শত ডানার প্রজাপতি পর্ব -৩২+৩৩+৩৪+৩৫

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩২

গালে হাত দিয়ে আশে পাশে চোখ বোলাচ্ছি । শেফা তানবীর ভাই চুটিয়ে প্রেম করছে।আশেপাশে সবাই যে যার মত ব্যস্ত । একমাত্র আমিই বোর হচ্ছি । কারণ সামনে রাক্ষসরাজ বসে আছে । মুখ খুললেই এই মুহূর্তে ঝগড়া শুরু হবে । যা যুদ্ধের রূপ নিবে । যা করে আমি এই সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করতে চাই না । আমি চুপ করে বসে আছি ।অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে গান ধরলেন ,

“বন্ধুর দুইটা চোখ ,আরে বন্ধুর দুইটা চোখখখ ”

বন্ধুর দুইটা চোখ যেন দুই নালা বন্ধুক ”

“আরে গুল্লি পাইরা ”

ডিস্কাও~~~~ডিস্কাও

আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছি ।এই মুহূর্তে আমার উনাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে । জাস্ট খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে । আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলি ,

– “এই সব কোন ধরনের অসভ্যতা ? কি সব গান গাইছেন? ”

– “এখানে অসভ্যতার কি আছে? আর আমি বললেই অসভ্যতা তুমি বললে কিছু না? ”

আমি তোতলাতে তোতলাতে বলি ,

– “আমি কবে এই গান বললাম? আপনি কেন মিথ্যা বলছেন? ”

– “ভুলে গেছ সুন্দরী ? ওই যে ইয়াশার হলুদের রাতে । যেদিন আমাদের মধ্যে…

উনি আর কিছু বলার আগে আমি উনার মুখে হাত দিয়ে আটকাই । বাপরে যা লোক । এখনি সবার সামনে হাড়ি ভেঙে দিতো । আমি গোল গোল চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।রেগে চাপা স্বরে বলি,

– “আপনি কি নিয়ত করেই এসেছেন আমার সাথে শুধু ঝগড়া করবেন? আমার সাথে ঝগড়া হয়েছে বলে এই ভাবে পাবলিক প্লেসে আপনি আমার মানসম্মানের বারোটা বাজাবেন ? ”

অগ্নি আমার হাতের তালুতে চুমু খায় । আমি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাত সরিয়ে ফেলি । অগ্নি টেডি হাসি দিয়ে বললেন ,

– “আমি তো চাই ই তোমার সাথে একটু রোমান্টিক কথা বলতে ,একান্ত কিছু সময় কাটাতে । কিন্তু তুমি ,সেই সুযোগ দেও কই ? আমি সামনে থাকলেই পেঁচীর মত মুখ করে রাখো । তাই ভাবলাম তুমি ভালোয় ভালোয় কথা বলবে না । তাই একটু ঝগড়াই করা যাক । ”

– “আমি পেঁচি ? আমি? আর আপনি কি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা ! ”

– “দেখেছো! এই যে তুমি আবার ঝগড়া শুরু করে দিয়েছো । ”

– “আমি আর কোনো কথাই বলবো না !”

বলেই মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখলাম ।এমন সময় হাতে অগ্নির হাতের উষ্ণ স্পর্শ পেলাম । এই স্পর্শটা অন্যরকম একদম আলাদা । আমি মুখ ঘুরিয়ে অগ্নির দিকে তাকালাম । অগ্নির চেহারাটা কেমন যেন মলিন হয়ে আছে।ঠোঁটে মলিন হাসি । এই হাসিটা তেই আমার সব রাগ হাওয়া হয়ে যায় ।অগ্নি মৃদু স্বরে বললেন,

– “আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি । তোমার সাথে অন্যায় করেছি ।তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি । অনেক কাঁদিয়েছি । তার জন্য সারাজীবন ক্ষমা চাইলেও কম হবে । সবকিছু ভুলে আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না ? সারাজীবন তোমাকে আগলিয়ে রাখবো । এতোটা ভালোবাসবো যে দুনিয়ার সব সুখ তোমার পায়ের কাছে এনে দিবো ! ”

আমি চোখ নামিয়ে বলি ,

– “আমার কিছুসময়ের প্রয়োজন ”

– “টেক ইউর টাইম । আমি তোমার উপর কোনো চাপ দিচ্ছিনা । তোমার যতসময় প্রয়োজন তুমি নেও কিন্তু সবশেষে উত্তরটা যেন আমার পক্ষেই হয়।আমি কোনো ভাবেই হারাতে পারবো না । আমি তোমার সাথে সব নতুন করে শুরু করতে চাই । তোমার প্রেমিক হতে যাই । মারাত্মক ভাবে আবারো তোমাতে আসক্ত হতে চাই ! ”

আমি চোখ উঠিয়ে প্রশ্ন করি ,

– “আবারো মানে ”

অগ্নি মুচকি হেসে উত্তর দেয় ,

– “তোমাকে যতবার দেখি নতুন ভাবে নতুন করে প্রেমে পড়ি ।তোমার প্রত্যেকটা রুপ মুগ্ধ করা ,পাগলপারা করে দেয় । এই দেখ আজ কালো পড়েছো । কালো সাধারণ শোকের চিহ্ন হয় । কিন্তু আমার কাছে এই কালো রং ও আজ প্রেমের রঙ মনে হচ্ছে ।তুমি জানো তোমার এই কানের ঝুমকাটাকে আমার কত হিংসে হয় ? কিছুক্ষণ পর পরই তোমার সুন্দর ঘাড়টা ছুঁয়ে দিচ্ছে । আর আমার মন উতলা করে দিচ্ছে । এই যে তোমার খোলা চুল আমার হার্টবিট বাড়াচ্ছে তা কি তুমি বুঝো ??
পাগল করে দিয়েছো সুন্দরী ! একদম পাগল করে দিয়েছো । এখন নিজেকে কি করে সামাল দিবো বলো ? ”

আমি অগ্নির কথা লজ্জায় হা করে আছি । অগ্নির এই দুষ্টু চাহনি আর পাগল করা হাসি আমাকে বার বার লজ্জায় ফেলছে।আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলি । কি বলবো অগ্নিকে ? বলার মত কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না । অগ্নি আমাকে এতোটা গভীর করে দেখেছে ? কখন আমাকে এতোটা পর্যবেক্ষন করলো । সারাক্ষণ তো আমার সাথে ঝগড়া করলো । এই ঝগড়ার ফাঁকেফাঁকে মুক্ত চাহনিতে কি সবটা পর্যবেক্ষন করেছে ?

_______________________

শেফা দিন দিন মীরজাফর হয়ে যাচ্ছে । এই তো এই দুদিন শেফা যতবার কল করেছে অগ্নি কনফারেন্স কলে ছিলো । কই একবার তো শেফা বললো না ! আজ ও বলতো না যদি আমি কথায় কথায় না বের করতাম । তাই তো বলি শেফার হয়েছেটা কি? এতো ঘনঘন ফোন কেন তার !
বদ মেয়ে অগ্নিকে হেল্প করা হচ্ছিলো । এখন বান্ধবী থেকে তার বর আপন হয়ে গেলো ?
সব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি অগ্নিকে একটা সুযোগ দিবো । শেষবারের মত অগ্নিকে বিশ্বাস করবো । একটা সুযোগ তো সে ডিজার্ভ করে ।
অগ্নির দেওয়া কালো গোলাপের তোরা হাতে নিয়ে দোলনায় বসে আছি । কালো গোলাপ এতোটা সুন্দর হয় তা আমার জানা ছিলো না । আচ্ছা অগ্নি কি করে জানে আমার কালো গোলাপ পছন্দ ? এতোটা কি করে চিনে সে আমাকে ?
এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠে । ফোন হাতে নিয়েই দেখি অগ্নি ফোন করেছে । রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে অগ্নির আদুরে স্বর ,

– “সুন্দরীইইইইইইইইইই ! ”

আমি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেই । উফফফ উনার ডাকগুলো বুকে যেয়ে বিঁধে । অগ্নি আবার বললো,

– “কি হয়েছে কথা বলো না কেন ? ”

আমি চোখ খুলে গলা ঝেড়ে বলি,

– “কি হলো এতো রাতে ফোন দিলেন যে? ”

– “এখন আমার বউ কে আমি ফোন দিতে পারবো না? ”

– “ঝগড়া করতে ফোন করেছেন ? ”

– “না তো । নতুন করে সবটা শুরু করতে ফোন করেছি । ”

– “এই নিশিরাতে ?”

– “হুম । তোমার সাথে রাত জেগে প্রেম করবো । ঔযে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা যেভাবে প্রেম করেনা ঠিক সেই ভাবে । ”

– “বুড়া বয়সে উড়োজাহাজ চালানোর শখ হয়েছে আপনার ? ”

– “আমি বুড়ো হয়ে গেছি ? এটা তুমি বলতে পারলে? ”

– “আমি কি একবারো আপনাকে বুড়ো বলেছি? আমি জাস্ট কথার কথা বললাম । ”

– “এই দেখ কই একটু রোমান্টিক কথাবার্তা বলবো তা না তুমি ঝগড়া শুরু করে দিয়েছো । এটা কি ঠিক ? ”

আমি চুপ করে রইলাম । অগ্নি বললো ,

– “আচ্ছা বলো আজকের ডেট তোমার কেমন লাগলো? ”

ডেটের কথা মনে পড়তেই মুখে আনমনে হাসি ফুটে উঠে । উফফ এতো সুন্দর করেও কি কেউ ডেট প্লান করে । একদম শানদার । কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করলাম না । ভাব নিয়ে বললাম ,

– “হুম ভালো ছিলো ”

অগ্নি বাচ্চাদের মত বিরক্তের স্বরে বললেন,

– “উফ হুর একটু মন খুলে কথা বলো না সুন্দরী । ”

– “সবাই ডেটে লাল গোলাপ আনে আপনি কালো গোলাপ আনলেন যে? ”

– “কারণ তোমার পছন্দ তাই! ”

– “আপনি কি করে জানলেন আমার কালো গোলাপ পছন্দ ? ”

উনি রহস্যময় ভাবে বললেন ,

– “তোমার ব্যপারে এমন অনেক কিছু আছে যা আমি জানি ।আমি তোমাকে যতটা চিনি তুমি নিজেকে ততোটা চিনো না । ”

আমি চুপ করে গেলাম । দুজনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা । নীরবতা ভেঙে আমিই বললাম ,

– “একটা কথা বলবো ? কিছু মনে করবেন না তো ! ”

– “হাজারটা বলুন রানী সাহেবা । ”

আমি চাপা হেসে বলি ,

– “জানেন আপনার কন্ঠ কথা বার্তা সবকিছু আমার এক চেনা কারো সাথে খুব মিল । এতো টা মিল যে মাঝে মাঝে মনে হয় আপনিই সে । ”

– “তাহলে আমাকে সে ভেবেই গ্রহণ করে নেও । ”

– “তা হয় না । আমি তাকে প্রচন্ড ঘৃণা করি । প্রচন্ড পরিমান । এতোটা যে তার চেহারা দেখার ও কোনো ইচ্ছে নেই । জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত আমি তার থেকে পেয়েছি । তাকে ঘৃণা করি । শুধুই ঘৃনা !”

– “হুর প্রত্যেকটা জিনিসের দুইটা পিঠ থাকে এক পিঠ দেখে কোনো কিছু বিবেচনা করা ঠিক না।আসল সত্যিটা জানার চেষ্টা করো । কাহিনী অন্যরকম ও হতে পারে । ”

– “আপনি কি আমার স্বামী নাকি তার লয়ার ?আমি এসব ব্যাপারে আর কথা বলতে চাই না। আশা করি আপনিও আর এ ব্যাপারে কথা বাড়াবেন না । ”

অগ্নি আর এই ব্যাপারে কথা বাড়ায় না । সারারাত এটা ঐটা বলে সারারাত ফোন আলাপে কাটিয়ে দেই । ভোরের দিকে ঘুমানোর জন্য বিছানার দিকে পা বাড়াই ।
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩৩

ঘুম ভাঙে বেলা দশটায় । বাহিরে মিষ্টি রোদ । ফ্রেশ হয়ে হয়ে নাস্তা সেরে বারান্দায় বসি । শীতের সকালের রোদটা খুব বিশেষ হয় । কুয়াশার পর এই রোদের উষ্ণত্ব স্পর্শ ছুঁয়ে দেয়।মিষ্টি রোদে চোখের পাতায় কেমন যেন নিদ্রা নিদ্রা ভাব ভর করেছে। আমি কোনো রকম চোখ টানা দিয়ে আছি । ইদানীং রাত জেগে জেগে ঘুমের টাইমটেবল সব উলট পালট হয়ে গেছে । এখন রাতজেগে কথা বলাটা রুটিন হয়ে গেছে । কেমন যেন অন্য অনুভূতি কাজ করছে । কিছুটা লজ্জা আর অনেকটা ভালোলাগা । যেন আমি টিনেজার হয়ে গিয়েছি । টিনেজারদের মত নতুন নতুন প্রেমে পড়ার অনুভূতি ,কৌতূহল ,আবেগ সবকিছু মিলিয়ে দিন বেশ ভালো কাটছিলো । আমি আবার অগ্নির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি । নয়া নয়া প্রেমের মিষ্টি অনুভূতি বেশ সুন্দর । কেউ ঠিক বলেছে দূরত্ব সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝায় । নতুন করে সব শুরু করতে আমাদের মাঝের এই দূরত্বটা দরকার ছিলো । অগ্নি যেন দিন দিন বয়স কমে যাচ্ছে ।উনার হুটহাট পাগলামো গুলো আমাকে আশ্চর্যের শেষ শিখরে পৌছিয়ে দেয় । হুটহাট গিফট পাঠায় । রাত দিন নেই হুট করে বাড়ির সামনে চলে আসে । এই তো কাল রাতেরই কথা অগ্নি হুট করে রাত তিনটার দিকে বাড়ির সামনে এসে হাজির । এতো রাতে কেন এসেছে ? তা জিগ্যেস করতেই উত্তর দেয় । তার নাকি বাড়িতে মন বসছিলোনা । তার নাকি এই মুহূর্তে আমাকে খুব করে দেখতে ইচ্ছে করছিলো । দিন দিন একদম পাগল হয়ে যাচ্ছে । পাগল না হলেই কি এই কনকনে শীতে বাড়ীর সামনে এসে এভাবে দাড়িয়ে থাকে।কত করে বললাম ভিতরে আসতে । কিন্তু না সে আমার কোনো কথাই কানে নিলেন না । উনি নাকি প্রতিজ্ঞা করেছেন আমার মারাত্মক প্রেমিক হবে । বাড়িতে আসলে তো তা আর প্রেমের সম্পর্ক থাকবে না স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হবে । অগ্নি এই যুগের প্রেমিক হতে চায় না । সে নব্বুই শতকের প্রেমিক হতে চায় । যে প্রেমিক সারাক্ষণ তার প্রেমিকা কে দেখার জন্য ছটফট করবে ।শর্তহীন ভাবে ভালোবাসবে ।
আমি উনার উত্তরে শুধু হেসেছি । বিয়ের পরের প্রেমটা সত্যি খুব সুন্দর হয় । এখানে নির্দ্বিধায় চুটিয়ে প্রেম করা যায় । না থাকে কোনো হারানোর ভয় না থাকে কোনো অনিশ্চয়তা ।
অগ্নির এসব পাগলামো দেখে ভাবি । সত্যি কি আমি উনার এমন পাগলামো ভালোবাসার যোগ্য? আমি কি এতোটাই বিশেষ কিছু ?
অগ্নির এই পাগলামো গুলো তে আমার মন গলতে শুরু করেছে ।
হ্ঠাৎ ই কারো কথার আওয়াজে আমার ভাবনা জগতে কারো টোকা পরে । পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি উৎস ভাইয়া আর নিশিত একগাল হেসে দাড়িয়ে আছে । আমি মুচকি হেসে তাদের কাছে এগিয়ে যাই । দুজনকে খুব সুন্দর মানিয়েছে । নিউলি মেরিড কাপল । নিশিত লাল শাড়ি পড়েছে নাকে নোস পিন । গাঁয়ে হাল্কা গহনা । এইতো গত শুক্রবার বিয়ে হয়েছে । বড় করে আয়োজন করেনি । উৎস ভাইয়া কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ করেছেন । তাছাড়া নিশিত ও এসব লোক দেখানো আয়োজন পছন্দ করে না। সে বরাবারই সাদাসিধা জিনিস পছন্দ । তারপর ও মামা বলেছিলেন চিটাগাং এ বিয়েতে যেতে । কিন্তু মা মানা করেছে । এইতো কিছুদিন আগেই চিটাগাং থেকে এসেছে সবাই।এখন আবার যাওয়াটা ঝামেলা । প্লানিং এর ও একটা ব্যাপার আছে । আমি মুচকি হেসে জিগ্যেস করি ,

– “কেমন আছেন আপনারা ?”

উৎস ভাইয়া মুচকি হেসে উত্তর দেয় ,

– “আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি । তুমি কেমন আছো ? ”

– “জি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ।আমি কনফিউজড ! ”

উৎস ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,

– “তা কেন শুনি ?”

– “এই যে কি বলে ডাকবো আপনাদের ?এখন তো সম্পর্ক দু দিক থেকে । ”

– “সম্পর্ক দু দিক থেকে তো কি হয়েছে ? পুরোনো সম্পর্ক কি পাল্টিয়েছে? আগে যা বলে ডাকতে তা বলেই ডেকো । শুধু জটিল বানানোর কি দরকার । ”

– “হুম তা ঠিক নতুন করে সম্পর্কের মারপ্যাঁচে পরে ডাকতে গেলে তা অনেক জটিল হবে।
তা বলেন কি করে আসা ? নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে কোথায় আমার ননদটাকে নিয়ে বেড়াবেন তা নয় আপনারা এখনো ঢাকাতেই আছেন?
নট ফেয়ার ভাইয়া।”

– “হুম যাবো তো । আগে রিসেপশনটা শেষ হোক তার পর । আর এই রিসেপশনের ইনভাইটেশন দিতেই আসা ।
ফুপির কাছ থেকে শুনলাম তুমি এ বাড়িতেই আছো । তাই ভাবলাম দুজন একসাথে এসেই তোমাকে ইনভার্ট করি।আফটার অল আমাদের স্পেশাল গেস্ট । ”

আমি মুচকি হাসি । ভাইয়া আবার বললেন ,

– “আগামী শনিবার রিসেপশন ।অগ্নি আন্টি সবাই আসবে । তোমাকেও আসতেই হবে।”

– “জি ভাইয়া অবশ্যই আসবো । ”

– “আমি যাই ফুফা ফুপির সাথে দেখা করে আসি । তোমারা কথা বলো । ”

উৎস ভাইয়া চলে যায় । আমি নিশিতের থুতনি তে হাত রেখে বলি,

– “খুব মিষ্টি লাগছে ।”

নিশিত লাজুক হেসে বললো ,

– “ধন্যবাদ ভাবী ”

– “দোয়া করি সবসময় এমন হাসি খুশি থাকো । ”

দুজন আড্ডা দিচ্ছি । হ্ঠাৎ কথার মাঝে নিশিত আমার হাত জড়িয়ে ধরে বললো ,

– “ভাবী আমি তোমার কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ ”

আমি প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে জিগ্যেস করি ,

– “তা কেন ? ”

– “এই যে তোমার জন্যই আজ আমি উনাকে পেয়েছি । ভাবি আমি জানি উনার প্রথম ভালোবাসা তুমি । হয়তো এখনো তোমাকে ভালোবাসে । কিন্তু আমার তা নিয়ে কোনো মন খারাপ নেই ।আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া আমি উনার স্ত্রী । উনার জীবনের অংশ হয়েছি । হয়তো কোনো দিন উনার ভালোবাসার মানুষ হতে পারবো না । কিন্তু এতটুকুতেই খুশি উনার জীবনের অংশ আমি।যদি তুমি উনাকে না ফিরিয়ে দিতে তাহলে হয়তো আমি এমন জীবনসঙ্গী পেতাম না। তাই আমি তোমার কাছে সর্বদা কৃতজ্ঞ । উনার জীবনে সর্বদা মুখ্য নায়িকা তুমিই থাকবে আমি না হয় সাইড নায়কা হয়েই রয়ে গেলাম । ”

– “নিশিত তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী আর খুবই ভালো মনের একটা মেয়ে।আমি জানি তুমি ঠিক উৎস ভাইয়ার মন জয় করে নিবে।কারো প্রথম প্রেম হওয়াটা খুব সহজ । কিন্তু শেষ ভালোবাসা হওয়া অনেক জটিল । আর শেষ ভালোবাসাটাই জীবনে মুখ্য চরিত্র হয় ।আর উৎস ভাইয়ার জীবনে সেই মুখ্য চরিত্রটাই তুমি । ভাইয়ার জীবনের মুখ্য নাইকা । আমি জানি তুমি ভাইয়ার জীবনে সব অতীত ভুলিয়ে নতুন করে স্মৃতি গড়ে তুলবে । ”

– “দোয়া করো ভাবী ”

– “অবশ্যই ”

___________________________

আজ অনেক দিন পর ভার্সিটি তে যাচ্ছি ।এতো দিন ক্লাস বান্ধ করেছি ইচ্ছে করেই । অগ্নিহীন ভার্সিটি তে এসে কি করবো । তার উপর নিহার কুটনামি দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই । আমি অগ্নির স্ত্রী তা জানার পর না জানি নিহার কি অবস্থা । নিশ্চিত নতুন কোনো ঝামেলা পাকাবে ।
আজ একসাপ্তাহের অগ্নির পানিশমেন্ট শেষ । অগ্নি ভার্সিটি তে আসছে । আমিও শেফার সাথে ভার্সিটি তে যাচ্ছি।
মন একদম ফুরফুরে । আজ কতদিন পর ভার্সিটি তে এসেছি । অগ্নির সাথে দেখা হবে । কিন্তু জনাব আছে কই ? আশেপাশে কোথাও তো নেই ! ফোনটাও রিসিভ করছে না । অদ্ভুত লোক !
তানবীর ভাইয়াকে জিগ্যেস করতেই জানতে পারি । অগ্নি কালচারাল ক্লাবে আছে । এই সময় সেখানে কি করছে ?সামনে তো কোনো ফাংশন নেই । তাহলে এসময় সেখানে থাকার কারণ কি ? এসব ভাবতে ভাবতেই ক্লাবের সামনে যাই ।জনশূন্য নীরব পরিবেশ ।ক্লাবের অফিস রুমের দরজাটা ভিড়ানো । আমি এক কদম এক কদম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই । দরজা খুলতেই চোখজোড়া সানা ভরা হয়ে যায়। শরীরে প্রত্যেকটা শিরা উপশিরায় খুব দ্রুত গতিতে রক্ত দৌড়াচ্ছে । মাথায় রক্ত উঠে গেছে । অগ্নিকে নিহা জড়িয়ে ধরে আছে । অগ্নি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে । কিন্তু নিহা জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।আমি রেগে সামনের দিকে এগিয়ে যাই । সর্বশক্তি নিয়ে নিহাকে ধাক্কা দিয়ে অগ্নি থেকে দুরে সরাই । নিহা নিচে পরে যায় । অগ্নি ভয়ে আমতা আমতা করে বললেন,

– “হুর বিশ্বাস করো আমি কিছু জানিনা। আমিতো ক্লাবে একটা কাজে এসেছি নিহা এখানে এসে এসব করছে। বিশ্বাস করো ,,,

অগ্নি কে আর কিছু বলতে দেই না।রাগী চোখ দেখিয়ে থামিয়ে দেই । নিহার কাছে যেয়ে তাকে উঠিয়ে । হাত মোচড় দিয়ে ধরে দুগালে দুইটা চড় দেই । গাল চেপে ধরে চিৎকার করে বলি,

– “কি ভেবেছিস এতোদিন ছাড় দিয়েছি তাই বলে আমি দুর্বল ? কিছু করতে পারবো না? আমার স্বামীর দিকে নজর দিলে চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবো শাঁকচুন্নি বদমাইশ মেয়ে ।এই থাপ্পড়ের কথা গুলো যদি মনে থাকে ভবিষ্যৎ এ আর কোন দিন অগ্নির দিকে চোখ দিবিনা । আর যদি দিস কাঁটা চামচ দিয়ে চোখ তুলে ফেলবো বিরিং খেলবো । ”

নিহাকে ওয়ার্নিং দিয়ে অগ্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসি । অগ্নি আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে । আমি অগ্নিকে নিয়ে সোজা পার্কিং এরিয়াতে চলে আসি । গাড়ি তে বসে বড় বড় নিশ্বাস ফেলছি । রাগে তখনো আমার শরীরে কাঁপছে । ইচ্ছে করছে নিহাকে কুঁচি কুঁচি করে কেটে লবণ লাগিয়ে দেই । অগ্নি পানির বোতল টা খুলে আমার দিকে এগিয়ে দেয় । আমি ঢকঢক করে পানিটা শেষ করি । অগ্নি তখনো অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে । আমি রাগী চোখে তাকাতেই । অগ্নি ভীতু স্বরে বললেন,

– “বিশ্বাস করো আমি কিছু জানি না । প্রমিজ। তোমার কছম । ”

– “আমি জানি ! ”

– “তাহলে আমার উপর কেন রেগে আছো । ”

– “আপনাকে ছুঁবে কেন ঔ শাঁকচুন্নি ? এই যে এখানে এখানে স্পর্শ করেছে তাই না ?

বলেই উড়না দিয়ে অগ্নির শরীর মুছে দিতে লাগলাম । অগ্নি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । আমি রেগে রেগে গর্জন করে বললাম ,

– “কেন জড়িয়ে ধরলো? বলুন কেন? এগুলো তো আমার জায়গা তাই না ? ও কেন এই যে এখানে মাথা রাখলো ? ”

এগুলো বলে রাগে জিদে কান্না করে দিলাম । কিছু কিছু মানুষ আছে রেগে গেলেও কান্না করে।আমিও তাদের মধ্যে একজন । প্রচন্ড রাগে প্রচন্ড রকম কান্না করি। অগ্নি সাথে সাথে আমাকে তার বুকে জড়িয়ে ধরে । আমি ছুটে আসতে চাইলে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে। আমি অগ্নির বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরি । সামনে দুটো বোতাম ছিঁড়ে যায় । বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে করতে বলি,

– “আমার সহ্য হয় না আপনার দিকে কোনো মেয়ে তাকালে । রাগ হয় । খুবই রাগ হয় । ইচ্ছে করে তাকে খুন করে ফেলি । ভাল্লাগেনা । কেন এতো সাজগোজ করে হিরো সেজে ঘুরতে হবে ? কেন মেয়েদের দেখাতে হবে ? ”

– “আচ্ছা ঠিক আছে আর হিরো সেজে ঘুরবো না।আমি শুধু আমার সুন্দরীর ।
আমার সুন্দরী যেমনটা বলবে তেমন ভাবেই হবে । এবার কান্না বন্ধ করো । ”

– “না করবো না ,আমি কান্না করবো! অনেক কান্না করবো । আপনার কি ? ”

– “আমার কষ্ট হয়তো ”

– “হোক কষ্ট বেশি করে হোক ! ”

অগ্নি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । নিজের সর্বস্র চেষ্টা করছে কান্না থামানোর ।
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩৪

সোফায় দুপা উঠিয়ে মুভি দেখছি । হাতে চিপসের প্যাকেট ।ঘড়ির কাটা দশের দিকে । আস্তে আস্তে রাত গভীরতর হচ্ছে । শীতের রাত দশটা বাজতেই অনেক রাত । কিছুক্ষণ পূর্বেই রাতের খাবার শেষ করেছি ।কিছুই ভালো লাগছে না । সবকিছু কেমন জানো খালি খালি লাগছে । ভার্সিটি থেকে অগ্নির সাথে ঝগড়া করে এসেছি । যদিও এটাকে ঝগড়া বলেনা । আমি একাই চিৎকার চেঁচামেচি করে এসেছি । অগ্নি বাধ্য ছেলের মত চুপ ছিলো শুধু মাথা নাড়িয়েছে ।রাগের বসে যাতা বলে এসেছি । নিহার রাগ সব অগ্নির উপর ঢেলেছি ।সারাদিন একবারের জন্যও অগ্নিকে ফোন দেই নি । না অগ্নিকে ফোন দেওয়ার সুযোগ দিয়েছি । ফোন বন্ধ করে রেখেছি । অগ্নি আপুর ফোনে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে । আমি কথা বলেনি । কিন্তু এখন খুব কষ্ট লাগছে । বুকটা খালি খালি লাগছে । তাই মনকে ভুলিয়ে রাখতে মুভি দেখছি । কিন্তু এতেও বিশেষ কোনো লাভ হচ্ছে না । মন শুধু অগ্নি অগ্নি করছে ।
হ্ঠাৎ ডোর বেলটা বেজে উঠে । এতো রাতে কে আসলো । মনে খানিকটা সন্দেহ সৃষ্টি হয় । আমি এসব ভাবতে ভাবতেই দরজার দিকে পা বাড়াই । কিন্তু তার আগেই মামী দরজা খুলার জন্য পা বাড়িয়েছে । আমি মামীর পিছন পিছন যাই । দরজার সামনে যেতেই চোখ কপালে । অগ্নি দাড়িয়ে আছে । মুখে একগাল প্লাস্টিক হাসি নিয়ে । মামী ও এতো রাতে অগ্নি দেখে বেশ অবাক । মামী ভয়ে ভয়ে অগ্নি কে জিগ্যেস করেন ,

– “বাবা এতো রাতে তুমি এখানে ! মানে বাড়িতে সব ঠিক ঠাক আছে বাবা । ”

– “জি আন্টি সব ঠিক আছে । একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম । ফিরতে রাত হয়ে গেল তাই ভাবলাম আজ রাত এখানে থেকে যাই ।আজ কাল যা অবস্থা বলা যায়না কখন কি হয়ে যায় । ”

– “কত রাত হয়েছে । দেশের যা অবস্থা । যাক বাবা বেশ ভালো করেছো এসেছো। ”

আমি মামী আর অগ্নির আহ্লাদী দেখে হা করে আছি । এটা কোনো রাত ? মাত্রই তো রাত দশটা বাজে । অগ্নির জন্য তো মাত্র সন্ধ্যা হলো । আর ভয় ? অগ্নির সাথে ভয়ের দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই । এই যে মুখের ভোলাভালা প্লাস্টিক হাসিটা । এই হাসির পিছনে রাক্ষসরাজ অগ্নি লুকিয়ে আছে । অগ্নি ফুলফর্মে এসেছে আমাকে শায়েস্তা করতে তা আমি বেশ বুঝচ্ছি । উনার আড়চোখের ক্রুদ্ধ দৃষ্টি আমাকে তা ঠিক বুঝিয়ে দিচ্ছে । এই দৃষ্টি আমাকে বলছে “হুর ,একবার শুধু হাতের মুঠোয় পাই তোমাকে আমি চাটনি করবো ”
মামী যেতেই মামীর আঁচল ধরে পিছনে পিছনে চলে যাই।এখানে থাকা মানে বিপদ । মামী সব খাবার গরম করে দেয় । আমি তা টেবিলে এনে সাজাই । অগ্নি মামার সাথে ড্রইংরুমে কথা বলছে । অগ্নির এসেছে শুনে মামা ঘুম থেকে উঠে এসেছে । মামীর কথা মত অগ্নিকে খাবার টেবিলে ডেকে আনি । অগ্নি তখনো আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে । মামী চলে যেতেই অগ্নি ক্রুদ্ধস্বরে বললেন ,

– “খায়িয়ে দেও ”

আমি আমতা আমতা স্বরে বলি ,

– “কে আমি? ”

– “এখানে কি অন্য কেউ আছে ? ”

– “ইয়ে মানে বলছিলাম কি ,,,মানে আর কি ,,”

– “তোমার কোনো বাহানা চলবে না । যা বলেছি তা করো । মামা বাড়িতে এসে খুব পাখনা গজিয়েছে তাই না? আজ সব পাখনা কাটবো । ”

আমি আর কোনো কথা বলিনা অগ্নির কথা মত তাকে খায়িয়ে দেই । অগ্নি বেশ তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে ।

___________________________

ডিনার শেষ করে রুমে আসতেই দেখি পুরো রুম অন্ধকার । অগ্নি কোথায় গেলো ? লাইটের কাছে যেতেই ঠাস করে দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ কানে আসে । আমি কেঁপে উঠি । পিছন থেকে অগ্নি আমার হাত মোচড় দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরেছে । আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম না । এতে কোনো লাভ হবে না । অগ্নি আমার কানের কাছে মুখ গুজে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

– “খুব সাহস বেড়ে গেছে তাই না ? সকাল থেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছো । কোনো খোঁজ খবর নেই । কি আমাকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে তাই না? খুব আনন্দ হয় ? এই যে সারাদিন আমি ছটফট করছি। না খেয়ে পাগল পাগল হয়ে ফোন করছি । কষ্ট পাচ্ছি এসব খুব ভালো লাগছে তাই না ? ”

অগ্নির কথা শুনে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে । না জানি এই লোক রেগে কি করে । আমি আমতা আমতা করে বলি,

– “এভাবে রেগে যাচ্ছেন কেন । আমিও তো আপনার উপর রেগেছিলাম । তাইতো ফোন অফ করে রেখেছি । ”

– “আচ্ছা তা কেন শুনি ? কি অপরাধ আমার ?আমি কি নেহাকে বলেছি আয় আমাকে জড়িয়ে ধর !
আমি কিন্তু এখনো আগের অগ্নিই আছি । নিজের জিনিস নিজের কাছে কি করে রাখতে হয় খুব ভালো করে জানি । মাইন্ড রিফ্রেশমেন্টের জন্য মামা বাড়িতে আসতে দিয়েছি । আমার মাথা বিগড়ে দিলে তুলে নিয়ে যাবো । সারাজীবনেদ জন্য মামা বাড়িতে আসা বন্ধ ! ”

আমি মিনমিন করে বলি ,

– “স্যরি তো ”

অগ্নি কোনো কথা না বলেই পিছন থেকে আমার ঘাড়ে মুখ ডুবায় । অগ্নির প্রত্যেকটা ঘনঘন ভারী নিশ্বাসে আমি কেঁপে উঠছি । চোখ বন্ধ করে খুব শক্ত করে গলার লকেট টা চেপে ধরেছি ।দুজনের মাঝে নীরবতা । শুধু নিশ্বাসের ভারী শব্দ কানে বাজছে ।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই হুট করেই অগ্নি কোলে তুলে নিয়ে বারান্দার দিকে অগ্রসর হয় । আমি চোখ বন্ধ করে অগ্নির বুকে মাথা হেলিয়ে দেই । অগ্নি আমাকে কোলে নিয়েই বারান্দার রেলিং ঘেষে দাড়ায় । কুয়াশায় ঘেরা চারদিক । ঠান্ডা আবহাওয়া । শীত পুরো শরীর শিরশির করছে। খানিক উষ্ণতার আশায় অগ্নির সাথে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে যাই । উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি অগ্নির মাতাল দৃষ্টি আমার দিকে । আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেই । অগ্নি আদুরে গলায় বললেন ,

– “এই দূরত্ব আর সহে না । কালই সাথে করে নিয়ে যাবো । ”

– “কেন টিনেজারদের মত প্রেম করার ভূত ঘাড় থেকে নেমে গেছে ? ”

অগ্নি আমার নাকে নিজের নাক ঘষে আহ্লাদী স্বরে বললেন ,

– “হুম ,এখন নিজের বউয়ের মত ভালোবাসতে ইচ্ছে করে । সারাদিন বুকের সাথে এভাবে জড়িয়ে রেখে ভালোবাসি বলতে ইচ্ছে করে । ”

– “তাই? আর কি কি করতে ইচ্ছে করে ? ”

– “উমমম পুতুলের মত সাজিয়ে রেখে সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব করে দেখতে ইচ্ছে করে । তোমার এই সুন্দর হাত দুটো তে চুমু খেতে ইচ্ছে করে আর…..”

অগ্নিকে আর কিছু বলার সুযোগ দেই না মুখ চেপে ধরি । অগ্নি আমার হাতের চুমু খেয়ে বলে ,

– “তুমি তো জানতে চাইলে ”

– “তাই বলে এসব কিছু বলবেন ? সত্যি আগ্নি ,আপনি লাগামহীন হয়ে গেছেন । ”

– “আমার কি দোষ সবকিছুর জন্য তুমিই দায়ী । ”

– “বাহ! সব দোষ নন্দ ঘোষ । আমি কি করলাম ? ”

– “হুম তোমারি তো দোষ ! এই যে আমাকে দিন দিন পাগল বানিয়ে দিচ্ছো । সারাক্ষণ তুমিই মাথায় ঘুরঘুর করো । তুমিহীন পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
কাল কিন্তু তুমি আমার সাথে বাড়ি ফিরছো! ”

– “অগ্নি শুনুন না কাল না দুদিন পর যাই? ”

অগ্নি বাচ্চাদের মত নাক ফুলিয়ে বায়না ধরে বললেন ,

– “না না তুমি কালই আমার সাথে যাবে ”

– “আমি কাল চলে গেলে আপু একা হয়ে যাবে । আপু প্রেগন্যান্ট আপুর পাশে সর্বদা কাউকে প্রয়োজন । আপুকে রেখে যাওয়া কি ঠিক হবে ? মামী একা কতদিক সামলাবে ? ”

– “তাই বলে স্বামী কে এভাবে কষ্ট দিবে ? তোমার কি চোখে পড়ছেনা আমি সারাক্ষণ তুমিহীন ছটফট করছি । ”

– “দুইটা দিনই তো !”

অগ্নি মুখ ফুলিয়ে বললেন ,

– “তোমার যা ইচ্ছে করো ”

আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে । অগ্নির গালে টুপ করে চুমু দিয়ে দেই । অগ্নি আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে । আমার থেকে এমনটা আশা করেনি । আমি লাজুক হেসে অগ্নির বুকে মুখ লুকাই । অগ্নি বাঁকা হেসে বলে ,

– “তুমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছো সুন্দরী । এবার এই ভুলের শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবে ! ”

– “আপনার সব শাস্তি শিরোধার্য। মরন ও! ”

– “হুম মারবো তো বটে । কিন্তু বিষে না মধুতে । ”

আমি লজ্জায় জর্জরিত হয়ে যাচ্ছি । অগ্নি আমাকে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে ।এবার না থাকবে কোনো সংকোচবোধ ,না থাকবে কোনো বাঁধা । প্রেমের এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে । কিন্তু অতীত কি আদো পিছু ছাড়বে ?
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩৫

বিকেলের প্রহর পেড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে পা ফেলছে । আমি রেডি হচ্ছি আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি । আজ উৎস ভাইয়া আর নিশিতের রিসেপশন । অগ্নি জানিয়েছেন সন্ধ্যার পর এসে রিসিভ করবে । একসাথে প্যাকিং করে রাখতে বলেছেন আজ রিসেপশন থেকে,সোজা ঐ বাড়িতে ফিরবে । শাড়ীর কুচিগুলো ঠিক করছি । শাড়ীর সাথে আমার খুব একটা যায় না । যদিও শাড়ী পড়াটা খুব পছন্দের কিন্তু সামলাতে পারিনা । শুধু অগ্নির জন্যই শাড়ি পড়া । অগ্নি বায়না ধরেছে আজ ফাংশনে আমাকে শাড়ি ই পড়তে হবে ।অগ্নি নিজে পছন্দ করে শাড়ী কিনে পাঠিয়েছে । বেবী পিংক জর্জেট শাড়ি । শাড়ির পাড়ে পার্ল আর স্টোনের ভারী কাজ ।সাথে কমোড় পর্যন্ত ডার্ক পিংক ডিজাইনার ব্লাউজ । সব কিছুই বিষণ সুন্দর । বলতে হবে উনার পছন্দ লাখে এক । সব সময় আনকমন আর ইউনিক জিনিসের দিকে উনার নজর ।আমাকে পছন্দ করতে দিলে সারাদিন ঘুরেও পছন্দ করতে পারতাম না । শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে ভারী কানের দুল পরেছি । চুল গুলো কার্ল করে দুপাশ দিয়ে সামনে এনে রেখেছি । অগ্নির কড়া ইনস্ট্রাকশন চুল খুলা রাখতে হবে । জনাবের আমার খুলা চুল খুব পছন্দের । আর হাল্কা মেকআপ । সবটা অগ্নির পছন্দ অনুযায়ী । এমন সময়ই ফোনটা বেজে উঠে । ফোন হাতে নিয়ে দেখি অগ্নির কল । রিসিভ করতেই অগ্নির উতলা স্বর ,

– “আর কত অপেক্ষা সুন্দরী ? আমি যে একনজর দেখার জন্য ছটফট করছি । ”

– “তাই ? তো ফোন রেখে একটু অপেক্ষা করুন আসছি ! ”

– “উহু ফোন কাটা চলবে না । কথা বলতে বলতে নিচে আসো ।”

-“আপনি সত্যি পাগল ! ”

– “হুম শুধু তোমারি জন্য ”

অগ্নির সাথে কথা বলতে বলতে নিচে আসি । অগ্নি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে । ডার্ক চকলেট স্যুট পরা । বুকের পাশে পকেটে খুব সুন্দর সিল্কের রোমাল গুছিয়ে রাখা । আর তার চেয়ে খানিকটা দূরে কিং ক্রাউনের আকৃতির স্টোন ব্রোঞ্জ । হাতে casio এর সিলভার গোল্ডেন কম্বিনেশনের ওয়াচ । চুল গুলো পারফেক্টলি সেপারেটেড করা। ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি । একদম ফর্মাল লুক । ঠোঁটে চার্ম হাসি ।এতো সুন্দর কেন এই লোক? আমাকে পাগল করে ছাড়বে ।
আচ্ছা ডার্ক কালারে কি সব ছেলেদেরই এতোটা মানায়? নাকি শুধু অগ্নিকেই এতোটা স্পেশাল বানায় !
যদিও অগ্নি এমনিতেই বিশেষ । যাই পড়ুক না কেন চোখ ফেরানো যায় না ।
অগ্নির চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি সোজা আমার বুকে যেয়ে লাগছে । কি চায় অগ্নি আমি এক্ষুনি হার্ট এটাক করে মরে যাই ? অগ্নি আমার দিকে পা বাড়াচ্ছে । আমি চোখজোড়া নামিয়ে ফেলি । আমার কাছে এসে যাই আমাকে কিছু বলবে এমন সময়ই মামা মামী চলে আসে । অগ্নি কিছুটা দূরে সরে যায় । মামা মামী কে সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করে । আমি আড়চোখে অগ্নিকে দেখছি । অগ্নিরো একই দশা আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে । অগ্নি মামার থেকে লাগেজ নিয়ে গাড়ী তে তুলেন ।গাড়ির দরজা খুলে দেন মামা মামী পিছনের সিটে বসে। আর আমি অগ্নির পাশের সিটে । অগ্নি গাড়িতে উঠে আমার সিট বেল বেঁধে দিতে লাগেন ।কোনা চোখে তখনো আমাকে দেখছে । আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস আওয়াজে বললেন ,

– “উফফফ ,সুন্দরী মাথা একদম ধরিয়ে দিলে । নেশা না করেও মাতাল আমি ! ”

অগ্নির উত্তরে আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে লাজুক হাসি । অগ্নি কিছু বললেন না ড্রাইভিং এ মন দিলেন ।

লাল ভারী কাতান পড়ে লাল টকটকে বউ সেজে বসে আছে নিশিত । পাশেই গোল্ডেন স্যুটে উৎস ভাইয়া । দুজন কে একসাথে খুব মানিয়েছে । সবার মুখে একই কথা ‘মেইড ফর ইজ আদার ‘। চিটাগাং থেকে আজ সকালেই নানু বাড়ির সবাই এসেছেন । আভরিনও এসেছে । আমি একপ্রকার এড়িয়ে চলি । আভরিনের নজর আমার খুব একটা ভালো লাগছে না । সবার সাথে ভাব আদান প্রদান করে । নয়া দাম্পত্যির দিকে ষ্টেজে এগিয়ে যাই । আমাদের দেখেই উৎস ভাইয়া একগাল হেসে দাড়িয়ে যায় । অগ্নির সাথে গলা মিলায় । আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,- “ইউ লুকিং বিউটিফুল! “আমি মুচকি হাসি । অগ্নি নিশিতকে এটা ওটা বলে ক্ষেপাচ্ছে । নিশিত কখনো ক্ষেপে যাচ্ছে আবার কখনো লাজুক হাসছে । ভাই বোনের খুনসুটি দেখে আমি আর উৎস ভাইয়া হাসছি ।

ভিড় থেকে কিছুটা দূরে আছি । মাত্রই ডিনার শেষ করিছি ।রাউন্ড টেবিলে পাশাপাশি আমি আর অগ্নি বসে । আমার হাতে ডিজার্ট প্লেট । আমি খুব মন দিয়ে মেল্ট চকলেট কেক খাচ্ছি । ইচ্ছে করেই সামনে তাকাচ্ছিনা ।অগ্নি টেবিলের উপর একহাতে গালে হাত দিয়ে আমাকে খুব গভীর করে দেখছে । অগ্নির চাহনি ধীরে ধীরে আরো গভীর হচ্ছে । এই চাহনিতে আমার টিকে থাকা সম্ভব না । লজ্জায় লজ্জাবতীর মত নেতিয়ে যাবো । তাই নিজের ডিজার্টের দিকে মন দেওয়া উত্তম । অন্তত এই চাহনির সম্মখীন তো হতে হবে না । আড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েরা অগ্নিকে নিয়ে কানাকানি করছে । কেউ কেউ আমার দিকে আগুন ধরানো দৃষ্টি তে তাকাচ্ছে । কারণ আমার কাছে অস্পষ্ট নয়। অগ্নির সাথে আছি বলেই তাদের এই জেলাসি । আমি এবার চোখ তুলে অগ্নির দিকে তাকাই । মানুষটা এমন কেন ? আমি তো আহামরি বিশেষ কিছু নই ।অগ্নির সামনে তো কিছুই না । তাহলে কেন আমাকে এভাবে দেখে ? আমার মাঝে কি এমন বিশেষ কিছু আছে ! নাকি আমাকে ভালোবাসে বলেই এমন পাগলামী করে । এই যে আশেপাশের মেয়েগুলো উনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে । এমন ভাবে তাকিয়ে আছে সেদিকে উনার কোনো খেয়াল নেই । উনার সব ধ্যান আমার দিকে । এই যে আমার দিকে লাগামহীন ভাবে তাকিয়ে আছে । সত্যি বলতে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে । যাকে বলে পৈশাচিক আনন্দ । এই যে সবাই অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছে আর অগ্নি আমার দিকে । আহ !

_______________________________

____________________________

ভ্যানুর সামনে হাঁটাহাঁটি করছি । খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । বাহারি রং এর লাইটিং । তার উপর কুয়াশা ঘেরা চার দিক । সব মিলিয়ে খুব সুন্দর লাগছে । একদম মুগ্ধ করা পরিবেশ । অগ্নি ভিতরে উনার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছে । আমি ঘুরে ঘুরে সব দেখছি । হ্ঠাৎ ই চোখ যায় এক বাচ্চা মেয়ের দিকে । দেখতে বিষণ মিষ্টি । ব্লু ফ্রক পড়া । বড় চুলগুলো খোঁপা করা । মাথায় স্টোনের ক্রাউন পড়া । বড় বড় চোখ আর সরু ঠোঁট । ইচ্ছে করছে গুলুমুলু গাল দুইটা একটু টিপে দেই । আমি একপা একপা করে সামনের দিকে পা বাড়াই । মেয়েটি একটা বেঞ্চে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ।আশ্চর্য আশেপাশে কেউ নেই । আমি মেয়েটির পাশে বসতেই আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে গভীর ভাবে তাকায় যেন কিছু খুঁজছে । আমি মিষ্টি হেসে বললাম,

– “আকাশের তারা গুনছো ? আমি হেল্প করবো ? ”

বাচ্চা মেয়েটি না বোধক মাথা নাড়ায় । তারপর আবার চুপ । আমি আবার জিগ্যেস করি ,

– “তোমার আম্মু কোথায় ?”
এবার মেয়েটি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে । তার মানে মেয়েটির মা বেঁচে নেই । আমার চোখজোড়া ভরে আসে । ইশ এতো ফুটফুটে একটা বাচ্চার মা নেই । নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে । বাবা মা না থাকার যন্ত্রণা কতোটা কষ্টের তা আমার জানা ।আমি মেয়েটির মাথায় হাত রাখতেই মেয়েটি আমাকে হুট করে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কান্না করে দেয় । কান্না করতে করতে বলে ,

– “জানো আমাকে কেউ আদর করেনা । বাবাইও না । দাদুন দিদা কেউ না । আমার খুব মাম্মামের কথা মনে পরে । আমি মাম্মামের কাছে যাবো । বলো আমি এতো পঁচা? কেন মাম্মাম আমাকে রেখে চলে গেলো ? ”

মেয়েটার মাঝে আমি আমার ছেলেবেলা দেখছি । ছেলেবেলায় আমারো খুব ইচ্ছে করতো নিজের মাকে কাছে পাওয়ার । কাউকে নিজের সব দুঃখ কষ্ট বলার ।কেউ মাথায় হাত রাখলে মনে হতো সে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ।
বাচ্চা মেয়েটারো হয়তো এমন বোধ হচ্ছে । তাই তো অচেনা এক মানুষের কাছে নিজের সব কষ্টের কথা শেয়ার করছে । আমি মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলি,

– “তুমি মটেও পঁচা না মামুনি । তুমি খুব স্পেশাল তাই তো আল্লাহ্‌ তোমার মাকে নিজের কাছে নিয়ে গেছে ঐযে ঐ আকাশে আছে । তুমি যখন অনেক বড় হবে তখন তোমার কাছে ফিরে আসবে । ”

– “সত্যি বলছো । ”

– “হুম । ”

– “তুমি কি করে জানো ? তুমি কি এঞ্জেল ? ”

– “উমম না । আমি হুর । হামিয়া হুর । ”

– “হুর মানে তো এঞ্জেল ই । আমি তোমাকে এঞ্জেল বলেই ডাকবো কেমন ? তুমি একদম এঞ্জেলদের মত সুন্দর । দেখলে পরী পরী মনে হয় । ”

আমি কপালে চুমু খেয়ে বলি ,

– “আচ্ছা মামুনি তোমার যা ভালো লাগে বলিও । ”

হ্ঠাৎই মেয়েটা কিছু মনে করার চেষ্টা করে বললো ,

– “ওহো এঞ্জেল আমাকে এখন যেতে হবে দিদা আর বাবাই হয়তো খুঁজছে । দেরি করলে বকুনি দিবে । আমি এখন আসি । টাটা । ”

বলেই ছুটে যায় । আমি পিছন থেকে নাম জিগ্যেস করলে জানায় তার নাম আরশি চৌধুরী । আমি মুচকি হেসে আরশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি । কি মিষ্টি মেয়ে । কে বলবে এই মেয়ের মা নেই ।মেয়েটার ভিতরে এতো কষ্ট লুকিয়ে আছে । দুরন্ত মেয়েটিকে ভিতরের কষ্টগুলো শান্ত করে দিয়েছিলো । যাক আজকের পর একটু মন খুলে হাসতে পারবে । মিথ্যা আশা নিয়েই হোক নতুন করে তো ,বাঁচতে পারবে ।

____________________

বাসায় ফিরবো । গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি । অগ্নি গাড়ি বের করতে গেছে । এমন সময় খুব দ্রুত গতিতে পাশ দিকে এক গাড়ি যায় । আমি নিচে পরে যাই । আগেই সরে যাওয়ার খুব একটা লাগেনি । আমি পিছন থেকে খেয়াল করে দেখি । গাড়িতে একটা লোক ছিলো পাশেই আরশি বসে ছিলেন । নিশ্চিত এটা আরশির বাবা । দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো খুব বাজে লোক । এতো বড় অন্যায় করে গাড়ি থামিলো না । স্যরি বলার প্রয়োজনবোধ করলেন না । এমন সময় অগ্নি ছুটে আসে । আমার হাত পা চেক করছে । হাতে সামান্য একটু কেটেছে । আমাকে গাড়িতে বসিয়ে হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দেয় । খুব রেগে আছে অগ্নি । মনে হচ্ছে গাড়ি চালকে পেলে এখনি খুন করবে । জাস্ট খুন করে ফেলবে । আমাকে বার বার গাড়ির নাম্বার জিগ্যেস করেছে । আমি বলেছি আমি খেয়াল করিনি । যদিও মিথ্যা বলেছি । কি দরকার শুধু শুধু ঝামেলার । অগ্নি যা মাথা গরম লোক । বড় ঝামেলা পাকিয়ে দিবে ।
অগ্নি গাল ফুলিয়ে গাড়ি তে উঠে । গাড়ি স্টার্ড দেয় । অগ্নি গাড়ি ড্রাইভ করছে ।এখনো রাগে ফুসছে । আমি আগতো করে অগ্নির কাঁধে মাথা রাখি ,

– “আমার সাথে রাগ করছেন কেন ? আমি কি করেছি ? ”

– “আমি তোমার উপর রাগ করিনি। আমার নিজের উপর রাগ হচ্ছে । আমার তোমার সাথে থাকা উচিত ছিলো । আমার কেয়ারলেসের কারনে এমনটা হয়েছে । ”

– “আপনি শুধু শুধু কেন নিজেকে দোষারোপ করছেন । এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট । ”

অগ্নি কোনো কথা জবাব দিলো না । আমি কিছুক্ষণ পর অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলি,

– “আমি একটা কথা জিগ্যেস করি । ”

অগ্নি ড্রাইভ করতে করতে উত্তর দেয় ,

– “হুম করো ”

– “যদি আজ আমার কিছু হয়ে যেত । তাহলে কি আপনি আমাকে মিস করতেন ? ”

অগ্নি সাথে সাথে ব্রেক কষে । খুব জোড়ে ঝাঁকুনি লেগে গাড়ি থেমে যায় । অগ্নি বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে । চোখে হারানোর ভয় ।
আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললেন ভাঙা গলায় বললেন,

– “আর কখনো এসব কিছু মুখে আনবে না ।এমনটা ভাবতেই আমার শ্বাস আটকে আসে । আর মিস করার জন্য মানুষের বেঁচে থাকতে হয় । তুমিহীন আমি মরে যাবো । আমার বেঁচে থাকার জন্য তুমি প্রয়োজন । ”

অগ্নির কথাগুলো খুব সাধারণ মনে হলেও এই কথাগুলোর গভীরত্ব অনেক । এর ব্যাখ্যা টা সীমাহীন । অগ্নির চোখে স্পষ্ট হারানোর ভয় দেখা যাচ্ছে । এই ছলছল চোখ গুলো চিৎকার করে বলছে “হুরহীন এই অগ্নি প্রাণহীন ” ।

চলবে …❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here