ওড়নাটা ঠিক করে পর, পড়ে যাচ্ছে। নিজের গায়ের ওড়নাটাও সামলে রাখতে পারিস না,বলদ?
কথাটা হঠাৎ কানে আসতেই লতা হুড়মুড়িয়ে পড়লো ওড়না ঠিক করা নিয়ে। সত্যিই তো! ওড়নাটা ঠিকভাবে ঠিক জায়গায় নেই!
প্রান্তিক ভাই না বললে হয়তো অনেক আফসোস করতে হতো আজ। একটা দাওয়াতে এসেছিলো তারা। প্রান্তিক ভাইয়া আমার ফুফাতো ভাই। এখন কুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। আমি লতা, সবে মাত্র অনার্সে উঠলাম।
প্রান্তিক ভাই আমায় ক্লাস এইটেই জানিয়েছিলো উনি আমায় পছন্দ করে। কিন্তু আমি উনার সাথে কম্পোর্টেবল না, এটা উনাকে বুঝতে দেইনা। মানে উনার পাশে আমি নিজেকে কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা। কারন উনার মেজাজ, উনার চাল-চলন ও বেশভূষা খুবই মার্জিত। আমার বড় ফুফুর একমাত্র আদরের দুলাল এই ভাইয়া। উনাকে কোনোদিনই আমি অন্য চোখে দেখিনি কিন্তু উনি যে আমায় পছন্দ করে তা আমার একেবারেই মনে হয়না। এখন আর করেনা বলেই আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিউর।
কারন তুই তুকারি করে শুধু। যেকোনো কথায় ও কাজে শুধু বকে। এত রাগী লোক যে দেখলেই ভয় লাগে। আমার আবার এত বকাবকি ভাল্লাগেনা। যে আমাকে বকে সেই আমার জন্য খারাপ। যেমন আমার আব্বা। উনি বেজায় রাগী মানুষ, তবে ভালো মানুষ। খুব আদর করে আমায় কিন্তু অল্প কিছুতেই খুব বকাবকি শুরু করে দেয় এজন্যই ভালো লাগেনা। তবে আব্বা আমার কাছে মোটেও খারাপ কেউ নয়। খারাপ লোক তো উনি, প্রান্তিক ভাই।
প্রান্তিক ভাই ঐ কথাটা বলেই হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে। আর ফিরেই তাকালো না। মনে হলো যেন উনার ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে তাই সেই ট্রেন ধরতেই যাচ্ছে এমনভাবে। ভাই দেখতে খুব সুন্দর, স্মার্ট। আর আমি! আমিতো তার ধারে কাছে ও যাইনা।
কিন্তু তবুও কেন যে..
অবশ্য এখন আর উনি আমাকে পছন্দ করেনা বলেই আমার মনে হয়।
কারন সেই ক্লাস এইটে থাকাকালীন কথাটা বলেছিলো,
আবেগের বয়স ছিলো; তাই হয়তো..
•°•
আমার বোন লিমা খুব সুন্দরী। ওর জন্য আমার খুব হিংসা হয়। বড় বোন দেখে বলতেও পারিনা কিছু। এবার সে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বেরিয়েছে। বাবা বিয়ের জন্য দেখছে কিন্তু
এক কথায় “না” করে দিয়েছে সে।
ও নাকি এখন বিয়ে করবেনা। এই ঝগড়ুটে বোন আর কারো কপালে না জুটুক এটাই মনে মনে কামনা করি। ওহ্! সারাক্ষন শুধু আমার পিছনে লেগে থাকে।
চুন থেকে পান খসলেই ক্যাঁচক্যাঁচ করে কথা বলে। বিশ্বাস করুন ঐ ক্যাঁচক্যাঁচানিটা এত তীক্ষ্ণ হয়ে যে কানের পর্দা ছেদ করে সেই ধ্বনি আমার মাথার ভেতরে চলে যায় আর সেখানে পৌঁছে আবার প্রতিধ্বনি করে! ফলফ্রসূ কি হয়?
তুমুল মাথাব্যাথা শুরু হয়।
এইজন্য ওকে আমি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি।
এটাকে মাথার উপর থেকে সরানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে একে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। কিন্তু…
•°•
প্রান্তিক ভাই বয়সে আমার অনেক বড় হয়। প্রায় ৬/৭বছরের মত। আমি উনাকে দুলাভাই হিসেবেই দেখি। আমি চাই লিমা আপুকে তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ঝাড়া হাত পা হতে।
কিন্তু প্রান্তিক ভাই কেমন যেন একটা।
উনি আপুকে তেমন একটা পছন্দই করেনা।
আপুর রুমে আমার এতদিন শুতে হতো।
এখন কি জানি কি হয়েছে আমাকে আর এলাউ করা হয় না সে রুমে। হয়তো এখন কোনো গোপণীয়তা আছে..
আমারই কেবল গোপণীয়তা জিনিসটা আসেনা! হাহ হা!
____________
” গাড়িতে করে যাবি নাকি বাইকে? ”
কথাটা পিছন থেকে প্রান্তিক ভাই বলে উঠলো আমি তখন লিমা আপুর সাথে যাচ্ছিলাম শপিং করতে। আমার জন্য না, আপুই কিনবে। আসলে সত্যি বলতে কি, ওর সাথে গিয়ে কেনাকাটা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। নিজের জন্য ঠিকি ভালোটা পছন্দ করবে আর আমার বেলাতেই ওর এলার্জি চাপে।
লিমা আপু প্রান্তিক ভাইয়ের কথা শুনেই আমাকে ডিঙিয়ে উঠে পড়লো বাইকে। তারপর আমাকে বললো,
– এই লতা! যা তুই ঐ ট্যাক্সিতে করে আয়। বলিস, মৌচাকের মোড়ে নামাতে।
এই বলে আপু বাইকে উঠে প্রান্তিক ভাইকে বললো,
– চলেন। আপনি আর আমিই যাই।
প্রান্তিক ভাই জিজ্ঞেস করলো লিমা আপুকে,
– তোমাকে বলছি? তোমাকে আমি তুই করে বলিনা কারণ পিঠাপিঠি বয়স। আমি লতাকে মিন করে বলেছিলাম। উদ্ভট। নিজে সাথে করে নিয়ে এসে নিজের পিচ্চি বোনকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে নিজেই চলে যাচ্ছে আগে!
লিমা আপু হা করে তাকিয়ে আছে..
প্রান্তিক ভাই আমাকে ট্যাক্সিতে উঠে বসার জন্য ইশারা দিলো। আমি উঠে পড়তেই উনিও বসে পড়লো পাশে। তারপর বাইরে কাউকে ইশারা দিতেই ভাইয়ার ক্লাসমেট মঞ্জু এসে পড়লো। মঞ্জু ভাই ডাক্তারি পড়ে। উনি লিমা আপুকে মোটামোটি পছন্দ করে বলে আমার মনে হয়।
প্রান্তিক ভাই মঞ্জু ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– তুই ওকে নিয়ে যাস। আমি লতার সাথেই যাচ্ছি।
প্রান্তিক ভাইয়া আমার পাশেই বসে আছে।
জানিনা কেন এত ভাল্লাগতেছে।
ভাইয়া রাগী স্বর নিয়েই বললো,
– তোর পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে?
আমি বললাম,
– এইতো ভালোই।
ভাইয়ার সাথে দেখা হলেই এই বিশ্ববিখ্যাত কথাটা বলে দেয়, ” তোর পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে? ”
কেন ভাই আপনার মনে কি আর কোনো প্রশ্ন থাকেনা? নাকি এই লাইনটাই শুধু সেইভ করা আছে আমার জন্য?
মিনমিনিয়ে বলছে লতা।
চলবে.
লতাকরঞ্চ পর্ব ১