#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৫
“ঘড়িতে দুপুর দুটোর কাঁটায় ছুঁই ছুঁই,জানালার কার্নিশ বেয়ে দুপুরের রৌদ্রময় বাতাস বয়ে আসছে রিয়াদের রুমে!’সাথে জানালার পাশে থাকা পর্দাগুলোও নেচে চলছে বাতাসের ছোঁয়াতে!’দুপুরের কড়া রোদ্দুরে ঘিরে থাকা সূর্য্যিমামাও উঁকি মারছে রিয়াদের রুমে!’পুরো রুমটাই প্রাকৃতিক আলোতে আলোকিত হয়ে গেছে পুরো!’চক চক করছে পুরো রুম,আর এই আলোকিত রুমের মাঝেই সাদা তুলতুলে বিছানায় বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে রিয়াদ!’সচরাচর এই সময়ে ঘুমায় না রিয়াদ,কিন্তু আজ যেন ঘুম নামক জিনিসটা প্রচন্ডই ঘিরে ধরেছে তাকে!’তাই তো মনের আনন্দে আলোকিত পরিবেশের মাঝখানে আরামে ঘুমিয়ে আছে সে!’
“এমন সময় হাতে কিছু শুকনো জামাকাপড় নিয়ে রুমে ঢুকলো তানজু!’একপলক রিয়াদের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে চলে যায় সে আলমারির কাছে!’তারপর আলমারি খুলে হাতে থাকা কাপড় গুলো সুন্দর মতো গুছিয়ে রাখলো তানজু!’আজ যেন মনটা কোনো কারনে উতলা তার,সময় যতই চলে যাচ্ছে ততই একটু একটু কষ্ট বাড়ছে তানজুর!’হয়তো কিছু হারানোর ভয়,,তানজু সব কাপড় গুলো আলমারিতে রেখে আনমনেই হেঁটে চললো রিয়াদের কাছে!’তারপর নিচে বসে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রিয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“ইস,যদি আপনি আমার মতোন হতেন অথবা আমি আপনার মতো,,আচ্ছা সেলিব্রেটি হওয়ার কি খুব দরকার ছিল স্যার,আপনি সেলিব্রেটি না হয়ে যদি অন্যকিছু হতেন আর আপনার এতো টাকা পয়সা না থাকতো তাহলেই তো হয়ে যেত!’আর এমনটা হলে কবেই আপনাকে জড়িয়ে ধরে বলতাম আমি আপনাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি স্যার,কিন্তু আফসোস এটা সম্ভব নয়,তবে কি জানেন স্যার আমারও না মাঝে মাঝে মনে হয় আপনিও আমায় ভালোবাসেন কিন্তু আবার ভাবি এটা কি করে সম্ভব,সত্যি আপনার আর আমার মধ্যে অনেক দূরত্ব স্যার….
“বলেই গালে হাত দিয়ে রিয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো তানজু!’
“কিছুক্ষন পর….
“হঠাৎই রিয়াদের ঘুম ভেঙে যায় চোখ খুলে তানজুকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ
—“কি হলো তানজু তুমি ওভাবে বসে আছো কেন?’
“আচমকা রিয়াদের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো তানজু!’তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললোঃ
—“ইয়ে না মানে কিছু না স্যার এমনি….
“তানজুর ইয়ে না মানে শুনতে শুনতে রিয়াদ শোয়া থেকে উঠে বসলো তারপর বললোঃ
—“হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না লাঞ্চ কি তৈরি…?’
—“হুম তা কখন তৈরি করা শেষ আপনাকে ডাকতেই তো রুমে আসছিলাম…
—“ওহ আচ্ছা, তুমি নিচে যাও তবে আমি আসছি…
—“ওকে স্যার…
“বলেই চলে যেতে নেয় তানজু,দু পা এগোতেই আবার রিয়াদ বলে উঠলঃ
—“আচ্ছা শোনো…
“রিয়াদের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে তানজু তারপর পিছন ফিরে বলেঃ
—“জ্বী বলুন স্যার..
—“লাঞ্চ এর পর তৈরি থেকো আমরা বের হবো…?’
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ
—“কোথায় স্যার…?’
—“সেটা গেলেই দেখতে পাবে…
“এতটুকু বলে বিছানা থেকে নেমে চলে যায় রিয়াদ ওয়াশরুমের দিকে!’রিয়াদকে যেতে দেখে তানজুও আর বেশি কিছু না ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে গেল!’
____
“লাঞ্চ সেরে সোফায় বসে আছে রিয়াদ পরনে তার ব্লাক জিন্স ওয়াইট টিশার্ট সাথে ব্লাক জ্যাকেট চুলগুলো সুন্দর মতো সাজানো গোছালো,হাতে ব্লাক ওয়াচ আর পায়ে ব্লাক জুতো!’এরই মাঝে তানজু হাজির পরনে তার ওয়াইট টপস আর ব্লাক জিন্স,চুলগুলো খোলা, চুলের একপাশে একটা পাথরের ক্লিপ দেয়া,মুখ হাল্কা মেকাপ,হাতে ব্যাচ!’আর গলায় ছোট্ট মেবাইল ব্যাক জুলিয়ে তৈরি সে!’রিয়াদ তানজুকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর বললোঃ
—“তৈরি তুমি, তাহলে যাওয়া যাক…
—“হুম চলুন স্যার….
“তারপর রিয়াদ তানজু একসাথে বের হয় বাসা থেকে!’গাড়ি পর্যন্ত আসতেই রিয়াদ সামনের সিটে বসতে বলে তানজুকে!’তানজু কিছুটা অবাক হয় এতে তবে কিছু বলে না!’তানজু বসতেই রিয়াদও গিয়ে বসে পড়ে ড্রাইভিং সিটে!’এবার তানজু চুপ থাকতে পারে নি কিছুটা বিষন্ন ভরা কন্ঠ নিয়ে বললোঃ
—“স্যার আপনি ড্রাইভ করবেন আর আপনার গার্ডরা?’
—“আজ ওরা কেউ যাচ্ছে না তানজু শুধু তুমি আমি বুঝছো…
—“ওহ কিন্তু কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
—“বললাম তো গেলেই দেখতে পাবে!’
“বলেই তানজুর দিকে ঝুঁকে পড়লো রিয়াদ!’আচমকা এমনটা হওয়াতে তানজু কিছুটা চমকে উঠলো!’অবাক হয়ে তাকায় সে রিয়াদের দিকে!’
“অন্যদিকে রিয়াদ তানজুর অনেকটা কাছে এগিয়ে এসে সিট বেলটা লাগিয়ে দিল তানজুকে!’তারপর সরে এসে নিজেও সিট বেল লাগিয়ে গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো!’তবে কিছু বললো না…
“রিয়াদ সরতেই জোরে নিশ্বাস ফেললো তানজু,যেন আর কিছুক্ষন থাকলেই তার দম বন্ধ হয়ে আসতো!’
____
“কিছুক্ষন পর….
“রিয়াদ গাড়ি থামালো একটা বড় পার্কের সামনে!’পার্কের চারদিকেই মানুষে ভরপুর,এত মানুষ থেকে তানজু কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ
—“স্যার আমরা এখানে নামবো…
—“হুম…
—“কিন্তু…
—“ডোন্ট ওয়ারি কেউ বুঝতে পারবে না,এই ধরো মাস্ক তুমিও পড় আমিও পড়ছি…
—“আমাকেও পড়তে হবে…
—“হুম…
“তারপর রিয়াদ তানজু দুজনেই মাস্ক পড়ে বের হলো গাড়ি থেকে!’এই মুহূর্তে তানজুর নিজেকে সেলিব্রেটি বলে মনে হচ্ছে!’আনমনেই হাসলো তানজু,তারপর একসাথে এগিয়ে গেল রিয়াদের সাথে!’চোখে কালো সানগ্লাস আর মাস্ক পড়ে এগিয়ে চলছে রিয়াদ আর ওর পাশে তানজু!’ভিতরে ঢুকতেই তানজুর খুশিতে মনটা ভরে উঠলো!’
“যদিও মাস্ক থাকার কারনে রিয়াদ তানজুর মুখের হাসিটা দেখতে পারছে না তারপরও তানজুর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছে রিয়াদ তানজু প্রচন্ড খুশি হয়েছে!’
“পার্কের ভিতর ঢুকেই চোখের সামনে সবার আগে যেটা আসলো তানজুর সেটা হলো দোলনা!’দোলনা তানজুর মোস্ট ফেবারিট,দোলনা দেখে তানজু রিয়াদের কাছে এসে হাত দিয়ে দেখিয়ে বললোঃ
—“চলুন না স্যার ওইটাই উঠি…
“রিয়াদ তানজুর কথা শুনে তাকালো সামনে তারপর বললোঃ
—“না না ওগুলোয় মাথা ঘুরায় তানজু…
—“কিছু হবে না স্যার প্লিজ চলুন…
—“ওটা বাদে অন্য কিছুতেই উঠো…
—“প্লিজ স্যার চলুন,প্লিজ প্লিজ,ওটা আমার খুব ভালো লাগে…
“শেষমেশ তানজুর জোরাজোরিতে রাজি হয়ে যায় রিয়াদ!’রিয়াদের কথা শুনে খুশি হয়ে যায় তানজু,ফট করেই রিয়াদের হাত ধরে দৌড়ে এগিয়ে যেতে যেতে বলেঃ
—“তাড়াতাড়ি চলুন স্যার…
”তানজুর কাজে প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণেই খুশি মনে এগিয়ে চললো রিয়াদ!’শুরুতে দোলনায়,তারপর ঘোড়ায় উঠলো রিয়াদ তানজু,সাথে মাস্ক খুলে দুজন মিলে পিক তুললো!’যদিও রিয়াদ পিক তুলেই আবার মাস্ক পড়ে নিয়েছিল,,তারপর ফুচকা, ঝালমুড়ি তো আছেই!’তানজু প্রচন্ড খুশি আজ,তানজুর খুশিতে রিয়াদও খুশি!’
“পার্ক থেকে বেরিয়ে রিয়াদ তানজু আবার বসে পড়লো গাড়িতে!’গাড়িতে বসতেই তানজু খুশি হয়ে বললোঃ
—“এওতোগুলো থ্যাংক ইউ স্যার….
“উওরে হাসে রিয়াদ তারপর বলেঃ
—“এখনও শেষ হয়নি তানজু, এখন আমরা আরেকটা জায়গায় যাবো তবে তার আগে শপিং মলে যাবো,আর হ্যাঁ শপিং এ বসে আবার স্যার স্যার করো না,বুঝতে পারছো…
—“কেন স্যার…?’
—“এই কেনোর উওর ছয় মাস আগেই তোমায় দিয়েছি তানজু,কিন্তু তুমি এখনও পাল্টাতে পারলে না….
—“অভ্যাস যে…
—“ছয় মাসেও পাল্টাতে পারলে না….
—“ওকে স্যার আর বলবো না..
—“ওকের পরও স্যার ইউস করা লাগে তানজু…
—“স্যার ছাড়া কি বলে ডাকবো বলেন…
—“নাম ধরে ডাকবে বুঝছো পাগলী কোথাকার…
“উওরে তানজু আর কিছু বললো না!’
______
“রিয়াদদের গাড়ি এসে থামলো একটা বড় শপিং মলের সামনে!’রিয়াদ তার মুখে মাস্ক পড়ে বের হলো গাড়ি থেকে!’রিয়াদকে নামতে দেখে তানজুও নেমে পড়লো!’তারপর রিয়াদ তানজু একসাথে ঢুকলো শপিং মলের দিকে!’
“একটা বড় দোকানে ঢুকে একটা একটা করে কিছু ড্রেস চয়েজ করতে লাগলো রিয়াদ,সাথে কিছু জুয়েলারি,হ্যান্ড ব্যাগ,জুতোসহ আরো অনেককিছু!’তানজু শুধু নিরব দর্শকের মতো রিয়াদের পিছন পিছন এগিয়ে চলছে!’তার মাথায় রিয়াদের কাজ কর্ম একদমই ঢুকছে না!’রিয়াদ তানজুর জন্য অনেকগুলো ড্রেস চয়েজ করে এগিয়ে দিল তানজুর হাতে!’তারপর বললোঃ
—“এগুলো পড়ে আসো…!’
“রিয়াদের কাজ দেখে চোখ বড় বড় করে বললো তানজুঃ
—“এতগুলো..
—“হুম…
—“কিন্তু স্যার…
—“শ্যাট আপ তানজু এই স্যার বলা বন্ধ করো তোমায় কতবার বলছি না স্যার ডাকবে না..
—“ওহ সরি স্যার, থুড়ি সরি…
“এতটুকু বলে তাড়াতাড়ি রিয়াদের হাত থেকে ড্রেস গুলো নিয়ে চলে যায় তানজু ট্রায়াল রুমে!’তানজু যেতেই রিয়াদ তার মাস্কটা খুলে সামনেই একটা সোফার উপর বসলো!’তানজু পর পর কয়েকটা ড্রেস পড়ে আসলো রিয়াদের সামনে কিন্তু রিয়াদ প্রত্যেকটা ড্রেসই রিজেক্ট করে দিল!’রিয়াদের কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে আবার ঢুকে পরলো তানজু ট্রায়াল রুমে!’
.
.
“তানজু যেতেই রিয়াদ তার মেবাইলটা হাতে নিয়ে কিছু একটা দেখতে লাগলো!’এমন সময় দোকানের ভেতরে থাকা একটা মেয়ে এসে বললো তাকেঃ
—“আপনি সেলিব্রেটি “আদ্রিয়ান মাহমুদ রিয়াদ” না….?’
“হুট করে এমন কিছু শোনার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিল না রিয়াদ পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো রিয়াদ!’রিয়াদের হাসি দেখেই মেয়েটা ক্রাশট!’মেয়েটি প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে বললোঃ
—“ওয়ান সেলফি আর অটোগ্রাফ প্লিজ…?’
“রিয়াদও মুচকি হেঁসে বললোঃ
—“শিওর…
“মেয়েটি খুশি হয়ে যায় রিয়াদের কথা শুনে!’তারপর খুশি মনে রিয়াদের পাশে হাল্কা গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সেলফি আর অটোগ্রাফ নিলো!’এরই মাঝে খুশি মনে তানজু একটা ওয়াইট গোল শট লেডিস ফ্রক হাটু পর্যন্ত লং পড়ে হাজির, কিন্তু মুহূর্তেই সামনের দিকে তাকিয়ে হাসি তার গায়েব!’চুপচাপ কিছু না বলে মুডঅফ করে দাঁড়িয়ে রইলো তানজু!’
“অটোগ্রাফ নেওয়া শেষ হতেই মেয়েটি রিয়াদকে থ্যাংক ইউ বলে চলে যায়!’মেয়েটি যেতেই তানজু কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ালোর রিয়াদের সামনে!’তারপর বললোঃ
—“এখানে কি হচ্ছিল?’
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ অবাক হয়ে বললোঃ
—“কি হচ্ছিল মানে..?’
—“আপনি বুঝতে পারছেন না আমি কি বলছি?’
“রিয়াদ কিছু বলবে তার আগেই একদল মেয়েরা হাজির!’সবাই ঘিরে ধরলো রিয়াদকে!’হুট করে এমন এটাকে তৈরি ছিল না রিয়াদ!’কাউকে কিছু বলতেও পারছে না সে!’
“অন্যদিকে মেয়েদের রিয়াদের গা ঘেঁষে ছবি তুলতে দেখে রাগে আগুন তানজু!’প্রচন্ড রাগ নিয়েই রিয়াদের সামনে ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললো সবাইকেঃ
—“এসব কি হচ্ছে?’
“তানজুর কথা শুনে একটা মেয়ে বলে উঠলঃ
—“আমরা ওনার সাথে সেলফি তুলবো..
—“এটা কোন ধরনের সেলফি তোলা গা ঘেঁষে না দাঁড়িয়ে সেলফি যায় না নাকি (কাট কাট গলায়)
—“আপনিও তো গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন…
—“আমি ওনার বউ আমি গা ঘেঁষে দাঁড়াবো না তো তুমি দাঁড়াবে…
—“আপনি ওনার বউ…
—“কেন ছয় মাস আগে যখন আমাদের বিয়ের ফটো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া হয়েছিল তখন কোথায় ছিলে তুমি…
“এই নিয়ে তানজুর আর ওই মেয়েটার সাথে ঝগড়া লেগে গেল!’
“হঠাৎই তানজুর এত রাগ থেকে চরম প্রকার অবাক রিয়াদ!’পরক্ষণেই আবার তানজুর কান্ড দেখে তার খুব মজা হাসি দুটোই পাচ্ছে,,এর মানে তানজু জেলাস ভেবেই খুশি হয়ে যায় রিয়াদ কিন্তু এই মুহুর্তে এদের ঝগড়া এভাবে হতে দিলে চলবে না ভেবেই রিয়াদ গিয়ে পিছন থেকে মুখ চেপে ধরলো তানজুর তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললোঃ
—“আই এক্সট্রিমলি সরি গাইস,আমাদের কিছু জরুরি কাজ আছে তাই আমাদের যেতে হবে, আর প্লিজ সবাইকে অনুরোধ এই বিষয়টা লিংক করো না!বলেই সবাইকে পাশ কাটিয়ে তানজুকে নিয়ে চলে আসে রিয়াদ…
.
“কিন্তু তানজু যাবে না তার রাগ মাথার চরমে ওঠে গেছে!’রিয়াদ কোনোভাবে তানজুকে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দিল তারপর নিজেও গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করলো!’কিছু দূর যেতেই উচ্চ স্বরে হেঁসে দিল রিয়াদ!’রিয়াদের হাসি দেখে তানজুর রাগ আরো বেড়ে গেল কিন্তু কিছু বললো না……
!#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৬
“রাগী মুড নিয়ে গাড়িতে বসে আছে তানজু,রাগে তার মাথায় আগুন জ্বলছে!’তারওপর রিয়াদের হাসি যেটা তানজুর রাগান্বিত মুখকে আরো রাগিয়ে দিচ্ছে!’শেষমেশ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কাট কাট কন্ঠে বললো তানজুঃ
—“আপনি এতো হাসছেন কেন?’
“উওরে রিয়াদ কিছু না বলে তার হাসি থামিয়ে দিলো!’রিয়াদ তার হাসি থামিয়ে দিতেই জানালার দিক মুখ করে বসে রইলো তানজু!’
“বেশ কিছুক্ষন পর রিয়াদ তার গাড়ি থামিয়ে দিলো!’
___
“সময়টা রাত_৮ঃ০০টা….
“চলন্ত জাহাজের রেলিং ধরে মুখ ঘোমরা করে দাঁড়িয়ে আছে তানজু আর ওর পাশেই রিয়াদ!’রাতের পুরো আকাশ জুড়ে জ্বল জ্বল করছে তাঁরারা!’সাথে মন মাতাল করা শীতলতা মিশ্রিত ঠান্ডা বাতাস!’বাতাসে তানজু রিয়াদের দু’জনেই চুল উড়ছে!’তাদের সামনেই সমুদ্রের পানিরা ঢেউদের আঙিনায় নেচে বেড়াচ্ছে এখান থেকে ওখানে আবার কখনো ছিঁটকে যাচ্ছে দূর থেকে দূরান্তে!’তানজুর দৃষ্টি সেদিকেই,,যদিও তানজুর আশেপাশের পরিবেশ দেখে খুশি হওয়ার কথা বাট কোথাও না কোথাও এখনো জ্বেলাসিটা কাজ করছে তার ভিতর!’অন্যদিকে রিয়াদের দৃষ্টি তানজুর দিকে!’তানজুকে এখনও মুড অফ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল রিয়াদঃ
—“কি হলো তানজু এত চুপচাপ কেন জায়গাটা ভালো লাগে নি..?’
“উওরে তানজু চুপ!’তানজুকে এখনও কিছু বলতে না দেখে রিয়াদ আবারো বলে উঠলঃ
—“কি হলো তানজু তুমি কথা বলছো না কেন?’
“তানজু চুপ!’
“এবার রিয়াদ কিছুটা হেঁসেই বলে উঠলঃ
—“তবে যাই বলো তানজু তোমার তখন ঝগড়াটা কিন্তু দারুণ ছিল…
“এবারের কথা শুনে তানজু গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে তাকায় রিয়াদের দিকে কিন্তু কিছু বলে না!’এবার হতাশ রিয়াদ বুঝেও না বুঝার ভান করে মজার ছলে বলে উঠল সেঃ
—“আচ্ছা তুমি হুট করে ওভাবে রেগে গেলে কেন এমনটা তো নয় কিছুক্ষন আগের ঘটনাটা নতুন কিছু ছিল এমনটা তো এর আগেও বহুবার হয়েছে?’কই তখন তো এভাবে রিয়েক্ট করো নি তুমি…?’তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো তোমার?
“রিয়াদের একের পর এক প্রশ্নের কথা শুনতেই তানজুর রাগ গায়েব সাথে ভাবতে লাগলো সে, এখন কি বলবে ও!’তানজু তাড়াতাড়ি রিয়াদের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো!’রিয়াদ তানজুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললোঃ
—“কি হলো তানজু কথা বলছো না কেন?’
—“ইয়ে না মানে…
—“তোমার এই ইয়ে মানে বাদ দিয়ে সরাসরি কথা বলো ব্যাপারটা কি?’ (ভূ-কুচকে)
“রিয়াদের কথা শুনে এবার ঘাবড়ে যায় তানজু,কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে সেঃ
—“এখানে খুব শীত করছে আমি ভিতরে যাচ্ছি!’
“বলেই তাড়াতাড়ি সরে আসতে নেয় তানজু!’তানজুকে যেতে দেখে হাত ধরে বসলো রিয়াদ!’রিয়াদ হাত ধরতেই তানজুর ঘাবড়ানো মুখ আরো ঘাবড়ে গেল!’রিয়াদ তানজুর আবভাব দেখে হাত ধরে দিলো টান সাথে সাথে তানজু তালসামলাতে না পেরে এসে পড়লো সোজা রিয়াদের বুকের কাছে!’তবে মাথা উঁচু করলো না সে,মাথা নিচের দিকে করেই তাকিয়ে রইলো তানজু!’বুকের ধুকপুকানি কয়েশ বেগে চলছে তাঁর!’রিয়াদ তানজুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“প্রশ্নের উওর না দিলে তো তোমায় যেতে দিচ্ছি না তানজু?’
“রিয়াদের কথা শুনে তানজুর যাচ্ছে তাই অবস্থা!’তানজু ঘাবড়ানো ফেস নিয়ে মাথা নিচু অবস্থায় বললোঃ
—“এখানে প্রচুর শীত স্যার আমরা ভিতরে গিয়ে কথা বলি…
—“হু তোমায় স্যার বলতে বারন করেছি না তানজু..
—“স….রি….
—“লুক এট মি তানজু?’
“এবার তো সত্যি সত্যি হার্ডএটাক করবে তানজু!’
—“কি হলো তানজু আমি কিছু বলেছি তোমায় লুক এট মি,,তাকাও আমার দিকে…
“এবার না চাইতেও তানজু আস্তে আস্তে তাকালো রিয়াদের চোখের দিকে!’রিয়াদ তানজুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“এবার বলো…
—“না মানে…
“তানজুর কথার মাঝখানেই রিয়াদ তানজুর ঠোঁটে আঙুল দিলো!’তারপর বললোঃ
—“Do you love me tanju…?'(আঙুল সরিয়ে)
“এই রে খাইছে এখন কি বলবে তানজু!’তানজু রিয়াদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“বিশ্বাস করুন স্যার ধুরি বিশ্বাস করো থুক্কু বিশ্বাস করুন আমি আর জীবনে কোনোদিন এমন করবো না ভুল হয়ে গেছে,,তখন আমারে ভূতে ধরছিল স্যার এবারের মতো যেতে দিন…সরি স্যার , থুক্কু থ্যাংক ইউ,ধ্যাত দুঃখিত আই মিন সরি সরি চাইরশো কুড়ি বার…
“কথাগুলো তাড়াতাড়ি বলে রিয়াদকে ছাড়িয়ে চলে আসতে নেয় তানজু!’দু’পা এগোতেই রিয়াদ বলে উঠলঃ
—“ভালোবাসি তোমায় তানজু?’
“সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো তানজু,,যেন কি শুনলো সে সেটা সত্যি ছিল না মিথ্যে!’তানজু অবাক দৃষ্টিতে পিছন ঘুরে তাকালো রিয়াদের দিকে!’চারপাশে সমুদ্রের পানির শব্দ স স করছে,আকাশে তাঁরারা জ্বল জ্বল করছে,বাতাসের হাল্কা বেগের শব্দ যেন কানে বাজছে,সাথে জাহাজের গতির তীব্রতা আরোই জোরে চলছে মনে হয় তানজুর!’তানজু নিজের কানকে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না,হয়তো সে ভুল শুনেছে!’
“তানজুকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে দেখে রিয়াদ আবার বলে উঠলঃ
—“আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি তানজু,আই রিয়েলি লাভ ইউ…
“এবার তানজু আস্তে আস্তে শকটলি এগিয়ে গেল রিয়াদ কাছে!’তারপর আশেপাশের চারদিকে তাকিয়ে আস্তে বলে উঠলঃ
—“কি স্যার আশে পাশে তো কেউ নেই তাহলে অকারণে একটিং কেন করছেন…?
“তানজুর এমন কথা শুনে রিয়াদ হতাশ অবশ্য আগেই ভেবে ছিল রিয়াদ তানজু তার কথা শুনে এমন রিয়েকশনই দিবে আর এই কারনেই তো আজ ছয় মাস সময় লাগলো রিয়াদের তানজুকে প্রপোজ করতপ!’যতবারই তানজুকে তার মনের কথা বলতে গেছে রিয়াদ ততবারই এই একটা প্রশ্নের উত্তরের জবাবে কি বলবে ভাবতে ভাবতে আর বলা হয় নি তানজুকে তার মনের কথা!’আজও হয়তো বলতে পারতো না রিয়াদ তানজুকে তার মনের কথা,কিন্তু তখন শপিং মলে তানজুর কিউট জ্বেলাসি দেখে রিয়াদ যেন সাহস পেল একটু,সাথে তার মতো তানজুরও যে তার প্রতি অনূভুতি আছে এটা শিওর রিয়াদ!’রিয়াদকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল তানজুঃ
—“কি হলো এখন কেন কথা বলছেন না?’
“রিয়াদ আশেপাশে তাকিয়ে বললোঃ
—“আমি মিথ্যে বলছি না তানজু…
—“কি স্যার কেন রাতের বেলা এভাবে মজা নিচ্ছেন আমার সাথে…
—“আমি তোমায় কি করে বুঝাবো…?’
—“আমাকে কিছু বুঝাতে হবে না স্যার আমি সব বুঝে গেছি…
রিয়াদ হতভম্ব কন্ঠে বললোঃ
—“কি বুঝেছো?’
—“নিশ্চয়ই আশেপাশে অনন্যা ম্যামের কোনো লোক আমাদের ফলো করছে তাই আপনি এমন করলেন?’ডোন্ট ওয়ারি স্যার আমি কিছু মনে করি নি…
“বলেই আশেপাশে একবার তাকিয়ে হুট করেই তানজু নিজেই গিয়ে রিয়াদের গলা জড়িয়ে ধরলো!’তারপর কানে কানে বললোঃ
—“আপনার একটিং সত্যি নিখুঁত স্যার,মাঝে মাঝে আমি সত্যি ভেবে বসি আপনি আমায় সত্যি সত্যি ভালোবাসেন…
“বলেই হাল্কা hug করে চলে যায় তানজু ভিতরে!’
.
.
“এদিকে তানজু যেতেই রিয়াদ হতাশ হয়ে রেলিং এর দিকে ঘুরে নিজেই নিজেকে বলে উঠলঃ
—“তোকে হিরো হতে কে বলেছিল রিয়াদ,এখন তুই সত্যি সত্যি কিছু বললেও তোর বউ একটিং মনে করছে,অবশ্য ওর জায়গায় তুই নিজে থাকলেও এমনটাই ভাবতি,তবুও..
“ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো রিয়াদ,তারপর আকাশের দিক মুখ করে দুটো তাঁরার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কন্ঠ বলে উঠলঃ
—“মা – বাবা এখন কি করবো বলো, তোমাদের বউমা তো কিছুতেই মানতে চাইছে না আমি তোমাদের বউমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি….
“বলেই একটু বাচ্চা বাচ্চা মুুখ করে কান্না মাখা ফেস নিয়ে তাকিয়ে রইলো রিয়াদ সমুদ্রের পানির দিকে!’প্রচন্ড হতাশ সে…..
“সত্যি বুঝতে পারছে না রিয়াদ কি করে সে বুঝাবে তানজুকে এটা অভিনয় নয় সত্যি ভালোবাসা,,অভিনয় করতে গিয়ে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে সে….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………