শত ডানার প্রজাপতি পর্ব -২০+২১

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ২০

আজ ইয়াশা আপুর বিয়ে । মা ঢাকা থেকে ভোর সকালে পৌছিয়েছে ।
নাস্তার টেবিলে মায়ের সাথে দেখা । মাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা অসুস্থ । মাকে জিগ্যেস করলে মা বললেন তেমন কিছুনা কাজের স্ট্রেসে এমন দেখাচ্ছে ।
সবাই বারবার জিগ্যেস করছিলো আমার চোখ মুখ এমন লাল কেন ,কি হয়েছে ? ঠিক মত ঘুম হয়নি । এই বাহানা দিয়ে সবাইকে কাটিয়ে দেই । সকালের নাস্তার টেবিলে অগ্নিকে দেখা যায় না । আমিও কোনো খোঁজ নেই না । আর নিবোই বা কেন ? সে আমার কে হয় ?
দুপুরের মেকআপ আর্টিস্টরা বাড়িতে আসেন । বাড়ির সব মেয়েরা সাজগোজ করছে । মা আমাকে আর আপুকে জোড় করে পাঠালেন । মায়ের সামনে আমার কোনো বাহানা কাজ করলো না । অবশেষে ইচ্ছা না থাকার শর্তেও সাজতে হয় । ব্লাশ পিংক কালারের গ্রাউন পরে ভারী মেকআপ করে কার্টুন সেজে দাড়িয়ে আছি ভ্যানুর এক কর্নারে । সবাই বার বার একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে । অগ্নি কোথায় ? অগ্নি কোথায় ? প্রত্যেক বারই মৌন থেকেছি । সবসময় মৌনতা মানে সম্মতি নয় । কখনো কখনো মৌনতা মানে “জানিনা “ও হয় ।
মা অগ্নির জন্য খুব টেনশন করছেন । যদিও আমার অগ্নিকে নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই । কিন্তু মায়ের চিন্তিত চেহারা দেখে দোয়া করছি যেন সহিসালামতে বাড়ি ফিরে আসে । আমার দোয়া খুব তাড়াতাড়ি ই কবুল হলো । দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখি অগ্নি কাচের দরজার বাহিরে দাড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে । কালো স্যুটে এসেছে ।চুল গুলো স্টাইল করে ব্রাশ করা । চোখে সানগ্লাস ।অন্যসময় হলে হয়তো আমি উনার এই চার্মিং লুকের উপর গলে যেতাম কিন্তু এই মুহূর্তে আমার উনাকে জাস্ট অসয্য লাগছে । আজ সকালের পর তো উনার চেহারা দেখাটাও আমার জন্য জুলুম হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আমি আর উনার পিছু নিবো না । আমি আর কষ্ট পাবো না । কোনো একজনের জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না । আমি আগের মত হাসবো ,খেলবো ,গাইবো । কিন্তু বুকের কোথাও সেই ক্ষতটা ছেদ করে উঠে । আমি উনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই ।
আপুর পাশে যেয়ে বসি । আপু আয়েশ করে আইসক্রিম খাচ্ছে । এই পর্যন্ত দুটো হয়ে গেছে । তিন নাম্বারটা চলছে । আপু আর দিকে একটা আইসক্রিম এগিয়ে বললেন ,

– “এই নে এটা খেয়ে মাথা ঠান্ডা কর ! ”

আমি আপুর কথায় ভ্রু কুঁচকিয়ে বলি,

-“কই আপু আমার মাথা তো ঠান্ডাই আছে । ”

– “তাই বুঝি ? চেহারায় এমন রাগী ভাব কেন ? এই যে বোচা নাকটাও ফুলিয়ে রেখেছিস ! ”

আপুর সাথে ছোট থেকেই আমার হার্ট টু হার্ট কানেকশন রয়েছে । জানিনা কিভাবে আমার মন খারাপ থাকলে ঠিক টের পেয়ে যায় । আপুর কথাকে এড়ানোর জন্য কৃত্রিম হেসে বললাম,

– “আজ আমার নাকটা বোচা বলে এই ভাবে আমার মজা নিচ্ছো আপু ? নট ফেয়ার আপু !
তুমি জানো না ? ইফ ইউর নোস ইজ বোচা দেন ইউ আর সুন্দরী ! ”

– “আচ্ছা শুনি কোন বইয়ে লিখা আছে ? ”

– “ওহ আপু এটা ও জানো না ? ফেসবুকে ! ”

আপু আমার কান টেনে দিয়ে বললেন ,

– “আচ্ছা বড় বোনের সাথে দুষ্টামি করা হচ্ছে ? তাই না দাড়া মজা বুঝাচ্ছি ফাজিল মেয়ে । ”

আমি আপু থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করতে করতে বলি ,

– “ও আপু স্যরি আর করবো না ।

আপু আমার কান ছেড়ে বললেন ,

– “হুম এবার বল কি হয়েছে ? একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবি না । আমি জানি তুই কোনো কিছু নিয়ে আপসেট । ”

আমি আপুকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম ,

– “না আপুনি তেমন কিছুনা ।”

– “পাক্কা ? ”

– “একদম ”

আপুর বোধহয় আমার কথায় খুব একটা বিশ্বাস হয়নি ।সন্দিহান চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । কিছু মুখে কিছু বললো না । আপু আর আমি গল্প করছিলাম । হঠাৎ ই আবির ভাইয়া সামনে এসে আপুর দিকে তাকিয়ে অবাক চোখে বললেন ,

– “হায় মাবুদ ‌ ! হিয়া তুমি এখানো আইসক্রিম খাচ্ছো ? ”

আপু ছোট ছোট চোখ করে হাসির রেখা টেনে বললেন ,

– “মাত্রই তো দুটা খেয়েছি । ”

ভাইয়া আপুর হাত থেকে আইসক্রিম টেনে ফেলে দিয়ে বললেন ,

– “গলা বসে যাবে । এক সাপ্তাহের জন্য আইসক্রিম টোটালি অফ । ”

আপু বাচ্চাদের মত কাদো কাদো চেহারা করে বললেন,

– “আবির এটা ঠিক করছো না । ”

ভাইয়া দাঁত দেখিয়ে হেসে বললেন ,

– “এটাই ঠিক । ”

আপু কাদো কাদো চেহারা করে আমার দিকে তাকিয়ে অভিযোগ করলেন,

-“দেখ না হুর তোর ভাইয়া আমাকে আইসক্রিম খেতে দিচ্ছে না । এটা কি ঠিক করছে ? বল ? ”

আমি ভাইয়ার পাশে দাড়িয়ে দাঁত বের করে হেসে বললাম,

– “একদম ঠিক ! আপু আমি তো ভাইয়ার পক্ষে । তোমার অভিযোগ গ্রান্টেড না । আমি চাই না আমার সুইট আপু আর আমার ভবিষ্যৎ ভাগ্নেভাগ্নির কোনো ক্ষতি হোক । ”

আপু মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় আমি আর আবির ভাইয়া আপুর গোমড়া চেহারা দেখে হাসছি । হঠাৎ আবির ভাইয়া অগ্নিকে এদিকে ডাকে । অগ্নিকে দেখেই মুখের হাসি গায়েব হয়ে যায় । আমি অন্যদিকে তাকাই । অগ্নি আমার দিকে একবারের জন্য তাকাচ্ছে না । হয়তো লজ্জা আর অপরাদবোধ উনার মাঝে কাজ করছে । আমিও উনার সামনে বেশি সময় উনার সামনে দাড়ালাম না । কোনো এক বাহানা দিয়ে চলে আসলাম । সত্যি বলতে উনার সামনে দাড়িয়ে থাকার মত সাহস আর শক্তি আমার মাঝে নাই ।

____________________________

গতকাল ইয়াশা আপুর রিসেপশন শেষ হয়েছে ।তাই আজ সকাল সকাল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি । নানুজান খুব করে বলছিলো আর কয়েকটা দিন থাকতে । কোনো রকম নানুজানকে বুঝিয়ে ভুলিয়ে এসেছি । এখানে থাকার মত আমার কোনো ইচ্ছে নেই । বারবার অগ্নির সম্মখীন হতে হয় । যা আমার একদম ভালো লাগছে না ।
অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা । ঢাকায় ফিরবো ভার্সিটি ক্লাস সবকিছু তে ব্যস্ত হয়ে পড়বো কোনো রকম আজে বাজে চিন্তা মাথায় আসবে না। আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হবে । অগ্নিকে ভুলতে সুবিধা হবে !
এগুলো ভেবেই এক দীর্ঘতম নিশ্বাস নেই ।

মা ফ্লাইটে ঢাকায় ব্যাক করেছে । আর আমরা গাড়ি তে রওনা দিয়েছি ।
গাড়ি তে ইচ্ছে করে আপুর সাথে পিছনে বসেছি । আবির ভাইয়া আর অগ্নি সামনে বসেছে । পিছনে বসার জন্য বাহানা দেখিয়েছি শরীর খারাপ । আপুও আপত্তি করেনি । আজ কাল খুব বাহানাবাজ হয়ে গেছি । সবাইকে এটা ওটা বাহানায় কাটিয়ে দেই । আমার জীবনটাই কেমন জানো রঙ হীন সাদা কালো হয়ে গেছে । চারদিকে শুধু বিষাদগ্রস্ত আধারময় ।
সত্যি চিটাগাং আমার জীবনে নতুন মোড় নিয়ে এসেছে । এখানে আসার আগে একবুক আশা নিয়ে এসেছিলাম । ভালোবাসা নিয়ে এসেছিলাম ।আর ফিরছি ভাঙা হৃদয় আর অজস্র কষ্ট নিয়ে । নিজের জীবনের দিকে তাকালে তাচ্ছিল্যের হাসি আসে ।

বাড়িতে ফিরতে রাত আটটা বেজে যায় । রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বেডে নিজের গা এলিয়ে দেই । বড্ড ক্লান্ত লাগছে । কিছুসময় পর রুমে কারো আসার শব্দ পাই । আমি জানি অগ্নি এসেছে । ইচ্ছে করে চোখ বুঝে রাখি ।উনি ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায় ।এই সুযোগে আমি তাড়াতাড়ি করে সোফায় নিজের বিছানা পেতে নেই । নানুজানের পড়ানো বালা জোড়া আর নোস পিন কাঠের বাক্সে রেখে । বিছানার পাশে ছোট টেবিলে উপর রাখি । অগ্নি আসার আগেই তাড়াতাড়ি করে লাইট অফ করে সোফায় শুয়ে পড়ি ।
এসব কেন করছি ? রাগে ? ভয়ে ?
উহু ,এই দুটোর একটাও না । এসব আমি চক্ষু লজ্জায় করছি । একজন মানুষের নৈতিকতার অনেকটা অংশ জুড়ে আছে চক্ষু লজ্জা । এই চক্ষু লজ্জা মানুষকে যেমন অন্যায় করতে বাঁধা দেয় ।তেমনি মনের বিভিন্ন দ্বিধাদ্বন্দ্বতে ফেলে ।
অগ্নির নামের কোনো জিনিস আমার চাইনা । আর না চাই অগ্নির নামের সাথে জুড়ে থাকতে । উনার সাথে চোখাচোখি হয়ে আমি চক্ষুলজ্জায় পড়তে চাই না ।
বেশ কিছুসময় পর ওয়াশরুমের দরজা খুলার শব্দ কানে আসে । আমি আরো শক্ত করে চোখ চেপে থাকি । উনি রুমে এসে বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বললেন ,

– “তোমার সোফায় ঘুমাতে হবেনা তুমি বেডে ঘুমাও । আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি । ”

আচ্ছা উনি কি করে জানলো আমি এখনো জেগে আছি ? অগ্নির কথায় আমি কোনো উত্তর দেই না ।অগ্নি আরো কিছুক্ষণ আমার দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে থাকে । আমার কোনো জবাব না পেয়ে । উনি বিছানার দিকে এগিয়ে যায় ।কিছুক্ষণ পর ঝাঁঝালো গলায় বললেন ,

– “এটা কি ? এগুলো নানুজান তোমাকে দিয়েছিলো । এগুলো খুলে এখানে কেন রেখেছো ? ”

আমি এবারো কোনো উত্তর দেই না । উনি কিছুক্ষণ আমার উত্তরের আশা করে । কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে রাগী গলায় বললেন ,

– “আমি কিছু জিগ্যেস করছি হুর ! ”

– “হুরররর ! আই ওয়ান্ট এন্সার । ”

আমি চোখ খুলে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দেই ,

– “এগুলো নানুজান তার নাতবউয়ের জন্য রেখেছে । যা আমি না । এগুলো আমাকে বার বার স্বরণ করিয়ে দেয় আমি নানুজানকে ঠকাচ্ছি । তাই আমি গহনা ফিরিয়ে দিচ্ছি । এতো বোজ আমি রাখতে পারবো না । ”

উনি রেগে বললেন ,

– “এগুলো কি আমি পড়বো ? ”

– “আপনি পড়বেন নাকি আপনার ভবিষ্যৎ স্ত্রী কে দিবেন সেটা আপনার একান্ত নিজেস্ব ব্যাপার । ”

অন্যদিকে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে নেই । কিছুক্ষন পর বিকট এক আওয়াজ কানে আসে । উনি কি গহনার বক্স মাটিতে আছাড় মেরেছে ? মারুক তাতে আমার কি ? উনার যা ইচ্ছে করুক আমার উনাকে নিয়ে কোনো প্রকার মাথা ব্যথা নেই ।

________________________

অগ্নির ঘুম ভাঙার আগেই ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নেই । বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মায়ের সামনে পড়ি । মায়ের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মখীন হতে হয় । মাকে মিথ্যা বললাম যে আমার আজ একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে।ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে । মাও আর বাধা দিলো না ।
ভার্সিটি তে পৌছাই নয়টায় । এখনো ক্লাস শুরু হতে আরো দুই ঘন্টা বাকি । এতো সময় একা বসে কি করবো ?
আচমকাই মাথায় এক বুদ্ধি আটকে । দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে শেফা কে আসতে বলি ।শেফার বাড়ি ভার্সিটির পাশে হওয়ায় সে বিশ মিনিটে চলে আসে । আমাকে দেখতেই হুট করে মাঠে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে । এই মেয়ের এটা অনেক আগের অভ্যাস । আমাকে যেখানে দেখবে এভাবে জড়িয়ে ধরবে ।দুজন ক্যান্টিনের দিকে যাই।সেখানে হাউসফুল ।ক্যাম্পাসের ছেলেদের আড্ডা । তাই বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয় । দুজন লাইব্রেরি দিকে যাই । পুরো লাইব্রেরি ফাঁকা । কেউ নেই । আমি আর শেফা এক কোনায় বসে পড়ি । দুজন এটা ঐটা বিভিন্ন আলাপ করি । কয়েকদিন দেখা হয়নি শেফার সাথে কিন্তু মনে হচ্ছে কত কাল পর দেখা হচ্ছে । হঠাৎ শেফার ফোনটা বাজে । ফোন হাতে নিয়ে চেক করতেই শেফা লাফিয়ে উঠে । উল্লাসিত স্বরে বলছে ,

– “উফফফ বেঁচে আছে ,বেঁচে আছে ! ”

লাইব্রেরিয়ান ধমকের স্বরে চুপ করতে বললেন । শেফা চুপ হয়ে যায় । আমি চাপা ধমকের স্বরে শেফাকে বললাম ,

– “কি হয়েছে এমন ইঁদুরের মত চেঁ চেঁ কেন করছিস ? কে বেঁচে আছে ? ”

– “আরে ইয়ার আর বলিসনা এক পাগলের সাথে রিলেশনে আছি । কথায় কথায় শুধু সুইসাইডের হুমকি দেয় । কাল রাতে ফোন রিসিভ করতে লেট হয়েছে বলে হুমকি দিয়েছিলো । তারপর আর মেসেঞ্জারে দেখা যায় না । তাই ভয়ে ছিলাম যদি সত্যি সত্যি সুসাইড করে নেয় !
এখন দেখি আবার মেসেজ দিয়েছে । তার মানে বেঁচে আছে । যাক বাবা টেনশন থেকে মুক্তি পেলাম । ”

– “এটা তোর কয় নাম্বার বয়ফ্রেন্ড যেন ? ”

– “ওয়েট গুনে বলছি । উমমমম ! এক ,দুই ,চার পাঁচ ।ও হে পাঁচ নাম্বার । পাঁচ নাম্বার বয়ফ্রেন্ড । ”

– “লাইক সিরিয়াসলি ? কেমনে পারিস তুই এসব ? মানে কেমনে বল একবার ! ”

– “ট্যালেন্ট বুঝলি ট্যালেন্ট । যা সবার ভিতর নেই । ”

– “আহায়য় ! ট্যালেন্ট ? কারো মন নিয়ে খেলা ট্যালেন্ট ? ”

– “চিল ইয়ার এতো সিরিয়াস হচ্ছিস কেন ? তারাও মন প্রাণ দিয়ে কাউকে ভালোবাসেনা । টাইম পাস ই করে আমার মত । ”

– “এর জন্যই এবার সাইকোর পাল্লায় পড়েছিস । কথায় আছেনা চোরের দশ দিন গৃ্হস্থের একদিন । ”

– “প্লিজ তুই তো এভাবে বলিস না। আমাকে বুঝার মত তুই ছাড়া কে আছে বল ? ”

– “হয়েছে আর বাটার লাগাতে হবে না । যা ক্যান্টিন থেকে কফি নিয়ে আয়। মাথাটা খুব ধরছে । ”

– “আচ্ছা যাচ্ছি মেডাম । ”

শেফা কথা শেষ করে কফি আনতে যায় । আমি মন দিয়ে নোট তৈরি করছি ।কিছুসময় পর কেউ আমার সামনে এসে বসে । আমি মাথা নিচু করে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি অগ্নি । খুব রেগে আছে । রাগে নাক ফুলছে।বার বার হাত কচলাচ্ছে । আমি দেখেও না দেখার ভান করে বসে রইলাম । অগ্নি গম্ভীর গলায় বললেন,

– “লাইব্রেরি তে ইম্পরট্যান্ট ক্লাস হচ্ছে ? টিচার কই ? দেখছি না তো । ”

আমি জানি উনি রাগে আর ক্ষোভে এসব বলছে । আমি চুপ করে আছি । উনি আবার বললেন ,

– “আমার সাথে ভার্সিটি তে আসলে আমি নিশ্চিত তোমাকে গুম করে ফেলতাম না !
এসবের কারণ কি ? ”

আমি এবারো চুপ । উনি টেবিলে জোড়ে বারি মেরে বললেন ,

– “কথা কানে যাচ্ছেনা ? আমি জানতে চাইছি এসবের কারণ কি ? ”

আমি খাতার দিকে চোখ রেখে শান্ত স্বরে বললাম ,

– “সকাল সকাল আপনার মুখ দর্শনের আমার কোনো ইচ্ছে নেই । আর তাছাড়া কন্ট্রাক্ট পেপারসে এমন কোনো শর্ত ছিলো না । তো আমি সবকিছুতে আপনাকে কৈফিয়ত দিতেও বাধ্য নই । ”

উনি বেশ কিছুক্ষণ শান্ত থেকে হুট করে আমার সামনের সব বই খাতা টেবিল থেকে ফেলে দেয় । আমার খুব রাগ উঠে। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রাখলাম । বই খাতা গুলো তুলে গুছিয়ে খুব স্বাভাবিক স্বরে বললাম,

– “আপনার মত অসভ্য লোক থেকে এরচেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না । ”

কথাটা শেষ করে এক সেকেন্ড ও সেখানে দাড়াই না । দ্রুত পায়ে চলে আসি । উনার সাথে ঝামেলা করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই ।
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ২১

চরম বিরক্তি নিয়ে শেফার দিকে তাকিয়ে আছি । শেফা আমার সামনে মুখ ছোট করে দাড়িয়ে আছে ।চিন্তিত গলায় বললাম,

– “তুই এমন কি করে করতে পারিস ? আমাকে না জিগ্যেস করে তুই কালচারাল প্রোগ্রামের জন্য আমার নাম দিয়ে দিলি ? হাউ ক্যান ইউ ডু দ্যাট ? ”

শেফা আমতা আমতা করে বলল,

– “স্কুল কলেজে সবসময় কালচারাল প্রোগ্রমে পার্টিসিপেট করতি । তুই ঢাকায় ছিলিনা তাই আমিই নাম দিয়েছি । তাতে কি এমন হয়েছে বলতো ! ”

– “শেফা স্কুল কলেজের ব্যাপার আলাদা । তখনকার আর এখনকার পরিস্থির মাঝে আসমান জমিন তফাত । তাছাড়া আমার গান গাওয়া থেকে মন উঠে গেছে । তুই তো সবটা জানিস ! ”

– “স্যরি ইয়ার ! বাট একটা ব্যাপার নিয়ে আর কত দিন নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখবি ? দোষ ঐ লোকের ছিলো তোর না । আর কতদিন নিজেকে এভাবে সবকিছু থেকে দূরে রাখবি ? ”

– “যাই হোক আমি পারবো না । যতবার গান গাইতে যাই ঐ লোকের প্রত্যেকটা কথা আমার কানে বাজে উনার মিথ্যা স্বপ্ন চোখে ভাসে বারবার মনে করিয়ে দেয় আমি কত বড় বোকা ছিলাম ।আমি পারবো না গাইতে । এখনি আমার নাম তালিকা থেকে কাটবো । ”

শেফাকে আর কিছুবলার সুযোগ না দিয়ে নাম কাটাতে চলে যাই । সেখানে যেতেই আমার চোখ কপালে উঠে যায় । নিহা রিহার্সাল রুমে । আর সবাই অডিশন তার কাছেই দিচ্ছে । নিশ্চিত কোনো ঝামেলা করবে । আমার ভাবতে দেরী কিন্তু শয়তানের ডাক পড়তে দেরী না । নিহা আমাকে ডাকছে । ইচ্ছা না থাকার পরও যেতে হলো । এই মুহূর্তে কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চাইছিনা । আমি চুপাচাপ দাড়িয়ে আছি । নিহা তার হাতের পেপারস গুলো চেক করে ভেঙাত গলায় বলল,

– “ওহ বেহেনজি ? তুমি গান গাইবে ? গান পারো নাকি এখানে ছেলে দেখতে এসেছো ? ”

আমার ভয়ংকর রকম রাগ হচ্ছে । কিন্তু নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে খুব স্বাভাবিক গলায় বললাম ,

– “আমি আমার নাম কাটাতে এসেছি । তালিকা থেকে আমার নামটা কেটে দিন প্লিজ । ”

নিহা আমার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন,

– “কেন ভয় পাচ্ছো বুঝি ? অবশ্য তোমারদের মত ছোট লোকদের কাছে তো একটা ট্যালেন্টই আছে নিজের শরীর প্রদর্শন করে ছেলে ফাসানো । যেমন করে অগ্নি কে ফাসিয়েছো । কি ভেবেছিলে মানুষ অন্ধ ? তাদের চোখে কিছু পরে না ? অগ্নির সাথে গাড়ি দিয়ে চলাচল করা ,এক সাথে ফাংশন এটেন্ড করা এসব কেউ দেখে না ? যাই বলো বেহেনজি মানতে হবে ছেলে ফাসানোর ভালো ট্যালেন্ট আছে । না হয় অগ্নির মত ছেলেকে কি করে পটাতে পারতে? ”

এতো সময় নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেও এখন আর পারলাম না । মুখে কৃত্রিম হাসি এনে বললাম ,

– “কেন আপনার কি আফসোস হচ্ছে ? আপনি পটাতে পারেননি বলে ।আপনার উপর মাঝে মাঝে খুব দয়া হয় এতো কিছু করেও আপনি অগ্নির মন জয় করতে পারেননি । আপনার দিকে তাকায় না পর্যন্ত । ছিঃ কি লজ্জা ! ”

– “ইউ ইডিয়েট ! ”

বলেই আমার উপর হাত তুলতে চাইলো । আমি হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে তার হাত মোচড় দিয়ে ধরে বলি ,

– “আপনার হাতটা একটু বেশি নড়ে । নিজের হাত ঠিক ভাবে রাখতে শিখেন । না হয় হাত ভেঙে দিতে আমি ভাববো না । ”

বলেই নিহার হাত ছেড়ে দিলাম । নিহা টেবিলের উপরে পরে । এমন সময়ই অগ্নি রিহার্সাল রুমে প্রবেশ করে । নিহার এই অবস্থা দেখে সবার দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বললেন ,

– “এখানে কি হচ্ছে ? ”

সবাই চুপ । অগ্নি আমার চিৎকার করে ধমক দিয়ে বললেন ,

– “আমি জিগ্যেস করেছি এখানে কি হয়েছে ? ”

নিহা ন্যাকা কান্না করতে করতে বলল ,

– “দেখ অগ্নি এই মেয়ে কি অসভ্য । সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করছে । আমাকে শুধু ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে । ‘আউচ’ হাত খুব ব্যথা করছে । ”

আমি নিহার কথা শুনে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায় । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নিহা বলল ,

– “আমি শুধু অডিশনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বলেছিলাম । তাই রেগে এসব করলো । সে নাকি রুলস মানবে না । আবার বলে ,আমি কে জানো ? আমি অগ্নির খুব কাছের ! আমার জন্য কোনো রুলস নেই । ”

অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে শান্ত স্বরে বললেন,

– “আজ কাল সিনিয়রদের সম্মান করা বোধহয় ভুলে গেছেন ? কখনো অপমান করছেন ,কখনো মারছেন !
ভার্সিটি তে এসে এসব শিক্ষা পাচ্ছেন ? ”

আমি কিছু বললাম না । আমি জানি উনি সকালের কথা গুলোকে ইঙ্গিত করছে । উনাকে অপমান করায় এখনো রেগে আছে ।
উনি আমার দিকে খুব সুক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে । আমি চুপ । আমি জানি আমি কিছু বললেও উনি এই মুহূর্তে শুনবে না । অগ্নি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,

– “তুমি কালচারাল প্রোগ্রামে পার্টিসিপেট করবে না । ”

– “আমি পার্টিসিপেট করবো ”

– “আমি না বলেছি তো তুমি করবে না ”

আমি উনার কথায় উনার দিকে ছোট ছোট সন্দিহান চোখে তাকাই । উনি এতো কিছু রেখে আমার পার্টিসিপেট করার পিছনে কেন লেগেছে ? কি চায় উনি ? তা জানার জন্য আগুনে একটু ঘি ঢেলে দেই । বললাম,

– “কেন আমি করবো না অবশ্যই করবো । আপনার কোনো সমস্যা ? ”

উনি রেগে বললেন ,

– “হ্যা আমার সমস্যা আছে ।স্টেজে এতো গুলো মানুষ হা করে তাকিয়ে থাকবে সবার সামনে ড্যাং ড্যাং করে গান গাইবে তা হবে না ।তুমি গান গাইবে না মানে না । ”

– “আমি গান গাইবো একশো বার গাইবো । এতো ক্ষন ভেবেছিলাম গাইবো না কিন্তু এখন যেহেতু আপনার সমস্যা হচ্ছে তো আমি গান গাইবো ই গাইবো । ”

উনি রেগে বাঁকা হেসে বললেন ,

– “আমি অডিশন নিচ্ছি আমি সিলেক্ট না করলে তুমি কি করে পার্টিসিপেট করবে ! ”

আমি কৃত্রিম হেসে বললাম,

– “তাই বুঝি? আমি আদ্রিতা ম্যামের কাছে কমপ্লেইন করবো যে আপনি ইচ্ছে করে আমাকে সিলেক্ট করেননি । ”

উনি আর কোনো কথা বললেন না । রেগে নাক ফুলিয়ে চলে যায় । আর আমার অডিশন ও নেন না ।আমি জানতাম উনাকে মায়ের কথা বললে উনি আর কথা বাড়াবেন না। আমার ট্রিক কাজে লেগেছে । আমি এখন থেকে তাই করবো যা উনার অপছন্দ । ছেলেরা দেখবে বলে উনি আমাকে গান গাইতে না করছে তাই না ? আমি এখন তাই করবো । উনার কথায় আমি কেন চলবো ? কিসের এতো অধিকারবোধ ? যেই সম্পর্কই উনি মানে না সেই সম্পর্ক নিয়ে উনার এতো কেন মাথা ব্যথা ?

রিহার্সালের ঘটনার পর তিন চারদিন চলে যায় । আমার আর অগ্নি মাঝে এর পর আর কোনো কথা হয় না। একি বাড়িতে একি ছাদের নিচে দুজন অপরিচীতদের মত থাকি । না কোনো কথা না কোনো নৈকট্য । দুজনের মাঝে শুধুই পিনপতন নীরবতা কাজ করে ।আমি বরাবরের মতই অগ্নিকে ইগনোর করি । দুজনের খুব কম চোখাচোখি হয় ।
উনি ঘুম থেকে উঠার আগেই ভার্সিটি তে চলে যাই । আর ফিরার সময় রিহার্সাল শেষ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসি । রিহার্সালের সময় ও লুকিয়ে চলে আসি । কোনো ভাবেই এই লোকের মুখোমুখি আমি হতে চাই না ।

___________________________

আজ রিহার্সাল শেষ হতে অনেক দেরী হয়ে গেছে । শেফাও অপেক্ষা করতে না পেরে চলে গেছে । আমি ভার্সিটির গেটে আসতেই দেখি উৎস ভাইয়া দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখেই আমার দিকে এগিয়ে আসে । এক গাল হাসি নিয়ে । আমিও সৌজন্য মূলক হাসি দিলাম । উৎস ভাইয়া আমার সামনে এসে বললেন,

– “কেমন আছো হুর পরী ? ”

আমি মুচকি হেসে বললাম ,

– “আবার নতুন নাম ! ”

উনি নিচের দিকে তাকিয়ে আলতো স্বরে বললেন ,

– “এখন তুমি মানুষটাই এমন যে তোমার প্রতি রুপ নতুন নতুন নামের সন্ধান দেয় । ”

আমি মুচকি হাসলাম । উৎস ভাইয়া আবার বললেন ,

– “বললে না ,কেমন আছো? ”

– “জি ভাইয়া ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন? ”

– “হুম ভালো। তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো । যদি তোমার সমস্যা না হয় তাহলে কোথাও বসি ! ”

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হ্যা বোধক মাথা নাড়ালাম ।উনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ইম্পরট্যান্ট কিছু । উনার সাথে ভার্সিটির পাশে রেড রোজ ক্যাফে তে বসি ।উনি কফি অর্ডার করলেন । দুজনের মাঝে নীরবতা কাজ করছে । নীরবতা ভেঙে উৎস ভাইয়া বললেন,

– “হুর আমার জীবনে তোমার কতটা ইম্পরট্যান্টস তুমি হয়তো জানোনা । আমার জীবনের প্রথম প্রেম ছিলে তুমি আর হয়তো শেষও । ”

উৎস ভাইয়ার কথায় আমি কিছুটা নোড়ে বসি । সংকোচিত স্বরে বললাম ,

– “কিন্তু ভাইয়া এখন এসব কথা…..মানে আরকি …

আমাকে থামিয়ে উৎস ভাইয়া বললেন ,

– “আমি এখন এসব কেন বলছি তাই ভাবছো তো ? এসবের দরকার আছে হুর । আমি এখন যা বলবো তার জন্য এসব কথার প্রয়োজন আছে হুর । তোমার সবটা জানার অধিকার আছে । আমি তোমার এই অবস্থা মেনে নিতে পারছিনা ”

উৎস ভাইয়ার কথায় আমার মনে ভয় চেপে ধরে । উৎস ভাইয়া কি আমার আর অগ্নির ব্যাপারে সবটা জেনে গেছেন? যদি মামাকে জানিয়ে দেয় ? না না আমাকে যে করেই হোক সবটা সামলিয়ে নিতে হবে । উৎস ভাইয়াকে বুঝাতে হবে ।

চলবে…❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন 😊😊😊 ।
চলবে…❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন ।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টি তে দেখবেন 😊😊😊।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here