শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট :৪৩
বাহিরে ঝড় উঠেছে । প্রবল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে । রুমের ভিতর থমথমে পরিবেশ । অগ্নি এখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি নত দৃষ্টি তে ঘৃণার স্বরে বলি,
– ” আমার হাত ছাড়ুন ,আমি বাড়ি যাবো । ”
আমার কথায় অগ্নি গুরুত্ব না দিয়ে।গাল চেপে মুখ উঁচু করে বললেন ,
– “কি শাস্তি দেব তোমায় ? এই দুমাস ছয় দিন আমার কিভাবে কেটেছে তোমার কোনো আইডিয়া আছে ?
প্রত্যেকটা নিশ্বাসে আমি তিলেতিলে মরেছি । মরন যন্ত্রনায় ভুগেছি । তোমার এই নিষ্পাপ চেহারার পেছনে যে এমন নিষ্ঠুর একটা রুপ আছে আমার জানা ছিলো না । ”
– ” আচ্ছা তাই? আমি নিষ্ঠুর ? আর আপনি ? আপনি কি দুধের ধোয়া তুলসী পাতা !
আপনি একটা প্রতারক । আমার সাথে বারবার প্রতারণা করেছেন । বিশ্বাসঘাতক ! ”
অগ্নির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে প্রত্যেকটা কথা বললাম । অগ্নি আমার গাল স্লাইড করতে করতে বলে,
– “এই ঘৃনার দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিও না । তোমার এই দৃষ্টি আমার বুকে ছুড়ির মত আঘাত করে । আমার বুক প্রতিটা সেকেন্ড রক্তাক্ত হচ্ছে ! ”
– “আমার আপনার স্পর্শ আমাকে প্রতিটা সেকেন্ড নরকের আগুনের মত জ্বালাচ্ছে । ”
আমার কথায় অগ্নি ক্ষেপে যায় । আমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে । দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– ” আমার স্পর্শ তোমাকে নরকের আগুনের মত পোড়াচ্ছে ? আর তুমি যে আমাকে এতোটা দিন আমাকে দুনিয়ায় নরক দেখিয়ে দিয়েছো ! তা কিছুনা ? বিনা দোষে আমাকে দিনের পর দিন শাস্তি দিয়েছো । আরে প্রতারক আমি না ! তুমি আর তোমার বান্ধবী । তোমরা দুজন মিলে আমার জীবন ছেলেখেলা বানিয়ে দিয়েছো । ”
আমি তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলি ,
– “আপনার জীবন ছেলেখেলা কেন হবে ? এখন তো আপনার ভালো থাকার কথা ।নিজের ভালোবাসা কে খুঁজে পেয়েছেন ,আপনাদের ভালোবাসার চিহ্ন দুনিয়াতে আসছে । আর কি প্রয়োজন ? ”
– ” এই মেয়ে তুমি কি বুঝো না কিছু ? আমার কি প্রয়োজন তা কি তোমার জানা নেই ? তো শুনো আমার তোমাকে প্রয়োজন । ”
– “আর কতো ছলনা করবেন ? সত্যিটা আমি জানি আপনি অরন্য !
কেন আমার সাথে এসব করলেন ? কেন আমার জীবন এভাবে নষ্ট করলেন? আমি যদি আপনার যোগ্যই না হই তাহলে পরবর্তিতে কেন কাছে টেনে নিলেন ? ”
অগ্নি আমার দিকে কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে বললেন,
– “কিছুক্ষনের মধ্যেই তোমার সব উত্তর ,তুমি পাবে ”
অগ্নি নিজের কথা শেষ করে কাউকে ফোন দিয়ে ভিতরে আসতে বলে । আমি ভ্রু কুঁচকে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । কি করতে চায় অগ্নি ?
__________________________
সুপ্তি আমার সামনে বসে আছে । সুপ্তিকে দেখে পুরো গাঁ ঘিনঘিন করে উঠে অগ্নির দিকে আমি রাগী দৃষ্টি তে তাকাই । কি চায় এই লোক? আমি এমনিতেই কম কষ্টে ছিলাম ? নতুন করে কেন কষ্ট দিতে চায় । সুপ্তি আমার কাছে এসে আমার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
– “কেমন আছিস হুর ? ”
আমি ঝাটকা মেরে হাত সরিয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেই । সুপ্তি আবার বলে ,
– “হুর আমি জানি তুই আমাকে ঘৃণা করিস । আমি যা করেছি তার জন্য এটা স্বাভাবিক । আমি …
অগ্নি সুপ্তিকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বললেন ,
– “এসব কথা বন্ধ করো । যা বলতে এসেছো তা বলো । ”
সুপ্তি মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন ,
– “হুর আমার সাথে অগ্নির কোনো দিন কোনো সম্পর্ক ছিলো না । না অগ্নি আমাকে কোনদিন ভালোবেসেছে । অগ্নি প্রথম থেকেই তোকে ভালোবেসেছে । সেই প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অগ্নি শুধু তোকে চেয়েছে । তোদের মাঝে আমি চলে এসেছি । তুই যখন অগ্নির কথা বলতি তখন অগ্নির তোর প্রতি কেয়ার ভালোবাসা দেখে আমি আকৃষ্ট হয়ে যাই । আমি আইডিতে তোর আর অগ্নির টেক্সট দেখে অগ্নিকে দেখার ইচ্ছা জাগে । তাই আইডি থেকে অগ্নির নাম্বার নেই সেই নাম্বারের মাধ্যমে আমার এক ফ্রেন্ড কে দিয়ে অগ্নির পরিচয় বের করি । অগ্নির পরিচয় পার্সোনালিটি দেখে আমি অগ্নির প্রতি দুর্বল হয়ে পরি । মনে মনে অগ্নিকে পাওয়ার জিদ ধরে বসি ।
সেদিন পহেলা বৈশাখে অগ্নি তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলো ।কিন্তু তোর আগেই আমি সেই জায়গায় পৌছাই । অগ্নিকে বলি আমিই তার পরীজান । অগ্নি বিশ্বাস করতে বাধ্য ছিলো কারণ আইডির প্রোফাইল পিক আমার হাতের ছিলো ।
নতুন এক মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী বলি যে ,আমার বান্ধুবীদের সাথে আমার ঝামেলা হয়েছে । আর ঐ আইডি আর ঐ নাম্বার আমার বান্ধবীর । সেই বান্ধবীর যদি অগ্নির সাথে আমার সম্পর্ক আছে তা জানে তাহলে আমার বাড়ি তে বলবে আর বাড়ি তে খুব ঝামেলা হবে । অগ্নি আমার কথা মত “অগ্নিধ্য অরন্য” আইডি ডিএক্টিভ করে দেয় । আর সিমও চেঞ্জ করে ফেলে ।আমি আমাদের কমন ডিজেবল করে ফেলি । তারপর জানতে পারি তুই খুব অসুস্থ । যখন তোর সাথে দেখা করতে আসি দেখি তুই অগ্নিকে পাবার জন্য তখনো ছটফট করছিস । তাই আননোন নাম্বার থেকে তোকে মেসেজ করি । তুই অগ্নিকে ভুল বুঝে আস্তে আস্তে সরে আসিস । ”
আমি সুপ্তির কথায় স্থব্দ হয়ে আছি । মানুষ এতো ক্রিমিনাল মাইন্ডের কি করে হতে পারে ? ও মানুষ নাকি অমানুষ । আমি নিজেকে সামলিয়ে নেই । আজ আমি পুরো ঘটনা জানবো । আমাকে শক্ত হতে হবে । সব জানতে হবে । আমি চোখে পানি মুখে বড় এক নিশ্বাস নিয়ে বলি ,
– “যদি তাই হয় ,তাহলে কেন বিয়ে আগে বাড়ি ছেড়ে পালালি ? সব তো তোর মন মত হচ্ছিলো । তাহলে কেন সব ছেড়ে গেলি ? ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ।বলতে শুরু করলেন ,
– ” অগ্নির পরীজান তো সেজেছিলাম কিন্তু তা হতে পারিনি । আমি অগ্নির সাথে কথা বলার সময় বারবার ধরা পরে যাচ্ছিলাম । কোনো ভাবেই তার সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না । দিন দিন অগ্নির সন্দেহ বাড়ছিলো । আর আমাদের মধ্যে প্রব্লেম বাড়ছিলো । অগ্নি পরিবর্তন লক্ষ করতে পারছিলো । আমি কোনো না কোনো মিথ্যা বাহানা বলে কাটাতাম । কিন্তু মিথ্যা বেশি দুর যায় না । আস্তে আস্তে অগ্নির প্রতি আমার অনিহা এসে যায় । বিরক্ত হচ্ছিলাম । এরই মাঝে ইন্টার এক্সাম শেষ হয় । আমি একটা ট্যুর থেকে চিটাগাং শহরে যাই । সেখানে পরিচয় হয় রাদিপ চৌধুরীর সাথে ।আমি আবার নতুন করে তার মোহে পরে যাই । তার প্রেমে পড়ি । তাকেও আমার প্রতি দুর্বল করি । আমি জানতাম রাদিপ বিবাহিত কিন্তু তারপর ও নিজের আবেগ সামলাতে পারি না । একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাই । ঢাকায় ফিরার পরও রাদিপের সাথে আমার যোগাযোগ চলে । কোনো এক কাজে রাদিপ ঢাকায় আসে আর তখন আমাদের ঘনিষ্ট সম্পর্কে গড়ে উঠে । তার কিছুদিন পর হ্ঠাৎ রাদিপ আমার সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয় । আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে রাদিপ আমাকে ইগনোর করে । আমি এসবে রেগে রাদিপের স্ত্রী কে সব জানাই । যা জানার পর রাদিপের স্ত্রী আত্মহত্যা করে । যার পর রাদিপ আমার উপর আরো ক্ষেপে যায় । আমার সাথে পুরোপুরি ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে । আমিও রাদিপের উপর রেগে অগ্নির সাথে সম্পর্কে আবার জড়াই । অগ্নিকে আমাদের বাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলি । অগ্নির জিদের কারনে সবাই রাজি থাকলেও আদ্রিতা আন্টি আমাকে পছন্দ করতো না । আমার সাথে খুব কড়া আচরণ করতো । হ্ঠাৎ বিয়ের সাপ্তাহ আগে আমি জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট । আর ততদিনে খুব দেরী হয়ে গিয়েছে । অগ্নি বা আদ্রিতা আন্টি কেউ কখনো এই বাচ্চা কে মেনে নিবেনা ।আমি কোনো উপায় পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে চিটাগাং রাদিপের কাছে চলে যাই । রাদিপ ও এই বাচ্চা মেনে নেয় না ।আমি রাদিপকে মিডিয়ার ভয় দেখালে । রাদিপ মানসম্মানের ভয়ে আমাকে আটকিয়ে রাখে । আমি রাদিপের বন্ধী হয়ে থেকে যাই ।সময় কাটে কিন্তু রাদিপের অত্যাচার বাড়ে । আমার সাথে জানোয়ারের মত ব্যবহার করে । আমি একদিন সুযোগে পালিয়ে আসি । ঢাকায় বাবা মায়ের কাছে যাই তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । কোনো উপায় না পেয়ে অগ্নির কাছে সাহায্যর জন্য আসি । অগ্নির অফিসে দেখা করার জন্য যখন যাই তখন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাই । অগ্নি আমাকে হসপিটালে এডমিট করে । আমি হসপিটালে জানতে পারি অগ্নি সব সত্য জানতে পেরেছে । আমি অগ্নির থেকে ক্ষমা ভিক্ষা চাই পা ধরে কান্নাকাটি করি । অগ্নি থেকে জানতে পারি ,অগ্নি এখনো তোকে জানায়নি যে অগ্নিই অরন্য ।কারণ তুই অগ্নিকে বিশ্বাস করবি না । তাই আমি অগ্নির বলি যে আমি তোকে সব সত্যি বলবো ।অগ্নি আমার উপর দয়া করে আমাকে বনানীর তার ফ্লাটে থাকতে দেয় ।অগ্নি আমার উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি । যার জন্য সে চিটাগাং যাচাইয়ের জন্য যাচ্ছিলো । আমি তা জানতাম । সেদিন আমার মনে নতুন এক লোভের জন্ম নেয় । আমি নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য আরো একবার নিজের চাল চালি । কেয়ারটেকার কে টাকা দিয়ে তোকে ফোন দেওয়াই ।হসপিটালের পেপারস গুলোতে টাকা প্রে করে অগ্নি শুধু সাইন করেছিলো । কিন্তু আমি স্বামীর নামের জায়গায় অগ্নির নাম দেই । তুই যখন আসিস তোকে সব মিথ্যা বলি । ”
এতটুকু বলেই সুপ্তি থামে । আমার চোখ থেকে তখন শুধু পানি ঝড়ছে । মানুষ এতোটা স্বার্থপর হয় কি করে । কি করে এতোটা জঘন্য হয় ?
আমি অগ্নির দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছিনা । কি ভাবে তাকাবো ? আমি যে নিকৃষ্ট কাজ করেছি ।তাকে বিনা দোষে এতোটা দিন শাস্তি দিয়েছি । অগ্নিও তো আমার মত প্রতারণার শিকার হয়েছে । অগ্নির দিকে আর চোখে তাকিয়ে দেখি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে ।
সুপ্তির প্রতি রাগ ঘৃণা তে আমার হাত পা কাঁপছে । আমি মাথা নিচু করে কান্না করছি । দরজায় খুলার শব্দ কানে আসতেই আমি মাথা তুলে তাকাই । দরজার দিকে তাকিয়ে থম মেরে যাই । দরজায় দাড়ানো লোকটা অন্যকেউ না । আরশির বাবা । কিন্তু আরশির বাবা এখানে কি করছে ?
শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট :৪৪
দরজায় খুলার শব্দ কানে আসতেই আমি মাথা তুলে তাকাই । দরজার দিকে তাকিয়ে থম মেরে যাই । দরজায় দাড়ানো লোকটা অন্যকেউ না । আরশির বাবা । কিন্তু আরশির বাবা এখানে কি করছে ?
লোকটি ভিতরে এসে বসে । আমাদের দিকে অপরাধি দৃষ্টি তে তাকায় । আমি লোকটাকে প্রশ্ন করি ,
– “আপনি আরশির বাবা ,তাই না ? ”
লোকটি আমার কথায় চমকিয়ে ।বিষ্মিত স্বরে বলে,
– “হুম ,কিন্তু আপনি কি করে চিনেন ? ”
– “নিশিতের বিয়েতে আমার আরশির সাথে পরিচয় হয়েছে । কিন্তু আপনি এখানে ? মানে ঠিক বুঝতে পারলাম না । ”
লোকটি মাথানত করে বললেন ,
– “আমিই রাদিপ চৌধুরী । যার সাথে সুপ্তির সম্পর্ক ছিলো । আপনার জীবনের এতো ঝড়ঝাপটার জন্য কোথাও আমি দায়ী । প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে আমি এসবের মাঝে কোথাও না কোথাও দায়ী । এতো পাপ করেছি যে ক্ষমা চাওয়ার মত মুখ আমার নেই । এই পাপের ফল আমি পাচ্ছি । আমার কুকার্যের জন্য আজ আমার সন্তান মা হারা হয়েছে । আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো সুপ্তির ফাঁদে পা দেওয়া । নিজের স্ত্রী থাকার শর্তেও পরক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছি । ভারী অন্যায় করেছি নিজের স্ত্রীর সাথে । যখন তা বুঝতে পারি তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে । সুপ্তি আমাকে ধমকি দেয় । এক সময় আমার সাথেচ না পেরে আমার স্ত্রী কে সবটা জানিয়ে দেয় । যা শুনে আমার স্ত্রী দিশা আত্মহত্যা করে ।সারাটা জীবন তিলেতিলে মরার সাজা আমাকে দিয়ে যায় । যতবার নিজের সন্তানের চেহারা আমি দেখি ততবার আমার সব পাপের কথা মনে করিয়ে দেয় । সুপ্তি কে কোনো দিন আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না ।তবুও অগ্নির কথায় আর সুপ্তির গর্ভে সন্তানের কথা চিন্তা করে ভেবেছিলাম মেনে নিবো কিন্তু তা আর সম্ভব না । যে মেয়ে নিজের উপকারীর উপকারের মূল্য দিতে পারেনা সে কি করে আমার সন্তানের মা হবে । এই মেয়ে কোনো ভালো মানুষ হবেনা । কোনো কিছু ডিজার্ভ করে না । এই মেয়ে স্বার্থপর আর খুবই হিংস্র । আমার আজ এখানে আসার কারণ আপনার আর অগ্নির মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝি ঠিক হোক ।সুপ্তির উপর একদম বিশ্বাস করা যায় না । এই মেয়ে খুব হিংস্র । যেকোনো সময় নিজের স্বার্থের জন্য পাল্টি নিতে পারে । মিথ্যা বলতে পারে । কাউকে খুন করতেও এই মেয়ে দ্বিধাবোধ করবেনা । ”
আমি রাদিপ চৌধুরীর প্রত্যেকটা কথায় মাথা নিচু করে চুপ করে শুনছি । সুপ্তি নিজের চোখের জল ফেলছে । অনুতাপ মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । সুপ্তির দিকে ঘৃণাকর চোখে তাকিয়ে বললাম,
– “তুই এতোটা নিকৃষ্ট কি করে হতে পারিস ? ছিঃ এতো অন্যের জিনিসের প্রতি তোর লোভ ? এতোটা ?
কেন আমার জীবন এভাবে নষ্ট করলি ? কি এমন করেছি যার জন্য তুই এতো কিছু করলি । এতোদিন আমি অগ্নিকে দোষারোপ করেছি । বিনা দোষে তাকে শাস্তি দিয়েছি ।তুই যা দেখিয়েছিস তাই বিশ্বাস করেছি । কিন্তু সত্যি তো অন্যকিছুই ছিলো । তুই অনেক চেষ্টা করেছিস কিন্তু আমার থেকে আমার ভাগ্যে ছিনিয়ে নিতে পারিস নি । তোর শত চেষ্টার পর ও আমার একসাথে হয়েছি । ভাগ্যে আমাদের এক করেছে । সত্যি বলতে ভাগ্যের উপর কারো জোর চলে না । না তোর না আমার ।
তুই ঘৃণার যোগ্য । তুই কখনো ভালোবাসা ডিজার্ভ করিস না । তুই একটা বাচ্চা থেকে তার মা কেরে নিয়েছিস । তোর জন্য একটা সংসার ভেঙেছে । অন্যটা ভাঙার রাস্তায় ছিলো । আমার সন্তান তার বাবা থেকে সারাজীবনের জন্য দূরে থাকতো । অগ্নি নিজের সন্তান হারাতো । আর আমি সারাজীবন একটা ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে অগ্নির সাথে অন্যায় করে যেতাম !
তোর জীবনে কোনো দিন সুখ হবেনা তুই সারাজীবন জ্বলবি । এতো গুলোর মানুষের অভিশাপ তোর উপর । ”
সুপ্তি আমার কথায় হাউমাউ করে আমার কান্না করে আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে,
– “আর অভিশাপ দিস না আমাকে । আমি এমনিতেই প্রত্যেকটা মুহূর্ত জ্বলছি । প্রত্যেকটা সেকেন্ড আগুনে পুড়ছি । এতোগুলো মানুষের অভিশাপ বৃথা যায়নি । আমি আমার পাপের শাস্তি পাচ্ছি । যেই সন্তানের ভবিষ্যৎ এর জন্য তোর সংসার ভাঙতে চেষ্টা করেছি । জন্ম দেওয়ার সময় সেই সন্তান হারিয়েছি । নিজের পরিবার হারিয়েছি । আজ আমি পথে পথে ঘুরি । এর চেয়ে বড় আর আমার জন্য কি শাস্তি হতে পারে ? আমি আমার সব ক্ষুয়েছি ।”
আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলি ,
– “সুপ্তি আমি তোর চেহারা ও দেখতে চাইনা । তুই এই মুহূর্তে আমার সামনের থেকে সরে যা । তোর মুখ দেখলেও আমার গাঁ ঘিনঘিন করে । তোর সাথে যা হয়েছে তা আল্লাহ্ র তরফ থেকে তোর শাস্তি ছিলো । তোর শাস্তি আমরা কেউ কি করে দিবো । তুই যা করেছিস তার শাস্তি উপরওয়ালা দিবে ।
মনে রাখিস পাপ বাপ কেও ছাড়ে না ! ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ আমার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে থেকে হতাশ মুখ নিয়ে ফিরে যায় । পুরো রুম পিনপতন স্থব্দতা বিরাজ করছে ।রাদিপ চৌধুরী আমাদের দুজনের দিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে বলেন,
– “আমার এখন যাওয়া উচিত ”
অগ্নি রাদিপের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন,
– “ধন্যবাদ ! মি: রাদিপ চৌধুরী ,আমার একটা ফোন কলে চিটাগাং থেকে সিলেটে আসার জন্য । ”
– ” ধন্যবাদ কেন ! আমার তো আসারই ছিলো । আজ আপনাদের জীবনে যে পরিস্থিতি তে আছে তার সাথে কোথাও আমিও জড়িত আছি ।নিজের মনে বোজা কমানো জন্য হলেও আমার আসতে হতো । আশা করি আবার দেখা হবে ! ”
রাদিপ চৌধুরী দরজার কাছে যেতেই আমি পিছন থেকে ডাকি । রাদিপ চৌধুরী থেকে যায়। পিছন দিকে ফিরে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকায় । আমি দু কদম এগিয়ে বলি ,
– ” এসবের মাঝে আপনার ও অন্যায় ছিলো । আপনি আরশি আর আরশির মায়ের সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছেন । যা করেছেন যা তো আর সংশোধন করা যাবেনা ! কিন্তু আপনি চাইলে নিজের পাপের পাশ্চাত্য করতে পারেন । আরশির মায়ের সম্মান দিতে পারে এতে অন্তত তার আত্মা শান্তি পাবে ।
আমি কি বলতে চাইছি ,আপনি বুঝতে পেরেছেন কি মিঃ চৌধুরী ? ”
রাদিপ চৌধুরী মলিন হেসে বলে ,
– “জি মিসেস খাঁন ,আমি আমার পুরো জীবন দিশার স্মৃতি দিয়ে কাটিয়ে দিবো । আমার জীবনে অন্যকোন নারীর ছায়া থাকবে না।”
– “আর একটা কথা মিঃ চৌধুরী ! আরশি কে কখনো অবহেলা করবেন না । বাচ্চাটার ভালোবাসার প্রয়োজন ,স্নেহের প্রয়োজন । মেয়েটা বড়ই একা । দেখেবেন কখনো যেন কোনো কষ্ট না পায় ! ”
– “আমি খেয়াল রাখবো আরশিকে তার জীবনের সবটা খুশি দেওয়ার । এখন আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ আমার মেয়ের খুশি !
আর আপনাদের অনেক অভিনন্দন আপনার আগামী জীবনের জন্য । ”
রাদিপ চৌধুরী মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় । অদ্ভুত এক রসহ্যময় চরিত্র লোকটার ।কিন্তু যেমন নি হোক না কেন লোকটা কথা গুলো খুবই সচ্ছল কাঁচের মত পরিষ্কার ।
_________________________
আমি চুপচাপ অগ্নির পিছনে দাড়িয়ে আছি । বাহিরে মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে । যা কাচের ভিতরের থেকে স্পর্শ দেখা যাচ্ছে । অগ্নির দৃষ্টি বাহিরের দিকে । আমি মাথা নত করে অগ্নির পিছনে দাড়িয়ে আছি কোথা থেকে কি ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা । অন্যায় আমার । খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি । অগ্নির সামনে ক্ষমা চাওয়ার মত মুখ আমার নেই । ক্ষমা চাওয়াটা আমার অপরাধের সামনে তুচ্ছ । আমি কাঁপা কাঁপা হাত অগ্নির কাঁধে রাখতে অগ্নি সামনের দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বললেন,
– “হুর ,তোমাকে কোনো কিছু বলতে হবে । আমি তোমার উপর রেগে নেই । আমার কেবল নিজের উপর আফসোস হচ্ছে । আমার ভালোবাসার জোর এতোই কম ছিলো কি ? যে তুমি আমাকে একবার জিগ্যেস করাটাও উচিৎ মনে করোনি !
তুমি রাগ জেদ অভিমান করে একবার আমার থেকে ফোন করে জানতে চাইতে । আমার থেকে জবাব চাইতে !
তা না করে আমাকে সোজা শাস্তি দিলে হুর ? আমার কি জানার অধিকার ছিলো না আমার সন্তান আসছে ! এতোটাই অযোগ্য মনে করো আমাকে ?
তোমার জীবনে কি আমার কোনো মূল্য নেই !
আমি রেগে নাই তোমার উপর । তা আমি পারবো না তুমি আমার জান । কিন্তু নিজের উপর খুব আফসোস হচ্ছে যে আমি এতোদিনে তোমার এতোটুকু বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি ! ”
অগ্নির কথায় বুক ভেঙে চূড়ে কান্না আসছে । নিজেকে কোনো ভাবেই আটকাতে পাছিনা । আমার অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে । আমি ছুটে গিয়ে অগ্নিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি । কান্নায় ভেঙে পড়ি । আমি খুব শক্ত করে অগ্নিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করছি । অগ্নি আমার দিকে পিছনে ফিরে আমার দুগালে নিজের হাত স্পর্শ করে । আমি তখনো চোখ বন্ধ করে কাঁদছি । অগ্নি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে নিজের বুকের মাঝে খুব শক্ত করে আবদ্ধ করে বলে ,
– “তোমাকে নিয়ে আমি করবো টা কি বলো তো সুন্দরী ? তোমার দিকে যতবার তাকাই একটা রাগী জেদি বাচ্চা মেয়েকে দেখতে পাই ,এই বাচ্চা মেয়েটা কি করে বাচ্চার মা হচ্ছে আমি তাই বুঝি না !
এভাবে কান্না করছো কেন ? আমি কি মরে গেছি ? ”
অগ্নির কথায় আমি আরো জোরে কান্না করতে লাগি । অগ্নি আমার চুলের ভাজে আঙুল ডুবিয়ে দিয়ে বলে,
– “হুসসস , কান্না করে না লক্ষিটি আমার । প্লিজ এভাবে কান্না করোনা আমার যে কষ্ট হচ্ছে খুব পরীজান । এতোদিন পর মিলনের তিথি এসেছে তুমি এখনো কান্না করবে ? ”
– “আমি আপনাকে খুব কষ্ট দিয়েছি ।অবিশ্বাস করেছি । আমি ভালোনা একদম ভালোনা । খুব বাজে ।
আমি আপনাকে শুধু কষ্ট দিয়েছি কখনো আপনার মত ভালোবাসতে পারিনি । আমাকে আপনি যা শাস্তি দিবেন আমি সব শাস্তি মেনে নিবো । ”
অগ্নি দুহাতে আমার গাল চেপে ধরে কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে বলে ,
– “উহু ,একদম না । আমার পরীজান খুব ভালো । শুধু মাঝে মাঝে একটু বোকামি করে । কিন্তু যেমনি হোক না কেন আমি আমার পরীজানকে খুব ভালোবাসি । খুবই ।
আর রইলো শাস্তির কথা তা তো অবশ্যই প্রাপ্য । ”
আমি বেডে বসে আছি অগ্নি আমার কোলে মাথা রেখে খুব নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে । ঘুমানোর আগে হাজারটা চুমু খেয়েছে পেটে।
পেটে মুখ দিয়ে বাবুর সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়েছে । শত পাগলামো কথা উনার । এই দুমাসে পুরো পাগল হয়ে গেছে আমার সাথে কোনো কথা নেই যত কথা উনার বেবির সাথে।
আজ সব সুখ পেয়ে গেছি । নতুন করে আমার জীবন্ত হয়েছি । এতোটা দিন শুধু শ্বাস নিচ্ছিলাম আজ আমার দেহে প্রাণ ফিরে এসেছে ।
অগ্নি গভীর ঘুম দিয়েছে যেন কতো কাল পর শান্তিতে ঘুমাচ্ছে । এই দুমাসে অগ্নির চেহারায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে।চোখের নিচে কালো দাগ । বোঝাই যাচ্ছে কতটা রাত নিদ্রাহীন কাটিয়েছে ।হাতে কাটা ছেড়া দাগগুলো বলে দিচ্ছে নিজেকে কতটা শাস্তি দিয়েছে । পাগলামোর সব সিমানা অতিক্রম করে । বিরহ ব্যথা হয়তো এটাকেই বলে । অগ্নির এমন হাল দেখে বুকটা চিড়ে যাচ্ছে । আজ আমার জন্যই অগ্নি এই দশা । হিরাকে কাঁচ ভেবে দূরে ঠেলে দিয়েছি ।নিজের মাঝে আজ প্রতিজ্ঞা করলাম কোনো দিন আর নিজের থেকে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে দূরে যেতে দিবো না । নিজের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তার সাথে থাকবো ।
শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট :৪৫
হোটেলের পুল সাইডে টেবিলে বসে আছি । অগ্নি রিসেপশনিস্ট এর সাথে কথা বলছে ।ভাইয়াও অগ্নির সাথে । কিছুক্ষণ পর ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হবো । তানিন পুলের সামনে খেলছে । ভাবী আমার সাথে বসে আছে । ভাবী আমার গালে হাত রেখে বলে,
– “আজ তোমার চেহারায় এক অন্যরকম খুশি দেখতে পারছি। চেহারার সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে । এতোটা দিন এই রুপ এই হাসি কোথায় ছিলো শুনি ? ”
– “ভাবী এই হাসির কারণ যে অগ্নি । আমার রুপ সুখ খুশি সবকিছু যে অগ্নিকে ঘিরে । ভাবী তুমি ঠিক বলেছিলে আমার অগ্নির কথা শুনার দরকার ছিলো !
যদি তখন অগ্নিকে একটা সুযোগ দিতাম তাহলে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হতো না । না আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ব আসতো !
ভালোবাসার প্রথম ধাপ বিশ্বাস ! যা আমি কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম । কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার ভুল। কোনো দিন অগ্নির আর আমার মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হতে দিবো না । ”
ভাবী আমার গাল টেনে দিয়ে বললো,
– “বুঝলে ননদী অগ্নি তোমাকে অনেক চায় ।তোমাকে খুব ভালোবাসে । এতোটা হয়তো কেউ কাউকে ভালোবাসে না । প্রথম যখন অগ্নি তোমার ভাইয়াকে ফোন করে তোমার সাথে কথা বলতে চায় । তোমার ভাইয়া মুখের উপর সাফ মানা করে দেয় । আমাদের ও ভুল ধারনা ছিলো অগ্নির সম্পর্কে কিন্তু পরে অগ্নির পাগলামো তে রাজী হয়েছি দুজন ।যা পাগলামো করেছে আল্লাহ্ !
পারছিলো না তোমাকে উড়ে এসে নিয়ে যেতে । ”
– “কিন্তু ভাবী অগ্নি কি করে জানলো আমি এখানে সিলেটে আছি ! ”
– “তোমার মনে আছে সেদিন তোমার ভাই যখন মিটিং করছিলো ? ”
– “হ্যা ভাবী ”
– “সেখানে অগ্নির কম্পানির লোক ছিলো । অগ্নির সাথে আমাদের নতুন প্রজেক্ট শুরু করছে । আর অগ্নির ইমপ্লই ছিলো যে অগ্নিকে তোমার এখানে থাকার খবর দেয় । অগ্নি সেই রাতেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। তোমার জিদ সম্পর্কে আমাদের ধারনা আছে । যদি তুমি এসব শুনে এখান থেকে চলে যাও তাই আমি আর তোমার ভাইয়া ডিসাইড করি তোমাকে আর অগ্নিকে সামনা সামনি দেখা করাই তাহলে হয়তো সব ঠিক হবে ।তাই জোর করে তোমাকে বৈশাখী মেলায় তোমাকে দিয়ে যাই ! ”
– “ও তাই তো বলি ,সেদিন লোকটাকে এমন চেনাচেনা লাগছে কেন !
অগ্নির অফিসে দেখেছি মনে করতে পারিনি । ”
– “যাই বলো হুর ,অগ্নি কিন্তু তোমাকে খুব ভালোবাসে একদম পাগলের মত !
দোয়া করি তোমাদের সংসার সুখের হোক । আমরা যেন বছর বছর গুড নিউজ পাই ”
আমি লজ্জায় মাথা নামিয়ে হেসে বলি,
– “ওহহ! ভাবী তুমিও না শুধু লজ্জা দেও । ”
– ” আহারে ! আমার লজ্জাবতী লাজুকলতা । ”
অগ্নি আসতেই ভাইয়া আর ভাবী কে বিদায় জানাই । আসার সময় তানিন খুব কান্না করেছে । ভাবীও অনেক আবেগী হয়ে পড়েছিলেন । এতো দিন একসাথে থেকে ছেড়ে আসতে কষ্ট হচ্ছিলো । কিন্তু অগ্নির বুকের গভীরতা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে ।
__________________________
মানুষ পৃথিবীর যেকোনো স্থানেই থাকুক না কেন ! নিজের বাড়ির মত শান্তির স্থান কোথাও নেই । আজ এতোদিন পর নিজের বাড়ি ফিরে খুব শান্তি লাগছে বড় এক শ্বাস ছেড়ে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বুঝে থাকলাম । ফিরার সাথে সাথেই হিয়া আপু ,মামা ,মামীর কাছে অনেক জবাব দিতে হয়েছে । সবাই প্রথমে খুব রেগে ছিলেন । কিন্তু পরবর্তীতে সবাই ক্ষমা করে দিয়েছে । এ কয়েক দিনে রুমের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে । কিছুকিছু ফার্নিচার নতুন আনা হয়েছে । আমি চোখ খুলে তাকাই । আশেপাশে সবকিছুতে চোখ বুলিয়ে দেখছি । পুরো রুম জুড়ে আমার ছবি । নিশ্চয় অগ্নি এসব করেছে । এতোটা ভালো কেউ কি করে কাউকে বাসতে পারে ?
কিছুক্ষণের মাঝে অগ্নি রুমে আসে । সোজা ফ্রেশ হতে চলে যায় । খানিক পর অগ্নি হাতে তয়াল নিয়ে বেরিয়ে আসে ।
অগ্নিকে দেখে আমি বিছানা থেকে উঠে পরিপাটি হয়ে বসি ।অগ্নি দিকে সোজাসুজি তাকাতে পারছিনা । কেমন জানো লজ্জা লজ্জা লাগছে। হয়তো এতোদিনের দূরত্বের কারণে এই লজ্জার সৃষ্টি । আড়চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে দেখি অগ্নি আমার দিকে এগিয়ে আসছে ।অগ্নি আমার সামনা সামনি বসে আমার দিকে উনার নিখুঁত চাহনি নিক্ষেপ করছে আমি ঢোক গিলে আবার বাঁকা চোখে অগ্নির দিকে তাকাই । অগ্নি একপাশ হেসে আমার গালে হাত ছুঁয়িয়ে বলে ,
– ” এতো লজ্জা ? লজ্জায় লাল হওয়ায় তোমাকে যে আরো সুন্দর লাগছে তা কি জানো !
আমি যে কন্টোললেস হয়ে যাচ্ছি তুমি বুঝতে পারছো কি ? ”
অগ্নির কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি । এই লোক লজ্জা দেওয়ার কোনো সুযোগ হাত ছাড়া করে না। বদ লোক !
অগ্নি আমার কাছে এসে আমার ঘাড়ের একপাশ থেকে চুল সরিয়ে সেখানে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আমার গাঁয়ের সুবাশ নিজের ভেতরে টেনে নিচ্ছে । আমি কাঁপাকাঁপা হাত পা নিয়ে চোখ বুঝে নিজের কাঁপুনি শান্ত করার চেষ্টা করছি । হ্ঠাৎ অগ্নি মাতাল স্বরে কানে আসে ,
– “এতোটা দিন তোমার গাঁয়ের এই মিষ্টি সুবাস খুব মিস করেছি । তোমার ছবি দেখে এতোটা দিন কাটিয়েছি । তোমার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করতো
। শক্ত জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখতে ইচ্ছে করতো ।কিন্তু তুমি আমার কাছে ছিলেননা । আর কোনো দিন আমাকে ছেড়ে যাবেনা । তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবোনা । এই হুরহীন অগ্নি মরে যাবে ! ”
আমি দুহাতে অগ্নিকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরি । অগ্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে কম্পিত আওয়াজে বলি,
– “এই হুর ও যে অগ্নিহীন প্রানহীন । ওয়াদা করছি কোনো দিন আপনার থেকে দূরে যাবো না । আপনার পরীজান তার অরন্যের মাঝে সারাজীবন বিলিন থাকবে ।ভালোবাসি ,খুব বেশি ভালোবাসি ! ”
অগ্নি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কপালে গভির করে ঠোঁট ছোঁয়ায় ।
সন্ধ্যায় বাড়িতে নিশিত উৎস ভাইয়া ,শেফা ,তানভীর ভাইয়া আসে । আজ রাতটা তারা এখানেই থাকবে ।মানা মামী কিছুক্ষণ পূর্বেই বেরিয়েছে ।আজ সবাইকে এক সাথে দেখে খুব শান্তি লাগছে । এতোদিন যেন নিজেকে কোনো জেলখানায় বন্ধী করে রেখেছিলাম । আজ মন খুলে হাসতে পারছি । কাছের মানুষ গুলোর কেয়ার ভালোবাসা সবকিছু থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলাম ।
রাতের দিকে ছাদে আড্ডা বসেছে । অগ্নি আবির ভাইয়া উৎস ভাইয়া একপাশে অন্যপাশে আমি নিশিত হিয়া আপু । নিশিত কথার মাঝে মজার ছলে বলে,
– “ও মাই গড ভাবী ! তুমি হুট করে কিভাবে গায়েব হয়ে গেলে । আর ফিরার পর এতো বড় সারপ্রাইজ পাবো কল্পনাও করতে পারিনি । ”
– “কেন খুশি হওনি ফুফি হবে ! ”
– ” অফকোর্স ভাবী ! খুশি মানে ? আমি তো মহা খুশি ।
বাড়িতে নতুন সদস্য আসছে । হিয়া ভাবী আমাদের রাজপুত্র দিয়েছে । তুমি একটা রাজকন্যা দিবে !”
বলেই বাবুর কপালে চুমু দেয় ।নিশিতের কথায় হেসে উত্তর দেই ,
– ” বাহ্ ! কি ডিমান্ড ,কিন্তু আমার যে একটা রাজপুত্রই চাই একদম তার বাবার মত । ”
হিয়া আপু বড় বড় চোখ করে হেসে বললেন ,
– “না বোন বাবার মত হওয়ার দোয়া করিস না । বাবার যা রাগ জিদ যদি ছেলেও এমন হয় তাহলে তুই তো শেষ হুর । ফিনিশ ! ”
আমি হিয়া আপুর কথায় অবাক হয়ে বলি,
– “ও মা আপু তুমি দেখি আজ তোমার দেবরের সাইড না নিয়ে উল্টো দেবরের বদনাম করছো । তোমার শরীর- টরীর ঠিক আছে তো ? ”
শেফা বলে উঠে ,
– “করবে না তো কি করবে ! অগ্নি ভাইয়া যা করেছে এই দুমাস মাই গড আমি এমন বউ পাগল কোনো দিন দেখিনি । সারাদিন পর যখন তোকে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতো সব ভাঙচুর করতো । কতবার হসপিটালে ভর্তি হয়েছে । সত্যি অগ্নি ভাইয়া তকে পাগলের মত ভালোবাসে । তুই যা করেছিস একদম ঠিক করিসনি ”
– ” তুই তো সব জানিস সুপ্তি যা করেছে সবকিছুর পর আমার ঠিক থাকতে পারিনি । আর বোকামির বসে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি । কিন্তু আমার শিক্ষা হয়ে গেছে আর কোনো দিন এমন কিছু করবো না । ”
নিশিত পরিস্থিতি এমন থমথমে হতে দেখে আওয়াজ করে বলে উঠে ,
– “ভাবী এসব ছাড়ো । এটা বলো তুমি এমন বোকামি কি করে করতে পারো ? তোমার প্রেগন্যান্সির তিন মাস চলা কালিন সময় তুমি প্রেগন্যান্সি চেকআপ করিয়েছো ! সিরিয়াসলি ? তুমি এই যুগের মেয়ে তো নাকি টাইম মেশিন দিয়ে আদিম যুগ থেকে এসেছো ? এখনকার মেয়েরা ছয় সাপ্তাহ চলা কালেই বুঝতে পারে তাড়া প্রেগন্যান্ট কিনা । চেকআপ করায় । ফুপি মারা যাওয়ার পর তোমার লক্ষন দেখে আঁচ করতে পেরেছিলাম তুমি প্রেগন্যান্ট । তোমাকে চেকআপ করাতে বলেছিলাম । কিন্তু তুমি কি করলে ? খামখেয়ালি ! ”
ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম,
– “ইয়ার ,এভাবে লজ্জা দিও না । আমি সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আর ঐ কয়েক মাসের এতো তোড়জোড়ে মাঝে বিষয়টা মাথা থেকে একদম চলে গিয়েছিলো । ”
– ” এখন তুমি আর বেবি ঠিক আছো তো ? ”
আমি নিশিতের কথায় শুকনো ঢোক গিলে উত্তর দেই ,
– “হুম ,একদম ! ঠিক আছি । ”
এমন সময়ই অগ্নি আওয়াজ কানে ভেসে আসে । পিছনে তাকিয়ে দেখি প্লেট ভরা ফ্রুট নিয়ে একগাল হেসে দাড়িয়ে আছে । ইসস! কি সুন্দর হাসি । আমার ঠোঁট একাই প্রসারিত হয়ে যায় । অগ্নি ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললেন ,
– “গার্ল’স কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো ? ”
নিশিত অগ্নির কথায় হেসে জবাব দেয়,
– ” তোমার বউয়ের বোকামি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো ”
অগ্নি আমার দিকে চোখ রেখে বলে,
– ” আমার বাচ্চা বউ একটু আকটু বোকামি করে তা আমি জানি । কিন্তু এখন আবার কি বোকামি করেছে ! ”
– “এখন না আগেকারই ,তোমা,,,,
নিশিত কিছু বলতে নিলে আমি মুখ চেপে ধরি।নিশ্চিত আগের কথা বলবে।ভাই বোন সব লাগামহীন । শুধু আমায় লজ্জায় ফেলার সুযোগ খুঁজে । ইয়া আল্লাহ্ ! তুমি এদের সুবুদ্ধি দান করো ।
অগ্নি আমার লজ্জা মাখা মুখ দেখে হেসে আমার পাশে এসে বসে । আমার সামনে ফ্রুটসের প্লেট রেখে বললো,
– “বিকেলে নাস্তাটা কমপ্লিট করোনি । যা খেয়েছিলে সব বমি করে ফেলেছো । সব গুলো শেষ চাই । ”
কাঁদো কাঁদো চেহারা করে বললাম,
– “আয়ায়ায়া! কেমন অত্যাচার ? ”
অগ্নি আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন ,
– “তোমার হেলথের জন্য খেতে হবে । সবটা যেন শেষ হয় । ”
আমি মুখ ফুলিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি হিয়া আপু ,নিশিত ,শেফা নিচের দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমি লজ্জায় শেষ । এই লোকটা আমাকে লজ্জায়ই মারবে । এমন কেন উনি ? একদম বেপরোয়া !
উনার ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না! অগ্নির ভালোবাসা সীমাহীন অফুরন্ত বেপরোয়া ।
শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট :৪৬
সাদার তুষারে ডাকা এক পাহাড়ে দাড়িয়ে আছি । সবকিছু সাদা । যেন প্রকৃতির বাহারি রঙের উপর কেউ সাদারঙ ডেলে দিয়েছে । আসমান থেকে তুষার বৃষ্টি ঝোড়ছে । সাদা রঙে প্রকৃতির যেন অদ্ভুত সৌন্দর্যময় রূপ ধারণ করেছে । আমার চোখের ঠিক সামনেই অগ্নি দাড়িয়ে আছে । তার কোলে এক ফুটফুটে বাচ্চা ।বাচ্চাটার চোখ জোড়া খুব গভীর । আলোর মত ঝলমল করছে । অগ্নির পড়নে কালো কাপড় আর চোখে অশ্রুর বিন্দু । আমি মুচকি হেসে অগ্নির দিকে দু’কদন বাড়াতেই ।প্রকৃতি এক ভয়ংকর রূপ ধারন করে । হঠাৎ ই চারদিকে কালো অন্ধকারে ডেকে যায় । শোকের ছায়া নেমে আসে । আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি অগ্নির দিকে যাওয়ার কিন্তু কোনো ভাবে তার কাছে পৌছাতে পারছিনা । পিছন থেকে কেউ যেন আমার হাত ধরে রেখেছে ।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি মা দাড়িয়ে আছে । আমাকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । আমি ছাড়ানোর হাজার চেষ্টা করছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না । আমাকে টেনে ছেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে । আমি অনেক কান্নাকাটি করছি কিন্তু আমার কোনো কথাই মা কানে নিচ্ছে না । আমাকে একদম পাহাড়ের কিনারায় নিয়ে আসে । নিজের সাথে নিয়ে ঝাপ দেয় । আমি অগ্নি বলে সজোরে চিৎকার করি ।
আমি চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে কান্না করছি ।অগ্নির গলার স্বর কানে আসতেই আমি চোখ খুলে তাকাই । অন্ধকারে হাল্কা ড্রিম লাইটের আলোতে অগ্নির ভয়ার্ত চেহারা দেখা যাচ্ছে আমি হুট করে অগ্নিকে জড়িয়ে ধরে আবার কান্না করে দেই । একসময় হিচকি উঠে যায় । আমি ধীরেধীরে অগ্নির বুকের সাথে মিশে যাচ্ছি । প্রচন্ড ভয় করছে । অগ্নির বুকে ভিতর আশ্রয় নিলে হয়তো এই ভয় নিবারণ হতো । অগ্নি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না । অগ্নি আমার কাঁধে বেশ কয়েকটা চুমু দিয়ে । চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ,
– “কি হয়েছে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছো ? ”
আমি অগ্নিকে জড়িয়ে ধরেই ‘হ্যা ‘বোধক মাথা নাড়াই । অগ্নি আমাকে ছাড়িয়ে বেডের পাশে বেড বক্র থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দেয় । আমি এক ডোকে পুরোটা পানি শেষ করি । অগ্নি আমার চোখে জল মুছে দিয়ে । বললো,
– “চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নেও । ”
আমি অগ্নির দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি । অগ্নি আবার বললো ,
– “নেও না ”
আমি চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নেই । চোখে খুলে অগ্নির দিকে ভীতু চোখে তাকাতেই অগ্নি আমার কাছে আমার কপালে বেশ কিছু চুমু এঁকে দেয় । আমি বন্ধ চোখে অগ্নির প্রত্যেকটা স্পর্শ অনুভব করি । অগ্নি আমার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে নাকে নাক ঘোষতে ঘোষতে বলে ,
– “কিছু হবে না । আমি তোমার সাথে আছি তো ! তোমার কিছু হতে দিবোনা । সর্বদা তোমার সাথে থাকবো । নিজের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমার সবটা দিয়ে তোমার হেফাযত করবো । ”
আমি অগ্নির বুকে মাথা রাখি । অগ্নি বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে । আলতো হাতে আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে । আমি অন্যমনস্ক হয়ে আছি । অগ্নির টিশার্টের কিছুটা অংশ খুব শক্ত করে নিজের মুঠোয় ধরে আছি । যেন মুঠো হাল্কা হলেই আমি অগ্নির থেকে দূরে চলে যাবো ।অগ্নি কিছুক্ষণ পর পর আমার মাথায় নিজের ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে ।
সে রাতে আর ঘুম হয় না । অগ্নিও আমার সাথে সারাটা রাত জাগে । ফজরের আজানে বিছানা ছেড়ে উঠে নামাজ আদায় করেনি ।
বারান্দার রেলিং ধরে দাড়াই । এখনো ভোরের আলো ফুটেনি চারদিকে এখনো আবছা অন্ধকারে মোড়ানো । আমি উদাসীন দৃষ্টিতে বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।সূর্য কি সুন্দর করে রাতের আঁধার কাটিয়ে নতুন দিনের সূচনা করছে । কিন্তু আমার জীবন ? আমার জীবনে কি নতুন দিনের সূচনা হবে !
নাকি সোনালি দিনের সূচনার আগেই জীবন কালো মেঘে ছেয়ে যাবে ?
সেই ভয়ংকর স্বপ্নের অর্থ কি ছিলো ? কেন দেখেছি অগ্নি আমাকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে !
এতোদিন পর আমার জীবনে সব ঠিক হচ্ছে নতুন করে সব শুরু হচ্ছে । সবেমাত্র সুখের ছোঁয়া লেগেছে । তবে কি এই সুখই জীবনের শেষ সুখ ? এখানেই সমাপ্তি হবে !
ভয় ,অনিশ্চয়তায় বুক ভার হয়ে আছে ।
অগ্নির স্পর্শে আমার ধ্যান ভাঙে । অগ্নি পিছন থেকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়েছে । কানের কাছে ফিসফিস করে বলে ,
– “কি ভাবছো? ”
– “রাতের সেই ভয়ংকর স্বপ্নের নিয়ে । এর অর্থ কি ছিলো ! ”
– “কি এমন স্বপ্ন , যা আমার পরীজানকে এতোটা বিরক্ত করছে ? ”
– “দেখেছি আমরা এক মনোমুগ্ধকর অপরূপ সুন্দর পাহাড়ের উপর আছি । আপনার কোলে একটা নুরের মত ছোট্ট শিশু আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । ”
– “এতে ভয় পাবার কি আছে । এটা তো ভালো স্বপ্ন । ”
– “এখানেই শেষ না ! তারপর হঠাৎ চারদিক কালো হয়ে গেলো । আপনার চোখে অশ্রু । মা আমাকে টেনে উনার সাথে নিয়ে পাহাড়ের কিনারায় যাচ্ছে । তারপর ,তার,,,পর
আমাকে নিয়ে হুট করে পাহাড় থেকে ঝাপ দেয় । ”
আমার কথা শেষ হতেই অগ্নি আমাকে তার দিকে ফিরায় । তখনো আমার হাত পা ভয়ে কাঁপছে । চোখে জল ভিড় করছে ।
অগ্নি আমার দু গালে আলতো করে হাত রেখে বললো,
– “পরীজান ,শান্ত হও! এটা শুধুমাত্র একটা খারাপ স্বপ্ন । আমরা সারাদিন যা নিয়ে ভাবি তা আমাদের মন আর মস্তিষ্ককে স্টোরি ক্রিয়েট করে । যা বিশ্রামের সময় আমাদের মস্তিষ্ক দেখায়। এটা খারাপ স্বপ্ন যার সাথে আমাদের জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই । এসব নিয়ে চিন্তা করে মন খারাপ করো না । তোমার এখন হাসিখুশি থাকার সময় । সবসময় হাসিখুশি থাকবে কেমন ? ”
আমি পলক ঝাপটে হ্যা বোধক ইশারা করি । অগ্নি আমাকে আমার নিজের বুকে জড়িয়ে নেয় । আমি মুচকি হেসে অগ্নির বুকের বাঁ পাশে হাত রাখি । অগ্নি আমার কানের পিছনে চুল গুজে দিয়ে বললো ,
– “ভিতরে চলো । নাস্তা রেডি করে নেও ! ”
আমি মাথা তুলে অগ্নির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলি ,
– “এখনো তো সবাই ঘুমে । এতো সকালে নাস্তা তৈরি করলো কে ? চম্পা ? ”
– ” কেন মেম আমাকে কি চোখে পরে না ? ”
আমি বিষম খেয়ে বলি,
– “আপনি নাস্তা রেডি করেছেন? আপনি ? ”
– “ইয়েস! পরীজান । ”
– “অগ্নি আপনি কি পাগল ! শুধু শুধু কষ্ট করে এসব করেছেন । এখনো তো নাস্তার টাইম হয়নি আর আমার খুদা লাগেনি । ”
– “তুমি ডিস্টার্ব ছিলে ,সারারাত জেগেছো ঘুমাও নি । তাই ভাবলাম আমার পরীজানকে ছোট একটা সার্প্রাইজ দেওয়া যাক । এতে যদি আমার পরীজানের মন সামান্য ভালো হয়! ”
– “অগ্নি আপনি সত্যি পাগল ”
– “হুম ,আর তা শুধু তোমার জন্য । এখন ভিতরে চলো নাস্তা করে নেও । ”
আমি ভিতরে যেতেই হা করে তাকিয়ে থাকি । অগ্নি খুব সুন্দর করে ব্রেকফাস্ট সাজিয়েছে । একটা প্লেটে দুইটা চিকেন সেন্ডুইচ পাশেই টমেটো কেচাপ দিয়ে স্মাইলি ইমোজি ড্র করা । দুইটা জগ একটায় অরেঞ্জ জুস অন্যটায় গ্রেপ । একটা প্লেটে ফ্রুডস কাটা । বয়েল এগ। মাঝে ফুলদানি তে তাজা গোলাপ ফুল । এখনি হয়তো বাগান থেকে ছিড়ে এনেছে । সবকিছু পরিপাটি সুন্দর করে সাজানো ।আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি । এই মানুষ টা এমন কেন ? উনার সবকিছু এতো সুন্দর পরিপাটি । আর উনার ভালোবাসা তো লাজবাব !
অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে অপরাধীর ভঙ্গি তে বললো ,
– “সরি,আসলে বেশি কিছু করতে পারিনি ।
তোমার পছন্দ হয়েছে কি ? ”
আমি আচমকা অগ্নিকে জড়িয়ে ধরে তার গালে কয়েকটা চুমু খেয়ে নেই । অগ্নি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । আমি অতি আনন্দের স্বরে বলি ,
– “অগ্নি আমার খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে । আপনি এতো সুন্দর সার্প্রাইজ দিয়ে আমার দিনটা স্পেশাল করে দিয়েছেন । ”
– “তো এবার ব্রেকফাস্ট করে নেও । আমরা মর্নিং ওয়াকে যাবো । ”
– “মর্নিং ওয়াক ?”
– “হুম এখন থেকে প্রতিদিন দুজন একসাথে মনিং ওয়াকে যাবো । তোমার আর বেবির জন্য খুব উপকারী । ”
আমি উত্তরে মুচকি হাসি । অগ্নি আর আমি একসাথে নাস্তা করে মনিং ওয়াকের জন্য রেডি হই । জুতার ফিতা বাঁধতে গিয়ে পরি মুশকিলে । কোনো ভাবেই নিচু হয়ে জুতার ফিতা বাঁধতে পারছিনা । পেটে চাপ পড়ছে । ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেই । মন খারাপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকি । এমন সময়ই পায়ে কারো স্পর্শ পাই । তাকিয়ে দেখি অগ্নি । আমার পায়ে ধরতেই আমি পা সরিয়ে নিয়ে বলি,
– “কি করছেন ! পায়ে ধরছেন কেন ? স্বামীদের স্ত্রীর পায়ে ধরতে নেই । ”
অগ্নি আমার কথা কানে না নিয়ে নিজের মন মত কাজ করে যাচ্ছে । আমার পায়ে জুতা পড়িয়ে ফিতা বেঁধে দেয় । আমার চোখে চোখ রেখে বলে ,
– “স্ত্রী সবরকম সুবিধা অসুবিধার দিকে লক্ষ করা স্বামী দায়িত্ব । আর আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি ।
সারাজীবন তোমার দাস হয়ে থাকতেও রাজী আমার সুন্দরী ।”
কথা শেষ করে আমার দুহাতে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে আমি খুশিতে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি । এতো ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সৌভাগ্যবতী স্ত্রী মনে হচ্ছে ।অগ্নির এই অন্তহীন ভালোবাসা আমাকে পাগল করে দেয় । কে বলেছে স্বর্গ দূর ? আমার জন্য তো স্বর্গ এই দুনিয়াতেই । আমার অগ্নির মাঝেই আমার স্বর্গ । যদি পৃথিবীর প্রতিটা পুরুষ তার স্ত্রী কে এভাবে ভালোবাসতো ,তাহলে হয়তো প্রতিটা স্ত্রীর জন্য এই দুনিয়াটা স্বর্গ হতো !
চলবে …❤️