#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২১
“হঠাৎই রিয়াদের হুস আসলো তাড়াতাড়ি সে তানজুর ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো!’রিয়াদকে চোখ সরিয়ে ফেলতে দেখে তানজুও অন্যদিকে তাকালো!’এরই মাঝে শোনা গেল বর এসেছে,, বর এসেছে শুনেই তানজু হিয়ামিনিসহ সবাই চললো গেটের কাছে!’
__
“গেটের সামনে ফটোশুট করছে আদি আর ওর পাশেই তানজু হিয়ামিনিসহ আরো কিছু মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে,,গেটের সামনে ফিতা দিয়ে আঁটকে দেওয়া হয়েছে বরের গেট!’বিষয়টা রিয়াদের কাছে বেশ লেগেছে!’সবার থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে রিয়াদ,
“এদিকে….
“সামনেই টেবিলের উপর ট্রেসহ কিছু মিষ্টি আর শরবতের গ্লাস রাখলো তানজু!’তারপর মুচকি হেঁসে বরের দিকে তাকিয়ে বললো সেঃ
—“আসসালামু আলাইকুম….
“তানজুর কথা শুনে বর পক্ষরাও বলে উঠলেনঃ
—“ওয়াইকুম আসসালাম!’
“বরপক্ষদের কথা শুনে হিয়ামিনি বলে উঠলঃ
—“আমরা কিন্তু এমনি এমনি আপনাদের ভিতরে ঢুকতে দিবো না…
“হিয়ামিনির কথা শুনে বরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলে বলে উঠলঃ
—“তাহলে আপনাদের কি চাই বলুন…
“ছেলেটির কথা শুনে তানজু বলে উঠলঃ
—“হুম ২০,০০০টাকা!’
“তানজুর কথা শুনে ছেলেটির কাশি উঠে যায়!’ছেলেটিকে কাশতে দেখে বলে উঠল তানজুঃ
—“আরে আরে এতটুকু টাকা চাওয়াতেই কাশি উঠে গেল…
—“আপনাদের ডিমান্ড এত কম জানা ছিল না আমার…
“ছেলেটির কথা শুনে তানজু হিয়ামিনি একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললোঃ
—“এটা কম ছিল!’
—“তা নয় তো কি আমি তো ভেবেছিলাম আপনারা ২৫ – ৩০ চাইবেন?
—“আপনি কি আমাদের সাথে ফ্লাট করছেন?(তানজু)
—“আরে না না আপনাদের মতো এত সুন্দর সুন্দর মানুষের সাথে ফ্লাট করা যায় নাকি..
—“এত না বকে তাড়াতাড়ি টাকা বের করুন মশাই..(হিয়ামিনি)
—“আরে আরে এক্ষুনি চটে যাচ্ছেন নাকি…
—“টাকার কথা শুনে কাশি উঠে গেল আর বলেন টাকা কম চেয়েছি পাগল পেয়েছেন নাকি…(তানজু)
“তানজুর কথা শুনে ছেলেটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা চিকনা-চাকনা ছেলে বলে উঠলঃ
—“ওর না কাশের রোগ আছে…
“সাথে সাথে হেঁসে উঠলো সবাই!’সবার হাসি দেখে ছেলেটি চোখ গরম করে তাকালো চিকনা-চাকনা ছেলেটির দিকে!’তারপর তানজুদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“হাসা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা ভিতরে যেতে পারি…
—“আরে আরে কি বলে,টাকা না দিলে এক পাও এগোতে দিবো না(হিয়ামিনি)
“এই নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেল হিয়ামিনি আর ছেলেটার মধ্যে!’
“শেষমেশ তর্কাতর্কিতে বরপক্ষরা রাজি হলো টাকা দেওয়ার জন্য!টাকা পেতেই তানজু বরকে মিষ্টি আর শরবত খাইয়ে দিলো!’
“তারপর একে একে সবাই ভিতরে চলে গেল!’
__
“খুনশুঁটি, খাওয়াদাওয়া আর হই হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে তাসলিমা আর তৌহিদের বিয়ে হয়ে গেল!’
“এরই মাঝে তানজুদের বাড়ির সামনে এসে থামলো বড় বড় কয়েকটা গাড়ি!’গাড়ি থেকে নামলো কিছু লোক!’যাদের সবারই পরনে ব্লাক কোট ব্লাক প্যান্ট,চোখে কালো চশমা,কানে ওয়াইট ব্লুট্রুথ!’
“গাড়ি থেকে নেমেই একে একে সবাই চলতে লাগলো তানজুদের বাড়ির ভিতরে!’হঠাৎই বাড়ির সামনে এত বড় বড় গাড়ি আর এত লোকদের একসাথে দেখে সবাই বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে!’
“তাসলিমার পাশেই বসে ছিল তানজু এমন সময় তার ফোন বাজতেই ওপরে রিয়াদের নাম দেখে ফোনটা তুলে বললো সেঃ
—“আসছি স্যার…
“তানজুকে যেতে দেখে তাসলিমা বলে উঠলঃ
—“কই যাস,আর এত মানুষ এরা কারা…
—“এক্ষুনি আসছি আপু,আর এরা সবাই রিয়াদ স্যার গার্ড…
—“এতজন..
—“হুম…
“এতটুকু বলে চলে যায় তানজু!’
___
“নিজের রুমে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ,অনেক আগেই নিজের রুমে এসেছে সে!’চুপচাপ দাঁড়িয়ে কিছু ভাবছে রিয়াদ দৃষ্টি তার সেই পুকুরটার দিকে!’আজ ভীষণভাবে রিয়াদের প্রথম দিনের কথা মনে পড়ছে!’
—“সত্যি সময়গুলো যেন খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়..
“ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিয়াদ!’এরই মাঝে হাজির তানজু কিছুটা বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললো সেঃ
—“স্যার…
“তানজুর মুখে “স্যার” শুনে পিছন ফিরে তাকায় রিয়াদ!’দু’মিনিট তানজুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো সেঃ
—“তুমি এসেছো..
—“জ্বি স্যার…
—“আমাকে এখন যেতে হবে তানজু আমার লোকেরা চলে এসেছে..
—“হুম স্যার দেখেছি…
“এমন সময় হাতে কিছু বোওম নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন তানজুর মা!’উনি জানে রিয়াদ এখন চলে যাবে কারন তানজু তাদের সকালেই বলেছিল!’তানজুর মা রিয়াদের সামনে এসে বললোঃ
—“তুমি চলে যাবে বাবা…?’
“তানজুর মায়ের কথা শুনে ছলছল চোখে তাকায় রিয়াদ তানজুর মায়ের দিকে!’তারপর হাল্কা মন খারাপ করে বলে সেঃ
—“হুম…
—“আর কটাদিন থাকতে পারতে তো?’
—“আসলে..
“রিয়াদ আর কিছু বলার আগেই তানজু বলে উঠলঃ
—“মা তোমায় তো আগেই বলেছি রিয়াদ স্যারের শুটিং আছে…
“তানজুর কথা শুনে তানজুর মা হাল্কা হেঁসে বললেনঃ
—“আমি কি ওতো শতো বুঝি নাকি,তুমি ছিলে খুব ভালো লেগেছিল এতদিন, আবার আসবে কিন্তু বাবা…?’
“তানজুর মায়ের কথা শুনে রিয়াদ মুচকি হেঁসে বললোঃ
—“হুম আবার আসবো আন্টি…
“এরপর তানজুর মা তার হাতের বোওমগুলো রিয়াদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“এগুলো নেও বাবা এতে কিছু পিঠে আর আচার বানানো আছে,জানি তুমি হয়তো এগুলো খুব একটা খাও না তারপরও একবার খেয়ে দেখো ভালো লাগবে,
“রিয়াদ ওনার কথা শুনে তানজুর মায়ের হাত থেকে বোওমগুলো নিয়ে হেঁসে বললোঃ
—“অবশ্যই,আপনার হাতের রান্নাটা খুব মিস করবো আমি…
“মুচকি হাসলেন তানজুর মা তারপর বললোঃ
—“ভেবেছিলাম আরো কিছু করে খাওয়াবো কিন্তু তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে ভাবতে পারি নি,তবে চিন্তা করো না আমি তানজুর কাছে আরো অনেককিছু বানিয়ে পাঠিয়ে দিবো,আর শুনো গিয়ে ফোন করে জানাইবা কিন্তু ঠিকভাবে বাড়ি পৌছাইছো কি না…
“তানজুর মায়ের কথা শুনে রিয়াদের মনটা খুশিতে ভরে উঠলো এই প্রথম কেউ এই কথাটা বললো রিয়াদকে!’রিয়াদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সমর্থন দিয়ে বলেঃ
—“অবশ্যই জানাবো….
—“প্রায় ফোন করবে,গিয়ে আবার আমাদের ভুলে যেও না কিন্তু,,
—“হুম করবো..
—“আর ভালো থেকো বাবা,..
—“আপনারাও ভালো থাকবেন…
“তানজুর মা রিয়াদের দু’গাল চেপে ধরে বললোঃ
—“ভালো ছেলে আমার,মাকে ভুলে যেও না কিন্তু…
“এতটুকু বলে চলে যায় তানজুর মা!’রিয়াদ কিন্তুক্ষন তাকিয়ে থাকে তানজুর মায়ের যাওয়ার পানে,,ওনার কথা শুনে খুব ভালো লাগলো রিয়াদের!’কেমন একটা মা মা গন্ধ পেল সে…
“রিয়াদের ভাবনার মাঝে বলে উঠল তানজুঃ
—“চলুন স্যার…
—“হুম চলো….
“তারপর রিয়াদ আর তানজু বেরিয়ে গেল রুম থেকে!’
____
“বাড়ির হুল্লোড়ের পরিবেশ নিমিষেই নীরবতায় ভর করলো!’রিয়াদ একে একে সবাইকে বিদায় জানিয়ে বসে পরলো গাড়িতে!’রিয়াদ গাড়িতে বসতেই রিয়াদের গার্ডরাও একে একে যে যাদের গাড়িতে বসে পরলো!’রিয়াদের গাড়ির জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে তানজু,রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো সেঃ
—“আমি জানি বাড়ি ফিরে আপনার মনটা খারাপ লাগবে, কিন্তু দুঃখ পাবেন না স্যার…
“উওরে হাল্কা হেঁসে বললো রিয়াদঃ
—“তুমি সব জানো তাই না,..
“উওরে তানজু কিছু বলে না!’তানজুকে চুপ থাকতে দেখে রিয়াদ আবারো বলে উঠলঃ
—“ডোন্ট ওয়ারি তানজু, আমি ঠিক আছি তবে হ্যাঁ তোমাদের খুব মিস করবো…
“উওরে হাসে তানজু!’এমন সময় তানজুর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো আদি!’হেঁসে বললো সেঃ
—“হেই ব্রো তুমি চলে যাচ্ছো…
“আদির কাজে রিয়াদের রাগ হয় ঠিকই কিন্তু তারপরও মুচকি হেঁসে বলে সঃ
—“হুম ভালো থেকো…
—“অবশ্যই!’ সেইম টু ব্রো…
“বলেই নিজের হাত এগিয়ে দিল আদি!’রিয়াদও হাত মিলালো আদির সাথে!'”এরই মাঝে হিয়ামিনি এসে বলে উঠলঃ
—“আপনাকে খুব মিস করবো সেলিব্রেটি ভাইয়া…
—“আমিও…
“এরপর আর কারো সাথে কোনো কথা হয়নি রিয়াদের!’
“নীরবে বসে রইলো রিয়াদ এরই মধ্যে একে একে চলতে শুরু করলো গাড়ি!’গাড়ি চলতে শুরু করতেই রিয়াদ সবার দিকে তাকিয়ে বাই জানালো!’একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলো রিয়াদের গাড়ি!’গাড়ি যতো এগোচ্ছে তানজুদের পরিবার ততই পিছিয়ে যাচ্ছে!’লুকিং গ্লাসে তানজুর মুখটা স্পর্শ দেখা যাচ্ছে!’রিয়াদ তাকিয়ে আছে সেখানেই,কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার!’টানা দু’বছর পর আজ প্রথম রিয়াদ তানজুকে ছাড়া বাড়ি ফিরছে,বুকের ভিতর খা খা করছে,হুট করেই তানজুর জন্য কিছু একটা ফিল হচ্ছে রিয়াদের!’রিয়াদ জানালার বাহিরের মুখ বের করে তাকালো সবার দিকে!’তারপর হাত নাড়িয়ে বাই জানালো সবাইকে!’রিয়াদকে বাই জানাতে দেখে তানজুর পরিবারও হাত নাড়িয়ে বাই জানালো….
“রিয়াদের দৃষ্টি তানজুর দিকে আর তানজুর রিয়াদের দিকে!’তারও মন খারাপ হচ্ছে সেও তো ছিল টানা দু’বছর রিয়াদের সাথে!’
“দেখতে দেখতে রিয়াদের গাড়ি তানজুদের বাড়ি ছাড়িয়ে অনেকদূর চলে গেল!’
“সবুজ শ্যামলের মাঠ ঘাট পেরিয়ে এগিয়ে চলছে রিয়াদ!’চোখের সামনে তার ভেসে আসছে প্রথম দিনের ভ্যানে করে চলার মুহূর্তটা,ভীষণ ভাবে মিস করছে সে বিষয়টা!’এক এক রাস্তা পেরিয়ে যেতেই রিয়াদের ভেসে আসছে সবকিছু ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা,আজও পাখিরা ডাকছে কিন্তু আজ রিয়াদকে স্বাগতম দেওয়ার জন্য নয় বিদায় দেওয়ার জন্য..
“ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো রিয়াদ!’মুহূর্তের মধ্যেই রিয়াদের গাড়ি ইটের রাস্তা পেরিয়ে সুন্দর পিচঢালা রাস্তায় চলে আসলো!’যতই সামনে এগোচ্ছে ততই যেন গ্রামের পরিবেশ রিয়াদকে টানছে!’দুপুরের চিক চিক করা রোদ্দুরদের ভিড়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে,…
_______
“অবশেষে রিয়াদকে বিদায় জানিয়ে একে একে সবাই ঢুকে পরলো বাড়ির ভিতরে!’এখনই তাসলিমাকেও বিদায় জানানো হবে!’বিদায় জিনিসটা সত্যি খুব দুঃখজনক!’তাসলিমা তো অলরেডি কেঁদে ফেলেছে!’সবাইকে ছেড়ে যাবে ভাবতেই চোখ বেয়ে আপনাআপনি পানি পড়ছে তার,,,
“বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে খুব!’তাসলিমাকে কাঁদতে দেখে তানজু হিয়ামিনিও কেঁদে উঠলো,…
“বিয়ে মানেই হলো হাসি কান্না দু’টোই!’সারাদিন আনন্দ,হুল্লোড়ে কেটে বিদায়ে কান্নায় ভাসিয়ে দেওয়া!’পুরো বাড়ি জুড়েই যেন কান্নার রোল পড়ে গেছে সবার,,
.
.
.
“বাসস্ট্যান্ডের সেই পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলছে রিয়াদ আজও সেই আসার সময় বাসটা চোখে পড়লো রিয়াদের!’হয়তো সবেমাত্র স্টেশন থেকে এসেছে এটা!’রিয়াদের আজও চোখে ভাসে তানজু তার কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকার মুহূর্তটা!’বাতাসে তানজর চুল তার মুখে এসে পড়া,আবার হুট করে হঠাৎ তানজু তার হাত ধরে নিজের কাছে আনানো যাতে গাছের ডালের পাতা তার মাথায় না লাগে,সবকিছুই যেন একে একে বেরিয়ে আসছে রিয়াদের চোখের সামনে!’নিমিষেই চোখ বন্ধ করে নিলো রিয়াদ বের খারাপ লাগছে তার….
___
“তাসলিমাকে বিদায় জানিয়ে একে একে সবাই বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল!’কিছুক্ষন আগেই তাসলিমাদের গাড়ি চলে গেছে!’
“মনটা যেন আজ সবারই বড্ড খারাপ…..
!
!
!#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২২
“রিয়াদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’ভিষনই ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার রুমটা!’তানজু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজের লেহেঙ্গা ধরে ভিতরে ঢুকে পরলো!’এখনও যেন রিয়াদের গায়ের গন্ধ যায় নি রুম থেকে!’এই রুমটা তানজুুরই ছিল, রিয়াদ আসবে তাই ওর রুমটাই দেওয়া হয়েছিল রিয়াদকে!’অবশ্য বিষয়টা রিয়াদ জানে না!’তানজু রুমে ঢুকে জানালার পর্দাটা হাত দিয়ে হাল্কা সরিয়ে দিল,সাথে সাথে দুপুরের চিক চিক করা রোদ্দুর এসে পড়লো তার মুখে,পুরো বাড়িটাই যেন একদম নিরিবিলি হয়ে গেছে,পাখিরাও ডাকছে না আজ হয়তো অভিমান হয়েছে তাদের!’এমন সময় সামনের গাছের ডালে দুটো হলদে পাখি এসে বসলো!’ তানজু তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে!’
“পাশাপাশি দুটো পাখি বসে আছে!’কারো মুখেই কোনো কথা নেই,হয়তো দুজন দুজনের উপর কোনো কারনে রাগ করেছে,আনমনেই হাসলো তানজু,কিছু একটা নেই নেই মনে হচ্ছে তার!’হয়তো রিয়াদের শূন্যতা…
____
“আচমকা ট্রেনের শব্দ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো রিয়াদ!’গাড়িতে বসে মোবাইল দেখছিল সে!’এমন সময় ট্রেনের শব্দ ভেসে আসলো তার কানে!’হয়তো তার মতো ট্রেনেরাও পাড়ি জমাচ্ছে কোথাও,চোখের সামনে তানজুর সাথে আসার মুহূর্তগুলো মনে পড়ছে রিয়াদের,এক অজানা ভালোলাগা আর শূূন্যতা ফিল হচ্ছে তার!’রিয়াদ তার মেবাইলের গ্যালারিতে থাকা ফটো দেখছে,হঠাৎই তানজু আর তার কিছু ফটো ভেসে আসলো,সচারাচর তানজু তেমন ফটো তুলে নি রিয়াদের সাথে!’তারপরও মাঝেসাঝে হুটহাট এসে পড়েছে তানজু রিয়াদের সেলফির মাঝে!’যেমন একটা ছবিতে রিয়াদ সেলফি তুলছিল তার অনেকটা দূরেই তানজু চুপচাপ চেয়ারে বসে নিজের মোবাইল দেখছে, তানজু রিয়াদের পিছনে থাকায় রিয়াদের সেলফিতে এসে পড়ে সে!’এই ছবিটা রিয়াদ তার শুটিং এর সময় তুলেছিল!’
“আর গ্রামের এই বিয়ে বাড়িতে টুকটাক ছবি তুলেছিল সে!’আড়াল থেকেই তুলেছিল রিয়াদ তানজুর ছবি!’আনমনেই ছবিগুলো দেখে মুচকি হাসলো রিয়াদ!’
“গাড়ির জানালা বন্ধ থাকায় বাহিরের বাতাস ভিতরে আসতে পারছে না তেমন!’রিয়াদ কিছু একটা ভেবে গাড়ির জানালা খুলে ফেললো,সাথে সাথে বাহিরের রৌদ্রময়ী বাতাস এসে লাগলো তার গায়ে!’সময়টা দুপর হওয়ায় আশেপাশে তেমন কেউ নেই বললেই চলে,মাঠ-ঘাট প্রায় খালি,মাঝেসাঝে দু’একজন দেখা যায়!’এরই মাঝে দূর আকাশে উড়ে যাচ্ছে একঝাঁক পাখি!’রিয়াদ আনমনেই তাকিয়ে রইলো সেদিকে…
“বেশ কয়েক ঘন্টা পর…
“রিয়াদের গাড়ি এসে থামলো রিয়াদের বাড়ির সামনে!’রিয়াদ হাল্কা ঘুমিয়ে পড়েছিল হঠাৎই গাড়ি থামতেই হকচকিয়ে উঠলো সে!’রিয়াদের একজন গার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলতেই রিয়াদ নেমে পরলো গাড়ি থেকে!’তারপর আস্তে আস্তে চলে গেল রিয়াদ বাড়ির ভিতরে!’বাড়ির দরজা খোলায় ছিল হয়তো রামু চাচা সে আসবে বলে আর আটকায় নি!’রিয়াদ বেশি কিছু না ভেবে চলে যায় তার রুমের দিকে,বড্ড ক্লান্ত লাগছে তাঁর!’…
“রিয়াদ দুই সিঁড়িতে উঠতেই রামু চাচা এসে হাজির কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললেন উনিঃ
—“রিয়াদ বাবু আপনে আইছেন?’
“উওরে মৃদুু কন্ঠে বললো রিয়াদঃ
—“হুম কেমন আছো তুমি?’
—“আমি তো ভালা আছি আপনে বাবু..
—“হুম ভালো, আচ্ছা শোনো আধ ঘন্টা পর আমার জন্য হট কফি বানিয়ে পাঠিয়ে দিও…
—“ঠিক আছে,আচ্ছা রিয়াদ বাবু আপনে একা তানজু আহে নাই…
—“না ও পড়ে আসবে…
—“ওহ!’
—“হুম, আচ্ছা শোনো গাড়িতে আমার কিছু ব্যাগপএ আছে কোনো এক সার্ভেন্টকে দিয়ে আনিয়ে নিও..
—“আচ্ছা বাবু…
“উওরে রিয়াদ আর কিছু না বলে চলে যায় তার রুমের দিকে….
“রামু কিছুক্ষন রিয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে চলে যায় তার কাজে….
“রুমে ঢুকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় রিয়াদ,সবকিছুই যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তাঁর!’রিয়াদ কিছুক্ষন শুয়ে থেকে চলে যায় ওয়াশরুমে সাওয়ার নিবে সে….
___
“সন্ধ্যা_৭ঃ০০টা….
“গায়ে ভাড়ি লেহেঙ্গা জড়িয়েই বিছানায় ঘুমিয়ে আছে তানজু!’চোখে মুখে এখনো সাজ রয়েছে তাঁর!’বাহিরের ঘন কালো অন্ধকারে ঢেকে গেছে প্রায়,রুমের জানালা খোলা থাকায় যেন আরো বেশি গভীরতা সেটার!’এমন সময় তানজুর রুমে আসলো হিয়ামিনি তানজুকে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে ডেকে তুললো সে!’প্রথম ডাকে না উঠলেও পর পর কয়েকবার ডাক শুনে লাফ মেরে উঠে বসলো তানজু!তারপর আশেপাশে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কিছু কি লাগবে স্যার….
“তানজুর কথা শুনে হিয়ামিনি হেঁসে বলে উঠলঃ
—“আমি তো স্যার নই তানজু,স্যার তো ঢাকায় পৌঁছে গেছে…
“সাথে সাথে চমকে উঠলো তানজু, চোখ বড় বড় করে বললো সেঃ
—“কি….
—“হুম কিছুক্ষন আগে রিয়াদ ভাইয়া ফোন করেছিল…
—“সত্যি…
—“হুম, কতক্ষন আগেই পৌঁছেছেন উনি…
—“ওহ তা আমায় ডাকিস নি কেন?’
—“তুই তো ঘুমিয়ে ছিলি তাই আর ডাকি নি…
—“ওহ ঠিক আছে…
—“তা মহারানী আপনি কি আজ এভাবেই থাকবেন নাকি…
“হিয়ামিনির কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বললো তানজুঃ
—“কোনভাবে…
“তানজুর কথা শুনে হিয়ামিনি তানজুর গায়ে হাত দিয়ে ওর গলায় থাকায় নেকলেস আর কানের দুল দেখিয়ে বললোঃ
—“এই যে ভাড়ি লেহেঙ্গা,ভাড়ি দুল, ভাড়ি নেকলেস, ভাড়ি সাজ…
“হিয়ামিনির কথা শুনে এতক্ষন পর তানজুর মনে পড়লো সে এখনো বিয়ের সাজে সজ্জিত!’কিছুটা বিস্মিত কন্ঠে বললো সেঃ
—“ওহ দেখছো আমি একদমই ভুলে গিয়েছিলাম,আসলে তখন আপুকে বিদায় দেওয়ার পর মনটা খারাপ থাকায় এই রুমে এসে ছিলাম কখন যে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারি নি….
—“হুম বুঝছি…
—“কি বুঝছোস?’
“তানজুর কথা শুনে হিয়ামিনি কিছুটা অন্যরকম কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“এটাই যে আপুর জন্য মনখারাপ হচ্ছে তোর..
—“কি বলতে চাইছিস বলতো…
—“আরে আমি আবার কি বলতে চাইবো,আচ্ছা একটা কথা বলি তানজু…?’
—“হুম বল…
—“তুই রিয়াদ ভাইয়াকে মিস করছিস?’
“সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল তানজু,তানজুকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল হিয়ামিনিঃ
—“কি হলো কথা বলছিস না কেন?’
—“আরে, ওনাকে মিস করার কি আছে..
—“ওহ,তুই মিস করছিস না আমি তো খুব মিস করছি…
—“আচ্ছা তুই বসে মিস করতে থাক আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি…
“এতটুকু বলে বিছানা থেকে নেমে চলে যায় তানজু বাহিরে…
“এদিকে হিয়ামিনি তানজু যেতেই গালে হাত দিয়ে বললোঃ
—“তুই কি সত্যি মিস করছিস না তানজু…?’
_____
“কফি হাতে বিছানায় বসে আছে রিয়াদ,সামনেই ল্যাপটপে একটা ইংলিশ গান বাজছে!’
– Could you Find A Way to Let me Down slowly♪
– A little sympattly,I Hope you Can show me♪
– if you Wanna go then i’ll Be so lonely♪
– if you’re leaving Baby Let me Down slowly♪
– Let me Down, Down♪
Let me Down,Down♪
“গানটা শুনছে আর কফিতে চুমুক দিচ্ছে সে!’সাথে নিজের ফেসবুক ইনস্টাগ্রামের হাজার হাজার মানুষের তাকে নিয়ে করা পোস্ট দেখতে ব্যস্ত সে!’কিছুদিন অনলাইন না আসাই অনেকের মনেই অনেক প্রশ্ন!’কেউ কেউ তো কান্নার ইমোজি দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে তার ফটোর কমেন্ট বক্সে!’হাজারো ফ্যানদের ভালোবাসার মাঝেও আজ যেন কিছুই ভালো লাগছে না রিয়াদের!’মন খারাপ করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো রিয়াদ তারপর কফিটা টেবিলের উপর রেখে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় সে বেলকনির কাছে!’
“বেলকনির রেলিং এর সামনে গা ঘেঁষে দাঁড়ায় রিয়াদ,আকাশে আজ কোনো তাঁরা নেই, দূর সীমানায় মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটাকে দেখা যাচ্ছে খুব,রিয়াদ সেদিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো!’সাথে সাথে ভেসে আসলো তার চোখের সামনে তানজুর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা…
“জোৎসা ভরা রাতে সারারাত ছাঁদের দোলনায় একসাথে কাটানোর কথা,রোদ্দুরে মেঘের বর্ষনে তানজুর ভেজালো মুখের কথা,অন্ধকারকে লুকাতে আলোকিত মোমবাতিদের ভিড়ে তানজুকে জড়িয়ে ধরার কথা,পাশাপাশি সকাল বেলা গ্রামীণ পথ পেরিয়ে হাঁটার কথা,সাথে ছোট্ট টং দোকানে একসাথে রং চা খাওয়ার কথা,কানাডার বিখ্যাত নায়াগ্রা ফলসে একসাথে ঘুরে বেড়ানোর কথা,সাথে বরফ নিয়ে তানজুর লাফালাফি করার কথা…
“সবই যেন আজ একে একে ভেসে আসছে রিয়াদের চোখের সামনে!’তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেললো রিয়াদ!’একরাশ অস্থিরতা ফিল করছে তার!’রিয়াদ কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে চলে আসলো তার রুমে!’এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল উপরে ডিরেক্টরের নাম দেখে রিয়াদ ফোনটা তুলে বলে উঠলঃ
—“হ্যালো…
—“তুমি এসেছো রিয়াদ…
—“হুম..
—“গুড কাল সকাল ১০ঃ০০টায় শুটিংজোনে চলে এসো….
—”ওকে…
“বলেই ফোনটা কেটে দেয় রিয়াদ!’হাত থেকে ফোন রাখতে না রাখতেই আবার ফোন বেজে উঠলো রিয়াদের!’এবার উপরে তানজুর নাম দেখতেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল রিয়াদের!’রিয়াদ তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে বললোঃ
—“হ্যালো…
“রিয়াদের “হ্যালো” শুনে অপরপাশে তানজু বলে উঠলঃ
—“হ্যালো স্যার কেমন আছেন?’
—“হুম ভালো তুমি…?’
—“হুম ভালো, ঠিকভাবে পৌঁছাতে পেরেছেন তো স্যার রাস্তায় কোনো অসুবিধা হয়নি তো…?’
—“না কোনো অসুবিধা হয় নি,তারপর তোমাদের ওখানে সব ঠিকঠাক তো…
—“হুম স্যার,ডিনার করেছেন?’
—“না এখনো করি নি….
—“এখনো করেননি স্যার রাত_১০ঃ০০টা বাজে তাড়াতাড়ি করে আসুন..?
—“হুম করবো তুমি করেছো..?’
—“হুম স্যার…
“এরপর আরো কিছুক্ষন কথা বললো রিয়াদ তানজুর সাথে!’কিছুক্ষন পর…
—“ওকে স্যার ভালো থাকেন আর তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে নিয়েন…
—“ঠিক আছে বাই..
—“হুম গুড নাইট স্যার..
—“গুড নাইট…
“বলেই ফোন কাটে রিয়াদ!’ফোন কেটেই জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে শুরু করলো সে!’এতক্ষণ যেন শ্বাস আঁটকে আসছিল তার,সাথে নার্ভাস নার্ভাস ফিল হচ্ছিল রিয়াদের!’কিছুটা বিচলিত কন্ঠে বলে উঠল রিয়াদঃ
—“আশ্চর্য!’আমি এতটা নার্ভাস কেন হয়ে গিয়েছিলাম,
“ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিয়াদ….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#