#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৫
“কিছুুটা মন খারাপ নিয়ে ট্রেনে বসে আছে তানজু,সকালেই সবাইকে বিদায় জানিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে সে!’
“পরনে তার ওয়াইট চুড়িদার,হাতে সাদা রঙের চুড়ি,খোলা চুল!’কালকে রিয়াদের কথা শুনেই আজ সকালে ট্রেনে উঠেছে সে!’ট্রেন চলছে তার আপন গতিতে,ট্রেনের জানালা দিয়ে আসছে বাতাস!’সবাইকে ছেড়ে আবার চলে যাচ্ছে তানজু,না জানি আবার কবে দেখা হবে সবার সাথে,আসার সময় সবাই কেঁদে ছিল তার জন্য!’ ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তানজু!’এক এক করে সব কিছুই সরে যাচ্ছে তানজুর সামনে থেকে গাছ পালা নদী-নালা পুকুর গ্রামীণ পরিবেশ সব পিছনে রেখে তানজু এগিয়ে চলছে তার আপন গন্তব্যে…
_____
“হাফ টাইম শুটিং করে বাড়ি ফিরছে রিয়াদ,বড্ড ক্লান্ত সে,ক্লান্ত শরীর নিয়েই গাড়ি থেকে বের হলো সে!’গাড়ি থেকে নেমে রিয়াদ চলে যায় তার বাড়ির ভিতর,ক্লান্ত শরীর নিয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে রিয়াদ তার রুমের উদ্দেশ্যে!’সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই নিচের সোফার দিকে চোখ যায় রিয়াদের, সোফার উপর তানজু একটা সাদা তুলতুলে বিড়ালের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করছে ,রিয়াদ সেদিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তারপর বললোঃ
—“আর কতভাবে দেখবো তোমায়?এখন বিড়ালকে আদর করছো হয়তো কিছুক্ষণ পর দেখবো ওটা তুমি নও রামু চাচা…
“ভেবেই মাথাটা একবার ঝাকিয়ে চলে যায় রিয়াদ তার রুমের দিকে!’
“এদিকে তানজু….
“রিয়াদকে উপরে যেতে দেখে কিছুটা অবাক হয় রিয়াদ কি তাকে দেখে নি, সত্যি হয়তো দেখে নি দেখলে কথা না বলে যেত না!’তানজু কিছু একটা ভেবে তার হাতে থাকা বিড়ালের বাচ্চাটাকে সোফার উপর রেখে চললো রিয়াদের রুমের উদ্দেশ্যে…
“নিজের রুমে ঢুকে ক্লান্ত শরীর নিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়ে রিয়াদ,তারপর চোখ বন্ধ করে বললোঃ
—“আমি হয়তো দিনকে সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছি…
“এমন সময় দরজায় নক করলো তানজু!’বলে উঠল সেঃ
—“আমি কি আসবো স্যার…?’
“দরজায় নক করার শব্দ পেয়ে চোখ খুললো রিয়াদ তারপর শুয়ে থেকেই দরজার দিকে তাকিয়ে তানজুকে দেখে বলে উঠলঃ
—“রোজ তো না বলেই রুমে আসো আজ হঠাৎ পারমিশন নিচ্ছো….
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়!’
—“সে তো সবসময় রিয়াদের পারমিশন নিয়েই রুমে ঢুকে আর রোজ এলো কোথা থেকে আমি তো আজই এলাম(মনে মনে)
“বিছানায় শুয়ে রিয়াদ এখনও তানজুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলঃ
—“কি হলো আসছো না কেনো?’
“উওরে তানজু কিছু না বলেই আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে রুমে!’তানজু রুমে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ে বিছানার সামনেই, তানজু কিছু বলবে তার আগেই রিয়াদ বলে উঠলঃ
—“আচ্ছা তুমি বার বার হুট করে সামনে কেন চলে আসো বলো তো…
“রিয়াদের এবারের কথা তানজুর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম!’তানজু কিছুটা কনফিউশান নিয়ে এদিক সেদিক তাকায়, কারন সে বুঝতে পারছে না রিয়াদ কথাগুলো তাকে বলছে নাকি অন্য কাউকে!’তানজুকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে বলে উঠল রিয়াদঃ
—“এতো এদিক ওদিক তাকাচ্ছো কেন তোমাকেই বলছি,আমাকে তো পুরো পাগল বানিয়ে ফেলছো,কখনো নাইকা হয়ে আসছো,কখনো ওয়েটার, কখনো শাড়ি পড়ে , আর কিছুক্ষন আগে তো রামু চাচা না জানি এখন কি হয়ে যাবে তুমি…
“রিয়াদের কথার আগামাথা কিছুই ঢুকছে না তানজুর মাথায়!’তানজু কিছুটা বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললোঃ
—“কি সব বলছেন স্যার,আমি তো আজই রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসলাম…
—“হইছে তোমায় আর বলতে হবে না!’
“এতটুকু বলে রিয়াদ শোয়া থেকে উঠে বসলো!’তারপর গায়ের শার্টের বোতম খুলতে খুলতে বললোঃ
—“আমি পুরো পাগল হয়ে যাচ্ছি তানজু…
“রিয়াদকে শার্টের বোতাম খুলতে দেখে তানজুর চোখ বড় বড় হয়ে যায়!’হাত দিয়ে চোখ মুখ চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল সেঃ
—“এসব কি করছেন স্যার?’
—“কি করছি…
—“আমার সামনে শার্টের বোতাম খুলছেন কেন?’
—“তাতে কি হয়েছে তুমি তো আর সত্যি সত্যি দেখছো না…
“রিয়াদের এবারের কথা শুনে তানজু চেঁচিয়ে বলে উঠলঃ
—“স্যার আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে….
“বলেই চোখে হাত রেখেই দৌড়ে বেরিয়ে যায় তানজু!’তানজুর কাজে চমকে উঠলো রিয়াদ!’কিছু একটা ভেবে শার্টের বোতাম আটকিয়ে রুম থেকে বের হয় রিয়াদ!’
_____
“তানজু দৌড়ে চলে যায় সোজা রান্নাঘরে!’তারপর জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে!”তার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না রিয়াদ স্যারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে!’কিসব আবল তাবল বকলেন উনি!’তানজু জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে ঢকঢক করে পুরো পানিটা শেষ করতে লাগলো!’কিছুক্ষন আগে কি হলো সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল!’
“রান্না ঘরেই রামু চাচা দাঁড়িয়ে আছে তানজুকে হাঁপাতে দেখে বলে উঠলেন উনিঃ
—“কি হইলো তানজু হাঁপাচ্ছো কেন?’
“তানজু পুরো পানিটা তাড়াতাড়ি শেষ করে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলঃ
—“আর বইলো না রামু চাচা, রিয়াদ স্যারের মাথা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে…
“তানজুর কথা শুনে হেঁসে উঠলেন রামু চাচা তারপর বললেনঃ
—“কি সব বলো তানজু…
—“সত্যি বলছি রামু চাচা রিয়াদ স্যারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে কিসব সব উল্টো পাল্টা কথা বলছিল…
“এবারও হেঁসে উঠলেন রামু চাচা!’তারপর বললেন উনিঃ
—“তোমার মাথা ঠিক নাই তানজু…
—“আরে রামু চাচা বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি,কিছুক্ষন আগে…
“তানজু আর কিছু বলবে তার আগেই রিয়াদ বলে উঠলঃ
—“রামু চাচা…
“সাথে সাথে তানজু রামু চাচা দুজনেই তাকালো রিয়াদের দিকে!’তানজুর তো রিয়াদকে দেখেই হাত পা কাঁপতে শুরু করলো!’রামু চাচা রিয়াদের কথা শুনে হাঁটতে হাঁটতে গেলেন রিয়াদের সামনে তারপর বললেনঃ
—“হুম বলো রিয়াদ বাবা…
—“আমার জন্য কড়া করে এক কাঁপ কফি বানিয়ে পাঠিয়ে দিও…
—“কফি তো শেষ হয়ে গেছে, তবে তুমি চিন্তা করো না আমি এহনই নিয়া আইতাছি….
“এতটুকু বলে রামুচাচা বেরিয়ে গেল রান্নাঘর থেকে!’রামু বের হতেই রিয়াদ একপলক তানজু দিকে তাকিয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে চললো তানজুর দিকে!’তার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তার সামনে সত্যি সত্যি তানজু দাঁড়িয়ে আছে!’উপরে বসে তানজুকে চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখে রিয়াদ বুঝতে পারলো তার সামনে এতক্ষন সত্যি সত্যি তানজু দাঁড়িয়ে ছিল!’তারপর রান্না ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে তানজুর রামুর সাথে বলা কথা আর একটু কনফার্ম হলো!’
কিন্তু এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তার…
“এদিকে রিয়াদকে এগোতে দেখে ঘাবড়ে যায় তানজু!’কিছু না বলেই পিছনে যেতে থাকে সে একটু ঘাবড়ে গেছে তানজু!’কিছুক্ষন আগের ব্যাপারটা এখনও যায় নি তার মাথা থেকে!’
“রিয়াদ সামনের দিক এগোতে এগোতে বললোঃ
—“তুমি সত্যি সত্যি তানজু…
“রিয়াদের কথা শুনে আবারো ভ্যাবাচেকা খায় তানজু কিছুটা বিষন্ন কন্ঠে বলে সেঃ
—“কিসব বলছেন স্যার আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না আমি তানজু…
—“রাজশাহী থেকে কখন এলে?’
—“আপনি ভুলে গেলেন স্যার আপনি তো কালকে আমায় আসতে বললেন!’
“এতক্ষণ পর রিয়াদের মনে পড়লো তার কালকের কথা!’দাঁড়িয়ে পড়লো রিয়াদ, রিয়াদকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে তানজুও দাঁড়িয়ে পড়লো!’তারপর বললোঃ
—“আপনার কি কিছু হয়েছে স্যার?’
“রিয়াদ তাকায় তানজুর চোখের দিকে, এক অদ্ভুত মায়া এসে গ্রাস করলো তাকে!’হঠাৎই কি হলো তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলো সে!’তারপর হতভম্ব কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কিছুক্ষন আগের সবকিছু ভুলে যাও তানজু…
“বলেই তাড়াতাড়ি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রিয়াদ!’কিছুক্ষন আগে রুমে বসে কি করছিল সে ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে রিয়াদের না জানি তাকে কি ভাবলো তানজু…
“অন্যদিকে রিয়াদকে বের হতেই তানজু বুকে হাত দিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেললো!’এখনও বুক কাঁপছে তাঁর…
.
“সময় চলছিল সময়ের মতো,একই রুলসে চলছিল দিন!’রোজ রিয়াদের সাথে শুটিংয়ে যাওয়াসহ রিয়াদের এসিট্যার্স্টের দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করছিল তানজু!’
“দেখতে দেখতে কেটে গেল পুরো ৫ মাস….
“এই পাঁচ মাসে রিয়াদ খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে নিজের অজান্তেই তানজুকে ভালোবেসে ফেলেছে সে!’তানজুর চোখ, মুখ, কেয়ারিং,হাঁটা চলা, ভালো লাগা,খারাপ লাগা, ব্যবহার সবকিছুই রিয়াদের খুব ভালো লাগে!’তানজুকে ছাড়া যেন এখন চলে না রিয়াদের!’কিন্তু কখনো মুখে বলার সাহস হয় নি রিয়াদের!’সে জানে না তানজু যদি তার মনের কথা জানে তাহলে কেমন রিয়েকশন দিবে!’….
______
“মুক্ত আকাশের নিচে সুন্দর সমুদ্রের কিনারায় শুটিং চলছে রিয়াদের!’আজই লাস্ট দিন শুটিং এর,,চেয়ারে বসে আছে রিয়াদ আর রিয়াদের সামনেই মেকআপ আর্টিস্ট তার মেকাপ করছে,রিয়াদের পাশের চেয়ারে বসে আছে তানজু!’রিয়াদের সোজাসুজি কয়েক কদম দূরেই রিয়াদের নাইকা জুথিকে মেকাপ করানো হচ্ছে!’সবাই বেশ এক্সাইটিং এ আছে আজ!’ পুরো শুটিং এ সবাই খুব মজা করেছে,হঠাৎই তানজুর ফোনটা বেজে উঠল উপরে আদির নাম দেখে তানজু হাল্কা হেঁসে ফোনটা হাতে নিয়ে একটু সাইডে চলে যায় তারপর কথা বলতে শুরু করলো আদির সাথে!’
“এরই মাঝে রিয়াদের মেকআপ আর্টিস্ট বলে উঠলঃ
—“ডান স্যার…
“আর্টিস্টের কথা শুনে নিজেকে আয়নায় দেখলো রিয়াদ!’তারপর মুচকি হেঁসে আস্তে বলে উঠলঃ
—“নট বেড”….
“তারপর রিয়াদ তাকায় তানজুর দিকে, তার থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে হেঁসে কথা বলছে তানজু,রিয়াদ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তানজুর দিকে!’এমন সময় ডিরেক্টর বলে উঠলঃ
—-“আর ইউ রেডি রিয়াদ…
“হাল্কা চমকে উঠলো রিয়াদ তারপর বললোঃ
—“ইয়েস…
রিয়াদের কথা শুনে ডিরেক্টর দেখলো রিয়াদকে তারপর বললোঃ
—“পারফেক্ট চলো তবে…
“রিয়াদ আরেকবার তানজুর দিকে তাকিয়ে চললো ডিরেক্টরের সাথে..
“অন্যদিকে তানজু তাড়াতাড়ি ফোনটা কাটতে বলে উঠলঃ
—“এখন রাখি আদি,রিয়াদ স্যারের শুটিং শুরু হবে…
“তানজুর কথা শুনে আদিও বলে উঠলঃ
—“ওকে বাই…
—“হুম বাই বাই…
“বলেই ফোনটা কেটে দৌড়ে চলে আসলো তানজু শুটিং এর জায়গায়!’……
!
!
!#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৬
“হা হয়ে তাকিয়ে আছে তানজু, রিয়াদ আর জুথির দিকে!’কারন রিয়াদ হাঁটু গেড়ে বসে এখন প্রপোজ করবে জুথিকে!’পরিবেশটাকে যেন এক মুগ্ধতায় ঘিরে ধরেছে প্রায়!’ যদিও এটা একটা অভিনয় মাএ তারপরও পরিবেশটা যেন তা মানতে নারাজ!’খোলা আকাশ, সমুদ্রের কিনারা,সমুদ্রের কিনারা থেকে কিছুটা দূরত্বে বালির ওপর সুন্দর করে সাজানো হয়েছে চারপাশটা,সাদা ক্যান্ডেল লাইট সাথে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে সুন্দর একটা টেবিল!’টেবিলের ওপর ক্যান্ডেলের পাশেই দুটো রিং,পুরো জিনিসটা থেকে অনেকটা দূরত্ব নিয়ে চারিদিকে দেওয়া হয়েছে সাদা পর্দা যেগুলো বাতাসে উড়ছে!’
“টেবিলের পাশ দিয়েই হাল্কা দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ!’পরনে তার ওয়াইট শার্ট, ওয়াইট কোড ওয়াইট প্যান্ট, হাতে ঘড়ি,ওয়াইট জুতো,এক কথায় ওয়াইটে সজ্জিত সে, চুলগুলো সুন্দর করে গুছানো যেগুলো বাতাসো হাল্কা উড়ছে!’রিয়াদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে জুঁথি রিয়াদের ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে তাকেও পড়ানো হয়েছে ওয়াইট লেডিস ফ্রক,হাতে ওয়াইট পাথরের ব্যাচ,চুলগুলো খোলা,মুখে মেকাপ দেওয়া!’এই মুহূর্তে রিয়াদ আর জুথিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে!’মনে হচ্ছে এই পরিবেশটা যেন তাদের জন্যই!’
“তানজু মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে পুরো বিষয়টার দিকে!’চোখ যেন তার সরছেই না,জায়গাটা এতটাই মুগ্ধকর যে তানজুু বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে প্রায়!’সাদা ধবধবে আকাশ,সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ,সাথে এত সুন্দর মুহুর্ত ভাবতেই চোখ ছলছল করছে তার!’
“অন্যদিকে…..
“রিয়াদ তার শুটের এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর কিছুক্ষন পর পর তানজুর দিকে তাকাচ্ছে সে বেশ বুঝতে পেরেছে তানজু পুরো বিষয়টা খুব ভালো লেগেছে!’কিছু একটা ভেবে হাল্কা হাসলো রিয়াদ!’এরই মাঝে ডিরেক্টর বলে উঠল রিয়াদ আর জুথিকেঃ
—“আর ইউ রেডি গাইস…
“ডিরেক্টরের কথা শুনে রিয়াদ জুথি দুজনেই হা সমর্থন দিলো!’ওদের কথা শুনে ডিরেক্টরও বলে উঠলঃ
—“ওকে,লাইটস ক্যামেরা এ্যাকশন…
“ডিরেক্টরের কথা শুনে রিয়াদ আর জুথি দুজনেই তাদের পজিশন মতো দাঁড়ালো!’হঠাৎই রিয়াদ হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো তারপর টেবিলের উপর থেকে একটা রিং নিয়ে বলতে লাগলো জুথিকে তার ভালোবাসার কথা…
___
“হাতে কিছু কাগজ নিয়ে তানজু তাকিয়ে আছে রিয়াদ-জুথির দিকে,আর পুরো দৃশ্যের দিকে!’এক মুহূর্তের জন্য হলেও তানজুর মনে হলো…
—“ইস!’আমায়ও যদি কেউ এইভাবে প্রপোজ করতো….
“মুহূর্তেই হেঁসে উঠলো সে!’তারপর নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মেরে বললোঃ
—“ধুর!’আমিও না কিসব ভাবি…
“তানজু রিয়াদ আর জুথির দিকে এতটাই গভীরভাবে তাকিয়ে আছে যে, কখন যে তার হাতে থাকা কিছু কাগজের মধ্যে থেকে একটা কাগজ নিচে পড়ে গেছে বুঝতেই পারে নি!’
“এমন সময় তার পাশে এসে দাঁড়ালো একটা ছেলে!’সেও পুরো জিনিসটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো!’হঠাৎই তার চোখ যায় তানজুর পায়ের কাছে একটা কাগজ পড়ে আছে!’ছেলেটি কিছু একটা ভেবে কাগজটি উঠালো তারপর আশেপাশে তাকিয়ে তানজুর হাতে কাগজ দেখে বুঝতে পারলো হয়তো তানজুর হাত থেকেই পড়ে গেছে!’
” এইবার ছেলেটি তাকালো তানজুর চোখ মুখের দিকে সে বেশ বুঝতে পেরেছে তানজু হয়তো সামনের দৃশ্য দেখে খুব বিস্মিত হয়ে গেছে!’ছেলেটি কিছু একটা ভেবে তানজুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ
—“হ্যালো মিস…
“প্রথম ডাকে কোনো সাড়াশব্দ করলো না তানজু!’তানজুকে চুপ থাকতে দেখে ছেলেটি এইবার আর একটু জোরে বলে উঠলঃ
—“এই যে মিস…
“আচমকা কারো কন্ঠ কানে আসতেই তানজু পাশ ফিরে তাকালো সামনেই একটা ছেলেকে দেখে কিছু না বলে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো!’তানজুকে দূরে সরতে দেখে ছেলেটি আবারো বলে উঠলঃ
—“হ্যালো মিস,আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি আপনি বুঝতে পারছেন না…
“তানজু কিছুরা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলঃ
—“আমি আপনাকে চিনি না জানি না মাঝখান থেকে কি কথা বলবেন…
“এইবার ছেলেটি বিরক্ততা ফিল করছে!’দু’পা এগিয়ে তানজুর সামনে তার হাতে থাকা কাগজট দেখিয়ে বললোঃ
—“এটার জন্য…
“তানজুর কাগজটি দেখে বলে উঠলঃ
—“এটা তো আমার…
—“হুম এটার জন্যই তো ডাকছি আপনায় কখন থেকে,কিন্তু আপনি তো যাগ গে নিন এটা…
“এবার তানজুর লজ্জিত ফিল হচ্ছে!’তানজু মাথা নিচু করে ছেলেটির হাত দেখে কাগজটি নিয়ে বলে উঠলঃ
—“সরি….
—“ইট’স ওকে!’
“বলেই তানজুর পাশ দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ছেলেটি!’এদিকে তানজু তাকিয়ে আছে ছেলেটির মুখের দিকে বেশ খারাপ লাগছে তার,না জানি ছেলেটি তার সম্পর্কে কি ভাবলো,
—“এই জন্যেই বলে বেশি ভাব নিতে নেই একজন ছেলে কি ডাকলো ওমনি ভাব বেড়ে গেল,বান্দর মেয়ে,তোর জীবনেই বয়ফ্রেন্ড হবে না!'(মনে মনে)
“তানজু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে ছেলেটিকে,ছেলেটি পরনে ব্লাক ফুল হাতার টিশার্ট,ব্লাক প্ল্যান্ট,চুলগুলো সুন্দর করে গোছালো,ব্লাক জুতো সব মিলিয়ে সুন্দর দেখতে ছেলেটি!’ছেলেটির পোশাক আশাক,সাথে একটা এটিটিউট ভাব দেখে বোঝাই যাচ্ছে কোনো নামি দামি ফেমেলির ছেলে,তবে ছেলেটিকে এর আগে কখনো দেখে নি তানজু!’তানজুর ভাবনার মাঝখানে ছেলেটির সামনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলঃ
—“আমায় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়ে গেলে আপনি সামনে তাকাতে পারেন মিস…
“সাথে সাথে চমকে উঠলো তানজু!’কিছুটা মিন মিন কন্ঠ নিয়ে বলে উঠলঃ
—“সরি….
“উওরে ছেলেটি কিছু বললো না!’
____
“কাট কাট” ডিরেক্টরের মুখে এমন কথা শুনে রিয়াদ জুথি দুজনেই তাদের অভিনয়ের রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসলো!’ডিরেক্টর ওদের সামনে হাতে তালি দিতে দিতে বলে উঠলঃ
—“ওয়েল ডান আকাশ মিষ্টি ওরোফে রিয়াদ জুথি …
“উওরে রিয়াদ জুথি দুজনেই মুচকি হাসলো!’একে একে সবাই এসে কনগ্রেস জানালো রিয়াদ জুথিকে!’সাকসেসফুললি আজকে শুটিং শেষ হলো তাদের!’রিয়াদ জুথি একে একে সবাই থ্যাংক ইউ বলতে লাগলো!’রিয়াদের চোখ এই মুহুর্তে তানজুকে খুঁজছে কিন্তু আশেপাশে কোথাও তানজুকে দেখা যাচ্ছে না!’
________
“৬ মাস পর সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে পা রেখেছে অনন্যা!’ছয় মাস আগেই দরকারী কিছু কাজের জন্য সুইজারল্যান্ড যেতে হয় তাকে!’তবে সুইজারল্যান্ড থাকলেও এখানের রিয়াদ তানজুর খবরাখবর রেখেছে সে!’ রিয়াদ যে তানজুর সাথে তানজুর গ্রামে গিয়েছিল সেটাও জানে অনন্যা!’তাই তো রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে তার!’কিছুতেই মাথায় আসে না অনন্যার রিয়াদ কি করে টলারেট করলো সব!’এখনও অনন্যার কাছে রিয়াদ তানজুর রিলেশনটা কিলিয়ার নয়!কালকের মধ্যেই সব কিলিয়ার করবে অনন্যা!’তার সাথে এটাও জেনে ছাড়বে সত্যি সত্যি রিয়াদ তানজু গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড কিনা…
“চোখে কালো চশমা আর কালো একটা শর্ট ড্রেস পড়ে এসব ভাবতে ভাবতে এয়ারপোর্ট থেকে বের হচ্ছে অনন্যা!’ এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই একদল মিডিয়ার লোক হাজির!’অনন্যার গার্ডরা সেগুলোকে যথাসম্ভব আঁটকে রেখেছে!’অনন্যা ভিড়ের মাঝখান থেকেই হেঁটে চলে গেল তার গাড়ির কাছে!’গাড়িতে বসতেই অনন্যার গাড়ি চলতে শুরু করলো তার আপন গতিতে…
.
.
“সবার থেকে কিছুটা দূরে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে তানজু!’কিছুক্ষন আগেই তার ফোনে কল আসায় ফোনটা নিয়ে সাইডে চলে আসে!’ফোনটা করেছে তানজুর মা তাই তো না চাইতেও ফোনটা ধরতে হয় তানজুকে!’
“অন্যদিকে রিয়াদ খুঁজছে তানজুকে,কিন্তু কোথাও দেখতে না পেয়ে রিয়াদ তার ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ করলো!’
“তানজু তিন মিনিট তার মায়ের সাথে কথা বলে ফোনটা কেটে দিল এরই মাঝে রিয়াদের মেসেজ দেখে মেসেজটা দেখলো যেখানে লেখা__
“আমার শুটিং শেষ তানজু তুমি কোথায়”…
“সাথে সাথে কিছুটা ঘাবড়ে গেল তানজু,তাড়াতাড়ি ফোনটা পকেটে নিয়ে দৌড়ে চললো তানজু রিয়াদের কাছে!’
___
“নিজের চেয়ারে বসে আছে রিয়াদ,কিছুটা রেগে আছে সে,এরই মাঝে দূর থেকে তানজুকে দৌড়ে আসতে দেখে সেদিকে তাকালো রিয়াদ!
.
‘দ্রুত দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎই একটা গাছের ডালের সাথে পা বেজে পড়ে যেতে নেয় তানজু,সাথে সাথে কেউ একজন এসে ধরে ফেলে তানজুকে!’তানজু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আগেই, কিছুক্ষন পর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই তখনকার সেই ছেলেটাকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে…
“অন্যদিকে দূর থেকে এমন দৃশ্য রিয়াদ দেখে মুহূর্তে তার রাগ আরো বেড়ে যায়!’রিয়াদ অগ্নি চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থাকে তানজু আর ছেলেটির দিকে!’
.
“হঠাৎই তানজুর হুস আসলো তাড়াতাড়ি ছেলেটিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললোঃ
—“থ্যাংক ইউ…
“বলেই আবারো দৌড়ে চললো তানজু!’কিন্তু এইবার একটু পায়ে ব্যাথা অনুভব করছে হাল্কা জ্বলছে তার পা, তারপরও ব্যাথাকে উপেক্ষা কর চললো তানজু!’তানজু দৌড়ে এসে দাঁড়ালো রিয়াদের সামনে তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বললোঃ
—“সরি স্যার একটু লেট হয়ে গেল,আসলে মা একটু ফোন করেছিল তাই আর কি…
“উওরে রিয়াদ কিছু বললো না টেবিলের উপর থাকা পানির গ্লাসটা হাতে নিতে নেয়,রিয়াদের কাজ দেখে তানজু তাড়াতাড়ি টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে রিয়াদের হাতে দেয়!’রিয়াদ না চাইতেও গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে শুরু করে….
“এরই মাঝে ডিরেক্টর ডাকে রিয়াদ সহ সবাইকে!’রিয়াদও চলে যায় তানজুকে পাশ কাটিয়ে তানজুও যায় পিছন পিছন!’ডিরেক্টর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেঃ
—“আজ যেহেতু আমাদের সাকসেসফুললি শুটিং শেষ হলো তাই সেই সুবাদে আজ রাতে আমার তরফ থেকে ছোট্ট ডিনার পার্টি সবার জন্য..
“ডিরেক্টরের কথা শুনে সবাই খুশি হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো!’এরই মাঝে জুথির কাছে এসে দাঁড়ায় সেই ছেলেটি!’জুথি ছেলেটিকে দেখে বলে উঠলঃ
—“রিক তুই এসেছিস…
“উওরে রিক হেঁসে বলে উঠলঃ
—“হুম সেই কখন?’
“এবার তাহলে বলা যাক রিক কে? রিক হলো জুথির ভাই!’জুথি রিককে সঙ্গে নিয়ে ডিরেক্টরের সামনে এসে বললোঃ
—“ডিরেক্টর হি ইস মাই ব্রাদার আপনাকে বলেছিলাম না…
—“ওহ এই তাহলে রিক..
—“হুম,আপনাকে বলেছিলাম আমার আসবে.. আমায় একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে..
—“ওকে জুথি তবে রাতে কিন্তু আসবে…
—“ওকে ডিরেক্টর, আই কেন গো!’
—“ইয়েস আর হা তুমি চাইলে রিককেও নিয়ে আসতে পারো…
—“ওকে ডিরেক্টর…
“বলেই রিক আর জুথি চললো তাদের গন্তব্যে!’তানজু কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ওদের যাওয়ার পানে, কারন এই মাএই জানতে পারলো ছেলেটি জুথির ভাই!’
“অন্যদিকে রিয়াদ তাকিয়ে আছে তানজুর দিকে চোখে মুখে রাগের ছাপ তার….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#