রোদ্দুরে মেঘের বর্ষন পর্ব -৩৭ ও শেষ

#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৭ (শেষ)

“সেদিনের পর মাঝখানে কেটে গেল ২ দিন!’এই দু’দিনে তানজুকে নিজের সত্যি কারের ভালোবাসা বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে রিয়াদ কিন্তু তানজু তা মানতে নারাজ!’তার একটাই কথা রিয়াদ একটিং করছে!’শেষমেশ ব্যর্থ হয়ে আর কিছু বলে নি রিয়াদ…

.
.

“সময়টা সকাল ১০ঃ০০টা….

“কিছুটা হতাশা নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে রিয়াদ!’গাড়িতে একাই আছে সে!’কিছুটা রাগ নিয়েই বাসা থেকে একলা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রিয়াদ!’এমন সময় আচমকা রিয়াদের গাড়ির সামনে এসে থামলো একটা গাড়ি!’হুট করে এমনটা হওয়াতে রিয়াদ গাড়ির ব্রেক কষলো জোরে,,এমনিতেই রেগে ছিল সে এখন আরো রাগ হচ্ছে তার সামনের ব্যক্তির ওপর!’রিয়াদ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে গাড়িতেই বসে রইলো নামলো না!’এরই মধ্যে সামনের গাড়ির দরজা খুলে বের হলো একটা মেয়ে!’মেয়েটি পরনে রেড প্লাজু,সাথে রেড টপস আর কালো কোড,,হাতে রং বেরঙের ব্যাচ!’মুখে মাস্ক থাকলেও রিয়াদের বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটি কে?’অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রিয়াদ মেয়েটির দিকে!’মেয়েটি হেঁটে তাঁর দিকেই আসছে!’মেয়েটিকে নিজের দিকে আসতে দেখে রিয়াদও মুখে মাস্ক পড়ে আস্তে আস্তে বের হলো গাড়ি থেকে!’তারপর দুজন দুজনের মুখোমুখি হয়ে দু-লাইনের কিছু বলে যে যার গাড়ি করে চললো একই গন্তব্যে…..

_____

“একটা বড় কফি হাউজের দুু’তলা ভবনে সামনাসামনি বসে আছে রিয়াদ আর অনন্যা!’পুরো রেস্টুরেন্টটা একদমই ফাঁকা আর এর কারনটা বুঝতে রিয়াদের খুব একটা অসুবিধা হয় নি!’রিয়াদ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মুখের মাস্ক খুলে ফেললো, অনন্যা অনেক আগেই খুলে ফেলেছে!’রিয়াদ তার মাস্কটা খুলে টেবিলের উপর রেখে বললো অনন্যাকেঃ

—“কি বলবে আমায় অনন্যা?’

—“ওয়েটার ডাকি…

“বলেই ওয়েটারকে ডাক দিলো অনন্যা তারপর দু’কাপ কফি অর্ডার করলো সে!’একটা কোল্ড আর একটা হট!’ওয়েটার যেতেই রিয়াদ আবার বলে উঠলঃ

—“এবার বলো কি বলার আছে তোমার..?’

—“আরে এত অধৈর্য্য হচ্ছো কেন?’কফিটা আসুক খেতে খেতে কথা বলবো…

“উওরে রিয়াদ আর কিছু বলতে পারলো না!’তার মাথায় কিছুই আসছে না এই মুহূর্তে অনন্যা কি বলতে পারে তাঁকে…

“এরই মাঝে বলতে না বলতে হাজির ওয়েটার রিয়াদের দিকে কোল্ড কফি আর অনন্যার দিকে হট কফি দেয়!’অনন্যা মুচকি হেঁসে থ্যাংক ইউ বললো ওয়েটারকে…

“অনন্যার কথা শুনে ওয়েটার খুশি হয়ে ওয়েলকাম বলে চলে যায়!’এবার ওয়েটার যেতেই রিয়াদ খুব সুন্দর ভাবে নীবর কন্ঠে বললোঃ

—“এবার তো বলো…

“রিয়াদের কথা শুনে অনন্যা তার কফিতে দু’বার ফু দিয়ে এক চুমুক দিলো!’তারপর রিয়াদের দিকে তাকিয়ে ছল ছল চোখে তাকিয়ে বললোঃ

—“খুব কি দরকার ছিল রিয়াদ এত নাটক করার আমি জানি তোমার আর তানজুর সম্পর্কটা রিয়েল নয় তাহলে এমন কেন করলে শুধুমাত্র আমায় ভালোবাসা একসেপ্ট করবে না বলে….?’

“অনন্যার কথা শুনে রিয়াদ তার কফিতে এক চুমুক দিয়ে বললোঃ

—“আমি জানি অনন্যা তুমি হয়তো আমার কাজে হার্ড হয়েছো?’আর কষ্ট পেয়েই আমার ওপর রাগ করে সেদিন তানজুকে ড্রিংক করিয়ে ওর মুখ থেকে সব সত্যি জেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছো তাই না…

“রিয়াদের কথা শুনে অনন্যা বেশ অবাক হয়ে বললোঃ

—“তার মানে…

—“আমি সব জানি অনন্যা,,তোমার জন্যই তো সেদিন তানজুকে ইট দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করা হয়েছিল…

“এবারের কথা শুনে আরও অবাক হয় অনন্যা,,সে বুঝতে পারলো না এটা কি করে জানলো রিয়াদ যে সেই টাকা খাইয়ে সেদিন এমনটা করেছিল!’অনন্যাকে চুুপ থাকতে দেখে রিয়াদ আবারো বলে উঠলঃ

—“তুমি তো কানাডায় বসেও তানজুকে ওয়াশরুমে আঁটকে রাখার চেষ্টা করেছিলে তাই না,কিন্তু তুমি কি জানো সেদিন কি হয়েছিল?’

“ভাবতেই এখন রিয়াদের কেমন লাগছে অন্ধকার রুমের কথা ভাবলেই রিয়াদের অস্থিরতা ফিল হয়!’রিয়াদের কথা শুনে অনন্যা বললোঃ

—“কি হয়েছিল?’

—“তুমি নাই বা জানলে এনিবে,তুমি হয়তো এখন এটাই ভাবছো আমি এত কিছু কি করে জানলাম,আর জেনেও এতদিন তোমায় কিছু বলে নি কেন?’আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো একটা সময় নিজেই নিজের ভুলটা বুঝতে পারবে কিন্তু,, যাক গে ওসব বাদ দেও..”আর রইলো এগুলো জানার বিষয় এগুলো কি আমার জন্য জানা খুব বেশি কঠিন ব্যাপার অনন্যা!’তুমি যদি লোক রেখে আমাকে ফলো করতে পারো তাহলে আমি কি পারি না!’আমি জানি তোমার আমার ওপর রাগ ছিল কিন্তু তাই বলে এভাবে কাউকে হেরাস করার রাইট কি তোমার আছে,,তুমি একটু ভেবে দেখ কোথাও না কোথাও তোমার এই ভুলের জন্য একপ্রকার বাধ্য হয়ে তানজুকে বিয়ে করতে হয়েছে আমার!’কিন্তু সম্পূন্নটা বাধ্যতামূলক ছিল না…

“অনন্যা অবাক হয়ে বললোঃ

—“মানে…

—“কিছু কথা বলি,,এটা ঠিক শুরুটা আমি অভিনয় দিয়েই করেছিলাম!’কানাডায় বসে তোমাকে যাতে একসেপ্ট করতে না হয় তাই মিথ্যে বলেছিলাম,,কিন্তু বর্তমানে এই মিথ্যেই আমার জন্য সত্যি অনন্যা!’শুরুতে ৬ মাসের এগ্রিমেন্ট করে নিয়ে ছিলাম তানজুকে দিয়ে আমার গার্লফ্রেন্ডের অভিনয় করার জন্য,আর এই অভিনয়কে তোমার কাছে সত্যি প্রমান করার জন্য হুট করে ওর কাছে যাওয়া,ওর সাথে সময় কাটানো,ওদের গ্রামে যাওয়া সবকিছুই একটা সময় ভালো লাগায় চলে গিয়েছিল!’তারপর হঠাৎ যখন ওকে ছেড়ে ঢাকা চলে আসলাম তখন আমি হারে হারে বুঝতে পেরেছি তানজুকে ছাড়া আমার এক সময়ও চলবে না!”তখনই আমি বুঝতে পেরেছি সত্যি সত্যি তানজুকে ভালোবাসি আমি আর ওর সাথেই সারাজীবন থাকতে চাই!’অভিনয় করতে গিয়ে কখন যে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারে নি!’দেখ অনন্যা আমি জানি আমার এই কথাগুলো শুনে তোমার হয়তো এখন রাগ হচ্ছে আর তুমি রেগে গিয়ে আবার ভুলভাল কিছু করার চেষ্টা করবে!’তোমার কাছে অনুরোধ প্লিজ এমন কিছু করো না যাতে আমাদের এত বছরের বন্ধুত্ব এই সামান্য কারনে নষ্ট হয়ে যাক!’আমি তোমাকে আমাদের মিট হওয়ার শুরু থেকেই বন্ধু হিসেবে মানি,সত্যি বলতে আজ আমি যতটুকু সবটা তোমার আর তোমার বাবার সাপোর্টে,,তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি!’কিন্তু এই জন্য আমি তোমাকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিতে পারতাম না,সবাইকে সবাই ভালোবাসতে পারে না!’ভালোবাসা দুতরফা হতে হয়,তোমার ক্ষেত্রে সেটা এক তরফা কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমি তোমার ভালোবাসাকে অপমান করছি অনন্যা!’এমনটা ভুলেও ভেবো না প্লিজ,তোমার অনুভূতিকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি!’তবে কথায় আছে না জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে সব আগে থেকেই ঠিক করা থাকে!’আমার ক্ষেত্রেও তাই তানজুই হয়তো আমার জন্য ছিল!’এই মুহূর্তে আমি তোমায় শুধু এতটুকু বলতে পারি আমায় ভুলে যাও শুধু শুধু আমার জন্য তোমার ক্যারিয়ার নষ্ট করো না,,জানি শুধুতে একটু কষ্ট হবে কিন্তু একটা সময় দেখবে সময়ের সাথে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে!’আমি আর তানজু কোনোজনই তেমার লাইফে কোনো মেটারই করবে না…

“এতটুকু বলে থামে রিয়াদ তারপর কফির মগটা হাতে নিয়ে আরেক চুমুক দিয়ে বললোঃ

—“তোমার জন্য কেউ না কেউ আছে অনন্যা যে আমার চেয়েও শতগুনে ভালো!’শুধু সেই মানুষটা আসা পর্যন্ত তোমায় অপেক্ষা করতে হবে!’সবার জন্যও কেউ না কেউ থাকে তোমার জন্য আছে,,শুধু শুধু তুমি আমার জন্য কষ্ট পেও না,আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম আর আজীবন ভালো বন্ধু থাকবো প্রমিজ!’কিন্তু ভালোবাসা এটা সম্ভব নয়,,আশা করি তুমি আমার কথাগুলো বুঝবে পেরেছো বা আমি কি বলতে চাইছি তুুমি বুঝেছো….

“উওরে তেমন কিছু না বলে নীরবতা নিয়ে বসে রইলো অনন্যা!’রিয়াদের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়েই শুনেছে অনন্যা!’এটা তো ঠিক রিয়াদের এই ভালোবাসার কথা শুনে অনন্যা তার আর রিয়াদের বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কের কথাই ভুলে গিয়েছিল!’ভুলে গিয়েছিল সে সেই সব দিনগুলোর কথা যে দিনগুলোতে তাঁরা কতই না ভালো বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কে জড়িত ছিল!’ঠিকই তো সবার প্রতি সবার ভালোবাসা জন্মায় না….

“কথাগুলো মনে মনে ভেবে কফির মগ হাতে নিয়ে কফিতে চুমুক দিলো অনন্যা!’

“এরপর নীরবতায় কাটলো দু’জনের ভিতর কতক্ষণ!’রিয়াদ তার হাতের ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে বললোঃ

—“এখন আমায় যেতে হবে অনন্যা?’

“বলেই দাঁড়িয়ে পড়লো রিয়াদ!’রিয়াদকে দাঁড়াতে দেখে অনন্যা নিজেও দাঁড়ালো তারপর বললোঃ

—“সরি রিয়াদ,সত্যি ভুল হয়ে গেছে আই এক্সট্রিমলি সরি….

“অনন্যার কথা শুনে রিয়াদও খুশি হয় তারপর বললোঃ

—“ইট’স ওকে অনন্যা,এন্ড থ্যাংক ইউ ভেরি ভেরি মার্চ তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো এর জন্য…

“রিয়াদের কথা শুনে অনন্যা তার হাত এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“ভালো থেকো তুমি আর তানজু!’এমনিতেও আমি কাল সিংগাপুর যাচ্ছি নতুন মুভির শুটিং এর জন্য…

“অনন্যার কথা শুনে রিয়াদও নিজের হাত অনন্যার দিকে এগিয়ে দিয়ে খুশি মনে বললোঃ

—“কংগ্রেস এন্ড অল দা বেস্ট…

—“থ্যাংক ইউ!”

—“মোস্ট ওয়েলকাম অনন্যা এখন তবে আমি যাই..

—“হুম বাই,

—“বাই ভালো থেকো সবসময়…

—“হুম তুমিও…

“বলেই মুচকি হেঁসে অনন্যার হাত ছেড়ে মুচকি হেঁসে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল রিয়াদ!’আর অনন্যা কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো রিয়াদের যাওয়ার পানে…..

_____

“ঘড়ির কাঁটায় দুপুর দুটোর কাঁটায় ছুঁই ছুঁই!’টিভির সামনে বসে আছে তানজু!’অপেক্ষা কখন রিয়াদ আসবে সেই সকালে বেরিয়েছে রিয়াদ কিন্তু এখনও আসার নাম নেই!’এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল তানজুর!’উপরে রিয়াদের নাম দেখে তাড়াতাড়ি ফোন তুললো তানজু কিছু বলবে তার আগেই রিয়াদ বলে উঠলঃ

—“একটা এড্রেস পাঠাচ্ছি আধ ঘন্টার মধ্যে চলে আসো…

“উওরে তানজুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয় রিয়াদ!’রিয়াদের কথা শুনে তানজুও আর বেশি কিছু না ভেবে টিভিটা অফ করে চলে যায় উপরে তারপর হাল্কা সাজগোজ করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ততক্ষণে রিয়াদের এড্রেস দেওয়া মেসেজ চলে এসেছে….

.
.

“একটা শুনশান জায়গার শুনশান একটা রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’আশেপাশে তাকাতেই বুঝতে পারলো না তানজু এত নিরিবিলি জায়গায় রিয়াদ তাকে কেন আসতে বললো’!!অন্যদিকে দূর থেকে একটা গাছের আঁড়ালে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ, তানজুকে রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফোন করলো তানজুকে তারপর পকেট থেকে ব্লু-ট্রুথ বের করে কানে পড়ে নিলো সে!’

“হঠাৎই আবার ফোনটা বেজে উঠতে তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে কানে ধরলো তানজু!’তারপর বললোঃ

—“হ্যালো…

—“দাঁড়িয়ে আছো কেন ভিতরে যাও সামনে যে রাস্তাটা দেখছো ওই রাস্তার সোজাসুজি এগিয়ে এসো তানজু…

“রিয়াদের কথা শুনে তানজু অবাক হয়ে বললোঃ

—“আপনি কোথায় বলুন তো…

—“এত কথা কেন বলো তুমি তোমায় যা বলেছি তাই করো আর হ্যাঁ ফোন কাঁটার দরকার নেই কোথাও আঁটকে গেলে প্রশ্ন করো আমায়…

—“ওকে…

—“এখন এগিয়ে যাও…

—“হুম…

“এতটুকু বলে এগিয়ে গেল তানজু,,একদমই নিরিবিলি আর সুনসান জায়গা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো একটা ছোট্ট রাস্তা!’ রাস্তার দুইদিকেই রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গাছ-পালা!’তানজু আশেপাশে তাকাতে তাকাতে এগিয়ে চললো ভিতরে..

“আর ওর থেকে বেশখানিকটা দূরে তানজুর সাথে সাথে এগিয়ে চলছে রিয়াদ!’কিছুটা দূর হাঁটতেই দু’দিকে দুটো রাস্তার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে পড়লো তানজু!’তানজু বুঝতে পারছে না এখন কোন রাস্তার দিকে যাবে আশেপাশে তাকাতেই হঠাৎই ডানদিকের রাস্তার একটা গাছের নিচের দিকে চোখ গেল তার সেখানে কিছু একটা আছে!’তানজু সেদিকেই এগিয়ে গেল…

“একটা সুন্দর ফুলের তোড়া সাথে একটা শুকনো ঘামের চিঠি,একটা ছোট্ট রেড রঙের টেডিবিয়ার আর দুুটো লাভের বেলুন রয়েছে ওখানে!’তানজু বেশ বুঝতে পেরেছে এগুলো রিয়াদই রেখেছে তার জন্য তানজু খুশি হয়ে ফুলের তোড়া,টেডিবিয়ারটা আর বেলুন হাতে নিলো সাথে চিঠিটাও!’তারপর ওদিকের পথ দিয়েই এগিয়ে গেল সে….

— “চিঠিটা খুলতেই উপরে লেখাঃ

“তুমি এত অবুঝ কেন প্রিয়সী?’মানছি শুরুটা আমাদের অভিনয় দিয়ে হয়েছিল কিন্তু কি করে বোঝাবো তোমায় আমি সত্যি ভালোবাসি তোমায়!’তোমার সাথে অভিনয় করতে গিয়েই তোমায় সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি আমি!’সত্যি বলছি আমার অনুভূতিগুলো আমি তোমায় ঠিকভাবে গুছিয়ে বোঝাতে পারছি না,, কিন্তু আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি!’তোমাকে হয়তো বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছিলাম সেদিন কিন্তু বিশ্বাস করো সেদিন আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হয় নি!’তোমার হাঁটা,চলা,হুট করে কাছে গেলে ঘাবড়ে যাওয়া ভাব,আবার তুমি ভুল করে কাছে চলে এলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সরি বলা সবকিছুই ভালো লাগে আমার,তোমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো আজও আমায় এক অদ্ভুত অনুভূতি আর ভালো-লাগার আবডালে নিয়ে যায়!’জানি না কখন কিভাবে তোমায় আমি ভালোবেসেছি!’সত্যি বলতে তোমার প্রতি আমার প্রথম অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন…

“আমি তখন তোমাদের বাড়ির আমার রুমে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম নীবরে!’ তখন আকাশ ভরা রোদ্দুর ছিল,কিন্তু হুট করেই রোদ্দুরে ভরা আকাশটা কালো মেঘে ঢেকে গেল!’আর শুরু হলো বর্ষন!’আচমকা এই “রোদ্দুরে মেঘের বর্ষন” হওয়ার কারন বুঝতে সেদিন সময় লেগেছিল আমার!’আমি আনমনেই সেদিন জানালার ধারে দাঁড়িয়ে “রোদ্দুরে মেঘের বর্ষন” দেখছিলাম!’এমন সময় হুট করেই এই বর্ষনের মাঝে ছুটে আসলে তুমি!’তোমার সেদিন পড়নে ছিল কালো থ্রি-পিচ,খোলা চুল,হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি জানি না কি এমন মুগ্ধ করা ছিল তোমার মাঝে সেদিন যেটা আমায় মুগ্ধ করেছিল!’বিশ্বাস করো না চাইতেও বার বার সেদিন তোমায় দেখে গেছি আমি,এরপর নানা ভাবে বহুবার তুমি আমার কাছাকাছি এসেছো,তোমার আলোকিত রাতে ক্যান্ডেল যেন আজও চোখে ভাসে আমার!’আমি তখনও বুঝতে পারি নি আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি!’ভালোবাসা তো বুঝেছি তখন যখন তোমায় ছেড়ে চলে এসেছিলাম!’বলে বুঝাতে পারবো না তোমায় সেই দিনগুলো কেমন ভাবে কেটেছে আমার!’তোমায় ছাড়া থাকতে না পেরেই সেদিন রাগান্বিত কন্ঠ নিয়ে তোমায় আসতে বলেছিলাম আমার কাছে!’

“এবারের লেখাটা পড়ে তানজু বুঝতে পারলো তাহলে এই কারনেই সেদিন রিয়াদ তাকে রাগান্বিত কন্ঠে ফোনে বলেছিলঃ

—“কালকের মধ্যে তোমাকে আমার সামনে দেখতে চাই তানজু…

“আনমনেই হাসলো তানজু!’তারপর আবার চিঠি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে!’চিঠির দিকে তাকাতেই আবারো ভেসে আসলো তানজুর সামনে রিয়াদের অভিমান ভরা অনুভূতির কথাগুলোঃ

“তুমি কি এখনও বুঝতে পারছো না প্রিয়সী” আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি!’তোমায় নিয়েই আমি আমার বাকি জীবনটা কাটাতে চাই,,একটা সুন্দর সাজানো গোছালো পরিবার সাজাতে চাই!’সাথে……..

“ব্যস আর কিছু লেখা নেই!’আর কিছু লেখা না দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো তানজু!’আশেপাশে তাকাতেই বুঝতে পারলো তানজু,রাস্তা পেরিয়ে শুকনো জমিনের মাঝখানে এসে পড়েছে তানজু!’

“আশেপাশে চোখ বুলালো তানজু!’আশেপাশে তাকাতেই দেখলো তানজু তার সামনে দিয়েই বয়ে যাচ্ছে ছোট্ট নদী!’নদীর পানির সাথেই বয়ে যাচ্ছে শুকনো ফুলে রং-বেরঙের পাপড়িরা!’তানজু মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো সেদিকে!’দূর আকাশেই সূর্য্যি মামা উঁকি মারছে তানজুর দিকে,এমন সময় হাতে আর একটা ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে আসলো রিয়াদ তানজুর দিকে!’তানজুর কাছে এসে ফুলের তোড়াটা এগিয়ে দিয়ে বললো রিয়াদঃ

—“এবার তো বিশ্বাস হলো প্রিয়সী আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি….

“রিয়াদের কথা শুনে তানজু একটু শয়তানি করে বলে উঠলঃ

—“কি স্যার আবার একটিং শুরু করলেন এখানে তো কেউ নেই তাহলে শুধু শুধু এত নাটক করার কি আছে,তবে যাই বলুন এবারের অভিনয়টা আমার বেশ লেগেছে!’এভাবে কেউ প্রপোজ করবে ভাবি নি আমি,সত্যি না হোক অভিনয়েই ঠিক আছে!’আর এমনিতেও আমি জানি আপনি হয়তো আবারও অনন্যা ম্যাম….

“তানজু আর কিছু বলার আগেই রিয়াদ রেগে গিয়ে নিজের হাতের ফুলের তোড়াটা দূরে ছিঁটকে ফেলে দিল!’তারপর তানজুর হাত ধরে দিলো টান আচমকা এমনটা হওয়াতে তানজু তাল সামলাতে না পেরে এসে পড়লো সোজা রিয়াদের মুখোমুখি!’তারপর তানজুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিয়াদ তানজুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো!’

“ঘটনা চক্রে তানজুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল,,শকট হয়ে তার হাতে থাকা ফুলের তোড়া আর টেডিটা নিচে পড়ে গেল সাথে বেলুনগুলোও হাত ফসকে ছুটে উড়ে গেল মুক্ত আকাশে..

“কিছুক্ষন পর….

“রিয়াদ তানজুকে ছেড়ে দিলো!’তারপর রিয়াদ তানজুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললোঃ

—“আর কিভাবে বললে তুমি বুঝবে প্রিয়সী আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি,আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ!’

“অন্যদিকে তানজু কিছুক্ষন শকট হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আনমনেই জড়িয়ে ধরলো রিয়াদকে!’তারপর মনে মনে বললোঃ

-“আমি তো আগেই বুঝে গিয়েছিলাম,ইট’স ওকে বেশি বুঝলে যায় হয় আর কি?’

“এতটুকু ভেবে রিয়াদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে খুশি মনে বললো সেঃ

—“আই লাভ ইউ টু প্রিয়….!’

“তানজুর কথা শুনে খুুশি হয়ে যায় রিয়াদ!’তানজুকে ছাড়িয়ে রিয়াদ খুশি হয়ে বললোঃ

—“সত্যি…

“উওরে খুশি হয়ে মাথা নাড়ায় তানজু!’তানজুকে মাথা নাড়াতে দেখে রিয়াদ খুশি হয়ে তানজুকে কোলে তুলে নিয়ে ঘোরাতে থাকে…

“রিয়াদের পাগলামিতে তানজুও হেঁসে ফেলে!’

“আজ রিয়াদ তানজু দুজনেই খুব খুশি!’অবশেষে তাদের লং টাইম গল্পের অবসান ঘটলো,,সাথে প্রকাশ পেল না বলা ভালোবাসা!’আর তাদের এই ভালোবাসার সাক্ষী হিসেবে রইলো,এই মুক্ত করা ধবধবে সাদা আকাশ,,জানলো আকাশের মাঝে ভেসে চলা মেঘেরা,সাথে সূর্য্যি মামা আলোকিত চকচক করা রোদ্দুরেরা,জমিনের চারদিকে ছড়িয়ে থাকা সবুজ গাছেরা,সবুজ ঘাসেরা সাথে মন মাতাল করা এই বাতাসেরা….

“হয়তো তাঁরাও খুশি রিয়াদ তানজুর এই প্রকাশ পাওয়া ভালোবাসায়!’

“আজও আকাশে মেঘ ছিল,ছিল রোদ্দুর!’কিন্তু হলো না বর্ষন!’কি জানি হয়তো আজ সে এখানে নয় অন্য কোথাও দিচ্ছে “রোদ্দুরে মেঘের বর্ষন”!’হয়তো এদের মতোই আবারো কোথাও ঘটাচ্ছে নতুন অনুভূতির,নতুন ছন্দের অথবা নতুন গল্পের নতুন করে……

— “রোদ্দুরে মেঘের বর্ষন”…💝

.
.

“সমাপ্ত….🌸🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here