল্প একটু ভালোলাগার আভাস পাওয়া যায়। এই টিভিসিটা তেলের ছিল। দু’জনে মিলে বেশ জমজমাট হয়ে যাচ্ছে মিডিয়া জগতে। সুষ্মিতা সাপোর্ট করে সভ্যকে। কাজের মাঝে কায়দায় সভ্যকে এগিয়ে নিতে চায়। পরোক্ষভাবে পাশে দাঁড়ায়। তবে মুখ ফুটে, এগিয়ে গিয়ে খোলাখুলি কখনো সাহায্য করে না। সভ্য কাজের বাইরে মিশতে চায় না সুষ্মিতার সাথে। আর না সাহায্য নিতে চায়। নিজের কর্ম দিয়ে উঁচু হতে চায়। কারো সাহায্য নিয়ে এগিয়ে গেলে সে প্রকৃত জয়ের আনন্দ অনুভব করতে পারবে না বলে তার ধারণা। তাই সুষ্মিতা চাইলেও আর বলেনি সিনেমার কথা। শুধায়নি, সভ্য তার বাবার চোখ সুন্দর হিরো হবে কিনা।
সভ্য অতি শীঘ্রই এই কয়েকদিনে ডিরেক্টর দের নজরে পরে গেছে। এখন তার ডাক আসে এ প্রতিষ্ঠান হতে ও প্রতিষ্ঠান হতে। খবরের কাজগের ফ্রন্ট পেজে তার ছবি ছাপানোই থাকে। কখনো ফ্যাশন মডেলের কখনো টিভিসি মডেলের। ইনকামও ভালোই হচ্ছে। মায়ের কাছে আর খরচ চাইতে হয় না। সুহালেই দিন যায় নিজের টাকায়।
আজ সভ্যর আরো একটা টিভিসি আছে। নতুন এটা। আজ থেকেই তার রিহার্সাল শুরু হবে। সভ্য তৈরি হচ্ছে। গঠন আগের চেয়ে আরো চমৎকার হয়েছে, চুলের কাটিং পাল্টিয়েছে, গায়ের রংটাও ঝকমক করে এখন। কালোরা কখনো খারাপ দেখতে হয় না। খারাপ হয় ঐ মানুষ গুলো, জঘন্য লেভেলের খারাপ হয় তাদের চোখ গুলো যারা কালো রং পছন্দ করে না। বিচ্ছিরি, নিকৃষ্ট তাদের মন মানুষিকতা যারা রঙ নিয়ে দেমাক করে। সভ্য কালো তবে অসুন্দর নয়। এই জনমে তাকে সাবিহা ছাড়া ওমন করে অসুন্দর কেউ বলেনি। বরং বলেছে, সভ্য দর্শনে প্রিন্স। হতে পারে ব্লাক প্রিন্স। তবে এতো বেশিও কালো না। এখন মিডিয়ায় পা রেখে স্যামলার ঘরে নাম উঠে গেছে। তাই তার গায়ে ছাই রাঙা শার্টটা দারুন মানিয়েছে । সভ্য শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে একবার নিজেকে ভালো করে পরখ করলো। দিন কয়েক আগে ডিরেক্টর আজগর আলী তাকে ভয়ংকর এক কথা বলেছে। ” সভ্য তোমার চোখ দেখে আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি”
সভ্যর মুখে তখন পানি ছিল। বেচারার আর পানি খাওয়া হয়নি। ঝট করে মুখের পানি বেসামাল বেগে ছিটকে যায়। এবং ভয়াবহ দুঃখের বিষয় হলো পানিটা গিয়ে পরে সুষ্মিতার গায়ে এবং প্লেটে। ছিহ! ভাবতেই সভ্যর মাথা নিচু হয়ে আসে। সুষ্মিতারও বা কি দরকার ছিল লান্সে সভ্যর মুখোমুখি বসার? অগত্যা সুষ্মিতাকে সরি বলতে হয়েছে। মেয়েটা নেহায়েত ঠান্ডা মস্তিষ্ক নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে অন্যথায় মনে হয় সভ্যর মাথায় পানি ঢালতো। না শুধু পানি নয়, দুর্গন্ধ যুক্ত নর্দমার পানি। সভ্যর ভাবনার মাঝে হেসে উঠলো।
.
নিজেকে পরিপাটি করে ঠিক করে দশটার নাগাদ সভ্য চলে এলো স্টুডিওতে। প্রথমেই তার দর্শন হলো সুস্মিতার সাথে। বেহাল দশা বেচারীর। ডান পা এক বালতি পানির মধ্যে নাকানিচুবানি খাচ্ছে। একটা চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে সুষ্মিতা বন্ধ চোখে বসে আছে। সভ্য অবাক হলো কিঞ্চিৎ। কৌতুহল জাগলো মনে। কি হয়েছে মেয়েটার? সভ্যর হঠাৎ মায়া হলো। এক মাসের বেশি ধরে কাজ করছে। আলাদা এক টান পরে গেছে। মিডিয়া জগতে এসে তার বেশ কিছু ভালো বন্ধুও জুটেছে। মন খুলে কথা বলা, হাসি ঠাট্টা, আলাপ আলোচনা করা যায় যাদের সাথে। সুষ্মিতাও তার মধ্যে একজন। সভ্য চোখ ঘুরিয়ে নিলো পুরো হল রুমটায়। যে যার যার কাজে ব্যাস্ত। সভ্য এগিয়ে গেলো সুস্মিতার নিকট। উদ্দেশ্য ছিল খোঁজ নেওয়ার। জানার কথা ছিল সুষ্মিতার কি হয়েছে। কিন্তু কাছে যেতেই হুট করে অস্বস্তি ঘিরে ফেলল তাকে। মনে হলো তার বৈশিষ্ট্যে নেই মেয়েদের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলা। সভ্য চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। ঠিক সেই সময় আচমকা সুষ্মিতা চোখ মেলে তাকালো। সভ্য থতমত খেয়ে গেলো। সে আর সরে আসতে পারলো না। সুষ্মিতা চোখ খুলেই মলিন একটা হাসি দিয়েছে। সভ্যও তার নিমিত্তে ঠোঁট প্রসারিত করলো। বলে উঠলো
— রাম্প কি যাম্প হয়ে গেছে?
সুষ্মিতা হেঁসে উঠলো। ঠিক তার নামের মতোই সুন্দর তার হাসি। এজন্যই মা তার নাম রেখেছিলেন সুষ্মিতা। অর্থ যে নারী সুন্দর করে হাসতে পারে।
— ওরকমই হয়ে গেছে। আসলে পেন্সিল শু পরার অভ্যেস খুবই কম। আজ হঠাৎ তাল সামলাতে না পেরে… পা ভেঙে ফেললাম।
— আজ টিভিসি টা আপনার ছিল না?
— হুম ছিল। কিন্তু আমি তো এই অবস্থায় করতে পারবো না। নতুন মডেল ঠিক করা হয়েছে।
আচমকা এক রাশ অভিমান জমে গেলো সুষ্মিতার মনে। সভ্য বুঝলোই না সে অভিমান। সে ‘ওহ’ বলে প্রস্থান করলো সুষ্মিতার সম্মুখ হতে। বুকটা ভার হয়ে গেলো সুষ্মিতার। প্রথম দিকে পায়ে তীব্র ব্যাথা থাকলেও সভ্যকে দেখে হুট করে তারা উড়ে গিয়েছিল অজানায়৷ কিন্তু এখন সাথে করে যেন আরো ব্যাথা এনে হারিয়ে যাওয়া ব্যাথা জায়গা করে নিলো মনে। ওমন কেন ছেলেটা? একটু পাশে বসতো, বলতো” কিচ্ছু হবে না ঠিক হয়ে যাবেন। কিন্তু সে কিছুই বলল না। উল্টো চলে গেলো কোনো খোঁজ না নিয়েই। সুষ্মিতা চোখ বন্ধ করে নিলো পুনরায়। ভেবে বসলো সে আর চোখ খুলবে না যতক্ষণ সভ্যর রিহার্সাল শেষ হবে। সে সইতে পারবে না, মানতে পারবে না মন কেড়ে নেওয়া ব্যাক্তিকে অন্য মেয়ের সাথে শুটিং করা দেখতে। সুষ্মিতা ভাবতে গিয়ে আপন মনে বিরবির করে উঠলো
” সে কেন বোঝে না কেন জানে না নেশা ধরায় যে তার চোখ দুখানা। আমার লাগলো যে হায় প্রেমের হাওয়া, তাকে পাওয়ার ভীষণ তাড়া, কিন্তু সে যে আমার খোঁজই রাখে না। শুধু রিহার্সালের সময় কথা কয় অন্য সময় কয় না। বজ্জাত বেডা।”
.
— বড়সড় মডেল হয়ে যাচ্ছেন। বাহ!
— তোমার দোয়ায়।
সভ্যর জ্বালিয়ে দেওয়া কথা। সাবিহার চোখ মুখ আগুনের ফুল্কি হয়ে গেলো। সুষ্মিতার পরিবর্তে তাকে ডাকা হয়েছে। সভ্য একটুও অপ্রস্তুত নয়। বরং সে যেন খুশি। আজ সমানে সমানে সামনাসামনি লড়াই। সাবিহা দেখবে আর জ্বলবে। সেই জ্বলানির ক্ষততে সভ্য কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেবে।
— বিলবোর্ডে দু একটা ছবি উঠলেই বড় মডেল হওয়া যায় না।
— হুম একারণেই তো বারবার ভুল করছো। একটা শুটও একশোবার করা লাগছে তোমার জন্য।
সভ্যর বিতৃষ্ণা নিয়ে বলা কথা। সাবিহা অপমানে রাগে লাল হয়ে গেলো। সভ্য চাইলোও না সাবিহার মুখের দিকে। সে আলগোছে উঠে চলে গেলো ডিরেক্টরে কাছে। সাবিহাও গেলো পিছুপিছু। তার পরনে শাড়ি, সভ্যর পরলে পাঞ্জাবি। টিভিসির বিষয় প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে। প্রথমে সাবিহার হুড়মুড় করে হাঁটতে গিয়ে ধপাস করে সভ্যর ওপর পরতে হবে। সভ্য আবার পরবে সাবিহাকে নিয়ে চেয়ারে বসে। কিন্তু চেয়ার এতোই মজবুত আর শক্ত যে দু’জনের ভরেও ভাঙবে না। সভ্য তো প্রথম বার রিহার্সালের সময় মুখ টিপে হেসেছে। কিনা কি দিয়ে কি করে। কোত্থেকে কোথায় গিয়ে কি হয়। আজব দুনিয়া।
প্রস্তুত সবাই। শুট রেডি। সাবিহা হুড়মুড় করে আসছে। তার মুখে ঝলমলে হাসি। সুন্দর হচ্ছে। ডিরেক্টর উৎসাহ দিচ্ছে। সভ্যর উপর পরার আগে সাবিহার মুখের হাসি এমনই থাকবে। কিন্তু মাঝপথে ঘটে গেলো অঘটন। সাবিহার মুখের হাসি ক্রমশ নিভে যাচ্ছে। মুখ কুঁচকে ফেলছে সাবিহা। সভ্য না চাইতেও অবাক হলো। ডিরেক্টর ধমকা ধমকি শুরু করে দিয়েছে। সাবিহার হেলদোল নেই। তার ভেতরে যেন অস্বস্তি হচ্ছে। অসুস্থ লাগছে নিজেকে। হঠাৎ সে এক অবিশ্বাস্য কান্ড ঘটিয়ে দিলো। সভ্যর কাছাকাছি এসেই আচমকা হড়বড় করে বমি করে দিলো। সকলে স্তব্ধ হয়ে গেলো। কোটর বিস্তর চাহনি। সাবিহা নেতিয়ে পরলো। সভ্য চোখ মুখ কুঁচকে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। সাবিহার মুখের জিনিস গুলো ঠিক তার বুকে এসে লেপ্টে গেছে। একটা মেয়ে এগিয়ে এলো সাবিহার নিকট। সত্যিই সাবিহার বেহাল দশা। সে দ্বিতীয় বার আবারও মেঝেতে গরগর করে বমি করে দিলো। মাথা ঘোরাচ্ছে আচমকা।
চলবে…….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন )
চলবে….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)