রিমঝিম পর্ব -০৩ ও শেষ

#রিমঝিম ।
#শতাব্দী_নাওয়ার ।
#অন্তিম_পর্ব ৩
.
আংকেল তাড়াতাড়ি একটু বসো তো।
-বসবো কেন?
-আরে বসোই না।
-আচ্ছা বসলাম।
-উম্মাহ! আসি টা টা।
-এই দাঁড়াও দাঁড়াও!তোমার নাম টাই তো জানা হলোনা।
-আমার নাম?
আমার নাম রিমঝিম খান।
বাবা-রনক খান।
মা-ঝুমঝুম খান।
বাসা ঢাকা।
রিমঝিমকে কেউ ওর নাম জিজ্ঞেস করলে ও নামের সাথে এক গড়া এই উত্তর গুলো এক সাথে দিয়ে দেয়।কারণ ওর মা ওকে এই কথা গুলোই বার বার ওকে শিখিয়েছে।
রনকের বুকের ভেতর ঝড় বয়ে গেলো।রনকের মাও অবাক হয়ে গেলো।এ দেখি তার ছেলের নাম বলছে।
রনক-মা তোমার বাবার নাম কি বললে?
-রনক খান।
-তোমার বাবা কোথায়?তোমার বাবা তোমাদের সাথে থাকেনা?
-আমার বাবা আমার জন্য তারা আনতে গেছে।ওই যে আকাশে জ্বল জ্বল করে কত তারা জ্বলে না?ওগুলো আনতে গেছে।আমি আরেকটু বড় হলে বাবা তারা গুলো নিয়ে একেবারে চলে আসবে আমাদের কাছে।
-তুমি তোমার বাবাকে কখনো দেখোনি?
-দেখেছিতো।ওই যে আকাশে সব থেকে যেই বড় তারা টা দেখা যায়,ওটাই আমার বাবা।
রনক রিমিঝিম কে কোলে নিয়ে চুমু খেতে থাকে।
আর ঝুমঝুম রিমঝিমের দেরি দেখে ওখানে এসে হাজির হয়।
রনক-ঝুমঝুম!রিমঝিম কি বলছে?
ঝুমঝুম-কি বলছে ও?
রনক-ওর বাবার নাম নাকি রনক খান।
ঝুমঝুম রিমঝিমের হাত ধরে বলে চলো মা।অনেক দেরি হয়ে গেছে।
রনক ঝুমঝুমের হাত টেনে ধরে,আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।
রিমঝিম নাম টা আমি আমাদের মেয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলাম।আর ওর নাম তুমি রিমঝিম রেখেছো,আবার ওর চোখ ঠিক আমার মত।ও বলছে ওর বাবার নামও রনক।
তবে কি ও….
চুপ করে থেকোনা জবাব দাও।
-হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।রিমঝিম তোমার মেয়ে।রিমঝিম আমাদের মেয়ে।ওই বৃষ্টির দিনেই ও আমার গর্ভে আসে।মনে আছে বুড়ি মার কথা?বুড়োটার কথা?বৃষ্টি? মনে আছে?
-আমার সব মনে আছে কলিজা।সব মনে আছে।তুমি আমায় জানাওনি কেন?
আর তোমার না বিয়ের কথা ছিলো?
-কিভাবে জানাতাম?অনেক ট্রাই করেছি তোমার ফোনে,কল যায়নি।আর বিয়ের দিনই আমি জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট।তো
মার সন্তান আমার গর্ভে।তাই আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাই।ঢাকা চলে আসি এক বান্ধবীর বাসায়।ওখানে থেকেই একটা চাকুরী খুঁজে নেই।জব করি,ওকে জন্ম দেই।তোমার পরিচয়ে বড় করি।এই তো চলছে জীবন।আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি।জানিনা কে কেমন আছে।তুমিও হয়তো বউ,বাচ্চা সংসার নিয়ে ভালোই আছো।দোয়া করি ভালো থাকো।
রনকের মা রিমঝিম কে কোলে তুলে নেয়।চুমু খেতে খেতে বলে আমার দাদু ভাই।আমার দাদু ভাই।
রনক-ভালোই বলেছো।হ্যাঁ ভালো আছি আমি।খুব ভালো আছি আমার মাকে নিয়ে।আমার জীবনে আর কারো জায়গা হয়নি।কারণ আমি তোমার স্মৃতি নিয়েই সারাজীবন বেঁচে থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আগেও বলেছিলাম,তোমার পরে আমার জীবনে আর কেউ আসবেনা।তুমি হয়তো কথাটা সিরিয়াস ভাবে নাওনি।কিন্তু আমি সিরিয়াস ভাবেই বলেছিলাম।
ঝুমঝুম-তুমি বিয়ে করোনি?
রনক-বিয়ে মানুষ কয়বার করে?মনে আছে?আমি বিদেশ থাকাকালীন তুমি আর আমি তিন কবুল পড়ে আল্লাহ কে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছিলাম?বলেছিলাম আজ থেকে তুমি আমার বউ।তুমিও মেনে নিয়েছিলে।কিন্তু পরে তোমার বাবা মায়ের ডিসিশনে সব চেঞ্জ হয়ে গেলো।তুমি ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি সেদিনের কথা।আর সেদিন থেকেই আমি তোমায় আমার বউ বলে আর নিজেকে তোমার স্বামী বলে স্বীকার করে নিয়েছিলাম।আর বৃষ্টির দিনটাকে আমি আমার স্ত্রীর আর আমার পবিত্র বাসর হিসেবে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছি।তাই আর আমার জীবনে কেউ আসেনি।আর আসবেও না কোন দিন।
রনকের মাঃ অনেক হয়েছে।এখন দুজনি থাম।বাকি কথা তোরা পরে বলিস।এবার বাসায় ফিরে চল।আমি তোদের দুজনের আবার বিয়ে দিবো।এক করে দিবো আবার দুজনের হাত।তোরা দুজন এক সাথে থাকবি।আমরা সবাই এক সাথে থাকবো আর আমি আমার দাদু ভাইকে নিয়ে বাকি দিন গুলো কাটিয়ে দিতে চাই।
*নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*

রনক আর ঝুমঝুম দুজনি মাকে জরিয়ে ধরে।
ফিরে আসে তাদের রাজশাহী।
রাজশাহী এসে রনকের মা বিয়ের আয়োজন করে।ফোন দেয় ঝুমঝুমের বাসায়,আর বলে ঝুমঝুমকে আমরা খুঁজে পেয়েছি।ঝুমঝুম আমাদের বাসায় আছে।যদি ওকে দেখতে চান তবে আপনারা আমাদের বাসায় চলে আসুন।ঠিকানা এই।
ঝুমঝুমের পরিবারের সবাই ফোন পাওয়ার পরই ঠিকানা অনুযায়ী রওনা দেয়।
রনকের বাসায় এসে দেখে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।পুরো বাড়ী সাজানো।
রনকের মা তাদেরকে ভেতরে আসতে বলেন।
সবাইকে বসতে বলেন,কিছু ক্ষণ পর ওর পরিবারের সবাই ঝুমঝুমকে দেখতে পায় কনের বেশে।সবার চোখে জল।এটা দুঃখের জল নয়।সুখের অশ্রু।মেয়েকে এত দিন পর খুঁজে পাওয়ার খুশি।
রনকের মা ঝুমঝুমের বাবা মাকে সব কিছু খুলে বলেন।ঝুমঝুমকে সবাই জরিয়ে ধরে।ঝুমঝুম সবার কাছে ক্ষমা চায়।
এর মধ্যে রনক রিমঝিমকে কোলে নিয়ে হাজির হয়।
-এরা কারা বাবা?
-এরা হচ্ছেন তোমার নানাভাই,নানু ভাই।
-উনারা দেখি আম্মুকে আদর করছে।আমাকে দেখি করেনা।
-অনেক দিন পর তারা তাদের মেয়েকে পেয়েছেন তো তাই আদর করছে।আমি যেমন তোমাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি আদর করেছি।তারাও তাই করছেন।
-তুমি তো ★তারা নিয়ে আসোনি।তারাও কি তাদের মেয়ের জন্য ★তারা আনেনি?
রনক এবার মাথায় হাত দিয়ে চাপড়াচ্ছে।
ঝুমঝুমের মা বাবা রিমঝিমকে কোলে তুলে নিলো।আদর করলো।
সবাই মিলে একত্র হলো,
বিয়ে হলো ঝুমঝুম আর রনকের।
রাতে রিমঝিম ওর মা বাবাকে বল্লো,আজ আমি দাদু ভাই,নানু ভাই এর কাছে থাকবো।তোমরা ঘুমিয়ে যেও।
ঝুমঝুম আর রনকের জন্য বাসর ঘর সাজানো হয়েছে।
ঝুমঝুম ফুলের বিছানায় বসে আছে।রনক এসে পাশে বসতেই ঝুমঝুম কেঁদে দিলো।রনক ভয় পেয়ে গেলো,
-কি হয়েছে কলিজা?তুমি কাঁদছো কেন?আমি কি কোন ভুল করেছি?বলো আমায়?
-আরে বুদ্ধু!আমি খুশিতে কাঁদছি।
-তাই বলো।আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।
আচ্ছা শোনো এবার ওয়াদা করো,আমাকে ছেড়ে কোন দিনও যাবেনা।
-কোন দিন যাবোনা।কক্ষনো না।
-ওয়াদা?
-ওয়াদা।
-হানিমুনে কোথায় যাবে বলো?
-নিয়ে যাবেতো?
-হুম নিয়ে যাবো,কোথায় বলো?
-বুড়ী মার বাড়ী।
-অবশ্যই যাবো।কালই যাবো,আর সাথে আমাদের রিমঝিমকেও নিয়ে যাবো।
-তাহলে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে।চলো চলো ঘুমাবো।
-শোনো,
-বলো,এবার কিন্তু আমার একটা ছেলে লাগবে।
-হুম আমারো।
-লাভ ইউ।
-ভালবাসি।
পরের দিন সকালে রনক ঝুমঝুম আর ঝুমঝুমের বাবা মা ঝুমঝুমদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
পথিমধ্যে রনক ঝুমঝুমের বাবা মাকে বলে,আপনারা বাসায় যান।
আমি ঝুমঝুম আর রিমঝিমকে নিয়ে একটু পরে আসছি।
ঝুমঝুমের বাবা মা চলে যায়।রনক ঝুমঝুম আর রিমঝিমকে নিয়ে বুড়ি মার বাসায় যায়,
গিয়ে দেখে সারা বাড়ী মানুষে থৈ থৈ করছে।
রনক আর ঝুমঝুমের বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ব্যথা অনুভব হয়।আচমকা এক ভয় ভীড় করে ওদের মনে।
বুড়ী মা আর বুড়োর কিছু হয়নিতো?
ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখে বুড়ি মা আর বুড়ো হাসছে।
রনক আর ঝুমঝুম যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
বুড়ী মার ছেলেরা আজ বিদেশ ছেড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে মা বাবার কাছে একেবারে চলে এসেছে।ফিরে এসেছে তাদের স্বদেশে।মাতৃভূমিতে।তাই প্রতিবেশীরা তাদের দেখতে এসেছে।
রনক আর ঝুমঝুম বুড়ি মা আর বুড়োর কাছে গেলো।বুড়ো না চিনতে পারলেও।
বুড়ি মা ঠিকই ওদের চিনে নিলো।আর মুখ ভাড় করে ফেল্লো।
দুজনই কানে ধরে সরি বল্লো,আর বল্লো আমরা খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম তাই আসতে পারিনি দেখা করতে।সরিইইই।
রিমঝিমের হাত টা বুড়ি মার হাতে দিয়ে বল্লো,এই যে তোমাদের নাত্নী।
বুড়ি মা খিল খিল করে হেসে দিলো।বুড়োও ওদের চিনে নিলো।
রনক আর ঝুমঝুমকে দুজন জরিয়ে ধরলো।দোয়া করে দিলো,সুখী হও।
রনক আর ঝুমঝুমও তাদের এই বলে বিদায় নিলো যে,
তোমরাও ভালো থাকো খুব,পরিবারের সবাইকে নিয়ে।
আর আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো তোমাদের কাছে।
#এভাবেই ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মানুষ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে।খুব খুব দোয়া রইলো সবার জন্য আমার পক্ষ থেকে।
জানিনা গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে,তবে যদি একটু খানিও ভালো লেগে থাকে তবে সেটাই হবে আমার স্বার্থকতা।
আল্লাহ্ হাফেজ!
(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here