“আল্লাহ!!!!”
কারো গলার শব্দে সাদ তড়িঘড়ি করে প্যান্টের চেইন লাগিয়ে প্রভার সামনে এসে ওর মুখ চেপে ধরে বলল”এই,চুপ চুপ।শব্দ করবেন না প্লিজ।কেউ দেখতে পেলে আমার মান সম্মান সবশেষ।”
প্রভা গোঙাচ্ছে মুখ চেপে ধরায়।সাদ বুঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ হাত সরিয়ে ফেললো।প্রভা ছাড়া পেয়ে আবার চেচিয়ে বলতে লাগলো”হাউ ডে…..”
আর কিছু বলতে পারলো না আবার সাদ প্রভাতীর মুখ চেপে ধরে বলল”বললাম না চুপ থাকতে!এতো চিল্লাচিল্লি করছো কেন?”
প্রভা আবার গোঙানো শুরু করেছে।সাদ প্রভার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল”যদি এবার আবার চিল্লাও তাহলে তোমার খবর আছে।”
প্রভা হাত দিয়ে ইশারা করলে ছাড়তে সে আর চিল্লাবে না।সাদ ছাড়তেই প্রভা কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল”আপনি লেডিস চেঞ্জিং রুমে কি করছেন?”
“এটা লেডিস না জেন্টস চেঞ্জরুম।বাইরে কি ভালো করে দেখেন নি?”
“আমি ঠিকই দেখেছি।আপনি দেখেন নি।”
“আমি আপনার মতো আধপাগলী না যে না দেখেই ঢুকে পড়বো।”
“আচ্ছা আমি নাহয় আধ পাগলী না দেখেই ঢুকে পড়েছি। কিন্তু আপনি?আপনি রুম লক করেন নি কেনো?”
“এই রুমের লকটা নষ্ট।লক হয় না।আপনার তো উচিত ছিলো দরজায় নক করা।”
“হ্যাঁ,আমি তো আপনার বাসায় দাওয়াত খেতে এসেছি যে নক করে ঢুকতে হবে।যত্তসব!”
“আপনি যত্তসব!”
এটা বলেই সাদ খালি গায়েই শার্ট টা কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লো।প্রভা মুখটা দু’ইন্চ্ঞি হা করে বিড়বিড় করে বলল”কি বেশরম!শার্ট না গায়ে দিয়েই বেরিয়ে পড়লো।”
প্রভাও বেরিয়ে গেলো।কারণ এখানে থাকা মানে বিপদ!আবার কেউ এসে গেলে সর্বনাশ!!!!
.
.
“কি রে তুই না চেঞ্জ করতে গেছিলি।করিস নি?”আদিব বলল।
“না,করতে পারি নাই।”
“কেনো?”
“আরে আর বলিস না।চেঞ্জিং রুমে লক নষ্ট!হুট করে একটা ধানি লঙ্কা ঢুকে চিল্লাচিল্লি লাগায় দিছিলো।আরেকটু হলেই মানসম্মান সব যাইতো।”
“ভাই কিছু দেইখ্যা ফালায় নাই তো?”
“আরে না নিচে সেফটি ছিলো।”
“ওহ!আল্লাহ বাচাইছে।নাইলে মামা তোমার ইজ্জত আজকে পুরা তেজপাতা!”
“এখন চুপ কর।তোর কিছু নেওয়ার থাকলে নে।আর নাহলে বাসায় চল।আম্মু ফোন দিচ্ছে বারবার!”
“আরে এখনি চলে যাবো?এতদিন পর দেশে ফিরলি।আজকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা ঘোরাঘুরি হবে।আজকে বাসায় তোকে যেতেই দিবো না।”
“আরে ভাই আম্মু বারবার বলছে আসতে।পায়েস রান্না করছে।চল খেয়ে আসি।তারপর আড্ডা দেওয়া যাবে।তামিম,সুমন ওদের বলে রাখ।”
“আচ্ছা চল।”
সাদ বাবা মায়ের ছোটো ছেলে।বড় একবোন আছে আর ভাই আছে।বোনের বিয়ে হলেও ভাইয়ের বিয়ে এখোনো হয় নি।ভাইয়ের বিয়ের তোড়জোড় চলছে।জায়গায় জায়গায় মেয়ে দেখা হচ্ছে কিন্তু কোনো মেয়েই পছন্দ হচ্ছে না।আর সাদ কালকে কানাডা থেকে পড়াশোনা শেষ করে ফিরেছে।ফেরার ইচ্ছে ছিলো না।কিন্তু বাবা মায়ের জোরাজুরিতে ফিরতে হলো!আর আদিব,সুমন,তামিম এরা কলেজ লাইফ থেকেই বন্ধু।ব্যাস্ততার কারণে দেখা না হলেও যোগাযোগ হয়।অনেকদিন পর সাদ দেশে ফেরায় আজকে রাতে পার্টির প্ল্যান হয়েছে।চার বন্ধু মিলে আদিবের বাসায় পার্টি করবে।
সাদ আর আদিব শপিংমল থেকে বাইরে বেরিয়ে রিকশা খুঁজতে লাগলো।কিন্তু একটাও পাচ্ছে না।দূরে একটা রিকশা পেয়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে যেই না উঠতে যাবে তার আগেই দু’টো মেয়ে ঝপাং করে রিকশায় বসে পড়লো।সাদ রেগে বলল”হোয়াট দ্য হেল!”এটা বলে মেয়ে দুটোর মুখের দিকে তাকাতেই একজনকে চিনতে পারলো।এই মেয়েটাই তো একটু আগে তার ইজ্জত ডুবাতে বসেছিলো।সাদ এবার আরো রেগে গিয়ে বলল”এখানেও লঙ্কাবতী!ওফ শীট!
সাদের লঙ্কাবতী শব্দটা প্রভার কানে যেতেই প্রভা চিল্লিয়ে বলে উঠলো”এই কাকে আপনি লঙ্কাবতী বললেন?”
“হ্যা আপনাকেই বলেছিলাম।এতো জোরে কথা বলছেন কেনো?
” কেনো এখন জোরে কথা বলবো না কেনো?এটা তো চেঞ্জিংরুম না…..”
এতটুকু বলতেই প্রভা দুইহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।আর সাদ আগুন চোখে চেয়ে রইলো প্রভার দিকে।একটা কথাও মেয়েটার পেটে থাকে না।বজ্জাত মেয়ে!সাদ কটমট করতে করতে বলল”আরো কিছু বাকি আছে বলার?”
প্রভা সাদের কথার উত্তর না দিয়ে রিকশাওয়ালাকে ইশারা করলো রিকশা চালানোর জন্য।রিকশাওয়ালা রিকশা চালানো শুরু করে দিলো।পেছন থেকে সাদ চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো”এই লঙ্কাবতী!শোনো!নামটা তো বলে যাও।”
রিকশা কিছুদূর চলে যাওয়ায় সাদের গলার আওয়াজ আর স্পষ্ট শোনা গেলো না।
.
.
প্রভাদের রিকশা কিছুদূর যেতেই আদিব বলল”মামা মাইয়াটারে পছন্দ হইছে নাকি?”
“আরে না।কিন্তু মেয়েটার চোখটা দেখছিস?”
“না খেয়াল করি নাই।কেন?ওর চোখ কি ট্যারা?”
সাদ বিরক্তিস্বরে বলল”আমার বাল! আরে মেয়েটার চোখের মণি টা ধূসর রঙের।অনেক ইউনিক!”
“ও,,,আচ্ছা।আমি দেখি নাই।কিন্তু পাশের মেয়েটার ঠোঁট টা দেখছি।হেব্বি জোস!”
“ধূর,শালা লুইচ্চা।চুপ থাক!”
আদিব হাসতে হাসতে বলল”আচ্ছা দোস্ত এই মেয়েটার সাথে যদি তোর আবার দেখা হয় তাহলে কি করবি?”
“দেখা হবে না।”
“হবে।দেখিস!”
“যদি না হয় তাহলে?”
আদিব একটু ভেবে বলল”আচ্ছা বাজি ধর।যদি তুই হেরে যাস তাহলে তুই তোর মাথা টাকলা করে ফেলবি।আর আমি হারলে আমি টাকলা হবো।তবে শর্ত হলো পাঁচ দিনের মধ্যে হতে হবে।
সাদ আদিবের হাতে হাত রেখে বলল”ডান!দেখা যাক ‘কন বানেগা টাকলা’
.
.
.
সাদিয়া প্রভার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ওর কান্ড দেখে।তারপর বলল”কি রে!এমন করলি কেন?কে ওই লোকটা?”
প্রভা সবটা খুলে বলতেই সাদিয়া বলল”যাক,,ছেলেটা অসভ্য না।”
প্রভা কিছুটা ভাব নিয়ে বলল”আমার সাথে অসভ্যতা করে জীবনেও পার পাবে না।”
“জানি জানি।তোর যেই বাঁশ মার্কা গলা।শুনলে এমনেই বয়রা হয়ে যাবে ছেলেরা অসভ্যতা তো দূরে থাক।”
সাদিয়ার কথা শুনে প্রভা বলল”তুই কি অপমান করলি আমার নাকি তারিফ?”
“দুটোই।”
তারপর সাদিয়া আর প্রভা দুজনেই হাবিজাবি বকতে বকতে যে যার বাসায় চলে গেলো।
.
.
ঘড়িতে রাত নয়টা বাজে।প্রভা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে সাজুগুজু করছে।একটু আগে চুরি করে মায়ের রুম থেকে মায়ের নীল রঙের একটা কাতান শাড়ি চুরি করে নিয়ে এলো।এখন দরজা বন্ধ করে শাড়িটা পড়ে সাজতে বসলো।মাঝেমাঝেই প্রভা এমন করে।এমনিতেই সাজুগুজু করে বসে থাকে।তাও দরজা বন্ধ করে।ওর এই সাজগোজের কথা কেউ জানে না।এক দুইঘন্টা এভাবে সেজেগুজে নিজের ঘরে ঘুরঘুর করে আবার সাজগোজ ধূয়ে ফেলে আর মায়ের শাড়ীটা তার ঘরে রেখে আসে।তবে মাঝেমধ্যেই বিপাকে পড়তে হয়।কারণ সাজগোজ করার পর কেউ এসে ওর দরজা নক করলে বেচারিকে তড়িঘড়ি করে সব ঠিক করতে হয়।
তেমনই আজ সেজেগুজে প্রভা নিজের ঘরেই হাটাহাটি করছে।হঠাৎ করে ফোন কল আসায় দেখলো সাদিয়া ফোন দিয়েছে।প্রভা ফোন রিসিভ করতেই সাদিয়া বলল”কি রে কালকে কলেজে যাবি?”
“হ্যা,যাবো তো।তুই যাবি না?”
“না, নানু আসবে বাসায় তাই।”
“ওও,,,আচ্ছা।এখন রাখি আমি ব্যস্ত আছি।”
এটা বলে খট করে ফোনটা কেটে দিলো প্রভা কারণ এখন ও হাটবে।আর আয়নায় নিজেকে দেখবে।
এভাবে ফোন কেটে দেওয়ায় সাদিয়া বিচলিত হলো না কারণ ও এর আগেও এমন করতো।পরে কিছু জিগ্যেস করলে এড়িয়ে যেতো!!
চলবে…?
#লঙ্কাবতী
#পর্বঃ০১
#Arshi_Ayat
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আর কেমন হয়েছে জানাবেন।আপনাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে আমি গল্প দিবো।)