#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৩
“ডিনার সেরে বিছানায় শুয়ে আছে রিয়াদ!’কিছুক্ষন চোখ খোলা রেখে আকাশ পাতাল কল্পনা করতে করতে চোখ বন্ধ করে ফেললো সে!’চোখ বন্ধ করতেই তানজুর মুখটা ভেসে আসলো রিয়াদের সামনে!’তানজুর চোখ,মুখ,মুখে থাকা হাসি, ওর ঘুমন্ত ফেস,হলুদ শাড়ি,ভাড়ি লেহেঙ্গা সব!’সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললো রিয়াদ!’এক অস্থিরতা কাজ করছে তাঁর ভিতর!’কিছুটা বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে নিলো রিয়াদ,কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই তানজুর ফেস ভেসে আসছে তার সামনে কতক্ষণ এপাশ ওপাশ করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো রিয়াদ!’তরপর কিছুটা বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললো সেঃ
—“উফ!’আজ রাতে মনে হয় ঘুমানো যাবে না…
“বিরক্ত নিয়ে ফোনটা হাতে নিলো রিয়াদ!’কিন্তু তাতেও শান্তি মিললো না তার, বিরক্ত নিয়ে ফোনটা রাখলো তার বিছানার পাশে!’তারপর কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বসে রইলো রিয়াদ!’সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না তার সাথে হঠাৎ এমন কেন হচ্ছে?’
“কিছুক্ষণ বসে আবার শুয়ে পড়লো রিয়াদ!’এবার আর চোখ খুললো না সে তানজুকে কল্পনা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়লো রিয়াদ!’
“রাতের জোৎসা ভরা আলো এসে পড়ছে রিয়াদের মুখে!’দূর আকাশের চাঁদ মামাও উঁকি মারছে রিয়াদের রুমে,হয়তো তাঁরা রিয়াদের অস্থিরতা বুঝতে পেরেছে!’জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে আসছে রাতের ঠান্ডা বাতাস!’সাথে মুগ্ধ করা জোৎসা ভরা রাতের আকাশ!’
____
“পরেরদিন সকালে…
“ব্লাক শাড়ি পড়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’সদ্য গোসল সেরে এসেছে সে!তানজু মুচকি হেঁসে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে রিয়াদের রুমের দিকে!’আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল ঝাড়ছে তানজু…
“আচমকা ঘুমের মধ্যে মুখে পানির ফোঁটা এসে পড়ায় নড়েচড়ে উঠলো রিয়াদ!’কিন্তু চোখ খুললো না, এরকম বেশ কয়েকবার চোখে পানির ছিটে পড়ায় বিরক্ত নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো রিয়াদ!’কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো সেঃ
—“এসব কি হচ্ছে, আমায় ঘুমোতে কেন দিচ্ছো না…?’
“রিয়াদের কথা শুনে চুল ঝাড়া বন্ধ করে দেয় তানজু!’তারপর রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—-“এত ঘুমিয়ে কি করবে শুনি…
“ঘুমের মধ্যে তানজুর কন্ঠ শুনতে পেয়ে আরেকদফা অবাক হয় রিয়াদ, তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেললো সে!’সামনেই তানজুকে দেখে চোখ বড় বড় করে বললো রিয়াদঃ
—“তুমি….
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু তার কানে দুল পড়তে পড়তে বললোঃ
—“হুম আমি…
“উওরে রিয়াদ কিছু না বলে তাকিয়ে রইলো তানজুর দিকে,ভেজালো খোলা চুল, ব্লাক শাড়ি,হাতে ব্লাক কাঁচের চুড়ি,কানে কালো দুল,ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক!’সব মিলিয়ে সুন্দর লাগছে তানজুকে,কিন্তু রিয়াদের বিশ্বাস হচ্ছে না তানজু তার সামনে দাঁড়িয়ে, কারন তানজু তো রাজশাহীতে তাহলে ওর রুমে শাড়ি পড়ে,বেশি ভাবলো না রিয়াদ!’কিছুটা বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে তানজুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“তুমি তো রাজশাহীতে ছিলে তানজু তাহলে আমার বেডরুমে কি করছো…?’
“উওরে তানজু হেঁটে এসে বসলো রিয়াদের পাশে!’ তারপর বললোঃ
—“হুম ছিলাম তো রাজশাহী কিন্তু তোমার জন্য মন খারাপ হচ্ছিল তাই চলে আসলাম…
“তানজুর কথা বলার ধরন রিয়াদের ঠিক কেমন কেমন লাগছে,কারন সে জানে তানজু এভাবে তার সাথে কথা বলে না তাহলে হঠাৎ কি হলো তানজুর!’রিয়াদ তানজুর গাল স্পর্শ করতে যাবে সাথে সাথে তানজু একটু সরে এসে বলে উঠলঃ
—“তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমি এসেছি….
—“তুমি কি ঠিক আছো তানজু,তুমি এইভাবে আমার বেড রুমে কি করছো,আর থেকেও বড় কথা তুমি রাজশাহী থেকে এলে কখন?’….
—“উফ, এত প্রশ্ন!’ওসব বাদ দেও আগে বলো তুমি আমায় মিস করছিলে না…
“বলেই তানজু আস্তে আস্তে ঝুঁকে পড়ে রিয়াদের দিকে,তানজুর কাজে ঘাবড়ে যায় রিয়াদ!’বিছানার দিকে শুতে শুতে বলে উঠল সেঃ
—“এসব কি করছো তানজু…?’
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু রিয়াদের ঠোঁটে হাত দিয়ে বললোঃ
—“হুস!’….
“তানজুর কাজে আরো চমকে উঠলো রিয়াদ!’এই তানজুকে একদমই নতুন নতুন লাগছে রিয়াদের কাছে!’
“এদিকে….
“তানজু তাকিয়ে আছে রিয়াদের চোখের দিকে,রিয়াদের ভয়ার্ত চোখ দেখে হাল্কা হাসলো তানজু!’তারপর রিয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে ওর কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে বললোঃ
—“এত ভয় পেলে চলে নাকি প্রিয়,তবে তোমায় ভয় পেতে দেখতে কিন্তু দারুন লাগছে আমার..
“বলেই হেঁসে উঠলো তানজু!’
“তানজুর হাসি শুনে রিয়াদের হার্টবিট বেড়ে গেছে খুব,সাথে এক অস্থিরতা ফিল হচ্ছে তার!’
.
“ঘুমের মধ্যে চোখ বন্ধ করে কাঁপছে রিয়াদ,তাড়াতাড়ি চোখ খুলে উঠো বসলো রিয়াদ,তারপর জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো সে,আশেপাশে তাকাতেই দেখলো রিয়াদ তার রুম পুরো ফাঁকা,বিস্ময় কন্ঠ নিয়ে বললো সেঃ
—“কোথায় তানজু?’
“এরই মাঝে রিয়াদের ফোনটা বেজে উঠল,রিয়াদ টেবিলের উপর ফোনটার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে ফোনটা তুলে বললোঃ
—“হ্যালো…
“রিয়াদের ‘হ্যালো’ শুনে অপর পাশে তানজু নিজের রুমের বিছানায় বসে বলে উঠলঃ
—“গুড মর্নিং স্যার…
“ফোনে তানজুর ভয়েস শুনে ফোনটা চেক করলো রিয়াদ উপরেই তানজুর নাম্বার দেখে কিছুটা বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠল সেঃ
—“কোথায় তুমি?’
“রিয়াদের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো তানজুঃ
—“কোথায় আবার স্যার আমার ঘরে…
—“তুমি রাজশাহীতে…
—“হুম স্যার…
—“ওহ..
—“কেন স্যার কিছু কি হয়েছে?’
“তানজুর কথা শুনে এতক্ষণ পর রিয়াদ বুঝতে পারলো এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল,কিছুক্ষন চুপ থেকে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো রিয়াদ,রিয়াদকে চুপ থাকতে দেখে অপর পাশে তানজু চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কি হলো স্যার কথা বলছেন না কেন,কিছু কি হয়েছে?’
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ জোরে শ্বাস ফেলে বলে উঠলঃ
—“না না কিছু হয় নি,আসলে হুট করে ঘুমের মধ্যে তোমার ফোনটা আসলো তাই একটু চমকে গেছিলাম আর কি?’
—“ওহ, আই এক্সট্রিমলি সরি স্যার…
—“ইট’স ওকে তারপর বলো তোমাদের ওখানে সব ঠিকঠাক তো…
—“হুম স্যার….
—“গুড,তারপর তাসলিমার বউভাতের অনুষ্ঠান কবে হচ্ছে?’
—“এই তো স্যার কালকে…
—“ওহ,
—“হুম,আপনার শুটিং তো আজ থেকে শুরু হবে তাই না স্যার…
—“হুম আর কিছুক্ষন পরই আমি বের হবো তানজু…
—“ওহ,অল দা বেস্ট স্যার, এমনিতেও আপনার প্রতিটা শুটিংই বেস্ট হয় আজও হবে…
“উওরে মুচকি হাসে রিয়াদ তারপর বললোঃ
—“থ্যাংক ইউ!’
“এরপর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে রিয়াদ তানজু!’এরই মাঝে হঠাৎই তানজু বলে উঠলঃ
—“ওই আদির বাচ্চা ফোন দে আমার…
“কথার মাঝখানে তানজুর এমন কথা শুনে কিছুটা বিষম খায় রিয়াদ!’
_____
ওদিকে….
“দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে তানজুকে ফোনে কথা বলতে দেখে আদি রুমে ঢুকে তানজুর কানের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়!’ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে চমকে উঠলো তানজু,সামনেই আদিকে দেখে বলে উঠলঃ
—”ওই আদির বাচ্চা ফোন দে আমার…
“তানজুর কথা শুনে আদি দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বললোঃ
—“এত সকালে কার সাথে কথা বলছিস পেত্নী…
—“আমি যার সাথেই কথা বলি তাতে তোর কি…
—“আমার কি মানে আমার অনেককিছু…
—“বেশি বকিস না ফোন দে আমার…
—“না দিবো না কি করবি তুই…
—“তোকে তো আমি…
“বলেই বিছানা ছেড়ে নিচে নামলো তানজু তারপর পুরো রুম জুড়ে ছোটাছুটি করতে লাগলো আদি আর তানজু…
“অন্যদিকে আদি আর তানজুর কান্ড আন্দাজ করতে পেরে কিছুটা রাগ নিয়ে ফোনটা কেটে দেয় রিয়াদ,এই আদিকে একদমই সহ্য হচ্ছে না রিয়াদের!’রাগ নিয়ে মোবাইলটা রাখলো রিয়াদ টেবিলের উপর,তারপর রাগ নিয়েই বিছানা ছেড়ে উঠে চললো রিয়াদ ওয়াশরুমের দিকে,রাগ হচ্ছে তার ভিষন রাগ!’……
____
“রুমের চারদিক ছোটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসে পড়ে তানজু!’তানজুকে বসতে দেখে আদিও এসে বসলো তানজুর পাশে তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বললোঃ
—“কি হলো এতটুকুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়লি নাকি…
“তানজু চুপ!’তানজুকে চুপ থাকতে দেখে বললো আদিঃ
—“কি হলো কথা বলছিস না কেন?’
“তানজু চুপ!’
—“আরে কথা বলবি না নাকি…
“তানজু চুপ!’
—“রাগ করলি নাকি….
“তানজু চুপ!’তানজুকে এবারও চুপ থাকতে দেখে আদি তানজুর সামনে দু হাঁটু ভাজ করে বসে কান ধরে বললোঃ
—“সরি রাগ করছিস…
“আদির এবারের কথা শুনে অন্যদিকে মুখ করে ফেলে তানজু!’তানজুকে অন্যদিকে মুখ করতে দেখে আদি বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“আরে সরি বললাম তো,এই নে তোর ফোন…
“বলেই এগিয়ে দেয় আদি তানজুর ফোন,আদিকে ফোন এগিয়ে দিতে দেখে তানজু হেঁসে মোবাইলটা নিতে যাবে সাথে সাথে আদি মেবাইলটা সরিয়ে ফেলে বললোঃ
—“তুই কি ভেবেছিস আমি এগুলো বলবো…
“সাথে সাথে রাগে আগুন তানজু, ফট করে আদির কলার চেপে ধরে বললোঃ
—“শয়তান পোলা…
“তানজুর এটাকে ঘাবড়ে যায় আদি, সে একদমই প্রস্তুত ছিল না ঘটনাটায়!’আদি চোখ বড় বড় করে বললোঃ
—“এটা কি করছিস…..
“উওরে তানজু আদির হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে বললোঃ
—“যা করেছি বেশ করেছি শয়তান ছেলে….
“বলেই আদিকে কয়েকটা কিল ঘুষি মেরে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তানজু,রাগ হচ্ছে তার আদির উপর!’আদির জন্য ভালোভাবে কথাও বলতে পারলো না তানজু রিয়াদের সাথে…
_______
“ওয়াশরুমের ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ,উপর থেকে টপ টপ পানি পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে তাকে,রিয়াদের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুক্ষন আগে সে স্বপ্ন দেখছিল,এখনও চোখ সামনে তানজুর মুখটা ভেসে আসছে রিয়াদের সামনে ব্লাক শাড়ি, ভেজালো চুল,হাতে চুড়ি, কানে দুল,তুমি করে কথা বলা,সাথে হুট করে কাছে চলে আসা,সেই মুহূর্তটা ভাবতেই তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেললো রিয়াদ,কেমন যেন সবকিছু অগোছালো লাগছে তার কাছে,,তারওপর আবার আদি…
“সবমিলিয়ে বিরক্ত, অসস্থি, রাগ সব হচ্ছে রিয়াদের…
“এক ঘন্টার লম্বা সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো রিয়াদ!’এরই ভিতর ফোন বাজলো রিয়াদের, উপরে ডিরেক্টরের নাম্বার দেখে ফোনটা তুলেই বললো রিয়াদঃ
—“আমি আসছি….
“উওরে ডিরেক্টর আর কিছু বললো না ফোন কেটে দেয় সে!’
.
“রিয়াদ তার ড্রেসিং রুমে ঢুকে ওয়াইট শার্ট আর নীল কোট, নীল প্যান পড়ে নিলো, গলায় টাই, হাতে ব্লাক ওয়াচ, চুলগুলো সুন্দর মতো আঁচড়িয়ে গায়ে ছেন্ট লাগিয়ে, কালো জুতো পড়ে ফুল এটিটিউড লুকিং নিয়ে বের হলো রুম থেকে!’তারপর হাল্কা ব্রেকফাস্ট করে বাড়ি থেকে বের হয়!’রিয়াদ বাড়ি থেকে বের হতেই তার গার্ডরা হাজির!’
“রিয়াদ সবার সামনে থেকে হেঁটে চলে গেল গাড়ির কাছে!’গাড়ি পর্যন্ত আসতেই একজন গার্ড দরজা খুলে দিলো গাড়ির,রিয়াদও গিয়ে বসে পড়লো গাড়িতে,,রিয়াদ বসতেই আবার দরজা বন্ধ করে দিয়ে গার্ডটি বসলো সামনের সিটে!’
“রিয়াদ বসতেই ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করলো….
“তারপর এক এক করে চললো সবাই তাদের গন্তব্যে…
“দু’বছর পর আজ প্রথম রিয়াদ তার এসিস্ট্যান্ট তানজুকে ছাড়া কোনো শুটিং এ যাচ্ছে!’হাল্কা খালি খালি ফিল হচ্ছে রিয়াদের!’
“হঠাৎই রিয়াদের মনে পড়লো স্বপ্নে দেখা তানজুর বলা সেই কথাটাঃ
—“তুমি আমায় মিস করছিলে না…..
“আনমনেই বলে উঠল রিয়াদঃ
—“খুব….
“আচমকা রিয়াদের কন্ঠ শুনে রিয়াদের সামনে সিটে বসে থাকা গার্ডটি বলে উঠলঃ
—“আপনি কিছু বলছিলেন স্যার….
“সাথে সাথে বিষম খায় রিয়াদ,কিছুটা বিচলিত কন্ঠ নিয়ে বলে সেঃ
—“না কিছু না…
—“ওকে স্যার…
“বলেই গার্ডটা সামনে ঘুরে তাকালো,গার্ডকে সামনে ফিরতে দেখে সস্থির নিশ্বাস ফেললো রিয়াদ,তারপর গলার টাইটাকে হাল্কা নাড়িয়ে চুপচাপ বসে রইলো সে…
“সমান্তরাল পথ পেরিয়ে আপন গতিতে চলছে রিয়াদদের গাড়ি…..
!
!#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৪
“ছাঁদের রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’সকালের রূপালি রোদ্দুর এসে লাগছে তার গায়ে!’আনমনেই মোবাইল হাতে ফেসবুকিং করছে সে, হঠাৎই একটা ছবির দিকে চোখ পড়ে যায় তানজুর,ছবিটা হলো তার আর রিয়াদের!’কানাডায় বসে যেদিন সবার সামনে রিয়াদ তাকে অভিনয়ের ভালোবাসার বা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেদিনের!’হাজার হাজার লাইক আর কমেন্ট করা হয়েছে সেই পিকের নিচে!’অনেকেই বাজে কমেন্ট করেছে আবার অনেকে কান্নার ইমোজি দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে আবার কেউ খুশি মনে বিষয়টা এক্সেপ্ট করে নিয়েছে!’ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তানজু!’ভাগ্যিস তাদের এখানে তেমন কেউ ফোন চালায় না!’
— না জানি সবাই জানলে কি রিয়েকশন দিতো!’একমাস হয়েও এসেছে প্রায় আর মাএ দু’মাস কে জানে দুমাস পর যখন সবাই সত্যিটা জেনে যাবে তখন কি হবে আর অনন্যা ম্যামও বা কি করবেন হয়তো খুশিই হবেন,(মনে মনে)
“নানান কিছু ভাবনায় মগ্ন তানজু!’এমন সময় ওর মাথায় একটা চাটি মারলো হিয়ামিনি!’আচমকা এমনটা হওয়াতে তানজু কিছুটা চমকে উঠলো সামনে তাকিয়ে হিয়ামিনিকে দেখে বলে উঠল সেঃ
—“তুই…
“তানজুর কথা শুনে দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বললো হিয়ামিনিঃ
—“হুম আমি…
—“মাথায় মারলি ক্যান…
—“এমনি,তা এখানে কি করছিস…😁
—“তেমন কিছু না এমনি দাঁড়িয়ে আছি…
—“এমনি এমনি কেউ দাঁড়িয়ে থাকে নাকি..
—“দাঁড়িয়ে থাকতেও কারন লাগে নাকি…
—“অবশ্যই লাগে আচ্ছা তুই কি রিয়াদ ভাইয়াকে মিস করছিস না…
“হিয়ামিনির কথা শুনে ভ্রু-কুচকে তাকালো তানজু হিয়ামিনির দিকে!’তারপর বললোঃ
—“তোর কি হয়েছে বল তো কাল থেকেই দেখছি শুধু রিয়াদ স্যারকে মিস করছি না জিজ্ঞেস করছিস,ব্যাপার কি বলতো?’
—“এখানে ব্যাপারের কি আছে, আমি তো এমনি জিজ্ঞেস করেছি,আর এতে ভ্রু-কুচকানোরও বা কি আছে…?’
—“অনেক কিছু আছে,ছাফ ছাফ বলতো তুই কি ভাবছিস…
—“আরে কিছুই ভাবছি না আমি তো জাস্ট এমনি জিজ্ঞেস করেছি…
—“সত্যি বলছিস…
—“আরে বাবা হুম,আচ্ছা যা আর বলবো না…
“উওরে তানজু আর কিছু বললো না,তার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে এই হিয়ামিনির মাথায় কিছু একটা চলছে নিশ্চিত তানজু…
_____
“শুটিং স্পটে একটা চেয়ারে বসে আছে রিয়াদ,তার পাশেই ডিরেক্টর!’উল্টোদিকে রিয়াদের নতুন মুভির নাইকা সহ আরও অনেকেই বসে আছে!’ডিরেক্টর সবার উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেনঃ
—“আজকে সবার আগে আমি কাহিনীটা বলছি তোমাদের,এবারের কাহিনিটা একদমই ভিন্ন আর কমেডিয়ান টাইপের হবে,শুরুতে হিরো-হিরোইনের ঝগড়া আর একদমই আনএক্সপেকটেড ভাবে দেখা হবে….
“এতটুকু বলে ডিরেক্টর তার রাইটারের কাছ থেকে কিছু কাগজ নিয়ে রিয়াদ আর নাইকা জুথির হাতে তুলে দিলো!’তারপর বললোঃ
—“এর মধ্যে সবকিছু লেখা আছে তোমরা দেখে নেও….
“ডিক্টেটরের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে রিয়াদ জুথি দুজনেই দেখতে শুরু করলো!’রাইটার ওদের উদ্দেশ্য করে বললোঃ
—“ফাস্ট মিট, হিরো পেইন্টিং করতে খুব ভালোবাসে,সে তার অবসর সময়ে পেইন্টিং করে,আর হিরো একটু রাগী লাইপের হবে….
“তো একদিন একটা সুন্দর জায়গার নদীর কাছে একটা গাছের নিচে বসে ছবি আঁকছিল রিয়াদ আইমিন গল্পের হিরো যার নাম থাকবে আকাশ,আর হিরোইন জুথি ওর নাম থাকবে মিষ্টি!’তো জুথি আইমিন মিষ্টি হবে একটু দুষ্টু প্রকৃতির মেয়ে আর মিশুক টাইপের!’
“সো ওয়ান ডে….
“সময়টা দুপুর!’রোদ্দুরে চিক চিক করছে চারপাশ,ধবধবে সাদা আকাশ,নদীর কিনারায় একটা সুন্দর আলিশান জায়গায় বড় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে পেইন্টিং আঁকতে ব্যস্ত হিরো,গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকছে সে…
অন্যদিকে…
“হিরোইন হিরোর কাছ থেকে কয়েক কদম দূরে বাচ্চাদের সাথে পানির পাইপ নিয়ে লাফালাফি করছে হঠাৎই হিরোইনের হাতের পাইপের পানি ছিঁটকে পড়লো হিরোর পেইন্টিং এর মধ্যে সাথে হিরোকেও ভিজিয়ে দিল…
.
“এদিকে চেয়ারে বসে রিয়াদ রাইটারের কথা শুনে মনে পড়লো তার সেদিন রাতের কথা যেদিন বর্ষনের রাত,লোডশেডিং হওয়ার কারনে তানজু তার জন্য পুরো রুম জুড়ে ক্যান্ডেল সাজিয়েছিল সাথে তাকে বিছানায় বসিয়ে বলেছিলঃ
—“just feel sir, আপনি ধবধবে সাদা আকাশের নিচে সুন্দর এক বিশাল কাঠগোলাপ ফুলের গাছের নিচে বসে আছেন!’গাছ থেকে সাদা রঙের কাঠগোলাপের পাপড়ি পড়ছে,আপনি গাছের নিচে বসে জিনিসটা ফিল করছেন এমন সময় একটা মেয়ে দৌড়ে এসে আপনার মুখে এক বালতি পানি ঢেলে দিলো সাথে সাথে আপনার ঘুম ভেঙে গেল…
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ চোখ খুলে বলেছিলঃ
—“লাইক সিরিয়াসলি তানজু এইটা ফিল করবো…
—“না মানে ওই আর কি….(মাথা চুলকিয়ে)
—“আর কিছু পেলে না..
—“দেখুন স্যার আমি কোনো রাইটার নই যে আপনাকে এর থেকে ভালো স্টোরি শুনাতে পারবো…
—“তাই বলে, বলা নেই কওয়া নেই প্রথম দেখায় সোজা মুখে পানি ঢেলে দিলো….
—“কেন স্যার প্রথম দেখাটা এভাবে হলে প্রবলেম কি?’
—“প্রবলেম কি মানে…
“এই নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে…
.
“কথাগুলো ভাবতে ভাবতে উচ্চস্বরে হেঁসে উঠল রিয়াদ!’
“আচমকা রাইটারের কথার মাঝখানে রিয়াদকে হাসতে দেখেই সবাই অবাক হয়ে তাকালো রিয়াদের দিকে!’সবাইকে এইভাবে তাকাতে রিয়াদ কিছুটা আনিজি ফিল হলো নিজের হাসি থামিয়ে বললো সেঃ
—“আই এম সরি…
“রিয়াদের কথা শুনে রাইটার বলে উঠলঃ
—“গল্প কি ভালো লাগে নি…
—“না না তেমন কিছু নয় আসলে এই কাহিনিটার কথা শুনে আমার কিছু মনে পড়ে গিয়েছিল তাই হেঁসে ফেলেছি…
—“ওহ,
—“হুম বি কন্টিনিউ রাইটার…
“রিয়াদের কথা শুনে রাইটার আবারো বলতে শুরু করলো!’এদিকে রিয়াদ রাইটারের প্রতিটি কথায় তানজুকে ফিল করছে!’
“মাঝখানে কাটলো ৫ দিন!’….
“প্রচন্ড বিরক্ত আর অস্থিরতা নিয়ে শুটিং শেষ হওয়ার আগেই বাড়ি চলে আসলো রিয়াদ!’তারপর হন হন করে নিজের রুমে ডুকে বিরক্ত হয়ে বিছানায় বসে পড়লো সে…
“আজকাল কোনোকিছুই যেন ঠিক লাগছে না তার,সবকিছু কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সাথে অস্থিরতা ফিল হচ্ছে রিয়াদের!’অস্থিরতার কারনে ঠিকভাবে নিজের কাজও করতে পারছে রিয়াদ,যেখানে তাকায় সেখানেই শুধু তানজুর প্রতিচ্ছবি ভেসে আসে সামনে!’সব কিছু কেমন পাগল পাগল লাগছে তার,,এতবছর কাজ করে কখনো রিয়াদের এমন ফিল নি কিন্তু কিছুদিন যাবৎ কোনোকিছুই যেন ঠিক ভাবে হচ্ছে না রিয়াদের!’চারপাশে কেমন যেন শুধু তানজুকেই ফিল হয় তার,নিমিষেই বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করে ফেললো রিয়াদ…
“আজ থেকে ঠিক দুদিন আগের কথা রিয়াদ শুটিং এর মাঝখানে ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে বসে একটু,আর কাউকে বলে এক গ্লাস পানি দিতে!’পানির কথা শুনে একটা মেয়ে রিয়াদের দিকে একগ্লাস পানি দিয়ে বলেঃ
—“স্যার আপনার পানি….
“মেয়েটির কথা শুনে রিয়াদ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো থ্যাংক আর কিছু বলবে তার আগেই তানজুকে দেখে অবাক হয়ে বললোঃ
—“তুমি…
—“হুম আমি…
—“তুমি এখানে কি করছো…?’
—“মানে কি বলছেন স্যার..?’
“সাথে সাথে বিষম খায় রিয়াদ,কিছুক্ষন পর আবার তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি তানজু নয় অন্য কেউ!’সাথে সাথে চমকে উঠলো রিয়াদ!’রিয়াদকে চমকে উঠতে দেখে বললো মেয়েটিঃ
—“কি হলো স্যার…
—“না কিছু নয়…
“বলেই ঢকঢক করে পুরো পানি শেষ করে মেয়েটির কাছে খালি গ্লাস দিয়ে দিল রিয়াদ!’এভাবে এখানে ওখানে বার বার শুধু রিয়াদ তানজুকে দেখছে আর চমকে যাচ্ছে!’আজ তো….
“কিছুক্ষন আগে…
“জুথির সাথে একটা কাপল ড্যান্সের শুটিং করতে ছিল রিয়াদ,হুট করেই জুথির জায়গায় তানজুকে দেখলো রিয়াদ সাথে সাথে রিয়াদ চমকে উঠে ছেড়ে দেয় জুথিকে,জুথিকে ছেড়ে দিতেই নিচে পড়ে যায়!’ঘটনাচক্রে সবাই বেশ অবাক হয়,ডিরেক্টর তো দৌড়ে এসে বললোঃ
—“কি হলো রিয়াদ….
“উওরে রিয়াদ কিছু বলতে পারলো না!’
“ইদানীং রিয়াদের আচরণের কিছুটা পরিবর্তন দেখছে সবাই!’হুট করেই কথার মাঝখানে হেঁসে ফেলে,আবার হুট করেই চমকে উঠে!’বিষয়টা নিয়ে সবাই বেশ সমালোচনা করছিল তাই আজ বাধ্য হয়ে রিয়াদ শুটিং ছেড়ে চলে আসে,বিরক্ত লাগছে তার,চরম বিরক্ত,সাথে রাগও হচ্ছে…..
“কিছু একটা ভেবে চোখ খুলে ফেললো রিয়াদ,তারপর বিছানার উপরে থাকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফোন করলো সে….
_______
“তাসলিমার শশুড় বাড়ি বেড়াতে এসেছে তানজু,আদি আর হিয়ামিনি!’বউভাতের পর আজ আর একবার তানজু আসলো এখানে!’খুব ধুমধাম করেই তাসলিমার বউভাতের অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছিল!’আজ ওরা এসেছে তাসলিমা আর তৌহিদকে ওদের সাথে ওদের বাড়ি নিয়ে যেতে!’এটা ওদের দুলাভাইর আবদার!’আর তাসলিমার শশুড় বাড়িটাও খুব সুন্দর!’তাই ওরা তিনজন চলে এসেছে এখানে…
.
“বাড়ির পিছনে সুন্দর পথ পেরিয়ে গাছেদের টপকে নীরবে হেঁটে চলেছে তানজু!’আশেপাশে কেউ নেই তার!’বউভাতের দিন তেমন কিছুই ঘুরে দেখা হয় নি তানজুর তাই আজ একটু ঘুরে ঘুরে দেখছে সবকিছু!’একদম নিরিবিলি আর সুনসান জায়গা!’এমন সময় তানজুর হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠল!’উপরে রিয়াদের নাম দেখে তানজু হাল্কা হেঁসে বলে উঠলঃ
—“হ্যালো স্যার….
“অপরপাশে রিয়াদ তানজুর হ্যালো শুনে আগে পিছনে কিছু না বলেই হতভম্ব হয়ে বললোঃ
—“তোমাকে কালকের মধ্যে আমার সামনে দেখতে চাই তানজু…?’
“হুট করেই রিয়াদের এমন কথা শুনে ঘাবড়ে যায় তানজু,কিছুটা বিষন্ন কন্ঠ নিয়ে বললোঃ
—“কেন স্যার কি হয়েছে?’
—“কিছু হয় নি তুমি কালকের মধ্যে ঢাকা বেক করছো তানজু ইট’স ফাইনাল….
—“কিন্তু স্যার…
—“আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না তানজু কালকের ভিতর তুমি আমার সামনে আসছো মানে আসছো…?’
“উওরে তানজুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয় রিয়াদ!’এদিকে তানজু কিছুক্ষন হ্যালো হ্যালো করে অবাক হয়ে বললোঃ
—“এটা কি হলো উনি নিজেই তো বলেছিলেন আমার ইচ্ছে মতো যেতে,তাহলে হুট করে কি হলো ওনার আর এতো রেগেই বা কথা কেন বলছিলেন..?’😳
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………