#শত ডানার প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ৪
আমি পিছন থেকে অগ্নি ভাইয়ার শার্ট চেপে ধরে আছি। প্রচন্ড ভয় করছে ।কপাল ঘামছে । উনি আবাস পেয়ে ভ্রু কুচকে আছে ।এমন সময়ই মামী আমাদের সোফায় বসায় । মামী বাবার বাড়ির লোকেরা এসেছে। এক এক করে সবার সাথে অগ্নি ভাইয়াকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।।আবির ভাইয়া আর হিয়া আপু অনেক আগেই পৌছিয়েছে । এখন উপরে রেস্ট নিচ্ছে ।
আমি মাথা নিচু করে আছি । সামনের লোকটার দিকে তাকানোর সাহস নেই । কিন্তু সামনে বসা লোকটা আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে । সামনে বসা লোকটা মামীর বড় ভাইয়ের ছেলে উৎস । আমাকে ছোট থেকে খুব পছন্দ করে । কিন্তু আমার কেন জানো তাকে ভয় হয় । অনেক বার উনি উনার ভালোবাসার কথা বলেছে কিন্তু আমি প্রতিবারই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। উনি বলেছিলো উনি আমার জন্য অপেক্ষা করবে।আমি কোনো উত্তর দেইনি । উনি এতদিন একটা আশা নিয়ে ছিল আজ হয়তো নিজের শেষ আশার প্রদীপ নিভতে দেখলো । তার আধার অশ্রভরা চেহারাটা দেখার মত শক্তি আমার নেই !
কিছুক্ষণ পর মামী আমাদের রুমে পাঠিয়ে দেয় রেস্ট নেওয়ার জন্য । আমি সেখান থেকে কোনো রকম ছুটে রুমে চলে আসি । বড় বড় নিশ্বাস ছাড়ি এমন সময় দরজা লাগানোর শব্দ কানে ভেসে আসে । আমি ভ্র কুচকিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আগ্নি ভাইয়া এসেছে । কিন্তু উনি দরজা বন্ধ করলো কেন ??
উনি ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । উনার গভীর দৃষ্টি আমার দিকে । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি একদম আমার কাছে চলে আসে । আমার কমোড় শক্ত করে চেপে নিজের কাছে টানে ।নিশ্চিত কমোড়ে নিলচে দাগ করে ফেলেছে ।
উনার কাজে আমি হা হয়ে শুধু তাকিয়ে আছি।হৃদপিন্ড দ্রুত গতীতে চলছে। মনে হচ্ছে এখনই বের হয়ে আসবে!
উনার গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাচ্ছি।তার চোখের সমুদ্রের অতলে ডুবে যাচ্ছি।শ্বাস ভারী হচ্ছে।শরীরটা কেমন জানো হাল্কা হাল্কা লাগছে । উফফফ ! এমন কেন অনুভব হচ্ছে ? এ আমার কি হচ্ছে ?
না না এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে শ্বাস আটকিয়ে নিশ্চিত মারা যাবো । আমি তার থেকে দূরে যেতে নিলে তিনি আমাকে আরো চেপে ধরে । আমি মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলি ,
– “দরজা বন্ধ করলেন কেন । ”
উনি ঝুকে আমার কানের কাছে মুখ এনে শীতল কন্ঠে বললেন ,
– “ওই যে গাড়ির মত সুযোগের ব্যবহার করতে! “‘
আচ্ছা উনি কি সত্যি আমার সাথে কিছু করবেন ? ভয়ে হাতপা কাপাঁকাপি শুরু ।উনি এবার আরো কাছে আসলো । আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
– “আ আ মি তো এমনিতেই বলছিলাম । ”
– “না না ,এখন যেহেতু অহেতুক দোষারোপ করছো । দোষ করেই না হয় দোষী হই । কি বলো ! ”
আমি তার বুকে ধাক্কা দেই কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হয়না । উনি এক চিমটি ও নড়ে না বরং আবার কমোড় দুহাতে চেপে ধরে । আমার কানের কাছে মুখ এনে আগের মত শীতল কন্ঠে বললেন ,
– “আমার সাথে উচু গলায় কথা বলার সাহস পাও কোথা থেকে ? বলো তো ? ”
গলা ঝেড়ে শক্ত গলায় উত্তর দেই ,
– “সাহস দোকান থেকে কিনে আনতে হয় না ,মনের ভিতর থেকে এমনিতেই আসে ।”
হ্ঠাৎই উনি আমার চুল শক্ত করে ধরে আমার মুখ নিজের মুখের কাছে টেনে আনে । আমি হতবাক । খুব লাগছে আমার কিন্তু মুখে প্রকাশ করলাম না । উনি রেগে ক্রুদ্ধ গলায় বললেন,
– “আমার সাথে একদম উচু স্বরে কথা বলবে না । খোলা চুল আমার সামনে আসবে না ।এসব যদি করো তাহলে ফলাফল খুব খারাপ । খুব খারাপ ! ”
উচু স্বরে কথা না বলার কারণ না হয় বুঝলাম কিন্তু খোলা চুলে উনার সামনে না যাওয়ার কারণ কি ? এই কাবির সিং কি সত্যি সত্যি পাগল টাগল হয়ে গেলো ? ডেম সিউর ব্যাটা ছ্যাঁকা খেয়ে পাগল হয়ে গেছে । কিন্তু আমি কি তার কথা শুনবো নাকি ? কখনো না ,একদম না !
আমি ভেঙচি কেটে বলি ,
– “ইয়েয়্য্য্য্য্য্য বললেই হলো নাকি? আপনি বললেই হলো? আমার যা মন চায় আমি তাই করবো । গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কথা বলবো ,খোলা চুলে নাচবো লাফাবো । আপনার তাতে কি ?
আমার উপর নিজের অধিকার খাটাতে আসবেন না । আপনি আমার এক বছরের নাম মাত্র স্বামী । ভুলে যাচ্ছেন ? ”
উনি নাক ফুলিয়ে চরম বিরক্তির সাথে বললেন,
– “ইউ আর যাস্ট ইম্পসিবল ! তোমাকে সাথে কথা বলাই বৃথা । ”
আমি প্লাস্টিক হাসি দিয়ে বলি ,
– “আমারো আপনার সম্পর্কে একই ধারণা । ওয়াও ,আমাদের চিন্তাধারার কত মিল ! তাই না ? ”
উনি রেগে আমার কমোড় ছেড়ে দেয় । রাগে ফুসতে ফুসতে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় । উনি যেতেই আমি মন খুলে হাসতে লাগি । খুব মজা লাগছে । বেশ জব্দ করেছি । এখন খুব শান্তি লাগছে । আহ । কি শান্তি !
সারাদিন অগ্নি ভাইয়া ফিরলেন না সবাই উনার কথা জিগাসা করছে এটা ওটা বলে কাটিয়ে দিচ্ছি । আর অন্যদিকে বারবার উৎস ভাইয়ার সামনে পড়ছি ।উনি কিছু বলতে চাইছে আমি তা বুঝ না বুঝার মত ইগনোর করে যাচ্ছি । সন্ধ্যায় আমার রুমের দিকে আসছিলাম এমন সময়ই উৎস ভাইয়া আমার হাত টেনে রুমে টেনে নিয়ে আসে । আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে উনার সামনে দাড়িয়ে আছি । উনি আমার হাত অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে । উৎস ভাইয়া তাচ্ছিল্য গলায় বললেন,
– “এখনো এত ভয়? এখনতো তোমার বিয়ে হয়ে গেছে এখন ভয় কিসের ? ”
আমি চুপ করে আছি । উনি আমার কোনো উত্তর না পেয়ে নিজেই বললেন,
– “শুন হুর আমি তোমাকে ভালোবাসি । আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করোনা । তাই বলে এই না যে তোমার উপর জোর খাটাবো নিজের করে করবো ।
আমি চাই তুমি যেখানেই থাকো সবসময় হাসি খুশি থাকো ।ভালো থাকো । ”
উনার কথা আমি কেঁদে দেই । কেউ কি করে কাউকে এত নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে পারে ?
উনি আমার চোখ মুছে দিয়ে মলিন হেসে বলল,
– “দেখ বোকা মেয়ের কান্ড । এভাবে কেউ কাঁদে ? ”
আমি উৎস ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– “আপনি কি করে এতটা নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে পারেন ? ”
উনি হেসে উত্তর দিলেন ,
– “হুর তুমি মানুষটাই এমন যাকে দেখলে নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসা যায় ! ”
এমন সময়ই রুমে টিয়া আপু চলে আসে আমাকে ঠেস মেরে বললেন,
– “জামাই দিয়ে কি তোর হয় না? আমার নাগরও লাগবে ?
ছিঃ ছিঃ তুই এতই চরিত্রহীন তুই ? অবশ্য চরিত্রহিন তো তুই আগের থেকেই ছিলি । ছেলে দেখলে তোর তো হুস থাকে না। লোভ বড় বাড়ির বউ হবার হয়েছিস তারপরও কেনো এমন নষ্টামি করিস ? ছেলে ফাসানোর ধান্দা ?
খুব তো হিয়ার শাশুড়ি কে হাত করে বাড়ির বউ হয়েছিস । এখন আবার উৎসের সাথে রংঢং করছিস ?
উৎস ভাইয়া বেশ কয়েকবার ধমক দেয় কিন্তু টিয়া আপু থামেনা ।উৎস ভাইয়া একসময় রেগে চলে যায় । আমি কান্না করছি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু টিয়া আপু আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে । টিয়া আপু আর কিছু বলতে যাবে হ্ঠাৎ করে তার গালে ঠাস করে চড় পরে ।
টিয়া আপু স্থব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে । আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি মামী ভয়ংকর রেগে । মামী রাগি কর্কশ গলায় বললেন,
– “আর একটা খারাপ কথা বললে তোর গলা টিপে এখানেই মেরে ফেলবো বেয়াদব মেয়ে। তুই আমার মেয়ে তা মনে করেই আমার লজ্জা লাগছে !
হুর লোভে পরে না তোর বোনের সংসার বাঁচাতে বিয়ে করেছে । তোর বোনের বিয়েটাও এই মেয়ের জন্য হয়েছে বিয়ের আগেই হিয়া প্রেগন্যান্ট ছিলো । হুর আন্দিতা খাঁন কে রাজী করিয়েছে । আর আন্দিতা খাঁন হিয়ার সংসার ভাঙার ভয় দেখিয়ে হুরকে বিয়ের জন্য বাধ্য করেছে । হুর এই বিয়েতে রাজী ছিলো না । ”
মামীর কথা শেষ হতেই টিয়া আপু রেগে চিৎকার করে বলেন,
– “মা এই মেয়ে তোমার কাছে আমার থেকেও বেশি আপন হয়ে গেল ? এই মেয়ে ছোট থেকে আমার সব জিনিস কেড়ে নিয়েছে ।সবার থেকে আদর পেয়েছে ভালোবাসা পেয়েছে আমার সব কিছুতে ভাগ বসিয়েছে । ও জানতো আমি উৎসকে ভালোবাসি তারপরও উৎসকে ওর রুপের জালে ফাসিয়েছে । ওর রুপের গুনের সবাই গুনগান করেছে । আমি এসবে কি পেয়েছি ? শুধুই অবহেলা ?
টিয়া আপুর কথা শুনে আমি আর দাড়ালাম না । ছুটে চলে আসি আর কিছু শুনার মত শক্তি আমার মাঝে নেই !
নিজের কাছের লোকের এত অবহেলা ঘৃণা মেনে নিতে পারছিনা । মরে যেতে ইচ্ছে করছে ।
বের হয়ে আসার সময় দেখতে পাই অগ্নি ভাইয়া দরজার সামনে দাড়িয়ে ।তার চোখের চাহনীতে স্পষ্ট অনুতাপ ফুটে উঠেছে । তবে কি তিনি সব শুনে ফেলেছেন ?
শুনলে শুনুক তাতে কি ? তার কাছে তো আমি নিকৃষ্ট একজন !
আমি সেখান থেকে দ্রুত চলে যাই।অশান্তি লাগছে । খুব বেশি কষ্ট লাগছে ।
আমি ছাদে ছুটে চলি।ছাদে কাউ নেই।অন্ধকারাচ্ছন্ন চারদিক । ঝড়ো হাওয়া বইছে । আমি ধপ করে মাটিতে বসে পড়ি ।শরীর আর চলছে না । চোখ মুখ ভার হয়ে আসছে । বুক ফেটে কান্না আসছে ।এমন সময় বৃষ্টি শুরু হয় । মুষলধারার জড়ছে । ঝড়ছে তো ঝড়েই চলছে । আমি আসমানের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলি ,
– “মাআয়ায়ায়ায়ায়া কেন আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে গেলে না । কেন একলা ফেলে চলে গেলে ? আমি যে বড্ড অসহায় । আজ তোমারা থাকলে কখন এসব হতো না । আমিও আর পাঁচটা মেয়ের মত হাসতে পারতাম । বলতে পারতাম আমার পরিবার আছে। অন্যের বাড়িতে এভাবে পরে থাকতে হতোনা কথা শুনতে হতোনা । আমার তুলনা পতিতাদের সাথে হতো না।
মা মাগো আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে যাও আমি আর অপমান নিয়ে বাচঁতে পারবো না। আমি প্রতিটা মুহূর্তে ভাঙচি । পারবোনা আর এই অপমান নিয়ে বাচঁতে । প্রত্যেকটা সময় লোভী ছোটলোক ছেলেবাজ শুনতে । আমাকে তোমাদের কাছে নিয়ে নেও । আমি চাইনা আর বাচঁতে।আমাকে নিয়ে নেও ! ”
বলেই চিৎকার করে কান্না করি । বৃষ্টিজল আমার চোখের জলের সাথে মিশে ঝড়ছে । ঝড়ুক না ।
এমনে সময়ই কারো উপস্থিতি টের পেলাম । জানি অগ্নি ভাইয়া এসেছে । এতটুকু তো তাকে চিনেছিই ।
উনি আমার কাঁদে হাত রাখতেই ঝাটকা দিয়ে তার হাত সরিয়ে দেই ।
চিৎকার করে বলি ,
-“কেন এসেছেন ? নতুন করে অপমান করতে ? কথা শুনাতে আমি কতটা নিচ ছোটলোক লোভী ছেলেবাজ তা বলতে ?
নাকি মজা নিতে ? শান্তি লাগছে খুব? শান্তি লাগারই কথা আমাকে ভাঙতে যে দেখছেন ! ”
উনি আমার কথা শুনে আমাকে নিজের দিকে ঘুরাতে নেয় । আমি তার হাত ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলি ,
– “আমার মত নষ্টা মেয়েকে স্পর্শ করবেন না ! তাহলে অপবিত্র হয়ে যাবেন । ”
উনি বোধয় আমার কথায় রেগে যায় । রেগে আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জোর করে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় । আমি কয়েকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু পেরে উঠি না । নিজের শক্তি দিয়ে জোরপূর্বক তার সাথে মিশিয়ে রাখে । আমি একসময় তার শক্তির সাথে না পেরে তার বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কেদে উঠি । ভিতরের সব ভেঙে কান্না আসছে । উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । নিজের অজান্তেই উনার কমোড় চেপে ধরি । শরীর অবশ হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে উনার বুকে আরো হেলে পড়ি । চোখ গুলো বুজে আসছে । নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে । এমন সময়ই উনার একটা কথা কানে ভেসে আসে,
– “স্যরি হুর । আ’ম সো স্যরি ! ”
আমি শুধু তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে নিজের চোখ বুজে তার বুকে ঢলে পড়লাম ।তারপর আর কিচ্ছু মনে নেই ….
#শত ডানার প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ৫
( জানি পার্টটা ছোট হয়েছে । কাল সকালে আর একটা পার্ট দিবো । )
চোখ বন্ধ করেই টের পেলাম কেউ খুব শক্ত করে কমোড় জড়িয়ে ধরে আছে । চোখ খুলে দেখি অগ্নি ভাইয়া আমার কমোড় নিজের দুহাতে জড়িয়ে ধরে আমার পেটে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে । উনার অর্ধেক টা শরীর ফ্লোরে । এসব দেখে আমার মাথা ঘুরানোর উপক্রম ।আমি রুমে কি করে আমি তো কাল রাতে ছাদে ছিলাম । আর উনিই আমার এত কাছে কেন ? উনি কি নিজের ইচ্ছায় আমার কাছে এসেছে ? নাকি ড্রাংক হয়ে এসেছে ? নিজের থেকে তো কাছে আসার কথা না । যেই পরিমাণে ঘৃনা করে বাপরে !
নিশ্চিত ড্রাংক অবস্থায় এসেছে ।
আস্তে আস্তে উঠে বসার চেস্টা করি । কিন্তু বিশেষ কোন লাভ হয় না । সামান্য নড়ার শক্তিটুকু নেই । শরীর টা খুব ব্যথা করছে । মাথাটাও ঝিমঝিম করছে । উফফ ,কি অসয্য যন্ত্রণা !
হ্ঠাৎ আয়নার তাকিয়ে আমার নিজের দিকে খেয়াল গেল ।আমি কুর্তি তে কি করে । হে আল্লাহ্ আমার কাপড় কে পাল্টালো ?
তবে কি কাল রাতে আমাদের মাঝে কিছু হয়েছে ? এসব ভেবেই আমার কান্না আসছে । আমি ফুফিয়ে কান্না করে দেই ।আমার কান্নায় তার ঘুম ভাঙ্গে । আমাকে কান্না করতে দেখে । উনি লাফ দিয়ে উঠে আমার কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করছে ।চিন্তিত হয়ে বললেন ,
– “জ্বর তো নেই । কান্না করছো কেন ? শরীর খুব খারাপ লাগছে কি ? ”
আমি উনার কথায় উনার দিকে অগ্নিদৃস্টিতে তাকিয়ে । আমার কান্না জুড়ে দিলাম । উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে ।হয়তো বুঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে । আমি সেদিকে ধ্যান না দিয়ে কান্না করতে লাগলাম । কিছুতেই নিজের কান্না থামাতে পারছিলাম না । উনিই তো বলেছিলেন আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই । আমাকে নিজের বউ মানে না । তাহলে কেন আমার কাছে আসলো ? আমি তো উনার কাছে যাইনি তবে কেন উনি আমার কাছে আসলো ? এখন আমার কি হবে? এসব ভেবেই আমি আরো জোরে জোরে কান্না দেই !
উনি শীতল গলায় জিগ্যেস করলেন ,
– “কি হয়েছে বলবে কি ? এভাবে কান্না করছো কেন ? ”
উনার কথা শুনে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি । ঝাঝালো গলায় উত্তর দেই ,
– “আমার সব শেষ করে জিগাসা করা হচ্ছে কি হয়েছে ? খুব তো বলেছিলেন আমার স্ত্রী মানেন না হ্যান ত্যান । তাহলে এসব কেন করলেন ? বিয়েটা তো একটা কন্ট্রাক্ট ছিলো বছর পর তো আমাকে ছেড়ে দিবেন ।তাহলে এসবের কি খুব দরকার ছিলো ? আপনার তো কিছু হবে না । আমার উপর তো একটা দাগ লেগে গেল ! ”
উনি দাতেঁ দাতঁ চেপে বললেন,
– “হোয়ার্ট ননস্যান ! মাথা কি পুরোপুরি খারাপ হয়ে গিয়েছে ? ”
– “এখন এমন ভাব করছেন ,যেন ভাজা মাছটা উল্টাতে পারেননা ?
কাল রাতে তো ঠিকই সুযোগের ব্যবহার করেছেন । আমার অজ্ঞান অবস্থার সুযোগ নিয়েছেন ! ”
আমার কথায় উনি ভয়ংকর রেগে যায় ।মূহুর্তেই উনার চোখ মুখ লাল হয়ে যায় । আমার কাছে এসে আমার বাহু ধরে টান দিয়ে খাটের সাথে চেপে ধরে । অটোমেটিক আমার কান্না থেমে যায় ।
উনি আমার চোখে নিজের চোখ রাখলেন । উনার চোখের ক্রুদ্ধ চাহনী আমার চোখের দিকে । আমি উনার ভয়ংকর রাগে দমিয়ে যাই । শুকনো ঢোক গিলি । উনি ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,
– “সব সময় কি তোমার মাথায় এসব চলে ? তোমার কি মনে হয় তোমাকে নিজের করতে আমার তোমার অজ্ঞান অবস্থার সুযোগ নিতে হবে ? না হুর ,আমি চাইলেই তোমাকে এই মুহুর্তে নিজের করতে পারি ।
নিজের নিম্ন চিন্তা ভাবনা নিজের কাছে রাখো । আমার তোমার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই ! ”
কথা শেষ করেই রেগে রুম থেকে চলে গেলো । আমি উনার যাওয়ার দিকে থ মেরে তাকিয়ে রইলাম ।
অগ্নি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হিয়া আপু আমার রুমে আসে।আপুকে দেখে মুখে মলিন হাসি টেনে নিলাম । হিয়া আপু আমার কপালে হাত রেখে শরীরের তাপ চেক করে বললেন ,
– “যাক তাহলে জ্বর ছেড়েছে । জানিস কাল রাতে যখন তোকে অগ্নি ভাইয়ার কোলে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেছি কতটা ভয় পেয়েছিলাম ?
তোকে অজ্ঞান দেখে অগ্নি ভাইয়া কতটা অস্থির হয়ে গিয়েছিল তুই জানিস ?তার উপর আবার জ্বর । আমাকে তাড়াতাড়ি করে তোর কাপড় পাল্টিয়ে দিতে বললেন । এই রাতেই ডক্টর কে আনিয়ে চেকআপ করায় । সারারাত জেগে তোর খেয়াল রাখে ।ভোর রাতের দিকে এসে দেখি জলপট্টি দিচ্ছে !
আহা! কত কষ্টই না তিনি করেছেন । ”
আমি আপুর কথা শুনে থম হয়ে বসে রইলাম । নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে । চিৎকার করে কান্না আসছে ।খুব অনুতাপ হচ্ছে।উনি আমার জন্য এতকিছু করলো আর আমি কিনা তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিলাম ? যা না তাই বলে দিলাম ? ইশশ লোকটা কে এই ভাবে বলা একদম উচিত হয়নি । আমার উনার থেকে ক্ষমা চাইতেই হবে ।
ব্যথিত শরীর নিয়েই ছুটে যাই বাহিরে । পুরোবাড়িতে উনাকে খুঁজি কিন্তু পাই না ।কাউকে জিগাসা করবো ? না থাক । সবাই কি ভাববে ? কিন্তু আমার যে উনার খুব চিন্তা হচ্ছে । মন মানছে না । খুব বেশি অস্তির লাগছে।
যেই পর্যন্ত তার থেকে ক্ষমা না চাইবো মন যে শান্ত হবে না !
তাই সব চিন্তা ভাবনা লাজলজ্জা বাদ দিয়ে হিয়া আপুকে জিগ্যেস করেই ফেললাম ,
– “আপু উনি কই ? ”
আপু হয়তো বুজতে পেড়েছেন । মুখের হাসি চেপে ধরে মজার ছলে বললেন ,
– “কোন উনির কথা বলছিস বলতো ? ”
আমি মাথা নিচু করে লজ্জার স্বরে বললাম,
– “ইয়ে মানে আপু আমি অগ্নি ভাইয়ার কথা বলছিলাম ! ”
আপু কিটকিটে হেসে বললেন ,
– “অগ্নি ভাইয়া ? মানে এখনো ভাইয়া বলবি ? বাচ্চাকাচ্চা হলে কি ডাক শিখাবি মামা ? বাচ্চারা তো কনফিউজড হয়ে যাবে । বাবা বলবে নাকি মামা বলবে ! ”
আপু নিজের কথা শেষ করেই আমার হাসতে লাগে । আমি লজ্জায় বিয়ে বাড়ির লাল নিল মরিচ বাতির মত জ্বলছি । উফফ আপুও না বিয়ের পর একদম লাগামহীন হয়ে গেছে । হুট করে যা নয় তা বলে ফেলে ।আপু হাসি থামিয়ে বললেন,
– “হয়েছে হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না ।তোর উনি বেরিয়েছেন ।যাওয়ার সময় বলেছেন যেন তোর খেয়াল রাখি ।তোকে টাইম মত খাবার আর মেডিসিন দেই । তুই বাহানা করলে যেন জোর করে খাওয়াই । বুঝলি !
এখন যা রুমে গিয়ে বস আমি খাবার নিয়ে আসি । ”
বলেই আপু আপু চলে গেল । আমি বিছানায় উপর দপ করে বসে পড়ি। আচ্ছা এই লোক এমন কেন !
এক রাতেই উনার এত পরিবর্তন ? কি এমন হয়েছে কাল যার জন্য উনি আমার প্রতি হুট করে এত দুর্বল হয়ে পড়লো ? কাল কিছু কি হয়েছে ? কেন উনি আমার এত খেয়াল রাখছে ? উনি তো আমাকে ঘৃনা করে । আর এক বছর পর আমরা আলাদা হয়ে যাবো তাহলে এত কেয়ার কেন করছে ? উফফফ এত প্রশ্ন কোনো উত্তর নেই ।ইদানীং আমার জীবনটা গোলক ধাঁদা হয়ে গেছে যতই উত্তর খুঁজতে যাই সব এলোমেলো হয়ে যায় । আমাকে টেনে এনে সেই একই জায়গায় দাড় করায় ।
মামা দুপুরে বললেন আজ আমরা যাচ্ছিনা।কাল বিকেলে বাড়িতে ফিরবো । এদিকে টিয়া আপু কাল রাতেই রেগে চলে গেছে । যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে আমার যতদিন এই বাড়ির সাথে সম্পর্ক আছে উনি এই বাড়িতে আসবে না ।
সারাদিন কেটে যায় । অগ্নির কোন খোঁজ খবর নেই । কোথায় আছে জানা নেই । আবির ভাইয়া থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন দিয়ে দেখি ফোন সুইচফ । খুব চিন্তা হচ্ছে উনার । রেগে হুট করে মানুষটা কোথায় চলে গেলো? আবার কোন বিপদ হয়নি তো? মন কু ডাকছে । এই অস্তিরতা সয্য হচ্ছেনা ।
বারান্ধায় দাড়িয়ে আছি ।কিছুক্ষন পূর্বেই সূর্য ডুবেছে । সন্ধ্যা হচ্ছে চারদিকে মাত্রই অন্ধকার নামছে । উনার এখনো ফিরার নাম নেই !
এই লোক কি আমাকে চিন্তায় চিন্তায় মেরেই ফেলবে ?
সে কি আদো বুজতে পারছে তার জন্য যে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে !
এমন সময়ই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল । চারদিকে ঘিটঘিটে অন্ধকার।হ্ঠাৎই রুম থেকে দরজা খুলার শব্দ আসে । আপু এসেছে কি ? হতে পারে । আমি এক পা এক পা করে রুমের দিকে এগিয়ে যাই ।অন্ধকার খুব বেশি ভয় করে। ছোট থেকেই অন্ধকারে একদম থাকতে পারিনা ।কেন জানো মনে হয় অন্ধকারে কাল্পনিক দৈত্য আমাকে চেপে ধরে নিজের সাথে পাতাল দেশে নিয়ে যাবে । আমি ভয়ে ভয়ে ধীর স্বরে বলি ,
– “আপু তুমি এসেছো কি ? ”
কিন্তু কোন উত্তর নেই । আমি ঢোক গিলে বললাম ,
– “দেখো আপু মজা করোনা । আমি খুব ভয় পাচ্ছি । ”
কথা বলতে বলতে রুমে ডুকছিলাম ।এমন সময়ই অন্ধকারে কিছুর সাথে আটকে নিচে পড়ে যেতে নেই । হঠাৎ ই কেউ একজন অন্ধকারে আমার কমোড় চেপে ধরে । আমাকে কোলে তুলে নেয় । আমি যেন হাওয়ায় ভাসছি । তবে কাল্পনিক দৈত্য সত্যি সত্যি চলে আসলো? এখন কি আমাকে নিজের সাথে পাতালদেশে নিয়ে যাবে ? আচ্ছা আমাকে আমার এখন কি হবে ! আমি আআয়ায়ায়ায়ায়ায়া করে চিৎকার দেই ।সাথে সাথে আমার মুখ কাল্পনিক দৈত্য চেপে ধরে !
আমার কি হবে ? আচ্ছা ,আমাকে দিয়ে রোস্ট করবে? নাকি রেজালা !
চলবে ……❤️