লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
* পর্ব ৭
সামিরা আক্তার
** চৈতী ডাক শুনে চৈতালী বুঝলো রাফসান আগেও ওকে ডেকেছে। কারণ রাফসান ছাড়া আর কেউ ওকে চৈতী বলে না। সবাই পুরো নাম ধরে ডাকে।
– কথা কানে যায় না? কতক্ষণ ধরে ডাকছি? দাঁতে দাঁত চেপে বলল রাফসান।
চৈতালী একটু থতমত খেলো। পরহ্মণেই বলে উঠলো – বড়মা এখানে নেই। বোধহয় তোমার শ্বশুর বাড়ি গেছে।
– শ্বশুর বাড়ি মানে??
– শ্বশুর বাড়ি মানে শ্বশুর বাড়ি। আমাদের বাসায় আরকি।
চৈতালীর সব মনে আছে দেখে রাফসান হতাশ হলো। পরহ্মণেই নিজেকে বকলো যে মনে না থাকার কি হলো?? এটা তো সিনেমা নয়। চৈতী ও মাথায় বাড়ি খায় নি। তাহলে ভোলার কোন প্রশ্নই আসে না।
নিজের ভাবনা দেখে নিজেই অবাক হলো সে। ওর কি মাথায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে?? হতেই পারে, যা ঘটে চলেছে একের পর এক। দুহাতে কপাল চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করলো সে। তারপর চৈতালী কে বললো- যা মাকে ডেকে আন। বলবি আমার যেতে হবে।
বলেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো সে। রাফসান যেতেই তাকে ভেংচি দিলো চৈতালী। তারপর নিজেদের বাসার দিকে গেলো।
আয়শা বেগম চৈতালীর মায়ের সাথে কথা বলছিল। চৈতালী ঢুকে ডানে বায়ে না তাকিয়ে বলল- বড়মা রাফসান ভাই তোমাকে ডাকে।
বলেই আবার বেরিয়ে গেলো সে। মেয়ের এইরকম আচরণে এবার কেঁদেই উঠলেন রেবেকা। মেয়েটা তার এত অভিমান করেছে। কেন স্বামীর বিপক্ষে গেলেন না তিনি? তাহলে অন্তত মেয়েটা ভালো থাকতো।
আয়শা বেগম চৈতালীর আচরণে রেবেকার সামনে অসহায় বোধ করলেন। কি বলে রেবেকাকে শান্তণা দিবে বুঝে উঠলেন না। তাই নিঃশব্দে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।
রাফসান তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আয়শা বেগম ঘরে ঢুকতেই বললো – মা আমি চলে যাচ্ছি। বাবার সাথে ফোনে কথা বলে নিবো।
আয়শা ছেলেকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই রাফসান বলে উঠলো – একদম ড্রামা করে কিছু বলবে না মা। কাল দুজন মিলে অনেক ড্রামা করেছ।
আয়শা বেগম ছেলেকে আর কিছু বললেন না। রাফসান বেরিয়ে গেলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এখন ওনার মনে হচ্ছে ওনারা চৈতালীর জীবনটা নষ্ট করেছেন। এভাবে দুরে থাকলে ওদের সম্পর্ক এগুবে কিভাবে তিনি বুঝলেন না।
চৈতালী যখন শুনলো রাফসান চলে গেছে তখন কাজের মেয়ে ময়ূরী কে দিয়ে ওপর থেকে নিজের সব জিনিস এনে রাফসানের রুমে শিপট হয়ে গেলো। আগে থেকেই এই রুমটা তার পছন্দ। কারণ খুব সুন্দর আর বড় একটা বেলকনি আছে। বেলকনিতে দোলনা আছে। তবে খুব বেশি এই রুমে তার আসা হয় নি।
চৈতালীর বয়স যখন আট কি নয় তখন হঠাৎ একদিন ওর রাফসান ভাই বউ নিয়ে হাজির হলো। চৈতালীই বোধহয় সেদিন বেশি খুশি হয়েছিল। তার নতুন ভাবি হয়েছে ভেবে সে খুশিতে আটখানা। বাকি সবার মুখ ছিলো থমথমে। নিচতলার আড্ডাখানায় সেদিন বাবা চাচারা অনেকহ্মণ কথা বলেছিল। চৈতালী তখন তার নতুন ভাবি আফরিনের কাছে বসে।
তারপর এই ঘরটায় রাফসান ভাই আর আফরিন ভাবী থাকতো। রাফসান ভাই তখন ডুমুরের ফুল হয়ে গেলো। বাইরে থাকার সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সময় ভাবির আঁচল ধরে ঘুরতো বলা চলে।
রাফিয়া আপু আর ওর দুই ফুফাতো বোন আলিয়া আর ডালিয়া তিনজনে হাঁসাহাঁসি করতো। এরকম বউ পাগল দেখে…..(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ৮
সামিরা আক্তার
রাফসানের এরকম বউ পাগলা ভাব দেখে মা চাচিরাও আড়ালে মুখ টিপে হাঁসতেন। মাঝে মাঝে এই বিষয় নিয়ে রাফসান ভাইয়ের সাথে মজাও করতো রাফিয়া আপুরা। তখন রাফসান ভাই লাজুক হেঁসে মাথা চুলকাতো। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বছর না ঘুরতেই দুজনে আলাদা হয়ে গেল।
ঠিক কি হয়েছিল আজও জানে না চৈতালী। এ বাড়িতে এই ব্যাপারে বা আফরিন প্রসঙ্গে আর কোন কথা হয় নি।
তবে তারপর থেকেই রাফসান আমূল বদলে গেলো। হাঁসি খুশি মানুষটা কেমন সব বিষয়ে সিরিয়াস হয়ে গেলো। ভোরে ঘুম থেকে উঠে জিমে যেতে শুরু করলো।
এমনকি ভোজন রসিক রাফসান ভাইয়ের খাদ্য তালিকাও বদলে গেল। বাবার বিজনেসে মনোযোগ দিলো। একা থাকতে শুরু করলো।ফলে ভাই বোনের সাথে দুরুত্ব বাড়ল। একসময় বাড়ি ছেড়ে বিজনেসের কারণে ঢাকা থাকতে শুরু করলো। এরপর তাকে কদাচিৎ বাড়িতে দেখেছে চৈতালী। দেখা হলেও কেম আছিস ছাড়া আর কোন কথা বলেছে কি না সন্দেহ আছে চৈতালীর।
অথচ আগে রাফসান সকাল ১১ পর্যন্ত ঘুমাতে পছন্দ করতো। জিমে তো যেতেই চাইতো না। তার না কি বিরক্ত লাগতো। বিশেষ করে তার মায়ের হাতের রান্না কব্জি ডুবিয়ে খেতো। আর বিজনেসে বসার কথা বললেই শরীর খারাপ হতো।
**আসমাত সাহেবের স্ত্রীর উপর বেজায় মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ছেলেকে আটকাতে পারলো না?? তবে তিনি নিজেকে ঠান্ডা রেখেছেন। এখন আয়শাকে কিছু বলা যাবে না। এই মহিলা ভীষণ অভিমানী। অভিমান ভাঙাতে সময় লাগে। তার এখন আয়শা কে দরকার। তার চিন্তা ছেলে আর ছেলের বউকে একসাথে রাখার। যার জন্য আয়শার হেল্প লাগবে।
– কি ভাবছো?? আয়শা বলে উঠলো।
– ভাবছি রাফসানের মা ভাবছি।
– সেটাই তো জানতে চাইছি ভাবছো কি??
– আচ্ছা তোমার ছেলে যে চৈতালী কে রেখে চলে গেলো এটা কি ঠিক হলো?? ওরা একসাথে না থাকলে ওদের সম্পর্ক টা এগিয়ে যাবে কি ভাবে বলোতো??
আয়শা বেগম একটু ভাবলেন। তার হঠাৎ খুশি মনে বলে উঠলেন -একটা উপায় আছে ওদের একসাথে রাখার।
– কি উপায়??
– দেখো রাফসান তো এমনিতেই এখানে থাকে না। আর চৈতালীর জন্য থাকবে এটাও আশা করা ভুল। আবার চৈতালী কেও ওর কাছে রাখতে দিবে না। ঝামেলা করবে। তাই আমাদের চৈতালীকে বুঝাতে হবে। ওকে কনভিন্স করাতে পারলেই কাজ হবে। তাছাড়া ও তো ইউনিভার্সিটি ভর্তি হবে। সেটাও একটা কারণ।
আয়শা বেগমের উপায় শুনে আসমাত শিকদারের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকলো না। বলে কি না চৈতালী কে কনভিন্স করবে। ওনার মনে হলো এর চেয়ে আশ্চর্য কথা উনি আর জীবনে শুনেন নি। কিন্তু মুখে বললেন- বলা সহজ করা কঠিন। চৈতালী রাফসানের কাছে যাবে না।
– সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।
– দেখো। বলেই আবার চুপ হয়ে গেলেন। এখন বয়স হয়েছে কোথায় ছেলে ওনাদের চিন্তা করবে তা না ওনারা ছেলের চিন্তা করছে। বুড়ো বয়সে ছেলের সংসার গুছাচ্ছে।একেই বলে কপাল।
রাফসান যখন ঢাকা পৌছালো তখন বিকাল হয়েছে। আরও আগে পৌছাতে পারতো। কারণ ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দুরুত্ব বেশি না। যদিও তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের থানা শহরে তারপরও এত দেরি লাগে না। আজ সে আশুলিয়ায় মারাত্মক জ্যামে পড়েছিল। যার কারণে এত দেরি।
সে গুলশান ২ এর একটা ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকে। এই জায়গাটা তার বাবা অনেক আগে কিনে ফেলে রেখেছিলেন। সে যখন ঢাকা এলো তখন প্রথমে ভাড়া থাকতো। তারপর এই বাড়ির কাজ শেষ করে এখানে উঠে গেলো।
এই পুরো বাড়িতে সে একা থাকে। অবশ্য নিচে দাড়োয়ান আছে। একজন মালি ও আছে। প্রতিদিন কাজের বুয়া এসে কাজ করে দিয়ে যায়। এভাবেই চলছে। মাঝে মাঝে তার মনে হয় সে যদি এখানে মরেও যায় তাহলেও বোধ কেউ জানবে না। এতে অবশ্য কারো দোষ নেই কারণ এমন জীবন সে নিজে বেছে নিয়েছে।
একটা সময় হাসিখুশী সহজ সরল একটা জীবন তারও ছিলো। কিন্ত সেই জীবন তাকে অপমান, অসম্মান আর বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছু দেয় নি।
চৈতালী একা থাকতে পারছে না। তার কান্না পাচ্ছে। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এখানে সেটা সম্ভব না। তার সাথেই কেন এমন হলো? তার মা বাবাও তাকে বোঝে নি। কেউ বোঝে নি। জীবনের পাওয়া না পাওয়ার খাতা হিসাব করলে এ পর্যন্ত তার পাওয়ার খাতা শূন্য।
চৈতালী ওয়াশরুমে গিয়ে ঝরণা টা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করলো। সে আজ খুব কাঁদবে। আজকেই তার শেষ কান্না। এরপর আর ঐ বিশ্বাসঘাতকের জন্য কাঁদবে না।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ৯
সামিরা আক্তার
আয়শা বেগম অনেকহ্মণ ধরে রাফসানের রুমে বসে আছে। উদ্দেশ্য চৈতালীর সাথে কথা বলা। এসেই দেখেছে চৈতালী ওয়াশরুমে। এখনও আছে। কি করছে আল্লাহ জানে। ভালই হয়েছে এই ফাঁকে তিনি কথা গুছিয়ে নিচ্ছেন।
চৈতালী ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আয়শা বেগমকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত বোধ করলো। এতহ্মণ সে কেঁদেছে। বড়মার সন্দেহ হলেই হাজারটা প্রশ্ন করবে।
বারান্দায় কাপড় মেলে দিয়ে আয়শা বেগমের কাছে বসলো চৈতালী। বললো- বড়মা কিছু বলবে??
আয়শা বেগম তার ধ্যান থেকে বেরোলেন। চৈতালীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার বুকটা হু হু করে উঠলো। ছেলের ভালো করতে গিয়ে এই মেয়েটার সাথে তারা অন্যায় করে ফেলেছেন।
যদিও তার ছেলে লাখে একটা তবুও রাফসানের তুলনায় চৈতালী বাচ্চা। রাফসান কে অবশ্য দেখে বোঝা যায় না বয়স ৩৩ হয়েছে। লোকে তো বলে ২৭-২৮। এখনও মেয়েরা হা করে তাকিয়ে থাকে তার ছেলের দিকে।
শুধু ওই কালনাগিনী বুঝলো না। তার হাঁসি খুশি ছেলেটাকে পাথর বানিয়ে চলে গেলো। না হলে আজ এত কিছু ঘটতোই না।
চৈতালীর দিকে ভালো করে তাকালেন তিনি। কি মিষ্টি মেয়ে। যে কারো নজর কাড়তে বাধ্য। রাফিয়ার বিয়ে হলো, রাফসান চলে গেলো, আরিয়ান আবির ও গেলো, তখন এই মেয়েটাই দোতলা থেকে চারতলা সবাই কে মাতিয়ে রাখতো।
আচ্ছা ও কি রাফসান কে ভালবাসবে?? না কি বয়স বেশি বলে দূরে সরিয়ে রাখবে?
আয়শা বেগম কে এবার ধাক্কা দিলো চৈতালী। -বড়মা কখন থেকে ডাকছি। কি ভাবছো এতো??
– কিছু না মা। তোর সাথে গল্প করতে এসেছি। বলেই পা ছাড়িয়ে বসলেন তিনি।
চৈতালী এবার ওনার পায়ের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। আয়শা বেগম এবার চৈতালীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চৈতালীকে ডাকলেন- চৈতালী
– হুম
তুই আমাদের উপর রেগে আছিস না মা??
– রাগবো কেন??
– এই যে তোকে আমরা ধরে বেঁধে রাফসানের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলাম।
চৈতালী এবার উঠে বসলো। তারপর বলল – তোমরা কি নিজেদের দোষী ভাবছো বড়মা??
আয়শা বেগম চুপ করে রইলেন। চৈতালী এবার ওনার হাত ধরে বললো- আশরাফের সাথেও কিন্তু আমার বয়সের গ্যাপ ৮ বছরের ছিলো বড়মা। এটাও এই বর্তমান সময়ে অনেক বেশী।
আয়শা বেগম বললেন – তবুও
– তবুও কি বড়মা? রাফসান ভাইয়ের বয়স আর একটু বেশি তাই?? দেখো বড়মা আমি এতটাও ছোট বা অবুঝ নই। তোমরা আমাকে যখন ১৭ বছরেই বিয়ে দিতে চাইছিলে তখন আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু তোমরা আমাকে হাজার টা বুঝ দিলে। রাগের কথা যদি বলো তখন রাগ করেছিলাম। তারপর আশরাফের সাথে দেখা হওয়ার পর আমি নিজেই বিয়েতে মত দিয়েছিলাম।
আয়শা বেগম চৈতালীর দিকে এগিয়ে আসলেন। বললেন -ঐ ছেলেটা কে খুব ভালবেসে ফেলেছিস না?? এই জন্য চোখ মুখের এই হাল?
– আমি কেঁদেছি বড়মা আজই শেষ কাঁদলাম। কোন বিশ্বাস ঘাতকের জন্য আর কাঁদবো না বড়মা। প্রমিজ।তোমাদের উপর রাগ নেই বড়মা। তবে অভিমান আছে।ওটাও চলে যাবে।
বলেই আয়শা বেগম কে জরিয়ে ধরলো চৈতালী। তারপর বললো – এক হিসাবে বরং ভালই হয়েছে বলো। কোথায় না কোথায় বিয়ে হতো। হয়তো দজ্জাল শাশুড়ী না হয়তো দু চারটে কুচুটে ননদ থাকতো। তার চেয়ে বরং এটাই ভালো হয়েছে। তোমার মত একটা সুইট শাশুড়ী পেয়েছি।
আয়শা বেগম মলিন হাঁসলেন। তাই দেখে চৈতালী বললো- বড়মা এত সেন্টি খেয়ো না তো। আমি ভালো থাকবো দেখে নিও।
– আমি জানি তুই ভালো থাকবি মা। আমার রাফসান ভালো ছেলে। তোকে একটা কথা বলি চৈতালী?
– আবার জানতে চাইছো? বলো কি বলবে?
– তুই কি ভাবলি?
– মানে? বুঝলাম না বড়মা বুঝিয়ে বলো।
– তুই এখানে থাকবি? না কি সব মেনে নিয়ে রাফসানের কাছে গিয়ে সংসার করবি?
চৈতালী কোন জবাব দিলো না। আসলে এই প্রশ্নের জবাব এই মুহুর্তে তার কাছে নেই। চৈতালী কে চুপ করে থাকতে দেখে আয়শা বেগম বললেন- তোদের এই সম্পর্ক টা রাফসানের দিক থেকে এগুবে না চৈতালী। যা করার তকেই করতে হবে।
-আমাকে আজকের রাতটা সময় দাও বড়মা। আমি ভেবে কাল তোমাকে জানাবো। বললো চৈতালী।
– তোর যে কয়দিন ইচ্ছে সময় নে মা। শুধু আমার ছেলেটাকে আবার আগের মত করে দে চৈতালী। ওই কাল নাগনী মেয়েটা আমার ছেলেটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে গেছে। শেষ করে দিয়ে গেছে।
চৈতালীর একটু কৌতুহল হলো। পরহ্মণেই বলে উঠলো
– সিনেমার মত ডায়লগ কেন দাও বড় মা?? তোমার কি আমাকে দেখে মনে হয়েছে এই মেয়েই পারবে আমার ছেলেকে হাসিখুশি করতে। এই মেয়ে ছাড়া কেউ পারবে না। এরকম কিছু??
চৈতালীর কথা বলার ঢং দেখে হেঁসে ফেললেন আয়শা বেগম। বললেন- ফাজিল মেয়ে। সব সময় মজা না??
চৈতালী সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো। তারপর বললো
– কাল তোমাকে জানাবো বড়মা এখন ঘুমাবো। যাও।
রাফসান বিছানায় শুয়ে আছে। তার কাছে এই বিয়ে টা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো। এমন না যে আফরিন তাকে ঠকিয়েছে বলে সে কোন মেয়েদেরই পছন্দ করে না। সে জানে সব ছেলেরা যেমন এক না মেয়েরাও এক না। সবাই তো আর আফরিনের মত বিশ্বাসঘাতক নয়।
আফরিনের কথা ভাবতেই চেয়াল শক্ত হয়ে এলো তার।
বুঝতে পারলো রেগে যাচ্ছে। হাত টা মুট করে রাগ কন্টোল করলো সে।
ভাবতে হবে তার। যেমন করেই হোক চৈতীকে মুক্ত করতে হবে। বাচ্চা মেয়েটার জীবন নষ্ট করা যাবে না। দরকার পরে রাফসান তার বয়সের কাছাকাছি কাউকে বিয়ে করে বাবা মা কে শান্ত করবে তাও চৈতীর জীবনটা নষ্ট করতে দেবে না।
(ক্রমশ)