#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৫৮
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“শুভ্রতা তুমি এখানে একা কেন! নিলু কোথায়?”
আরশি নীলার রুমে এসে নীলা আর শুভ্রতাকে না পেয়ে বারান্দায় চলে আসে। শুভ্রতা বারান্দার একপাশে রেলিঙে হাত রেখে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরশির কন্ঠস্বর পেয়ে শুভ্রতা ঝট করে পেছন ফিরে তাকায়। হাল্কা হেসে নম্রতার সাথে বলল-
“নীলু আপু ওয়াশরুমে গেছে ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য।”
আরশি মুচকি হাসলো। আস্তে আস্তে করে শুভ্রতার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছোট্ট করে ‘অহহ’ বলল। সরু চোখে শুভ্রতাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুটেখুটে দেখছে। শুভ্রতা নামটা যেন আজ স্বার্থক হয়েছে। শুভ্র সাদা রঙের গাউন পরেছে শুভ্রতা। শুভ্রতার ধবধবে ফর্সা ত্বকে সাদা রঙের গাউন পরায় শুভ্রতার পরশ যেন চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে সদ্য একটুকরো শুভ্র মেঘ নেমে এসেছে।
“কিছু একটা মিসিং লাগছে।”
আরশির সন্দিহান কন্ঠে শুভ্রতার কপালে চিন্তার ভাজ পরে গেল। শুভ্রতা নিজেকে দেখতে দেখতে চিন্তিত গলায় বলল-
“কি মিসিং লাগছে আশুপি! খারাপ লাগছে আমাকে?”
“তোমার পাশে নীলকে মিসিং লাগছে।”
আরশি কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দেয়। শুভ্রতা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। ইতস্তত করে বলল-
“আশুপি এই সময় তুমি মজা করছো আমার সাথে! এমনিতেই আমার খুব নার্ভাস লাগছে।”
আরশি শুভ্রতার কাধে হাত রেখে আস্বস্ত করে বলল-
“এনগেজমেন্টই তো হবে এখানে এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই।”
“আশু আমারও খুব ভয় লাগছে রে। কেমন যেন অদ্ভুত রকমের ফিলিংস হচ্ছে মনের মধ্যে।”
নীলা বারান্দায় এসেই জড়ানো কন্ঠে আরশির উদ্দেশ্যে কথা গুলো বলল। আরশি নীলার দিকে চেয়ে একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল-
“তোরা দু’জনে এতটা ভীতু আগে জানতাম না। এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর নার্ভাস হওয়ার ও কোনো দরকার নেই। এখানে সব আমাদের ফ্যামিলির মানুষই থাকবে। আর অদ্ভুত রকমের ফিলিংস হচ্ছে কারন তোরা ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাচ্ছিস তাই।”
শুভ্রতা চিন্তিত গলায় বললো-
“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে আব্বু আমাদের বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আশুপি। তুমি আর রৌদ্র ভাইয়া আব্বুকে না বোঝালে হয়তো আব্বু কখনোই আমাদের সম্পর্কটাকে মেনে নিতো না।”
শুভ্রতা আরশিকে জড়িয়ে ধরলো। নীলা হাসি মুখে শুভ্রতা আর আরশির দিকে চেয়ে আছে। বাহির থেকে শুভ্রতার আম্মুর ডাক শুনতে পেয়ে শুভ্রতা আরশিকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত তার আম্মুর কাছে চলে যায়। আরশি আর নীলা বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নীলা কিছুটা সময় পর নিরবতা ভেঙে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল-
“আশু আমি ঠিক করছি তো বিয়েটা করে?”
আরশি নীলার দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বললো-
“অবশ্যই ঠিক করছিস নিলু। নীড় ভাইয়া খুব একজন মানুষ৷ উনি তোর ব্যাপারে সব জেনে শুনেই তোকে ভালোবেসেছে। আর তুই নিজের জীবনে এগিয়ে গেছিস এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি নিলু। অনেকেই ভুল মানুষকে ভালোবেসে আঘাত পায়। তুইও পেয়েছিস। তবে বেশিরভাগ মানুষই আঘাত পেয়ে নিজের জীবনটাকে ধ্বংস করে দেয়। যে মানুষটা কখনো তার হবেই না সেই একটা ভুল মানুষের জন্য নিজের জীবনকে অন্ধকারে ঢেলে দেয়। কিন্তু তুই খুব স্ট্রং ছিলি তাই নিজেকে সামলিয়ে নিতে পেরেছিস। নীড় ভাইয়াকে নিজের মনে জায়গা দিতে পেরেছিস। তোরা দুজন একে অপরের জন্য একদম পারফেক্ট।”
নীলা আরশিকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“তুই আমার পাশে ছিলি বলেই আমি নিজেকে সামলিয়ে নিতে পেরেছি আশু।”
আরশি হাসলো। নীলার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল-
“দেখলি তো আমি আমার কথা রেখেছি। আমি বলেছিলাম তোর জন্য আদ্রাফ হারামির থেকেও ভালো একটা রাজপুত্র খুঁজে দিব। বিয়ের পর তুই আর নীড় ভাইয়া হবি বেস্ট কাপল। এবার সবাই তোদেরকে দেখবে আর মমতাজের গান গাইবে ‘ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।”
আরশির কথায় নীলা সশব্দে হেসে দেয়। দুজনে এক সাথে তাল মিলিয়ে হাসছে। নীলা আরশিকে ছেড়ে দিয়ে হাসি থামিয়ে বলল-
“হয়েছে চল এবার। আমাকে রেডি হতে হবে।”
নীলা রুমে চলে যেতে নিলেই আরশি নীলার হাত ধরে ফেলে। নীলার দিকে একঝলক তাকালো। নীল রঙের গাউন পরেছে নীলা। এই রঙেটা নির্বানের খুব প্রিয়। হয়তো নির্বানের পছন্দেই এই গাউনটা পরেছে। নীলা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে আরশির দিকে চেয়ে আছে। আরশি ঠোঁটের কোণে হাল্কা হাসি রেখে নরম গলায় বলল-
“একটা কথা মনে রাখিস নিলু যেটা অতীত হয়ে যায় সেটা কখনোই ভালোবাসা ছিল না। হয়তো মায়া ছিল। আর না হয় খনিকের মোহ। আমরা অনেক সময় মোহ আর মায়াকেই ভালোবাসা ভেবে ভুল করে ফেলি। ভালোবাসা খুব সুন্দর একটা জিনিস নিলু। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট মানুষের প্রতি ভালোবাসা আমাদের মনে থেকে যায়। মৃত্যুর কয়েক মুহুর্ত আগেও যে মানুষটা কাছে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছে আমাদের মনে জেগে ওঠে সেই একটা মানুষই আসল ভালোবাসার মানুষ। আমি জানি তোর সেই ভালোবাসার মানুষটা আর কেউ না নীড় ভাইয়া।”
নীলা কিছু বলল না। তৃপ্তিদায়ক একটা হাসি দিয়ে আরশির হাত ধরে রুমে চলে আসে। আরশির কথা গুলোর মানে নীলা খুব ভালো করে বুঝে নিয়েছে। আর নীলাও জানে সে নির্বানকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। নির্বানকে এক মুহুর্ত না দেখলে তার মনে যে ব্যাকুলতা সৃষ্টি হয় সেটা কখনোই আদ্রাফের জন্য হয়নি। নির্বানের জন্য যে অনুভূতি গুলো নীলা অনুভব করে সেটা আগে কখনো অনুভব করেনি। হয়তো সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষের দেখা পেয়েছে তাই এমন অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে নীলা।
————————
আজ নীলা-নির্বান আর নীল-শুভ্রতার এনগেজমেন্ট। দুই ভাইবোনের এনগেজমেন্ট আর বিয়ে একসাথেই করার ইচ্ছে ছিল সবার তাই সকল অনুষ্ঠানের আয়োজন নীলদের বাসায় করা হয়েছে। শুভ্রতা আর নির্বানের ফ্যামিলিও এসেছে নীলদের বাসায়। রৌদ্র আর আরশি নিজে শুভ্রতার বাসায় যেয়ে শুভ্রতার বাবাকে নীল আর শুভ্রতার সম্পর্কের কথা বুঝিয়ে বলেছে। প্রথম প্রথম এই প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা নারাজ থাকলেও কিছুদিন বাদেই মেয়ের খুশির কথা চিন্তা করে তাদের সম্পর্কটাকে মেনে নেয়। সবাই হাসিখুশি মনেই মেনে নিয়েছে এদের সম্পর্ক। নীলদের ছাদে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ এনগেজমেন্ট হবে আর তার দুমাস পরেই বিয়ে হবে। আরশি ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখছে। নীলা আর শুভ্রতা স্টেজের সোফায় বসে অস্বস্তিতে কাচুমাচু করছে। নীল আর নির্বান অন্য পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আরশি নীলাদের দেখছে আর মনে মনে হাসছে। রৌদ্র আরশির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রৌদ্রর দৃষ্টি শুধুমাত্র তার রুদ্রাণীর মাঝেই আটকে আছে। রৌদ্র আর রুদ্রাণী আজ ম্যাচিং করে কালো রঙের ড্রেস পরেছে। রৌদ্র কালো শার্ট আর প্যান্ট পরেছে। আরশি কালো জামদানী শাড়ি পরেছে। পরেছে বললে ভুল হবে। রৌদ্র জোর করেই পরিয়েছে। পেট উঁচু হয়ে যাওয়াতে আরশি কোনো মতেই শাড়ি পরতে রাজি হয়নি। শাড়ি পরলে নাকি তাকে আরও বেশি মোটা মোটা লাগবে। কিন্তু রৌদ্রর জোরাজোরিতে অবশেষে শাড়ি পরেই আসতে বাধ্য হয়েছে।
“রুদ্রাণী তোমাকে আজ অনেক বেশি কিউট লাগছে। ইচ্ছে করছে আবারও তোমাকে নতুন করে বিয়ে করে ফেলি।”
রৌদ্র ঝুঁকে আরশির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে কথা গুলো বলল। আরশি তার বড়সড় চোখে রৌদ্রর দিকে তাকালো। রৌদ্র মুচকি হেসে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আরশি চাপা কন্ঠে বললো-
“আপনি যে দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছেন সেটা আপনি জানেন রোদ!!”
“তোমাকে ভালোবেসেই তো হয়েছি রুদ্রাণী।”
রৌদ্রর ভ্রুক্ষেপহীন জবাবে আরশি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে। এই লোকটাকে কিছু বলাই বেকার। সে নিজের মতোই যখন তখন এসব কথা বলে আরশিকে লজ্জা ফেলে দেয়।
“তুলতুলের আম্মু কেমন আছো?”
আরশি ঘাড় বাকিয়ে পাশে তাকালো। ধ্রুবকে দেখে সাথে সাথেই আরশি গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ধ্রুবর কথার কোনো প্রতিত্তোর দিলো না। দু হাত ভাজ করে অন্য দিকে চেয়ে আছে। এই কয়েক মাসে ধ্রুবর সাথে সবার সম্পর্ক যেন খুব গভীর হয়ে উঠেছে। ধ্রুবকে আরশি, নীল ওরা সবাই নিজেদের ছোট ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে, স্নেহ করে। কিন্তু গত দশদিন ধরে ধ্রুব কারও সাথেই কোনো যোগাযোগ করেনি তাই আরশি রেগে আছে। ধ্রুব চোখের ইশারায় রৌদ্রকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে! রৌদ্র ঠোঁট উলটে দু কাধ খানিকটা উঁচু করে। যার মানে সে কিছু জানে না। ধ্রুব আরশির কাছে এসে মলিন মুখে জিজ্ঞেস করল-
“আরশি আপু কি হয়েছে! তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না? রাগ করেছো কোনো কারনে?”
আরশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ধ্রুবর দিকে। অভিমানী কন্ঠে বলল-
“গত দশদিন কোথায় ছিলি? একবারও তো দেখা করতে আসলি না। আর ফোনটাও তো অফ ছিল তোর। আমার কথা তোর মনে আছে বলে তো আমার মনে হয় না।”
ধ্রুব চুপসে গেল। কি উত্তর দিবে সেটা নিয়েই চিন্তা ভাবনা করছে মনে মনে। কিছুটা সময় চুপ থেকে একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল-
“দাদু অসুস্থ ছিল তাই আম্মুকে নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলাম। কাল রাতেই ঢাকা এসেছি। আর তখনই নীল ভাইয়া ফোন করে বলল আজ না-কি তাদের এনগেজমেন্ট। তাই তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে না বলেই চলে আসলাম।”
আরশি চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করল-
“এখন সব ঠিক আছে তো!”
“হ্যাঁ ঠিক আছে। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না।”
হঠাৎই রৌদ্র ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে বলল-
“কাসফিয়া আর আদ্রাফ এসে পড়েছে আরু।”
আরশি দ্রুত ছাদের দরজার দিকে তাকালো। আদ্রাফ কাসফিয়াকে ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। কাসফিয়ার পেট এখন অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো এই ছোট্ট বেবিটা তাদের কোলে জায়গা নিয়ে নিবে। এই অবস্থায় কাসফিয়াকে আসতে সবাই না করেছিল। কিন্তু কাসফিয়ার জেদের কাছে সবাই হার মেনে নেয়। সে কিছুতেই তার বন্ধুদের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান মিস করতে চায় না। কাসফিয়া আস্তে আস্তে হেঁটে আরশির পাশে এসে দাঁড়ালো। রৌদ্র আর ধ্রুবর সাথে কুশল বিনিময় করার পর কাসফিয়া উৎসুক কন্ঠে আরশিকে জিজ্ঞেস করল-
“কিরে কি অবস্থা এদিকের? নিলু আর শুভ্রতা এভাবে চুপসে আছে কেন?”
কাসফিয়ার প্রশ্নে আরশি আর রৌদ্র হেসে দেয়। আরশি হাসতে হাসতে বলল-
“আর বলিস না ওরা দু’জন না-কি খুব নার্ভাস ফিল করছে। তুই-ই বল এনগেজমেন্টের সময় কেউ ভয় পায়? নিলু ভীতু সেটা না-হয় জানতাম এখন নিলুর সাথে সাথে আরেকটা ভীতু মেয়ে জুটেছে।”
আরশির কথায় সবাই ঝংকার তুলে হেসে ওঠে। সবাই ছাদে চলে আসার কিছুটা সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। রিং পরানো সম্পূর্ণ হওয়ার কিছুটা সময় পর অনুষ্ঠানের মাঝে হঠাৎই ধ্রুব দৌড়ে ছাদ থেকে চলে গেল। বুকের বা পাশে হাত রেখে বড় বড় করে শ্বাস ফেলতে ফেলতে নিচে চলে যাচ্ছে ধ্রুব। ধ্রুবর এভাবে চলে যাওয়া সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও রৌদ্রর চোখে তা এড়ালো না। বেশকিছু দিন থেকেই হুটহাট করে ধ্রুবর গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে রৌদ্রর মনে কিছুটা খটকা লাগছিল। ধ্রুবকে এভাবে যেতে দেখে আজ যেন কৌতূহলের পরিমান আরও বেড়ে যায়। রৌদ্র ভ্রু কুচকে ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
আরশির প্রশ্নে রৌদ্র নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে হাল্কা হেসে বলল-
“কিছু না। চলো নীলদের ওদিকটায় যাই।”
রৌদ্র আরশির হাত ধরে নীলদের দিকে এগিয়ে গেল। আরশি নীলের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল-
“তোরা জমজ তাই তোদের বিয়ের সব অনুষ্ঠানও একসাথেই করবো। সময়ও বাঁচলো আর টাকাও কম খরচ হবে। ভালো না আমার আইডিয়াটা!”
আরশির আইডিয়া শুনে সবাই এক দফা হেসে নেয়। নীল সন্দিহান কন্ঠে বলল-
“যতসব উদ্ভট আইডিয়া শুধু তোর মাথাতেই আছে। দেখিস তোর এই কিপ্টামিতে রৌদ্রর ভাই অল্প কিছুদিনের মাঝেই বড়লোক হয়ে যাবে।”
নীলের কথায় সবাই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। আজ সকলের মুখেই হাসি লেগে আছে। একে অপরের খুশিতে মেতে উঠেছে তাদের সবার মন।
দু’মাস পর..
চোখের পলকেই পাড় হয়ে গেল দু মাস। নীলদের বিয়ের দিন চলে এসেছে। আজকেও সবাই এক হয়েছে। সবার মুখেই হাসি লেগে আছে। তবে আজ খুশির পরিমাণ আগের থেকেও দ্বিগুণ বেড়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান হলেও সবাই একটা নতুন প্রানকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরেছে। সেই নতুন প্রানটা হলো কাসফিয়া আর আদ্রাফের ভালোবাসার সন্তান। নীলদের এনগেজমেন্টের কিছুদিন পরেই কাসফিয়ার কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান আসে। সাদাফ। সাদাফ দেখতে একদম আদ্রাফের মতোই দেখতে হয়েছে। ছোট বাচ্চা হলেও কান্নাকাটি একদমই কম করে। হয়তো গম্ভীর প্রকৃতির হবে ছেলেটা। কাসফিয়া বিয়ে বাড়িতে সাদাফকে নিয়ে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি। নীল আর নীলা নিজেদের বিয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সাদাফকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তবে আরশি নীল আর নীলা কাউকেই পাত্তা দিচ্ছে না। সাদাফ আসার পর থেকেই আরশি সাদাফকে কোলে নিয়ে বিছানায় পা তুলে আরাম করে বসে আছে। রৌদ্র দূর থেকে তাদের বাচ্চামো দেখছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে। বাচ্চাটাকে কাছে পেয়ে যেন সবাই ছোট বাচ্চা হয়ে গেছে।
“নীল দূরে যা তো। কাড়াকাড়ি করিস না সাদাফকে নিয়ে। তুই শেরওয়ানি পরে আছিস। এখন সাদাফকে কোলে নিলে ও ব্যথা পাবে।”
আরশি শক্ত গলায় নীলকে কথটা বলল। নীল আরশির পাশে বসে বলল-
“তাহলে আমি শেরওয়ানি খুলে ফেলি! তখন দিবি তো!”
“অবশ্যই দিবো। তবে সাদাফকে না তোর গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পর দিবো। যা সর এখান থেকে। কিছুক্ষণ পর তোদের বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে তোরা গিয়ে রেডি হ। আর নিলু তুইও যা গিয়ে তোর সাজ কমপ্লিট কর।”
আরশির ধমক শুনে নীল আর নীলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রুম থেকে চলে যাওয়ার আগে নীল আরশির দিকে চেয়ে বলল-
“তুলতুল হলে ওকে একেবারের জন্য আমরা নিয়ে আসবো। তখন তুই তুলতুলকে ভাগেও পাবি না মনে রাখিস হারামি।”
নীল ভেংচি কেটে চলে যায় রুম থেকে। ধ্রুব এসেছে আরশির কাছে। সাদাফকে কোলে নিতে চাইলে আরশি হাসি মুখেই ধ্রুবর কোলে সাদাফকে দিয়ে দেয়। ছেলেটা দিন দিন কেমন যেন রোগা হয়ে যাচ্ছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। খানিকটা শুকিয়েও গেছে। রৌদ্র অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিল তার চিকিৎসা ঠিকঠাক মতো শেষ হয়েছিল কি-না। ধ্রুব প্রতিবারই হাসি মুখে বলেছে সে একদম ঠিক আছে। আরশিও এখন হুটহাট করেই অসুস্থ হয়ে পরে। হঠাৎ করে মাথা ঘুরিয়ে পরে যায়। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও পায় না। কিন্তু রৌদ্রকে তেমন কিছু বলে না৷ এসব স্বাভাবিক মনে করেই অবহেলা করছে আরশি#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৫৯
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“শুভ্রতাকে প্রপোজ কর নীল।”
আরশির এমন নির্লিপ্ত ভঙ্গির কথা শুনে নীলসহ উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে উঠলো। স্টেজের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্রতার আর নীলের বাবা-মা হতভম্ব হয়ে আরশির দিকে চেয়ে আছে। বিয়ের আগ মূহুর্তে বিয়ে থামিয়ে দিয়ে আরশি এমন কথা বলবে সেটা কেউ আশা করেনি। রৌদ্র আরশির হাত ধরে চোখের ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আরশি রৌদ্রর চাহনিকে পাত্তা দিলো না। আরশি এবার কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল-
“নীল জলদি শুভ্রতা প্রপোজ কর না হলে বিয়ে থেমেই থাকবে।”
নীল শুভ্রতার পাশ থেকে আরশির কাছে আসলো। আরশির হাতের কব্জির দিকটা ধরে কিছুটা দূরে নিয়ে চাপা কন্ঠে বলল-
“আশু কি শুরু করেছিস এসব? এটা মজা করার সময় না। বড়রা সবাই এখানে আছে। তারা কি ভাব্বে ভেবেছিস!”
আরশি আগের মতো নির্লিপ্ত জবাব দিল-
“ওনাদেরকে আমি ম্যানেজ করে নিবো। তুই শুভ্রতাকে প্রপোজ কর যা।”
“কিন্তু আশু…”
নীলের কথার মাঝেই আরশি কড়া গলায় বললে উঠলো-
“কোনো কিন্তু না। তুই শুভ্রতাকে কথা দিয়েছিলি তুই ওকে বিয়ের সময় প্রপোজ করবি। প্রেম চলাকালীন সময়ে প্রপোজ করিসনি ঠিক আছে কিন্তু এখন নিজের কথাটা রাখ।”
আরশি কথা গুলো বলেই চলে গেল। শুভ্রতার বাবা-মার দিকে তাকিয়ে ভদ্রতার সাথে বলল-
“সরি আংকেল এভাবে বিয়ের মাঝে বাধা দেওয়ার জন্য। আসলে নীল শুভ্রতাকে আজ পর্যন্ত একবারও প্রপোজ করেনি। বলেছিল বিয়ের সময় করবে। শুভ্রতা নীলের সেই কথা মেনেই এতদিন ধরে অপেক্ষা করছে। নিজের মনে মধ্যে আশা পুষিয়ে রেখেছে। নীল আপনাদের ভয়ে এখন প্রপোজ করতে চাইছে না। আপনারা নিশ্চয়ই শুভ্রতার খুশির জন্য নীলকে অনুমতি দিবেন এখন প্রপোজ করতে!”
সবার মাঝে পিনপতন নীরবতা। একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে শুভ্রতা আর নীলের বাবা-মা। আরশি উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সোফার কাছেই শুভ্রতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর নীল আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে৷ কিছুটা সময় পর নীরবতা ভেঙে শুভ্রতার বাবা সহজ গলায় বললেন-
“নিজের বউকে প্রপোজ করবে এখানে এতো দ্বিধাবোধ কিসের!”
শুভ্রতা বিস্ফোরিত চোখে তার বাবার দিকে তাকালো। তার বাবার মুখে এমন কথা যেন অবিশ্বাস্য কিছু মনে হচ্ছে। শুভ্রতার বাবার কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু নীল বেচারা লজ্জায় আর অস্বস্তিতে কাচুমাচু করছে। সকলের জোরাজোরিতে নীল শুভ্রতার সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে টকটকে লাল গোলাপ। লজ্জায় নীলের গাল গুলো লাল হয়ে যাচ্ছে। ছেলে মানুষ এতটা লজ্জা পায় সেটা নীলকে না দেখলে হয়তো কারও বিশ্বাস হতো না। নীলের মতো চঞ্চল ছেলেটা ভালোবাসার মানুষের কাছে এসেই ভিন্ন রূপ ধারন করে ফেলে। শুভ্রতাকে কখনো সামনাসামনি ভালোবাসার কথা বলা হয় তাই হয়তো এতো অস্বস্তি বোধ করছে। আর পরিবারের সকলের সামনে শুভ্রতাকে প্রপোজ করায় লজ্জার মাত্রা যেন আকাশ ছুঁই ছুঁই। নীল হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপ ফুলটা শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিল। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করেই বলা শুরু করলো-
“আমি তোমাকে ভালোবাসি শুভ্রতা। প্রেমিকা হিসেবে নয় বউ হিসেবেই প্রপোজ করছি তোমাকে। সবার সামনে প্রমিজ করছি সারাজীবন তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো। কখনো কষ্ট পেতে দিবো না। একজন আদর্শ স্বামী হয়ে দেখাবো।”
নীল একনাগাড়েই কথা গুলো বলে দিল। কথা গুলো শেষ হতেই নীল বড় করে একটা শ্বাস নিল। গলার কাছেই যেন দম আটকে গিয়েছিল তার। উপস্থিত সকলে হাততালি দিলো। আরশি, কাসফিয়া আর নীলা পেছন থেকে শুভ্রতাকে গোলাপ নিতে বলছে। শুভ্রতা নীলের দিকে কিছুক্ষণ অপলকভাবে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে গোলাপটা নিয়ে নিলো। নীল দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শুভ্রতার কাছ থেকে কোনো উত্তর আশা না করেই রৌদ্রর পেছনে গিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। সকলের হাততালির শব্দে নীলের লজ্জার পরিমাণ দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরশি আর শুভ্রতাকে জোর করলো না উত্তর দেওয়ার জন্য। শুভ্রতার হাসিমুখেই তার উত্তর পেয়ে গেছে সবাই। আরশি ঘাড় বাকিয়ে নীলার দিকে তাকালো। মুখে রহস্যময় এক হাসির রেখা টেনে বলল-
“এবার তোর পালা নিলু।”
আরশির কথায় নীলা হকচকিয়ে উঠে। আমতা-আমতা করে বলল-
“আমার পালা মানে!! কি বলতে চাচ্ছিস তুই?”
আরশি শান্ত গলায় বললো-
“নীড় ভাইয়া সব সময় তোকে ভালোবাসার কথা বলে গেছে। অথচ তুই কখনো তার কথায় উত্তর দিসনি। তাই আজ তুই নিজে ওনাকে ভালোবাসার কথা বলবি।”
আরশির কথায় নীল রৌদ্রর আড়াল থেকে সামনে আসলো। লজ্জার রেশ কেটে স্বাভাবিক হয়ে গেছে নীল। নীলার দিকে চেয়ে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল-
“কি হলো নিলু বাবু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন!! আমার সময় তো খুব লাফাইছিলা। এখন আমি লাফামু তোমার লজ্জা দেইখা। যা ফকিন্নি তাড়াতাড়ি প্রপোজ কর। আমাদের এতো সময় নেই তোর নেকামো দেখার জন্য।”
নীলা তীক্ষ্ণতার সাথে নীলের দিকে তাকালো। কটমট করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আহত দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকালো। আরশি নীলার দৃষ্টি উপেক্ষা করলো। নির্বানের মা তাড়া দিয়ে বলল-
“নীলা মা যা করার তাড়াতাড়ি করো। দেড়ি হচ্ছে তো। এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই আমরা আমরাই তো।”
নীলা এক রাশ লজ্জা নিয়ে নির্বানের দিকে এগিয়ে গেল। এক সমুদ্র পরিমাণ অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্বানের সামনে। নির্বান নির্বাকের মতো ড্যাবড্যাব করে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। নীলা কিছুটা উঁচু হয়ে নির্বানের কানে কানে মৃদুস্বরে বলল-
“আমি আপনাকে ভালোবাসি নীড়।”
নীলা লজ্জায় মাথা নুয়ে ফেললো। নির্বান মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়ে গেছে। নীলার মুখে কখনো ভালোবাসি শব্দটা শুনবে এটা তার কল্পনার বাহিরে ছিল।
“এটা কিন্তু চিটিং হলো। কানে কানে কি বললো কিছুই তো শুনলাম না।”
নীল উৎকন্ঠিত হয়ে বলল। নির্বানের হুশ আসলো। জোড়ালো শ্বাস নিয়ে দূর্বল কন্ঠে বললো-
“আমি শুনেছি এটাই অনেক।”
নির্বান তপ্ত শ্বাস ফেলে। নীলার দিকে এক নজর তাকালো। নীল রঙের বেনারসি শাড়িতে একদম নীল পরি লাগছে নীলাকে। এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নীলা। নির্বান নীলার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল-
“আজ আমি ধন্য হয়েছি নীলাদ্রি। তোমার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে আমার ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেল।”
নির্বান সোজা হয়ে দাঁড়ায়। মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। নীল রঙের পাঞ্জাবির হাতাটা ঠিক করে সোফায় গিয়ে বসলো। সকলের মুখে তৃপ্তিদায়ক হাসি। চারদিকে ভালোবাসার ছড়াছড়ি। প্রতিটা মানুষের ভালোবাসা যেন আজ পূর্ণতা পেয়েছে। বন্ধুত্বটাও দৃঢ় হয়েছে।
—————————
রাত প্রায় দশটা। বিয়ের অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই সম্পূর্ণ হয়েছে। সবাই আজ নীলদের বাসাতেই থাকবে। নীলাকেও বিদায় দেওয়া হয়নি। দুই বিয়ে একসাথে হওয়ায় সব কিছু যেন অন্য সব সাধারণ বিয়ের থেকে ভিন্ন ধরনের হয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষন ধরে আরশি দোতালার রুমে যাওয়ার পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে নীল আর নির্বান। আরশির পেছনে আছে ধ্রুব, আদ্রাফ আর রৌদ্র। রৌদ্র নিজের ইচ্ছেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। আরশির হুমকি শুনেই বাধ্য ছেলের মতো রুমে যাওয়ার পথ আটকে রেখেছে। কাসফিয়া সাদাফকে কোলে নিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে নীল আর নির্বানের অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে৷ নীল আর নির্বান অসহায় মুখে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে। আরশির কাছে আকুতি মিনতি করছে যেন পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। আরশি কোমড়ে দু হাত রেখে কঠিন গলায় বলল-
“আগে টাকা বের কর তারপর রুমে যেতে পারবি এর আগে না।”
নীল দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পরেছে। আরশির দিকে চেয়ে অসহায় মুখে বলল-
“আশু টাকা তো দিয়েছি আমরা। তোদের সবাইকেই ভাগ ভাগ করে দিয়েছি। এখন আবার কিসের টাকা চাচ্ছিস!”
“হ্যাঁ ক্রাশ ভাবি এটা তো ঠিক না। আমরা তো টাকা দিয়েছি তবুও কেন আমাদের যেতে দিচ্ছো না!”
নির্বানের কথায় আরশি মুখ বাকিয়ে বলল-
“আরও দুজনের টাকা পাওনা বাকি আছে।”
“কিইইইই?”
নীল আর নির্বান প্রচন্ড অবাক হয়ে একসাথেই চেচিয়ে উঠলো। আরশি কপাল কুচকে বিরক্তির রেশ টেনে বলল-
“জ্বি। তুলতুল আর সাদাফের ভাগ তো এখনো পাইনি।”
নীল সরু চোখে আরশির দিকে তাকালো। সন্দিহান কন্ঠে বললো-
“সাদাফ তো নবজাতক বাচ্চা ওর আবার কিসের ভাগ?”
“সাদাফের কথা না হয় মানলাম কিন্তু তুলতুলের কথা বলে যে তোমরা টাকা হাতিয়ে নিতে চাচ্ছো এটা কিভাবে মেনে নিবো ক্রাশ ভাবি?”
নির্বান বিস্মিত হয়ে কথা গুলো বলল। ধ্রুব নিজের চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল-
“এতসব কৈফিয়ত আমরা দিতে পারবো না। টাকা দাও রুমে যাও ব্যাস।”
“শালা এখন কেমন লাগে?? আমার বিয়ের সময় তো আমাকে ফকির বানিয়ে তারপর ছেড়েছিস। এখন বুঝো ঠেলা কাকে বলে? কত প্রকার? আর কি কি?”
আদ্রাফের কথায় আরশি সহ সবাই হেসে দেয়। সবার হাসি দেখে নির্বান ক্ষিপ্ত হয়ে রৌদ্রকে বলল-
“ভাই তুমি কিছু বলছো না কেন? তোমার তো ছেলে পক্ষে থাকার কথা। তুমি কেন ওদের সাথে মিলে রাস্তা আটকে রেখেছো?”
রৌদ্র ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে বলল-
“তোদের দু’জনকে রুমে যেতে সাহায্য করলে আজ আমার রুমে জায়গা হবে না। আর আমি আমার ভালোবাসার বউকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি বাধ্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। তাছাড়া আমার বিয়েতে তোরা আমার থেকেও টাকা নিয়েছিলি। আটকে রেখেছিলি প্রায় আধঘন্টা। এখন এটাই তোদের শাস্তি।”
রৌদ্র কথায় সবাই হেসে উঠলো। বাধ্য হয়ে নির্বান আর নীল নিজেদের সকল টাকা আরশির হাতে তুলে দেয়। নীল আর নির্বান শেষমেষ ছাড়া পায় রুমে যাওয়ার জন্য। দু’জনে ক্লান্ত হয়ে ঢুলতে ঢুলতে রুমে চলে যায়।
————————
“আরু দি কি হয়েছে তোমার? আরু দি…”
সকালে ধ্রুব আরশি আর রৌদ্রকে নাস্তার জন্য ডেকে আনতে গিয়েছিল। খাবার টেবিলে আসার সময় হঠাৎই আরশির মাথা ঘুরে পরে যায়। ধ্রুব আরশির পাশে থাকায় সে দ্রুত আরশিকে ধরে ফেলে। ধ্রুবর চেচিয়ে বলা উত্তেজিত কন্ঠস্বর শুনে রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ফোনের স্ক্রিন থেকে নজর সরিয়ে আরশির দিকে তাকালো। আরশি জ্ঞান হারিয়েছে। ধ্রুব আরশিকে ধরে রেখে হাল্কা ঝাঁকিয়ে উত্তেজিত হয়ে ডেকে যাচ্ছে অনবরত। আরশির অবস্থা দেখে রৌদ্রর বুকে মোচড় দিয়ে উঠেছে। দৌড়ে সিড়ি থেকে নেমেই আরশিকে জাপ্টে ধরে ফেলে। কোলে তুলে নিয়ে সোফায় বসে পরে। আরশিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে আরশির গালে হাল্কা থাপ্পড় মেরে ডাকতে লাগলো। রৌদ্র আর ধ্রুবর অস্থির কন্ঠে ডাইনিং টেবিলের সবাই আরশির কাছে আসে। সকলের চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। নীল সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি করেই গাড়ি বের করে। রৌদ্র আরশিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে চলে যায়। ধ্রুব আর নীল সামনের সিটে বসে আছে। রৌদ্র পেছনের সিটে বসে অস্থির হয়ে আরশিকে ডাকছে। হাত ঘষছে। ব্যকুল হয়ে পরেছে আরশির জ্ঞান ফেরানোর জন্য। রৌদ্রর মনে ভয় ঝেঁকে বসেছে। চোখমুখ ফ্যাকাসে বর্ণের হয়ে পরেছে। বুকে অসহ্য ব্যথা অনুভব করছে রৌদ্র। আরশিকে এই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এখনই হয়তো দম আটকে মারা যাবে রৌদ্র।
চলবে…
[