লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৬
সামিরা আক্তার
রাফসান চুপচাপ শুয়ে আছে। কালও চৈতালী এঘরে ছিলো। সে ল্যাপটপে কি যেন করছিলো। হঠাৎই ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়ে চৈতী বললো- তুমি এমন কেন?
– কেমন?? জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে চাইলো রাফসান।
– আনরোমান্টিক ঢেরস।
– মানে?
– মানে কই আমাকে ধরে ফটাফট কয়েকটা চুমু খাবে, আদর করবে তা না..
– চৈতী,,,ধমকের স্বরে বলে উঠলো রাফসান।
– একদম ধমকাবে না আর উপদেশ দিবে না। আমি তো বলেছি তোমাকে নিয়ে আমার সমস্যা নেই। আর আমার বয়স কয়দিন পরে আঠারো হবে।
– তো আমি কি করবো?? ঝাঁঝের সাথে বলে ওঠে রাফসান।
– তো তুমি আমাকে এখন আদর করবে। আমি এখানে এসেছি ১৫ দিন। তার ও ১ সপ্তাহ আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। অথচ তুমি আমার সাথে ঠিক করে কথাও বলো না।
– কথা না বললেও তো জোর করে বলতে বাধ্য করিস আবার বলিস কথা বলি না।
– আমার কি মনে হয় জান??
– কি??
– তোমার সমস্যা আছে। তাই আমাকে আদর করতে ভয় পাও। বলেই দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় চৈতী।
কাল চৈতীর কথায় আহাম্মক হয়ে গেলেও আজ সে কথা মনে পড়তেই হেঁসে ফেললো রাফসান। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দুইটা বেজে গেছে।
রাফসান আজ অনুভব করলো চৈতালী ১৫ দিনেই তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এরপর কি হবে???
**সকাল বেলা রাফসান অফিসে যাওয়ার পরই আয়শা চৈতালী কে শপিং করতে যাওয়ার জন্য বের হলেন। উদ্দেশ্য চৈতালী কে শাড়ি কিনে দেওয়া।
এই মেয়ে কিসব পড়ে থাকে। এভাবে কি আর পুরুষ মানুষের মন জয় করা যায়?? শাড়ি পড়ে স্বামীর সামনে একটু এলোমেলো হয়ে ঘুরে বেড়াবে তাহলেই না স্বামীর নজরে বেশি বেশি পড়বে।
এইকথা তিনি শাশুড়ি হয়ে কি ভাবে বলবেন বুঝতে পারছেন না। এই মেয়ে তো শাড়ি কেনার কথা শুনেই মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
বলে না কি শাড়ির কথা শুনলে তার অস্থির লাগে। অনেক ভেবে তিনি রাফিয়া কে এসএমএস করলেন গাড়িতে বসে।
মেয়েকেও অতো ভেঙ্গে বলতে পারলেন না। শুধু বললেন চৈতালীকে শাড়ি কিনতে রাজি করা। তার মেয়ে বুদ্ধিমতী। বুঝে যাবে কি বলতে চাইছে তার মা।
** চৈতালী মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। শাড়ি জিনিসটা তার অপছন্দের। অথচ বড়মা বলেছে তাকে এখন থেকে শাড়ি পড়তে হবে।
এর মাঝে চৈতালীর ফোন বেজে উঠলো। আয়শা বেগম আঁড়চোখে তাকালেন। চৈতালী কিছুহ্মণ কথা বললো রাফিয়ার সাথে। ফোন রাখতেই চৈতালী বললো- বড়মা রাফসান ভাইয়ের পছন্দের রং কি কি??
আয়শা বেগম মৃদু হাসলেন। যাক কাজ হয়েছে তবে।
**সন্ধ্যাবেলা রাফসান বাসায় এসে আয়শা বেগমের কাছে পানি চাইলো। আয়শা রান্না ঘরে কাজ করছিলো। চৈতালী কে ডেকে পানি দিতে বললো।
রাফসান নিচু হয়ে একটা ফাইল দেখছিলো। চৈতালী পানি এগিয়ে দিলো। ওর দিকে না তাকিয়েই পানির গ্লাস হাতে নিলো সে। পানি খেয়ে গ্লাস দেওয়ার জন্য চৈতালীর দিকে তাকাতেই গ্লাস হাত থেকে পড়ে গেলো তার।
চৈতালী শাড়ি পড়েছে। তার সাথে হাতাকাটা ব্লাউজ। তলাপেটের একটু উপরের জায়গাটা সে শাড়ি দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেছে বলেছে বলে মনে হয় না। ফলে জায়গাটা দেখা যাচ্ছে।
একটু আগে পানি খেলেও রাফসান অনুভব করলো তার আবার তেষ্টা পেয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে৷ এক প্রকার দৌড়ে পালালো সে ওখান থেকে।
চৈতালী রাফসান কে পানি দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। তার বলতে গেলে লজ্জা লাগছিল। রাফসানের পানির গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে সে মাথা তুলে তাকিয়েছে। তাকিয়ে রাফসান কে ওরকম হাঁসফাঁস করতে দেখে তার এখন আরও লজ্জা লাগছে।
তার এরকম হাতা কাটা কাপড় পরার অভ্যাস নেই। এরকম পেট বের করে শাড়ি পরার কথা সে চিন্তাও করতে পারে না।
শাড়িটা তাকে আয়শা বেগম পড়িয়ে দিয়েছেন। আর ব্লাউজ রাফিয়ার কথামত কেনা। এজন্যই বোধ হয় রাফিয়া আপু বলছিলো শাড়ি পড়লেই দেখবা ভাইয়া কেমন তুমি ছাড়া কিছু বুঝবে না।
মনে পড়তেই চৈতালী আর এক দফা লজ্জা পেল।
** রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আয়শা বেগম তড়িঘড়ি করে ভেতর থেকে দরজা দিয়ে শুয়ে পড়লেন। চৈতালী কে আজ তিনি তার কাছে রাখতে চান না। ওরা যত কাছাকাছি থাকে তত ভালো। বরং তিনি কালই চলে যাবেন বলে ঠিক করলেন।
রাফসান কাল রাতে চৈতালী কে মিস করলেও আজ মনে প্রানে চাইছিলো আজ যেন চৈতালী মায়ের কাছেই ঘুমায়। এমনকি চৈতালী বোধহয় নিজেও চাইছিলো আয়শার কাছে ঘুমাতে। কিন্তু আয়শার ওরকম দরজা দিয়ে শুয়ে পড়া দেখে দুজনেই হতাশ হলো।
বাধ্য হয়ে দুজনেই ঘুমাতে গেলো। ঘরে গিয়েই চৈতালী গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো।
রাফসান আড়চোখে চৈতালী কে দেখছিলো। কথা বলে কান ঝালাপালা করে দেওয়া মেয়েটা কেমন চুপচাপ। লজ্জা যে পাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে।
লজ্জাই যখন পাবি তখন শাড়ি পড়লি কেন?? আর আমাকেই অস্বস্তিতে ফেললি কেন?? ফাজিল মেয়ে।
বিরবির করলো রাফসান।
কথায় বলে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। রাফসান ও চৈতালী কে তার জন্য নিষিদ্ধ মনে করেছিল। অথচ আজ চৈতালীর এই সর্বনাশা রুপ রাফসানের মনে অন্যরকম চিন্তা ভাবনার জন্ম দিচ্ছে।
রাফসান নিজেই নিজের মন কে শাসালো। কিন্তু ভিতর থেকে মন আর মস্তিক একসাথে বলে উঠলো তুমি কোন মহাপুরুষ নও রাফসান যে নারী দেখে তোমার কামনা বাসনা জাগবে না। এই মেয়ের কাছে যাওয়ার অধিকার তোমার আছে। সে তোমার স্ত্রী।
হাত মুঠ করে নিজেকে সামলিয়ে চৈতালীর পাশে শুয়ে পড়লো রাফসান। চৈতালী ততহ্মণে ঘুমিয়ে গেছে। তাকিয়ে দেখলো শোবার কারণে পেটের কাছের শাড়ি সরে গেছে, আঁচল সরে গেছে। রাফসান সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো।
সে অনুভব করলো এই মেয়ে এইভাবে তার আশে পাশে থাকলে তার বিপদ। ঘোর বিপদ। তখনই অভ্যাসবসত চৈতালী জরিয়ে ধরলো তাকে। রাফসান একটা ঢোক গিললো। আজ তার একি পরীক্ষা নিচ্ছে চৈতী।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৭
সামিরা আক্তার
রাফসান আজকাল একটা যন্ত্রনার মধ্যে আছে। সেটা হলো চৈতালী। আজকাল তার চৈতালী কে দেখতে ইচ্ছা করে, আদর করতে ইচ্ছা করে। এমন কি রাতের বেলা চৈতালী কে দেখে নিজে নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়। বাসায় গেলে চৈতালীর বকবক শোনে। আশ্চর্যের বিষয় তার আজকাল চৈতালীর বকবক শুনতেও ভাল লাগে।
এই যন্ত্রনার নাম দিয়েছে সে মিষ্টি যন্ত্রণা।
আর এই কথা সে কাউকে বলতে পারছে না। কি হচ্ছে তার সাথে??
মনকে জিজ্ঞেস করলে মন যেন উত্তর দেয় তুমি আবার কাউকে ভালবেসে ফেলেছো রাফসান।
পরহ্মণেই আঁতকে ওঠে সে। এট কি ভাবে হতে পারে? সে তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো জীবনে আর কোন রমনীর মায়ায় আকৃষ্ট হবে না।
তাও কেন হলো? তাও চৈতালীর মত একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে। ভেবে পায় না রাফসান।
সবচেয়ে যন্ত্রণার এই মেয়ে আজকাল শাড়ি পড়ে। শাড়ি তো সামলাতেই জানে না। মাঝখান থেকে রাফসান বেসামাল হয়ে যায়।
চৈতালীর দিনকাল বেশ ভাল যাচ্ছে। রাফসান বাসায় না থাকলে সে শাড়ি পড়ে না। আসার আগে পড়ে। এটা রাফিয়ার বুদ্ধি। তারও কেন জানি আজকাল রাফসানের জন্য অপেক্ষা করতে ভাল লাগে, রাফসান কে দেখতে ভালো লাগে, রাফসানের জন্য নিজেকে সাজাতে ভালো লাগে।
এখন মনে হয় কেউ না বললেও সে রাফসানের সাথে থাকতে পারবে সারাজীবন।
আশ্চর্যের কথা তার আর এখন আশরাফের কথা মনে পড়ে না।
চৈতালী লহ্ম করছে রাফসানও বদলাচ্ছে। তার খেয়াল রাখছে।
এইতো সেদিন নুডলস রান্নার জন্য পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চৈতালী কতটা হাত কেটে ফেললো। রাফসান দৌড়ে এসে তার হাতটা চেঁপে ধরে মাতবরি করার জন্য বকা দিলো। তারপর হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে নিজেই নুডুলস রান্না করে তাকে খাইয়ে দিলো।
ভাবতেও যেন ভালো লাগে চৈতালীর। বেশিহ্মন গোসল করলে বকে ঠান্ডা লাগবে বলে, আজকাল অফিস থেকে আসার পথে ফুসকা,আইসক্রিম এগুলো আনতে দেখা যায় তাকে।
চৈতালী একদিন জানতে চেয়েছিল – তুমি কি করে জানলে এগুলো আমার পছন্দ?
– শুধু তুই না সব মেয়েদেরই এগুলো পছন্দ। উত্তর দিয়েছিলো রাফসান।
চৈতালীর হেঁসে ফেললো। তার আজকাল রাফসানের সব কর্মকান্ডই ভালো লাগছে।
** চৈতালী ঢাকার একটা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তে ইতিহাসে চান্স পেয়েছে। সে ছাত্রী হিসাবে মোটামুটি। ভালও না খারাপও না। তাই বলে ইতিহাসে পড়ার কোন ইচ্ছা তার ছিলো না। কি আর করার।
আয়শা বেগম যাওয়ার দু মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি আর আসেন নি। এর মাঝে চৈতালী কে নিয়ে রাফসান বাড়িতে গিয়েছিল।
এবার বাড়ি গিয়ে চৈতালী সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেছে। রাফসানের সাথে বিয়ে দেওয়া নিয়ে মা বাবার প্রতি যে অভিমান জন্মেছিলো তা কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে।
মেয়ের হাসিমুখ দেখে অনেকটা স্বস্তি অনুভব করেছে আসলাম শিকদার ও রেবেকা।
মেয়ে যে ভালো আছে তা বুঝতে পেরেছেন তারা।
চৈতালীর বাড়িতে কয়দিন থাকার ইচ্ছা থাকলেও তাকে রেখে আসেনি রাফসান।
কেন তা সে জানে না। বরং এই কারণে আয়শা মিটিমিটি হেসেছে। এমনকি রাফিয়াও ফোন দিয়ে মজা করছে।
এভাবেই দুষ্টুমিষ্টি ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের সম্পর্ক।
**রাফসানের আজ বাসায় ফিরতে দেরি হয়েছে। অফিসের কাজে তাকে যেতে হয়েছিল গাজীপুর। সেখান থেকে আসতেই দেরি হয়ে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ১০ টা।
বড্ড দেরি হয়ে গেছে। চৈতী কে যদি একটা ফোন করে দিতো। ভাবতে ভাবতে কলিংবেল দিলো রাফসান। ভিতরে কোন সাড়াশব্দ নেই।
এমন তো হয়না। বরং একবার দেওয়ার সাথে সাথে দরজা খুলে চৈতী। বেশ কয়েকবার বেল বাজিয়ে না পেয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুললো রাফসান।
দরজা খুলেই দেখতে পেলো ডাইনিংয়ের সোফায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে চৈতী। টিভিতে কার্টুন চলছে। রাফসান মৃদু হাসলো। তারপর চৈতালী কে কোলে তুলে নিয়ে বেডরুমের দিকে গেলো।
চৈতালী কে শুইয়ে দিয়ে তার দিকে কতহ্মণ তাকিয়ে থাকলো রাফসান। মেয়েটা আজ শাড়ি পড়ে নি। কেন? শাড়ি পড়লে দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। অবশ্য টি-শার্ট আর প্লাজু তেও ভাল লাগছে।
রাফসান একটা জিনিস খেয়াল করেছে চৈতালীর চেহারা বা ব্যবহারে বাচ্চামির ছাপ নেই।
বরং বয়স অনুযায়ী একটু বেশি চটপটে।
আলগোছে চৈতালীর কপালে একটা চুমু দিলো রাফসান। স্ত্রী হিসাবে চৈতালীর প্রথম ছোয়া। অথচ
কিছুই জানলো না চৈতালী।
অথচ জেগে থাকলে বলতো আমাকে ফটাফট একটা চুমু খাও তো।
ভাবতেই হেঁসে ফেললো সে। তারপর ওয়াশরুমে গেলো।ফ্রেশ হওয়াটা জরুরি।
রাফসান ওয়াশরুমে যেতেই চোখ খুললো চৈতালি। রাফসান কোলে নেওয়ার সাথে সাথে ঘুমে ছুটে গেছে তার। কিন্তু নিজেকে রাফসানের কোলে আবিষ্কার করার পর আর চোখ খোলেনি সে।
এখন তো আরও চোখ খুলবে না সে। চুমুর কথা মনে পড়তেই দুহাতে মুখ ঢাকলো সে।
**চৈতালীর ক্লাস শুরু হয়েছে। রেগুলার ক্লাস করছে সে। যদিও তার ইচ্ছে ছিলো না ক্লাস করার। কিন্ত রাফসান বলেছে ক্লাস না করলে বাড়িতে রেখে আসবে। বাসায় এমন কোন কাজ নেই যার জন্য সে ক্লাস করতে পারবে না। অগত্যা চৈতালী কে মেনে নিতে হয়েছে।
বলা বাহুল্য এখন রাফসান কথা বার্তায় চৈতালীর সাথে স্বাভাবিক। তাদের বিয়ে সাঁড়ে চার মাস হয়ে গেছে যদিও।
কয়দিন পরই চৈতালীর জন্মদিন। তার ১৮ বছর হবে। ইনিয়ে বিনিয়ে রোজই রাফসান কে মনে করায় সে কথা।
চৈতালীর জন্মদিন নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই এমনিতে। তবে এবার সে দেখতে চায় রাফসান কি করে তার জন্মদিনে।
না কি আবার ভুলে যাবে কে জানে।
চৈতালী ক্যান্টিনে বসে এসব কথা ভাবছিলো। তার ভাবনার মাঝে তার পাশে এসে বসলো সাব্বির, উর্মি, শাপলা,আর পলাশ।
ওরা চৈতালীর নতুন বন্ধু। কয়েকদিনেই ওদের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে।
যদিও ওরা জানে না চৈতালী বিবাহিত।
সাব্বির এসেই বললো – ধুর শালা।
চৈতালী ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। বললো- কি হলো?
– শালার দুনিয়াতে এত সাবজেক্ট থাকতে এই ইতিহাস পড়লো আমার কপালে? কোন সালে কোন রাজা, কে যুদ্ধ করছে এইগুলো পড়ে কি বা*ডা ফেলামু আমি??
– এই তুই ভাষা ঠিক কর। বলে উঠলো উর্মি।
-এহ আইছে আমার ভাষাবীদ।
ওরা সব গুলো একই কলেজের। ঢাকা তেই। ওদের মাঝে চৈতালী কি ভাবে যেন ঢুকে গেছে। চৈতালী কিছু বলতে চাইছিল এর মাঝে ওর ফোন বেজে উঠলো। রাফসান ফোন করেছে
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৮
সামিরা আক্তার
**রাফসানের কল দেখে অবাক হলো চৈতালী। এসময় কেন কল করেছে?
চৈতালী কে ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কনুই দিয়ে গুতা দিলো শাপলা।
বললো- কে ফোন করেছে?? রিসিভ করিস না কেন??
– ইয়ে রাফসান ভাই ফোন করেছে। কিন্তু এসময় কেন??
-ফোন ধরলেই না জানতে পারবি কেন। বললো সাব্বির।
-কিন্তু এই রাফসান ভাই কে?
কথা বলতে বলতে ফোন কেটে গেলো। পরহ্মণেই আবার বেজে উঠলো। চৈতালী ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রাফসান বলে উঠলো – আমি তোর ইউনিভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে। বেরিয়ে আয়।
চৈতালী উঠে বললো আমাকে যেতে হবে। ওর সাথে সাথে সবাই বেরিয়ে এলো ক্যান্টিন থেকে। বের হতে হতে উর্মি আবার জিজ্ঞেস করলো বললি- না এই রাফসান টা আবার কে?
– আমার কাজিন।
– কেমন কাজিন??
– চাচাতো ভাই।
-ওহ?
গেটের বাইরেই রাফসান কে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। রাফসান কে দেখেই উর্মি বলে উঠলো – ওহ মাই গড। দোস্ত এই হ্যান্ডসাম পোলাটা তোর কাজিন??
ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো চৈতালী। উর্মির ভাবগতিক বোঝার চেষ্টা করলো। উর্মি তখন হা হয়ে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
চৈতালীর ইচ্ছে করলো ওকে থাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে। বেহায়া মেয়ে। অন্যের স্বামীর দিকে নজর দেয়।
**চৈতালী কে দেখে এগিয়ে গেলো রাফসান। কিছু বলার আগেই হঠাৎ উর্মি দৌড়ে এসে বললো- আপনি চৈতালীর কাজিন?? ওমাগো ওর যে এত হ্যান্ডসাম কাজিন আছে তা কিন্তু আমাদের বলে নি। বাই দ্যা ওয়ে আপনি কি সিঙ্গেল?? আমি কিন্তু পিওর সিঙ্গেল।
উর্মির এমন কান্ড দেখে বিরক্ত হলো সাব্বির। পলাশ কে বললো- এই ছ্যাঁচড়া মাইয়া ক্যামনে আমগো বন্ধু হলো ক তো।
– শুধু উর্মির কথা বলিস কেন?? শাপলার দিকে দেখ।
সাব্বির শাপলার দিকে তাকিয়ে দেখলো শাপলা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
সে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো। এই মেয়ে জাতি এমন কেন??
ওদিকে উর্মি বলেই চলেছে – ভাইয়া আপনার ফোন নাম্বার দেওয়া যাবে অথবা ফেসবুক আইডি?
চৈতালী হা হয়ে উর্মির কর্মকান্ড দেখছিল। এই মেয়ের লাজ-লজ্জা কিছুই নেই না কি? কোন লেভেলের বেহায়া হলে মানুষ প্রথম দেখায় এরকম ছ্যাঁচড়ামি করতে পারে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো শুধু উর্মি না অনেক মেয়েই হা করে তাকিয়ে আছে রাফসানের দিকে। চৈতালীর এবার সব রাগ রাফসানের উপর গিয়ে পড়লো। এই লোক কে এখানে আসতে কে বলেছে??
রাফসান বুঝলো চৈতালী তাকে কাজিন বলেছে। তার কোথাও একটু খারাপ লাগলো। তার বয়স বেশি বলেই কি চৈতী তাকে হাজবেন্ড হিসাবে পরিচয় করে দিচ্ছে না? আজ সে এখানে এসেছে চৈতীকে এক নজর দেখার জন্য। হঠাৎই দেখতে মন চাইলো। কেন চাইলো সে জানে না। একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে সে চৈতালীর দিকে তাকাতেই দেখলো চৈতালী রক্তচহ্মু নিয়ে উর্মির দিকে তাকিয়ে আছে।
তার মানে কি চৈতী জেলাস?? রাফসানের খারাপ লাগা হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়ে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।
সে উর্মি কে বললো- তোমার মত সুন্দরী মেয়েকে ফোন নাম্বার বা ফেসবুক আইডি দিতে আমার কোন আপত্তি নেই। সুন্দরী দের সাথে যোগাযোগ রাখতে কার না ভালো লাগে।
– দিন তাহলে। গদগদ স্বরে বলে উঠলো উর্মি।
এতহ্মণ নিজেকে সামলে রাখলেও এবার মেজাজ হারালো চৈতালী। ঠাস করে এক থাপ্পড় মারলো উর্মি কে। ওর থাপ্পড় দেওয়া দেখে উপস্থিত সবাই বোকা বনে গেলো।
দাঁতে দাঁত চেপে চৈতালী বললো- তোর এই বেহায়াপনা অন্য কোথাও দেখাবি। তোর সাহস দেখে আমি মরে যাই তুই আমার সামনে আমার হাজবেন্ডের ফোন নাম্বার চাস।
বলেই গটগট পায়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো সে।
চৈতালী যেতেই ওর হয়ে উর্মির কাছে হ্মমা চাইলো রাফসান। উর্মি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো- ইটস্ ওকে ভাইয়া। ওর জায়গা আমি থাকলেও সেম কাজটাই করতাম। তবে আমারও কোন দোষ নেই। আমাদের চৈতালী বলে নি ও বিবাহিত। আপনি ওর হাজবেন্ড।
-একদম ঠিক করছে। তুই একটু বেশিই ছ্যাঁচড়া। বললো সাব্বির। তছাড়া চৈতালীর সাথে আমাদের পরিচয় মাত্র ১মাসের। সময় হলে ঠিকই বলতো।
ওদের কাছে আরেক দফা হ্মমা চেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো রাফসান আঁড়চোখে তাকালো চৈতালীর দিকে। বুঝতে পারলো চৈতী হ্মেপে বোম হয়ে আছে।
বুকের ভিতর একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো রাফসানের। তারমানে চৈতালীর তার প্রতি ফিলিংস সত্যি আছে। তার জন্য জেলাস হচ্ছে।
রাফসান ইঠাৎ অনুভব করলো জীবনটা ভয়ংকর রকমের সুন্দর।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সে চৈতালী কে বললো
– শুধু শুধু মেয়েটা কে থাপ্পড় মারলি।
রাফসানের কথা বলার সাথে সাথে চৈতালী যেন হামলে পড়লো তার উপর। বললো- শুধু শুধু? ও যে ছ্যাঁচরামি করছিলো তা তোমার চোখে পড়লো না??
– কিন্তু তুই তো ওকে বলিস নি আমি তোর হাজবেন্ড।
– তো এখন বলে দিলাম বলে কি তোমার আফসোস লাগছে। সুন্দরী ললনা হাত ছাড়া হয়ে গেলো বলে?
রাফসান বুঝলো চৈতী ঝগড়ার মুডে আছে। কিন্তু সে তো ঝগড়া করবে না। তার মন আজ ভীষণ ভালো। তাই বললো – আমি শুধু বললাম তুই কাজ টা ঠিক করিস নি। আর তুই কি বলছিস?
– আচ্ছা কাজটা ঠিক করি নি তো কি করতে হবে? তোমার ললনার পায়ে ধরে হ্মমা চাইতে হবে? ঠিক আছে গাড়ি ঘোরাও। গিয়ে তোমার ললনার পায়ে ধরে আসি।
রাফসান হতভম্ব হয়ে গেলো চৈতালীর কথায়। বুঝলো সে এখন যাই বলুক চৈতী তার উল্টো মানে বের করবে। তার কোথাও ভালো লাগছে চৈতালী তার প্রতি এত পজেসিভ দেখে। নিজেকে সামলে বললো- কি যা তা বলছিস আমার ললনা মানে?
– আমার কথা তোমার যা তাই মনে হবে এখন। ব্যাটা লুচু ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়েদের সুন্দরী বলে তাদের ফোন নাম্বার দিতে চায়।
রাফসান চৈতালীর কথা শুনে শব্দ করে হেঁসে ফেললো। বললো- আমি অন্য মেয়ের পাল্লায় পড়লে তুই বেঁচে যাস চৈতী। তোকে এই আধবুড়ো লোকের সাথে থাকতে হবে না।
রাফসান কথা শেষ করার সাথে সাথে চৈতালী সিট বেল্ট খুলে রাফসানের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। তাকে খাঁমচে কাঁমড়ে একাকার করে দিলো।
চৈতালীর এহেন আক্রমণে রাফসান দিশেহারা বোধ করলো। কোনরকমে চৈতালী কে জাপটে ধরলো নিজের বুকের ভিতর।
রাফসানের বুকের ভিতর চৈতালী হঠাৎই শান্ত হয়ে গেলো। তারপর ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। তার বড্ড অভিমান হয়েছে। কেন রাফসান অন্য মেয়েকে সুন্দরী বলবে? কেন তাদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলবে? কই তাকে তো সুন্দরী বলে না। তার সাথে তো হেঁসে হেঁসে কথা বলে না। রাফসান কি বুঝে না চৈতী তাকে ভালবেসে ফেলেছে।
** রাফসান যখন বুঝতে পারলো চৈতালী শান্ত হয়েছে। তখন চৈতালীর দিকে তাকালো। এই মেয়ে কবে তার মনের ভিতর ঢুকে বসে আছে সে বুঝতেই পারে নি। আচমকা সে চৈতালীর মুখটা তুলে দু চোখে দুটো চুমু দিলো।
রাফসানের কাজে চৈতালীর সব রাগ অভিমান পালিয়ে গিয়ে সেখানে ভর করলো এক রাশ লজ্জা। রাফসান নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
সারা রাস্তা কেউ আর কথা বললো না।
***সেদিনের ঘটনার পর রাফসান এক প্রকার পালিয়ে বেড়ায় চৈতালীর থেকে। হু হা দিয়ে কথা সারে। চৈতালী নিজেও লজ্জা পায়। যদিও সেই ঘটনার জন্য সে উর্মিকে সরি বলেছে।
তবে কাল রাফসান কি করে এটা দেখার বিষয়। কারণ কাল তার জন্মদিন। তার আঠারো বছর হবে সেই সাথে বিষয়ে পাঁচ মাস পূর্ণ হবে।
অথচ মনে হয় সেদিন তাদের বিয়ে হলো। আশ্চর্যের বিষয় এই পাঁচ মাসে চৈতালীর আশরাফ কে মনে পড়ে নি। তাহলে আশরাফের প্রতি কি ছিলো?? শুধুই ভাল লাগা??
অথচ চৈতালী এখন চিন্তাও করতে পারে না সে রাফসান কে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকবে।
চৈতালী এটা বুঝে গেছে রাফসান ও তার প্রতি দূর্বল। রাফসানের তার কাছে ধরা দেওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
( ক্রমশ)